বাবুই পাখি পর্ব-৫২+৫৩

0
827

বাবুই পাখি🌿
#পর্ব_৫২
Writer-Afnan Lara
.
পরেরদিন সকালে পুতুল বেশ প্রফুল্ল মনে ইমাদের আগেই উঠে নাস্তা বানাতে চললো।অতীতের সব মুছে ফেলার কিঞ্চিত প্রচেষ্টা।হয়ত এটাতেই তার সুখ নিহিত।
মানুষের জীবনের সুখ কোথায় গিয়ে আটকে আছে তা জানলে জীবনে দুঃখের দেখা মেলা দূর্লভ।পুতুল রাতে না ঘুমিয়ে শুধু এসবই ভেবেছে।যে মানুষটা তাকে এত ভালোবাসে।তার একটা আবদার কি সে রাখতে পারবেনা?অবশ্যই পারবে।আর তাই সকাল সকাল সে জোর করেই হাসছে।আজ সারাদিনে মুখ থেকে হাসি লুকাতে দেবেনা সে।
চালু রাখবে অফুরন্ত হাসির ঠল।
এতশত ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেরুতেই ধাক্কা খেয়ে গেছে তিয়াসার সঙ্গে।হঠাৎ বাসায় একটা বাচ্চা মেয়ে দেখে পুতুল অবাক হয়ে গেলো।কে হতে পারে এটা?
জিজ্ঞেস ও করলো।কিন্তু তিয়াসা জবাব দিলো না।কারণ তার মুখের ভেতর একসাথে তিনটে বিসকিট।
তিয়াসা ভেংচি কেটে চলে গেছে টিভি দেখবে বলে।পুতুল ওর দিকে তাকাতে তাকাতে রান্নাঘরে আসলো।এরপরও মেয়েটাকে কিছুই বললো না।কারণ মিসেস রওনক হাতে বিসকিটের বাটি নিয়ে ওর দিকেই যাচ্ছিলেন।তার মানে নিশ্চয় মেহমান হতে পারে আমাদের।নাস্তা বানাতে বানাতে পুতুল খেয়াল করলো অন্য একটা মেয়েকে।পরনের জামাকাপড়ে সাদামাটা মনে হলেও তার ঠোঁটে এক গাদা লিপস্টিক দেখে পুতুলের ঘোর কাটলো।সে আবার এত গরমে চুল ছাড়া।একার চুল ছাড়া দেখে পুতুলের নিজেরই গরম লাগছে এখন।মেয়েটা রান্নাঘরে এসে পুতুলকেই দেখছে।গলায় ওড়না ঝুলিয়েছে সে।তা দেখে পুতুলের মনে পড়ে গেলো ছোটবেলার কথা।গলায় ওড়না দেওয়া বাবা একদমই পছন্দ করতেন না।একদিন আসাদ ভাইয়ার মাইর খেয়ে ওড়না পেঁচিয়ে পরা শিখেছিল সে।এরপর আর জীবনেও গলায় ওড়না ঝোলানোর কথা সে ভাবেনি।ভাবলেই ভাইয়ার হাতের মারের কথা মনে পড়ে যায়।
আর এই মেয়েটাকে মনে হয় কেউ মার দেয়নি।তাই এখনও গলায় ওড়না পরে।একেক পরিবার একেক রকম ডিসিপ্লিন তৈরি করে।
———
ইমাদ তার কিছুক্ষণ পরেই ঘুম থেকে উঠেছে।পুতুল পাশে নেই দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো সে।তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বের হতেই একা কোথা থেকে ওর সামনে এসে হাজির।কিন্তু ইমাদ একবারের জন্য ও ওর দিকে তাকায়নি।তার চোখ রান্নাঘরে কাজে ব্যস্ত থাকা পুতুলের দিকে।মুচকি হেসে সেদিকেই গেলো সে।পুতুল রুটি বেলার বেলুন হাতে পেছনে ফিরতেই ইমাদের সঙ্গে আলতো করে একটা ধাক্কা খেলো।ইমাদের ঠোঁটের কোণায় হাসি।পুতুল ও হাসলো তারপর বললো,’গিয়ে ফ্রেশ হোন।আমি ঠিক আছি।সব ভোলার চেষ্টা করছি’

