বন্য প্রণয় পর্ব-৭+৮

0
77

#বন্য_প্রণয়
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_৭

(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

তাহমি আশপাশে তাকিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে গেলো। নিজের হাতের ব্যাগ দু’টোও সহনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
” তোর হাঁটতে সমস্যা হলে এখানে বস। আমি গিয়ে বাকি জিনিসগুলো কিনে নিয়ে আসছি।”
” আমি কি তোর চাকর? তোর ব্যাগ নিয়ে এখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবো!”
” চাকর হলে কি এভাবে আদর করে সাথে নিয়ে হাঁটতাম তোকে? ”
সহন মুখ ভেংচি কেটে অন্য দিকে ফিরে নাক সিটকে বললো,
” তোর আদর তোর কাছেই রাখ। চল কোন দিক যাবি। কথায় কথা বাড়বে।”
ইফতারের বেশি সময় বাকি নেই বলে তাহমিও আর কথা বাড়ালো না।
ভোরের আলো উঁকি দিচ্ছে জানালার ফাঁক দিয়ে। রোদের আবছা আলোয় চোখ মেলে তাকালো তৃষা। গতকাল ইফতারের পরে আয়ান এসেছিল তৃষার ঘরে। তখন তৃষা নামাজ পড়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়েছিল কেবল। ভাইকে দেখেই উঠে বসে তৃষা।
” বসতে হবে না। শুয়ে থাক।”
ভাইয়ের কথায় সত্যি শুয়ে পড়লো তৃষা। মৃদুস্বরে শুধালো,
” কিছু হয়েছে ভাইয়া? এই সময় তো কখনো ঘরে আসো না তুমি! ”
” আমার হয়েছে? হয়েছে তো তোর। এখন কী হয়েছে সেটা খুলে বল। দু’দিন হলো একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছিস। ”
তৃষার বুকটা কেমন হুহু করে উঠলো। ভাইটা কত্ত ভালোবাসে! কতটা খেয়াল রাখে ভাবতেই মনে আনন্দের দোলা লেগে যাচ্ছে।
” কী হলো বল! হ্যাঁ রে যেখানে টিউশনি পড়াতে যাস সেখানের কেউ কিচ্ছু বলেনি তো?”
বোনের নীরবতা দেখে ফের শুধালো আয়ান। তৃষা উঠে বসলো। ম্লান হেসে বললো,
” এতো চিন্তা কেনো করো ভাইয়া? আমার কিছু হয়নি। একটু মন খারাপ ছিলো ঠিক কিন্তু এখন ঠিক আছে। একটা বিষয় নিয়ে খুব আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু হুট করে জানলাম সেটা কখনো আমার পাওয়া হবে না। ”
আয়ান বোনের চোখে স্পষ্ট হারানোর শোক দেখতে পাচ্ছে। তৃষার একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে রেখে আয়ান আস্তে ধীরে বলতে লাগলো,
” যখন আমরা কোনো কিছু নিয়ে খুব প্রত্যাশা করি এবং সেটা পাই না আমাদের ভীষণ মন খারাপ লাগে। কষ্ট হয়,রাগ হয়। কিন্তু এই কষ্টের কারণ কিন্তু আমরা নিজেই। বুঝলি না?”
তৃষা মাথা নেড়ে “না” বোধক উত্তর দিলো। আয়ান মুচকি হাসলো।
” মনে কর একটা নতুন বই এসেছে বাজারে। তুই তো উপন্যাস পড়তে ভালোবাসিস তাই এই উদাহরণ দিচ্ছি। এখন তুই মনে মনে নিরানব্বই ভাগ আশা করে বসে আছিস বইটা তুই কিনবি। তোর কাছে টাকাও আছে। কিন্তু দোকানে গিয়ে দেখলি কোনো কারণে বইটা আসেনি কিংবা স্টক আউট হয়ে গেছে। অর্থাৎ তুই বইটা পেলি না। টাকা থাকা সত্বেও বই কিনতে পারিসনি বলে তোর ভীষণ খারাপ লাগলো। এখন বই তো শেষ হয়ে যেতেই পারে কিংবা সমস্যার কারণে মার্কেটে না-ও আসতে পারে। তুই যদি প্রত্যাশার পরিমাণ ফিফটি ফিফটি রাখতি তাহলে কিন্তু এতটা কষ্ট পেতিস না। আর যদি বইটা কোনভাবে তুই পেয়ে যেতিস তাহলে তো কথাই নেই। ”
তৃষা ভাইয়ের কথার অর্থ বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
” সুতরাং প্রত্যাশা যত কম করবো জীবন ততই সুন্দর। কোনো কিছুর জন্য অতিরিক্ত আশা করা যাবে না। যা আমার তা এমনি পাবো কিন্তু যা আমার নয় তা হাতের নাগালে থাকলেও পাবো না। যেমন টাকা থাকতে বই পেলাম না! আমাদের ধর্মানুসারে তকদীর বলে এটাকে। তকদীরে বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ। ঠিক আছে এবার? ”
” হ্যাঁ। আমার লক্ষ্মী বোন। আর মন খারাপ লাগবে? ”
তৃষার হাত ছেড়ে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আয়ান। তৃষা সহাস্যমুখ করে বললো,
” না ভাইয়া। তুমি আমার সেরা ভাইয়া।”
খুশিতে গদগদ হয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে তৃষা। আয়ান মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় খানিকক্ষণ।
” হয়েছে। এবার বিশ্রাম নে, ভালো লাগবে। ”
” হুহ্, পড়াতে বসবো। আর কাল থেকে পড়াতে যাবো। ওদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। আমি গেলাম ফ্রেশ হতে। হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসলে ভালো লাগে। ”
তৃষা আবারও চঞ্চল হয়ে উঠলো। আয়ান চলে গিয়েছিল নিজের ঘরে। তৃষা নিজের মনকে বোঝালো, ডাক্তার সাহেব তার জন্য নয়। হলে এমনিতেই পাবে কিংবা পেতো।

