বাড়ির নাম বৃষ্টিলেখা পর্ব-০১

0
724

#বাড়ির_নাম_বৃষ্টিলেখা
#পর্ব-১
(কপি করা নিষেধ। তবে শেয়ার করুন)

আমাদের বাড়ির নাম বৃষ্টিলেখা। দোতলা বাড়ির লোহার গেটের পাশে খুব সুন্দর করে লেখা বৃষ্টিলেখা। এই বাড়ির গল্প বলব আজ। উঁহু বাড়ির গল্প না, বাড়ির মানুষ জনের গল্প। প্রথমে শুরু করি আমার মা’কে দিয়ে। আমার মা আসলে আমার জন্মদাত্রী মা নয়। আমাকে যিনি জন্ম দিয়েছেন সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন সাত বছর বয়সে। অনেক জোরাজুরি করে বাবাকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করানো হলো। বিয়েতে সবাই সেজেগুজে গেলেও আমার যাওয়া হলো না। আমি বাড়িতে থেকে গিয়েছিলাম দাদু আর দাদির সঙ্গে। দাদু আমাকে ডেকে বলেছিল, বুবুগো মন খারাপ কইরো না। তোমার জন্য মা নিয়া আসবে সবাই মিলে।

আমি মন খারাপ করলাম না। তবে একটু ভয় পেলাম। কারন ততদিনে সৎ মা সম্পর্কিত সব ধরনের ভয়ংকর কথা জেনে ফেলেছি। সিন্ড্রেলার গল্পও জানা। সেই ভয় কিছুক্ষণের মধ্যে কেটে গেল। সৎ মা যেমন ই হোক, বাড়ির লোকেরা তো আছে। তারা ঠিকই আমায় আগলে রাখবে। আমাকে সিনড্রেলা হতে হবে না।

সবাই হৈ হৈ করে সন্ধ্যেবেলায় আমার মা’কে নিয়ে এলো। মা’কে দেখে আমার ভারী মন খারাপ হলো। আমার জন্মদাত্রী মায়ের মতো সুন্দর তো নয় ই। একটু কেমন যেন। আমি নিজের ঘরে চলে গেলাম। কেউ এসে আমাকে মায়ের কাছে নিতে পারলো না। বাবা হুংকার দিয়ে বললেন, মেয়ে যখন চাইছে না তখন কেউ জোর করবে না। কেউ আর জোর করলো না। রাতে না খেয়ে শুয়ে পড়লাম। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল বাবার কান্নার শব্দে। বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে ব্যকুল হয়ে কাঁদছে। আমি ভাবলাম নতুন মায়ের সঙ্গে দেখা করিনি বলে বাবা কাঁদছে। পরদিন দাদির সঙ্গে নতুন মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। ভদ্রমহিলা আমাকে দেখে হাসলো। খানিকক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,

“এমন সোনার কপাল আমার! এই মেয়ে সত্যিই আমার মেয়ে!”

আট বছরের আমি বুঝে গেলাম যে এই মা সিনড্রেলার মা না। অন্য সৎ মায়েদের মতোও না। তবুও মায়ের সঙ্গে আমার ভাব হতে অনেক সময় লাগলো। সেই গল্প নাহয় পরে বলব!

আমার মায়ের নাম মেহেরুন্নেছা। মায়ের গায়ের রঙ কালো বলে তার বিয়ে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলো তার পরিবার। এর মধ্যে আমার স্কুল টিচার বাবাকে পেয়ে তারা মেয়ের বিয়ে দিলেন। বাবার আগের বিয়ে আর আমাকে নিয়ে তাদের কোনো সমস্যাই ছিলো না। আমাদের বাড়িটা পাল্টে গিয়েছিল মায়ের আগমনে।

মা’কে নিয়ে একটা গল্প বলে মায়ের গল্প শেষ করব। মা আর আমি একসঙ্গে কোথাও গেলে মুখ ফসকে যখন কেউ বলে, ওমা এই মেয়ে আপনার! দেখলে বোঝা যায় না। তখন মা একগাল হেসে বলেন, কালো মায়ের ফর্সা মেয়ে থাকতে নেই বুঝি!

