#বিস্বাদপূর্ণ জীবনে তুমি
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৮
আজিজুল সাহেবের ডাকে রিয়া আর রেহান সামনে তাকালো। আজিজুল সাহেবরা ওদের রুমে নিয়ে যায়। রিয়াকে অনেকক্ষণ যাবত চুপচাপ দেখে রেহান বলল
“আচ্ছা আমাকে কি বলা যায় কি হয়েছে তোমার’
রিয়া আচমকা এসে রেহানকে জরিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। রেহান রিয়ার এমন ব্যবহার দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো। রিয়া বলতে লাগলো
“আমাকে সবাই ছেড়ে চলে গেছে সবাই। আপনি আমার পাশে রয়ে যাবেন প্লীজ। আমার না একজন মানুষকে খুব দরকার। কারো বুকে মাথা রেখে কান্না করতে চাই আমি। খুব দরকার খুব।”
রেহান শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। তিয়াসের কন্ঠ শুনে রেহান রিয়াকে ছেড়ে দিতে চাইলো। কিন্তু রিয়া ওকে ছাড়লো না। রেহান কিছুটা লজ্জা পেলো। তিয়াস বলল
“সরি সরি আমি বুঝতে পারিনি। তোমরা নিচে এসো। চাচি আম্মু ডাকছে তোমাদের।” বলেই তিয়াস চলে গেলো।
রিয়ার কান্নার গতি আরো বেড়ে গেলো। রেহান ওকে শান্ত করে বলল “আচ্ছা আমরা হালকা পাতলা খাবার খেয়েই ঘুরতে যাবো। আর আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে। আর দুপুরে খাবার না খেয়ে থাকা যায় বলো তো।”
রিয়া রেহানের সঙ্গে খাবার টেবিলে গিয়ে চুপচাপ খেতে লাগল। হঠাৎ তিহান বায়না করতে শুরু করলো যে ও মামুনির কাছে খাবার খাবে। তিয়াস এবার রাগে একটা থাপ্পড় দিয়ে দিলো তিহানকে। রিয়া আতকে উঠলো। রেহান দৌড়ে গিয়ে তিহানকে কোলে তুলে নিলো। আর বলতে লাগলো
“ভাইয়া ও তো ছোট। আর এমন বায়না তো ওরাই করবে। তাই বলে মারবেন।”
তিয়াস বলল “সবসময় অন্যায় আবদার করা ভালো না। কখনো কখনো একটু শাসন ও করতে হয়।”
রেহান বলল “তাই বলে ছয়বছরের একটা বাচ্চাকে মারবেন।”
তিয়াস আর কোনো কথা বলল না। চুপচাপ আবার বসে পরলো।
রিয়ার খুব মায়া হলো তিহানের উপর। বাচ্চাটা অনেক শক্ত চোখ দিয়ে পানি পরে যাচ্ছে। কিন্তু মুখ দিয়ে টু শব্দও বের হচ্ছে না। রিয়া গিয়ে রেহানের থেকে তিহানকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল। বাচ্চাটা একদম গুটিসুটি মেরে রিয়াকে জরিয়ে ধরে বসে আছে। রিয়া পরম আদরে ওকে খাবার খাইয়ে দিলো।
খাওয়া শেষে হাত ধোয়ার জন্য উঠতে নিবে তখনই তিহান রিয়ার শাড়ির আচল টেনে ধরলো। রিয়া মুচকি হেসে তিহানের গাল টেনে বলল “কোথাও যাচ্ছিনা বাবু। এই তো হাত ধুয়েই আবার তোমার কাছে আসবো। তুমি একটু বসো।”
তিহান একটা মুচকি হেসে ছেড়ে দিলো রিয়াকে। রিয়া হাত ধুয়ে আসতেই তিহান ওর হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলল “এটা বাবাই তোমাকে দিতে বলেছে। আর তোমাকে পড়তে বলেছে। মামুনি তুমি কিন্তু আমাকে ছেড়ে যাবে না ঠিক আছে।”
রিয়া তিহানের থেকে কাগজ নিয়ে তিহানকে ওর রুমে নিয়ে গেলো। ওরা দুইজন মিলে বিভিন্ন গল্প করতে লাগলো। তিহানের বিভিন্ন কথা শুনে রিয়া হেসে লুটিপুটি খাচ্ছে সঙ্গে তিহান ও হেসে কুটিকুটি। পাশের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছে তিয়াস। মনের মধ্যে একটা শান্তির হাওয়ার বইছে ওর। সে তার ছেলেকে আগে কখনো এতো আনন্দিত হতে দেখে নি। হঠাৎ রেহানের আগমনে তিয়াস রুমে চলে গেলো।
রেহান এসে বলল “তোমাদের মধ্যে কি আমাকে নেওয়া যায়।”
