বাল্য বিবাহ পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0
476

২&শেষ পর্ব
গল্পের নামঃ #বাল্য_বিবাহ
লেখিকাঃ #তাসনিয়া_জামান

দেখছিস তানজিলা আসলেই সুমাইয়ার বরের বয়স বেশি তাকিয়ে দেখ সুমাইয়ার বরের দিকে।
আমার চাচাতো বোন মিলির কথায় আমি সত্যিই সুমাইয়ার বরের দিকে তাকিয়ে দেখি সুমাইয়ার বর খাইতিছে।
সুমাইয়ার বর কে ভালো মতো পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম আসলেই সুমাইয়ার বরের বয়স বেশি। ৩২+ বয়স তো হবেই।
তানজিলা সুমাইয়ার আব্বার থেকে বরকে বড় দেখা যায় বেশি। ফুপা আর সুমাইয়ার বরকে পাশাপাশি দাড়া করালে সুমাইয়ার বরকেই বলবে ফুপার শ্বশুর বলেই মিলি হেসে দিল।

সুমাইয়ার বর তো ফুপার শ্বশুর হবেই৷ সুমাইয়া যদি ফুপার আম্মা হয় তাহলে সুমাইয়ার বর ফুপার শ্বশুর হতে সমস্যা কি?

হুম তা ঠিক। তুই জানিস অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হলে কত সমস্যা দেখা যায় পরে। জরায়ুতে সমস্যা হয়। আমার অল্প বয়সে বিয়ে দিছে এখন জরায়ুতে সমস্যা হয়ছে। ফুপা ফুপুর উচিত হয় নাই সুমাইয়া কে এত অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া। বিয়ে যেহেতু দিবেই তাহলে একটু কম বয়সের ছেলের সাথে বিয়ে দিত ২৩/২৪ বয়সী এমন ছেলের সাথে। বিয়ে দিল তো দিল ৩২+ বয়সী চাচার সাথে বলেই মিলি আপু আবার হেসে দিল।

আমি আপুকে আর কিছু না বলে চুপচাপ রইলাম।

মেয়েরা যখন নিজের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি যায়, তখন নিজের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় কান্না করে।
কিন্তু সুমাইয়া একটুও কান্না করছে না। শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময়। মামুন কাঁদতে কাঁদতে ২ বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে একটা মাত্র বোন সে ছেড়ে চলে যাচ্ছে এই কস্টে। কিন্তু তবুও সুমাইয়া কাঁদল না তার ভাইয়ের কান্না দেখেও। হয়ত মন শক্ত হয়ে গেছে এতদিন কাঁদতে কাঁদতে। তাই আজ কান্না আসছে না সুমাইয়ার।

সুমাইয়া কে নিয়ে যাওয়ার পর আমি বাড়িতে চলে আসলাম।
________
কলেজে যাওয়ার পর,,
তানজিলা তোমাদের গ্রামে আমার ফুপাতো ভাই বিয়ে করছে।
আমার ক্লাসমেট রিক্তার কথায় বললাম,,
কবে বিয়ে হয়ছে?
গত শুক্রবারে।
গত শুক্রবারে তো আমার ফুপাতো বোনের বিয়ে হয়ছে। তোমার ভাই ভাবির নাম কি?

ভাইয়ের নাম মাহিম আর ভাবির নাম সুমাইয়া।

তোমার ভাবি পড়ালেখা করত নাকি?

হুম ক্লাস এইট এ পড়ত।

আমার ফুপাতো বোন সুমাইয়া। তাহলে তো তুমি আমার আত্মীয়।

হুম তোমার বোন কে তো দেখছি আমাদের থেকেও অনেক ছোট হবে।

হুম আমার থেকে ৫ বছরের ছোট।

এত অল্প বয়সে বিয়ে দিল কেন?

জানি নাহ আমি কিছু।

____
কলেজ থেকে বাড়ি এসে দেখি সুমাইয়া আসছে আমাদের বাড়িতে।

কেমন আছো আপু?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?

