বিবাহ অভিযান পর্ব-১৫+১৬

0
220

#বিবাহ_অভিযান (১৫)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

– “এই অয়ন রাশি কথা বলছে না কেন? রাশি ঠিক আছে তো!”
– “সমুদ্র প্যানিক করিস না, আমাকে দেখতে দে।”

অয়ন রাশির দিকে এগিয়ে যেতে যাবে তার আগেই একজন নার্স এসে বলল,
– “আপনারা কারা আর না বলে ভেতরে কি করছেন?”

সমুদ্র, অয়ন দুজনেই চমকে নার্সের দিকে তাকাল।

– “কি হলো কথা বলছেন না কেন?”

অয়ন তড়িঘড়ি বলল,
– “আমরা রাশির রিলেটিভ।রাশি ঠিক আছে তো?”

নার্স রাশির দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
– “চিন্তার তেমন কিছুই নেয়। চোট লেগেছে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে তাই ঘুমাচ্ছে।”

অয়ন ও সমুদ্র দুজনেই শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। যাক বাবা রাশি ঠিক আছে।

– “কিন্তু ওনার সাথে আরেকজন যে ছিলেন তার অবস্থা গুরুতর, অনেকটাই চোট পেয়েছেন।”

অয়ন ও সমুদ্র দুজনেই চমকে একে অপরের দিকে তাকাল। রাশির সাথে আর কে ছিল?

সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
– “আর একজন কে?”
– “সেটা তো বলতে পারব না, একজন ছেলে।”

একটা ছেলে! অয়ন তড়িঘড়ি বলল,
– “কোথায় আছে সে?”
– “২২২ নং।”

অয়ন সমুদ্রের হাত টেনে নিয়ে বলল,
– “চল দেখি আসি।”
– “কিন্তু রাশি
– “রাশি ঘুমাচ্ছে তো। ততক্ষন চল দেখে আসি।”

অয়ন সমুদ্র’কে নিয়ে ২২২নং কেবিনের দিকে পা বাড়াল। এখন অনেকগুলো প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করছে। রাশি এতক্ষন কোথায় ছিল? এক্সিডেন্ট কিভাবে হলো আর রাশির সাথে ছেলেটা কে ছিল?

অয়ন আর সমুদ্র কেবিনের ভেতর উঁকি মারল ভেতরে একজন নার্স আর একজন ডক্টর‌ আছে।ওরা বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল, কিছুক্ষণ পর ডক্টর‌ বের হয়ে আসলে অয়ন জিজ্ঞেস করে,

– “এক্সকিউজ মি স্যার।‌”
– “হ্যাঁ বলুন।”
– “স্যার প্রেসেন্টের অবস্থা কেমন?”
– “প্রেসেন্ট অনেকটাই আহত হয়েছে, হাতে-পায়ে অনেকটা চোট পেয়েছেন কতটা কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা রির্পোট না আসা পর্যন্ত বলা যাবে না। আপনারা ওনার‌ বাড়ির লোক?”

অয়ন সমুদ্রের মুখের দিকে তাকাল, কি বলবে? ছেলেটা আসলে কে সেটাই তো জানে না।

ওদেরকে চুপ করে থাকতে দেখে ডক্টর বললেন,
– “কি ব্যাপার আপনারা কিছু বলছেন না কেন?”
– “না আমরা ওনাকে চিনি না। ওনার সাথে যে মেয়েটা ভর্তি হয়েছে আমরা তার বাড়ি লোক।”
– “ওহ।ওনার বাড়ির লোককে খবর দেবার ব্যবস্থা করুন।”
– “ওকে।”

ডক্টর চলে যেতে অয়ন ও সমুদ্র কেবিনের ভেতরে গেল। কিন্তু চেষ্টা করেও ছেলেটা কে সেটা বুঝতে পারল না। মুখে অনেকটা ব্যান্ডেজ করা আছে সেই কারনে মুখটা বোঝা যাচ্ছে না।

***
পরেরদিন সকাল,
অয়ন ও সমুদ্র সারারাত হসপিটালে কাটায়। সমুদ্র অয়নকে কয়েকবার চলে যেতে বলেছিল কিন্তু অয়ন রাজি হয়নি শেষে দুজনেই ছিল। সমুদ্র খুশিকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল রাশিকে পাওয়া গেছে আর ওহ ঠিক আছে।

