বন্য প্রণয় পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
81

#বন্য_প্রণয়
#পর্ব_৩৩
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)

বসন্ত যাই যাই করছে। গ্রীষ্মকাল সামনে। রোদের তেজ বেড়েছে আজকাল। আবার মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে আকাশে ঘনকাল মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। সময়টা কালবৈশাখীর। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এরমধ্যে সিলেট শহরে প্রচুর শিলাবৃষ্টি হয়েছিল। তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক মানুষজন। ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে গাছপালা, পশুপাখি,মানুষ ও যানবাহনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেই ঝড়ের শিলাবৃষ্টিতে।
তৃষার বাবার শরীরটা খারাপ যাচ্ছে আজকাল। ছেলেমেয়েদের জন্য চিন্তা বেড়েছে। সবকিছু নিয়ে তৃষার মায়ের মন মেজাজ খারাপ থাকে। আয়ানের মাস্টার্স কমপ্লিট হলো দেখতে দেখতে। তৃষারও গ্রাজুয়েশন শেষ। আয়ান চেষ্টা করছে একটা মোটামুটি ভালো চাকরি পাওয়ার। কিন্তু এ শহরে চাকরি যে সোনার হরিণ! পেতে কপাল লাগে তারচে বেশি যেটা হলো সেটা হচ্ছে মামার জোর অর্থাৎ টাকা। অনিমাকে নিজের করে পেতে হলে নিজেকে ভালো একটা পজিশনে নিতে হবে। সেই সাথে পরিবারের দায়িত্বও নিতে হবে আয়ানকে। তাহমি আর সহনের সম্পর্ক চলছে সমান্তরালভাবে। কিন্তু তৃষা ভালো নেই! ঔষধ পত্র খেয়েদেয়ে সুস্থ হলেও মাঝে মধ্যে অদ্ভুত আচরণ করে অনিক। এই যেমন বাসায় মেহমান এলে সাবধানে চলাফেরা করতে বলে অথবা বাইরে গেলে ভয় পায় যদি কেউ তৃষাকে পছন্দ করে ফেলে। সত্যি বলতে সেগুলো হয়তো তেমন কিছু না কিন্তু তৃষার ধৈর্য শক্তি ফুরিয়ে গেছে। এই টক্সিক রিলেশনশিপ আর ভালো লাগছে না তার। নিজেকে জেলখানার কয়েদি মনে হয়। সেইবার বাবার বাড়ি গিয়েছিল অনিককে নিয়ে। মোটামুটি দু’দিন ঠিকঠাক ছিলো সব কিন্তু তৃতীয় দিন ঝামেলা হলো সহনের এক বন্ধুকে নিয়ে। বেচারা শাকিল এসেছিল বন্ধুর সাথে তার শ্বশুর বাড়ি। কিন্তু অনিক তার সাথে খারাপ আচরণ করে। ফলশ্রুতিতে তৃষার নাক কাটা গিয়েছিল বাবার বাড়ির লোকজনের সামনে। এই অশান্তি নিয়ে দিন অতিবাহিত হচ্ছে মেয়েটার। অনিক রাত হলে শিশুদের মতো কাঁদে মাঝে মধ্যে। কিন্তু তৃষার সেসবেও অসহ্য লাগে । অন্য ঘরে গিয়ে ঘুমায় সে। অনিক একা ঘরে চিৎকার করে আবার মাঝে মধ্যে চুপচাপ সারারাত বসে থাকে। তবে তৃষা তার বাবার বাড়িতে এখনও জানায়নি এসব অনিকের মেন্টাল ডিসঅর্ডার। উনারা ভেবেছিলেন তৃষাকে নিয়ে ওভার পজেসিভ বলেই শাকিলের সাথে ওরকম আচরণ করেছিল অনিক।