রাতের কথা ভাবতে ভাবতে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হতে লাগলো তৃষা। আজকে পড়াতে যাবে ওহিকে। এমনিতেই অনিক চৌধুরীর তো দেখা পাবে না আজ! সে তো গতকালই চলে আসে।

” ও আল্লাহ গো! ছাঁদ ফুটো হয়ে গেছে মা! ও মা! ছাঁদ ফুটো হয়ে পানি পড়লো….”
ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ চোখেমুখে পানির ফোয়ারা বয়ে গেলো সহনের। ঘুম ভেঙে আঁতকে উঠে তাই আউলানো কথাবার্তা বলতে শুরু করেছে। সহনের অবস্থা দেখে সামনে দাঁড়িয়ে তাহমি ঠোঁট টিপে হাসছে। মিনিট দুয়েক লাগলো সহনের নিজেকে স্বাভাবিক করে সবকিছু বোঝার জন্য। তার পরেই লাগবে গৃহ যুদ্ধ! হাত দিয়ে দু-চোখ ঢলতে ঢলতে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সহন। একটা লাল রঙের মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে তাহমি। পরনে কালো রঙের শাড়ি। চোখে কালো কাজল,ঠোঁটে কোনো লিপস্টিক নেই। তবে এমনি হালকা গোলাপি সেই ঠোঁট! একমুহূর্তের জন্য সহন তাহমিকে দেখে পানির কথা ভুলে গেলো। কিন্তু পরক্ষনেই তাহমি চোখ টিপ্পনী দিতেই সবকিছু মনে পড়ে গেলো লোকটার। এই মেয়ের দিকে মোহিত হয়ে তাকিয়েছিল সে? ভাবতেই নিজের রুচির কী হাল সেই নিয়ে নিজেকেই গালাগালি করল মনে মনে।
” এটা কী হলো শাঁকচুন্নি? তুই সকাল সকাল আমার মাথায় পানি কেনো ঢাললি?”
সোফা থেকে নেমে তাহমির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত খিঁচিয়ে কথাটি বললো সহন। তাহমির হাসির মাত্রা দ্বিগুণ গতিতে বাড়লো দেখে সহন কিছুটা ভড়কে গেলো। নিশ্চিত এই মেয়ে অন্য কিছু ঘটাবে। ঘটলো তাই! মগের অবশিষ্ট পানিটুকু তাহমি সহনের চোখেমুখে ছুড়ে মারলো। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সহন। কীসের জন্য এই অত্যাচার কিচ্ছু বুঝে আসছে না তার।
” ফজরে নামাজ না পড়ে ফোনে কথা বলতে ছাদে গেছিলি কেন? কল দিয়ে কি জিজ্ঞেস করছিলি,‘ বাবু সেহরি খাইছো? ঠিকমতো খাইছ ত?’ এসব বলছিলি?”
নীলার সাথে কথা বলতে গতরাতে যে সহন ছাঁদে গিয়েছিল সেটাও তাহমি জানে, শুনতেই চুপসে গেলো সহন। কী এক ঝামেলা! নীলার সাথে কথা না বললে থাকা যায়? আর নীলার সাথে কথা বলেছে শুনলে ঘরে থাকা দ্বায়।
