#বন্য_প্রণয়
#পর্ব_২৬
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
সারাদিন অনেক ধকল গেছে তাহমির ওপর দিয়ে। শরীর তো পুরোপুরি ঠিক হয়নি। বেশ দূর্বলতা আছে এখনও। এরমধ্যে আবার রক্তশূণ্যতা দেখা দিয়েছিল। ফলে প্রায়শই প্রেশাল লো হয়ে যায়। আত্মীয়স্বজন প্রায় সবাই চলে গেছে খাওয়াদাওয়ার পড়েই। আয়ান আর সহন সবকিছু দেখেশুনে রাখছে। ডেকোরেশনের জিনিসপত্র থেকে শুরু করে রান্নাবান্নার সমস্ত কিছু। তাহমির বাবা তৃষার বিদায়ীর পরে সন্ধ্যায় বেরিয়েছেন। ফিরবেন আগামীকাল। মানুষটা কোনো আহাজারি কিংবা টুঁশব্দ না করলেও সবাই জানে তৃষাকে কতটা ভালোবাসেন উনি। ছোটো মেয়ের প্রতি অন্য রকম ভালোবাসা থাকে বাবাদের। হয়তো নিজের কষ্ট কাউকে দেখাতে চাননা বলেই কাজের অযুহাত দিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আমেনা ইসলাম রাতের খাবার খাননি। ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছেন তিনি। তাহমি মায়ের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষটা ভীষণ পুড়ছে। বাড়িটা খালি হয়ে গেলো একেবারে। দু’টো মেয়েই পরের বাড়ি চলে গেলো!
” মা আসবো?”
মেয়ের কন্ঠস্বরের আওয়াজে শোয়া থেকে উঠে বসলেন আমেনা।
” আয় তাহমি। মায়ের ঘরে ঢুকতে আবার কবে থেকে অনুমতি লাগে তোর?”
তাহমি ভেতরে ঢুকে বাতি জ্বেলে দিলো।
” ভাবছিলাম তোমার একটু একা থাকার ইচ্ছে করছে কি-না তাই জিজ্ঞেস করলাম। চলো মা ডিনার করবে।”
” তোরা খেয়ে নে। আমি পরে খাবো।”
তাহমি মায়ের পাশে বসে হাত ধরে বায়না ধরে বললো,
” না না এখুনি চলো তুমি। তৃষা কল করেছিলো। ”
” কী বললো? ওরা পৌঁছে গেছে? ”
উচ্ছসিত কন্ঠে শুধালেন আমেনা। তাহমি শান্তভাবে বলে,
” হ্যাঁ মাত্র গাড়ি থেমেছে বললো। তোমাকে কল দিয়েছিল কিন্তু তোমার ফোন তো চার্জ আউট। ওখানে তো অনিকের বোন আর বোনের স্বামী ছাড়া কেউ নেই। বলতে গেলে নিজেরাই। আর পাঁচটা বাড়ির মতো গিয়ে লোকজনের অস্বস্তি হবে না বোনের। একা বাড়ি সবকিছুই ওকে গুছিয়ে নিতে হবে। ”
” তা ঠিক বলেছিস।”
” বেশ তাহলে চলো। আয়ান আর সহন ডাইনিং টেবিলে বসে আছে তোমার জন্য। আমরা গেলে সবাই একসাথে খাওয়াদাওয়া শুরু করবে।”
আমেনা ইসলাম নিজেকে আর আটকাতে পারলেন না। বড়ো মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলেন। তাহমি মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। বারণ করলো না কাঁদতে। একটু কাঁদুক! মন হালকা হবে তাহলে।
