বাবারবভালোবাসা পর্ব-১২+১৩

0
302

বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ১২
লেখাঃরাইসার_আব্বু।

– নীল শাড়িতে এতটা সুন্দর লাগে সাথিকে হয়তো না দেখলে অজানাই থেকে যেতো। চোখের কোণে কাজল দেওয়াতে সাথিকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। যে কেউ তাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলবে। আমি সাথিকে নিয়ে রওয়ানা দিলাম। প্রায় ৪ ঘন্টা জার্নি শেষে অবশেষে কাঙ্খিত জায়গায় এসে পোঁছালাম। সারারাস্তায় সাথি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছিল। কিন্তু আজকের পর আর কখনো এভাবে ধরবে না । গাড়ির দরজা খুলে বললাম আসো।
– সাথি গাড়ি থেকে নেমেই কেমন যেন চমকে গেল। রাজ তুমি এখানে কেন নিয়ে আসলে? আমার ভয় হচ্ছে। ভয়ের কিছু নেই আজকের পর আর তুমি আমার জন্য পাগলামী করবে না।
– রাজ তুমি মানসিক হসপিটালে কেন নিয়ে আসলে? আমার পাগল দেখে ভয় করে।
– ভয়ের কি আছে। পাগলরাও তো মানুষ। আসো ভেতরে যাই।
– সাথি আমার হাতটি শক্ত করে ধরে আছে। মানসিক হসপিটালে গিয়ে এক নার্সকে জিজ্ঞেস করলাম সবুজ কোন রুমে আছে।
– সাথি সবুজের কথা শুনে কেমন করে তাকালো।
– নার্স অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাথির দিকে। মনে হচ্ছে ভীনগ্রহের প্রাণি দেখছে।
– কি হলো বলেন? সজিব কোন রুমে আছে?
– স্যার আসেন নিয়ে যাচ্ছি।
– রাজ কোন সবুজের কথা বলছো?
– আসো দেখলেই চিনতে পারবে।
– এদিকে নার্স সজিবের রুমটা দেখিয়ে দিল। আমরা দু’জন সজিবের রুমে ঢুকতেই দেখি সজিব মাথা নিচু করে কি যেন আকঁছে।
– সাথি খেয়াল করে দেখলো রুমটাতে অনেকগুলো ছবি আকাঁনো। সবগুলো তারই।
– কি হলো সাথি অবাক হলে?
– চিনো ছেলেটাকে?
– সাথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
– কি হলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
জবাব দাও?
– রাজ সজিব আমার বেস্টফেন্ড ছিল।
– শুধু কি বেস্টফেন্ড?
– হুমম।
– বেস্টফেন্ডের সাথে কি বেডরুম শেয়ার করা যায়? জানো সাথি তোমার কাছে হয়তো বেডরুম শেয়ার করা আধুনিকতা। কিন্তু কারো কাছে সেটা জীবনমরণের প্রশ্ন।
– তোমাকে সজিব ভালোবাসতে জানতে তুমি?
– হুম আমি তো না করে দিয়েছি।
– ভালোবাসার অভিনয় করে, না করে দেওয়া বাহ তোমরা মেয়েরা পারোও বটে।
– রাজ আমি সজিবকে বলেছি আমি ওকে ভালোবাসি না। হ্যাঁ আমি আর ওই যা করেছি এতে সে ভাবতেই পারে আমাদের মাঝে কিছু ছিল।
– খুব সুন্দরভাবে কথাগুলো বললে। জানো সাথি, ছেলেটা তোমাকে কতো ভালোবাসে? যে ছেলেটা প্রতিদিন সকালে ভার্সিটিতে তোমাকে একবার করে উইশ করতো। তোমাকে সব কিছুর থেকে আগলে রাখে। তুমি যখন হসপিটালে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকো। সারা রাত ছেলিটি তোমার পাশে ছায়ার মতো থাকে। যে ছেলেটা কতো মেয়ের প্রপোজাল তোমার জন্য রিজেক্ট করেছে আর তুমি কি করেছ তার সাথে একটিবার ভেবে দেখবে? শোন তুমি কখনো সবুজকে বন্ধু ছাড়া অন্য কোন নজরে দেখনি। কিন্তু তোমাদের আচার-আচরণ বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড এর সীমা অতিক্রম করেছিল। তুমি ফেন্ড ভাবতে পারলেও সবুজ ভাবতে পারেনি। সেজন্য মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরে এসেছে।
