বিবাহ অভিযান পর্ব-১৭+১৮

0
103

#বিবাহ_অভিযান (১৭)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

“যাকে ভালোবাসেন তার মন পড়তে না পারলে ভালোবাসলেন কই!”

সমুদ্রের কথায় রাশি থতমত খেয়ে গেল। সমুদ্র কি বলতে চাইছে? ফোনের ওপাশ থেকে সমুদ্র আবারো বলতে লাগল,

– “ভালোবাসলে মানুষটির মন পড়তে জানতে হয়, তার না বলা কথাগুলো বুঝে নিতে হয়।”

রাশি নড়েচড়ে বসল, তারপর অভিযোগের সুরে বলল,
– “কেন বুঝে নিতে হবে? ওপর পক্ষের মানুষটি বলতে পারে না! ”

সমুদ্র কিছুটা কৌতুকের সুরে বলল,
– “সব যখন বলেই দিতে হবে যখন তাহলে ভালোবাসে লাভ কি!”
– “ভালোবাসা আবার লাভ-ক্ষতি দ্যাখে?”
– “লাভ ক্ষতিটা তো মজা‌ করে বললাম।তবে তুমি মনে হয়, ঝগড়া করার মুডে আছো, তাই না?”

রাশি কিছুটা লজ্জা পেল, ওইভাবে বলতে চায়নি কিন্তু সমুদ্র উল্টো ভাবে ব্যাপারটা নিল।ওহ কিছু বলবে তার আগেই সমুদ্র বলল,
– “চুপ করে গেলে যে?”

রাশি চট করে বলে উঠল,
– “আপনি কাউকে ভালোবাসেন?”

সমুদ্র হাসল, তবে মেয়েটা হঠাৎ করে এই প্রশ্নটা করবে সেটা আন্দাজ ছিল না। যাইহোক প্রশ্ন যখন করেছে তখন উত্তর তো দিতেই হবে, তাই বলল,
– “হুমম ভালোবাসি এবং তার মনের না বলা কথাগুলোও বুঝি।”

রাশির‌ মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল, সমুদ্র কাকে ভালোবাসে? তাহলে কি এতদিন যা কিছু ভাবছিল‌ সবটা ভুল ছিল!

রাশিকে ভাবনার মাঝে রেখে সমুদ্র বলল,
– “এখন রাখি কাজ আছে।”

সমুদ্র কল কেটে দিল।‌ রাশি ফোনের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
– “আমাকে ভালোবাসলে খুব কি ক্ষতি হয়ে যেত!”

— —- —

পরেরদিন সকালে নিজের বাড়িতে রিতাকে দেখে রাশি অনেকটা অবাক হলো। রিতা ওকে দেখা মাত্রই এসে জড়িয়ে ধরল, রাশি জিজ্ঞেস করল,
– “তুই এইখানে?”
– “তোকে দেখতে আসলাম, কেন খুশি হসনি?”
– “নাহ সেটা না, তুই হঠাৎ আসলি তাই আর কি।”

রিতা মনখারাপ করে বলল,
– “বুঝেছি থাক আর বলতে হবে না।”

রাশি রিতার গাল‌ টেনে দিয়ে বলল,
– “ওলে আর রাগ করতে হবে না, ব্রেকফাস্ট করেছিস?”
– “হুমম।”

রিতা রাশিদের বাড়িতে থেকে যায়, কেন থেকে যায় সেইটা রাশি জানে না।বাড়িতে কিছু একটার আয়োজন হচ্ছে কিন্তু কিসের সেটা বুঝতে পারে না। জিজ্ঞেস করলেও সবাই এড়িয়ে চলছে।

বিকাল বেলা,
খুশি একটা শাড়ি নিয়ে এসে রাশির হাতে দিয়ে বলল,
– “রেডি হয়ে নে।”

রাশি কপাল কুঁচকে তাকাল, এই বিকালবেলা শাড়ি পড়বে কেন?

– “কেন?”

খুশি সাধারন ভাবে উত্তর দিল,
– “আজ তোর পাকা দেখা।”

ব্যাস হয়ে গেল, এইটুকু শোনার পর রাশির মুখটা চুপসে আমসি হয়ে গেল।খুশি শাড়িটা রেখে চলে গেল, কিছুক্ষণ পর রিতা এসে দেখল রাশি চুপচাপ ঠাঁই বসে আছে। পাশে শাড়ি পড়ে আছে, রিতা বিরক্ত হয়ে বলল,
– “এখনো রেডি হোস নি? ওরা তো চলে আসলো বলে।”
– “ভালো লাগছে না।”

রিতার বিরক্তির মাত্রা বাড়ল। কিছুটা রাগ, বিরক্ত নিয়ে বলল,
– “ভালো তো আমার লাগা উচিত না, তোর তো খুশি হবার কথা।”

রাশি নির্লিপ্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
– “কেন?”

