বাবার ভালোবাসা পর্ব-১৪+১৫

0
311

বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ১৪
লেখাঃরাইসার_আব্বু।

এদিকে পাঁচটা বেজে গেছে। তাই অযু করে ফজরের নামাযটা পড়ে নিলাম।

– ফজরের নামায পড়ে রাইসার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করছি এমন সময় রাইসা কিচেনে এসে বলল ‘ বাবাই আন্টি ফোন করেছে?’

– ফোনটা ধরে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে কথা ম্যাডাম সালামের জবাব দিয়ে আমাকে অফিসে যাওয়ার আগে তাদের বাসায় যেতে বলল।

– আমি রাইসাকে রেডি করে স্কুলে দিয়ে ওদিক দিয়েই কথা ম্যাডামের বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে কাজের মেয়েটাকে বললাম ম্যাডাম কোথায়?
– স্যার ম্যাডাম উপরে তার রুমে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তিন তলার উঠে ম্যাডামের রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই দেখি ম্যাডাম ড্রেস চেঞ্জ করছে। আমি চোখ দু’টি বন্ধ করে ফেললাম।
– ম্যাডাম চিৎকার দিয়ে উঠলো। ম্যাডাম কান ধরে চিৎকার দিতেই ম্যাডামের টায়ালটা বুক থেক সরে গেল। আমি ম্যাডামের দিকে চোখ মেলে তাকাতেই আবারো চোখ বন্ধ করে এবার আমি চিৎকার দিলাম।

– ম্যাডাম এবার তার দিকে তাকিয়ে চমকে গেল। তার টাওয়াল ফ্লরে পড়ে গেছে। লজ্জায় চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে।

– রাজ প্লিজ চোখ বন্ধ করেন।
– ম্যাডাম আমি চোখ বন্ধই করে আছি।

– এমন সময় কাজের মেয়েটা দরজা এসে বলল আপা মনি কি হয়েছে?
– আমি দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। এ অবস্থায় কাজের মেয়ে দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। কি হলো আপা মনি দরজা খুলছেন না কেন?

– এদিকে ম্যাডামের শাড়ি পরা প্রায় শেষ। কুচি ঠিক করতে পারছে না।
– আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিতেই বলল’ কি হলো চোখ বন্ধ করো।
– আমি দু’হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম। ম্যাডাম শাড়ির কুচি ঠিক করেন। লুঙির মতো দেখাচ্ছে।
– ম্যাডাম তাকিয়ে দেখে সত্যিই কুঁচি লুঙির মতো ফুলে আছে। কেন জানি আজ শাড়ি ঠিক মতো পরতে পারছে না।
– কি হলো চোখ বন্ধ করেও হাসছো কেন?
-কই হাসছি না তো।
– তুমি এখনো হাসছো।
– হাসবো না তো কি করবো, আপনি লুঙির মতো করে শাড়ি পরছেন।
-না হেসে এতো পারো কুঁচিটা ঠিক করে দাও।
– সরি ম্যাডাম আমি পারি না।
– হুমম জানতাম পারবে না। শোন যেটা নিজে পারো না, সেটা কেউ না পারলে তা নিয়ে মজা করো না।
– আবার হাসছো কেন?
– ম্যাডাম আপনার কথা শুনে।
– হইছে হাসতে হবে না। এতই যদি হাসতে পারো দেখি, শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দাও।
– আমি কিছু না বলে ম্যাডামের শাড়ির কুঁচির দিচ্ছি। ম্যাডাম বাঁধা দিতে চেয়েও থেমে গেল। বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ম্যাডাম। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে শাড়ির কুঁচি দিচ্ছি। ম্যাডাম মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে জাদুঘরে রাখা কোন মমি। চোখ জোড়া যে এতো সুন্দর আজ প্রথম চোখে চোখ রেখে বুঝলাম। শাড়ির কুঁচি দেওয়া শেষ হলে। যখন কুঁচিটা নাভির কাছে গুজে দিবো এমন সময় কথা তার দু’চোখ বন্ধ করে ফেলল। কথার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। কথার চেহারাই মৌকে দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে মৌ দাঁড়িয়ে আছে আমি তার শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি। হঠাৎ মনে পড়ল। এটা কি করছি? এটা তো ঠিক না। কথার দিকে তাকিয়ে দেখি কথা চোখ বনধ করে আছে।
– আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। একবার ভাবছি শাড়িটা কোমরে গুজে দেয় আবার মন সায় দিচ্ছে না। শয়তানের প্ররোচনা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করছে। শেষ পর্যন্ত আর পরাতে পারলাম না।
– কি হলো রাজ কুঁচি দিয়েছো?
– না ম্যাডাম চোখ খুলেন।
– কুঁচি গুজে দাওনা কেন।
– ম্যাডাম আমি কুঁচি দিয়ে দিয়েছি। এখন আপনি আপনার কুমড়ে গুজে দেন।
– ওহ্ আচ্ছা। কথা কুমড়ে কুঁচি গুজতে গুজতে বলল’ কি হলো তাকিয়ে আছো কেন?
– আমি কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে। মনে হচ্ছে ঘোরের মাঝে ছিলাম। মাতাল অবস্থায়। না এটা ঠিক না। আল্লাহ আমাকে এসব থেকে রক্ষা করো মনে মনে বলছি।

