#বাড়ির_নাম_বৃষ্টিলেখা
#পর্ব-৮
যে বিয়ে নিয়ে এতো জল্পনা, কল্পনা সেই বিয়ে আপনা আপনিই ভেঙে গেল। পাত্র নিজেই বৃষ্টির কাকাকে ফোন করে জানালো বিয়ে সে করবে না। বাঙালী মেয়ের মেন্টালিটির সঙ্গে ম্যাচ না হবার সম্ভাবনা বেশী। তাই আর কথা না বাড়ানোই ভালো। বাড়ির লোকেরা প্রাথমিক ধাক্কা খেলেও মনে মনে সত্যিই সবাই খুশি হলো। তবে সেটা কেউ প্রকাশ করলো না৷ বৃষ্টি অবশ্য কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখালো না। তবে পলিনের উচ্ছ্বাস ছিলো দেখার মতো। খবর শুনে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন বৃষ্টির মা। সত্যি বলতে মেয়েকে এতদূর পাঠাতে তিনি রাজী ছিলেন না। তবে সেটা কাউকে বলেনও নি। মনে মনে চেয়েছেন বিয়েটা নাহলেই ভালো। মেয়েকে কাছেপিঠে বিয়ে দিলেই হবে। বছরান্তে কয়েকবার এসে বেরিয়ে যাবে৷ উৎসব, পার্বনে আসা যাওয়া করবে। অতদূর পাঠিয়ে নিজেরাও কী ভালো থাকতে পারবে!
বিয়েতে সব থেকে বেশী উচ্ছ্বাস ছিলো বৃষ্টির বাবার। সে অবশ্য চুপচাপ ই আছে। এই ঘটনার পর রেনু এসে বৃষ্টির বাবাকে বলল,
“ভাইজান আমার একটা অনুরোধ আছে। বৃষ্টিলেখা বিএ পাশ করুক তারপর নাহয় ওর বিয়ে নিয়ে ভাবা যাবে। আসলে ও নিজেও মনের দিক থেকে প্রস্তুত না। এই বিয়ে নামক কথা যেদিন থেকে উঠেছে সেদিন থেকেই ও কেমন সংকুচিত হয়ে গেছে। ওকে একটু সময় দিন। ”
বৃষ্টির বাবা কিছু বলার আগেই ওর ফুপু বলল,
“রেনুর কথা ঠিক। তাছাড়া আমাদের মেয়ে যেমন লাখে এক জামাই ও তেমনি লাখে একজন হোক৷ কোটিতে একজন হবার দরকার নাই৷”
বৃষ্টির বাবা হ্যাঁ, না কিছু বললেন না। তবে তার ভাব দেখে বোঝা গেল যে তিনি মেনে নিয়েছেন।
**
বিয়ে ভাঙার খবর আবিরের কাছেও পৌছে গেছে। আবির খুশিতে পাগল হয়ে গেল। দুই কেজি জিলিপি মসজিদে বিতরন করে আসলো। ওর অবস্থা দেখে দুলু হেসে বলল,
“তোকে দেখে মনে হচ্ছে যে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
“আপা সময় পাওয়া গেল। এখন একটা ভালো চাকরি খুঁজে বের করতে হবে। তারপর ওই বাড়ি প্রস্তাব পাঠাব।”
“আচ্ছা। পাত্রী রাজী হবে তো?”
আবির বেলুনের মতো চুপসে যায়। দুলু শব্দ করে হেসে ফেলল। বলল,
“আমার কথায় চুপসে গেলি কেন গাধা৷ মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায়। শুধু চাওয়ার মতো চাইতে হয়।”
আবির মৃদু হাসলো।
***
পলিনের সঙ্গে আতিফের ঝগড়া হওয়া মোটেই ভালো লক্ষন না। পলিন বোকা গোছের ভালো মেয়ে। ওর মন পরিষ্কার। ওকে চটালে আবিরের এদিকও যাবে, ওদিকও যাবে। তাই অনেক ভেবে আবির একটা বুদ্ধি বের করলো। বৃষ্টিদের বাড়ি গিয়ে রেনুকে বলল,
“ছোট কাকী পলুর পড়াশোনার কী অবস্থা? এবার কিন্তু ওর দিকে ভালো রকম নজর দেয়া দরকার।”
রেনু হেসে বলল, ওর পড়াশোনা তো বৃষ্টি আর ওর বাবাই দেখে৷ আমার কথা শোনেনা। তাই পড়তে বলা ছাড়া আর কিছু বলিও না।
“এসব বললে তো হবে না। ওর দিকে নজর দেয়া উচিত৷ বাড়িতে একজন টিচার রেখে দাও। ”
“এইদিকে বাড়ি এসে পড়াবে এমন টিচার পাওয়া তো মুশকিল। ”
“আতিফ তো খেয়ে খেয়ে মোটা হচ্ছে। ওর কাছে পলিন কে গছিয়ে দাও।”
রেনু হেসে ফেলল। বলল,
“ও তো বাচ্চা ছেলে।”
“পলিনের অংক ঠিক পারবে। ওকে ডেকে বলো সন্ধ্যেবেলা দু’ঘন্টা পলিন কে পড়াতে।”
“আচ্ছা বলব।”
আবির বাড়ি ফিরে আতিফ কে বলল,
“ওই বাড়ি ছোট কাকী তোকে যেতে বলেছে। কী একটা কাজ আছে বলল।”
আতিফ শুকনো ঢোক গিলল। বলল,
“আবার কী কাজ?”