রিতা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
– “আর কেন, আমার পছন্দের মানুষের সাথে আমার বেস্টফ্রেন্ডের‌ বিয়ে হচ্ছে এর থেকে বড়ো দুঃখের, কষ্টের আর কি হতে পারে!”

রাশি নড়েচড়ে বসল, রিতার পছন্দের মানুষ মানে তো সমুদ্র। তারমানে কি?

– “তোর অপছন্দের মানুষ মানে?”

রিতা ক্ষেপে গিয়ে বলল,
– “নাটক করবি না, তুই জানিস না আমার পছন্দের মানুষ কে?”
– “সমুদ্র!”
– “হু।”

রাশির ফ্যাকাশে মুখটাই হাসি ফুটে উঠল। এতক্ষন ভুলভাল চিন্তা করে মুড অফ করে ছিল, রাশি শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল আর রিতা! সে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইল হুট করে রাশির কি হলো কিছুই বুঝল না।

সমুদ্রের বাবা-মা, অয়ন ও সমুদ্র চারজন ওই বাড়ি থেকে এসেছে। আজকে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে যাবেন।‌সমুদ্রের মা রাশির হাতে একজোড়া বালা পরিয়ে দিলেন। তারপর সমুদ্র ও রাশি আলাদা কথা বলতে যায়।

ছাদে,
রিতা সমুদ্রের সামনে দাঁড়াল, সেইটা দেখে রাশি ও অয়ন দুজনেই শুকনো ঢোক গিলল। এই বুঝি দুজনের মধ্যে ঝামেলা শুরু হলো।

রিতা সমুদ্রের উদ্দেশ্যে বলল,
– “পুরানো সবকিছুর জন্য আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি। তবে আমার বান্ধবীকে যদি কষ্ট দেন তাহলে সোজা জেলে ঢুকিয়ে দেব।”

সমুদ্র রিতার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রাশির হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসল, রিতা -অয়ন বোঝার চেষ্টা করছে কি হলো। রাশিও কৌতুহল চোখে তাকাল,
সমুদ্র রাশির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “কষ্ট দেবার জন্য তো নিয়ে যাচ্ছি না, আগলে রাখার জন্য নিয়ে যাচ্ছি আর আজীবন আগলে রাখব।”

রাশির মুখটা লজ্জায় লাল বর্ন ধারন করল, অয়ন হো হো করে উঠল। রিতা মুখ বেঁকিয়ে বলল,
– “তাই যেন হয়, নাহলে খবর আছে।”

সমুদ্র হাসল, রিতা একটু পাগলাটে কিন্তু মেয়েটা বান্ধবীকে বড্ড ভালোবাসে।

অয়ন ও রিতা ওদেরকে একা ছেড়ে চলে গেল। সমুদ্র রাশির দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
– “কি ব্যাপার এত লাল নীল হয়ে যাচ্ছো কেন?”

রাশি লজ্জায় আরো নুইয়ে পড়ল, সমুদ্র ওর‌ মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
– “ওরে আমার লজ্জাবতী লতা রে।”

রাশির ইচ্ছা করছে মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে, এই ছেলে আর এইরকম কথা বলছে কেন!!

সমুদ্র হাসতে হাসতে বলল,
– “থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো, তারপর…

বলেই আবারো হেঁসে উঠল।‌রাশি লজ্জা পেয়ে ছাদ থেকে দৌড়ে চলে গেল।

রাশি-সমুদ্রের বিয়ের তারিখ অয়ন-রিতার বিয়ের ১৫দিন পর ঠিক হয়েছে।‌ যেহেতু ওদের বিয়ে একদম কাছাকাছি তাই সমস্ত কেনাকাটা একসাথেই করা হচ্ছে, ফুলদমে বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে।রিতা আর রাশি দুজনেই খুব খুশি।

রিতা তো রাশিকে পাগল করে ছাড়ছে, এটা কিনবে ওটা কিনবে করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। রাশি শুধু হাসছে।

— —- —

সমুদ্র অফিস থেকে ফিরে রাশিকে কল করল,
– “কি করছ?”
– “এই তো বসে আছি। আপনি?”
– “আমিও। তা এখনো আপনি বলবে?”
– “তাহলে কি বলব?”
– “তুমি, বলো।”
– “লজ্জা লাগে।”

সমুদ্র কিছুটা মজা করে বলল,
– “সোহানকে তো ভালোই তুমি করে ডাকছিলে।”

কথার‌ মাঝে আচমকা সোহানের প্রসঙ্গ আসাতে রাশি অবাক হলো, হঠাৎ করে সমূদ্র ওর কথা বলল কেন?