গোধূলির আলোয় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে তাহমি। আজকের আকাশটা যেনো অন্য রকম সুন্দর লাগছে। লাল আভায় ছেয়ে গেছে আকাশ। মৃদুমন্দ বাতাস এসে ছুঁইয়ে যাচ্ছে শরীর। সহনকে ভীষণ মিস করছে। দুদিন হলো শহরের বাইরে গেছে মানুষটা। যদিও অফিসের কাজের জন্য গেছে তবুও মনটা অস্থির লাগছে তাহমির। ইশ দু’দিন ধরে মানুষটার সাথে ঝগড়া, খুনসুটি কিছু করা হয়নি! আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘাড়ে কারো উষ্ণ নিঃশ্বাসে চমকে উঠলো তাহমি। তড়িৎ গতিতে পেছনে তাকিয়ে দেখলো সহন দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটের কোণে তার দুষ্ট হাসি। তাহমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচল যেনো। বাড়িতে তো সহন ছাড়া অন্য কেউ আসার কথাই নয় তবুও ঘাবড়ে গিয়েছিল সে।
” কেমন দিলাম বল তো?”
” ছাই দিয়েছিস,কচু দিয়েছিস! ভয় পেয়ে গেছিলাম। ”
তাহমি ভেংচি কেটে বললো। সহন ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে জড়িয়ে ধরল তাহমিকে। তাহমি মুখ গুঁজে দিলো তার বুকে। যেন শান্তির নীড় খুঁজে পেলো বহুদিন পরে।
” ইশ! আমার রণচণ্ডী বউটা এতটুকুতে ভয় পেয়ে গেলো কীভাবে? ”
তাহমি আস্তে কয়েকটা ঘুষি মারল সহনের বুকে। সহন খিলখিল করে হাসছে। কতটা জার্নি করে এসেও কোনো ক্লান্তি নেই তার। তাহমিকে কাছে পেয়ে তার সমস্ত বিষাদ মুছে গেছে।
” শয়তান লোক একটা। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি গিয়ে খাবার দিচ্ছি। ”
” ঠিক আছে। ”
তাহমিকে নিজেকে সহনের থেকে সরিয়ে তোয়ালে আর লুঙ্গি বের করলো তাহমি। সহন সেগুলো নিয়ে এগোল ওয়াশরুমের দিকে।

রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে ব্যস্ত আয়ান। হঠাৎ অনিমার বাবার নম্বর থেকে কল আসায় শোয়া থেকে উঠে বসলো ছেলেটা৷ রীতিমতো ভড়কে গেছে সে। অনিমার সাথে তার সম্পর্কের বিষয় কিছু জেনে গেলোনা তো? কীভাবে জানলো? গত ছয় মাস ধরে রাতে অনিমার কাছে যায় না আয়ান। একদিকে ধরা পরার ভয় অন্য দিকে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশংকায় অনিমার কাছে যাওয়া বন্ধ করেছিল আয়ান। তবে দিনে প্রায় ঘুরাঘুরি করে। রাস্তায় বসে তো আর অনিমা ওরকম পাগলামি করতে পারে না আর। একটু-আধটু অভিমান করে তবে সেটা মানিয়ে নিয়েছে আয়ান। কল বেজে যাচ্ছে। এখুনি রিসিভ না করলে কল কেটে যাবে! তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করে ফোন কানে ধরলো আয়ান।
” আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। কেমন আছেন? ”
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,তুমি কেমন আছো? ”
আয়ান দম নিলো একটু। ভদ্রলোকের গলা শুনে ভয়ের কিছু মনে হচ্ছে না।
” আলহামদুলিল্লাহ। তবে বাবার শরীরটা মাঝে মধ্যে খারাপ হচ্ছে ইদানীং। ”
” ডাক্তার দেখিয়েছো?”
” জি।”
” বেশ তাহলে ঠিকমতো খেয়াল রেখো উনার। আচ্ছা শোনো তোমাকে যে কারণে কল দিলাম!”
” জি বলুন আঙ্কেল। ”
” তুমি অনিমাকে পড়িয়েছিলে বলেই মেয়েটা এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছিল। তাই তোমার যদি সমস্যা না হয় এখনও যদি পড়াতে ভালো হতো। মা মরা মেয়েটা লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হোক এটাই চাওয়া বাবা।”
অনিমার বাবাকে সব সময় ভালো লাগে আয়ানের। ভদ্রলোকের টাকাপয়সা থাকলেও কোনো অহংকার নেই। মোটেও সিনেমার নায়িকাদের বাবাদের মতো হম্বিতম্বি করেন না। কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়! অনিমাকে পড়াতে গেলেই তো জ্বালিয়ে মারবে আবার। মেয়েটা বড্ড জ্বালাতন করে। বিয়ের পর যে কীভাবে সামলাবে সেই নিয়ে মাঝে মধ্যে চিন্তায় পড়ে যায় আয়ান। আয়ানের নীরবতায় অনিমার বাবা ফের বললেন,
” কিছু বলছো না যে বাবা?”
” জি আঙ্কেল সমস্যা নেই আমার। ”
” যাক আলহামদুলিল্লাহ। তবে কাল থেকে পড়াতে এসো। বিকেলের দিকেই। আমি তো তখন বাসায় থাকবো না। তাই দেখা হবে না কাল।”
” ঠিক আছে সমস্যা নেই। ”
” বেশ। তাহলে রাখছি আমি। ”
” আল্লাহ হাফেজ। ”

