বিয়ে পর্ব-২৬

0
651

#বিয়ে
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-২৬

অন্য সময় রিয়েক্ট করে ফেলা অদ্রির কিছুতেই আজ ধ্রুব’র চোখে চোখ রাখার সাহস হয় না। সে তো ধ্রুব’র কাছে ধরা পড়তে চায় নি এতো শ্রীঘ্রই! অদ্রির হৃদস্পন্দনও এবার তার সাথে শ’ত্রুতা শুরু করে দ্রুতগতিতে ছুটতে শুরু করে। বাকি সময়টা অন্য কারো সাথে কথা বলতে পারে না। ধ্রুব’র সামনে যেতেও খানিকটা অস্বস্তি হয় ওর।

পরদিন। এই বৃষ্টি, এই রোদ। কখন যে ওয়েদারের মন ভালো হবে তা কেবল সে-ই জানে। কিচিরমিচির করা পাখির দল জানান দিচ্ছে বেলা হয়ে এসেছে সেই কখন। বাড়ির সকলেই ব্যস্ত নিজেদের কাজে, গোছগাছে। নাজমুল সাহেব ছেলে রাদিফকে নিয়ে নিজেদের গ্রামে রওয়ানা হলেন। রুখসাত জাহান ছেলের কান্ডে মুখভার করে রইলেন সর্বক্ষণ। এভাবে চললে তার দেশ থেকে পুত্রবধূ নেওয়ার আশা মাটি হয়ে যাবে। তাই ফ্লোরা মাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। এদিকে মেঝো শ্যালকের মেয়ে আদিবার বিয়ে বলে কথা, আশফাক সাহেবের খুব ইচ্ছে ছিলো সকলের সাথে যাওয়ার। কিন্তু অফিসের কাজের চাপে তিনি যেতে পারছেন না। একেবারে বিয়ের দিন যাবেন। সেজন্য শায়লা রাতের খাবারটা রান্না করে দিয়ে যাচ্ছেন। কেননা বাড়ির সবাই বেড়াতে যাবে শুনে জরিনাও সেই সুযোগে শায়লার থেকে ছুটি নিয়ে নিজের গ্রামে বেড়াতে চলে গেছে। অদ্রি হাতে-হাত শায়লাকে সাহায্য করে দিচ্ছে। ফাঁকা বাড়িতে আশফাক সাহেবের খাবার-দাবারের বেশ অসুবিধা হবে এই ভেবে তিনি ভীষণ চিন্তিত!