– “আমাকে আজ থেকে তুমি করে বলবে,বলো।”
– “হুমম। আচ্ছা কাল কখন শপিং করতে যাবেন?”
– “আবার আপনি?”
– “সরি যাবে।”

সমুদ্র হাসল, তারপর শপিং করতে যাবার সময় বলে দিল। কাল সবাই মিলে বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবে।

– “রাশি।”
– “হুমম।”
– “তুমি কি জানো, তুমি কতটা সুন্দর!”
– “আমি সুন্দর?”
– “হুমম, আমার মায়ের পরে তুমিই আমার জীবনের প্রথম নারী। তোমার সবকিছুতে আমি মুগ্ধ হয়েছি, তুমি আশেপাশে আসলে ভালো লাগায় ছেয়ে যেত। মুগ্ধতা, ভালো লাগা কখন যে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। আজ আমার বলতে কোনো বাঁধা নেই, আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি ভালোবাসি।”

রাশির চোখে পানি ছলছল করছে, সমুদ্র কথাগুলো ফোনের ওপাশ থেকে বললেও কথাগুলো সোজা বুকে গিয়ে লাগল। চুপচাপ ছেলেটা এইভাবে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করবে সেটা রাশির কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল, কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

– “রাশি কিছু বলবে না।”
– “উত্তর’টা বাকি থাকুক, বিয়ের রাতে দিয়ে দেব।”

সমুদ্র মুচকি হাসল, অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় তার প্রমান আগেও পেয়েছে আবারও একবার পাবে।

– “অপেক্ষায় থাকলাম।”

রাশি মৃদু হাসল। এইরকম একটা মানুষকেই তো নিজের জীবনে চেয়েছিল, সবশেষে পেয়েছে। এইবার শুধু একান্ত নিজের করে পাওয়া বাকি।

#চলবে…

#বিবাহ_অভিযান (১৮)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

রাশি শপিং মলের বাইরে অপেক্ষা করছে, আর রাগে বিরবির করছে। একটা কেউই ঠিকমতো আসতে পারে নাহ, সবকটা লেটলতিফ।

রিতা রাশির পিঠে বারি দিয়ে বলল,
– “কিরে কি বিরবির করছিস?”

রাশি রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,
– এতক্ষনে আসার সময় হলো? আমি কতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছি।”

রিতা জিভ কাটল, তারপর বলল,
– “কি করব বল, রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল।”

রাশি রাগে কটমট করে তাকাল। রিতা দাঁত বের করে হাসল।

কিছুক্ষণ পর অয়ন আসলো কিন্তু সমুদ্রের দেখা তখনও পাওয়া গেল না।রাশি বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অয়ন সমুদ্রকে ফোন করছে আর রিতা রাশির কাছে গিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,
– “রাশি তুই তো‌ সবকিছু টাইমে করতে পছন্দ করিস, তুই ওই লেটলতিফ’কে বিয়ে করবি!”

রাশি একবার অয়নের দিকে তাকাল, তারপর ফিসফিস করে বলল,
– “অয়ন’দার সাথেও তো তোর অনেক মিল আমি কি সেইটা নিয়ে একবারও কথা বলেছি?”

রিতা আর বলার মতো কিছু পেল না। এই মেয়েকে কিছু বলতে গেলে ঘুরিয়ে কথা শুনিয়ে দেবে, তাই চুপ থাকাই ভালো।

অবশেষে, সমুদ্র আসলো তবে একা না। সাথে একজন মেয়ে, রাশি কপাল কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করছে মেয়েটা কে।

অয়ন প্রশ্নটা করেই ফেলল,
– “কে উনি?”
– “ওহ মিষ্টি। আর মিষ্টি ওইটা অয়ন, রিতা অয়নের উডবি আর ওইটা রাশি।”

মিষ্টি সবার সাথে পরিচয় হলো। ঠিক তখনি সেইখানে সোহানের আগমন, রাশি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
– “তুমি এইখানে?”