অপরপ্রান্ত থেকে কল কেটে দিলেন ভদ্রলোক। মধুর জ্বালায় পড়েছে আয়ান। তবে এবার অনিমা বেশি পাগলামি করলে একেবারে আদরের সাধ ঘুচিয়ে দিবে আয়ান। একদিন আদর করলে বুঝবে মজা! এই ভেবে আনমনে হাসলো আয়ান।

” এই সহন শোন।”
” হ্যাঁ বল।”
” বলছিলাম যে আমাদের একটা বেবি হলে কেমন হতো?”
সহন ফোনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাহমির দিকে দৃষ্টিপাত করলো। তাহমি উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সহন সময় নিলো একটু। তারপর তাহমির মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
” তুই নিজে আগে বড়ো হ তারপর বেবির কথা বলিস।”
তাহমিও তো চুপ থাকার মেয়ে না। যে হাত দিয়ে গাট্টা মেরেছিল সহন,সেই হাত উঁচিয়ে ধরে দিলো এক কামড় বসিয়ে। সহন উঁহু করে উঠলো। হাত ধরে সরিয়ে নিয়ে বললো,
” দেখ তোর অবস্থা! এজন্যই তো বললাম তুই নিজে আগে বড়ো হ। নিজেই তো দাঁত ওঠা বাচ্চাদের মতো কামড়ে দিস।”
” ভালো হচ্ছে না কিন্তু সহন।”
সহন তাহমির নাকে নাক ঘষে দিলো। পুলকিত চিত্তে শুধালো, ” খারাপের কী হচ্ছে? ”
” এখন হবে! ”
” কী হবে? ”
” তোর বাচ্চা হবে। ”
সহন জোরে হেসে উঠলো। তাহমি এক ধাক্কায় সোজা করে শুইয়ে দিলো সহনকে। তারপর গায়ের উপর চড়ে বসলো। সহনের মন তো উড়ুউড়ু করছে এখন। মেয়েটা ক্ষেপে গেলেই এমন দুষ্ট মিষ্টি আদর পাওয়া যায়।
” সিজার করবি? এজন্য পেটের উপর বসলি?”
” অন্য কিছু করবো।”
শুকনো ঠোঁট জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিলো তাহমি। সহন থমকে গেলো সেটা দেখে। হৃদয়ে আনচান করতে লাগলো। কীসের একটা তাড়া অনুভব করলো সমস্ত শরীরে। তাহমি ঝুঁকে ললাটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো সহনের। সহন সময় নিলো না। নিজে থেকেই ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো তাহমির ঠোঁটে। আবেশিত হয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো অনেকক্ষণ।