এদিকে রাত থেকেই ধ্রুব’র হালকা জ্বর। আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়টাতে প্রায় সবারই কমবেশি জ্বর, সর্দি-কাশি হয়। তবে ধ্রুব নিজের অসুস্থতার কথা কাউকে জানালো না। কারণ শায়লা অহেতুক ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তাছাড়া গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দে ভাটা পড়বে তার। স্বামী-সন্তানের অসুস্থতা নিয়ে শায়লা আবার একটু সেনসেটিভ। “ক” থেকে “খ” হওয়ার আগেই নিজের বিপি লো করে বসে থাকেন। তাই মা’কে অকারণে চিন্তিত করতে চায় না ধ্রুব। সেজন্য প্যারাসিটামল খেয়ে নিয়ে নিচে নামে সে। তবে খেতে বসে ছেলের চোখমুখ রক্তিম হয়ে আছে দেখে শায়লা বারবার উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন ওর কি হয়েছে। কিন্তু ধ্রুব সন্তপর্ণে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে শায়লা নিজের হাত এগিয়ে ওর কপাল চেক করতে গেলে ধ্রুব দ্রুত সরে যায়।
হাসিহাসি মুখে জানায় কাল রাতে ভালো ঘুম না হওয়ায়ই ওকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। শায়লা তবুও বিশ্বাস করতে পারলেন না। বারবার ওকে সন্দেহী চোখে দেখতে থাকে। বিকেলে রওয়ানা হবে ওরা এরমধ্যে যদি অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটে যায় তাহলে যাওয়া ক্যান্সেল। সব প্ল্যান ঠিকঠাক করে এখন যদি না যাওয়া হয় তাহলে ব্যাপারটা কেমন দেখায়! সেজন্য ধ্রুব বহুকষ্টে মা’কে আশ্বস্ত করলো যে ওর তেমন কিছুই হয়নি। মা-ছেলের কান্ড দেখে রুখসাত জাহান, ফ্লোরা মজা নিচ্ছিলো বসে। এদিকে অদ্রি বিমোহিত হয়ে পড়ছিলো ভেতর ভেতর। মায়ের ভালোবাসা থেকে এত দ্রুত বঞ্চিত হবে কখনো ভাবে নি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়ের সাথে নিজের প্রিয় মুহূর্তগুলো ভাবতে থাকে অদ্রি। বহুদিন তো ওর শরীর খারাপ হয় না, হলে কে আগলে রাখবে ওকে? অদ্রি মনে মনে স্বস্তি ফেলে, এখন অবশ্য শায়লা আছে! সব মনখারাপ ঝেড়ে ফেললেও আবার মনের ভেতর সন্দেহ দানা বাঁধে ধ্রুবর আচরণ দেখে। চোখমুখ অন্যরকম, কিছু একটা হয়েছে ধ্রুব’র অদ্রি তা আন্দাজ করতে পারে। ঘরে এসে ওকে দেখতে পায় না। পরে ব্যলকনিতে গিয়ে দেখে রকিং চেয়ারে বসে রয়েছে ধ্রুব। রোদ্দুর এসে পড়ছে ওর মুখে। অদ্রি ধীরপায়ে ওর কাছে এগিয়ে যায়। দোটানা নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— আপনার কি শরীর খারাপ?
ধ্রুব সচকিত চোখে তাকায়। বলে,
— না।
অদ্রি ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলে,
— কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে আপনি সুস্থবোধ
করছেন না। কিছু হলে বলুন আমাকে…
ধ্রুব নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,
— কিছু হয়নি। শুধু শুধু চিন্তা করছো…
অদ্রি ভ্রু কুঁচকে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থাকে। এরপর আচমকা ধ্রুব’র কপালে হাত দেয়। খুব বেশি না তবে হালকা গরম অনুভূত হয়। ও রাগী গলায় বলে ওঠে,
— আপনার তো কপাল গরম হয়ে আছে, মিথ্যে বললেন কেন?
ধ্রুব প্রস্তুত ছিলো না। ভাবে নি অদ্রি বুঝে যাবে। তবে অদ্রি জানলে সেটা মা’র কান অবধি পৌঁছে যাবে ভেবে সে এবার গাম্ভীর্যতা নিয়ে কড়া সুরেই বলল,
— শোনো, আমার কিছুই হয়নি। নিজের চিন্তা করো,
ফুঁ দিলে তো হাওয়ায় ওড়ে যাবে। বাট আ’ম স্ট্রং পার্সন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ এক্টিভ। আর কপাল গরম হওয়ার যে ব্যাপারটা, অনেকক্ষণ রোদে বসে আছি সেজন্য গরম লাগছে। গোয়েন্দাগিরি না করে জিনিসপত্র দেখেশুনে তৈরি হয়ে নাও।
এভাবে কটাক্ষ করায় অদ্রি রেগে গেলো। চিন্তা হচ্ছিলো বলেই তো সে ধ্রুবকে জিজ্ঞাসা করেছে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না জিজ্ঞেস করাটাই বেটার ছিলো।
রাগ নিয়ে বলল,
— নিজেকে খুব শক্তিশালী মনে করেন আপনি,
তাইনা? হুহ…
— ঠিক তাই। তুমিও কম নও, নিজেকে নিয়ে খুব বেশি অহংকার তোমার। আচ্ছা হঠাৎ আমার ভালোমন্দের খোঁজ নিচ্ছো যে? ব্যাপার কী….
ধ্রুব কুটিল চোখে হাসলো। অদ্রির রাগে গা জ্বলে গেলো। ইচ্ছে করলো ওকে আচ্ছামত কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু ওর সাথে অযথা তর্কে জড়ানোর ইচ্ছে হলো না। সেজন্য ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল,
— ফর্মালিটি করেছিলাম শুধুমাত্র। আফটার অল, আপনার ঘরে ভাড়া থাকছি…
খোঁচা শুনে ধ্রুব’র কপালে ভাঁজ পড়লো। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। ও চেয়ার থেকে ওঠে পড়লো। সোজা অদ্রির মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। ধ্রুব হিংস্রাত্মক শীতল কন্ঠে বলল,
— ঘর ভাড়া মাই ফুট। আমি চেয়েছি তোমার কাছে? যে খোঁচা দিচ্ছো? নেক্সট মান্থ থেকে কিভাবে ভাড়া দাও দেখবো আমি। আর তোমার টাকা কে ছোঁয়? তুমি ছাড়া অন্য কেউ না…
অদ্রি ওর শেষকথার মানে বুঝলো না। তবে রাগান্বিত
ধ্রুবকে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেলো না সে। তার আগেই ধ্রুব হনহন করে চলে গেলো। তবে ওকে রাগতে দেখে অদ্রি বেশ ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেলো।