অয়ন ও সমুদ্র রাশির সাথে দেখা করতে এসেছে।

– “রাশি তুমি ঠিক আছো তো?”
– “হ্যাঁ অয়ন’দা আমি ঠিক আছি। তোমরা কীভাবে জানলে আমি এইখানে?”
– “রিতা তো বাড়িতে নেয়, তাই আমাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল।”
– “ওহ।”

– “রাশি কাল রাতে তুমি কোথায় ছিলে? সমুদ্র তো তোমাকে খুঁজে না পেয়ে থানা পর্যন্ত চলে গিয়েছিল।”

রাশি সমুদ্রের মলিন মুখের দিকে তাকাল।‌ ছেলেটা একদিনের মধ্যে কিরকম শুকিয়ে গেছে। রাশির খেয়াল পড়ল সোহানের কথা, অয়নের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “অয়ন’দা সোহান কোথায়?”

সোহান! অয়ন সোহানকে চেনে না তাই জিজ্ঞেস করল,
– “সোহান কে?”
– “আমার সাথে আর একজনকে ভর্তি করানো হয়েছিল সে কোথায়?”

সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকাল।‌ রাশি সোহানের সাথে ছিল কিন্তু কেন? রাশি তো সোহানকে পছন্দ করে না তাহলে এত রাত পর্যন্ত ওর‌ সাথে কি করছিল? অনেক উল্টো পাল্টা চিন্তা সমুদ্রের মাথায় ধরা দিতে লাগল। তরা মাঝে অয়ন বলল,
– “ছেলেটা অনেকটাই চোট পেয়েছে ডক্টর জানিয়েছে রির্পোট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।”

রাশির বড্ড অনুশোচনা হলো, ছেলেটা ওকে পৌঁছে দিতে না আসলে এইরকম একটা বিপদ হতো না।‌কালকে রাতে হঠাৎ করেই একটা ট্রাক ওদের সামনে চলে‌ আসে, ট্রাকের লাইট সোহানের চোখে পড়ায় নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তবে ভাগ্য ভালো ট্রাকের সাথে একটুর জন্য ধাক্কা লাগেনি, পাশ থেকে বেরিয়ে রোডে পড়ে। রাশির হালকার উপর চোট লাগে কিন্তু সোহান অনেকটাই আঘাত পায়। আশেপাশের মানুষ ওদেরকে কাছাকাছি হাসপাতালে ভর্তি করে, রাশি একজনের ফোন থেকে রিতাকে ফোন করে এক্সিডেন্টের‌ খবর জানায়। ওর আর খুশির নম্বর মুখস্থ ছিল কিন্তু খুশিকে ফোন করলে মা জেনে যাবে তাই রিতাকে কল‌ করে সবটা বলে। তারপরের টা সবারই জানা।

রাশি চিন্তিত কন্ঠে বলল,
– “অয়ন’দা তুমি একটু প্লিজ সোহানের ট্রিটমেন্টের দিকটা দেখবে, আমার জন্য ছেলেটার আজকে এই অবস্থা।”
– “তোমার জন্য মানে?”

রাশি পুরো ঘটনা না‌ বলে বলল,
– “আমাকে‌ বাড়ি পৌঁছে দেবার সময়েই এই ঘটনা ঘটে।”

সমুদ্র রাশির দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকাল। ওর বুঝতে অসুবিধা হলো না রাশি সোহানের সাথে ছিল তারমানে কি রাশি সোহান’কে এক্সসেপ্ট করে নিয়েছে? সোহানকে‌ ভালোবেসে ফেলেছ?