“শুনে আয়। আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছিস!”
আতিফ ওই বাড়িতে গেল। পলিন ঘরেই ছিলো। দাদীর সুপুরি কাটছিল। বসার ঘরে দাদীও ছিলো। সে আতিফের সঙ্গে কথা বলছে। আতিফ হু, না তে উত্তর দিচ্ছে। পলিন ভুলেও ওদিকে তাকাচ্ছে না। বাড়িতে বৃষ্টির মা আর ফুপু নেই। রেনু এসে পলিন কে বলল,
“পলিন ও’কে কিছু খেতে দাও।”
আতিফ আমতা আমতা করে বলল,
“না আমি কিছু খাব না। তুমি আমায় নাকি কী কাজে ডেকেছো? ”
রেনু বলল, হ্যাঁ। পলিনের জন্য একজন টিচার খুঁজছিলাম। আবির বলল তুমি নাকি ফ্রী আছ! তোমার কী সময় হবে!
আতিফ কী বলবে বুঝতে পারছে না। পলিন কে পড়াবে ও! শুধু একটু ফেল্টু বলেছিল বলে রিকশা থেকে নেমে গেছে সেই মেয়েকে তো পড়ানোর সময় কিছু বলাই যাবে না৷
ও’কে চুপ থাকতে দেখে রেনু বলল,
“তোমার সময় না হলে থাক…..
আতিফ বলল, না আসলে সময় আছে কিন্তু…..
“শুনলাম এবার বাড়িতে অনেক দিন থাকবে। যদি পারো একটু সময় দিও। মেয়েটা বড্ড ফাকিবাজ। পড়াশোনা ছাড়া সব ভালো লাগে।”
আতিফের সরাসরি না বলতে খারাপ লাগছে। এতো অনুনয় করে বলছে যে না বলাও ঠিক না। তাই বলল,
“আচ্ছা।”
পলিন ততক্ষনে নাস্তা নিয়ে এসেছে। এক গ্লাস শরবত আর পিরিচে কিছু চানাচুর। রেনু আর দাদীর জোরাজুরিতে আতিফ সরবতের গ্লাস হাতে তুলে নিলো। চুমুক দিতে চক্ষু চড়কগাছ। শরবতের রঙ হলুদ দেখে ভেবেছিল ট্যাং এর শরবত। কিন্তু এতে ট্যাং এর বদলে আছে হলুদ আর মরিচ। আর চিনির বদলে লবন।
আতিফ এক ঢোক খেয়ে গ্লাস রেখে দিলো। পলিন সঙ্গে সঙ্গে বলে ফেলল,
“বড় মা বলে খাবার অর্ধেক খেয়ে রেখে দেওয়া মানে শয়তানের জন্য রাখা। ”
দাদী পান চিবুতে চিবুতে আতিফ কে বলল,
“খাইয়া ফালাও দাদু। পুরাটা খাইয়া ফালাও৷ ”
আতিফ আবারও শরবতের গ্লাস হাতে নিলো। একটু দূরে দাঁড়ানো পলিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও মিটিমিটি হাসছে৷
আতিফ এক নিঃশ্বাসে শরবত শেষ করে পলিনের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল,
“পলিন তুমি মনে হয় শরবতে চিনি বেশি খাও৷ এখন থেকে একটু কম চিনি খেও।”
পলিনের হাসিমুখ মিইয়ে গেল। ও ভেবেছিল আতিফ শরবত খেয়ে চুপচাপ থাকবে। কিন্তু এভাবে বলবে ভাবে নি।
***
বৃষ্টি শরবতের গ্লাস ধুতে গিয়ে পলিন কে ডেকে বলল,
“গ্লাস থেকে হলুদের গন্ধ আসছে কেন? হলুদ মিশিয়েছিস?”
“হ্যাঁ। আমাকে ফেল্টু বলা তাই শোধ নিলাম। ”
বৃষ্টি চোখ কপালে তুলে বলল, তুই তো খুব অসভ্য। আবিরের থেকেও ছাড়িয়ে গেছিস।
পলিন মুখ টিপে হেসে বলল, কিছু ব্যাপার তোমার থেকেও শিখেছি। মনে আছে বড় ব্রিজের ওখানে আবির ভাই তোমার একদিন হাত ধরেছিল বলে তুমি তাকে শীতের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলে!
বৃষ্টি কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে। পলিন হেসে বলল, যাই বলো ব্যটা কিন্তু খুব জব্দ হয়েছে।
চলবে…..