রিয়া আর তিহান একে অপরের দিকে তাকা তাকি করে চোখ ছোট ছোট করে রেহানের দিকে তাকালো। দুইজন মিলে গালে হাত দিয়ে গভীর কিছু চিন্তা করার মতো ভাব ধরলো। তারপর আবার একজন আরেকজনের তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো বলল অবশ্যই। রেহান ও মুচকি হেসে বসে পরলো।
বিকেলে ওরা বাড়ি থেকে বের হতে নিবে তখনই তিহান কান্না শুরু করে। ও নাকি ওর মামুনির সঙ্গে যাবে। ওরা তিহানকে ওদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। রাতে আবার রেখে যাবে।
রেহান তিহান কে নিয়ে তিয়াসের রুমে গেলো ওর পারমিশন নিতে। রেহান হাসি মুখেই রুমে ঢুকছিলো। কিন্তু রেহান দেখলো তিয়াস একটা মেয়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রেহান তিয়াসের কাছে গিয়ে ওর কাধে হাত দিয়ে বলল
“আর কতো দিন হিয়া ভাবির ছবি দেখে কাটাবেন তিয়াস ভাই। এখন তিহানের জন্য হলেও একটা বিয়ে করে নেন না হয়।”
তিয়াস রেহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল “আমি কয়দিন আর বাচবো। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কাউকে আর জরাতে চাই না কাউকে। ভালোই তো আছি একা।”
রেহান বলল “কি বলছেন এগুলো তিয়াস ভাই। আপনার বয়স আর কতো হবে আমার থেকে পাঁচ ছয় বছরের বড় হবেন। এখনো তো অনেক সময় পরে আছে।”
তিয়াস মুখে হাসি টেনে বলল “মৃত্যু কখন আসবে কেউ বলতে পারেনা। সে যাইহোক কিছু কি বলবে আমাকে।”
রেহান বলল “ভাইয়া তিহানকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাই। রাতে আবার রেখে যাবো।”
তিয়াস একবার তিহানের দিকে তাকালো। ছেলেটা মুখ ছোট করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তিয়াস রেহানের কাধে হাত রেখে বলল “যাও দেখে রেখো আমার ছেলেটাকে। জানি তোমাদের সঙ্গে থাকলে ও সবচেয়ে ভালো থাকবে। তাই আর ও তো আমার সব। ও ছাড়া তো আমার কেউ নেই।”
————————
পড়ন্ত বিকেলে একটা লেকের পাশে বসে আছে রিয়া আর রেহান। তিহান একটু দূরেই খেলছে। রিয়াকে চুপচাপ দেখে রেহান বলল
“মন খারাপ”
রিয়া রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল “না তেমন কিছু না। আচ্ছা তিহানে আম্মুকে তো দেখলাম না এই বিষয়ে কিছু জানেন আপনি।”
রেহান একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল “হিয়া ভাবি মারা গেছেন তিহান জন্মের দুইদিন পরেই।”
রিয়া থমকে গেলো। কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না সে। এমন কথা যে সে শুনবে সে কল্পণাও করেনি। সে অস্থির হয়ে বলল “কি বলছেন এগুলো!”
রেহান বলল “হুম এটাই সত্যি। কিজন্য মরা গিয়েছিলেন তা জানিনা। তবে তিয়াস ভাই এখনো ওনার ছবি নিয়েই আছেন। ওনাকে সবাই এমনকি আমি ও আরেকটি বিয়ে করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু ওনি রাজি না। যখন তিহান ছোট ছিলো ওকে সামলানো খুব কঠিন ছিলো। তখন তিয়াস ভাইয়ের মা তিহানকে সামলাতেন। তিনি ও অনেক বার বলছেন আবার বিয়ে করতে কিন্তু ওনি করেন নি।”
রিয়ার ফুপিয়ে উঠার শব্দ শুনে রেহান রিয়ার দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বলল
“প্লীজ কান্না করো না। তোমার কান্না আমার একদম সহ্য হয় না।”
রেহান রিয়াকে বুকে আকড়ে ধরলো। কিছুক্ষণ পর রেহান বলে উঠলো
“ফুচকা খাবে”
রিয়া মাথা নাড়ালো। রেহান মুচকি হেসে ফুচকা আনার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। রিয়া ওখানেই বসে রইলো। তিহান এসে রিয়ার পাশে বসে বলতে লাগলো
#চলবে