ইমাদ খুশি হয়ে পুতুলের কপালে চুমু এঁকে চলে আসলো ওখান থেকে।একা ওর সামনেই ছিল তাও সে তাকালো না।খেয়ালই করলো না।তার মনে শুধু ভাসছে পুতুল স্বাভাবিক জীবনে পুনরায় ফিরতে পেরেছে।সকাল সকাল তার মধ্যে ভালো একটা বদল দেখে মন ভালে হয়ে গেলো।
——
পুতুল টেবিলে রুটি রাখতে এসে দেখলো একা ইমাদের রুমের দিকে বারবার উঁকি মারছে।সেই কখন থোকে খেয়াল করেছে একা রুমের আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল।মেয়েটার সমস্যা কোথায়?
‘সন্দেহ হচ্ছে।কুচক্রী দলের সদস্য নাতো?এদের নজরে রাখতে হয়।আমার এত সুন্দর জামাইয়ের দিকে নজর দেবেনা তো?মেরে ফেলবো একেবারে!’
—-
মিসেস রওনক খেয়াল করলেন পুতুল কাজ বাদ দিয়ে একার দিকে চিবিয়ে খাওয়া চাহনিতে তাকিয়ে আছে।
তিনি বললেন,’খিধায় মনে হয় মরে যাবো’

পুতুল চমকে তার দিকে তাকিয়ে বললো,’খাবার রেডি
আসুন না’

মিসেস রওনক তিয়াসাকে নিয়ে এসে চেয়ার দখল করলেন।একাকেও বসতে বললেন।পুতুলের আগ্রহ দেখে বললেন,’ওরা হচ্ছে আমার চাচাতো বোনের মেয়ে।একা আর তিয়াসা।কালই এসেছে।তুমি ঘুমে ছিলে বলে সাক্ষাৎ করতে পারলেনা’

পুতুল মুচকি হেসে বললো,’ও আচ্ছা।বসুন না আপনারা’

একা চেয়ার টেনে বললো,’ইমাদ ভাইয়া খাবেনা?’

পুতুলের রাগ হলো।সে খুব বুঝতে পারছে একা নির্ঘাত ইমাদকে পছন্দ করে।আরে বোন তোর সামনে ইমাদের বউ দাঁড়িয়ে আছে।এতকিছুর পরেও তোর রুচিতে বাঁধে কি করে তার প্রতি ফিলিংস জন্মানোর।আশ্চর্য!

একা রুমের দিকে তাকাতে তাকাতে বসলো চেয়ারে।ইমাদ একেবারে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হলো।বাবাও এসে বসেছেন।
পুতুল দেখলো আর একটা চেয়ার খালি আছে।তাও একার পাশে।তাই তড়িগড়ি করে সে ইমাদের আগেই বসে বললো,’আমার না খুব খিধে পেয়েছে।আপনি ঐ চেয়ারটা এনে এই যে আমার পাশে বসুননা’

মিসেস রওনক বাবাকে খাবার সাজিয়ে দিচ্ছিলেন বলে বিষয়টা খেয়াল করলেননা।ইমাদ অন্য চেয়ার টেনে পুতুলের পাশে বসলো।একা হিংসায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।পুতুলের উপর দিয়ে ইমাদকে সে সব সাপ্লাই দিচ্ছে।পুতুল কিছু বলতেও পারছেনা। শেষে ইমাদ চটে গিয়ে বললো,’আমি এত খাইনা।পুতুল যেভাবে প্লেট সাজিয়ে দিয়েছে ওটাই এনাফ।আর লাগবেনা’

পুতুল মুচকি হেসে টেবিলের নিচে পা দিয়ে খোঁচা দিলো ওকে।বাবা ব্রু কুঁচকে বললেন,’ওটা আমার পা’

বাবার কথা পুতুল লজ্জায় লাল হয়ে হাত দিয়ে মুখ লুকালো।ইমাদ হাসছে আর খাবার গিলে যাচ্ছে।
অফিসে যাওয়ার সময় পুতুল ওকে দরজার বাহিরে এসে এগিয়ে দিলো কিছু পথ।ইমাদ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো,’পুতুল দেখি পুরো বদলে গেছে।এক রাতেই এত বদল?ঠিক বুঝলাম না’

-“আমি হাল ছেড়ে দিলে অন্য কেউ এসে হাল ধরে ফেলবে।সুতরাং হালটা আরও মজবুত করে ধরার চেষ্টা করছি।জলদি আসবেন আর আমার জন্য গোলাপজাম আনবেন’

ইমাদ কিছুদূর গিয়ে থেমে পেছনে তাকিয়ে বললো,’মানেহ্?’তুমি তো গোলাপজাম খাওনা।হঠাৎ গোলাপজাম খাবে?শরীর ঠিক আছে?’