দিনাজপুর শহরে অনিকের ফ্ল্যাট। চারতলা বিল্ডিংয়ের উপরে পাঁচ তলায় তাদের ঘর। বসার ঘর,রান্নাঘর আর তিনটে রুম। দুটোতে বারান্দা আছে। একটা সিঙ্গেল। ছাদে যেতে হলে আরও দুইতলা ছাড়িয়ে যেতে হয়। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বসার ঘরের দিকে এগোলো তৃষা। দিনা সবকিছু আগে থেকেই রান্নাবান্না করে রেখেছিল। সেগুলো পরিবেশন করছে ডাইনিং টেবিলে। ওহির বাবা টিভিতে খবর দেখছেন। ওহি আর অনিক খেলা করছে সোফায় বসে। তৃষা এসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে। এটা যে ওর শ্বশুর বাড়ি সেটা মনেই হচ্ছে না। তবুও বাবা-মায়ের কথা মনে পড়তেই বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। ওহি তৃষাকে দেখতেই জোরে বলে উঠলো,
” মামী! এদিকে এসো। ”
ওহির কথায় দিনা ও অনিকও তৃষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। দিনা বললো,
” ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো তৃষা? এদিকে ভাইয়ার পাশে সোফায় এসে বসো। আমার হয়ে গেছে এখুনি খেতে দিবো।”
তৃষা গিয়ে ওহির পাশে বসলো। ওহির গালদুটো আস্তে করে টেনে দিলো হেসে।
” এমনি দেখছিলাম আপু। আপনারা এতো ভালো দেখে ভাবছিলাম সত্যি সত্যি আমি শ্বশুর বাড়িতে এলাম কি-না! ”
ওহির বাবা হেসে বললেন, ” তাহলে ভাবী মিথ্যা মিথ্যা শ্বশুর বাড়িতে আছেন আপনি। ”
” তাই হয়তো! ”
তৃষাও বদলে হেসে বললো । অনিকের বিষয়টা ভালো লাগলো না। তৃষা কেনো তার সাথে হেসে হেসে কথা বলবে?
” হয়েছে অনেক কথা। চলো সবাই খেয়ে নিবে। ওহির বাবা তো খাবে না। উনি তৃষাদের বাড়ি থেকেই পেটভরে খেয়ে এসেছেন। আমিও খেয়েছি। তৃষা আর ভাইয়া আসো। তোমরা খেয়ে নিলে আমি ঘুমাতে যাবো। ”
অনিক কিছু একটা ভেবে খাবে না বললো। তৃষার একা একাই খেতে হলো শেষমেষ। সারাদিন ঠিকঠাক মতো খেতে পারেনি বলে পেটে ক্ষুধা লেগেছিল মেয়েটার।
রজনীগন্ধা ফুলে সেজে উঠেছে তৃষা ও অনিকের বাসর ঘর। দিনা তৃষাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। তবে একেবারে সাদামাটা সাজগোছ। মেরুন রঙের সিল্ক কাতান শাড়ি পরেছে তৃষা। সাথে হালকা ফুলের সাজ,ঠোঁটে লাইট লিপস্টিক।
” দেখো তো সাজ পছন্দ হলো?”
” জি আপু। খুব সুন্দর সাজানো হয়েছে। ”
” বেশ তুমি থাকো তাহলে। ভাইয়া আসবে আমি গেলেই। ক্লান্ত লাগছে ভীষণ আমি আসছি। শুভকামনা নতুন জীবনের জন্য। ”
দিনা হেসে বললো। তৃষাও বদলে হাসলো মৃদু।
” ঠিক আছে আপু। শুভ রাত্রি। ”
” শুভ রাত্রি। ”