চলবে,

#বন্য_প্রণয়
#পর্ব_৩৪
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

সন্ধ্যা নেমেছে। পাখিরা নিজ নিজ গন্তব্যে উড়ে যাচ্ছে। শহরের যন্ত্র মানবেরা কর্মক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে যার যার বাসার দিকে এগোচ্ছে। সারাদিন কাজ করে এই সময়টাতে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যস্ত হয়ে উঠে। আতাউল খানও তার ব্যতিক্রম নন। অফিস থেকে বেরিয়ে নিজের প্রাইভেট কারে চেপে বসেছেন ভদ্রলোক। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে সাবধানে। অফিসে আজ একটা বড়ো ডিল হয়েছে। সেজন্য ভদ্রলোকের মনটা বড্ড চনমনে আজ। সবার জন্য আইসক্রিম আর ফুচকা কিনে নিয়েছেন অফিস থেকে বেরিয়েই। পাঁচ মিনিট বাদেই বাড়ির সামনে পৌঁছাবেন।
বসার ঘরে বসে লুডু খেলছে ছেলের বউ ও শাশুড়ী। সহন অবশ্য পাশে বসলেও তার মনোযোগ টিভিতে খেলার সংবাদের দিকে।
” মামুনি হবে না,হবে না, হবেই না বললাম! ”
তাহমি উত্তেজিত হয়ে গেছে। খেলায় টানটান উত্তেজনা এখন। শেষ একটা গুটি আছে দু’জনেরই! ফরিদা খানের ঘনঘন ছয় পরছে বলে তাহমির সন্দেহজনক আপত্তি। ফরিদা হাসলেন তাহমির কথায়। আবারও ছয় মারলেন তিনি। পরপর দুই ছক্কা দুই!
” কেনো হবে না? আমি তো ইচ্ছে করে ছক্কা মারি না। এমনি পড়লে কি আমার দোষ? ”
” উফ! মা তোমরা একটু আস্তে কথা বলবে? একটু মন দিয়ে খবরও শুনতে পারছি না। ”
সহন ওদের উচ্চস্বরে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো। তাহমি উঠে গিয়ে টিভির প্লাগ উঠিয়ে ফেলে ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
” এখন ঘরে গিয়ে ফোনে যতো ইচ্ছে খবর শোন যা। উনার জন্য আমরা মুখে কুলুপ এঁটে থাকবো মনে করছে হুহ্। ”
” তাহমি টিভি অন কর বললাম। নইলে কিন্তু তোর খবর আছে। ”
” তুই যা নয়তো তোর খবর আছে। ”
” তুই টিভি অন কর বলছি! এখুনি করবি,এক সেকেন্ডও সময় দিবো না।”
সহন ঠোঁট টিপে হেসে বললো।
” তোর সময় আমার লাগবেও না। এই বসলাম আবারও খেলতে। পারলি টিভি অন করিস,বুঝিয়ে দিবো মজা। ”
এদের ঝগড়া দেখে ফরিদা নিঃশব্দে হেসে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে তাহমিকে বলবে তার একটা নাতীনাতকুর লাগবে। কিন্তু এই মেয়ে তো নিজেই এখনও বাচ্চাদের মতো করে! সে আবার কীভাবে একটা বাচ্চা ক্যারি করবে? অবশ্য বয়স অনুসারে বেবি নেওয়ার মতো আর লালন পালন করার মতো ক্ষমতা আছে তাহমি। ফরিদার ভাবনার আর তাহমি ও সহনের ঝগড়ার ব্যাঘাত ঘটল কলিং বেলের আওয়াজে। নড়েচড়ে উঠলো দু’জন। ফরিদা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। বাবাকে ঢুকতে দেখে তাহমি ও সহন দু’জনই ভদ্র হয়ে বসে আছে। দেখে কেউ বলতে পারবে না এঁরা দু’জন একটু আগে ঝামেলা করছিল।
” ফরিদা এই আইসক্রিমগুলো তোমরা আগে খেয়ে নাও। তারপর ফুচকা খেও। ওদের দাও তুমিও খাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

আতাউল ফরিদার হাতে খাবারগুলো দিয়ে বললেন।
” হ্যাঁ যাও তাহলে।”
ফরিদা হাতে হাতেই আইসক্রিম দিলো তাহমি ও সহনকে। আইসক্রিম আর ফুচকা সবারই ভীষণ প্রিয়। তাহমির হঠাৎ করে তৃষার কথা মনে পড়লো। মেয়েটা ভীষণ আইসক্রিম পাগল।

