বন্য প্রণয় পর্ব-০১

0
497

#বন্য_প্রণয়
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_১

(১৮+)
” বাসর রাতে বসে শুনতে হচ্ছে আমার বর মানে তুই পরকীয়া করবি?”
ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে কথাটি ব্যক্ত করলো তাহমি। নববধূবেশে বসে আছে সে ফুল দিয়ে সজ্জিত বিছানায়। খাটের সামনে দাঁড়িয়ে তার স্বামী।
” ইয়েস! আমি এখনো নীলাকে ভালোবাসি এবং এখন নীলার কাছেই যাবো। তোর মতো আপদকে বিয়ে করেছি কপাল দোষে। এখন কি কাছাকাছি গিয়ে বাকিটুকু শেষ করবো?”
পাঞ্জাবির হাতা বোল্ড করতে করতে বললো সহন। মুহুর্তেই ভারিক্কি মেজাজ চড়াও হলো তাহমির। কীসের নতুন বউ? ঘোমটা খুলে কোমরে আঁচল গুঁজে সহনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল চোখ পাকিয়ে। সহন নিঃশব্দে ঢোক গিলে তাহমিকে পাত্তা না দিয়ে দরজার দিকে এগোলো। কিন্তু তাহমি ছাড়ার পাত্রী নয়। ঠাস করে গিয়ে দরজার সামনে দুহাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়েছে সে।
” দেখ সহন, কাল পর্যন্ত কে তোর কী ছিলো সেটা আমার দেখার বিষয় না। কিন্তু আজ থেকে তুই আমার স্বামী। তোর মনপ্রাণ, দেহ সবকিছুই আমার। আমার মানে পুরোটাই আমার। এক পার্সেন্টও এদিক-সেদিক যাবে না। ”
সহন জানে তাহমি কতটা উগ্রচণ্ডী আর নির্লজ্জ । শেষমেশ এই মেয়েটাই তার কপালে বাঁধল বলে নিজের কপালটাকেই জুতো দিয়ে পেটাতে ইচ্ছে করছে তার।
” তাহমি তোকে আবারও বলছি আমি নীলাকে ভালোবাসি। আরে ভাই তোর সাথে বিয়েটা দূর্ঘটনাবশতঃ হয়ে গেছে। তাই বলে এমন দজ্জালের মতো বউ সেজে ঝামেলা করবি?”
” তুই তাহলে পরকীয়া চালিয়ে যাবি?”
তাহমি তার জায়গা থেকে একচুল পরিমাণ নড়লো না। উপরোক্ত সহনের কথার জবাব না দিয়ে নিজের কথায় অটল রইলো। সহন বিরক্ত হয়ে তাহমিকে সরাতে চাইলো দরজা থেকে। তাহমি পাথরের ন্যায় দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।
” পরকীয়া, পরকীয়া বলছিস কোন চুল? আমরা প্রেম করি প্রেম। সরর তুই। ”
সহন তাহমিকে কোলে তুলে একপ্রকার দরজা থেকে পাশে নিয়ে গেলো। তাহমি সহনের কোমর ধরেছে এবার। যেনো কিছুতেই মাছ আজকে জাল থেকে বেরোতে দেওয়া যাবে না।
” সরবো কেন? আর চুল চুল না করে বলতেই তো পারিস বা*..। বলদ তোর এখন বিয়ে হয়েছে। আমি তোর বউ। এখন নীলা তোর কী হয় নিজেই ভেবে দেখ।”
” রাখ তোর ভাবাভাবি! কোমর ছাড় বললাম। আমি বলপ্রয়োগ করলে কিন্তু তুই আমাকে আটকাতে পারবি না। ছাড় তাহমি!”