– আচ্ছা একটিবার মনে করে দেখবে, ভার্সিটির সজিবের সাথে দেখা হওয়া শেষ দিনের কথা। মনে নেই একটা ছেলে কতটা ভালোবেসে তোমার কাছে ভালোবাসা ভিক্ষা চেয়েছিল। বাট তুমি অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছ। কি অপরাধ ছিল, তোমার অভিনয়টাকে সত্যিকারের ভালোবাসা ভেবে তোমার কাছে ভালোবাসা ভিক্ষা চাওয়া।
– রাজ আমি জানি আমার ভুল হয়েছে, আমি তো সজিবকে বলেছি আমি তাকে ভালো ফ্রেন্ড মনে করি। কিন্তু তার পাগলামী চরমে পৌঁছে ছিল।
– তুমি যা করেছ সজিবের সাথে সেখানে আমি থাকলে তাই ভাবতাম। জানো সাথি সবুজ তোমাকে সত্যি অনেক বেশি ভালোবাসে।
-আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।
– ঠাস!লজ্জা করে না এসব বলতে ‘ কি বললে আরেকবার বলো?’ ভালোবাসা কি জানো? ভালোবাসা বুঝো? শুনো তাহলে, এই যে দেখছো না পাগলটা তোমার দিকে ফ্যাল, ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সমস্ত রুম জুড়ে তোমার ছবি আঁকিয়ে টানিয়ে রেখেছে। কেন জানো তোমাকে ভালোবাসে সেজন্য। তোমাকে ভালোবাসার জন্য সে আজ মানসিক হসপিটালে। মনে আছে তোমার ভার্সিটিতে যেদিন সজিবকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে সেদিনের কথা। বলেছিলে কখনো যেন তোমার সামনে না আসে। আসলে তোমার মরা মুখ দেখবে। ছেলেটা সেদিন ভেবেছিল তোমাকে আর তার মুখ দেখাবে না। তাই সুসাইড করতে গিয়েও আজ বেঁচে আছে। বাইক একসিডেন্টে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ার পর থেকেই পাগল। উল্টা-পাল্টা কথা বলে। তবে একটা বিষয় কি জানো? কতটা ভালোবাসলে একটা ছেলের মস্তিষ্ক বিকারগ্রস্ত হওয়ার পরও ভালোবাসার মানুষটি তার সমস্ত ভাবনাতে থাকে।
সবুজের সমস্ত ভাবনা জুড়ে তুমি রয়েছো সাথি আর যেখানে তুমি আমার ভাবনা তো দূরের কথা আমার মনের কোন একটি কোণেও নেই। আমি জানি না তুমি তোমার পাপের প্রায়শ্চিত কিভাবে করবে। তবে একটা কথা বলি তুমি সবুজের কাছে যতটা সুখে থাকবে পৃথিবীর অন্য কারো কাছে থাকতে পারবে না। তোমার ভালোবাসা দিয়েই পারবে সবুজকে সুস্থ করতে। আর শুনো, আমি তোমার জীবনে মরিচীকা ছিলাম। যার পিছনে অযথাই ছুটেছে। কি হলো কাঁদছো কেন?
– রাজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি বুঝতে পারিনি। আমি সবুজকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তোমার মাধ্যমে সবুজকে বুঝতে পেয়েছি। দোয়া করো ওকে যেন ভালো করতে পারি।
– হুমম অবশ্যই।
-আন্টিকে আর আঙ্কেলকে ফোন করে নিয়ে আসলাম।
– আঙ্কেল আপনাকে কথা দিয়েছিলাম, আপনাদের ছেলেকে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিব। আমার কথা রাখলাম। আমি এখন আসি। আর হ্যাঁ সাথি যেদিন আঙ্কেল আর তুমি, তোমার বিয়ের কথা নিয়ে আমার বাসায় এসেছিল। তার পরের দিন সবুজের বাবা আমাকে সব কিছু খুলে বলে। যাইহোক ভালো থেকো। আরেকটা কথা সবুজ কিন্তু দেখতে অনেক কিউট। একটাবার ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখো।

– সাথি চোখে পানি মুখে হাসির ঝিলিক দেখিয়ে বলল’ সারাজীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ আমার ভুলটা এভাবে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। ‘

-যাইহোক আমি আসি। আর হ্যাঁ সাথি সবুজকে বাসায় নিয়ে যেয়ো। তার যে মেডিসিনটার প্রয়োজন ছিলো সেটা তার সামনেই।

– হুমম অবশ্যই!