” আরে তুই এতো বেশি বুঝিস কেন? কথা বললাম এক বান্ধবীর সাথে। ”
” আমি কি বলছি ওটা তোর বন্ধু? ”
সহন বুঝতে পারছে তাহমির সামনে ভেজা বিড়াল হলে চলবে না। তাহলে আরো পেয়ে বসবে। ওদিকে নীলার কিছু টাকা লাগবে বলেছে। সেগুলো হাতে দিয়ে আসবে আর একসাথে একটু সময় কাটাবে বলে ভেবে রেখেছে সহন। কিন্তু সেসব যদি তাহমি টের পেয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিত ঘরে বেঁধে তেলাপোকা ছেড়ে দিবে। এমনিতে তো সহনের সাথে শক্তিতে পারবে না তাহমি। কিন্তু কতক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকবে? ঘুমোলে – ই তো তাহমি বাঁধবে! না,না এসব হতে দেওয়া যায় না। সহন উল্টো রাগ দেখিয়ে তাহমির হাত থেকে মগ কেড়ে নিয়ে বললো,
” ফাইজলামি কম করবি তাহমি। তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। দেখ তোকে আজ কী করি!”
তাহমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সহন তাকে পাঁজা কোলা করে ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। তাহমি সহনের বুকে এরমধ্যেই কয়েকটা কিল-ঘুষি মেরে দিয়েছে।
” ছাড় বেয়াদ্দপ। কী করবি? ওয়াশরুমে কেন যাচ্ছিস সহনননন……”
সহন থামলো না। সোজা ওয়াশরুমের ভেতর গিয়ে দরজা আঁটকে দিলো। তারপর ঝরনা ছেড়ে তাহমিকে জোর করে ধরে রাখলো। যাতে ঝরনার নিচ থেকে সরে যেতে না পারে তাহমি। এরমধ্যে পানিতে ভিজতে শুরু করেছে তাহমি। সহনের শরীরের কিছু অংশ আগেই তাহমির দেওয়া পানিতে ভেজানো ছিল বলে সে নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই তার।
” আরো ভেজাবি? এখন ভেজা কাকে বলে দেখ তুই। ”
” সহন ছাড় বললাম। ভালো হবে না কিন্তু। ”
তাহমি সহনের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য জোড়ে সরে নড়াচড়া করছে ঠিক। কিন্তু ছাড়া পাচ্ছে না। পুরুষ মানুষ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে নিজেকে মুক্ত করা যে কতটা কঠিন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে তাহমি।
” কী খারাপ হবে শুনি? ছাড়বো না আমি। পারলে তুই যা। আজকে শিক্ষা দিয়ে দিবো।”
সহনের দুই হাত তাহমির পিঠে,কখনোসখনো আবার কোমরে। মোটকথা কিছুতেই আজ তাহমিকে ছাড়বে না সহন।
চলবে,