– রুম থেকে বের হতেই কাজের মেয়েটা জিজ্ঞেস করল’ স্যার রুমে কে চিৎকার দিলো? ‘
– কই না’তো।
– আমি স্পর্ষ্ট শুনতে পেলাম উপর থেকে কারো চিৎকারের আওয়াজ আসলো। আর দরজা খুলছিলেন না কেন?

– ওহ্ টিভি অন ছিল সে শব্দ মনে হয় শুনেছে ।

– হতে পারে স্যার। আচ্ছা আমি আসি।

– চল রাজ আমি রেডি।

– ম্যাডামের দিকে তাকাতেই চোখ নামিয়ে ফেললাম। ম্যাডামকে আজ অপূর্ব লাগছে।
– কি হলো অফিস যাবে না?
– হুম যাবো তো।
– আচ্ছা চলেন।
– আচ্ছা রাজ আমি তোমার চেয়ে কি বড়? আপনা করে ডাকলে নিজেকে বুড়ি বুড়ি লাগে।

-হাহা বুড়ি না ম্যাডাম আপনাকে ৮০ বছরের বুড়ি লাগে।
– সিরিয়াসলি রাজ?আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।

– শুনেন ম্যাডাম রাগের কিছু নাই। আপনি বয়সে বড় না হলেও সম্মানের দিক থেকে আপনি বড়। কারণ আপনি আমার মালিক আর আপনার সামান্য কর্মচারী অামি। মালিক আর কর্মচারীর সম্পর্ক আপনি পর্যন্ত থাকায় শ্রেয়!

– ওহ্ তুমিও না। একটা কথা জিজ্ঞেস করলাম। আর তুমি সবকিছু শুনিয়ে দিচ্ছো। শোন আজকের পর থেকে আমাকে তুমি করে বলবে। এটা আমার মালিক হিসেবে আদেশ।

– আচ্ছা ম্যাডাম।
– আবার ম্যাডাম। আচ্ছা গাড়িতে উঠো।

– আমি পিছনে গিয়ে বসলাম।

– কি হলো রাজ পিছনে কেন? সামনে আসো।

– আমি কিছু না বলে,ম্যামের পাশে গিয়ে বসলাম। ম্যাডাম গাড়ি চালাচ্ছে। আমি পাশে বসে ম্যাডামের বাসায় ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে ভাবছি। কি বিভ্রান্তিতেই না পড়েছিলাম। আল্লাহ আজ মানসম্মান রক্ষা করেছে।

– আচ্ছা রাজ বাহিরের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছো?
– না কিছু না।

– আচ্ছা রাজ বলোতো একটা মেয়ের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস কী?

-আমি বুঝতেছি না কি বলব। তাই চুপ করে আছি।
– কি হলো বলো?

– আমি যতটুকু জানি ম্যাডাম। তাহলো একটা মেয়ের সতিত্ব তার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান।

