বিরোধীদলীয় প্রেম পর্ব-০৩

0
132

বিরোধীদলীয় প্রেম
পর্ব – ৩
আফরোজা আক্তার
[দয়া করে কেউ কপি করবেন না]

মেহমানদের মধ্যে একজন মহিলা মাহার হাত ধরে বসে আছেন। তিনি ছেলের মা। তার মেয়েকে খুব পছন্দ হয়েছে। ছেলের বাবা সহ উপস্থিত সবার ব্যবহার অত্যন্ত ভালো লেগেছে মোশাররফ সাহেবের কাছে। মাহার কাছেও মন্দ লাগেনি। ঘন্টা খানেক পর সবাই চলে গেলে মাহার পরিবারের সবাই আলোচনায় বসলেন। ছেলের বাবা জানিয়ে গেছেন যে তাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে। এবং তাদের দাওয়াত করে গেছে। সব কিছু মিলে গেলে দুই একদিনের মধ্যেই বিয়ে করাতে চাইছেন তারা। মাহার মা আমিনা বললেন, ‘এত তাড়াহুড়ো করতেছে কেন উনারা? কোনো গন্ডগোল আছে নাকি আবার?’
যিনি প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন তিনি বললেন, ‘আরে না ভাবী। আসলে উনাদের কথা হচ্ছে যে, মেয়ে যখন পছন্দ হয়েছে, আপনাদের ছেলে দেখার পালা। আপনাদেরও যদি পছন্দ হয় তাহলে আর দেরি করা কেন?’
‘তারপরেও, আমাদের তো একটা প্রস্তুতি আছে। তাই না?’
‘ভাবী শর্টকাটে বিয়ে হওয়াই ভালো। সুন্নতি বিয়েতে এত জাকজমক না করাই ভালো।’
মোশাররফ সাহেব দিন ঠিক করলেন। কালই যাবেন ওই বাড়ি। দেখে আসবেন সব কিছু। অন্যদিকে মাহা অনেকটা রিল্যাক্স মুডে আছে। তার সব থেকে বেশি এটা ভেবে ভালো লাগছে তাকে পছন্দ হয়েছে পাত্রপক্ষের। বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়ে গেলেই সে বেঁচে যাবে।
আমিনা মেয়ের কাছে এসে পাত্রপক্ষের কথা জানালে। মাহা কিছু না ভেবেই বলল, ‘ভালোই তো মা। আমারও বিয়েটা করা উচিত। আমার ক্লাসের অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে। আর তাছাড়া নতুন জীবনের এক্সপিরিয়েন্স যত তাড়াতাড়ি নেওয়া যায়। বিয়েতে দুই চারশ লোক খাবিয়ে লাভ নাই মা। সেই তো বদনাম করবেই। এর চেয়ে ভালো হয়, অল্প মানুষের মাঝে শুভ কাজ শেষ করা।’
আমিনা বুঝতে পারছে না তার মেয়ে এত জোর দিচ্ছে কেন বিয়েতে। চিন্তার রেখা আমিনার কপালে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
মোশাররফ সাহেব সহ মোট সাতজন ছেলে এবং ছেলের বাড়িঘর দেখতে এসেছেন। এখানে এসে সাতজনেরই চোখ চড়কগাছ। এত সুন্দর পরিবেশ দেখে তারা সবাই অনেক খুশি হয়েছেন। তাদের সবেতেই মুগ্ধ হয়েছেন সকলে। মোশাররফ সাহেব ছেলে দেখে, ছেলের সঙ্গে কথা বলে বেশি খুশি হয়েছেন। উনার ছেলেকে অত্যন্ত পছন্দ হয়েছে। মনে মনে এমন একটা ছেলেই খুঁজেছেন তিনি মেয়ের জন্য। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। মোশাররফ সাহেব সেখানেই ছেলের বাবাকে কথা দিয়ে এসেছেন। তিন দিন পরেই শুভ কাজ শেষ করবে। ছেলের বাবা অবশ্য এই তিনদিনও অপেক্ষা করতে চান নি। কিন্তু আয়োজনের দোহাই দিয়ে তিন দিন পরেই বিয়ের ডেট ফিক্সড করলেন তিনি।

