বিষাদময় জীবন পর্ব-০৫

0
273

#বিষাদময়_জীবন
#অধরা_ইসলাম
#পর্ব৫

–“না না আপনারা আজকে আমাকে এভাবে সাহায্য করেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ থাকবো সবসময়। তবে দিত্বীয় বার আর এখানে এসে আপনাদের বিরক্ত করতে চাই না চাচী।”

–“তুমি এখন গেলে আর আসবে না মিষ্টি আন্টি?”

–“না বাবু আসবো না আন্টি। তুমি গুড বয় হয়ে থেকো বাবা মায়ের সব কথা শুনে চলবে কেমন?”

–“আরে মায়া ওর তো মা’ই নেই মায়ের কথা শুনবে কোথা থেকে বলো?”

চাচীর কথা শুনে আমি বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মা নেই কথাটা শুনে ওর মুখটা কেমন যেনো আধারে ঢেকে গেছে! যার মা নেই সে বোঝে মায়ের কষ্টটা। আহারে এতো সুন্দর একটা মিষ্টি বাচ্চার মা নেই ভাবতেও তো কেমন খারাপ লাগছে! এক্ষুনি ওর মন ভালো করার দরকার।

–“আচ্ছা আকাশ বাবু কি তার মিষ্টি আন্টির সঙ্গে খেলবে? কার মিষ্টি আন্টি যদি এখানে আরো কিছুক্ষণ থেকে যায় তবে কি সে খুশি হবে?”

–“হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই হবো। তুমি কি খেলবে তাই বলো তো মিষ্টি আন্টি আমি আমার সব খেলনা পাতি বের করে আনছি কেমন?”

–“উঁহু একদমই না! তুমি যে খাওনি ভুলে সে কথা ভুলে গেছো আকাশ? তোমার বাবা এসে শুনলে তখন তো তোমাকে খুব করে বকবে তখন?”

–“দাদু তুমি এতো কথা কেনো বলছো বলোতো? খাবার তো আমি পরেও খেয়ে নিতে পারবো কিন্তু এই মিষ্টি আন্টিটা এখন চলে গেলে ওর সঙ্গে আমি আর খেলতে পারবো বলোতো?”

–“আরে তুমি চিন্তা করো না তো তুমি যতোক্ষণ না অব্দি খাওয়া শেষ করবে ততোক্ষণই আমি বসে আছি তুমি খাওয়া শেষ করে আসলে তারপর আমি তোমার সঙ্গে খেলবো। এবার খাবে তো তুমি?”

বাচ্চাটা সুন্দর করে হ্যাঁ বললো। এতো সুন্দর মিষ্টি একটা বাচ্চার মনে কষ্ট দিয়ে আমি কি করে চলে যেতাম? মায়ের কথা ওঠতেই ওর মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেছিলো। আমি তো জানি যার মা নেই তার তো সব থেকেও নেই! মা’ই তো সবচেয়ে বড়ো পাওয়া জীবনে। আর ওই বাড়িতেই বা গিয়ে কি হবে তেমন? সেই তো আমি একা একা থাকবো নইলে ওদের কার্যকলাপ দেখতে হবে। এর চেয়ে ভালো বরং এখানে এই বাচ্চাটার সঙ্গে একটু সময় কা*টাই ওরও ভালো লাগবে আর আমারো ভাল্লাগবে!

—“আচ্ছা চাচী ওর মা কবে থেকে নেই?”

—“কবে থেকে না বলো ওর মা’কে ও কোনোদিনও দেখতেই পায়নি! ওকে জন্ম দিতে গিয়েই তো ওর মা মা*রা গেছে বুঝলে? আমার ছেলেও আর বিয়ে করেনি। নতুন মা এলে কার ছেলের কষ্ট হবে আর যে ছেলেকে জন্ম দিতে তার সবচেয়ে কাছের মানুষ তার বউকে হারিয়েছে সে ছেলেকে কি করে কষ্ট পেতে তিবে সে? এতো ওর মৃঃত বউয়ের আ*ত্নাও তো শান্তি পাবে না। যখন ওকে দিত্বীয় বার বিয়ের কথা বলি তখুনি ও এসব বলে বুঝ দেয় আমাকে। ছেলেই যেনো তার পৃথিবী। বিকেলে অফিস থেকে ফিরে ছেলেকে নিয়ে খেলা করবে, ঘুরবে, রাতে পড়তে বসাবে, সকালে ঘুম থেকে ওঠিয়ে স্কুলের জন্য তৈরী করে বাপ বেটা দু’জনে মিলে এক গাড়িতে করে স্কুলে যাবে একজন আরেকজন অফিসে যাবে। তারপরের বাকিটুক সময় আকাশ আমার সঙ্গে থাকে ব্যস এভাবেই চলছে আমাদের জীবন বুঝলে?”

–“হ্যাঁ চাচী খুব করে বুঝি গো আমি। আমার থেকে ঢের ভালো আর কে বুঝে বলুনতো? আমারও তো মা নেই! যার মা নেই সে বুঝে কেমন হয় তার পৃথিবী। নেহাৎ আপনার ছেলে জিহাদ ভালো মানুষ সেজন্য ছেলের কষ্টটা বুঝেছে নইলে আজকাল কার দিনে নিজেরটাই যে দেখে কিছু পিতা।”

–“হ্যাঁ তা যা ঠিক বলেছো। আচ্ছা আকাশের তো খাওয়া শেষ। তুমি যখন বলেছো ওর সঙ্গে খেলবে তাহলে না খেলে যেতে পারবে না কিন্তু কারন ও খুব জেদী বাচ্চা বুঝলে তো?”

