বৃষ্টির রাতে পর্ব-১২+১৩

0
177

#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(১২)

অফিসের সময় গুলো ভালোই কাটছে তাসিনের আজকাল। প্রথম প্রথম চাকরিটা খুব বিরক্ত লাগতো। মনে হতো চাকরির জন্য জীবনটা উপভোগ করা হচ্ছে না। কলেজ লাইফে একটা প্রেম করেছিল তাতেও ঠিক এমন মনে হয়েছিল তার আর সে কারণে প্রেমটা খুব নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছুতে পৌঁছুতে গার্লফ্রেন্ড তাকে ‘বিরক্তিকর’ উপাধি সাথে ছ্যাকা দিয়ে চলে গেল। এরপর জীবন বদলে বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠলো বন্ধুদের সাথে। কিন্তু বাড়ি থেকে দূরে থাকায় যোগাযোগ কিছুটা কমে গেল বন্ধুদের সাথে। পড়ায় মনোযোগ তার সবসময়ই ঠিকঠাক ছিলো হোক প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া কিংবা ছোট মামার সাথে মায়ের একটা বিরোধ এতে তার পড়াশোনায় প্রভাব পড়েনি কখনো। অনার্স শেষে একরকম হুট করেই চাকরি পেয়ে গেল একটা কিন্তু সেটা রাজশাহী থেকে। তাসিন টের পেয়েছিল চাকরির ব্যবস্থাটা ছোট মামাই করেছে তাই সে আর সেদিকে গেল না।নইলে মা জানলে কষ্ট পাবে। চট্টগ্রামেই থেকে গেল বড় মামার পরিচিত একজন চাকরির অফার দিল বলে কিন্তু চাকরি যোগ্যতা ছাড়া পাওয়া যাবে না। ভাগ্য মন্দ তার কোন কালেই ছিল না তাই হয়ত কম্পিউটার দক্ষতার জের ধরে হয়ে গেল কাজটা। এখন সে দিব্যি আছে এ কাজে৷ বেশিদিন হয়নি জয়েন করার তবুও সবার নজরে তার যোগ্যতা, দক্ষতা বেশ আছে। কিন্তু খারাপ লাগে তার এই ভেবে, বসের সামনে সে মিথ্যে বলেছে। সুপ্রভার কারণে অফিসের অনেকেই তাকে বিবাহিত বলে জানে। চাইলেই সেদিন বলা যেত মেয়েটা কে কিন্তু তখন বিপদ ঘাড়ে নিয়ে এসেছিল বন্ধুরা তাই হয়ত মিথ্যেটাকে সত্যি বলে চালিয়ে দিয়েছে। এতে করে বসের কাছ থেকে এক্সট্রা দুটো দিন নেওয়ার সুযোগও পেয়েছিল। মোদ্দাকথা, মিথ্যে দিয়ে লাভ হওয়ায় লসটা নিয়ে ভাবেনি। আজ অফিস ছুটির সময় বড় মামা ফোন দিয়ে বলল, “আমার অফিসের সামনে দেখা করিস তো।”

তাসিন একটু ঘাবড়ে গেল। বড় মামা সচরাচর তাকে ফোন দেয় না। কিছু প্রয়োজন হলে মামীকে বলে মামী ফোন দিয়ে তাকে জানায়। কিন্তু আজ মামা ফোন দিলো কেন ভেবেই ভয় লাগছে। তবে কি ছোট মামা সব ফাঁস করে দিলো! না দেওয়ার তো কারণ নেই। মা আর ছোট মামার মধ্যে এখনো মনোমালিন্যতা আছে তবে সেদিন অবশ্য কক্সবাজারের ব্যাপারটা মামা কাউকে বলেনি৷ মায়ের খোঁজও নিয়েছে বলে শুনেছে তাসিন। অফিস ছুটির পরই রিকশা করে মামার ওখানে যেতেই মামা বলল, ” এটা নিয়ে পার্কিং লটে যা।”
তাসিন দেখলো মামার হাতে তার গাড়ির চাবি৷ হঠাৎ মনে হলো সে হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে। খুশিতে চিৎকার করতে ইচ্ছে করলেও চিৎকারটা ভেতরেই দাবিয়ে রেখেছে। এক সপ্তাহের কথা বললেও মামা তাকে গাড়ি দেয়নি প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে। বন্ধুরাও ফিরে যাওয়ার পর তার মন একটু খারাপ থাকায় সেও গাড়ির প্রতি আগ্রহ দেখায়নি৷ তাসিন চাবি নিয়ে নিচে গিয়ে দাঁড়াতেই মনে পড়লো মামা তাকে বলেনি সে চলে যাবে নাকি মামাকেও নিয়ে যাবে! এই কোম্পানিতে মামা মাত্র কিছুদিন আগেই যোগ দিয়েছে। বড় মামার টাকার অভাব নেই আবার চাকরিও দরকার ছিল না। সময় কাটানোর উদ্দেশ্যেই তিনি একটা কিছু করতে চাইলেন আর এটা মামারই এক পরিচিতের কোম্পানি হওয়ায় কাজ দিলো৷ অভিজ্ঞতা থাকায় ভালোই পজিশনে আছেন। যদিও আর খুব বেশিদিন করবেন না বলেই ঠিক করেছেন।

“গাড়ি বের করিসনি কেন?”