দিনা চলে গেলো রুম থেকে। তৃষা আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলো। ইশ! ভীষণ লজ্জা লাগছে হঠাৎ। মানুষটার সাথে আজ তার প্রথম রাত। ভাবতেই সমস্ত শরীর জুড়ে কেমন একটা ভালোলাগার রেশ বয়ে যাচ্ছে। ভাবনা আরেকটু প্রসারিত করে বিছানায় উঠে বসলো তৃষা। এরমধ্যেই দরজা খোলার ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজ করে ভেতরে ঢুকল অনিক। সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরেছে লোকটা। তৃষার দিকে একপলক তাকালো সে। অতঃপর দরজা আঁটকে দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে। তৃষা উঠলো সালাম করার তাগিদে। অনিক সালাম করতে দিলো না। বুকে জড়িয়ে নিলো তৃষাকে। তৃষার তলপেটে কেমন শিরশির অনুভব করছে। কেমন যেনো ঘোরের মতো লাগছে সবকিছুই।
” তোমার জায়গা আমার বুকে,পায়ে নয় তৃষা।”
” তবুও! আপনি আমার স্বামী। ”
” তুমিও তো আমার স্ত্রী। ”
তৃষা চুপ করে রইলো। অনিক তৃষাকে হাত ধরে বসালো বিছানায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো নিজের সদ্য বিবাহিত বউকে। মনটা অশান্ত হয়ে আছে। তৃষাকে বলবে কিছু কথা। তৃষা অনিকের নীরবতা ভাঙতে বলে,
” আপনার শরীর ঠিক আছে? কেমন লাগছে! ”
” আমি ঠিক আছি।”
” তবে ভালো করে খেলেন না কেনো? বাসায় এসেও না খেয়ে রইলেন।”
” ইচ্ছে করেনি। যথেষ্ট খেয়েছিলাম আমি। ”
” বুঝলাম। ”
” কিছু বোঝনি তুমি। ”
তৃষা চমকাল অনিকের গাম্ভীর্যের কারণে। আগে কখনো এরকম করে কথা বলেনি মানুষটা। ভয়ে ভয়ে তৃষা জিজ্ঞেস করলো,
” কী বুঝিনি? বুঝিয়ে বলুন তাহলে।”
অনিক আচমকা শক্ত করে কাঁধ চেপে ধরলো তৃষার। দ্বিতীয় বারের মতো চমকাল মেয়েটা। ক্ষীণ ব্যথা অনুভব করছে কাঁধে। কিন্তু সেটা বললো না তৃষা। চুপ করে রইলো অনিকের কথা শোনার জন্য।
” তুমি আমি ছাড়া আর কোনো পুরুষের সাথে হেসে কথা বলবে না। ওহির বাবার সাথেও না। আমার ভালোলাগে না। অশান্তি লাগে বুকে। ”
তৃষা চুপ করে ভাবছে মানুষটা এতো ভালোবাসে ওকে? তৃষার চেহারার দিকে তাকিয়েই ছিলো অনিক। তৃষাকে এরকম করে থাকতে দেখে ছেড়ে দিলো। ফের বললো,
” ব্যথা পাচ্ছিলে? সরি! আমি বুঝতে পারিনি তৃষা।”
” তেমন না। ভাবছি ডাক্তার সাহেব আমাকে এতো ভালোবাসে?”
অনিক হাসলো মৃদু। তৃষার দু-হাত নিজের হাতের মধ্যে এনে রাখলো।
” ভীষণ! ভীষণ রকমের ভালোবাসি। আমি ভীষণ জেলাস তোমার বিষয়। ”
” সমস্যা নেই। এরপর থেকে আর কারো সাথে হেসে কথা বলবো না। ”
” হাসবে কিন্তু অল্প।”
” অল্প?”
” হুম অল্প। বেশি হাসবে আমার সাথে। ”
অনিকের পাগলামি মার্কা কথায় তৃষা জোরে হেসে উঠলো। অনিকও জড়িয়ে নিলো তাকে বুকে। একেবারে শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে। এই মানুষটাকেও সে হারাতে চায় না কিংবা হারাতে পারবে না। এবং সেটা কিছুতেই না!