-‘মিষ্টি খেতে শরীর ভালো থাকতে হয়?খাবো বলছি মানে খাব’

-“ওকে আনবো।যাও বাসায়।বারান্দায় একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য’

পুতুল ছুটে গেলো।সারপ্রাইজ শুনলে আর কোনোদিকে খেয়াল থাকেনা ওর।এখনও তাই।
বারান্দায় এসে পুতুল থামলো।মোটা সুতোর দোলনা ঝুলছে।কবে কখন এটা করলো ইমাদ, পুতুল একবারের জন্যও খেয়াল করেনি।কি সুন্দর।সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়লো সে।নিচে থেকে শোনা গেলো একটা কথা। পছন্দ হয়েছে?
পুতুল দোলনা থেকে উঠে নিচে তাকিয়ে দেখলো ইমাদ দাঁড়িয়ে আছে।পুতুল মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো।ইমাদ খুশি মনে চলে গেছে।কি যে ভালে লেগেছে তার প্রকাশ কিভাবে করবে তাই ভাবছে পুতুল।
——
একা ইমাদের জন্য ফিরনি বানাচ্ছে।নাকে ঘ্রান আসতেই পুতুল বের হলো রুম থেকে।পা টিপে টিপে গেলো দেখতে।কি খিচুড়ি পাকাচ্ছে একা সেটা দেখা জরুরি।
কাছ থেকে কাঁচা দুধের উতলে পড়া গন্ধে পুতুলের হঠাৎ বমি এসে গেছে।মুখে হাত দিয়ে চলে গেলো সে।একা কোমড়ে হাত দিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে বললো,’দেখলে খালা??আমার ফিরনির গন্ধে ভাবীর বমি পাচ্ছে।কতবড় অপমান করলো আমায়’

-‘সেটাই তো।এমন কেন করলো?’

পুতুল মুখ মুছতে মুছতে বের হতেই একা সামনে এসে পড়লো।চোখ বড় করে বললো,’ফিরনি তুমি খাওনা তা বুঝলাম তাই বলে একেবারে বমিই এসে যাবে তোমার?’

-“কে বলেছে খাইনা।খাই তো।কিন্তু আজ হঠাৎ বমি এসে গেলো দুধের গন্ধে।সরি মাইন্ড করিও না।’

মিসেস রওনক রেডি হয়ে যাচ্ছে স্কুলে।পুতুলের কথার উত্তরে বললেন,’মা না হতে পারলে মা হওয়ার সব লক্ষণ দেখা দেয় তা জানতাম না।আজকাল জানছি’

পুতুল মন খারাপ করে রান্নাঘরে গেছে দুপুরের রান্না করবে বলে।তিয়াসা ফিরনি থেকে বেছে বেছে বাদাম খেয়ে নিয়েছে বলে একা পুরো বাসা মাথায় করেছে।
পুতুল মিটমিট করে হাসছে।শেষে একা বাজারে গেলো বাদাম কিনতে।
পুতুল রান্না করতে করতে দেখলো বাসার সামনের উঠানে কিছু বাচ্চারা ক্রিকেট খেলছে।মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু সেটা মনের ভেতরই রাখলো সে।মন খারাপ নিয়ে রান্না করলে বরাবরের মতন তার রান্না বাজে হয়।কিন্তু এবার ভালো হয়েছে।বলতে গেলে অনেক ভালো।কারণ সে ঠিক করে নিয়েছে মিসেস রওনকের মন জয় করেই ছাড়বে।
দুপুরে মিসেস রওনক ফিরেছেন।হিজাব খুলতে খুলতে তার রুমে চলে গেলেন সোজা।কলিংবেল বাজছে অনেকক্ষণ ধরে।পুতুল ছিল রান্নাঘরে।কাজ ফেলে ছুটে আসলো সে।ততক্ষণে মিসেস রওনক রুম থেকে বেরিয়েছেন দেখার জন্য যে কে এসেছে।একজন কর্মচারী।পরনে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। গলায় আইডি কার্ড ঝোলানো।
পুতুল চিনলো না।পুতুলকে দেখে লোকটা জিজ্ঞেস করলো সে পুতুল চৌধুরী কিনা।
পুতুল মাথা নাড়ালো।লোকটা ভেতরে ঢুকে পুতুলের হাতে কাগজ দিয়ে বললো,’ম্যাম এক্সট্রেমলি সরি।আমরা কাল আপনার ফাইল আর মিসেস পুতুল রহিমের ফাইলে একটা বড় ভুল করে ফেলছিলাম।টাইপিং করতে গিয়ে স্টাফ আপনার ফাইলে মিসেস পুতুল রহিমের টেস্ট রেসাল্ট আর মিসেস পুতুল রহিমের ফাইলে আপনার টেস্ট রেসাল্ট লিখে দিয়েছিলো।বয়স আর নাম একই বলে তার দ্বারা ভুল হয়ে গিয়েছিল।এই নিন এটা আপনার আসল রিপোর্ট।পুতুল রহিম অন্য হসপিটালে পরীক্ষা করে আলাদা রিপোর্ট পেয়ে আমাদের হসপিটালে কমপ্লেইন্ট জারি করেছিলেন।নাহলে আমরা জানতাম না।
এগেইন সরি ফর দিস মিসটেক ম্যাম’

