বুকের ভিতর রাখবো তোকে পর্বঃ০৫

0
1799

বুকের ভিতর রাখবো তোকে?
#Part:05
#Writer: Doraemon(Ayesha)

পাখি অনেক্ষণ দরজা ধাক্কানোর পর হাল ছেড়ে দিয়ে বিছানার এক কোণে বসে পড়ল। আর মনে মনে বলতে লাগল
–এই বদমাশ ছেলেটার হাত থেকে কি করে মুক্তি পাবো আমি? আমিতো এটাকে ভালো মানুষ মনে করেছিলাম কিন্তুু না এটা তো পুরো শয়তান। আমি নিজেও কিছু বুঝতে পারছি না অরণ্য স্যার আমাকে ভালোবাসে কিনা। বেশ দুটানায় পড়ে গেলাম। কিন্তুু বাবা যে বলত কখনো বড়লোকরা গরীবদের আপনজন হতে পারে না!তারা কখনো গরীবদের ভালোবাসতে পারে না।তারা নাকি প্রয়োজন ফুরোলে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
পাখি এসব ভাবছে আর কান্না করছে। বেশ ঘন্টা খানেকপর অরণ্য ঘরে আসল। অরণ্যকে দেখে পাখি ভয়ে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিল। অরণ্যের হাতে খাবার৷ এবং অরণ্য পাখির কাছে এগিয়ে এসে বলল
–সকালে তো মনে হয় না কিছু খেয়েছো। খাবারটা খেয়ে নাও।
–আমি আপনার দেওয়া খাবার খাবো না। আমার তো মনে হয় এই খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশানো আছে আর তারপর আপনি আমার সাথে…. পাখি আর বলতে পারল না। অরণ্য খাবারটা সাথে সাথে টেবিলে রেখে পাখিকে ঠাসসসস করে থাপ্পড় মেরে দিল। পাখি অরণ্যের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ছে।
–আপনি আমাকে মারলেন?
–ভালোয় ভালোয় বলছি খাবারটা খেয়ে নাও নাহলে আবারো মারব।
–আমি আপনার দেওয়া খাবার খাবো না বলেই পাখি টেবিল থেকে খাবারটা হাত দিয়ে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দিল। অরণ্যের এবার মাথা গরম হয়ে গেছে। অরণ্য এবার সজোরে পাখিকে আরেকটা ঠাসসসস করে থাপ্পড় মারল। এবার থাপ্পড়ের কারণে পাখি বেশ শব্দ করেই কাঁদছে।
–একদম চুপ। তোকে ভালো করে বলছি তোর ভালো লাগে না। শোন আমি আবার তোর জন্য খাবার আনছি যদি এবার না খাস তাহলে তোর কপালে কি ওয়েট করছে তা তুই নিজেও জানিস না।
অরণ্যের এমন হিংস্র রূপ দেখে পাখি ভয়ে রীতিমতো কাঁপাকাঁপি করছে। অরণ্য ঘর থেকে চলে গেল পাখির জন্য আবার খাবার আনতে। সাথে দরজাটাও ভালো করে লক করে দিল যাতে পাখি পালাতে না পারে।
–মানুষ ভয়ংকর জানতাম। কিন্তুু এতোটা ভয়ংকর আগে জানতাম না। আমি থাপ্পড় দেওয়ায় এর বদলা নিল!!! বেয়াদব, ইতর, বদমাশ ছেলে। তোকে আমি স্যার ডাকতাম!! ডাকাবো না আমি আর তোকে স্যার বলে৷
বেশ কিছুক্ষণ পর অরণ্য আবার পাখির জন্য খাবার নিয়ে আসল। পাখির কাছে এগিয়ে এসে পাখির পাশে বসে অরণ্য খাবার হাতে নিয়ে বলল
–এবার খাবারটা আমি তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিব। তুমি যেই ভয়ংকর মেয়ে তোমাকে আগে বোকা ভাবাটাই আমার ভুল হয়েছিল। নাও নাও এবার হা করো দেখি।