মামার কথায় তাসিন সামনে তাকালো। মামাও যাবে তাহলে! গাড়ি বের করতেই মামা উঠে বসলেন৷ গাড়ি স্টার্ট দিতেই মামা বলল, “বাড়ি যাবো না এখন।”
“তাহলে!”

“কাচ্চিবিরিয়ানি খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে খুব। ভালো কোন রেস্টুরেন্টে চল মামা ভাগ্নে খেয়ে যাই।”

মামার কথা শুনে তাসিনের চোখ দুটো বিশাল গোলাকৃতি হয়ে গেল। মামার কড়াভাবে নিষেধ আছে এমন সব রিচ ফুড খাওয়াতে। বাড়িতে তো এখন সয়াবিন তেলও খাওয়া বন্ধ হয়েছে। গরু, খাসি এসবেও নিষেধাজ্ঞা আছে তাই মামীর দুরকমের রান্না করতে হয় বাড়িতে৷ তাসিন মুখ খুলতে গিয়েও সুযোগ পেলো না। মামাই আগে বলল, “খবরদার বাড়িতে কাউকে কিছু বলবি না।”

“মামী যখন খাবার খেতে ডাকবে তখন?”

“তোর মামীকে ভয় পায় কে রে! ডাকলে বলে দিবি আমি আর মামা খেয়ে এসেছি। কি খেয়েছি সেটা বলার দরকার নেই।”

মামা কিছুটা জোর দিয়েই বলল। তাসিনও জানে বোকা মামীকে কিছু একটা বলে দিলেই মেনে নিবে৷ কিন্তু সমস্যা আপা তাই মামা যে বাড়ি গিয়ে ঘুমের নামে কেটে পড়বে সে ভালো করেই জানে৷

“আর আপা যখন জিজ্ঞেস করবে তখন কি বলবো?”

“কিছু বলবি না, নুরের সামনেই পড়বি না আজকে।”

গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই কথা হচ্ছিলো মামা ভাগ্নেতে। তাসিন পরিচিত এক রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামিয়ে বের হলো। মামা বের হলে গাড়ি লক করে মামাকে নিয়ে ঢুকলো রেস্টুরেন্টে৷ প্রায় আধ ঘন্টার মত সময় নিয়ে মামা ভাগ্নে খাওয়া শেষ করতেই তাসিন বলল কফি, কোল্ড ড্রিংকস কিছু খাবে কিনা! মামাও সুযোগ পেয়ে বললেন আজই তো খাবো একটা কোকাকোলাই নিয়ে আয়৷ আজ মামাকে কিসে পেয়েছে কে জানে! এমনটা ভাবতে ভাবতেই তাসিন উঠে গেল কোক আনতে৷ তার ফোনটা সে খাওয়ার সময় টেবিলের রেখেছিল সেখানেই বেজে উঠলো। মামা দেখে ফোনটা হাতে নিতে গিয়েও অপেক্ষা করল তাসিনের কিন্তু সে আসছে না। একজন বেয়ারা এসে দুটো কোক রেখে গেল টেবিলে৷ কলটা কেটে গেছে বাজতে বাজতে৷ পুণরায় কল আসতে মামা ভাবলেন হয়ত জরুরি৷ তিনি হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলেন। স্ক্রিনে ভাসা নামটা উচ্চারণ করলেন, “তুফান” এ কেমন নাম আবার!

আরো কয়েক সেকেন্ড বেজে কল কেটে গেল। তাসিন আসেনি ফোনটা তৃতীয়বার বাজতেই মামা আর অপেক্ষা না করে ফোন কানে নিলেন।

“হ্যালো!”

“কে ফোন করেছে মামা।”

ওপাশ থেকে জবাব আসার আগেই তাসিনের কথা শোনা গেল। মামা ফোনটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “তোমার ফোন এসেছে। তুফান কে, এ কেমন ধারা নাম!”

বুকটাতে একটা ঘন্টার টুং শব্দ হয়ে গেল। ওই মেয়ে ফোন করেছে আর তা মামা তুলেছে! সে দ্রুত ফোন মামার থেকে নিয়ে কানে ধরলো, “হ্যালো, জ্বী আপনার নোটসগুলো পাঠিয়ে দিব পরীক্ষার আগেই। আচ্ছা। বাই।”

বিরতিহীনভাবে সবটা বলে তাসিন ফোন কাটলো। মামাকে বলল, “ব্যাচমেট আমার। সামনে একটা পরীক্ষা আছে তার জন্য কিছু নোট চেয়েছিল। আমি দিতে ভুলে গেছি।”

“কি ব্যাপার! এই লোক পাগল নাকি কিসের পরীক্ষা, কিসের নোটস! ব্যাটার কি মাথায় গন্ডগোল আছে!” সুপ্রভা বিড়বিড় করছে একা একা। তার রুমে বসে আছে জয়া নামের এক জুনিয়র মেয়ে৷ পাশের রুমের মেয়ে সে এসেছিল মেহরিনের কাছে কিন্তু মেহরিন নিচে গেছে ৷ সুপ্রভাকে বিড়বিড় করতে দেখে এগিয়ে এলো, ” বিড়বিড় করছো কেন প্রভা আপু৷ তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?”