-‘আমার বাসার এড্রেস পেলেন কি করে?’

-‘আমাদের হসপিটালের রিপোর্ট হোম ডেলিভারি সুবিধা পাওয়ার জন্য আমরা আপনার থেকে ঐদিনই এড্রেস নিয়েছিলাম।মনে করে দেখুন’

পুতুল রিপোর্ট টা নিয়ে টেবিলে রেখে দিয়ে ভাবলো,’টাঙানো আর ঝুলানো তো একই।মা হতে পারবোনা সেটাই লেখা থাকবে। বাসায় এসে খারাপ খবর ঘোষনা দিয়ে বলতে এসেছে।মন যত ভালো রাখতে চাই ততই খারাপের দিকে যায়।দুই পুতুলের কপাল পোড়া।

পুতুল চলে গেলো রান্নাঘরে। মিসেস রওনক কাছে এসে টেবিলের উপর থেকে খামটা নিয়ে ভেতরের রিপোর্ট বের করলেন।
রিপোর্টে যা লেখা আছে দেখে তিনি মাথা ধরে ধপাস করে পড়ে গেলেন নিচে।
পড়ার সময় বললেন,’আল্লাহ গো’
চলবে””

বাবুই পাখি🌿
#পর্ব_৫৩
Writer-Afnan Lara
.
ড্রয়িং রুম থেকে এত জোরে আওয়াজ শুনে পুতুল ছুটে আসলো দেখবে বলে।এসে দেখলো মিসেস রওনক চোখ বুজে টেবিলের পাশে চিপায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন।
পুতুল চোখ বড় করে ছুটে এসে উনাকে তোলার চেষ্টা করলো কিন্তু ৭৫কেজি ওজনের মানুষটাকে তোলার ক্ষমতা তার নেই।তাই উপায় না পেয়ে নিচ থেকে উঠে এসে পানির ছিঁটা দেওয়া শুরু করলো সে।
মিসেস রওনক প্রথমে এক চোখ খুললেন তারপর অন্য চোখ।
পুতুলকে দেখে চমকে শোয়া থেকে উঠে পড়লেন।পুতুল পানির গ্লাস এগিয়ে ধরে বললো,’গ্লুকোজ গুলে দিব?খাবেনন?’

-‘একা কই?’

-‘সে তো তিয়াসাকে নিয়ে বাদাম আনতে গেছে।এখনও আসলো না’

-‘ওহ’

