বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি পর্ব-০৯

0
354

#বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি
#শুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৯

তিহান বলল “মামুনি তোমার চোখে পানি কেন? আর আঙ্কেল কোথায় গেলো? তুমি কি কান্না করছো মামুনি!”

রিয়া নিজের মুখে হাসি টেনে বলল “না বাবু আমি কোথায় কান্না করলাম। এমনি আমার চোখে পানি। পোকা গিয়েছিলো তো। আর তোমার আঙ্কেল ফুচকা আনতে গিয়েছে। তুমি ফুচকা খাও।”

তিহানের চোখ আনন্দে চিকচিক করে উঠলো। ও আনন্দিত কন্ঠে বলল “হুম ফুচকা আমার অনেক ভালো লাগে। কিন্তু বাবাই খেতে দেয় না।”

রিয়া বলল “কেন খেতে দেয় না বাবু?”

তিহান ঠোঁট উল্টিয়ে বলল “জানিনা মামুনি”

ওদের কথার মাঝখানেই রেহান ফুচকা নিয়ে এসে হাজির। ওরা খেতে লাগলো। খাওয়া শেষে ওরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ফিরে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

তিহানকে বাসায় রাখতে গেলো আজিজুল সাহেব আর স্ত্রী মিলে রেহান আর রিয়া রাতটা এখানে থেকে যেতে বলেন। অনেকটা বাধ‍্য হয়েই ওরা থেকে গেলো। ওরা বাহিরে থেকে খেয়ে আসায় ওরা সোজা রুমে চলে গেলো।

রেহান ঘুমিয়ে পরেছে। কিন্তু রিয়ার চোখে ঘুম নেই। ওর মনের মধ্যে সব প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে। কিভাবে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো সেগুলো যতক্ষণ না সে জানতে পারছে ততক্ষণ শান্ত হতে পারছে না ও। ও আর শুয়ে থাকতে পারলো না। সে উঠে পরলো। বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। কার কাছে গেলে ও সব প্রশ্নের উত্তর পাবে। আচ্ছা তিয়াস কি বলবে ওকে সব। হয় তো হ‍্যাঁ নয় তো না। কিন্তু ওর যে জানতেই হবে সব। হিয়া কিভাবে মারা গেলো।

হঠাৎ রেহানের ডাকে রিয়া কিছুটা চমকে উঠে পিছনে ঘুরে দেখলো রেহান টাউজারের পকেটে হাত রেখে দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিতে দাঁড়িয়ে আছে। রেহান বলতে লাগল

“কি হয়েছে ঘুম ধরছে না”

রিয়া বলল “না আপনি উঠতে গেলেন কেন যান ঘুমান ঘুম ধরলে আমি ঠিক ঘুমিয়ে পরবো।” বলেই আবার উল্টো ঘুরে আবার আকাশের দিকে তাকায়।

রেহান এসে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। রিয়া রেহানের হাত সরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো


একদম আমার কাছে আসবে না। বিরক্ত লাগছে আমার এসব। একটু ভালো ব‍্যবহার করে মনে করেন না যে যা তাই করবেন। আপনার দোষেই আজ বিয়েটা হলো। কেন আমাকে তুলে আনতে গেলেন। আর কোনো দিন আমার কাছে আসবি না ডিভোর্স চাই। আমি আমার জীবনে কাউকে চাই না। আমি চাই না কাউকে।”

রেহান হতভম্ব হয়ে গেলো রিয়ার ব‍্যবহারে। সে ডিভোর্সের কথা শুনে রেগে যায়। ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ওর গালে। আর বলতে লাগে “আর একবার যদি ডিভোর্সের কথা তোর মুখে শুনি তাহলে কিন্তু মেরেই ফেলবো।”

রিয়া রেহানের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে “অতীত জানেন আপনি আমার। জানলে নিজেই আমাকে ছেড়ে দিতে চাইবেন।”