– আমি হসপিটাল থেকে বের হয়ে সোজা সাথির বাবার কাছে সব ঘটনা খুলে বললাম। আঙ্কেল কিছু না বলে বুকে টেনে নিয়ে বলল’ রাজ বাবা তুমি সত্যি পরশ পাথর। দোয়া করি আল্লাহ্ যেন তোমাকে সবসময় ভালো রাখে।
– আল্লাহ্ কবুল করুক আঙ্কেল। আমি আসি মেয়েটা মনে হয় চিন্তা করছে। সন্ধ্যায় দিকে কথাকে ফোন করে বললাম, রাইসা কি করে?
– রাজ এতোক্ষণে তোমার ফোন করার সময় হলো? আর তোমার ফোনটাও বন্ধ। আর হ্যাঁ তুমি যেখানেই থাকো তাড়াতাড়ি আসো

~কেন কি হয়েছে?
~কিছু হয়নি। রাইসা সারাদিন কিছু খায়নি । কি আগে বলবে তো?
– তোমার ফোন তো সারাদিন ধরেই বন্ধ পাচ্ছি।
~ আচ্ছা আমি আসছি।
– তাড়াহুড়া করে বাসায় গিয়ে দেখি রাইসা রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে।
– দরজার কাছে গিয়ে বললাম’ মামনি দরজা খুলো বাবা আসছে তো। ‘ভেতর থেকে কোন কথা বলছে না। মামনি আমার না অনেক ক্ষুধা লেগেছে। আমাকে খাইয়ে দিবে না। আসো খাইয়ে দিবে।
– কাকে ডাকছেন সে খাবে না কাউকে খাইয়েও দিবে না। সে রাগ করেছে।
– মামনি লক্ষি মা আমার রাগ করে না। আমার ভুল হয়েছে এই যে কান ধরছি আর কখনো এমন হবে না।
– তুমি কান ধরলেও আমি দেখতে পাবো না।
– তাহলে দরজা খুলে দেখ আমি কান ধরেছি।
– দরজা খুলা যাবে না। আমি কোন দিনই দরজা খুলবো না। আর খাবোও না। রাইসা মা আমার আর অভিমান করে থেকো না। আমার না অনেক ক্ষুধা লেগেছে। একটু খাইয়ে দিবে?
– আমি খুলবই না খুলবই না।
– প্লিজ মা আমার তুমি না বলেছে তুমি আমার মা। তুমি দেখো না তোমার সন্তানের ক্ষুধা পেয়েছে। তুমি খাইয়ে দাও না। তোমার ছেলেটা যে খেতে পারে না একা।
– আমার কোন বাবাই নেই। আর আমি কারো মা নই সো দরজা খুলবো না
– রাইসার মুখে ‘আমার বাবাই নেই। আমি কারো মা নই ‘কথাটা শুনে বুক ফেঁটে কান্না আসছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম সত্যিই কি আমি তোর বাবাই নই?
– রাইসা বুঝতে পারছে আমি কাঁদছি। রাইসা দরজা খুলেই দেখে আমি সত্যিই কাঁদছি।
– বাবাই তুমি কেঁদো না। প্লিজ কেঁদো না আমার বাবাই তুমি। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না বাবাই। আর কখনো বলবো না। বাবাই আমাকে বুকে নাও। আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবাই।
– ফ্লরে হাঁটুগেড়ে বসে বললাম’ আরে মা বুকে আয়। ‘