সহন একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো তাহমিকে। ফলশ্রুতিতে ফ্লোরে বসে পড়লো মেয়েটা। সহন সেদিকে না তাকিয়ে দরজার দিকে এগোলো। আর তখুনি তাহমি চেঁচাতে শুরু করলো।
” ও রে মা! কোমরটা ভেঙে গেলো। বাবা তুমি কেনো আমাকে বিয়ে দিলে? বিয়ে ভেঙেছিল আর বিয়ে করতাম না! তবুও এমন পাষাণের সাথে কেনো? কেনো বলো হে পৃথিবী! ”
তাহমির এমন কথাবার্তায় হকচকিয়ে উঠলো সহন। এই মেয়েকে না থামালে তো এখুনি বাবা-মা ঘুম উঠে চলে আসবে এখানে! সহন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিল। আর তখুনি দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তুলে বাইরে থেকে গম্ভীর স্বরে কথা বলে উঠলেন আতাউল খান।
” সহন! তাহমির কী হয়েছে? দরজা খোলো।”
” হ্যাঁ দরজা খোল বলছি এখুনি। ”
আতাউল খানের কথা শেষ হতেই ফরিদা খানও একই কথা বলে উঠলেন। মা-বাবার উপস্থিতি টের পেয়ে সহন দ্রুত তাহমিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার মাঝখানে বসালো। কোনো রকম তাহমির চোখমুখ পাঞ্জাবি দিয়ে মুছে ক্ষীণ স্বরে বললো,
” মামা তোর পায়ে পড়ি তুই আব্বা-আম্মার সামনে এসব কিছু বলিস না।”
” আহম্মক একটা তুই। আমি তোর মামা? আর আমার পায়ে তুই পড়বি কেন? ভাইরে ভাই আমরা এখন বিবাহিত কাপল!”
সহনের ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে মুচকি হেসে বললো তাহমি। সহনের যেনো সেই হাসিতে গা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করা যাবে না এখন৷
” ইয়েস! আমি দরজা খুলছি তুই ভেবে রাখ কী বলবি। ”
সহন আর বাক্যব্যয় না করে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই ফরিদা খান ভেতরে ঢুকে সবকিছু একবার দেখে নিলেন। তাহমির দিকে দৃষ্টিপাত করতেই তাহমি মিষ্টি করে হেসে বললো,
” মামুনি কিছু হয়েছে? ”
” হয়েছে তো তোর! চেঁচালি কেন অমন করে? ”
বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে শুধলেন সহনের মা। তাহমি আবারও হাসলো।
” তেলাপোকা দেখে! সরি গো।”
” তাই বল! ঠিক আছে। দরজা আঁটকে দে সহন। আমরা গেলাম। ”
” ঠিক আছে আম্মা।”
সহন গোপনে টুক করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। মা ঘর থেকে বের হতেই দরজা আঁটকে দপ করে বসে পড়লো ফ্লোরে। এই মেয়ে তো তার জীবন নরক করে দিবে! কীভাবে নীলাকে বিয়ে করবে সে? তাহমি সহনের পাশে এসে বসলো।
” লিসেন সহন,নাম যেমন সহন তেমনই এখন থেকে সহনশীলতা অর্জন কর। ওকে? উ*ম্মা*হ,গুড নাইট। আপাতত ফ্লাইং কিস করলাম পরে সরাসরি করে নিবো। নীলা, শিলা বাদ অনলি তাহমি ওকে? খাটে জায়গা আছে। মন চাইলে আসিস। নইলে এই ফ্লোরে ঘুমাস।”
তাহমি হেলেদুলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। সহন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো খাটের দিকে। দরজার সাথে মাথা হেলান দিয়ে বসলো ছেলেটা। চক্ষু মুদে ভাবতে লাগলো গতকাল পর্যন্ত জীবনটা কতো শান্তিময় ছিলো তার!