মিসেস রওনক মাথা ধরে উঠে কেঁপে কেঁপে চললেন তার রুমের দিকে।রিপোর্টটা নিচে পড়ে আছে।পুতুল গ্লাস রেখে আবার রান্না করতে চলে গেছে।দরজা আটকানো ছিল না।ইমাদ সেসময়ে ফিরেছে অফিস থেকে।প্রচুর গরম আজ।টাই খুলতে খুলতে ব্যাগটা টেবিলে রাখতে গিয়ে ভুলে ফেলে দিলো নিচে।
নিচু হয়ে ব্যাগটা নিতে গিয়ে দেখতে পেলো রিপোর্টটা।রিপোর্ট হাতে নিয়ে সে রুমে চলে গেছে।টাই খুলে রিপোর্ট নিয়ে বসলো সে।পুরোটা পড়ে বুঝলে তাতে লেখা আছে পুতুল মা হতে পারবে।তার কোনো সমস্যা নেই।
ইমাদ ভাবছে কোনটা আসল।কাল যেটা দেখেছিল তাতে লেখা ছিল মা হতে পারবেনা পুতুল।আর আজ এটাতে লেখা পুতুল মা হতে পারবে।
কোনটা সঠিক?
পুতুল দরজা খোলা দেখে আটকাতে গিয়ে ইমাদের ব্যাগ নজরে আসলো তার।খুশিতে গদগদ হয়ে ছুটলো রুমের দিকে
ইমাদ শার্ট খুলে হাতে রিপোর্ট নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরছে।পুতুল কাছে এসে বললো,’আরে রিপোর্ট নাকি অদলবদল হয়ে গিয়েছিল।কর্মচারী ফেরত দিতে এসেছিল কিছুক্ষণ আগে।এটা নিয়ে কি করেন?’

-‘অদলবদল মানে?’

-“মানে হলো ঐদিন আমার রিপোর্ট আরেক পুতুল রহিমের বাসায় গেছে আর তার রিপোর্ট আমার বাসায় আসছে।রিপোর্ট তো একই।তাও তারা আমার রিপোর্ট আমায় ফেরত দিতে আসলো সোজা বাসাতে’

-‘তোমাকে কে বলেছে রিপোর্ট একই?’

-‘আমি’

-‘এটা ভুল বললে।তোমার রিপোর্ট যদি আসলটা এটা হয়ে থাকে তার মানে তুমি মা হতে পারবে।তোমার মাঝে কোনো সমস্যা নেই’

পুতুল বোকার মতন চেয়ে রইলো।এরপর হুস আসতেই ইমাদের হাত থেকে রিপোর্টটা নিয়ে পড়া শুরু করলো সে।পড়া শেষ করে ইমাদের দিকে তাকিয়ে এক চিৎকার করলো।খুশির চিৎকার।ইমাদ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফেলেছে ততক্ষণে।
পুতুলকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরে হাসতে হাসতে ওর মাথার সাথে নিজের মাথা ঠেকালো সে।এত খুশি আজ সে পাবে কল্পনাও করতে পারেনি।
হঠাৎ কাঁচের বাটি পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে দুজনে দরজার দিকে তাকালো।
একা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।হাতে ফিরনির বাটি ফেলে দিয়েছে সে।পুতুল আর ইমাদ দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালো।একা চলে গেছে ওখান থেকে।ছুটে মিসেস রওনকের কাছে এসে বিচার দিলো ।কারণ সে জানে মিসেস রওনক ওকে কেন এনেছে এখানে।ইমাদকে নিজের আয়ত্তে আনা।
একার এমন ব্যবহার দেখে মিসেস রওনক বিছানা থেকে চুপচাপ নেমে ছুটলেন খাবার খাবেন বলে।শরীর খারাপ তার।
একা পিছু পিছু আসতে আসতে বললো,’কি হয়েছে?বলবেন না?

-“কি আর বলবো?তুমি তিয়াসাকে নিয়ে আর কদিন থেকে বরং চলে যেও’

মিসেস রওনকের মুখে ওমন কথা শুনে একা থেমে গেলো।হাঁটা বন্ধ হয়ে গেছে তার।অথচ উনি ডেকেছিলেন ইমাদের সঙ্গে ওর লাইনটা করিয়ে দেবেন বলে।তাহলে এসব কি?
সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমার কি কোনে দোষ হলো?তাহলে সে দোষটা কখন করলাম?আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন না কেন?’

মিসেস রওনক নিজে নিজে খাবার বেড়ে খাচ্ছেন।একা কাছে এসে বলল,’আমাকে বলুন আমি কি দোষ করেছি?”

-‘তুমি কোনো দোষ করোনি।দোষ তো আমি করেছি।
আমার দ্বারা ভুল হয়েছে।তার ফল ভুগছি এখন।’

-‘মানে?’