তখন আকাশের সঙ্গে একটু খানি লুকোচুরি খেলে বাড়ির পথে রওনা দিলাম। বেশি না ত্রিশ চল্লিশ মিনিটের দুরত্ব হবে। যতোক্ষণ ওই বাড়িতে ছিলাম বাচ্চাটার সঙ্গে থাকতে যেনো এক আলাদা ভালো লাগছিলো হয়তো ও বাচ্চাটাই এরকম মিষ্টি আর আদুরের যে সবারই ভাল্লাগবে! বাড়িতে গিয়েই দেখতে পেলাম কলি রান্নাঘরে গেছে! কলি সবে কলেজে উঠেছে পড়াশোনা নিয়েই মেয়েটা চা*পের মধ্যে সারাদিন। সকালে ঘুম থেকে ওঠেই কলেজে যেতো তারপরে কোচিং করতে যেতো রাতে এসে সব পড়া পড়তে হতো। দম ফেলার যেনো সুযোগ পেতো না ও। আর কলিকে দিয়েই এরা রান্না অব্দি করাচ্ছে!! ভেবেছিলাম হয়তো খাবার অর্ডার করে আনবে কিন্তু আমি না থাকাতে যে এতোকিছু করবে তা তো ঘুনাক্ষরেও টে’র পাইনি! তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরে গেলাম।৷ কলিকে সরিয়ে দিলাম সেখান থেকে। কলি মাছ রেখেছিলো নিশ্চয়ই মাছগুলো ভাজা করতে এখন। ইশশ ভাগ্যিস আমি এসে গেছিলাম নইলে ভাজা করার সময় যদি গ*রম তেল পড়তো ওর হাতে!

–“ভাবী তুমি কই ছিলে বলোতো? সারাটাদিন তোমাকে কতো খুঁজলাম পেলাম না আমি। শেষমেশ ওই নয়না আমাকে রান্না করতে বলে যদিওবা আমি নিজের আর বাবার জন্য নুডুলস আর স্যুপ বানিয়েছিলাম সেই দেখেই ওই নয়না বায়না জুড়ে বসে নানান রকমের পদ তৈরী করে তার সামনে দিতে হবে। প্রথমে রাজি হইনি কিন্তু ভাইয়ার কাছে গিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কতোগুলো বললো ওমনি ভাইয়া এসে হম্বিতম্বি শুরু করে দিছে! বাধ্য হয়ে এই রান্নাঘরে আসতে হলো আমাকে। আমি টুকটাক রান্না পারলেও ওই নয়না যে এতো বড়ো লিস্ট দিয়েছে আমাকে চিকেন ফ্রাই, বিরিয়ানি, কাবাব, মাছের কা’লিয়া এগুলো আমি পারি বানাতে? টুকটাক যা পারতাম বললাম সেগুলো বানিয়ে দিই হলো না উনার তাতে!”

আমি একে একে কলিকে খুলে বললাম সবটা আমি কই ছিলাম এতোক্ষণ। কলি ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়ে আমাকে নিয়ে। আমি ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে একা হাতে সব রান্না করতে লাগলাম। সব রান্না একা একা করতে করতে প্রায় তিন ঘন্টার মতন সময় লাগে আমার! তবুও রান্না শেষ করে ডাইনিং টেবিলে সব দিয়ে এসে আমি ফ্রেশ হতে যাবো ঠিক তখুনি বাড়ির ফোনে ফোন আসে কারো।

–“সেই প্যাকেট দেখেছো? চেক করেছো তো? ফোন বন্ধ কেনো তোমার?”

ফোনটা ধরতেই এক অচেনা পুরুষের কোনো প্যাকেটের কথা শুনতে পেলাম! কিছু না বোঝার করনে ওনাকে প্রশ্ন করতেই উনি রং নাম্বার বলে কে*টে দিলেন! কিন্তু আমার মনে রয়ে গেলো সন্দে*হের ছাপ! কালকেও এক পুরুষ এসে নয়নার হাতে কোনো এক প্যাকেট ধরিয়ে দিয় গেছে আর আজকেও কল করে সেম বলা নিশ্চয়ই ওই ব্যাক্তি নয়নাকেই ফোন করেছিলো। দুইয়ে দুইয়ে চার করে সবটা মিলিয়ে নিলাম আমি। আপাততো সুযোগের অপেক্ষায় আছি ওই প্যাকেটে আছে কি সেটা জানার জন্য! তবে প্যাকেটটা অতো বড়োও নয় ছোটোই কিন্তু কি আছে এর ভেতর? সেটা তো আমাকে জানতেই হবে।

ফ্রেশ হয়ে বাবার রুমে গেলাম খাবার নিয়ে বাবা বরাবরই চশমা চোখে দিয়ে বিছানায় হে’লান দিয়ে বই পড়ে অবসর সময়ে। এখন আপাততো ওনার সবটা সময়ই অবসরই থাকেন চাকরি থেকে ছুটি পেয়েছেন মাস তিনেক হবে। বাবাকে ডাকলাম উনি ওঠলেন ভাবলাম ঘুমিয়ে গেছে তাই আর ডাকবোই না! কিন্তু ঘড়িতে তখন চারটে বেজে গেছে বাবা এখন না খেলে যে ওষুধও খেতে পারবেন না! উনাকে আবারো ডাক দিলাম কিন্তু উনি ওঠলেনই না! উনার শরীরটাও কেমন ঠান্ডা হয়ে গেছে। এবার ভ’য় লাগতে শুরু করলো আমি ভ’য়ে ভ’য়ে বাবার নিঃশ্বাস চেক করতে লাগলাম!

#চলবে?