– ওহ্ আচ্ছা । জানো রাজ ভুল করে একজনকে ভালোবেসেছিলাম। ভালোবাসাটা ওর কাছে স্বার্থের থাকলেও আমার কাছে ছিল পবিত্র। তবে কি জানো ওর সাথে দু’বছরের রিলেশনে কিছুই হয়নি। একটা পাপ্পি পর্যন্ত দিতে দেয়নি। আমি চেয়েছি বিয়ের পর আমার শুদ্ধতম ভালোবাসাটা তাকে উপহার দিতে। কিন্তু পারিনি, সে তার আগেই তার মুখোশ উন্মোচনন করেছে। সত্যিই আল্লাহ তায়ালা মহান। যা করেন তার বান্দার মঙলের জন্যই করেন। তবে কি জানো রাজ আমার সতিত্ব দেখার প্রথম পুরুষটা তুমি। জানি না আজ কি থেকে কি হয়ে গেল। আজ তুমি আমার শরীরের বিশেষ অঙ্গ অনিচ্ছাকৃতভাবে দেখে ফেলেছো । যেটা একটা নারীর জন্য কতটা দৃষ্টিকটু।

তবে কি জানো রাজ আমার সতিত্ব দেখার প্রথম পুরুষটা তুমি। আজ তুমি আমার শরীরের বিশেষ অঙ্গ অনিচ্ছাকৃতভাবে দেখে ফেলেছো ।

– সরি ম্যাডাম ক্ষমা করবেন। আমি সত্যিই ভুল করে ফেলেছি। আর জানতাম না আপনি রুমে ড্রেস চেঞ্জ করতে ছিলেন। আর ভুলটা আমারি নর্ক করে রুমে ঢুকা উচিত ছিল। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দিয়েন।

– রাজ প্লিজ ক্ষমা চেয়ো না। ভুলটা আমারি দরজা লর্ক না করে ড্রেস চেঞ্জ করা। একটা সত্যি কথা বলবো রাজ?
– হ্যাঁ বলেন ম্যাডাম।

– কথা আমার হাতের উপর তার হাতটা রাখল।নরম হাতের স্পর্শ শরীরটা কেমন যেন করে ওঠলো । ম্যাডাম আমার হাতের উপর তার হাতটা রেখে বলল’ রাজ আমি আর দ্বিতীয় কাউকে সতিত্ব দেখাতে চাই না।

– মানে ম্যাডামের হাতের নিচ থেকে হাতটা সরিয়ে ফেললাম। মনে মনে বললাম এ হাত শুধু রাইসাকে পথ দেখানোর। কারো হাতে রাখা নয়।
– কি হলো হাত সরিয়ে নিলে কেন?
– ম্যাডাম অফিস এসে পড়েছি।
– ম্যাডাম কিছু বলতে চেয়েও থেমে গেল।
– গাড়ি থেকে নেমে অফিসে গিয়ে দেখি ডেস্কে একটা চিরকুট।
– ডেস্কে বসে চিরকুটটা দেখে বুঝতে বাকি রইলনা এটা মৌ দিয়েছে।
– চিঠির ভাজ খুলতেই দেখতে পেলাম। কালো কালিতে, কিছু গোছানো শব্দগুচ্ছ। অগুছানো জীবনকে গুছানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
– মৌ উঁকি দিয়ে দেখছে আমি চিঠি পড়ছি।
– আমি চিঠি পড়তে পড়তে শেষে দেখলাস ব্র্যাকেটে লিখা, লাঞ্চের সময় তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। ভালো না বাসতে পারলেও আজ আমার সাথে লাঞ্চ করো। আজ তোমার পছন্দের সরষে ইলিশ রেঁধেছি।
– ইতি, অভাগী!
-চিঠিটা পড়ে শেষ করে বুক পকেটে রেখে দিলাম। লাঞ্চের সময় যখন ডেস্ক থেকে উঠে ক্যান্টিনে যাচ্ছি এমন সময় কথা এসে বলল ‘ রাজ চলো লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। লাঞ্চ করে আসি।
– ম্যাডাম আমি ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবো।
– ধুর! আসো না। আমিও সবার সাথে ক্যান্টিনে খাবো।
– কথা আমাকে এক প্রকার জোর করেই ক্যান্টিনে নিয়ে গেল। ম্যাডাম আমাকে নিয়ে মৌ এর পাশের টেবিলে বসলো। মৌ টিফিন বাটি থেকে খাবার বের করতেই দেখে আমি কথা ম্যাডামের সাথে খাচ্ছি।
– মৌ আমাকে কথার সাথে দেখে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারল না। মৌ এর চোখের পানি গড়িয়ে খাবারে পড়ছে। খাবার মুখে দিতে গিয়েও পারছে না। মন চাচ্ছে মৌ এর চোখের পানিটা মুছে দেয়। কিন্তু না সেটা যে আর সম্ভব না।
– কি হলো রাজ খাচ্ছো না কেন? হঠাৎ কথার চোখ গেল মৌ এর দিকে। কথা খেয়াল করল তার পাশের টেবিলে মৌ কাঁদছে।

– এইযে আপনি কাঁদছেন কেন?