– রাইসা বুকের সাথে একবারে মিশে যায়। কিছুক্ষণ পর ছোট্ট পাখির মতো বলছে ‘ বাবাই তুমি বুঝি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো? আমার কথায় কষ্ট পেয়ো না বাবাই। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমার জীবনের মতো ভালোবাসি। জানো বাবাই আমি সারাদিন খায়নি। তুমি খাইয়ে দিবে আমায়? আর হ্যাঁ বাবাই কখনো কাঁদবে না। তুমি কাঁদলে না আমার বুকে কেমন কেমন করে। বলো বাবাই আমার কথায় কিছু মনে করোনি? বলো না বাবাই। বাবাই, ও বাবাই, বাবাই, বাবাই কাঁদছো কেন? রাইসার গালে মুখে চুমু দিয়ে বললাম ‘ মা’রে তুমি আমার পৃথিবীরে মা। ‘ এখনো বেঁচে আছি তোর জন্য। তোমার ছোট্ট মুখে মধুর কন্ঠে বাবাই ডাকটা শোনার জন্য। তুই যে আমার কলিজারে মা। তুকে ছাড়া বাঁচা সম্ভব না। আর তোর বাবাই ডাকটা আমার অক্সিজেন। এই ডাকটা বন্ধ হয়ে গেলে আমি যে আর বাঁচবো না।
– বাবাই চলো খাবে। রাইসা আমাকে হাত ধরে টেনে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিল। রাইসা তার হাত ধুয়ে খাবার আমার মুখে তুলে দিব যখন তখন আমার কাছে মনে হল ‘ আমার মা আমার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। আমিও রাইসাকে খাইয়ে দিচ্ছি। বাবা-মেয়ের দু’জনেরই চোখের জল বেয়ে পড়ছে কিন্তু ঠোঁটের কোণে রৌদ্রের ঝলকানি।
– এদিকে কথা আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে বাবা মেয়ের ভালোবাসা মনে হচ্ছে পৃথিবীর সকল ভালোবাসার উর্ধ্বে পবিত্রতম ভালোবাসা। চোখের কোণেবিন্দু বিন্দু জল দেখা যাচ্ছে।
– বাবাই দেখ আন্টি কাঁদছে। রাইসার কথায়, কথার দিকে তাকিয়ে দেখলাম কাঁদছে। আমার খেয়ালই ছিল না কথা ম্যাডাম আমাদের বাসায়।
– মামনি তোমার আন্টি খেয়েছে?
– না বাবাই বলেছে একসাথে খাবে।
– ওহ্ আচ্ছা। ম্যাডাম সরি, রাইসার না খেয়ে থাকার কথা শুনে সব ভুলে গিয়েছিলাম। প্লিজ মনে কিছু নিবেন না। আসেন ডিনার করি।
– কথা কিছু না বলে বাধ্য মেয়ের মতো, টেবিল বসে পড়ল।
– আন্টি তুমি খাচ্ছো না কেন?
– ম্যাডাম কি হলো খাচ্ছেনন না কেন?
– প্লিজ রাজ এটা আমার অফিস না। আর এখানে ম্যাডাম বলে ডেকো না।
– ও বুঝেছি আন্টি তোমাকেও খাইয়ে দিতে হবে। -কথা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক জবাব দিল।
– রাইসা কথাকে খাইয়ে দিয়ে বলল ‘ আন্টি তুমি এখন বাবার মুখে খাবার তুলে দিবে। বাবাই দিবে আমাকে।
– কথা যখনি আমার মুখে খাবার তুলে দিবে এমন সময় দরজা খুলে গেল। দরজার দিকে তাকাতেই দেখি মৌ! মৌ স্পর্ষ্ট দেখতে পেল কথা আমার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। মৌকে দেখে রাইসা বলল’ বাবাই দেখ মম —

