বসন্ত কন্যা পর্ব-০৮

0
313

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_৮
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

আবসার আর নিশার অপেক্ষা করতে করতে আয়ান ওরা চলে গেছে। নিশাকে পাশের সিটে বসে আবসার বসলো ড্রাইভিং সিটে। আবসার হঠাৎ জিজ্ঞেস করল –

– ছেলেটা কে?

– শুনলেন না বলল পরিচিত কেউ।

– আমি তো তার কথা শুনতে চাইছি না আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইছি।

– মামাতো ভাই

– শুধু কি মামাতো ভাই নাকি অন্য কিছু।

– আজব অন্য কিছু হতে যাবে কোন দুঃখে

– তোমার চোখ তো অন্য কিছু বলছে।

– আলতু ফালতু কথা বাদ দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করুন।

– ভয় করছে না তোমার আমার সাথে এভাবে কথা বলছো যে।

ভয়ের কথা মনে উঠতেই ভয়ে মিইয়ে গেল নিশা। এতক্ষণ ফয়সালের করা অপমানের কথা ভাবতে ভাবতে আবসারের সামনে ভয়ের কথা মনেই ছিল না। আর নিশা নিজের ব্যক্তিগত কথা কারো সাথে আলোচনা করতে পছন্দ করে না। ওর মনে ফয়সালকে নিয়ে গড়া অনুভূতির কথা কেউ জানে না এমনকি ফ্রেন্ড সার্কেলও না। তাই আবসার যখন ওর ব্যক্তিগত বিষয় জিজ্ঞেস করছিল তখন একটু বিরক্তই হয়েছিল বটে।

__________________

আয়নাদের বাড়িতে ঢুকে সর্বপ্রথম ডাক পড়লো রেবেকা বানুর, নিশাকে ডাকছেন। উনি আবসারের দাদী। ভারী মজার একজন মানুষ।

– হুন ছেড়ি এদিকে আয়।

ড্রইং রুমের সোফায়ই বসে ছিল রেবেকা বানু। নিশাও বাধ্য মেয়ের মতো উনার পাশে গিয়ে বসলো। ওদের সামনের সোফাতেই বসা ছিল আয়ান, আয়না আর মাত্রই আবসার এসেও বসলো।

– তুই নাকি শাড়ি নিতে চাইছিস না। হুন তোরে আমরা শাড়ি দিতেছি ভালোবাইসা। তোরে আমার মেলা পছন্দ হইছে।

রেবেকা বানুর কথার মাঝখানে ফোড়ং কেটে আয়ান বলল-

– এতই যখন পছন্দ তাহলে ওকে তোমার বড় নাতির বউ করেই তো রেখে দিতে পারো।

আয়না আর নিশা ভয়ে ভয়ে আবসারের দিকে তাকাচ্ছে, এই বুঝি কোনো ঝড় উঠলো কিন্তু না আবসার ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে, সে যেন কিছু শুনতেই পায়নি।

– হ বড় নাতির বউ বানামু। কি চান্দের নাহান মাইয়াডা ওর লগে আমি ঐ নিরামীষ আবসারের বিয়া দিমু না। ওয় হইছে ওর দাদার নাহান ওর দাদায় ছিল ওর নাহান এক্কেরে নিরামীষ। ওর দাদারে আমীষ বানাইয়া তিন তিনটা পোলাপাইন পয়দা করতে কত কাঠঘর পোড়াইতে হইছে আমারে। এহন আবার এই চান্দের নাহান মাইয়াডারে ওর লগে বিয়া দিয়া মাইয়া ডার জীবনডা শেষ করমুনি।

রেবেকা বানুর কথা শুনে আয়ান আর আয়না হো হো করে হেসে উঠলো, আর নিশা লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। আবসার বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। কি সব কথাবার্তা, ও নাকি নিরামীষ সেই কথা আবার বলা হয়েছে ওর ছোট ভাই-বোন আর নিজের প্রেয়শীর সামনে। ছোট ভাই-বোনের সামনে তার নিজের দাদীই তার মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে। এদের সামনে আর বসে থাকা যাবে না, দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করলো সে।