রেহান রিয়ার মুখ শক্ত করে চেপে ধরে বলল “আমি শুধু তোকে ভালোবাসি আর তোকে সারাজীবন আমার করে রাখতে চাই। অতীতে কি হয়েছে তা আমি জানতে চাই না। তুই শুধু আমার। আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আগে তোকে মারবো তারপর নিজে মরবো। আমি তোকে এখন ভালোবাসি। ভবিষ্যতেও বাসবো আর অতীত জানলেও করবো। যতই জঘন্যতম অতীত হক কেন তোর।”

বলেই রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে চলে গেলো। রিয়া ধপ করে বসে পরলো মেঝেতে। চিৎকার করে কান্না করতে মন চাচ্ছে ওর। কিছু ভালো লাগছে ওর। রেহান কি শুধু আবেগে এমন করলো নাকি সত্যি বলল। সে কি সত্যি ওর অতীত জেনে ওকে মেনে নিবে। এখনকার মতো ভালোবাসবে।

আকাশেরও হয় তো মন খারাপ। তাই হয় তো বর্ষণের মাধ্যমে নিজের অশ্রুকণা ঝড়িয়ে মনকে হালকা করার চেষ্টা করছে। আকাশের বর্ষণের সঙ্গে তালমিলিয়ে চোখের পানি গড়িয়ে পরছে রিয়া আর রেহানের চোখ বেয়ে।

রেহানের প্রায় দুই ঘন্টা পর খেয়াল হলো রিয়া এখনো বারান্দায় আছে। আর বৃষ্টিও জোরে হচ্ছে। রেহান আর কিছু না ভেবে বসা থেকে উঠে দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো রিয়া বারান্দায় পরে আছে। রিয়ার এমন অবস্থা দেখে রেহানের বুকটা ছেত করে উঠলো। রেহান রিয়ার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিলো আর গালে হাত দিয়ে ডাকতে লাগলো। বৃষ্টির পানিতে রিয়ার মুখ ফেকাসে হয়ে গেছে। ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। রেহান রিয়াকে কোলে তুলে নিলো।

রুমে নিয়ে এসে বেডে শুয়ে দিলো রিয়াকে। রিয়ার শাড়ি ভিজে গায়ের সঙ্গে লেপটে আছে। পেটের কিছু অংশ দৃশ্য মান হয়ে উঠেছে। রেহান আর তাকিয়ে থাকতে পারলো না। চোখ সরিয়ে নিয়ে টাওয়েল আর ওর কেনা নতুন জামাগুলোর মধ্যে একটা নিয়ে এলো। কিন্তু কিভাবে চেন্স করিয়ে দিবে। হাত কাপছে রেহানের। কাপাকাপা হাতে রিয়ার দিকে হাত বাড়াতেই খপ করে হাত ধরে ফেললো রিয়া। বিরবির করে বলতে লাগলো

“আপন সবাই হারিয়ে যায়। কপালে কারো ভালোবাসা সহ‍্য হয় না। আমি খারাপ না আমার কপাল খারাপ। বলো না আব্বু কেন ছেড়ে চলে গেলে আমায়। তুমি ছাড়া যে কেউ ভালোবাসে না। বুঝে না আমায়।”

রেহানের হাত শক্ত করে জরিয়ে ধরে রিয়া ফুপিয়ে কেঁদে উঠে ও আবার বলতে শুরু করে “আব্বু প্লীজ আমাকে আর ছেড়ে যেও না। তুমি যেখানে যাবে আমাকেও”

রেহান আর কিছু না বলতে দিয়ে রিয়া ঠোঁট আকড়ে ধরলো। কিছুক্ষণ পর আবার ছেড়ে দিলো। রিয়ার প্রচণ্ড জ্বর এসেছে। রিয়ার ড্রেস চেন্স করিয়ে দিয়ে। ওয়াশরুম থেকে একটা মগে করে পানি আর ওর রুমাল ভিজিয়ে জলপট্টি দিতে লাগলো। রিয়া আবার ও হাত জরিয়ে ধরে আছে রেহানের। রিয়ার জ্বর কিছুটা কমলে ওর মাথা বুলিয়ে দিতে লাগলো। কখন যে রেহান নিজেও ঘুমিয়ে পরেছে সে বুঝতেও পারেনি।