আমিও ভালো আছি।

তারপর টুকটাক কথা বললাম সুমাইয়ার সাথে।

কয়দিন ধরে বিয়ে হয়ছে তাই মেয়েটার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। আগের থেকো আরও চিকন হয়ে গেছে। মুখ অনেকটা শুকিয়ে গেছে।
_____
প্রায় ২মাস পর,,
তানজিলা তোমার বোনের বাবু হবে জানো নাকি?

না জানি না তো। সুমাইয়ার এমনিই যে খারাপ অবস্থা হয়ে গেছে। তার ভিতর আবার বাবু।

হুম ভাইয়া তো দেশে আর ১৫ দিন আছে। বিদেশে চলে গেলে কয় বছর পর দেশে আছে ঠিক নেই তাই আগে বাবুর ব্যাবস্থা।

ওহ। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বাবুর ব্যবস্থা করা ঠিক হয় নাই। সুমাইয়ার অবস্থা তো এমনিই খারাপ তারপর আবার বাবু। কয়দিন পর তো সুমাইয়া কে খুঁজেই পাওয়া যাবে না।

তানজিলা তোমাকে কিছু কথা বলি আমার পর রেগে যেও না।

আচ্ছা বলো।

তোমার বোনকে এত অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া ঠিক হয় নাই। তারপরও দিছিলো এত বয়স্ক ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া ঠিক হয় নাই।
মাহিম ভাইয়ার ৩২+ বয়স।তারপর তোমরা তো জানোই মাহিম ভাইয়া আবার বিদেশ চলে যাবে তাহলে নিশ্চয়ই বাবুর ব্যবস্হা করে যাবে।
এতকিছু জেনেও তোমরা মাহিম ভাইয়ার সাথে তোমরা তোমার বোনকে বিয়ে দিছো। তোমার পরিবারের বোঝার উচিত ছিল এই বিয়ে তে তোমার বোনের অনেক সমস্যা হতে পারে।

রিক্তা আমাকে এগুলো বলে লাভ নেই। ফুপু ফুপাকে অনেক বুঝিয়েছি তারা যদি না বুঝে তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। তারপর ভাগ্য বলতেও একটা কথা আছে। ভাগ্যে ছিল তাই সুমাইয়ার বিয়ে হয়ছে তোমার ভাইয়ার সাথে।

কলেজ শেষ করে বাড়ি এসে শুনি সুমাইয়ার সত্যিই বাবু হবে।

৮ মাস পর,

সুমাইয়ার বর বিদেশ যাওয়ার ৩ মাস পরই সুমাইয়া কে ফুপুদের বাড়িতে নিয়ে আসছিলো।
,,

মা তোমাকে আজ কিছু কথা বলি। আজ না বলতে পারলে হয়তো কোনদিনও আর বলা হবে না।

সুমাইয়ার কথায় ফুপু বলল হুম বল কি বলবি,,

মা জানো যখন রুমা, রিমি, মাইশা ওরা স্কুলে যেত আমার অনেক খারাপ লাগত। যে বয়সে আমি পড়ালেখা করব সে বয়সে তোমরা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলে। রুমারা স্কুলে যাওয়ার জন্য যখন ব্যস্ত তখন আমি সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আমার পড়ালেখা করার অনেক ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সবার ইচ্ছা তো আর পূরন হয় না।আমার ইচ্ছা গুলোও অপূর্ণ হয়ে রইল। আমি সবসময় পর্দা সহকারে চলাফেরা করছি। স্কুলে ক্লাসেও কোনদিনও কোন ছেলের সাথে কথা বলি নাই। কোন প্রেমে জড়ায় নেই।। এত ভালো ভাবে চলার পরও তোমরা আমাকে এত অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিলে।
যায় হোক মা আমি যদি কোন ভুল করে থাকি তাহলে আমাকে মাফ করে দিও। আর আমার মৃত্যুতে তুমি কিন্তু একটুও কাঁদবা না বলে দিলাম।