***
এবার আসি বাবার গল্প নিয়ে। আগেই বলেছি বাবা স্কুল টিচার। ছেলেমেয়েদের অংক পড়ান। অংক টিচারদের সাধারণত খুব রাগ থাকে। বাবা ব্যতিক্রম। স্কুলের ছেলেমেয়েদের সাথে তার কোনো রাগ নেই। সব রাগ আমাদের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে। বাবা যেমন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে রাগেন না তেমনি ওরাও বাবাকে খুব ভালোবাসেন।

বাবা আর মায়ের সম্পর্ক টা অদ্ভুত সুন্দর। সকালের চা একটু দেরীতে পেলে বাবা সংসার ত্যাগ করার ভয় মা’কে দেখান। তার ভাষ্যমতে মা আমাদের সবাইকে খুব ভালোবাসেন, শুধু তাকে ছাড়া। এরকম হবে জানলে জীবনেও মা’কে বিয়ে করতেন না।

***
এবার বলি ছোট মায়ের গল্প। ছোট মা আমার কাকার বউ। এই বাড়ির সবচেয়ে চমৎকার মানুষ। ছোট মা এমন একজন মানুষ যাকে এক দেখাতেই ভালো লেগে যায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আমার কাকা তাকে না দেখেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ছোট মা তখন ঢাকায় তার মামার বাসায় থাকতেন। কাকা তার মামাতো ভাইকে পড়াতে রোজ দুপুরে যেতেন। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত কাকা যখন পড়াতে গিয়ে একগ্লাস পানি চাইতেন তখন ভেতর থেকে পানির সঙ্গে এক প্লেট ভাতও আসতো। এভাবে কিছুদিন কাটার পর কাকা জানতে পারলেন যে ছোট মা তার ভাগের খাবারটুকু কাকাকে পাঠান। কাকা সেই খবর শুনে ছোট মা’র মামাতো বোনের হাতে চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে লিখেছিল, আপনি রোজ কেন আপনার ভাগের ভাত আমাকে পাঠান!

ছোট মা একদিন পর সেই চিঠির জবাব দিয়েছিল। লিখেছিল, আপনি এতো কষ্ট করে পড়াতে আসেন। দেখলে বড় মায়া লাগে।

পরদিন কাকা ছোট মা’কে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। তাদের বিয়েটা অতি নাটকীয়। ছোট মা আর কাকা পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। এই গল্পটাও পরের জন্য তোলা থাকুক।

ছোট মা প্রাইমারী স্কুলে পড়ায়। বিয়ের পর বাবা তাকে পড়িয়েছেন। দাদু, দাদি অমত করলেও পরে তারা মেনে নিয়েছেন। ও হ্যাঁ ছোট মায়ের নাম রেনু। নামের মতোই চমৎকার মানুষ সে।

***
আমার কাকা ভীষণ আমুদে মানুষ। হাসিখুশি প্রানবন্ত একজন মানুষ। বাড়ির সবার সঙ্গেই তার সদ্ভাব। তবে তার ভীষণ কাছের মানুষ হলো আমার মা। মাকে যখন বাবা রেগে দু’য়েক কথা বলেন তখন কাকা ঢাল তলোয়ার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন। তাকে সঙ্গ দেয় আমার ফুপু। আর বাবা তখন ছোট মা’কে দলে টানেন। কাকার একটা দোকান আছে। মুদির দোকান টাইপ। তবে সেখানে সব ই পাওয়া যায়। এমনকি চা’ও পাওয়া যায়।

***
আমার ফুপুর নাম জ্যোৎস্না। ফুপুর এক ছেলে আছে। তার নাম টুকু। আমরা টুকু ভাই বলে ডাকি। ফুপুর বিয়ে হয়েছিলো এক দজ্জাল পরিবারে। ফুপা মারা যাবার পর বাবা আর কাকা ফুপুকে বাড়ি নিয়ে এলে ফুপু আর যায় নি। আমাদের সঙ্গেই থাকে।

টুকু ভাই মুখচোরা স্বভাবের। তার বাড়াবাড়ি রকমের লজ্জা। আমাদের সঙ্গে বড় হলেও এখন আমাদের দেখে লজ্জা পায়। ফুপু আর মায়ের সঙ্গে তার ভাব আছে অবশ্য। মাঝেমধ্যে দেখি মায়ের সঙ্গে হেসে হেসে রান্নাঘরে গল্প করে। সবজি কেটে দেয়, থালাবাসন ধুয়ে দেয়। আমার ধারণা ফুপুর চেয়ে মায়ের জন্য টুকু ভাইয়ের মায়া বেশী। প্রথম উপার্জন দিয়ে মায়ের জন্য কটকটে হলুদ শাড়ি এনে লজ্জামুখে দিয়ে বলেছিল, এটা বড় মামির। ছোট মামি আর মায়ের জন্য পরে আনব।