” তাহমি? এই তাহমি! আরে সর না। বিছানা ঠিক করতে দে।”
বিছানার মধ্যে চার হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে তাহমি। আশেপাশে সব জামাকাপড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা। নিজে তো গোছাচ্ছে না আর না তো সহনকে গোছাতে দিচ্ছে। একটু আগে সহন বলেছিল তাহমি বড্ড অগোছালো মানুষ। সেজন্য এই কর্মকাণ্ড তার! ঘড়িতে রাত বারোটার ঘন্টা বেজে গেছে এরমধ্যেই ।
” তুই পাশে এসে শুয়ে পড়লেই হয়।”
” তুই কি ঝামেলা করার জন্য এগুলো করছিস? আজকে মাফ কর প্লিজ! সারাদিন বহুত কাজকর্ম করছি। বাড়ি ফিরে তোর এই পরিকল্পনা করে ঝগড়া করার সিস্টেমগুলো অ্যাপ্লাই করিস।”
আসলেই তো! সারাদিন অনেক ব্যস্ত ছিলো মানুষটা। এখন ঝামেলা করা ঠিক হবে না। তাহমির মন গললো একটু।
চলবে,
#বন্য_প্রণয়
#পর্ব_২৭
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। আয়ান ও অনিমার সম্পর্কের বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি তবে। কারণ অবশ্য আয়ান নিজেই। অনিমার মাধ্যমিক পরীক্ষা চলার ফলে আয়ান যথেষ্ট দূরত্ব মেইনটেইন করে চলেছে এতদিন। ভালো রেজাল্ট করতে হবে বলে অনিমাও সেটা মেনে নিয়েছিল বেশ সুন্দর করেই। তাহমির শরীরের অবস্থা এখন একেবারে ঠিকঠাক। আগের মতো স্কুলে চাকরিতে জয়েন করেছে সে। সহনও পুরোদমে অফিসের কাজে মনোনিবেশ করছে। তাহমির অসুস্থতার জন্য কাজে অনেক গ্যাপ গেছিল এতদিন । এতকিছুর মধ্যে তৃষার জীবনে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিয়ের পর চেনা অনিক কেমন জানি অচেনা হয়ে উঠেছে। প্রথম প্রথম তৃষা সেগুলোকে তার প্রতি অনিকের অতিরিক্ত ভালোবাসা মনে করলেও এখন সেগুলো অশান্তি মনে হচ্ছে। কালকের ঘটনা বলি-
ফাইনাল ইয়ারে আছে তৃষা। সামনেই পরীক্ষা। সেজন্য পড়াশোনার চাপ বেড়েছে। রাতে অনিক ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তৃষা পড়তে বসে। কিন্তু অনিক ঘুম থেকে উঠে তৃষাকে পাশে না পেয়েই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছিল। তৃষা যখন বলে সে পড়তে বসেছিল,অনিক তখন অস্বাভাবিকভাবে কয়েকটা ছিঁড়ে ফেলে। তৃষার মেজাজ বিগড়ে যায় তখন। ফলে রাগ করে আর বিছানায় না শুয়ে সোফায় শোয়। সেখানেই বাঁধে আরেক বিপত্তি। পাগলা কুকুরের মতো ক্ষেপে যায় অনিক। তৃষাকে জোর করে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
” এসব কী ডাক্তার সাহেব? আপনি কি সুস্থ আছেন আদৌও! ”
রাগে,দুঃখে চিৎকার করে বলে তৃষা। অনিক কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তৃষার দিকে। সে তৃষার কথা শোনে না। ধীরে ধীরে কাছে এসে বসে।
” আমি পাগল? তোমার কি অন্য কাউকে ভালো লাগে তৃষা? তুমি আগের মতো আমাকে ভালোবাসো না? ”
তৃষা কিছু বলার সুযোগ পায় না। অনিকের বলিষ্ঠ শরীর পিষে দেয় তৃষাকে। ঠোঁট, হাত সবকিছুই অনিক দখল করে নেয়। যার স্পর্শ প্রথম প্রথম শরীরে অন্য রকম সুখময় অনুভূতি সৃষ্টি করতো, আজ সেই মানুষটার কড়া স্পর্শে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দেয় তৃষা। অনিককে তখন জীবন্ত কোনো পিচাশ মনে হয় তার। এই নিয়ে চলছে তৃষার জীবন। বাবার বাড়ি যায় না তৃষা অনেকদিন। কারণ অনিক তাকে একা ছাড়বে না। অনিকের এই অদ্ভুত কর্মকাণ্ড তার বাবার বাড়ির লোকজনের সামনে আনতে চায় না তৃষা। আগামীকাল দিনা আসবে। দিনার সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবে বলে ভেবেছে তৃষা।
” সহন ভাই কী খবর? বিয়ে-শাদি তো হলো বহুদিন, আমরা কবে চাচ্চু ডাক শুনবো হু?”
দুপুরের খাওয়ার সময় দিয়েছে। অফিসের ক্যান্টিনে একসাথে খেতে বসেছে সহন ও তার কয়েকজন সহকর্মী। তাদের মধ্যে থেকে ওসমান শেখ কথাটি বললো সবার মাঝে সম্প্রতি ওসমান বাবা হয়েছে। সহন খাবার খেতে খেতে বলে,
” আগে তোমার পুচকি বড়ো হোক তারপর না হয় চাচ্চু ডাক শুনো। তা আমাদের শাকিলের কী খবর? শাকিল কি চিরকুমার থাকার পণ করলে?”