‘পাগল!’ কথাটা কানে লাগলো খুব সুপ্রভার৷ মাত্রই তো সে ওই বদলোককে পাগল বলল। আর এই মেয়ে বলে কিনা সে পাগল! মেজাজটাই বিগড়ে একদম আলুর ভর্তা অবস্থা। ফোনটা বিছানায় রেখে সে উঠে বাথরুমে ঢুকে গেল। ইচ্ছেমত মাথায় পানি দিয়ে এসে আবার নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লো। আর তার কান্ড দেখে জয়া হা করে রইলো। আরও কিছু জিজ্ঞেস করার ছিল হয়ত মেয়েটার কিন্তু ভয়েই করেনি। সুপ্রভা যে খিটখিটে মেজাজের তা দু বছরে হোস্টেলের প্রায় বেশিরভাগেরই জানা। সেই সালিশের পর কয়েকটা দিন চলে গেল সুপ্রভা এখনো টিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ কোথাও এক্টিভ পাচ্ছে না প্রিয় বান্ধবীটিকে সেজন্যই আজ আবার তাসিনকে ফোন করেছিলো। কিন্তু লোকটা এমন করলো কেন! রাগ হচ্ছে খুব সামনে থাকলে নিশ্চয়ই সে লোকটার মাথায় বেল মা*রতো।

আয়না আজ কতদিন হয়ে গেল মামীর কাছে যায় না। সেই যে সেদিন মামী বলল তাসিন ভাইকে তার পছন্দের মেয়ের সাথেই বিয়ে দিবে তারপর আর আয়না পা মাড়ায়নি ওদিকে। মাঝেমধ্যে মাইশা আসে বিকেলে তার সাথে গল্প করতে, সময় কাটাতে। কিন্তু সে আর এখন গল্প খুঁজে পায় না। আগে বলতো খুব তাসিনকে নিয়ে। হাজারো কথার ফুলঝুরি ছুটতো সবই তাসিন সম্পর্কিত। মাইশা তখন বিরক্ত হয়ে বলতো সব কথাতে ভাইয়া কেন আসে আপু?

আয়না তখন লজ্জায় রাঙা হয়ে যেত। কথা ঘুরিয়ে অন্যকিছু বলতে গিয়ে আবারও তাসিনকে নিয়েই বলতো। এমন করে অবশ্য মাইশাও বুঝে গেছে আয়না আপু তার ভাইয়াকে পছন্দ করে। কিন্তু এখন আয়নার পরিবর্তন চোখে পড়ছে। আয়নার মাও সেদিন খুব করে বকেছে তাকে তাই জেদ ধরেছে সে আর কখনো তাসিনকে নিয়ে কথা বলবে না। আজও তেমনই চুপ রইলো মাইশা আসার পর । আজ মাইশা আর তার মা দুজনই এসেছে একসাথে। এক বক্স আমসত্ব আর চিংড়ির বড়া বানিয়ে এনেছে। মাছুমার মনে হলো আয়নার অভিমান হয়েছে তাই মান ভাঙাতেই তার পছন্দের বড়া আর ঝড়ের সময় পড়া আম দিয়ে বানানো টক, ঝাল, মিষ্টি আমসত্ত্ব নিয়ে আসা৷ আসার পর থেকেই মাছুমা ননদের সাথে বসে কথা বলছে৷ আয়নাকে ডাকতে গিয়েছিল। গিয়ে দেখলো আয়না চুপচাপ বইয়ে মুখ গুঁজে আছে। কিন্তু সে কি পড়ছে না শুধু দৃষ্টি বুলাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। মাইশা আলতো করে কাঁধে হাত রাখতেই ভীষণরকম চমকে গেল আয়না।
“ভয় পেলে আপু?”

“তুই কখন এলি?”

