বিধ্বস্ত অনুভূতি পর্ব-০১

0
3316

#বিধ্বস্ত_অনুভূতি
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১

তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা তন্দ্রাকে বেধড়ক মার মেরেছে অনির। তন্দ্রার ভ্রুর বাম দিকে কেটে টুপ টুপ করে রক্ত ঝরছে। কাটা অংশে ওড়না দিয়ে চাপ দিচ্ছে তন্দ্রা। বাম হাত দিয়ে কপাল ধরে ডান হাত দিয়ে ভাত বেড়ে দিচ্ছিল।

বাচ্চাটা পেটে আসার পর থেকে কিছুই যেন খেতে পারে না সে। আজ সকাল থেকে একটা দানাপানি মুখে তুলতে পারেনি। মুখে পানি দিলেই গড়গড়িয়ে বমি হচ্ছে তার। এদিকে দুপুরের রান্না করার সময় মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলেও কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে সব রান্না নিজেই করেছে।
টেবিলে এনে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ডাক পড়ে শাশুড়ির।
তাকে ভাত বেড়ে দিতে বলছে।

“আম্মা শরীর ভালো লাগতেছে না।টেবিলেই সব রাখা। পানিও দিয়া আসছি।আপনি একটু ভাত বাইড়া খান আজ।”

অনুনয়ের গলায় বলেছিল তন্দ্রা কিন্তু রাগে ক্ষোভে তার শাশুড়ি ভাত বেড়ে না খেয়ে সিড়ির ওখানে বসে আছে৷
তন্দ্রা জানেও না যে তার শাশুড়ি খায়নি। শরীর এতটা দুর্বল যে সে ঘুমিয়ে গিয়েছিল সাথে সাথেই।

রাত দশটার সময় তন্দ্রার স্বামী অনির অফিস থেকে ফিরে দেখতে পেল তার মা বাহিরে সিড়ির এক পাশে বসে কাঁদছেন। তার পাশে বসে আছে পাশের ফ্ল্যাটের এক বয়স্ক মহিলা।

দ্রুত পায়ে মায়ের কাছে এগিয়ে আসতেই সবটা শুনলো অনির।
তার মা ভাত চেয়েছে বলে অপমান করেছে তন্দ্রা।
আরো অনেক কথা বলেছে, পাশের মহিলাটাও সায় দিলো। সেও না কী শুনেছে তন্দ্রাকে চিল্লাফাল্লা করতে।

যখন অনির ফিরেছে, তন্দ্রা তখন শুয়েছিল।ফিরে আসতেই প্রতিদিনের মতোন তন্দ্রা অনির জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে গেলে বা হাত দিয়ে অনির সজোরে আঘাত করে তন্দ্রার দিকে।অনির
হাতে থাকা ঘড়িতে লেগে কেটে যায় তন্দ্রার চোখের উপরের অংশে।
তারপর ইচ্ছে মতোন শাসিয়ে অনির ঘরে চলে গেলে তন্দ্রা খাবার গরম করে প্লেটে বেড়ে শাশুড়ি কে ডাকতে যায়।

আয়না বেগম তার কথায় অনড়।সে কিছুতেই তন্দ্রার হাতের খাবার খাবে না৷ কান্নাকাটি করে একাকার অবস্থা৷
বার বার করে বলছে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে৷
এই মেয়ে তাকে সেবাযত্ন তো দূরে থাক, ভাত অবধি দিবে না।

পাশের ফ্ল্যাটের সেই মহিলা আবার এসেছে। সে এসে তন্দ্রাকে বলল,

“টবর টবর চোখের পানি না ফালাইয়া পায়ে ধইরা মাফ চাও।তাই’ত হয়। বউ মানুষের আবার এত লাজ লজ্জা কীসের? শাউড়ী মায়ের সমান। যাও মাফ চাও।”