চলবে——

বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ১৩
লেখাঃরাইসার_আব্বু।

– ওহ্ আচ্ছা। ম্যাডাম সরি, রাইসার না খেয়ে থাকার কথা শুনে সব ভুলে গিয়েছিলাম। প্লিজ মনে কিছু নিবেন না। আসেন ডিনার করি।
– কথা কিছু না বলে বাধ্য মেয়ের মতো, টেবিল বসে পড়ল।
– আন্টি তুমি খাচ্ছো না কেন?
– ম্যাডাম কি হলো খাচ্ছেনন না কেন?
– প্লিজ রাজ এটা আমার অফিস না। আর এখানে ম্যাডাম বলে ডেকো না।
– ও বুঝেছি আন্টি তোমাকেও খাইয়ে দিতে হবে। -কথা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক জবাব দিল।
– রাইসা কথাকে খাইয়ে দিয়ে বলল ‘ আন্টি তুমি এখন বাবার মুখে খাবার তুলে দিবে। বাবাই দিবে আমাকে।
– কথা যখনি আমার মুখে খাবার তুলে দিবে এমন সময় দরজা খুলে গেল। দরজার দিকে তাকাতেই দেখি মৌ! মৌ স্পর্ষ্ট দেখতে পেল কথা আমার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। মৌকে দেখে রাইসা বলল’ বাবাই দেখ মম ডেকেছিলাম না ভুল করে সে আন্টি। ‘
– আমি মৌকে দেখে চমকে ওঠলাম। রাতে মৌ কেন আমার বাসায়?
– মৌ আপনি রাতে রাজের বাসায়?
– ওহ্ আপু আর বলবেন না। এদিকে যাচ্ছিলাম। গেটে আপনার গাড়ি দেখে ভাবলাম কিছু হয়েছে নাকি।
– ওহ্ আচ্ছা ভেতরে আসেন।
– আমি কিছু বলছি না মাথা নিচু করে আছি।
– আন্টি ডিনার করেছেন?( রাইসা)
– মৌ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
– আচ্ছা আমি এখন আসি।
– চলে যাবেন কিছু খাবেন না?
– না এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম রাইসাকে দেখে যায়।
– কথা অনেকটা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো মৌ এর দিকে। মৌ চলে গেলে, কথা বলল ‘ আমি তাহলে আসি রাত প্রায় নয়টা বাজতে চলল।
– আন্টি থেকে যাও না খুব মজা হবে।
– অন্যদিক মামনি। আজ আসি কেমন?
– না না তুমি যেতে পারবে না।
– হুম মামনি আমি তো থাকতেই চাই চিরজিবন। তোমার বাবাই তো রাখবে না
– কি বললেন ম্যাডাম?
– ও কিছু না বাদ দাও। আর হ্যাঁ রাইসাকে রেখে আর কোথাও যেয়ো না কেমন?
– আচ্ছা ঠিক আছে। ম্যাডাম আপনাকে কি এগিয়ে দিয়ে আসতে হবে।
– না এগিয়ে দিতে হবে না গাড়ি আছে। ত্রিশ মিনিটের মতো লাগবে।
– আচ্ছা।
– কথা চলে গেলে রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। রাইসা চোখ বন্ধ করে এটা-সেটা বলছে।
– আচ্ছা বাবাই, আমি একটা কথা বলবো?
– হ্যাঁ মা বলো কি বলবে?
– জানো বাবাই আজ মমকে দেখে জড়িয়ে ধরতে মন চেয়েছিল। মম যখন এসেছিল তখন খুব করে মনে চাচ্ছিল মমকে বলি ‘মম আমাকে খাইয়ে দাও।’
– আমি কোন কথা বলছি না। অতীতের কথাগুলো বারবার মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতর কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে।
– বাবাই তুমি বুঝি মন খারাপ করলে? বাবাই মন খারাপ করো না। আমি কখনো মম ডাকবো না কাউকে তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেয়ো না বাবাই তাহলে আমি বাঁচবো না। জানো বাবাই আজ সারাদিন তুমি খাইয়ে দেওনি বলে আমি খাইনি। তাই অভিমান করে তোমাকে বকা দিয়েছি পঁচা কথা বলেছি। জানো বাবাই যখন বকা দিয়েছি তখন আমি খুব খুব কেঁদেছি। তুমি মন খারাপ করো না।
– পাগলী মেয়ে আমার মন খারাপ করবো কেন আমি। তুই না আমার মা। তবে কখনো বাবাই ডাকা বন্ধ করিস না মা। বাবাই ডাকা বন্ধ করে দিলে আমি ধম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। তুই যে আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। এতো কষ্ট, লাঞ্ছনা ভোগ করার পরও তোর বাবাই ডাক শোনার জন্যই বেঁচে আছি।