সবাই হেসে উঠলো। শাকিল বেচারা চুপচাপ খাচ্ছে। ছেলেটা ভীষণ লাজুক। চাকরিতে নতুন জয়েন করেছে। তবে আগে অন্য কোম্পানিতে ছিল।
ওসমান সহাস্যমুখে বলে,
” আর বলো না সহন শাকিল লজ্জা পাচ্ছে দেখো।”
” তাই তো দেখছি ওসমান ভাই। বিয়ের কথা শুনতেই যে ছেলে এতো লজ্জা পাচ্ছে বিয়ের প্রথম রাতে হাহাহা! ”
” আপনরা তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন ভাইয়েরা। আমার বিয়ে আরো পরে কিন্তু আপনাদের খাওয়ার সময় কিন্তু শেষের পথে। ”
শাকিলের কথায় টনক নড়ে সবার। আসলেই সময় নেই। সবাই দ্রুত খাওয়া শেষ করে যার যার কেবিনে চলে যায়।
” কতদিন হলো মেয়েটাকে দেখি না। তুই একবার গিয়ে দেখে আসবি আয়ান? কেমন আছে জানি না। ফোনে তো বলে সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু কেনো জানি আমার মনটা খচখচ করছে। ”
প্লেটে তরকারি দেওয়া শেষ করে উক্ত কথাটি বললেন আমেনা ইসলাম। আয়ান খেতে শুরু করেছে মাত্র। প্রচন্ড গরম আজকে। দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে ঢাকা শহরে। তৃষার বাবা আগেভাগে খেয়ে বেরিয়ে গেছেন কী একটা কাজে।
” তৃষা তো সব সময় বলে ও ভালো আছে মা। তাহলে তুমি এতো চিন্তা করো কেনো?”
” তুই বুঝবি না বাবা। মায়ের মন সন্তানের জন্য এমন করে কেনো। আমার বিশ্বাস কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে ওর। মেয়েটা ভীষণ চাপা। তাহমির মতো না। তাই তৃষাকে নিয়ে চিন্তা বেশি হয়।”
চেয়ার টেনে বসলেন আমেনা। আয়ান মায়ের কথায় মনোযোগ দিলো এবার। কিছুটা ভেবে বললো,
” ঠিক আছে মা। আমি বরং কালকেই যাবো। তুমি আর টেনশন নিও না। খেয়ে নাও তুমিও। বেলা হলো ভালোই। ”
” ঠিক আছে বাবা।”
আয়ান যে চিন্তা করছে না এমন কিন্তু নয়। তৃষার ব্যবহারে অস্বাভাবিকতা সে-ও লক্ষ্য করেছে। কিন্তু মায়ের সামনে সেগুলো বললে তিনি আরো বেশি চিন্তা করতেন বলেই বলেনি আয়ান।
রুমে ঢুকে সবকিছু অন্ধকার দেখে চমকাল সহন। এত তাড়াতাড়ি তো তাহমি ঘুমায় না কোনো দিন! মাত্র ন’টা নেজেছে। অফিস থেকে ফিরলো সহন। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে তাহমিকে ডাকল সহন।
” তাহমি ঘর অন্ধকার কেন?”
বাতি জ্বেলে দিলো সহন। বিছানায়ও তো নেই মেয়েটা। সহন ব্যাগ,মানিব্যাগ, ফোন ও যাবতীয় জিনিসপত্র টেবিলের উপর রেখে ওয়াশরুমের দিকে এগোলো। কিন্তু সেখানেও তো তাহমি নেই! কিছু মাথায় আসছে না সহনের। তাহলে হয়তো রান্নাঘরে আছে ভেবে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো সে। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে তাহমি বিছানা ঠিক করছে। আবারও চমকাল সহন। বিস্ময় নিয়ে শুধালো,
” এতক্ষণ কোথায় ছিলিস তাহমি?”