সমুদ্র আর কিছু ভাবতে পারল না, কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। অয়ন কয়েকবার ডাকল তারপরেও ফিরে তাকাল না, অয়নও ওর পেছন পেছন চলে গেল। সমুদ্র হঠাৎ করে কেন চলে গেল সেইটাই বুঝতে পারল না।

রাশি সবটা বুঝল কিন্তু কিছু না বলে চুপ করে রইল।‌এখন সোহানের যা অবস্থা শুনল তাতে আসল‌‌ সত্যিটা কাউকে না বলাই ভালো।‌ ছেলেটা আগে সুস্থ হয়ে নিক তারপর না হয় সমুদ্রকে সবটা বলবে।‌

অয়ন দৌড়ে গিয়ে সমুদ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
– “কি হলে এইভাবে চলে‌ আসলি কেন?”
– “ভালো লাগছে না।”

অয়ন ভ্রু কুঁচকে তাকাল।‌ যে ছেলে কাল থেকে অধৈর্য হয়ে ছিল আর আজ সে রাশিকে দেখার‌ পর ওর সাথে কথা না বলেই চলে যাচ্ছে কিছু তো একটা হয়েছে।

– “কেন ভালো লাগছে না কি হয়েছে আমাকে বল।”
– ‘আমি বাড়ি যাবো, সর সামনে থেকে।”

অয়ন ভ্রু কুঁচকে বলল,
– “তুই কি ওই সোহানকে নিয়ে জেলাস?”
– “না, ওকে নিয়ে জেলাস হবো কেন?”
– “তাহলে কি হয়েছে বল। একমিনিট তুই সোহানকে চিনিস?”
– “হুমম।”
– “কিভাবে?”

সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
– “ওহ রাশিকে পছন্দ করে, অনেকবার প্রোপোজও করেছে। রাশি এক্সসেপ্ট করেনি।”

অয়নের মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জাগল, কৌতুহল নিয়ে বলল,
– “তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে রাশি কাল সোহানের সাথে কি করছিল?”
– “সেটা তো আমারও প্রশ্ন। সোহানের জন্য ওর কেয়ারিং আমার একদম ভালো লাগছে না। আমি খুশি আর আকাশকে আসতে বলছি ওরা আসুক আমি বাড়ি ফিরব।”

অয়ন কিছু বলল না। সমুদ্র জেলাস সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে তাই ওকে ঘাটিয়ে লাভ হবে না।‌ কিন্তু ওহ রাশিকে এতদিন ধরে চেনে রাশি তো এইরকম করার মেয়ে না। সবকিছুর পেছনে একটা রহস্য তো আছেই কিন্তু সেটা কি?

২দিন পর,
আজকে রাশির ছুটি হয়ে যাবে। এই দুইদিনে সমুদ্র বাইরে থেকে খোঁজ খবর নিয়ে গেছে‌ ঠিকই কিন্তু একবারও রাশির সামনে আসেনি। রাশি সমুদ্রের অভিমানের কারন বুঝতে পেরেছিল, ওর‌ সাথে কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু কার‌ সাথে কথা‌ বলবে সে তো ওর সামনেই আসে না।

ওইদিকে সোহানের অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা ভালো।‌পায়ে ভালোমতো চোট পেয়েছে ভাগ্য ভালো পায়ের হাড় ভেঙে যায়নি নাহলে খবর ছিল। ডক্টর বলেছে আর কয়েকদিন ভর্তি থাকার জন্য। রাশি বাড়ি ফেরার আগে সোহানের সাথে দেখা করতে গেল যেটাই সমুদ্রের রাগ-অভিমান আরো কিছুটা বেড়ে গেল।‌

– “সোহান।”

সোহান বেডে আধশোয়া হয়ে বসে ছিল।‌ রাশির গলার আওয়াজ শুনে সামনে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
– “এখন কেমন আছো?”
– “হুমম কিছুটা ভালো, তোমার কি ছুটি হয়ে গেল?”
– “হুমম।”
– “সবকিছুর জন্য আবারো সরি। আমি তো আমার পাপের শাস্তি পেয়েই গেলাম শুধু তুমি মাঝখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হলে।”
– “আরে বাদ দাও তো এইটা হবার ছিল তাই হয়েছে। আর সেদিক থেকে দেখতে গেলে আমিই সবকিছুর জন্য দায়ী। সেইদিন আমাকে ফিরিয়ে দিতে না আসলে এইরকম কিছু হতোই না।”
– “তোমাকে কেও জিজ্ঞেস করেনি সেইদিন কোথায় ছিলে?”