“মাত্রই। আসো ফুপির ঘরে মা’ও এসেছে।”

আয়না বিষ্মিত হলো মামী এসেছে শুনে৷ মনে মনে কুণ্ঠিতও হলো সেদিনের কথা মনে করে। মামী কি সেদিন কিছু বুঝেছিল! বুঝেছিল নিশ্চয়ই সে কেমন বেহায়ার মত প্রশ্নগুলো করেছিল! লজ্জায় এখন মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু মাইশার জোরাজুরিতে উঠতেই হলো৷ মায়ের ঘরে ঢুকে আরো এক দফা সংকীর্ণতায় ভুগলো আয়না। ঘরে পা দিতেই টের পেল মা আর মামী ভিডিও কলে কথা বলছে তাসিন ভাইয়ের সাথে। তারই মাঝে মামী তাকে দেখে বলে উঠলো, “তোমার কি হয়েছে শুনি, ও বাড়ির পথ বেশ ভুলে বসে আছো দেখছি!” মামীর কথাটাতে অভিমান স্পষ্ট। মামী সবসময় তাকে তুই করে বলে। শুধু রেগে গেলে কিংবা অভিমান হলেই এমন আচরণ করে৷ তাসিন মায়ের কথা শুনে বলল, “কাকে বলছো আম্মা।”

“আর কাকে আমাদের ধিঙ্গি বুড়িকে৷ সেদিন কি না কি বলেছি তারপর থেকেই আর আমাদের বাড়ি যায় না। তাই আজ ঘটা করে বড়া বানিয়ে আনতে হলো মান ভাঙাতে।”

মায়ের কথা শুনে তাসিন হাসতে হাসতে বলল, “ওর আবার মান আছে নাকি! ক্যামেরাটা ওর দিকে দাও তো দেখি মান ভরা মুখটা।”

তাসিনের কথায় সবাই একসাথে হেসে উঠলেও আয়নার হাসি পেলো না। বরং একটা কান্নার ঢেউ বুক থেকে উথলে গলায় এসে আটকে গেল। মাছুমা ফোনটা আয়নার দিকে ধরতেই আয়না উল্টো ফিরে বলল, “আমি চা বানিয়ে আনছি।”

আর এক মুহুর্তও দেরি না করে আয়না বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। তাসিন একাই বোধহয় খেয়াল করলো আয়নার কথার ভেতর চাপা কান্নার ঢেউ। বাকিরা ভাবলো রাগ বেড়েছে।

চলবে।

#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(১৩)

বৃষ্টিমুখর এক শীতল, স্নিগ্ধ সকাল। ঘুম ভেঙেছে ঝুম বৃষ্টির মাঝে হঠাৎ হঠাৎ বাজ পড়ার শব্দে। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে মনে হলো আজ ক্যাম্পাসটা নিশ্চয়ই কৃষ্ণচূড়ায় লাল হয়ে আছে! বৃষ্টি এলেই ফুল গুলো ঝরে লাল গালিচার মত রঙিন সাজে সেজে উঠে ক্যাম্পাসের দক্ষিণ দিকটা। সুপ্রভা তড়িঘড়ি উঠে দেখলো মেহরিন এখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে৷ আজ ক্লাসে কজনই’বা যাবে তবুও সুপ্রভা মিস করবে না। উহুম, ক্লাস করতে নয় বরং বৃষ্টিতে ভিজতে। এক পশলা বৃষ্টির মাঝে নিজেকে মিশিয়ে হারিয়ে যাওয়ার প্রবঞ্চনা পায় সুপ্রভা সবসময়ই৷ আজও ভিন্ন নয় তাই তড়িঘড়ি পোশাক পাল্টে চুলগুলো খোলা রেখেই বেরিয়ে পড়লো৷ রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েও আবার ফিরে এসে কাজলটা নিয়ে চোখে দিলো। কাজল ছাড়া বৃষ্টিবিলাস তার বড্ড ফিকে লাগে। বৃষ্টিতে ভেজার পর প্রসাধনীবিহিন মুখটা তার বড্ড জীবন্ত লাগে নিজের কাছেই কিন্তু চোখের নিচে লেপ্টে থাকা কাজল ছাড়া তা অপূর্ণ। মেহরিনকে ডাকার ভুল সে কিছুতেই করলো না কারণ মেহরিনের তো বৃষ্টিতে ভিজলেই সমস্যা দেখা দেয়। কি জানি বাপু তার কেমন রোগ বৃষ্টিতেও যে কারো এলার্জি হতে পারে এ যেন খুব আশ্চর্যজনক ঘটনা। সুপ্রভা বেরিয়ে পড়লো প্রিয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। হোস্টেলের গেইট পার হতেই তার চোখ দুটো বিড়ালের চোখের মত ছোট আর গোলাকৃতি হয়ে গেল। দুই ভ্রুর মধ্যিখানে হালকা কুঞ্চন৷ কালো রঙের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িটা তার খুব পরিচিত৷ এই ঢাকা শহরে পা দিতেই সে প্রথম দূর্ঘটনায় পড়েছিলো এই গাড়িতেই। মনে হতে আজও গা শিউরে উঠলো এই ভেজা হাওয়ায়। তারপরই মনে হলো এদিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট করার মত সময় তার হাতে নেই। সে পথের এদিক ওদিক তাকালো রিকশার খোঁজে। ক্যাম্পাসে নয় বরং টিএসসির দিকে যাবে রিকশায় চড়ে৷ আজ ঘুরে ঘুরে ভিজবে বৃষ্টিতে এতে নিশ্চয়ই তার মনটা ফ্রেশ হবে। চারপাশ খুঁজেও একটা রিকশা চোখে পড়লো না ততক্ষণে গাড়ির মালিকটি একটা ছাতা হাতে গাড়ি থেকে নেমে এলো৷ লোকটার পা ফেলার ভঙ্গিতেই স্পষ্ট সে পানি থেকে পোশাক বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করছে। এতেই যেন সুপ্রভার চোখ-মুখ আরো কুঁচকে গেল৷ প্রকৃতিকে দু চোখ মেলে দেখা, উপভোগ করার মজাটাই জানে না এই শহুরে বড়লোক বাপের বিগড়া ছেলেটা। শুধু জানে মিষ্টি মুখে সুন্দরী মেয়েদের কতোটা বশ করা যায় তারপর একবাক্যে নিজের ঘরে কিংবা হোটেলে৷ ঘৃণার একটা ঢেউ পাকিয়ে উঠলো সুপ্রভার বুকের ভেতর। সে গেইটের ভেতর ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সৌহার্দ্য ডাকলো, “প্রভা শোনো, চলো আমার সাথে।”