আমি ফুপুদের বাড়িতে আসছিলাম সুমাইয়াকে দেখার জন্য। সুমাইয়ার মুখের এসব কথা শুনে নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পরই সুমাইয়া কাঁদতে লাগল,,
মা আমার পেটে ব্যাথাচ্ছে বলে কাঁদতে লাগল,,

একটা রিকশা এনে সুমাইয়া কে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো।

ডাক্তার সুমাইয়াকে সিজার করতে নিয়ে গেল।

কিছু ক্ষন পর ডাক্তার এসে বলল,,
বাচ্চাকে বাঁচানো গেলেও মা কে বাঁচানো যায় নাই।
পেশেন্টএর অল্প বয়স। এই বয়সে মেয়েটাকে বিয়ে দেওয়া ঠিক হয় নাই। বিয়ে হয়ছিলো কয়বছর পর বাচ্চার ব্যবস্থা নিলে ভালো হতো। মেয়েটার শরীর আগে থেকেই অনেক দূর্বল। এই দূর্বল শরীরে আবার বাচ্চা পেশেন্টের শরীরে বড় হয়ছে।

কথাগুলো শুনে আমার ফুপা ফুপু সবাই কাঁদতে শুরু করল,,
এখন কেঁদেই কি হবে। যখন বোঝার তখন কেউ বুঝল না। এখন কেঁদেও লাভ নেই।
সমাপ্ত
( এই গল্পটা বাস্তব ঘটনা। আমার আশেপাশে এমন ঘটছে তাই তুলে ধরছি।)
[ একজন বলছেন ১৪ বছর মেয়েরা যখন হোটেলে যায় তখন কোন সমস্যা হয় না আর বাড়ি থেকে বিয়ে দিলেই সমস্যা। আমি ৬/৭ জন মেয়ে কে প্রাইভেট পড়ায়। ক্লাস সিক্স /সেভেন /এইট এর। একজনও ফোন ইউস করে না আর প্রেম টেমও কেউ করে না। স্কুলে যাওয়ার সময় কোন ছেলে বিরক্ত করলে সাথে সাথে বাড়ি এসে সবগুলোই বলে দেয়। আমি এপর্যন্ত ১৩/১৪ বছরের কোন মেয়ে কে প্রেম করা দেখি নাই। আপনারা দেখতেও পারেন। আর সব মেয়ে যে হোটেলে এমন না। অনেক মেয়ে অনেক ভালো আছে। সব মেয়েকে এক রকম ভাববেন না।আরেকটা কথা বলব যে মেয়ের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ছে তাকে যেয়ে শুধু জিগাইবেন তার কোন সমস্যা দেখা দেয় নাকি। ১০০% এর ভিতর ৯৫% মেয়েরই জরায়ু তে সমস্যা দেখা যায় এখন না দিলেও পরবর্তীতে দিবেই অল্প বয়সে বিয়ে হলে। তারপর আবার আমাদের নবীজি (সাঃ) আর আয়শা( রাঃ) এর সাথে একজন তুলনা করছেন। নবীজি (সাঃ) এর সাথে কি তুলনা করা ঠিক হয়ছে। যে নবীজি (সাঃ) এর সাথে তুলনা করছেন সে কি পারবেন নবীজি (সাঃ) এর মতো ধৈর্যশীল হতে। পারবেন না। তাই নবীজি (সাঃ) এর সাথে তুলনা করা নেহাৎ বোকামি ছাড়া কিছু না। আর নবীজি (সাঃ) ইচ্ছাকৃত ভাবে আয়শা (রাঃ) বিয়ে করছিলো নাকি আয়শা(রাঃ) এর বাবার কথায় বিয়ে করছিলো। হাদিস টা জেনে আমাকে বলবেন। তাহলে খুশি হবো।]