রাশি মলিন হেসে বলল,
– “অসুস্থ ছিলাম বলে কেউ জিজ্ঞেস করেনি তবে বাড়ি ফেরার পর ওই প্রশ্নটাই সবথেকে বেশি আসবে।”
– “কি বলবে?”
– “জানি না। তবে সত্যিটা কাউকে বলার ইচ্ছা নেই।”

সোহান ভ্রু কুঁচকে তাকাল,
– “কেন?”
– “সে সব বাদ দাও। আমি এখন আসছি, আর তোমার ফোন নম্বর’টা দাও।”

রাশির কথামতো সোহান নিজের নম্বর দিয়ে দিল। এর মাঝে একদিন রাশি সোহানের সাথে দেখা করতে এসেছিল আর তখন থেকেই সোহানকে তুমি বলে ডাকছে।

রাশি নম্বরটা ফোনে সেভ করে নিয়ে বলল,
– “আসছি তাহলে নিজের খেয়াল রেখো।”

সোহান মৃদু হেসে বলল,
– “তুমিও।”

দেরি হচ্ছে দেখে খুশি সমুদ্রকে রাশি’কে ডাকতে পাঠায়। সমুদ্র একপ্রকার বাধ্য হয়েই রাশি’কে ডাকার জন্য আসে আর এখানে এসে রাশির মুখে তুমি সম্বোধন’টা শুনে অনেকটা অবাক হয়। সমুদ্রের ওদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
– “আপনি থেকে তুমি! বাহ এত উন্নতি হয়েছে। তাহলে কি আমার ধারনাই ঠিক?”

#চলবে

#বিবাহ_অভিযান (১৬)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

সমুদ্র প্রচন্ড রাগ নিয়ে রাশিকে না ডেকেই চলে যায়। রাশি খুশির কাছে ফিরে আসতেই খুশি আশেপাশে তাঁকিয়ে বলল,
– “সমুদ্র’দা কোথায় গেল?”
– “কেন এইখানেই তো ছিল, আবার কোথায় গেল?”
– “হ্যাঁ তোকে ডাকতে পাঠালাম তো।”

ঘটনা কি ঘটেছে রাশি তার আংশিক আন্দাজ করতে পারল। মনে মনে হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– “একবার ফোন কর।”
– “ওকে।”

খুশি সমুদ্রের নম্বরে কল লাগল, রিসিভ করার পরপরেই সমুদ্র ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
– “সরি খুশি আমি তোমাদের সাথে যেতে পারব না, আমার একটু কাজ পড়ে গেছে।”
– “আচ্ছা তাহলে আমরা চলে যাচ্ছি।”

খুশি ফোনটা রেখে দিতেই রাশি জিজ্ঞেস করল,
– “কি হলো?”
– “কাজ আছে বলল, চল।”

রাশি ও‌ খুশি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।‌ গাড়ির কাঁচে মাথা ঠেকিয়ে রাশি আনমনে কিসব ভেবে চলেছে, ওকে আনমনা হতে দেখে খুশি জিজ্ঞেস করল,
– “দিদি কি হয়েছে? তোকে এত আনমনা লাগছে কেন?”
– “কিছু না রে এমনি।”
– “সমুদ্র’দা আসলো না বলে কি মন‌ খারাপ করেছিস?”
– “আরে নাহ তেমন কিছুই না।”

রাশি মনে মনে বলল,
– “সমুদ্র আমাকে ভুল বুঝল! একটাবার সত্যি মিথ্যা যাচাই করার চেষ্টা করল না, একটাবার আমার কাছে সত্যিটা জানতে চাইল না। তাহলে আমি কি আমার লাইফে ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছিলাম?”

রাশি উত্তর পেল না, সমুদ্রের এড়িয়ে চলাটা ওকে বড্ড ব্যথা দিচ্ছে। ওহ তো একটাবার রাশির কাছে সত্যিটা জানতে চাইত, কেউ জানুক আর না জানুক সমুদ্র তো জানত রাশি সোহানকে পছন্দ করে না।

অন্যদিকে..

– “সোহান।”

সোহান সেই মাত্র চোখটা বন্ধ করেছিল কারোর কন্ঠে নিজের নাম শুনে সামনে তাকিয়ে দেখল সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। সোহান একটু অবাক হলো, সমুদ্র এইখানে কি করছে?

– “আপনি এইখানে?”
– “তোমার সাথে কথা আছে।”
– “হ্যাঁ বলুন।”

সমুদ্র একটা টুল নিয়ে বেডের পাশে বসে বলল,
– “এক্সিডেন্টের দিন রাশি তোমার সাথে কি করছিল?”