★★

অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ মাহা ভীষণ খুশি। সে এটা ভেবেই খুশি ছিল যে তার পথের কাটা সা’দ জীবন থেকে একেবারেই বিদায় হতে চলেছে। সে কিছুতেই সা’দের পাশে নিজের নামটা সহ্য করতে পারছিল না। গত আড়াইটা বছর তার গলায় কাটা হয়ে বিঁধে ছিল সা’দ। মাহা এই কাটা না গিলতে পেরেছে না বের করতে পেরেছে। অবশেষে সেই দিন এলো যখন সা’দের নাম থেকে সে চিরদিনের জন্য মুক্তি পাবে।
মাহার খুশি মিমি একটা কথাই ভাবছে, আর তা হলো মাহার এই খুশি যেন চিরস্থায়ী হয়। খানিকটা দূরেই সা’দকে দেখা গেল। কিছু ছেলেপেলে নিয়ে সা’দ এই পথ ধরেই যাচ্ছে। যাওয়ার সময় সা’দের নজর পড়ে মাহার উপর। মাহা তখন বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। গুটি গুটি পায়ে সা’দের সামনে এগিয়ে যায়। মাহার উজ্জ্বল চোখ জোড়া তখন সা’দের বর্বাদ দেখতে পেয়ে আনন্দিত। ঠোঁটের কোণে মুচকি হেসে মাহা বলে, ‘আগামী পরশুদিন তোমার জন্য একটা বিশেষ দিন। যা তোমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যা তুমি চাইলেও ভুলতে পারবে না সা’দ।’
সা’দ পলকহীন চোখে তার মাহাকে দেখছে। লাল ড্রেসে মাহাকে স্নিগ্ধ লাগছিল। কিন্তু আপাতত এই স্নিগ্ধতা ভুলে গিয়ে সা’দ জবাব দিল, ‘আগামী পরশু কী?’
মাহা আবারও হাসে এবং বলে, ‘তোমার কাছে খবর চলে যাবে।’
তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে সা’দ বলে, ‘তুমি কি ভেবেছ, আমাকে না জানিয়ে বিয়েটা করে নেবে। আর আমি টেরও পাব না৷ তুমি ভুলে যাচ্ছো মাহা, আমি কে? আমি সা’দ। যাই হোক, এই কয়েক বছর বেশ বিরক্ত করেছি তোমাকে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, তোমাকে আর বিরক্ত করব না। তুমি তোমার জীবনে বেশ ভালো থাকো।’
সা’দ বুক পকেট থেকে সানগ্লাসটা চোখে পড়ে নিয়ে সোজা হাঁটা শুরু করে। মিমি অবাক হয়ে ভাবছে, মাহার বিয়ের কথা শুনে সা’দ এতটা শান্ত আছে কী করে? কী করে সে এতটা চুপচাপ আছে? এই চুপ থাকাটা কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস নয় তো! মাহা হাসতে হাসতে বলল, ‘দেখলি, ও নাকি আমাকে ভালোবাসে। আমি বলেছিলাম না, ও আমাকে ভালো টালো বাসে না। ছোট বাচ্চারা যেমন চকলেট আইস্ক্রিমের জন্য বায়না ধরে। আর না পেলে জেদ করে, আমিও ঠিক ওর কাছে এক প্রকার বায়না। বায়না ধরেছে। জেদ করেছে। কিন্তু কাছে পায়নি। আর এখানেই ওর মতো ছেলের হার আর আমার জিত।’
মিমি কিছুই বুঝতে পারছিল না। তাকে সা’দের এই শান্ত আচরণ বেশি ভাবাচ্ছে।

★★

ছোট পরিসরে মাহাদের বাসায় বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। আত্মীয়স্বজন ছাড়া তেমন কাউকে জানানো হয়নি। মাহার দুই বান্ধবী মিমি আর ইতুও হাজির। দেখতে দেখতে বরপক্ষও হাজির। সমস্ত ফর্মালিটি শেষ করে ফুলের পর্দার এপার ওপার বর কনেকে সামনাসামনি বসানো হয়েছে৷ মাহা বেনারসি শাড়ির ভাজে নিজেকে আবৃত করে। সাথে অলংকার তো আছেই৷ মাহার পাশে তার বাবা-মা দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই মিমি, ইতু। বরকে দেখে মিমি যতটা না আশ্চর্য হয় তার থেকেও বেশি আশ্চর্য হয় ইতু। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কিছু বলার মতো সাহস এবং সুযোগ তারা কেউই পেল না। হুজুর বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। হুজুর যখন বরের নাম উচ্চারণ করলেন, মোঃ জাফর ইসলামের একমাত্র পুত্র মোঃ আশরাফুল ইসলাম সা’দ…….. তখনই মাহা তার চোখ উপরে তুলল। এবং ফুলের পর্দার ফাঁকে বরের চেহারার দিকে তাকাল। ওই মুহুর্তে মাহার শরীরের সমস্ত শক্তি শেষ হয়ে গেল। তার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। সব থেকে অপছন্দের মানুষটাকে বর বেশে নিজের চোখের সামনে দেখে মাহা ভীমড়ি খেয়ে যায়। চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার দেখতে শুরু করে মাহা। সে যেন ঘোরের মধ্যে চলে যায়। আর তার ঠিক কিছুক্ষণ পরেই আর কিছু মনে ছিল না মাহার। এত সুন্দর আয়োজনের মাঝে হট্টগোল পড়ে যায়। সবার কন্ঠে শুধু একটা নাম-ই ধ্বনিত হচ্ছে, মাহা, কী হয়েছে তোর? মাহা,, এই মাহা।

চলমান………………….