পূর্ব আকাশ রক্তিম হয়ে আছে। হঠাৎ তাকালে মনে হবে আগুন ধরে আছে। ঝলমল করছে প্রকৃতি। কালচে পিচঢালা রাস্তায় ৬০ মাইল গতিতে চলছে গাড়িটি। পৌঁছাতে আরও কয়েক ঘন্টা। ধ্রুব ছাড়া বাকি সবাই বেশ কতক্ষণ গল্প-মজা করলো। এভাবেই একসময় রুখসাত জাহানের চোখে নেমে এলো ঘুম, তার দেখাদেখি শায়লার চোখও যে লেগে গেলো টের পেলো না কেউ। তবে তাদের সাথ বসা ফ্লোরা নেটফ্লিক্সে সিরিজ দেখায় মগ্ন। গাড়ির মিউজিক সিস্টেমে মৃদু সুরে বারবার একটি লাইন বাজছে, “Can we always be this close forever and ever? and ah, take me out, and take me home, forever and ever.
Oh, Darling, you’re my, my, my, my; Lover.”

ড্রাইভিং সিটে বসে একমনে ড্রাইভ করছে ধ্রুব। পাশে বসা তার বুকব্যথার অন্যতম কারণ, অদ্রি! সেই কখন থেকে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে। দৃষ্টি বহুদূরের মাঠঘাট, বিলে ভেসে ওঠা শাপলার দিকে। কাঁধ অবধি লম্বা চুলগুলো বাতাসে তীব্রভাবে ওড়াওড়ি করছে। কমলা রোদ্দুর কাচের জানালা ভেদ করে ওর মুখে পড়ছে। ধ্রুব আড়চোখে লুকিং গ্লাসে ওকে দেখলো। ওর এই প্রথম মনে হলো অদ্রির চুলগুলো লম্বা হলে খুব মানাতো ওকে। তিন-ফুট দূর থেকেই ধ্রুব ওর লম্বা চুলের সুঘ্রাণে মাতাল হয়ে যেতো। কিন্তু চুল লম্বা না হওয়ায় দূর থেকে ঠিকমতো সেই ঘ্রাণে মাতাল হতে ব্যর্থ হচ্ছে সে। মেয়েটা ওকে কিছুতেই বোঝে না, কিন্তু বেশিক্ষণ ওর ওপর রেগে থাকতেও পারে না ও! এইযে, ধ্রুব তো মনে মনে এক্সপেক্ট করছে অদ্রি ওর দিকে তাকাক, দেখুক ওকে কতো হ্যান্ডসাম লাগছে। মুগ্ধ হোক ওকে দেখে, কিন্তু না, মেয়েটা সে-ই কখন থেকে বাইরে দৃষ্টি মেলে বসে আছে। এদিকে দূরের প্রকৃতি দেখতে ভীষণ উপভোগ করছিলো অদ্রি। তবে ওর নিজের প্রতি একটা কারণে শুধু রাগ হচ্ছে। ভালোবাসা, অনুভূতি থেকে এতোটা দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করা স্বত্ত্বেও কেন কাল ধ্রুব’র ব্যবহারে মিইয়ে গিয়েছিলো? কেন হার মানছিলো সেই সময়টার কাছে? এসব হাজারো ভাবনা নিয়ে অদ্রি যখন নড়েচড়ে বসলো, তখনই আচমকা লুকিং গ্লাসে চোখ পড়তেই দেখলো ধ্রুব চোয়াল শক্ত করে ওর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে বারবার। অদ্রি দেখে ফেলতেই ধ্রুব এমন একটা ভাব করলো যেন সে কিছুই করেনি। অদ্রি ভ্রু কুঁচকালো। খানিকক্ষণ চুপ থেকে এরপর বলল,
— আপনি ড্রাইভ না করে এদিকওদিক লক্ষ্য করছেন কেন?
ধ্রুব না শোনার ভান করে বলল,
— আমাকে বলছো?
অদ্রি তীক্ষ্ণ কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
— ড্রাইভ করছে কে? ড্রাইভারটা কে?
ধ্রুব রোবটের ন্যায় উত্তর দিলো,
— আমি।
— তাহলে আপনি বারবার লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছেন কেন?
ধ্রুব এবার সরু দৃষ্টিতে তাকালো,
— কোথায়?
অদ্রি হতাশ গলায় বলল,
— ভান করবেন না একদম। আপনার সাথে বসাটাই আমার ভুল হয়েছিলো। আমি তো জানতাম আপনার স্বভাব…
ধ্রুব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
— এতো হাইপার হওয়ার তো কিছু হয়নি। তুমি কি ভাবছো আমি তোমাকে দেখছি? নো, নেভার।
অদ্রি এবার সন্দেহ নিয়ে বলল,
— কখন যে এক্সিডেন্ট ঘটান কে জানে! এই আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তো?
এমনিতেই শরীরটাতে জ্বর। গ্রামে বেড়াতে যাচ্ছে বলে মন-মেজাজও ভীষণ খারাপ। তার ওপর অদ্রির কঠোর ব্যবহার ধ্রুবকে ভীষণ রাগিয়ে দেয়। এবার জোরালো কন্ঠে বলে ওঠে,
— ড্রাইভ শেখানো টিচাররা পর্যন্ত আমাকে প্রশংসা করেছে, আমার ড্রাইভিংয়ে মুগ্ধ হয়েছে। আর তুমি আমার লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলছো? হাউ ডেয়ার ইউ?
অদ্রি বিপরীতে কিছু বলতে যাবে তার আগেই এবার ফ্লোরার কাঁদোকাঁদো স্বর শোনা যায় পেছন থেকে। ধ্রুব আর অদ্রির কথোপকথন দেখে বলে ওঠে,
— তোমরা এতো ঝগড়া করছো কেন? আমি একটা হার্ট ব্রেকিং মোমেন্ট দেখছি, তোমরা প্লিজ ঝগড়া বন্ধ করো। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে…