_____________________

কালকে গায়ে হলুদ তাই আজকে থেকেই কাজ শুরু। নিলয়, রাকিব, কাজল ওরাও আজ সবাই এসেছে এই বাড়িতে। সবাইকে ভাগ ভাগ করে কাজ দেওয়া হয়েছে। কাজল , আয়না, আর নিশা বসে বসে ফুল দিয়ে মালা গাঁথছে আর ওদের পাশেই সেই মালা দিয়ে স্টেজ সাজাচ্ছে নিলয়, রাকিব আরও কিছু ওদের বয়সী ছেলেরা। এরা সম্ভবত আয়নার কাজিনগোষ্ঠী। আর সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তা ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করছে আবসার।

– দেখ দেখ হ্যান্ডুটাকে কি সুন্দর লাগছে।

কাজলের এসব উদ্ভট কথা শুনে নিশা আর আয়না দুইজনেই ওর দিকে তাকালো।

নিশা বলল – কাকে বলছিস?

– কাকে আবার বলবো আয়নার ঐ হ্যান্ডু ভাইটাকে – আবসারকে দেখিয়ে বলল কাজল।

– কিছু জিনিস দূর থেকেই সুন্দর। কাছে গিয়ে দেখ ঝলসে যাবি।

নিশার কথার উত্তরে কাজল বলল – একদম আমার হ্যান্ডুটাকে নিয়ে বাজে কথা বলবি না। মুখটার দিকে তাকিয়ে দেখ একদম নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো।

কাজলের কথার প্রেক্ষিতে নিশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিশাকে থামিয়ে আয়না বলল – ঠিক বলেছিস। কি নিষ্পাপ আমার ভাইটা, আর তোর সাথেও খুব ভালো মানাবে। একটা কাজ কর তুই না আমার ভাইটাকে প্রপোজ করে ফেল।

আয়নার কথা শুনে নিশা গোল গোল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কি সব বলছে মেয়েটা, মাথা খারাপ হয়ে যায়নি তো। পরক্ষনেই আবার ভাবলো ঠিকই আছে, এই দুই দিন ঐ আবসার নামক ভয়ংকর প্রানীটা ওকে কম জ্বালায়নি। এবার তার প্রতিশোধ নেওয়া যাবে। কাজলকে তো আর আবসার চেনে না। কাজল হলো কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না। আব তেরা কেয়া হোগা আবসার বাবু? ভাবতেই একটা বাঁকা হাসি দিল নিশা। এই বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে আবসারকে একটা নাকানিচুবানি খাইয়ে তবেই ও যাবে। মনের মধ্যে হাজার জলপোনা কল্পনা করে নিশা বলল-

– তুই তো জানিসই না কাজল সেদিন তুই এ বাড়িতে আসার সময় তোকে নাকি উনি এক ঝলক দেখেছিল। তারপর কতবার আমার আর আয়নার কাছে তোর কথা জানতে চেয়েছে।

কাজল আনন্দে গদগদ হয়ে বলল – ঠিক বলছিস তো তুই।

জবাবে নিশা বলল – আলবাত ঠিক বলেছি। না হয় তুই তোর হ্যান্ডুকেই জিজ্ঞেস করে দেখ না। আমার তো মনে হচ্ছে সে তোর প্রেমে একেবারে হাবুডুবু খাচ্ছে আর কি।

আয়না এতক্ষন চুপচাপ নিশা আর কাজলের কথা শুনছিল। আয়না নিশার কানে ফিসফিস করে বলল – এবার একটু বেশি বেশি হচ্ছে না?

– আরে রাখ তো তোর বেশি বেশি। তোর ভাইকে যদি একটা নাকানিচুবানি না খাওয়াতে পেরেছি তাহলে আমার নামও নিশা না‌। এই দুই দিন তোর ভাই আমার জীবনটা নরক বানিয়ে দিয়েছে। আর তাছাড়া শুরুটা প্রথম তুই করেছিস, তারপর তো আমার মাথায় বুদ্ধিটা এলো।