অনিমাকে পড়াচ্ছে প্রায় সপ্তাহখানেক হয়ে গেছে। এরমধ্যে আয়ানকে অনেকভাবে জ্বালিয়ে মেরেছে অনিমা। কখনো টেবিলের নিচ থেকে পা দিয়ে পা ঘষে আবার কখনো হুটহাট জড়িয়ে ধরে কিস করে। লেখাপড়ার থেকে তার আয়ানের দিকে মনোযোগ প্রবল। নেহাৎ অনিমার বাবা ভালো এবং ব্যস্ত মানুষ বলেই সবকিছু টের পাননি এখনো। কিন্তু টের পেতে কতক্ষণ? একজন বেকার ছেলের সাথে কোনো পরিবার তাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে চায় না, চাইবে না। এটাই সমাজের স্বাভাবিকতা। রাতের নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে শহরকে। আয়ান আজ নিজে থেকেই রাতে আসবে বলেছিল অনিমাকে। সেজন্য তো অনিমা মহাখুশি। কখন থেকে সেজেগুজে বসে আছে আয়ানের জন্য। বললো পাঁচ মিনিটে আসছে, ছয় মিনিট হলো তবুও আসার নাম নেই! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হিসেব কষছে সে। হঠাৎ বেলকনিতে কিছু একটা পড়ার শব্দে নড়ে উঠলো অনিমা। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝলো নিশ্চিত আয়ান এসেছে। হ্যাঁ আয়ান এলো ঘরে।
” বাহ আজকে এতো সাজগোজ?”
আয়ান অনিমার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো। অনিমা সময় নিলো না উত্তর দিতে। আয়ানের কোলে উঠে বসে বললো, ” তুমি নিজে থেকে দেখতে এলে তাই। ”
” আমি তো আজকে শুধু দেখতে আসিনি।”
আয়ান অনিমার কোমরে বাম হাত রেখে বললো। ডান হাত অনিমার ঘাড়ে আলতো করে ছুঁতে ব্যস্ত।
” কী করতে এলে তাহলে?”
” তোমাকে আদর করবো। এতটা কাছাকাছি যাবো যতটা গেলে তুমি তৃপ্তি পাবে।”
আয়ান হেসে বললো। অনিমা ঘাবড়ে গেলো কিছুটা। আয়ানের স্পর্শ কেমন লাগছে হুট করে। অনিমা উঠতে চাইল কোল থেকে কিন্তু আয়ান ছাড়ল না।
” আদর করো ঠিক আছে কিন্তু…. ”
” কীসের কিন্তু? শুধু কিস করলে আর জড়িয়ে ধরলে হবে? আজ তোমাকে অন্য কিছু দিবো।”
” ছাড়ো আমি উঠবো আয়ান।”
” কেনো? এইভাবে আদর করলেও তো চমৎকার হবে ! এভাবেই শুরু করি চলো।”
অনিমা লজ্জায় নুইয়ে গেলো। চোখ তুলে তাকাতে পারছে না আয়ানের দিকে। চেনা আয়ানকে বড্ড অচেনা লাগছে আজ। ভয় লাগছে মেয়েটার। হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো বান্ধবীর কথা। ক’দিন আগেই বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড জোর করে ধর্ষণ করেছিল বান্ধবীকে। অনিমা খুব ছটফট করতে শুরু করেছে এখন। চেহারায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
” আয়ান এসব কিছু করবো না। প্লিজ ছাড়ো!”
” উঁহু! তুমিই তো বলো তোমাকে আদর করি না? সারাক্ষণ পাগল হয়ে থাকো। আসো সব কষ্ট ভুলিয়ে দিচ্ছি। ”
আয়ান কোমর থেকে উদরে, উদর থেকে ধীরে ধীরে বক্ষ বিভাজনে এসে থামাল তার হাত। অনিমা করুন চোখে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ান বুঝেও বুঝল না কিছু। পেছন থেকে কামিজের চেইন খুলে ফেললো এক টানে। অনিমার দু-চোখ ছলছল করছে। আয়ানের দৃষ্টি এড়ায়নি সেটা।
” আমি এসব করতে চাই না। প্লিজ জোর করো না। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে তোমার স্পর্শ। ”
” ভয় লাগছে? ”
অনিমা চুপ করে রইলো আয়ানের প্রশ্নে। ততক্ষণে চোখ গড়িয়ে জল আয়ানের হাতে পরেছে। বিষয়টা আর এগোলো না আয়ান। কামিজের চেইন আঁটকে কোল থেকে পাশে নামিয়ে বসালো অনিমাকে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে অনিমা। আয়ান হাসছে ওর অবস্থা দেখে। বাচ্চা মেয়ে এমনিতে উতলা হয়ে থাকে। অথচ জানেই না এতো উতলা হলে কী করতে হয়। এটাও জানে না পুরুষ মানুষকে এতটা পোড়াতে নেই। পোড়াতে গেলে যে নিজেকেও পুড়তে হবে সেসব বোঝার ক্ষমতা অনিমার নেই। আয়ান বিছানা থেকে উঠে টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি এনে দিলো অনিমাকে। অনিমা সময় নিলো না পানি পান করতে। ঢকঢক করে সবটুকু পানি নিঃশেষ করে ফেললো। আয়ান একটু দূরে বসেছে। সময় দিলো কিছুটা অনিমাকে,যাতে স্বাভাবিক হতে পারে। মিনিট পাঁচেক পরে অনিমাকে টেনে আবারও নিজের কোলে বসালো। অনিমা চুপ করে আছে। চোখে চোখ রাখছে না।
” খুব বেশি খারাপ লেগেছে? সরি অনিমা। আমি আসলে ইচ্ছে করে এমন করেছি। ”
অনিমা চোখ তুলে তাকাল আয়ানের দিকে। কিছুটা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আয়ান বুকে জড়িয়ে নিলো। মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ফের বললো,
” লক্ষ্মীটি কেঁদো না। আমি তোমাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম সব সময় আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কতটা কষ্টকর হয়। তুমি বোঝো না,সব সময় ওরকম পাগলামি করলে আমি লাগামছাড়া হয়ে যাই? পুরুষ মানুষ আমি! নিজের প্রেমিকার এতো কাছাকাছি এসে, আশকারা পেয়েও নিজেকে সামলে রাখি কেবল তোমাকে পবিত্রভাবে পাবো বলে। তুমি একটু সাহায্য করবে না? পাগলামি করো কিন্তু এমনভাবে নিজেকে আমার সাথে আনবে না যাতে আমার সমস্যা হয়।”
অনিমা কিছুটা শান্ত হয়েছে। বিষয়টা বুঝতে সময় লাগলেও বুঝে গেছে আয়ান তার সাথে খারাপ কিছু করতোনা।