“কোথায় যাবো হোটেলে?” চেঁচিয়ে উঠলো সুপ্রভা। এতক্ষণ বৃষ্টি ঝিরিঝিরি ছিলো এখন একটু বাড়ছে। সেই বৃষ্টিতে পুরোপুরি ভিজে যাচ্ছে সে। সৌহার্দ্য এগিয়ে ছাতাটা তার মাথার ওপর ধরতে এলে ধমকে উঠলো আবারও সে, “দূরে দাঁড়াও।”

“কেন এমন করছো বলো তো? কে বলেছে আমি মেয়েদের নিয়ে হোটেলে যাই! ওই মেহরিনের কথা ধরে বসে আছো তুমি?” সৌহার্দ্য ব্যকুল হয়ে নিজের পক্ষে কথা বলতে চাইলো। সুপ্রভার মেজাজ বিগড়ে গেছে প্রচণ্ডরকম। সে এই মুহুর্তে কথা বলতে গেলেই নির্ঘাত বাজে কিছু বলে বসবে তাই চাইছে এড়িয়ে যেতে। আর সে মুহুর্তেই তার ফোনটা বাজলো। বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ফোন তোলা যাবে না ভেবে সে গেটের ভেতরে ঢুকে গেল। সিঁড়ির দিকে পা বাড়িয়ে ফোন তুলে কানে ধরলো। সৌহার্দ্য বোকার মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার গাড়িতে উঠে পড়লো। সকালের চমৎকার মুডটটা বৃষ্টির পানির সাথেই ভেসে গেল সুপ্রভার। চোখের কাজল লেপ্টে গেছে বৃষ্টিবিলাস না করেই।

“আজকের সকালটা এত দারুণ চাচা কি বলবো!” কফি হাতে নিয়ে তাসিন হাবিব চাচাকে বলল কথাটা। একটু আগেই অফিসের কাজে বসের সাথে মিটিংয়ে যেতে হয়েছিল। সঙ্গী হাবিব চাচা আর বসের এসিস্ট্যান্ট ওয়াহিদও ছিল। চারজনেই এসেছে বসের গাড়িতে করে৷ আর তখনই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। গাড়ির এসি অফ আর জানালার কাঁচ নামানো থাকায় তাসিন জানালায় তাকিয়ে ছিল। বৃষ্টির ছাঁট তাকে একটু একটু করে অনেকটা ভিজিয়ে দিলো। শীতল করে দিলো ভেতর বাহির সবটা সেই সাথে তাকে করে দিলো কাব্যিক। সে বসে বসে দু চার লাইনের ছন্দ লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়লো তার সেই বৃষ্টির রাত, সেই ভেজা আবছা মুখটা। কি আশ্চর্যজনক কথা, সেদিন তো মুখটা খেয়ালই করেনি সে অথচ আজ ছন্দের তালে সেই মুখটাই মনে পড়লো! মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো তাসিন আর তা দেখেই হাবিব চাচা বললেন, “হাসছো কেন বেটা?”
জবাবে তাসিন বলল, আজকের সকালটা এত দারুণ চাচা কি বলবো!”