____________________

কাজল বেশ উৎফুল্লতার সাথে আবসারের আশে পাশে ঘুরঘুর করছে কিন্তু এ কি অবস্থা আবসার তো ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। কাজল অসহায় দৃষ্টিতে নিশা আর আয়নার দিকে তাকাচ্ছে আর নিশা ওকে চোখে ইশারা দিয়ে সাহস দিচ্ছে। নাহ এভাবে ঘুরঘুর করে আর কাজ হবে না, এবার নিউ ট্রিকস কাজে লাগাতে হবে। কাজল আবসারের সামনে গিয়ে ইচ্ছে করেই পরে গেল ভেবেছিল সিনেমার মতো আবসার এসে ওকে কোমড় জড়িয়ে ধরবে, পড়তে দিবে না। কিন্তু একি আবসার তো কোনো পাত্তাই দিল না। উল্টো কাজলকে ডিঙিয়ে চলে গেল। কাজল অসহায়ের মতো মাটিতেই বসে আছে। কাজলের অবস্থা দেখে নিশার হাসিও পাচ্ছে আর প্ল্যান ফ্লপ হওয়ার কারনে মেজাজটাও বিগড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই কোথা থেকে একটা ছেলে এসে কাজলের দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাজল মুগ্ধ দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। এই হলো কাজল মিনিটে মিনিটে ক্রাশ চেঞ্জ হয়। এই মুহূর্তে সে আবসারকে ছেড়ে এই নাম না জানা ছেলেটার উপর ক্রাশ খেয়েছে । কাজল ছেলেটার হাত ধরে দাঁড়িয়েও অপলক দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটাও ওর দিকে একইভাবে তাকিয়ে আছে। ওদের দুইজনের একে অপরের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিলয় গান ধরলো-

– চোখে চোখে এত কথা মুখে কেন বলো না, যাহ দুষ্ট

কাজল রাগে কটমট করতে করতে নিলয়ের দিকে তাকালো। এর মধ্যে ছেলেটাও চলে গেল। এবার আর কাজলকে পায় কে? কাজলের রাগ এখন সপ্তম আসমানে পৌঁছে গেছে। কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে কোনো বাছবিচার না করেই নিলয়কে ধাওয়া শুরু করলো। নিলয় গিয়ে লুকালো নিশার পিছনে। নিশাকে মাঝখানে রেখে ওরা নিশার চারপাশে ধাওয়া ধাওয়ি করছে । হঠাৎ কাজলের ধাক্কা লেগে নিশা ছিটকে গেল। এই বুঝি শেষ, এমনি সেদিনের কোমড়ে ব্যথাটা এখনও আছে এর মধ্যে আজ আবার পরলে রক্ষা নেই। এবার বুঝি আর নিশার কোমড়টা বাঁচানো গেল না। নিশা চোখ মুখ খিচে মাটিতে পড়ার অপেক্ষা করছে। কিন্তু কই ও এখনও মাটিতে পড়ছে না কেন? এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। যে গতিতে ছিটকে পড়ছে এতক্ষনে কোমড় ভেঙে ওর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা। সেখানে ও স্টার জলসার সিরিয়ালের মতো এখনও ফুটেজ খাচ্ছে কেন। নিশা ব্যাপারটা বুঝতে চোখ পিটপিট করে খুলতেই অবাক হয়ে গেল। আবসার শক্ত করে ওর কোমড় জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আর ও আবসারের হাতের উপর লটকে আছে। শুধু নিশা একা নয় উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সবার মধ্যে কাজল বেশি অবাক, একটু আগে ও পড়ে গেল ওকে কিনা ছেলেটা পাত্তাই দিল না আর এখন সে দিব্যি নিশার কোমড় জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশে পাশে তাকিয়ে নিশা তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। আর আবসার তার সেই চিরচেনা আকাশ কাঁপানো একটা ধমক ছাড়লো।

– চোখ কোথায় নিয়ে চলো কপালে? যেখানে যাও যেখানেই বাচ্চাদের মতো আছাড় খাওয়া কি অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিশা হতবাক হয়ে আবসারের ধমক গিলছে ‌। কিন্তু ওর মাথায় এটা আসছে না ও যেখানেই যায় সেখানেই আছাড় কখন খেল। সেদিন তো আবসারের ভয়ে পড়েছিল আর আজ তো কাজলের সাথে ধাক্কা খেয়ে। আর এই লোক কিনা ওকে বাচ্চাদের সাথে তুলনা করছে, বজ্জাত লোক।

চলবে….