চলবে,
#বন্য_প্রণয়
#পর্ব_৩৫
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

অনিমা কিছুটা শান্ত হয়েছে। বিষয়টা বুঝতে সময় লাগলেও এখন বুঝে গেছে আয়ান তার সাথে খারাপ কিছু করতোনা। নিজেকে সামলে নিয়ে আয়ানের দিকে তাকাল অনিমা। ক্ষীণ স্বরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললো,
” আমি বুঝতে পারিনি আয়ান। আর কখনো ওরকম করবোনা। এভাবে রাতে ঘরে আসার জন্য জোরাজোরিও করবো না।”
আয়ান আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো অনিমার ললাটে। হেসে বললো,
” তুমি দুষ্টমি না করলে আমার ভালো লাগবে না। তবে নিজেকে সামলে চলবে,যাতে আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে কষ্ট না হয়। আচ্ছা ভয় পেয়েছো খুব? ”
” হুম। ”
” কষ্ট পেয়েছো?”
” না।”
” কী করলে ভয় কমবে? ”
” জড়িয়ে থাকো দুমিনিট। ”
অনিমার কথায় জোরে হেসে উঠলো আয়ান। যার স্পর্শে ভয় পেয়েছে আবার তাকেই বুকে জড়াতে চাইছে।
” ভয় লাগবে না?”
” উঁহু। বুকে না জরালে মনটা শান্ত হবে কীভাবে? জানো না ব্যথা যে দেয় আমরা তার বুকে মাথা রেখেই অশ্রু বিসর্জন দিতে পছন্দ করি?”
আয়ান আলগোছে জড়িয়ে নিলো অনিমাকে। পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো একবার।
” বাব্বাহ! একেবারে বড়োদের মতো কথা বললে!”
” আমি কি ছোটো আছি? কলেজে ভর্তি হবো ক’দিন বাদেই। ”
” ওওও। কলেজে ভর্তি হলে যে বড়ো হয় আগে জানা ছিলো না। ”
হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজে লাফিয়ে উঠল অনিমা। চোখের পলকে আয়ানের কোল থেকে নেমে দাঁড়াল। দরজার বাইরে ওর বাবা ডাকাডাকি করছেন। আয়ানও ঘাবড়ে গেছে।
” অনিমা? কার সাথে কথা বলছো? ভেতরে কে হাসছে?”
গুরুগম্ভীর কন্ঠে ডেকে যাচ্ছে অনিমার বাবা। আয়ান ঘামছে রিতীমত! অনিমাও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কী করবে বুঝতে পারছে না কেউ। কিন্তু এভাবে চুপ করে থাকলে ঝামেলা বাড়বে বলে কমবে না।
” অনিমা! আমি স্পষ্ট শুনেছি ভেতর থেকে কোনো ছেলের হাসির শব্দ আসছিল। তাই অহেতুক দেরি না করে দরজা খুলে দিলেই ভালো হয়।”