সোহান মৃদু হেসে বলল,
– “সমুদ্র’দা আসতে বলল।”

রাশি অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকে তাকাল।‌ওর আর বুঝতে অসুবিধা হলো না, সমুদ্র স্বাভাবিক হবার পেছনে আসল কারন কি।‌সমুদ্র মুচকি হেসে বলল,
– “মিষ্টির কিন্তু আর একটা পরিচয় আছে। ওহ সোহানের ওয়াইফ, ওদের কোর্ট ম্যারেজ হয়ে গেছে।”

রাশির মনে পড়ল সেইদিন সোহান ওর ওয়াইফের নাম বলে ছিল, আর সব ভুলতে বসেছে।

সবাই চলে আসাতে কেনাকাটা শুরু হলো, রিতার শাড়ি অয়ন পছন্দ করে দিচ্ছে কিন্তু রিতার একটাও মনমতো হচ্ছে না। রাশি শাড়ি ঘেঁটে দেখছে কিন্তু মনমতো পাচ্ছে না, সমুদ্র সেইটা বুঝতে পেরে একটা শাড়ি পছন্দ করে দিল। রাশি মৃদু হাসল, মানুষটার সবদিকে খেয়াল আছে।

– “কেমন আছো সোহান?”
– “হুমম ভালো, তুমি।”
– “হুমম ভালো।”

সোহান রাশির দিকে তাকিয়ে বলল,
– “জানি আমাকে সমুদ্র’দার সাথে দেখে অনেকটা অবাক হয়েছে তাই না।”
– “তা একটু তো হয়েছি।”
– “সেইদিন তুমি চলে যাবার পর সমুদ্র’দা আমার কাছে আসে আর সবকিছু জানতে চায়। আর জানো সমুদ্র’দা তোমাদের বিয়ের সব দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে। তুমি খুব লাকি, ওইরকম একটা মানুষকে পেয়েছ।”

রাশি পেছন ফিরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। একটা ভুল সিদ্ধান্ত জীবনকে এলোমেলো করে দেয় আর একটা সঠিক সিদ্ধান্ত এলোমেলো জীবনকে গুছিয়ে তোলে।

— —- —-

আজ রিতা ও অয়নের বিয়ে। রাশি কোমড়ে শাড়ি গুঁজে দৌড়-দৌড়ি করে কাজ করে চলেছে, বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা কাজের কি শেষ আছে।

রাশিকে কাজ করতে দেখে রিতার মা ধমক দিয়ে বলল,
– “এই রাশি তোকে কাজ করতে কে বলেছে? যা রিতার কাছে যা।”
– “তোমাকে একটু হেল্প করি।”
– “না যা।”

রিতার মায়ের কথা শুনে রাশি রিতার কাছে চলে গেল। বউ সাজে রিতাকে খুব সুন্দর লাগছে।ওকে দেখামাত্রই রিতা জিজ্ঞেস করল,
– “এই রাশি আমাকে কেমন লাগছে?”

রাশি মজা করে বলল,
– “সো বিউটিফুল, সো সুন্দর, জাস্ট লাইক এ ওয়াও।”

রিতা হেসে ফেলল। রাশি রিতাকে জড়িয়ে ধরল, ঠিক তখনি ক্যামেরা ম্যান চলে আসে। রাশি -রিতার সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করে নেয়।

– “বর এসেছে, বর এসেছে…

আওয়াজ শুনে রাশি রিতাকে ছেড়ে দৌড় মারল, গেট ধরতে হবে না।

**

রাশি গেট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রাশি সমুদ্র দুজন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।

রাশি ওদের উদ্দেশ্যে বলল,
– “১০হাজার দিয়ে দাও গেট ছেড়ে দেব।”

রাশির দাবি শুনে সমুদ্র চোখ বড়ো বড়ো কথে তাকিয়ে বলল,
– “১০!! এইটা তো দিনে দুপুরে ডাকাতি।”
– “আমাদের দাবি মানতে হবে, নাহলে অয়ন’দা বাড়ি ফিরে যান।”

অয়ন করুন চোখে সমুদ্রের দিকে তাকাল। সমুদ্র রাশির দিকে কিছুটা আগিয়ে ফিসফিস করে বলল,
– “এই শোনো না, কিছু কম করো না। নাহলে আমাদের বিয়েতেও অনেক টাকা খরচ করতে হবে একটু বোঝো।”

রাশি ভেংচি কেটে বলল,
– “হলে হোক, তবে এখন আমাদের দাবি মানতে হবে।”