” রান্নাঘরে ছিলাম। চল খেয়ে নিবি। মাথা ব্যথা করছে খুব, তাড়াতাড়ি ঘুমবো। ”
সহন তোয়ালে দিয়ে হাতমুখ মুছে নিলো। তাহমির পিছু পিছু ডাইনিং টেবিলের দিকে এগোলো। তাহমির কথাবার্তা কেমন যেনো সন্দেহজনক লেগেছে সহনের। কিন্তু সেটা বলেনি আর। রাতের খাওয়াদাওয়া সবাই একসাথেই করলো আজ। আতাউল খান, ফরিদা, সহন ও তাহমি বেশ জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করে যে যার রুমে গিয়েছে। তাহমি কথামতো বিছানায় শুয়ে সোজা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। সহন কখনো তাহমিকে ঘুমানোর জন্য এরকম তাড়াহুড়ো করতে দেখেনি। এমনকি ভীষণ অসুস্থ থাকাকালীন সময়েও না। তবুও নিজের মনের ভাবনায় লাগাম টেনে নিজেও ঘুমানোর চেষ্টা করলো সহন। অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যে সফলতা এলো।
সহন ঘুমিয়ে যেতেই বিছানা থেকে উঠে পা টিপে টিপে বারান্দার দিকে এগোলো। কিছু অসম্পূর্ণ কাজ ছিলো তার,সেগুলো দ্রুত কমপ্লিট করে তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো চুপিসারে!
পরীক্ষা শেষ হতেই অনিমা আয়ানকে পুরোদমে জ্বালাতন করা শুরু করে দিয়েছে। এই যেমন এখন রাত বারোটা এগারোটা পয়তাল্লিশ বেজেছে। এই মুহুর্তে আয়ানকে দেখবে বলে বায়না ধরেছে সে। আয়ান কতক্ষণ বুঝিয়েছে। কিন্তু এই মেয়ে ভীষণ ত্যাড়া। যা বলে তাই করতে হয়। না করলে আজকাল গাল ফুলিয়ে থাকে নয়তো বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি করতে শুরু করে। যার একটাও আয়ানের ভালো লাগে না। ফলে বাধ্য হয়ে অনিমার রুমে এসে উপস্থিত হয়েছে আয়ান। বাড়ির পেছন দিকের দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে তারপর পাইপ বেয়ে রুমে ঢুকতে হয়েছে তাকে। বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় ছিল অনিমা। হঠাৎ জানালা দিয়ে কিছু ভেতরে পড়ার আওয়াজে সেদিকে তাকাল। আয়ানকে দেখতেই খুশিতে লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে জড়িয়ে ধরে,লাফিয়ে কোলে ওঠে। দুই পা দুইপাশে রেখে বাচ্চাদের মতো গলা আঁকড়ে ধরে ঝুলে আছে অনিমা। আয়ান বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেললো কয়েকটা। কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,
” অনিমা! কেনো এরকম পাগলামি করো বলো তো? এখন যদি তোমার বাবা কোনোভাবে টের পেয়ে যান আমি তোমার রুমে আছি,কী হবে জানো?”
অনিমাকে ওভাবে নিয়েই বিছানায় গিয়ে বসলো আয়ান। অনিমা এখনও চুপ করে একইভাবে ধরে আছে আয়ানকে।
” কী হবে? আমি বলবো আমি তোমাকে ভালোবাসি। ”
” হ্যাঁ তারপর তোমার বাবা বাংলা ছায়াছবির নায়িকাদের বাবার মতো বলবেন,আমার মেয়েকে ভুলে যেতে তুমি কতো টাকা নিবে? টাকা না নিলে তোমার পরিবারকে শেষ করে ফেলবো আমি। ”
আয়ানের কথায় অনিমা ঠোঁট টিপে হাসছে। আয়ান মুখ গোমড়া করে বসেই আছে। বেচারার ভীষণ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তার জন্য। এটা অনিমা বুঝতে পেরে গাঢ় করে তার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। আয়ান বরফের মতো জমে গেলো সেখানেই। সমস্ত বিরক্তি, চাপা রাগ গলে জল হয়ে গেছে।
চলবে,