-বাবাই তুমি মরার কথা বলো না প্লিজ। তুমি কান্না করছো কেন? মায়ের কাছে সন্তান কাঁদলে মায়ের কষ্ট হয় না? হাসি তো বাবাই।
-আচ্ছা এখন ঘুমাও মামনি কাল স্কুল আছে।
– রাইসা ঘুমিয়ে গেল। পূণির্মার চাঁদের আলো জানালার কাঁচ ভেদ করে মেয়েটার উপর পড়ছে। চাঁদের আলোতে নিষ্পাপ মুখটা খুব সুন্দর লাগছে। রাইসার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই।

– মাঝরাতে কারো চাঁপা কান্না শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত তিনটা ছুঁইছুঁই। আমি পা সরাতে পারছি না। পা দু’টো কে যেন ধরে রেখেছে।
– পায়ের দিকে তাকাতেই বুকটা ধর্ক করে ওঠল! মৌ এতোরাতে!
– আপনি?
– মৌ কিছু বলছে না পা দু’টো জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। পা ছাড়া আর এতরাতে কেউ দেখলে কি ভাববে?
– রাজ আমাকে আপনি করে বলো না। আমি পারছি না। আমাকে হয় মেরে ফেলো নয়তো বুকে টেনে নাও।
– আশ্চর্য এতরাতে এসব কি বলছেন?
– রাজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। প্লিজ রাজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

– ক্ষমা তুমি কেন চাচ্ছো? ক্ষমা তো আমি তোমার কাছে চাইবো। কারণ আমি তোমার জীবনটাকে নষ্ট করে রে দিয়েছি।
– না রাজ তুমি আমার জীবনটাকে সাজিয়ে দিয়েছিলে। আমি মিথ্যা ভালোবাসার পিছনে ছুটে ছিলাম। আমাকে ক্ষমা করবে না?
– জানো রাজ কেউ তোমার সাথে কথা বললেও আমার সহ্য হয় না। আমি তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছি না।
– আপনি প্লিজ পা ছাড়েন।
– যতক্ষণ না ক্ষমা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত পা ছাড়বো না।
– ক্ষমা আপনাকে অনেক আগেই করে দিয়েছি।
– আমাকে একটু বুকে নিবে? আমার না খুব কষ্ট হচ্ছো। মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। নিবে একটু বুকে?
– এ বুকে আমার মেয়ের জন্য শুধু জায়গা রয়েছে অন্য কারো জন্য নয়। কিভাবে আপনাকে বুকে নিবো বলবেন? যে কিনা ছোট্ট বাচ্চাকে রেখে নিজেকে অন্যের কাছে সপে দিতে ব্যস্ত? যে অসুস্থ স্বামীকে রেখে নিজের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত? ছোট্ট বাচ্চা যখন, অসুস্থ বাবার মাথায় বারবার জলপট্টি দিয়ে দেয় আর অন্যদিকে তার মা ড্রিংকস করে আছে। যে নিজের মেয়েকে সন্তান বলে পরিচয় দেয় না তাকে কিভাবে বুকে নিবো?

– মৌ কিছু বলছে না চোখের সামনে অজস্র স্মৃতি ভেসে ওঠছে। চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে।
– মন চাচ্ছে মৌ এর চোখের জলগুলো মুছে দিয়ে বুকে টেনে নেয়। কিন্তু না বুকে যে সবাইকে নেওয়া যায় না। যায় কাছে ভালোবাসা চেয়ে যৌন চাহিদাটাই মেটানো শ্রেয় তাকে কিভাবে বুকে জড়িয়ে নেয়।