#বন্য_প্রণয়
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_৮

( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

সহনের দুই হাত তাহমির পিঠে,কখনো- সখনো আবার কোমরে। মোটকথা কিছুতেই আজ তাহমিকে ছাড়বে না সহন। পানিতে ভিজিয়ে একেবারে জ্বর উঠিয়ে দিবে। কিন্তু বোকা সহন এটা ভাবছে না তাহমিকে ধরে রাখতে গেলে তো তার নিজেরও ঠান্ডা লাগবে!
” তাহলে ধরে থাক। দেখি কতক্ষণ থাকতে পারিস এভাবে। ”
হঠাৎ তাহমির এতটা আত্মবিশ্বাসী মনোভাব দেখে চমকাল সহন।
” দেখতেই থাক শয়তানী। ”
সহন আর কিছু বললো না। শুধু তাকিয়ে রইলো লেডি মাফিয়ার দিকে। তাহমির ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি। তাহমি একহাতে সহনের ঘাড় চেপে ধরে আর অন্য হাত কপালে ছুঁইয়ে স্থির করে রেখেছে। তারপর ধীরে ধীরে সেই আঙুলের স্পর্শ কপাল থেকে নাকের ডগায়, সেখান থেকে সোজা ঠোঁটের ওপর এসে থামলো। সহন ততক্ষণে একটু লাগামছাড়া হয়ে গেছে। ভিজে একাকার অবস্থা দু’জনেরই। কালো শাড়ি ভিজে ফর্সা চামড়ার সাথে লেপ্টে আছে। সহন আঁড়চোখে তাহমির বক্ষ বিভাজনের খাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহমি বিষয়টা বুঝতে পেরে শাড়ি দিয়ে আরেকটু আড়াল করলো নিজের শরীর। সেটা দেখে সহন থতমত খেয়ে গেছে। এরমধ্যে হাতের রাশ আলগা গেছে তার। তাহমি চোখ টিপ্পনী দিয়ে সহনের পায়ের উপর পা রাখে। সহন ততক্ষণে তাহমিকে ছেড়ে দিয়েছে পুরোপুরি। তাহমি একহাতে সহনের ঘাড় চেপে ধরে অন্য হাত কাঁধে রেখেছে। সহনের নিঃশ্বাসের গতি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দরী বউ আশকারা দিলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা দুষ্কর মনে হচ্ছে। তাহমি ধীরে ধীরে সহনের অধরে নিজের ওষ্ঠ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আবেশে সহনের চাহনিতে মাদকতা প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে তাহমি ঠোঁটের সাথে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেওয়ার বদলে সহনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
” দেখেছিস ধরে রাখতে পারলি না? এতো নিয়ন্ত্রণহীন হলে তো যে কেউ… ”
তাহমি ঝটকায় সহনকে ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। সহন তখনও সবকিছু সামলে উঠতে পারেনি। কয়েক মিনিট ওভাবেই ওয়াশরুমে ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর এতক্ষণের ঘটনা দ্বিতীয় বার স্মরণ করতেই হকচকিয়ে উঠলো সহন। ছিঃ কী লজ্জা! কী লজ্জা! শত্রুর সাথে রোমান্স করতে যাচ্ছিল সে? উফ! তাহমি ঘাড়ে, কাঁধে ছুঁয়ে দিয়েছে ভাবতেই আশেপাশে তাকিয়ে সাবান হাতে নিলো সহন। তারপর আচ্ছামত ঘষতে শুরু করলো নিজের শরীর। নিজেকে শত্রুর স্পর্শ মুক্ত করা চাই!