চলবে””””’

বাবার_ভালোবাসা।

পর্বঃ১৫
লেখাঃরাইসার_আব্বু।

– আমি চিঠি পড়তে পড়তে শেষে দেখলাম ব্র্যাকেটে লিখা, লাঞ্চের সময় তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। ভালো না বাসতে পারলেও আজ আমার সাথে লাঞ্চ করো। আজ তোমার পছন্দের সরষে ইলিশ রেঁধেছি।
– ইতি, অভাগী!
-চিঠিটা পড়ে শেষ করে বুক পকেটে রেখে দিলাম। লাঞ্চের সময় যখন ডেস্ক থেকে উঠে ক্যান্টিনে যাচ্ছি এমন সময় কথা এসে বলল ‘ রাজ চলো লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। লাঞ্চ করে আসি।
– ম্যাডাম আমি ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবো।
– ধুর! আসো না। আমিও সবার সাথে ক্যান্টিনে খাবো।
– কথা আমাকে এক প্রকার জোর করেই ক্যান্টিনে নিয়ে গেল। ম্যাডাম আমাকে নিয়ে মৌ এর পাশের টেবিলে বসলো। মৌ টিফিন বাটি থেকে খাবার বের করতেই দেখে আমি কথা ম্যাডামের সাথে খাচ্ছি।
– মৌ আমাকে কথার সাথে দেখে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারল না। মৌ এর চোখের পানি গড়িয়ে খাবারে পড়ছে। খাবার মুখে দিতে গিয়েও পারছে না। মন চাচ্ছে মৌ এর চোখের পানিটা মুছে দেয়। কিন্তু না সেটা যে আর সম্ভব না।
– কি হলো রাজ খাচ্ছো না কেন? হঠাৎ কথার চোখ গেল মৌ এর দিকে। কথা খেয়াল করল তার পাশের টেবিলে মৌ কাঁদছে।

– এইযে আপনি কাঁদছেন কেন?
– মৌ কিছু বলছে না।
– কি হলো মিসেস মৌ কথা বলছেন না কেন? আর ইউ ওকে?

– মৌ এবার ফুপিয়ে কেঁদে দিল। অফিসের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মৌ এর কান্না থামায় কোন লক্ষণ নেই।
– মৌ আপনি প্লিজ কাঁদবেন। বলেন কি হয়েছে।
– মৌ চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,’ ম্যাডাম আমি সত্যিই পোড়া কপালী। আমি আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছি। এখন আমি খেতে গেলেও মনে হয় সে আমার খেতে গেলেও তার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। বাবাকেও হারিয়ে ফেলেছি। সব হারিয়ে ফেলেছি নিজের ভুলের জন্য।
– কথা মৌ এর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল’ আপু আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনা কারী।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে।
– আমার আর খাওয়া হলো না। কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে। খাওয়া শেষ না করেই রাইসাকে নিয়ে আসতে গেলাম। এদিকে আজ রাইসার স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেছে। রাইসা স্কুলের সিঁড়িতে বসে কি যেন অাঁকছে। আমি পা টিপে টিপে রাইসার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাইসার দিকে লক্ষ করে দেখি রাইসা কি যেন আঁকছে। রাইসার কাছে গিয়েই দেখি, রাইসা, আর্ট খাতায় সুন্দর করে ছবি এঁকেছে। ছবিটাতে দেখা যায় একটা ছেলে আর মেয়ের মাঝে ছোট্ট একটা বাচ্চা। বাচ্চাটাকে ছেলে আর মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে। রাইসা আমাকে দেখেই ছবিটা লুকিয়ে ফেলল।
-আমি আর কিছু বললাম না। রাইসাকে নিয়ে গাড়িতে করে রওয়ানা দিলাম।
-গাড়িতে আসতে আসতে, রাইসা বলল’বাবাই তোমার বাবাই কি তোমাকে আমার মতই আদর করেছে?’ তুমি যেমন আমাকে আদর করে খাইয়ে দাও তেমনি তোমাকেও কি আদর করেছে?