***
এবার বলি পলিনের কথা। আমার একমাত্র বোন। ছোট মা’র মেয়ে হলেও স্বভাবে অন্যরকম। পলিনের পড়াশোনা ভালো লাগে না। ওর সিনেমা দেখতে আর ঘুরেফিরে খেতেই বেশী ভালো লাগে। পলিন নিজের রুপ নিয়ে খুব টেনশনে আছে। সিনেমায় দেখেছে সুন্দরী মেয়েদের খুব খারাপ বিয়ে হয়। ওরও তাই হবে। এই নিয়ে সারাক্ষণ টেনশনে থাকে। পলিনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক মোটেও বন্ধুর মতো নয়। ও আমাকে খুব ভয় পায়। ভয় পেলেও রাতের বেলা গায়ে এক পা উঠিয়ে ঘুমায়। ওর খুব ইচ্ছে আমাদের দুজনের এক বাড়িতে বিয়ে হবে। আমাকে ছাড়া ও বেশীক্ষন থাকতে পারে না তাই এই ইচ্ছে।

এছাড়া আছে আমার আরও দুটো বিচ্ছু ভাই। একজন আমার ভাই অন্যজন পলিনের। ওদের নাম পিকু, পিয়াস। দুজনেই মহাবিচ্ছু। রোজ মায়ের হাতে মার খায়। তবুও শোধরাবে না। যত ধরনের অকাজ আছে সব করে। বাড়ির কারো কোনো কাজ করে দিলে তার জন্য টাকা নেয়। টাকা না দিলে মেরেও কাজ করানো যাবে না। তবে ছোট মা’র ক্ষেত্রে আলাদা নিয়ম। ছোট মা না চাইতেই টাকা দেয়। তাই তার কাজের বেলায় এদের নিয়ম ভঙ্গ করে।

***
এবার বলি আমার দাদীর কথা। দাদী এই বাড়ির সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ। ছেলের বউরা তার কাছে মেয়ের মতোন নয়। বরং মেয়ের চেয়েও বেশি। দাদী ফুপুর চেয়েও বেশী মা আর ছোট মা’কে ভালোবাসেন। আমার দাদু মারা গেছেন বছর চারেক আগে।

এই হলো আমাদের বাড়ির গল্প। আমাদের সংসারের মানুষজনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম। এই সংসারের কর্ত্রী হলো আমার মা। যে একা হাতে সবদিক সামলে রাখে। না বললেও সবার সব কথা বুঝে নেয়। মায়েরা এমনিতেই ম্যাজিশিয়ান হয়। তবে আমার মা সুপার ম্যাজিশিয়ান।

আমাদের বাড়ির এতো এতো ভালো কথা শুনে ভাববেন না যে ঝগড়াঝাটি হয় না। ঝগড়াও হয়। বাবা মায়ের ঝগড়া ছাড়া অন্যদেরও হয়। মায়ের সঙ্গে প্রায়ই ফুপুর লেগে যায়। ফুপু তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেয়। রিকশাও ডাকে। কিন্তু কোথায় যাবে সেটা বলে না। সবকিছু ঠিকঠাক করে যখন যাবে তখন মা এসে বলে, ভরদুপুরে ঘর ছাড়া ভালো কথা না। আমার সংসারে যেন অমঙ্গল না হয়। কেউ যেন না যায়। ফুপু যাওয়া বাদ দেয়। বলে সকালে যাবে। সকাল হতেই দুজনের ভাব হয়ে যায়।

ছোট মায়ের সঙ্গে মায়ের ঝগড়া হয় না। তবে মিষ্টি অভিমান হয়। ছোট তার বাপের বাড়ি গিয়ে দুদিনের জায়গায় তিন দিন থাকলেই বাড়ি ফিরে মায়ের রাগ ভাঙাতে বসে। মা তখন অভিমানী গলায় বলে,

এতো জলদি আসার কী দরকার। স্কুল বন্ধ, থাকলেই হতো। আমার চাকরিও নেই, ছুটিও নেই। তাই বাড়িই থাকি।

এছাড়া ভয়ংকর ঝগড়া দাদী আর ফুপুর হয়। পান, সুপুরি নিয়ে ঝগড়া। কথাবার্তা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।