“সকাল দারুণ বলে এই হাসি! আমার তো মনে হচ্ছে এই দারুণ সকালে দারুণ কাউকে অথবা কোন ঘটনা মনে করে হাসছো।”

বস আধঘন্টা সময় দিয়েছেন তাদের একটু রেস্ট নিতে তারপর কাজ শুরু। সেই সময়টা তাসিন আর হাবিব চাচা অফিস ক্যান্টিনে এসে কফিতে চুমুক দিচ্ছে সেই সাথে ক্যান্টিনের লম্বা জানালার কাঁচে জমে থাকা ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টিকে দেখছে৷ হাবিব চাচা শুধু বয়সেই মুরুব্বি মনের দিক থেকে তিনি এখনো তরুণ। তাসিন তার অফিসের সময়টা উপভোগ করতে পারে শুধুমাত্র এই মানুষটার জন্যই। এই বৃষ্টিমুখর সময়টাতে সেই মেয়েটাকে মনে পড়ছে খুব করে। আচ্ছা, তাকে কি একটু কল করে রাগিয়ে দেয়া যায়! যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। তাসিন মনে মনে ঠিক করলো মেয়েটিকে কল দিবে। রিসিভ হতেই সে এমন ভাণ ধরবে যেন অন্য কাউকে দিতে গিয়ে ভুলে তাকে দিয়েছে। কল ঢুকলো, বাজলোও একবার। সংকোচ হলো তাসিনের আর না দেওয়াই ভালো। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে কফিতে শেষ চুমুক দিতেই মনে হলো দেই আর একবার এই শেষ! সত্যিই সে দ্বিতীয়বার কল দিলো এবং তাকে বিষ্মিত করে দিয়ে ওপাশ থেকে একটা ঝড় বয়ে গেল। কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে থেকে তাসিন আবার তার কাজে বসে পড়লো কিন্তু মন বসলো না সেদিকে।

“আমার আকাশটা যেমন মেঘাচ্ছন্ন তোমারও কি তেমন!

আমার মনের ঘরে ধূসর বিষন্নতার পরত
তোমার মনেও কি চলে এমন শরত!!”

“কি বলছো একা বিড় বিড় করে আয়না? একটু জোরে বলো আমিও শুনি।” মেঘলা আকাশটার দিকে চেয়ে আয়না লাইন দুটো নিজের অজান্তেই আওড়ালো চলতে চলতে৷ চায়ের দোকান থেকে সিগারেট হাতে রায়হান বেরিয়ে এলো। তার বখাটেপনা সবচেয়ে বেশি চলে বাজারের এই চায়ের দোকানে বসেই। আর প্রত্যেকটা দিন এখানটায় সে নিয়ম করে বসে, আয়না কলেজে যায় বলে। আয়না তাকে খুব একটা ভয় পায় না কিন্তু তার কথা বলার ধরণটা খুব অশ্লীল লাগে। কেমন যেন সব কথাতেই একটা হি হি ভাব থাকে তার। আজ আয়না একদম একা যাচ্ছে অন্য সময়ে তুহিন থাকে। দুজনের কলেজ আলাদা হলেও পথ একটাই তাই দুজন একসাথে যেতে পারে। বলা যায় ইচ্ছে করেই তুহিনের সাথে যায় যেন রায়হান এগিয়ে এসে কিছু না বলতে পারে। কিন্তু তুহিনের খুব জ্বর বলেই আজ সে একা। আয়না কোন জবাব না দেওয়ায় রায়হান তার পিছু আসতে আসতেই আবার বলল, “আজকে শালা সাহেব আসে নাই সাথে? যাক ভালোই হলো এবার অন্তত শান্তিতে দুটো কথা বলা যাবে। ”

“একদম আসবেন না আমার পিছু পিছু। কি পাইছেন যখন তখন এমন পিছনে লাগবেন। অসভ্যদের মতো সারাক্ষণ মেয়েদের পেছনে পড়ে থাকেন কেন !”
রেগে অগ্নিমূর্তি হয়ে আয়না চেঁচিয়ে উঠলো। বাজারের পথ ছেড়ে সে অটোর জন্য দাঁড়িয়েছে। রায়হান পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলা থামাচ্ছেই না তাই অতোটা ক্ষেপে গেছে আয়না। আয়নার চেঁচিয়ে ওঠা শুনেই একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এহসান ভ্রু কুটি করে তাকালো। আজ ডিউটি নেই বলেই বাজারের দিকে এসেছিল। নাশতাটাও হোটেলে করেছে এখন ফিরতি পথে সে ছেলে মেয়ে দুটোকে এক নজর দেখে আবারও চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু মেয়েটির চিৎকার তার কাছে কোন একটা সংকেত দিলো বোধহয়। এবার আর ফিরে না গিয়ে সে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলো, “কি হচ্ছে এখানে?”

রায়হান চেনে এই অফিসারকে; সে কোন ঝামেলায় পড়তে চায় না বলে বলল, “কিছু না”

এহসান খেয়াল করলো ছেলেটার চোখ আর কপালের রেখা। খুব যদি ভুল না হয় তবে ছেলেটা প্রচণ্ডরকম স্মোক করে, বখাটে টাইপ, উগ্র স্বভাবের হবে। সে ছেলেটার কথায় পাত্তা না দিয়ে আয়নাকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। আয়না এহসানের দিকে তাকিয়ে ভাবলো অচেনা লোককে বলে আবার ঝামেলা না বেড়ে যায় তাই সেও ‘কিছু না’ বলে অটো দেখতে পেয়ে উঠে গেল। এহসান বোকার মত তাকিয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড অটোর দিকে তারপরই বলল, “তোমাকে আমি চিনি মনে হচ্ছে।”