তন্দ্রা কোনো সমাধান না পেয়ে তার শাশুড়ির পায়ে ধরে মাফ চাইলো। এরপর ভদ্রমহিলা খাবার টেবিলে বসে ভাত খেলেন। রাতেও কিছু খেতে পারলো না তন্দ্রা।
বাচ্চার কথা চিন্তা করে যতই খেতে ইচ্ছুক হোক না কেন পারছে না।
এক গ্লাস গ্লুকোজ জল খেয়ে বিছানার এক পাশে গা এলিয়ে দিলো তন্দ্রা।
দুই বছরের সংসার তার। এ অবধি সুখের আবছায়া শুধু অন্ধকার রুমেই আবদ্ধ।
রাতের অন্ধকারে ভালোবাসা ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার হয় কিন্তু ঘর আলো হলেই মানুষটা বদলে যায়।

কপালের পাশে প্রচন্ড ব্যথা করছে তাই একটা নাপা খেয়ে নিলো তন্দ্রা। কারণ এই অবস্থায় কোনো ওষুধে যদি বাচ্চার ক্ষতি হয়?

অনির তার পাশে শুয়েই সিগারেট টানছিল।সিগারেট শেষ করে সে ফোন হাতে বাহিরে চলে যায়। মিনিট দুয়েক পর ফিরে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা করে তন্দ্রার।
তন্দ্রা চুপচাপ বসেছিল৷ একটু শব্দও করেনি। কারণ এর আগেও কয়েকবার অনির ওর গায়ে হাত তুলেছে।
প্রথম যেদিন হাত তুলে সেদিন ছিল তাদের বিয়ের ৩৭ তম দিন।
বাবার বাড়ি থেকে ফিরে এসে তন্দ্রা সবুজ রঙা শাড়ি পরেছিল।
বিয়ের রাতে অনেক উপহারের সাথে এই শাড়ি উপহার পেয়েছিল তন্দ্রা। কিন্তু সেই শাড়ি অনির বোন আফসানার বেশ পছন্দ হয়।
আফসানার অনেকদিনের ব্যবহৃত শাড়ির সাথে এই শাড়িটি বদলাতে চাইলে তন্দ্রা না করে দেয়।

কারণ তার বিয়ের রাতে তার স্বামীর দেওয়া উপহার। সে এটা দিতে চায়নি।
ব্যস শুরু হয়ে যায় কান্নাকাটি। অনির মা বুক চাপড়ে কেঁদে বলেছিল,

“এই মাইয়্যা আমার মাইয়্যাগো ভাত দিব না। আমি কি কাল সাপ আনলাম। এখনি এই রুপ?সামনে আমাগো বাড়ি ছাড়া করবো।”

তন্দ্রা আফসানাকে এই শাড়ি ব্যতীত সকল শাড়ি এনে দিয়েছিল যেটা পছন্দ হয়েছিল ওটা বাদ দিয়ে যা ইচ্ছা নিক। কিন্তু আফসানার ওটাই চাই।

অনির এসে সব’টা জেনে তন্দ্রার গা থেকে শাড়ি খুলে নিয়ে আফসানাকে দিয়েছিল।তন্দ্রা জিজ্ঞেস করেছিল কেন নিলো?
বিনিময়ে বিয়ের ৩৭ দিনের মাথায় থাপ্পড় মেড়েছিল অনির তন্দ্রাকে।

পাঁচ আংগুলের দাগ নিয়ে তন্দ্রা মেনে নিয়েছিল সব। কিন্তু সবার কপালে সব সয় না। অনুভূতিগুলো সবে মাত্র বিধ্বস্ত হতে চলেছে। শাড়ির ভাগ দেওয়াই যায় সংসারের ভাগ দেওয়া যায়?

চলবে,

বি.দ্র. গল্প নয় এটা এক আপুর বাস্তব জীবনের কথা। সে আমাকে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে বলেছে। তার পরিস্থিতিতে থাকলে আপনি কী করতেন? একটা সময় বাস্তব রূপ শেষ হয়ে যাবে, তখন আমি আমার মতো শেষ করবো। হ্যাঁ কিছু ১৮+ থাকবে। আগেই বলে দিচ্ছি।তন্দ্রার জায়গায় আপনি থাকলে কী করতেন? )