কারো গোঙ্গানের শব্দ কানে আসতেই রেহানের ঘুম ভেঙে গেলো। রেহান ধরফর করে রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো রিয়া ঠকঠক করে কাপছে। রেহান কপালে হাত দিয়ে দেখলো আবার প্রচণ্ড জ্বর এসেছে রিয়ার। হঠাৎ রিয়া রেহান হাত ধরে জরিয়ে নিলো। আচমকা জরিয়ে ধরাতে রেহান টাল সামলাতে না পেরে কিছুটা ঝুকে গেল রেহান। রিয়া আরো শক্ত করে ধরলো রেহানকে। রেহানের বুকের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে একদম রিয়া। রেহান রিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে ওকে জরিয়ে ধরলো। রিয়া গুটিসুটি হয়ে রেহানের বুকে ছোট বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে। রেহান একদৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়ার ঠোঁটযুগল লাল রক্তের টুকরো হয়ে আছে। ঠোঁট গুলো অনবরত কাপছে। রেহান আর নিজেকে কন্টোল না করতে পেরে রিয়ার ঠোঁট দুটো ছুয়ে দিলো।

—————-

অতিরিক্ত গরম লাগায় বিরক্তকর ভাব নিয়ে চোখ খুললো রিয়া। রিয়া নিজের অবস্থা দেখে হকচকিয়ে গেলো। সে খেয়াল করলো রেহান তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে আছে আর ও ওর বুকে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো। পাশের টেবিলে পানির মগ আর নিজের গায়ে জামা দেখে রিয়ার মুখ হা হয়ে গেলো।

রিয়া একটা চিৎকার করে উঠে বসলো। রেহান ধরফরিয়ে উঠে পরলো রেহান। চোখ কচলাতে কচলাতে রেহান বলল

“কি হয়েছে চিল্লাচিল্লি করছো কেন?”

রিয়া বলে উঠলো “আপনি আমাকে এরকম করে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলেন কেন? আর আমার জামা কে চেন্স করছে?”

রেহান ডোন্টকেয়ার একটা ভাব নিয়ে বলল “কেন আমি; আমি ছাড়া কে চেন্স করবে?”

রিয়া রেহানের কলার ধরে বলতে লাগতো “আমার অনুমতি ছাড়া কেন করেছেন এমন বলেন। আমি না করছি না আমাকে ছুতে তার…”

রেহান রিয়াকে বিছানায় ফেলে দিয়ে ওর উঠে বলতে লাগলো “হুশ চুপ একদম চুপ আমি তোর হাসবেন্ট সো আমি এগুলো করতেই পারি। আর আমি বুঝতে পারছি তুমি অন‍্য কিছু নিয়ে ভয় পাচ্ছো। তাহলে শুনে রাখো রেহানের যতোদিন প্রাণ আছে ততদিন সে রিয়ার। আর কাল তুমিই আমাকে জ্ঞানহীন অবস্থায় জরিয়ে ধরেছিলে। আমি তোমার অনুমতি ছাড়া অন‍্যকিছু করতে চাইলেও করতে পারতাম কিন্তু আমি করিনি কারণ আমি চাই তুমি সইচ্ছায় আমার কাছে আসবে। আমি প্রমিস করলাম তুমি আমাকে একদিন নিজ থেকেই ভালোবাসবে। পাগলের মতো ভালোবাসবে।”

বলেই রেহান রিয়ার উপর থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো। রিয়া ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো লাল হয়ে গিয়েছে।

—————–

রাত বারোটা বাজে। রেহান এখনো বাড়ি ফিরেনি। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছে তারপর থেকে কোনো খোঁজ খবর নেই। রিয়া অনেক বার শাশুড়ির কাছে রেহানের কথা জিঙ্গাসা করতে গিয়েও ফিরে এসেছে। ওর কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে।

#চলবে