আজ তিন দিন পর তৃষা এলো ওহিকে পড়াতে। দিনা ও ওহি দু’জনেই তৃষাকে দেখে ভীষণ খুশি হয়েছে। ওহির রুমে এসে সবে বসলো তৃষা। এরমধ্যেই ওহি নিজে থেকেই পড়তে বসেছে। অবাক করা বিষয় হলো কোনো প্রকার প্রশ্ন করেনি ওহি। এমনিতে মেয়েটার প্রচুর খেয়াল। কিন্তু আজকে কেনো প্রাইভেটে না আসার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলো না সে বিষয় ভাবুক হয়ে গেছে তৃষা।
” আজকে সন্ধ্যায় তোমার আমাদের বাসায় ইফতারি করতে আসতে হবে। কোনো না শুনবো না কিন্তু তৃষা।”
তৃষার ভাবনার বারোটা বাজিয়ে ঘরে ওহির মা দিনার প্রবেশ ঘটলো। চমকাল তৃষা কিছুটা। আজ হঠাৎ সন্ধ্যায় কেনো দাওয়াত? এমনিতেও দিনা ভালো মনের মানুষ কিন্তু রাত-বিরেতে কখনো দাওয়াত করেনি। অবশ্য গত রমজানে তো এ বাড়িতে পড়াতে আসতো না তৃষা।
” আপু রাতে তো বাসা থেকে বেরোনোর অনুমতি নেই। সন্ধ্যায় আসলে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে তো!”
তৃষাদের বাসা থেকে ওহিদের বাসায় আসতে পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিনিট লাগে বাসে। যদিও বাসা থেকে তেমন জোরাজোরি করবে না কিন্তু তৃষা নিজেই চাইছে না রাতে চলাচল করতে। তৃষার কথায় দিনা তেমন একটা পাত্তা দিলো না। ভাইয়ের কথামতো কাজ করছে সে।
” সেসব আমি বুঝবো। তুমি বরং তোমার মা কিংবা ভাইয়ের সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দিও বাড়ি গিয়ে। যাওয়ার সময় আমাদের বাড়ির গাড়ি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।”
তৃষা জানে ওহিদের নিজস্ব গাড়ি নেই। তবে ওর মামার আছে। কিন্তু আসার সময় তো বাড়ির মধ্যে সেই গাড়ি ছিল না। আর থাকার কথাও নয়। অনিক চৌধুরীর তো এখানে থাকার কথা নয়। সে যাইহোক গাড়ি নেই কথাটা বলে দিনাকে বিব্রত করতে চাচ্ছে না তৃষা। যখন বলেছে পৌঁছে দিয়ে আসবে তাহলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা আছে।
” ঠিক আছে। আমি বাসায় গিয়ে আম্মুকে কথা বলতে বলবো। ”
” যাক তাহলে আজ আমরা একসাথে ইফতার করছি।”
ওহি পড়া বাদ দিয়ে এতক্ষণ দুজনের কথোপকথন শুনছিলো। এ পর্যায়ে সে দুঃখী মুখ করে বলে উঠলো,
” মা আজকে আমি রোজা রাখতে পারিনি বলে কি তোমাদের সাথে ইফতার করতে পারবো না? ”
ওহির প্রশ্নে দিনা ও তৃষা মুচকি হাসলো। বেচারা ওহি মলিন মুখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে ।
” অবশ্যই পারবি। এখন মন দিয়ে পড়াশোনা কর। আচ্ছা আমি এলাম। তুমি পড়াও।”
শেষের কথাগুলো তৃষাকে উদ্দেশ্য করে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো দিনা। পড়াশোনার সময় দিনা এ ঘরে খুব কম আসে।