-রাইসার কথা শুনে ভয়ানক সে কথাগুলো মনে পড়ে গেল। এখনও বাবার সে কর্মকান্ডের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে মা’র কথা। মা’র কথা মনে পড়তেই চোখে জল এসে যায়। বুকের ভেতরে ১৮ বছর আগের স্মৃতিগুলো ঝলমলে ভেসে ওঠল। চোখের সামনে মায়ের সেই মায়াবী চেহারাটা ভাসতেই চোখের কোণে পানি এসে গেল। রাইসাকে কিছু বলতে পারলাম না।

– ছোট্ট মেয়েটাও হয়তো বুঝতে পারল। তাই আর কিছু বলল না।

– অফিসে আসতেই পিয়ন বলল ‘ কথা ম্যাডাম ডেকেছে। ‘

– আমি রাইসাকে ডেস্কে বসিয়ে রেখে, কথা ম্যাডামের রুমে গিয়ে দেখি ম্যাডাম কে বললাম ‘ ম্যাডাম ডেকেছেন আমার?’
– হ্যাঁ বসো।
– আচ্ছা রাজ আমাকে শাড়িতে কেমন লাগছে?
– ম্যাডাম শাড়িতে বাঙালি মেয়েদের পোশাক। আর প্রবাদে আছে শাড়িতেই নারী। আর শাড়িতে আপনাকে ভালোই লাগে। তবে শাড়িটা আরো ভালো করে পড়তে পারতেন। ব্যাপার না আস্তে আস্তেই পারবেন।

– তুমি কি আমার শাড়ি পড়ার দায়িত্ব নিবে সারাজীবনের জন্য কথা ফিসফিস করে বলল।
– ম্যাডাম কিছু বললেন আমায়?
– না বললাম, শাড়ি পড়াটা শিখতে হবে।
– আচ্ছা রাজ আমি কি দেখতে এতই খারাপ?

– না খারাপ হবেন কেন?আপনি দেখতে অনেক কিউট। যে কেউ দেখে আপনার প্রেমে পড়ে যাবে।

– আমি তো চাই না যে কেউ আমার প্রেমে পড়ুক। আমি চাই শুধু একজন আমার প্রেমে পড়ুক।

-রাজ দেখতো আমার কপালের টিপটা টিক জায়গায় আছে কিনা?

– আমি কথা ম্যাডামের মুখের দিকে এই প্রথম ভালোভাবে তাকালাম। ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে দেখি ম্যাডামের কপালের টিপটা বড্ডবেমানান লাগছে। কারণ টিপটা ঠিক জায়গায় নেই। এক প্রকার টিপটা দেখে হেসেই দিলাম।
– কি হলো হাসতেছো কেন?

– কি হলো বলো রাজ।হাসছো কেন? বলো, টিপটা ঠিক জায়গায় আছে?

– ম্যাডাম টিপটা বাম দিকে বেশি সরে গেয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে ছোট্ট বাচ্চারা যেমন সাজু-গুজু করলে সবকিছু উলট-পালট হয়ে যায় তেমনি আপনারো হয়ে গেয়েছে।
– আচ্ছা। তুমি যদি কিছু মনে না করো, তাহলে টিপটা ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিবে।
– সরি ম্যাডাম এটা সম্ভব।
– রাজ সরি বলার কি আছে, আমি তোমাকে আমার বন্ধু মনে করি। আর বন্ধু হয়ে এটা পারবে না।
– ম্যাডাম আমরা মনে হয় বন্ধুত্বের লিমিট ক্রস করে ফেলছি।
– ধ্যাত টিপটা ঠিক করে দিবে এতে এত কিছু বলার কি আছে।

– প্লিজ রাজ, সবাই দেখে হাসুক এটা চাও। অফিসে রাফসান

ফাইল দিতে এসে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। তাই তোমাকে বললাম।

– আচ্ছা ঠিকআছে আমি, ম্যাডামের টিপটা তুলে যখন কপালের মাঝখানে বসিয়ে দিতে যাবো ঠিক তখনো ম্যাডাম অ্যাঁ করে ওঠল। ম্যাডাম চোখে কি হলো?
– রাজ দেখতো চোখে পোকা গিয়েছে নাকি?
– আমি চোখে ফুঁ দিচ্ছি এমন সময় মৌ ম্যাডামের সাইন নিতে এসে দেখে আমি ম্যাডামের মুখটা কাছে নিয়ে কি যেন করছি।
– মৌ ভাবছে আমি কথাকে কিস করছি। মৌ চোখ বন্ধু করে আছে। কারণ সে এসব সহ্য করতে পারবে না। তাই চোখ বন্ধ করেই বলল ম্যাম আসবো?
– কথা ম্যাডাম মৌকে আসতে বলল।
– মৌ রুমে এসে ম্যাডামকে বলল’ ম্যাডাম এখানে একটা সাইন লাগবে।
– ম্যাডাম সাইন দিয়ে মৌকে পড়ে আসতে বলল।
– মৌ চলে গেলে আমি ম্যাডামকে বললাম ‘ ম্যাডাম আমাকে কেন ডেকেছিলেন?’