রায়হানও জানে এহসান তাকে চেনে কিন্তু আপাতত এড়িয়ে যাওয়াটাই তার জন্য মঙ্গলময়৷ সে বলল, ” আমার বাড়ি এখানেই।”

কথাটা শেষ করে সেও আর দাঁড়ালো না। এহসান বোকার মত একটু হেসে ফেলল। আজকালকার ছেলে মেয়েগুলো একটু বেশিই উশৃংখল নাকি রোমান্টিক সে বুঝতে পারে না। পথেঘাটেও তাদের লড়াই, ঝগড়া, কত কি চলে। অথচ তার পড়ালেখা চলাকালীন সময়ে কাউকে ভালো লাগলেও বলার সাহস করতো না পাছে আবার বাবার কানে যায় কথাটা সেই ভয়ে। ভার্সিটিতে পড়ে পছন্দ হলেও প্রেম করার উদ্দীপনা পেতো না তখন অবশ্য নেভিতে ঢুকতে হবে এমন এক নেশায় পেয়ে বসেছিল তাকে৷ দূর্ভাগ্যবশত তা হয়নি শেষ পর্যন্ত বাবার জোরের মুখে পুলিশে এন্ট্রি নিলো। এ কাজটাও তার খারাপ লাগে না আবার ভালোও লাগে না। না চাইতেও এখানে ঘুষটুস ব্যাপার হয়ে যায় আর এটাই খারাপ লাগে তার।

সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততার পর বাড়ি ফিরে তাসিন প্রথমেই মামীর কাছে বায়না ধরলো বাইরে খাবে আজ। মামী কপট রাগ দেখালেন এই নিয়ে। সেদিনও মামা ভাগ্নে বাইরে খেয়ে পরদিনই গ্যাসের ব্যথা এই সেই কি বিপদেই না ফেলেছিলো। তাসিন শুনতে চাচ্ছে না বলে মামী বললেন, “ঠিক আছে আমি ভুনা খিচুড়ি রান্না করছি কম তেল মশলা দিয়ে। বাইরে খাওয়া চলবে না।” সকালের বৃষ্টি সকালে থামলেও বিকেলের পর আবার শুরু হয়েছে এখনো চলছে ঝিরিঝিরি। তাসিনের মনে হচ্ছে মামীকে এখন তার জন্য আবার কিচেনে ঢুকতে হবে! তাই বারণ করলো খিচুড়ি লাগবে না সে ভাত খাবে বলেই ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। আগে যে ঘরে সে থাকতো সেটাতে বারান্দা ছিলো না। বড় ভাইয়া আর ভাবী বিদেশে স্যাটেল হওয়ার পর মামীই তাকে এ ঘরটাতে আসতে বলেছে৷ ডিম্বাকৃতি বড় একটা বেলকোনি আছে এ ঘরটাতে তাই সেও আসতে আপত্তি করেনি। বরং খুশিই হয়েছে মামী তার মনের কথা বুঝতে পেরেছে বলে। অফিসের পোশাক বদলে বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার নিলো৷ বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে আজ গায়ে দু দফায়। সকালে একবার এখন আবার তাই গোসলটা করাই ঠিক মনে হলো৷ গোসল শেষে তোয়ালে পেঁচিয়ে বের হয়ে বারান্দার দিকে পা বাড়াতেই কানে এলো ফোন বাজছে। ফিরে এসে বিছানা থেকে ফোন নিলো তাসিন। খালি গলায় বিষম খেলো নাম দেখেই। সকালে যা করলো তারপর এখন ফোন করছে কি তাকে সত্যিই পুলিশে দিতে! রিসিভ করবে না করবে না করেও ধরলো। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সুপ্রভা সালাম দিলো। তাসিন জবাবে “ওয়ালাইকুম আসসালাম” বলতেই সুপ্রভা আবার বলল, “স্যরি সকালের জন্য আমি না অন্য একজনকে বকতে গিয়ে আপবাকে বকেছি কিছু মনে করেবন না প্লিজ। এক্সট্রিমলি স্যরি।”

“দম নিয়ে বলো। বুঝলাম রং নাম্বার ছিল হয়ত।”
তাসিন স্বাভাবিকভাবেই বলল।

“রং নাম্বার না সৌহার্দ্য.. ”
সুপ্রভা থেমে গেল নামটা বলতে গিয়ে। কথা ঘোরাতেই আবার বলল, “কোন দরকারে কল দিয়েছিলেন?”