-“পুতুলের কোনো সমস্যাই ছিলনা।ভুল রিপোর্ট দেখে আমি ওকে কত কথাই না শুনালাম।আমার ভীষণ খারাপ লাগছে।ওর কাছে মাফ চাইতে হবে’

একা চোখ বড় করে বললো,’তার মানে কি পুতুল প্রেগন্যান্ট? ‘
——
পুতুলের আলমারিতে প্রেগনেন্সি কিট ছিল।সে ততক্ষণে টেস্ট ও করিয়ে ফেলেছে।তাই দরজার বাহিরে এসে মিসেস রওনককে বললো,’রেসাল্ট পজিটিভ ‘

মিসেস রওনক মুচকি হেসে ঘুরে তাকালেন পুতুলের দিকে।ইমাদ টেস্টারটা হাতে নিয়ে রোবটের মতন বসে আছে।এত বড় খুশি সে নিতে পারছেনা।কোনো কিছু বলার বা করার বোধ হারিয়ে ফেলেছে।যা করার পরে করবে।আগে অবাক হতে থাকি।
পুতুল পেছনে তাকিয়ে দেখলো ইমাদ মাথা নিচু করে প্রেগনেন্সি কিটটা ধরে বসে আছে।পুতুল সেদিকে যাওয়া ধরতেই ওর হাত ধরে ফেললেন মিসেস রওনক।পুতুল উনার দিকে তাকিয়ে আছে। উনি কাঁদো কাঁদো মুখো তাকিয়ে পুতুলকে জড়িয়ে ধরলেন।পুতুল তো পুরো অবাক হয়ে গেছে।

-“মাফ চাওয়াটাও ভুল।না জেনে তোমাকে কত কিনা বলেছি।এখন বুঝতেছি আমি কত বড় ভুল করেছিলাম।’

ইমাদ মাকে দেখে এগিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিলো পাশে।মাকে এসব বলতে দেখে সে বললো,’তো যদি পুতুল এখন প্রেগন্যান্ট না হতো তুমি কি করতে?’

মিসেস রওনক মুখটা গম্ভীর করে বললেন,’যেটা হবেনা সেটা নিয়ে কথা বাড়ানোর দরকার নাই।বাসায় নতুন অতিথী আসবে।সব কিছু রেডি করো।আমি আত্নীয় স্বজন কয়েকজনকে দওয়াত দেবো আজ রাতে ডিনারের জন্য।আর হ্যাঁ পুতুল তোমার পরিবারের সবাইকে দাওয়াত দাও’

মিসেস রওনক চলে গেছেন।পুতুল হা করে তার চলে যাওয়া দেখলো।ইমাদ পুতুলের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে এসে বললে,’বমি পাচ্ছিল না তোমার?মাথা ঘুরাতো না?এসব তো মানুষ লক্ষণ দেখে টেস্ট করায়।কই তোমার তো লক্ষণই দেখলাম না।হুট করে বাবা হবার সংবাদ পেয়ে গেলাম।’

-“এ্যাহ!হুট করে কিসের?আমি তো বমি করেছিলাম
তবে ভেবেছি আন্দাজে বমি এসেছে।মাথা থেকে একেবারে বেরই করে ফেলেছিলাম যে আমি ও মা হতে পারবো’

-‘কিসের যেন ঘ্রান আসছে না?’

-‘হুম।।কি বানাচ্ছে মা?”

ইমাদ আর পুতুল এক সঙ্গে উঁকি মারলো বাহিরের রুমে।মা কি যেন বানাচ্ছেন।ইমাদ পুতুলের দিকে তাকিয়ে বললো,’তোমাকে বলছিলাম না,মা যাকে একবার বুঝে যায় তাকে মাথায় করে রাখে।এবার দেখবা তোমার এই পরিবারের স্থান কিভাবে পাল্টে। আমার কিছুই করতে হবেনা।যা করার মা নিজে করবেন।

পুতুল নিজের ফোন খুঁজে তার মাকে ফোন করলো।তাদের খবরটা জানিয়ে দাওয়াত করলো আজকে ডিনারের জন্য।ইমাদ বিছানার মাঝখানে বসে দুপাশে দুটো বালিশ দিয়ে মাঝখানে অন্য একটা বালিশ রেখে বললো,’বাবু কি মাঝখানে শোবে নাকি কিণারায়?না না মাঝখানে রাখা যাবেনা।আমার তাহলে পুতুলের হাত ধরা হবেনা।ওরে আমার ঐপাশে রাখবো।হুম সেটাই।আচ্ছা যদি পড়ে যায়?তখন তো মা আমাকে কাঁচা গিলে খাবে আর পুতুল চিবোবে।এক কাজ করবো বাবুদের আলাদা মিনি বেড পাওয়া যায়।
ওগুলো একটা কিনে আনবো তাহলেই তো হয়।’
চলবে”