– রাজ আমাকে বুকে নিবা না? রাজ তোমার কাছে আমার ভালোবাসা ভিক্ষে চাইছি। আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না। জানো রাজ ‘রাইসা আমাকে মা বলে ডাকে না। ‘ খুব কষ্ট হয় রাইসাকে দেখলে। যে ছিল আমার বুকে তাকে অন্য কেউ বুকে নিয়ে ঘোমায়। অন্য কেউ তাকে খাইয়ে দেয়। কষ্টে কলিজাটা ফেঁটে যায়। আমি তোমার কাছে ভিক্ষা চাই ভালোবাসা। তোমার পায়ের নিচে স্থান দেও আমায়।
– এদিকে ফজরের আযান দিচ্ছে। মৌ ফ্লরে বসে কাঁদছে। মৌ এর কান্না ঠিক কলিজাতে এসে লাগছে। সহ্য করতে পারছি না আর তাে কষ্ট। মৌ যদি এভাবে আর কিছুক্ষণ কান্না করে তাহলে আমি আর মৌকে দূরে সরিয়ে দিতে পারবো না। তাই মৌকে বললাম’ প্লিজ আপনি চলে যান। ‘
– রাইসা আপনাকে দেখলে মন খারাপ করবে।
– তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে বুকে না নিবে ততক্ষণ পর্যন্ত এখান থেকে যাবো না। আর কোথায় যাবো বলো? আমার যে যাওয়ার মতো কোন জায়গা নেই। নাও না আমাকে বুকে।
– আমি চোখ বন্ধ করে আছি। আমি মৌ এর চোখের পানি দেখতে পারছি না।
– হঠাৎ কারেন্ট শর্ক খাওয়ার মতো শর্ক খেলাম। মৌ আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি পারছি না মৌকে ছাড়াতে। মন বলছে মৌকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু না পারলাম না মৌকে বুক থেকে সরিয়ে, গালে চর বসিয়ে দিলাম।
– মৌ করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– কি হলো ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? আপনার কি করে সাহস হয় আমাকে জড়িয়ে ধরার? আপনাকে একদিন বলেছিলাম না ‘ খুব কাঁদবেন আপনি। আমার প্রতিটা স্মৃতি আপনাকে কাঁদাবে। খুব করে কাঁদালে। ‘ আজ সে ক্ষণ। এটাই নিয়তি।
– মৌ এখন অনেকটাই শব্দ করে কাঁদছে।
– আমার ভেতরটা চুর-মার হয়ে যাচ্ছে।
– কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। মৌকে পারছি না আর কিছু বলতে। মৌ এখানে থাকলে আমি নিজের সাথেই নিজেই যুদ্ধ করে হেরে যাবো। তাই মৌকে বললাম ‘ তুমি যদি এখান থেকে না যাও এখন। তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে। ‘

– মৌ’ কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।মৌ এর ফিরে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মৌ চলে গেলে বুকের পাহাড় সম কষ্ট নিয়ে, বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম। বিছানায় শুয়ে শুয়ে মৌ এর কথা ভাবছি এমন সময় রাইসার দিকে দৃষ্টি গেল। রাইসার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখি, রাইসার চোখে পানি। চোখ দু’টি বন্ধ করা। বুঝতে আর বাকি রইল না রাইসা সব দেখছে।
– রাইসার চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললাম ‘ আমার মা’ টা কান্না করে কেন?
– বাবাই মম চলে গেছে?
– হুমম! তুমি জেগেছিলে মামনি?
– হুমমম বাবাই, মমের কান্না শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বাবাই জানো মমকে যেতে দিতে মন চাচ্ছিল না। কিন্তু মম যে তোমাকে কষ্ট দিয়েছে। এখনো মনে পড়ে তোমার কান্নার কথা মমের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে। বাবাই আমাকে বুকে নিবে?
– রাইসাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বাবা-মেয়ে কাঁদলাম। জানি না এ কান্না কবে শেষ হবে।

.
এদিকে পাঁচটা বেজে গেছে। তাই অযু করে ফজরের নামাযটা পড়ে নিলাম।

– ফজরের নামায পড়ে রাইসার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করছি এমন সময় রাইসা কিচেনে এসে বলল ‘ বাবাই আন্টি ফোন করেছে?’

– ফোনটা ধরে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে কথা ম্যাডাম সালামের জবাব দিয়ে আমাকে অফিসে যাওয়ার আগে তাদের বাসায় যেতে বলল।

– আমি রাইসাকে রেডি করে স্কুলে দিয়ে ওদিক দিয়েই কথা ম্যাডামের বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে কাজের মেয়েটাকে বললাম ম্যাডাম কোথায়?
– স্যার ম্যাডাম উপরে তার রুমে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তিন তলার উঠে ম্যাডামের রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই দেখি ম্যাডাম ড্রেস চেঞ্জ করছে। আমি চোখ দু’টি বন্ধ করে ফেললাম।
– ম্যাডাম চিৎকার দিয়ে উঠলো ‘

চলবে ””