অনিমা ও আয়ান বুঝতে পারছে আজকে মহাপ্রলয় হবে। কীভাবে সামলাবে সেসব আয়ান?

ঘড়িতে সময় রাত তিনটে বেজে পনেরো মিনিট। বিছানার মাঝখানে বসে আছে তৃষা। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেছে। অনিক পাশের ঘরে ঘুমায় এখন। দিনে দিনে সম্পর্কে দূরত্ব বেড়েছে। একটা সময় সবকিছু এতটাই অসহ্য লাগছিল তৃষার,যে স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্ক থেকে দূরে সরে এসেছে সে। শুধু বাইরের লোকজনের সামনে ওরা নিজেদের সাথে কথা বলে। এমনিতে কেউ কারো সাথে কথা বলে না। তবে অনিক আগের মতো তৃষার কাছাকাছি আসতে চায় না এখন। বিষয়টা নিয়ে তৃষা মাঝে মধ্যে ভাবে কিন্তু তেমন সিরিয়াস ভাবেও না। বিছানা থেকে নেমে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো তৃষা। আজকে হঠাৎ অনিকের জন্য ভীষণ মায়া হচ্ছে তার। যাইহোক, মানুষটা তো ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার ভয়েই এমন আচরণ করে। তৃষা অনিকের ঘরের সামনে গিয়ে দেখে দরজা খোলা আছে। তবে রুম অন্ধকার! ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে ঘরে ঢুকল তৃষা। বেচারা তৃষার ওড়না বুকের উপর রেখে ঘুমোচ্ছে। তৃষার দু-চোখ ছলছল করে উঠলো। কী করবে সে? একবার তো চায় সবকিছু মানিয়ে নিয়ে থাকবে কিন্তু অনিকের পাগলামি শেষ পর্যন্ত আর সহ্য করতে পারে না। আবার একেবারে ছেড়ে দিতেও তো পারছে না তৃষা। তৃষা ফোনটা বালিশের পাশে রাখল। এখন ঘরে অল্পস্বল্প আলো দেখা যাচ্ছে। সেন্ডো গেঞ্জি পরা অনিক,পরনে লুঙ্গি। মাথার উপর সিলিং ফ্যান ঘুরছে অবিরত। তৃষা কী মনে করে হঠাৎ অনিকের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তারপর নাকের ডগায় তারপর গালে। পরিশেষে অধর কোণে ছোঁয়াল ওষ্ঠ। অনিকের ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে তাকাতেই এভাবে তৃষাকে কাছাকাছি দেখে চমকাল সে। কিন্তু কিছু বললো না। নিষ্ক্রিয় হয়ে শুয়ে রইলো। তৃষার কেমন ঘোরের মতো লাগছে। দীর্ঘদিন প্রিয়তমকে কাছাকাছি পায়নি সে। তাই আজ না চাইতেও মন অন্য কিছু চাইছে। অনিক ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে তৃষার মতিগতি কী! তৃষা নিজের ওড়না খুলে বিছানার এক পাশে রাখল। তারপর অনিকের পাশে শুয়ে পড়লো। অনিকের ইচ্ছে করছে স্ত্রীকে আলিঙ্গন করতে। কিন্তু তার চেয়ে ভয় হচ্ছে দ্বিগুন। যদি আবারও রেগে গিয়ে কিছু বলে তৃষা? কিংবা বিরক্ত হয়! নাহ এই ভেবে নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করলো অনিক। তৃষা অনিকের বুকের উপর হাত রেখে চুপ করে শুয়ে রইলো। অনিকও চুপ করে আছে।
” কী হয়েছে তৃষা? কিছু লাগবে? ”
অনিকের সহজসরল প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল তৃষা। লোকটার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে না এখন তার সমস্যা আছে কোনো। অথচ একটু বাইরের কেউ এলেই শুরু করে পাগলামি। তৃষা সেসব ভুলে মাথা নেড়ে বললো,
” হুম। ”
” কী? আমাকে না-কি অন্য কিছু? ”
” আপনার কাছে যখন এসেছি তখন আপনাকেই লাগবে। ”
” সহ্য করতে পারবে পাগলামি? ”
” এভাবে বলবেন না। আমার ইতস্তত লাগে ভীষণ। ”
অনিক উত্তর পেয়ে গেছে। তৃষাকে আষ্টেপৃষ্টে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো সে। বন্ধুর সহযোগিতা নিয়ে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ ঔষধ সেবন করছে অনিক। এবার সে নিজে থেকেই চাচ্ছে সুস্থ হতে। কারণ এই অসুস্থতা নিয়ে তার পক্ষে তৃষাকে আঁটকে রাখা সম্ভব নয়। অতীতের প্রভাব বর্তমানে ফেলে সবকিছু নষ্ট করতে চায় না অনিক।