বান্ধবীর বিয়েতে উপস্থিত হয়েছে সহন খান ও তার পরিবার। সহন মাস্টার্স শেষ করে বাবার ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছে বছর দুয়েক হলো। তবুও ভার্সিটির বন্ধু – বান্ধবীদের সাথে প্রায় কথাবার্তা হয়। তাহমি সুলতানা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছে বছর তিনেক। অনার্স শেষ করেই কপাল ভালো থাকায় চাকরি হয়ে গেছিল তাহমির। তাহমি যে শুধু সহনের ক্লাসমেট ছিলো সেটা নয়,পাশাপাশি সহনের বাবার বন্ধুর মেয়েও। তাই সম্পর্কটা একটু বেশিই গাঢ় তাদের।
” কী রে সহন কেমন আছিস?”
বিয়ে বাড়িতে এসে এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সহন। শাকিল দেখতেই এগিয়ে এসে কথা বলতে শুরু করে। বলাবাহুল্য শাকিলও ওদের ক্লাসমেট ছিলো। আপাতত একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছে সে।
” এইতো আলহামদুলিল্লাহ। তোর খবর কী?”
” আলহামদুলিল্লাহ। তা তুই কবে বিয়ে করবি ভাই? আমাদের সব বন্ধু- বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে গেছে। বাকি ছিল তাহমি আর তোর। তাহমিরও তো আজ উইকেট পড়বে। তোরটা কবে?”
” আমি তো কবেই বিয়ের কথা বাসায় বলতাম কিন্তু নীলা তো মানা করছে। ওর মাস্টার্স শেষ না হলে নাকি বাসা থেকে বিয়ে দিবে না। এজন্যই অপেক্ষা! ”
” যাক তাহলে একটা আপডেট তো আছে। ”
শাকিল হেসে উঠলো সাথে সহনও। সন্ধ্যা নেমেছে। মাগরিবের নামাজের পরপরই বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু হুট করে খবর এলো ছেলে অন্য মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আর সেই ছেলের বাবাই তাহমির বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে কথাগুলো জানিয়েছেন। নিজেদের বেডরুমেই বসেছে এক নীরব সভা। সেখানে উপস্থিত আছেন তাহমির বাবা,বরের বাবা ও আতাউল খান।
” কেমন বাবা আপনি? নিজের ছেলে কথা শোনে না! অন্য মেয়ে পছন্দ সেটা আগে কেনো বলেননি? প্রেম করে অথচ বাবার কাছে বলতে পারে না। ”
আতাউল খানের কথায় বরের বাবার গায়ে লাগে। কিছুটা আক্রমনাত্মক হয়েই বলেন তিনি,
” আপনারও দেখলাম ছেলে আছে সে কি আপনার কথা শোনে এখনো? ছেলেপেলে বড়ো হলেও কি হাতের মুঠোয় থাকে নাকি!”
” অবশ্যই থাকে। আমার ছেলে কখনো এমন আহম্মক মার্কা কাজ করতো না।”
” বেশ! তাহমি তো শুনলাম আপনার বন্ধুর মেয়ে। তাহলে আপনার ছেলেকে বলুন দেখি একে বিয়ে করে ঘরে তুলতে। দেখি আপনার ছেলে কেমন কথা শোনে আপনার। ”
ব্যাস! খান সাহেবের নাককাটা যাওয়া চলবে না কোনোমতে। ছেলেকে সবকিছু খুলে বলেন তিনি। অগত্যা সবকিছু ভেবে বিয়ে করতে রাজি হয় সহন। তবে ভাবেনি তাহমি এখনো কলেজ লাইফের মতোই রয়ে গেছে। ছেলেটা ভেবেছিল বন্ধু মানুষ, বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ডিভোর্সটা করিয়ে নিবে তারপর নীলাকে বিয়ে করে জীবনটা একেবারে গুছিয়ে নিবে। কিন্তু তা আর হলো কই? এখন মনে হচ্ছে নীলাকে জীবনে আনার আগেই তাহমির অত্যাচারে সহনের জীবন সাদা-কালো হয়ে যাবে।
চলবে,