বাবা, ফুপু, কাকা এই বয়সেও ঝগড়া করে। বাবার আনা জামাকাপড় আমাদের কারোর পছন্দ হয় না। বেছে বেছে পঁচা রঙগুলো বাবা আমাদের জন্য পছন্দ করে। মা অবশ্য কিছু বলে না কিন্তু মায়ের পরনে বাবার আনা শাড়ি দেখে ফুপু হয়তো বলে ফেলল যে কী রঙ রে বাবা! তোর গায়ে একদম মানাচ্ছে না। অমনি বাড়িতে তুলকালাম শুরু হয়ে যায়। সকালে এই ঝগড়া শুরু হলেও সসন্ধ্যেবেলা শেষ হয়। কাকা বাড়ি ফিরেই মা’কে বলবে ভাবী এই শাড়িতে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। ভাইজানের কিন্তু তোমার জন্য আনা শাড়িগুলো দারুন হয়। ফুপু তখন সুর মিলিয়ে বলেন, প্রথমে ভালো না লাগলেও আস্তে আস্তে ভালো লাগে। রঙ টা খারাপ হইলেও তোর গায়ে ভালো লাগতেছে।

এভাবেই ঝগড়া শেষ হয়।

বাড়ির গল্প শেষ হলো। এবার আমার কথা বলি। আমার নাম বৃষ্টিলেখা। নাম টা সুন্দর তাই না? এই নাম আমার জন্মদাত্রী মায়ের দেয়া। সে কেন এই নাম দিয়েছে জানিনা। তবে ছোট মা বলেছেন যে আমার জন্মদাত্রী মা নাকি খুব গল্পের বই পড়তেন। আমার ধারণা সেখান থেকেই এই নাম দেয়া। আমি এখন বিএ সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি। বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগছে। সেটা তো আপনার জানা আছে।

চিঠির সঙ্গে আমার ছবিও পাঠানো হবে। কেন যেন মনে হচ্ছে আমাকে আপনার পছন্দ হবে না। তবুও বৃষ্টিলেখায় আপনার নিমন্ত্রন রইলো। কোনো এক বসন্তে চলে আসুন। ভালো না লাগলেও খারাপ যে লাগবে না সেটুকু বলতে পারি।

দুটো কথা বলে দীর্ঘ চিঠির ইতি টানব।

পলিনের আপনাকে পছন্দ হয় নি। অপছন্দের কারন বলে নি। তবে আমার ধারণা আপনার কোনো ভাই নেই তাই ও অপছন্দের কথা বলেছে।

আর আমার নাম বৃষ্টিলেখা হলেও বৃষ্টি আমার খুব অপছন্দের। নাম শুনে অসাধারণ টাইপ কিছু আশা করে থাকলে ধাক্কার জন্য তৈরী থাকুন।

ইতি
বৃষ্টিলেখা।

চিঠি শেষ করে খামে ভরতে ভরতে বৃষ্টি পলিন কে বলল,

“তুই তৈরী? ”

“হু। এই বুবু, চিঠিতে কী লিখলি?”

“যা লিখতে বলেছে। ”

“আমাদের কথা?”

“হু। ”

“আমার ব্যাপারে ভালো কথা লিখেছিস?”

বৃষ্টি শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে বলল,

“তুই যে অংকে আঠারো পেয়েছিস সেটা লিখিনি।”

পলিন মন খারাপ করে বলল, ধ্যাৎ।

পলিন আবারও বলল,

“আবির ভাইয়ার কথা কিছু লিখিস নি?”

বৃষ্টি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

“আমাদের বাড়ির লোকজনের মধ্যে আবির কেন আসবে?”

“আরে ওরা তো আমাদের বাড়ির ই ধরতে গেলে। ওই বাড়ির লাউশাক এই বাড়ি আসে আর এই বাড়ির মরিচ ভর্তা ওই বাড়ি যায়। একই তো। ”

“তুই লিখিস। ”

“বুবু?”

“হু। ”

“তুই কী আবির ভাইয়ের সঙ্গে জীবনেও কথা বলবি না?”

“না। ”

“তোর যখন বিয়ে হয়ে যাবে তখনও না?”

“না।”

পলিন মন খারাপ করে ফেলল। আবির ভাইয়ের সঙ্গে বুবুর বিয়েটা হলে কতো ভালো হতো। বুবুকে আর দূরে যেতে হতো না। কাছাকাছি থাকতো। ওরও সুবিধে হতো। বুবুর বিয়ে হলে রাতে ও একা ঘুমাবে কী করে! আবির ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হলে টুক করে বালিশ নিয়ে ওই বাড়ি চলে যেত। ধ্যাৎ!

চলবে….
(কেমন লাগবে জানাবেন।)