ভোর হতেই মায়ের নম্বর থেকে কল আসায় বুকটা ধুকধুক করতে শুরু করেছে তাহমির। ফোন হাতে নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। সহন আলতো করে তাহমিকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
” কল রিসিভ করছিস না কেন? হয় কথা বল নয়তো সাইলেন্ট করে রাখ। ঘুমোতে দে একটু, রাতেও ঘুমাতে দিসনি।”
সহনের কথায় মেজাজ বিগড়ে গেলো তাহমির। পিঠে এক কিল বসিয়ে দিলো সে।
” অসভ্য একটা তুই। মনে হচ্ছে আমি জোর করে তোকে ঘুমাতে না করেছিলাম। আম্মা কল দিছে। কথা বলে নিচ্ছি।”
সহন তাহমিকে ছেড়ে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। তাহমি কল রিসিভ করে ফোন কানের কাছে ধরে বললো,
” আসসালামু আলাইকুম মা। কী খবর তোমাদের? ”
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম। খবর ভালো নাকি খারাপ আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। তোর আদরের ভাই যা করছে তাতে শান্তিতে আর থাকতে পারছি কোথায়! তার উপর তৃষার জন্য তো চিন্তা আছেই!”
তাহমি মায়ের কন্ঠে স্পষ্ট অভিযোগ শুনতে পাচ্ছে। কী করলো আয়ান?
” কেনে মা? আয়ান কী করেছে? ”
” কী করেছে আমি নিজেও জানি না। মিনিট দশেক আগে ওর ছাত্রীর বাবা কল দিয়েছিলেন। বললো উনাদের বাসায় যাতে এখুনি আমি এবং তোর বাবা যাই। আয়ান না-কি সারা রাত উনাদের বাসায় ছিলো। মানসম্মান কিছু থাকলো না তাহমি।”

তাহমি অবাক হলো কিছুটা। তার ভাই তো এমন নয় যে রাত কাটাবে মেয়েদের সাথে! তা-ও নিজের ছাত্রীর সাথে? ভালোবাসা কিংবা ভালোলাগা থাকলেও তো তৃষা অথবা তাকে কিছু জানাতো। না-কি ছেলেটাকে ওরা ফাঁসিয়ে দিলো কেউ?

” মা তুমি শান্ত হও একটু। আব্বুকেও শান্ত থাকতে বলো। বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়।”
” আমরা যাচ্ছি। পরিস্থিতি কেমন জানি না কিছু। তেমন হলে সহনকে পাঠাতে হবে। আমরা কী করবো! শুনেছি ভদ্রলোক অনেক বড়োলোক। যদি আয়ানের ক্যারিয়ার শেষ করে দেন?”
” মা! এসব নেগেটিভ দিকগুলো জাস্ট ভুলে যাও। কিছু হবে না। ঠিকানা টেক্সট করে দাও,আমরা একটু পর আসছি ওখানে। ”
” ঠিক আছে তাহমি। রাখছি।

চলবে,