সোহান থতমত খেয়ে যায়, নিজের অন্যায়ের কথা নিজের মুখে কিভাবে বলবে।তাই কথা কাটানোর জন্য মিথ্যা কথা বলল,
– “রাস্তায় দেখা হয়েছিল তাই পৌঁছে দিচ্ছিলাম।”

সমুদ্র মৃদু হাসল, তারপর সোহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করো না।কেউ জানুক আর না জানুক আমি খুব ভালো করেই জানি রাশির সাথে তোমার রিলেশন কেমন, রাশি তোমার সাথে এমনি এমনি ফিরবে! হু কিছু একটা তো গন্ডগোল অবশ্যই আছে। আর থেকেও বড়ো কথা কি জানো?”
– “কি?”
– “যেদিন এক্সিডেন্ট হলো সেইদিন বিকালে আমার সাথে দেখা করার কথা ছিল আর সেইদিন রাশি দেখা না করেই গায়েব হয়ে যায়, ফোনটা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। আর রাতে খবর আসে ওর এক্সিডেন্ট হয়েছে আবার সেটা তোমার বাইকে। বিষয়টা এতটা সহজ তো নয়, তাই কোনো মিথ্যা না বলে সত্যিটা আমাকে বলো।”

সোহান মুখটা কাঁচুমাচু করে বলল,
– “আসলে বিকাল থেকে রাশি আমার কাছেই ছিল।”

সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
– “কেন, কিসের জন্য রাশি তোমার কাছে ছিল?”

সোহান বুঝল সমুদ্র সত্যিটা না জানা পর্যন্ত এইখান থেকে যাবে না। তাই নিজের কথাগুলো গুছিয়ে নিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
– “আমি রাশিকে কিডন্যাপ করেছিলাম।”

সমুদ্র চমকালো না, বিষয়টা আগেই সন্দেহ করেছিল আর সেইটা মিলেও গেল। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, সোহান রাশিকে কিডন্যাপ করার পরে রাশি এতটা কুল কিভাবে? যেখানে সোহানকে পছন্দই করত না। সেখানে ওর সাথে ভালো ব্যবহার একটু বেশিই চোখে লাগছে।

সমুদ্র সোহানের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল,
– “জানি, পরেরটা বলো।”
– “মানে?”
– “মানে কি এমন হলো যাতে রাশি তোমার সাথে এতটা কুল ব্যবহার করছে। এমনকি তুমি ওকে কিডন্যাপ করেছ এই কথাটাও কাউকে বলেনি, এমনকি আমাকেও না।”
– “একচুয়ালী…

সোহান সমুদ্রকে একে একে সবটা বলল। সমুদ্র সবটা শুনে সোহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “এই বয়সে এসে এইরকম একটা আনম্যাচুউর কাজ কিভাবে করলে? এত বছরের পুরানো রাগের প্রতিশোধে নিতে একটা মেয়ের বদনাম করার জন্য উঠে পড়ে লাগলে!!”

সোহান মলিন হেসে বলল,
– “প্রতিশোধের আগুন মানুষকে ঠিক ভুলের বিচার করতে ভুলিয়ে দেয়। আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমি কি করছি।”

সমুদ্র সোহানের পিঠ চাপড়ে বলল,
– “যা হয়েছে ভুলে যাও। যেহেতু রাশি তোমাকে মাফ করে দিয়েছে এখানে আমার আর কিছুই করার নেই। তবে একটা কথাই বলব ভবিষ্যতে যায় করো না কেন সবদিক বিবেচনা করে করো। সবাই কিন্তু রাশি না যে মাফ করে দেবে।”
– ‘হুমম।”
– “নিজের খেয়াল রেখো আমি আসছি।”

সমুদ্র হাসি মুখে চলে যাবার জন্য পা বাড়াল। সোহান পেছন থেকে ডেকে বলল,
– “বিয়ের দাওয়াত দিয়েন।”

সমুদ্র পেছন ফিরে মৃদু হেসে বলল,
– “শুধু দাওয়াত না দায়িত্বও দেব, তৈরি থেকো।”

—– ——

রাশি বাড়িতে ফিরতেই ওর মা জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষন কান্নাকাটি করলেন। স্বামী মা’রা যাবার পর রাশি ছেলের মতো এই সংসারের হাল ধরেছে, মেয়েটা অনেক কিছু করেছে এই পরিবারের জন্য। আর সুখের সময়ে এইরকম একটা ক্ষতি হয়ে গেল।

– “মা আর কত কাঁদবে? আমি তো ঠিক আছি নাকি!”