সমুদ্র হতাশ হয়ে রাশির হাতে ১০হাজার টাকা তুলে দিল।রাশি সমুদ্রকে চোখ মেরে গেট ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।

— —-

অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে অয়ন-রিতার বিয়ে সম্পন্ন হয়। রিতা আনন্দে কেঁদে ফেলে, ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাবার সুখ অনেকটা বেশি।অয়নের মুখে প্রাপ্তির হাসি।

বিদায় পর্ব সেরে রিতা অয়নের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাশি রিতার সঙ্গে যাচ্ছে। রাশি-রিতা পেছনের সিটে বসে আছে আর অয়ন ড্রাইভের কাছে বসেছে। সমুদ্র আলাদা যাচ্ছে বাইক নিয়ে।

রিতা কাঁদছে দেখে অয়ন রাশির দিকে করুন চোখে তাকাল, সেইটা দেখে রাশি রিতার উদ্দেশ্যে বলল,
– “বিয়ে করবি বলে লাফাচ্ছিলিস আর এখন কাঁদছিস? লজ্জা করে না!”

রিতা কান্না থামিয়ে রাগে কটমট করে রাশির দিকে তাকাল। রাশি হেসে দিয়ে বলল,
– “এই তো‌ রিতার কান্না থেমেছে।”

অয়নও হেসে দিল, ওরা দুজন পারেও বটে।‌ওদের দুজনের হাসিতে পানি ঢেলে দিয়ে রিতা আবারো কেঁদে উঠল। রাশি-অয়ন দুজনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল, এখুনি তো‌ চুপ করে গিয়েছিল আবার কি হলো! অয়ন কাঁদো কাঁদো মুখ করে রাশির দিকে তাকাল, রাশি ঠোঁট উল্টাল, এখন রিতাকে কিভাবে চুপ করাবে!

কান্নাকাটি করতে করতে অয়নের বাড়িতে পৌঁছে যায়। রাশি রিতার কান্না দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, রিতার ফ্যাচ ফ্যাচ শুনতে শুনতে মাথা ধরে গেছে।

—- —

রিতা’কে বাসর ঘরে বসিয়ে রাশি নিজের জন্য ঠিক করা ঘরে গিয়ে বসল। মাথাটা বড্ড ব্যথা করছে। ফোনটা বেজে উঠল,হাতে নিয়ে দেখল সমুদ্র কল করেছে।

– “হ্যালো বলো।”
– “কি করছো।”
– “বসে আছি, গলা এইরকম লাগছে কেন?”

রাশি বিরক্ত হয়ে বলল,
– “রিতার ফ্যাচ ফ্যাচ শুনতে শুনতে মাথা যন্ত্রনা করছে।”
– “ছাদে আসতে পারবে?”
– “এখন!”
– “হুমম আসো।”
– “আচ্ছা যাচ্ছি।”

রাশি ফোনটা রেখে ছাদের দিকে পা বাড়াল। ছাদে এসে দেখল সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। রাশি সমুদ্রের পাশে গিয়ে দাঁড়াল।

– “কি বলবে বলো।”
– “ভালোবাসি।”

রাশি রেগে কটমট করে তাকাল, তারপর বলল,
– “এইটা বলার জন্য আমাকে ডাকলে?”

সমুদ্র থতমত খেয়ে গেল, এই মেয়ে এইরকম বলে কেন?

– “কিসব বলছো তুমি?”
– “ঠিক বলছি, তুমি ভালোবাসি কথাটা বলবে বলে আমাকে ছাদে ডাকলে? আমি বললাম আমার মাথা যন্ত্রনা করছে তারপরেও ডাকলে কেন?”

সমুদ্র বুঝল রাশির মাথা যন্ত্রনার জন্য মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে, তাই কোনো কথা না বলে রাশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।‌ রাশি শান্ত হয়ে গেল, সমুদ্র রাশির‌ মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
– “এই যে রাগিনী শান্ত হন, উত্তেজিত হলে আরো শরীর খারাপ করবে তো। একটু শান্ত হও দেখবে মাথা যন্ত্রনা কমে যাবে।”

রাশি ওইভাবেই কিছুক্ষণ থাকল তারপর বলল,
– “এইভাবেই আগলে রেখো। আমার রাগ-জেদ গুলোকে সামলে নিও।”

সমুদ্র রাশির মাথায় চুমু দিয়ে বলল,
– “আজীবন আগলে রাখব কথা দিলাম।”

#চলবে….