তাসিন ভড়কে গেল এবার। সে তো কোন প্রয়োজনে ফোন করেনি তখন৷ এখন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কয়েক মুহুর্ত ভেবে আবার বলল, “হ্যাঁ দরকারেই। তুমি সেদিন ফোন নাম্বার চাইলে মুরাদের।”

সুপ্রভার মনে পড়লো সে চেয়েছিল ফোন নাম্বার। টিয়ার সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ না করতে পেরে চেয়েছিল। কিন্তু এখন তো তাদের যোগাযোগ হয়েছে। টিয়া নিজেই তাকে ফোন করেছিলো। সুপ্রভা বলল, “লাগবে না কথা হয়েছে টিয়ার সাথে।”

“ওহ” বলে তাসিন চুপ হয়ে গেল। আর কি বলবে সে! সকালে যে দুষ্টুমির একটা খেয়াল ছিলো মাথায় এখন সেটাও নেই। সুপ্রভাও চুপ হয়ে গেছে। দুজনেই নিস্তব্ধতায় নিজেদের মধ্যে বলার মত কথা খুঁজে পেলো না। সকালে যখন সৌহার্দ্যকে দেখে সুপ্রভা রুমে ঢুকে গেল তখন সৌহার্দ্য তার নাম্বারে অসংখ্য কল করলো। সুপ্রভা তার কল ধরে অনেক বকাবকি করলো কিন্তু সৌহার্দ্য শুনলো না। বাধ্য হয়েই সুপ্রভা তার নাম্বার ব্লক করলো আর তার মিনিট পাঁচেক পরই এসেছিল তাসিনের কলটা। সুপ্রভার মনে হয়েছে সৌহার্দ্য বুঝি অন্য কোন সিম দিয়ে কল দিয়েছে। আগেও এমন করেছে সে আর তা ভেবেই সুপ্রভা কল ধরে চিৎকার করে বলেছিল, “অ’সভ্য, লু’চ্চা তুই আর একবার যদি কল দিস আমি তোকে, তোর চৌদ্দগুষ্টিকে জেলে পাঠাবো মনে রাখিস।” ব্যস এক বাক্যেই সে সব বলে কল কেটে দিয়েছিলো। তাসিনের মনে হয়েছিলো কেউ বুঝি তার কানের কাছে বোমা ফাটালো। পুনরায় আর কল করার মত এনার্জি সে খুঁজে পায়নি নিজের মধ্যে। মেয়েটা সত্যিই এক তুফান, বজ্রপাত, বোমা যাই বলুক কম হবে। তবে এটুকু বুঝতে পারছিলো কেউ মেয়েটাকে ডিস্টার্ব করছে তাই ওরকম বলছিলো। কিন্তু এখন আর কথা খুঁজে পাচ্ছে না তাসিন হুট করে কি বলা যায়! তারপরই বললো, “ডিনার শেষ?”

“হ্যাঁ, হোস্টেলে নয়টার মধ্যেই ফিনিশ।” তাসিন ফোন কাঁধ দিয়ে কানে চেপে ধরে ট্রাউজার পরে নিলো। টি শার্ট পরবে বলে ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে বিছানায় রেখে টি শার্ট পড়ছে। তারই মাঝে সুপ্রভাও প্রশ্ন করলো, “আপনি ডিনার করেছেন?”

তাসিন মজা করেই বলল, “না করলে কি এসে তুমি করাবা?”

তাসিন কথাটা বলেই হা হা করে হাসছিলো৷ সুপ্রভাও কিছু একটা বলেছে কিন্তু সে কথাটা খেয়াল করতে পারেনি৷ তার নজর আটকালো দরজার নিচে৷ কারো ছায়া দেখা যাচ্ছে একটুখানি সেই সাথে স্যান্ডেলের খসখস আওয়াজ। দ্রুত ফোন কেটে সে দরজা খুলল। কি আশ্চর্য কেউ নেই সেখানে৷ টেনশনে পড়ে গেল তাসিন মামা ছিলো নাতো! ওহ মাই গড! এ ঘরের দরজাটা নিচ থেকে একটু ফাঁকা বলে ঘরের ভেতর কথাবার্তা কান পাতলে ভালোই শোনা যায়। মামা বা নুর আপা দুজনের কেউ একজন যদি কথাগুলো শুনে থাকে তাহলে নিশ্চিত তার কপালে শনি আছে৷ আবার মনে হলো মামিও হতে পারে হয়ত খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিল! আহ্ কি কান্ড এই তুফান এলেই তার বিপদ ঘটে এমন কেন! নিজেই নিজেকে ইচ্ছেমত গালি দিতে লাগলো তাসিন৷ কোন দূর্দশায় যে এই মেয়েটাকেই সে ফোন করেছিল সকালে!

“সুপ্রভা, তোমার বাড়ির ঠিকানা কি জানে সৌহার্দ্য?”

মেহরিনের হঠাৎ প্রশ্নে সুপ্রভা চমকে তাকালো। একটু আগেই তাসিনের কথা শুনে আর হুট করে কল কেটে দেওয়ায় তার মেজাজ সকালের মতোই বিগড়াচ্ছিলো। কিন্তু মেহরিনের কথায় সে অবাক হলো।

“কেন বলোতো?”

“সৌহার্দ্য আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে তুমি তার ফোন তুলছো না কেন? সে তোমাদের বাড়ি যাবে কাল।”

“কিহ!”

চলবে