রাশির মা একরাশ অভিমান নিয়ে বললেন,
– “হুমম কত ঠিক আছিস দেখতেই পাচ্ছি। আমি যত দ্রুত তোর বিয়ের ব্যবস্থা করব, তাদের জিনিস তারা কীভাবে শাসনে রাখবে তারা বুঝুক।”

রাশি মাকে জড়িয়ে ধরে মলিন মুখে বলল,
– “এত তাড়াতাড়ি তাড়িয়ে দেবে?”

রাশির মা কিছু বলতে পারলেন না, মেয়েটা চলে গেলে কিভাবে থাকবেন সেইটাই ভেবে পান না। কিন্তু মেয়েটার তো বিয়ে দিতেই হবে।তাই কথা ঘোরানোর জন্য বললেন,
– “যা রেস্ট নে আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি।”

রাশি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল। মা বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন বুনছে কিন্তু এই বিয়েটা কি আদৌও হবে? রাশি মনে মনে ঠিক করল আজ সমুদ্রের সাথে কথা বলবে, ওহ কি চায় সেটা রাশিকে জানতেই হবে।

রাত্রিবেলা,
কয়েকবার রিং হবার পরেও সমুদ্র ফোন রিসিভ করল না। রাশি হতাশ হয়ে ফোনটা রেখে মনে মনে বলল,
– “সমুদ্রকে নিয়ে আমি যা ভাবতাম সেইগুলো কি সব মিথ্যা ছিল? কই একটাবার কল করে জানতে চাইল না আমি কেমন আছি? সব কি তাহলে মিথ্যা ছিল!!

কিছুক্ষণ পর,
সমুদ্র কলব্যাক করল। সমুদ্রের কল আসাতে রাশির মুখে হাসি ফুটে উঠল, খুশিমনে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সমুদ্র গম্ভীর গলায় বলল,
– “বলুন।”

রাশির মুখটা চুপসে যায়। ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠস্বর আশা করেনি, মলিন গলায় বলল,
– “ভালো আছেন?”
– “হুমম আপনি?”
– “হুমম ভালো।”
– “কিছু বলবেন কি?”
– “ব্যস্ত আছেন?”

সমুদ্র বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
– “তেমন কিছু না, বলুন।”

রাশি কি বলবে ভেবে পেল না। উশখুশ করতে লাগল, এর মাঝে সমুদ্র বলল,
– “চুপ করে থাকবেন? নাকি কিছু বলবেন?”

রাশি আর চুপ করে থাকতে পারল না, কথাটা বলেই ফেলল,
– “আপনি কি রাগ করেছেন আমার উপর?”

সমুদ্র মৃদু হাসল কিন্তু রাশিকে বুঝতে না দিয়ে বিরস কন্ঠে বলল,
– “মানুষ রাগ করে তার প্রিয় মানুষদের উপর। আপনি কি আমার প্রিয় মানুষ?”

রাশি কি উত্তর দেবে? ওহ কি সত্যি সমুদ্রের প্রিয় মানুষ! উত্তরটা ওর জানা নেয়, ওহ নিজেই শিওর না সেখানে সমুদ্রকে কিভাবে উত্তর দেবে। আর সমুদ্রই বা এইরকম একটা প্রশ্ন করল কেন? রাশিকে কি বোঝাতে চাইছে ওহ!

সমুদ্র বলে উঠল,
– “কি হলো চুপ করে গেলেন?”
– “কি বলব?”
– “উত্তরটা দিন।”

রাশি চুপ করে রইল।উত্তর জানা নেয় কিভাবে দেবে। রাশি চুপ করে থাকা দেখে সমুদ্র মৃদু হেসে বলল,
– “যাকে ভালোবাসেন তার মন পড়তে না পারলে ভালোবাসলেন কই!”

#চলবে…