– ম্যাডাম নতুন প্রজেক্টের ফাইল দেখিয়ে বলল’ মিঃরাজ আপনাকে এ সাইট হ্যান্ডেল করতে হবে। প্রায় বিশ কোটি টাকার কাজ। তাই বিশস্ত কাউকে পাচ্ছি না ।
– ম্যাডাম এত বড় দায়িত্ব আমি কি নিতে পারবো?যদি কোন চিট করি?
– রাজ আমি তোমাকে আমার চেয়ে বেশি বিশ্বাস করি। তাই কাজটা দেখাশোনার দায়িত্ব তুমিই নাও।
-আচ্ছা ম্যাডাম আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো।
– ঠিক আছে এখন তুমি আসো।

– আচ্ছা ম্যাডাম।
– আর হ্যাঁ,নীল শার্টে তোমাকে সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে।

– এদিকে মৌ রাইসাকে আমার ডেস্কে বসে থাকতে দেখে, রাইসার কাছে অনেকগুলো চকলেট নিয়ে আসে। অনেক
মামনি কেমন আছো?
– জি আন্টি ভালো। আপনি?
– রাইসা আন্টি ডাকে না মমকে। আমি না তোমার মম?
– না আপনি আমার আন্টি। আমার বাবাই আমার মম।
– আমি মৌ আর রাইসার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি।
– রাইসা মামনি মম ডাকো তোমাকে অনেক চকলেট দিবো?
– ছি, আমি চকলেট খায় না। চকলেট খেলে দাঁতে পোকা ধরে। আর আপনি চলে যান। আমার বাবাই দেখলে কষ্ট পাবে। কি হলো কাঁদছেন কেন?
– একবার মম বলে ডাক মা। ডাকটা শুনেই চলে যাবো। রাইসা মামনি আমার দেখ তোমার মম কান্না করছে একবার মম ডাকো না। আমাে বুকটা যে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে।

– প্লিজ চলে যান। আপনি আমার মম হতে পারেন না। মনে নাই আমার বাবাই যখন দাঁড়াতে পারত না। ক্রাচে ভর করে হাঁটতো তখন চলে গিয়েছেন। আমি না আপনাকে মম ডেকে কান্না করেছি। আপনি শুনেননি। জানেন বাবাইকে যখন আপনার বাবা ধাক্কা মেয়ে ফেলে দিয়ে ক্রাচ ভেঙে দিয়েছিল। সেদিন আমারর বাবা অনেক কেঁদেছিল। আর আপনি তখন পঁচা আঙ্কেলটাকে কবুল বলেছিলেন। আমার বাবা ভাঙা ক্রাচে ভর করে আর আমাকে ধরে উঠেছিল। বলেছিলাম আপনাকে আমার বাবাই এর কষ্ট হচ্ছে আপনি কোন কথা বলেননি। কথা আন্টির বার্থডেতে আপনাকে মম ডাকার জন্য সবার সামনে কি বলেছেন মনে নাই?

আপনি প্লিজ আর কোনদিন মম ডাকতে বলবেন না। আর কোন দিন চকলেট দিতে আসবেন না। জানেন আমার বাবাই যখন আমাকে বুকে নিয়ে গালে চুমু দেয় তখন কোন চকলেটের কথা মনে থাকে না।

– আমি এবার আর পারলাম না শব্দ করেই কেঁদে দিলাম।
– মৌ আমাকে দেখেই রাইসার সামনে জড়িয়ে ধরল।
– আমি মৌ এর আকস্মিক এ অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলাম। মৌ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল’ কতো কিস করতে মন চায় আমাকে কিস করো।’ এই বলে তার ঠোঁট জোড়া আমার ঠোঁটে মিলিয়ে দেওয়ার আগেই মৌ এর দু’গালে কষে চড় বসিয়ে দিলাম।

চলবে”””””

বিঃদ্রঃভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।