আসরের আজানের ধ্বনিতে চারদিক মুখরিত হচ্ছে। সামনেই মসজিদ হয়তো। সেদিক থেকে শব্দ বেশি শোনা যাচ্ছে। পার্কের বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে সহন ও নীলা। আজকে সহন রোজা বলে আর কফিশপে বসেনি। নীলা অবশ্য বলেছিল কিন্তু সহন কোনো প্রকার বুঝিয়ে-সুঝিয়ে না করে দিছে।
” আমার আর ভালো লাগে না সহন। তুমি সব সময় তোমার বউয়ের সাথে থাকো। ওর সাথে নিশ্চয়ই ইন্টিমেট হও? খুব আদর করো?”
সহন আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কয়েকজন নীলার এ ধরনের কথা শুনে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃদুস্বরে সহন বলে,
” আস্তে কথা বলো নীলা। আর এসব কথা কেউ বলে এভাবে? তাহমির সাথে আমার কোনো কোনো সম্পর্ক নেই। আর হবেও না। ”
নীলা খিলখিল করে হেসে উঠে। দুনিয়ার কোনো লাজলজ্জা যেন ওর মধ্যে নেই! তুলনামূলক আস্তে বলে,
” তা অবশ্য ঠিক। তিন-চার বছরেও আমার সাথেই ইন্টিমেট হতে পারলে না তারপর তো অল্প দিনে ওর সাথে! ”
নীলার এ ধরনের কথাবার্তা সহনের বিরক্তিকর লাগছে। কথার মধ্যে কোথাও যেনো সহনকে অক্ষম বলে অপমান করলো বলে মনে হলো সহনের। সব মেয়েরা আসলে এক রকম না। কেউ প্রেমিকের স্পর্শ এড়িয়ে চলে আবার কেউ স্বেচ্ছায় উজার করে দিতে চায়। নীলা হলো তেমনই মেয়ে। কতবার যে সহনের সাথে ঘনিষ্ট হতে চেয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। নেহাৎ সহন অতটা আধুনিক নয় বলেই নিজেকে যথাসম্ভব সামলে রেখেছে।
” নীলা ফিজিক্যাল রিলেশনশিপ শুধু বিয়ের পরের জন্য। ভালোবাসলেই এসব করতে হয়? আমি কী তোমাকে না ছুঁয়ে কম ভালোবেসেছি এত বছর? এই একটা জিনিস বাদে কোনটার অভাব রেখেছি বলো? এটাও পূর্ণ করবো শীঘ্রই, বিয়ে হোক তারপর। ”
” তোর মতো সেকেলে মন মানসিকতার ছেলেকে বিয়ে করার জন্য আমি বসে নেই। ”
মনে মনে কথাটা বলে হাসলো নীলা। সহন ভাবল তার কথায় ভালো লেগেছে নীলার তাই ঠোঁটের কোণে হাসি।
” এজন্যই তোমাকে এতো ভালোবাসি সহন। আচ্ছা টাকাগুলো দাও। সন্ধ্যা হতে বাকি নেই বেশি।”
সহন পকেট থেকে দশ হাজার টাকার একটা বান্ডিল বের করে নীলার হাতে দেয়। নীলাকে দেওয়ার জন্যই নগদ টাকা সাথে নিয়ে এসেছে। নয়তো কার্ডে সব টাকা থাকে সহনের।
” এই নাও। ”
” আচ্ছা আমি আসি এখন। আর হ্যাঁ তোমার বউয়ের থেকে দূর থেকো।”
নীলা নিজে থেকেই সহনের ললাটে চুম্বন আঁকে। সহন জবাবে হাতের তালুতে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। নীলার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইলো সহন। হঠাৎ করে তাহমির কথা স্মরণ করতেই আঁতকে উঠলো সে। যদি তাহমি কোনো প্রকার জেনে যায় নীলাকে সে এভাবে চুম্বন দিলো তাহলে! না,না এসব আর করবে না। যা করার তাহমিকে ডিভোর্স দিয়ে নীলাকে বিয়ে করার পর করবে। সহন নিজে থেকে এসব করতো না। কিন্তু নীলা আনরোমান্টিক বলে রাগ করে বলেই এতটুকু আদর করা। সহন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে ছুঁয়ে দেওয়া মানেই ভালোবাসা নয়,যেটা কেবল স্পর্শে বিরাজমান সেটা প্রেম। প্রেম আর ভালোবাসা এক নয়। এঁরা একে অপরের সমানুপাতিক বটে তবে অভিন্ন।

চলবে,