পাখি আর কি করবে বাধ্য মেয়ের মতো হা করে খাবার খেতে লাগল নাহলে যে আবার থাপ্পড় খেতে হবে। পাখিকে খাবার খাওয়ানোর পর অরণ্য পাখির সাথে গা ঘেঁষে বসল। পাখি এটা দেখে বিছানা থেকে উঠে যেতে নিলে অরণ্য খপ করে পাখির হাতটা ধরে পাখিকে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। সাথে সাথে পাখির দুহাত নিজের হাতের সাথে মিলিয়ে অরণ্য পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুমি তো বলো আমি নাকি খুব খারাপ। তো এখন যদি আমি তোমার সাথে খারাপ কিছু করি তাহলে তুমি কি করবে?
–প্লিজ প্লিজ প্লিজ স্যার আপনি আমার সাথে এমন কোনো কিছু করবেন না। আমার উপর থেকে সরুন স্যার। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।
পাখি চোখ বন্ধ করেই কথাগুলো বলতে লাগল। অরণ্য পাখির এই ভীতু চেহারাটা দেখে বেশ উপভোগ করছে।
–কি হলো স্যার আমাকে ছাড়ুন প্লি….
পাখি আর বলতে পারল না অরণ্য পাখির ঠোঁট নিজের ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে নিল। এমন ঘটনায় পাখির চোখ রসগোল্লা হয়ে গেল। সে ভাবতেও পারে নি ছেলেটা এতো অসভ্য। পাখি অরণ্যের পিঠে কিল ঘুষি দিয়েই যাচ্ছে তো যাচ্ছে। তবুও অরণ্য পাখিকে ছাড়ছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর অরণ্য পাখিকে ছাড়ল। পাখি লজ্জায় অরণ্যের দিকে তাকাতে পারছে না। সাথে পাখির অনেক রাগও হচ্ছে।
–শুধু লিপ কিস করাতে এমন করছো আর বিয়ের পর তোমার সাথে আরও কত কি করব তখন কি করবে পাখি!
পাখি ধাক্কা দিয়ে অরণ্যকে সরিয়ে দিল। তারপর খাট থেকে নেমে দৌড়ে দরজার কাছে গেল দরজা খুলতে কিন্তুু দরজা লক করা।
–দরজা খুলার বৃথা চেষ্টা করো না পাখি। দরজার চাবি আমার কাছে।
পাখি অসহায় দৃষ্টিতে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে।
অরণ্য পাখির কাছে এসে পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যেতে নিলে পাখি অরণ্যকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমাকে এভাবে ঘরে আটকে রেখে আপনার লাভটা কি স্যার? আমাকে প্লিজ এখান থেকে যেতে দিন। আমি বাড়ি যাবো।
–সাতদিন পর যাবে।
পাখি এখনও কাঁদছে। কিন্তুু অরণ্য পাখির কান্না দেখে পাখির কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেল।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অরণ্য মনে মনে বলতে লাগল
–তোমাকে একটু কাছে পাওয়ার জন্যই তো আমি তোমাকে এখানে আটকে রেখেছি পাখি। আর তুমি কিনা আমায় ভুল বুঝছো। আমি চাই তুমি আমাকে অনুভব করো। আমাকে ভালোবাসো। কিন্তুু আমি কি তোমার প্রতি বেশি কঠোর হয়ে যাচ্ছি? আমি তোমাকে কিছুতেই নিজের কাছ থেকে দূরে থাকতে দিব না পাখি।



এই সাতদিন অরণ্য পাখিকে খুব যত্ন সহকারে নিজের কাছে রেখেছে। আজ অরণ্য পাখিকে তার নিজের বাসায় পৌঁছে দিবে। অরণ্যের ধারণা পাখি কিছুটা হলেও তাকে ভালোবেসে ফেলেছে।
আদৌ কি তাই?



#চলবে?