ফ্লোরার কথাগুলো বেশ কিউট লাগছে। অদ্রি চুপ করে গেলো। হার্ট ব্রেকিং মোমেন্ট উপভোগ করতে দিলো ফ্লোরাকে। আর অদ্রিকে কিছু বলতে না দেখে ধ্রুবও সবকিছু মনে চেপে রেখেই ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দেয়। ওর কাছে আপাতত এই কাজটাই ইম্পোর্টেন্ট। কারণ মানতে না চাইলেও সত্যি যে, একটু অমনোযোগী হলেই যেকোনো সময় এক্সিডেন্ট হতে পারে। অদ্রির ওপর মুগ্ধ হয়ে বা ক্ষেপে গিয়ে তো আর নিজের ড্রাইভিং
স্কিল নিয়ে কারো কাছে প্রশ্নবিদ্ধ বা কটাক্ষের শিকার হতে পারে না। হুহ!

_____________________________

গ্রামে পৌঁছাতে মাগরিবের আযান পড়ে যায়। সচরাচর গ্রামের সরু রাস্তায় গাড়ি দেখা যায় না বলেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিছু লোক দেখার চেষ্টা করলো কে বা কারা এসেছে? ছোট ছোট বাচ্চারা গাড়ির পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলো। অবশেষে খান বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো ক্লান্ত ধ্রুব। গেইটের সামনে বাড়ির সব সদস্যরা
অপেক্ষা করছে ওদের জন্য। সকলেই গাড়ি থেকে
নামে। হৈ-হুল্লোড়ে পরিবেশ মাতোয়ারা। নতুন বউকে দেখার জন্য সবাই অস্থির হয়ে আছে। সকলেই অদ্রির প্রশংসা করছে, যেসব শুনে অদ্রি খানিকটা লজ্জায় পড়ে যায়। শায়লা অদ্রিকে নিয়ে বাড়ির উঠোনে পা রাখতে গেলেই তার বড়ভাবি আটকে দেয়। বরণডালা সাজিয়ে নিয়ে আসে, এরপর ধ্রুবকেও ডেকে এনে অদ্রির পাশে দাঁড় করিয়ে দু’জনকে বরণ করে নেয়। এতো এতো মানুষের কোলাহল ধ্রুব’র মনে বিরক্তি সৃষ্টি করে, তার ওপর আবার এসব নিয়মনীতি। যেগুলো ও সহ্যই করতে পারে না৷ ধ্রুব রাগ নিয়ে মায়ের দিকে তাকায়। শায়লা ইশারায় ওকে চুপ থাকতে বলে। এদিকে বাড়িভর্তি এত মানুষ দেখে অদ্রি অবাক হয়ে যায়। ও ভীষণ অস্বস্তি অনুভব করে। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনদের ভিড় থেকে মহিলারা বেশ গল্পগুজব শুরু করে নতুন বউকে নিয়ে। এরমধ্যে কয়েকজন
ঠাট্টা করে বলেই ফেলে,
— খুশির খবরটা কবে শোনাইবা গো নতুন বউ?
তোমাগো নানি তো তার নাতির আলোকিত ঘর দেখতে চায়তেসে।
অদ্রি অস্বস্তিতে পড়ে যায়৷ বোকার মতোন চেয়ে থাকে। কথার মানে বুঝতে পারে না। ধ্রুব এসব ঠাট্টা শুনে রেগে যায়। মেয়েটা বাড়িতে পা রাখার আগেই ট্রিপিক্যাল ফালতু কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছে। ও রাগী গলায় বলে ওঠে,
— আপনাদের ঘর আলোকিত হয়েছে তো? তাতেই চলবে। আমার বউ কখন আমার ঘর আলোকিত
করবে সেসব আমিই বুঝবো। আপনাদের ভাবতে হবে না।

শায়লা ছেলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ, লাগামহীন কথাবার্তা শুনে ধমকে ছেলেকে থামিয়ে দেয়। আর সব মহিলারা ধ্রুব’র সমালোচনা শুরু করে। বিদেশে বড় হয়ে এমন বেয়াদব হয়েছে বলতে থাকে ধ্রুবকে।

চলবে….