বৃষ্টির রাতে পর্ব-১০+১১

0
202

#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(১০)

সমুদ্রের মাতাল হাওয়ায় ঢেউয়ের গর্জন মন ভালো করা পরিবেশ। অথচ মন ভালো হচ্ছে না তাসিনের কিছুতেই। সে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসেছে রাত নয়টায়। ততক্ষণে মুরাদদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে। হোটেলের রুমও ছাড়া হয়েছে আগেই। বাসের টিকিট কেটে রেখেছে মুরাদ কিন্তু সমস্যা হলো তাদের বাস ছাড়বে রাত দেড়টায়। এত রাতে বাসস্ট্যান্ডে কি করে যাবে। আবার আগেই গেলেও সেখানে টিয়াকে নিয়ে কোথায় বসবে, কি করবে! রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি এখন মোটেও সুবিধার নয় একটা মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার মত। অনেক ভেবে তাসিন কোন সিদ্ধান্ত না নিতে পেরেই রিশাদের সাথে কথা বলল। রিশাদ স্বভাবে গম্ভীর হলেও আচরণে সে যথেষ্ট আন্তরিক। তাসিন যেচে হেল্প চাইতেই রিশাদ জানালো এখন সে আর বাইরে যাচ্ছে না তার গাড়িটাই ফ্রী আছে৷ কিন্তু মাস তিনেক হলো সে ড্রাইভার ছাড়িয়েছে। আর হোটেলের কাজের জন্য এখন আর প্রাইভেট কার বা মাইক্রো একটাও নেই। তাসিন কিছু একটা ভেবে বলল, “আমি ড্রাইভিং জানি। যদি আপনার আপত্তি না থাকে তো এই যে আমার ফোন।” বলেই তাসিন লক সরিয়ে দিল ফোন থেকে। তারপর নিজের কন্টাক্ট লিস্ট আর ওয়ালেটে থাকা নিজের ন্যাশনাল আইডি কার্ড আর তার ব্যাংক কার্ডটা সামনে দিয়ে বলল, “এগুলো রেখে দিন আপনার কাছে। আমি নিশ্চয়ই গাড়ি নিয়ে ফিরে আসবো তবুও গ্যারান্টি স্বরূপ রাখুন।”

রিশাদের খুব হাসি পেলো তাসিনের কান্ড দেখে। ভরসা জিনিসটা রিশাদের মধ্যে বাইরের মানুষের জন্য নেই বললেই চলে। সে জানে তাসিন গাড়িটা নিলেও কোন ভয় নেই। আর যদি সে কিছু করেই বসে, গাড়িটা নিয়ে গায়েব হয়ও রিশাদের ক্ষমতা আছে দেশের অন্তত কয়েকটা জেলা থেকে সেটাকে একঘন্টার মধ্যে খোঁজ নেওয়ার। তাসিনের কোন আইডিয়া নেই রিশাদ কি ছিল আর এখনো কি আছে৷ সবাই শুধু তার বর্তমান খোলশটাই দেখছে৷ মেহউইশ ঘরে ছিল আর রিশাদ, তাসিন ঘরের সামনেই ছিল। মেহউইশকে ডেকে গাড়ির চাবিটা দিতে বলল রিশাদ। সে এই ছেলেটাকে কি করে বোঝায় ফোন, ব্যাংক কার্ড জিম্মা রেখে গাড়ি দেওয়ার মত দিন তার আসেনি। চাবি দিতেই তাসিন বলে গেল সে বন্ধুদের বাসে দিয়ে ফিরে আসবে৷ আজ রাতও সে হোটেলে থাকবে একটা রুম তাই ছাড়া হয়নি। রুম সম্পর্কিত আলোচনায় রিশাদ থাকবে না এটা রিসেপশনিস্ট এর কাজ তাই সে শুভরাত্রি জানিয়ে ঘুমাতে চলে গেল। তাসিনরাও প্রায় রাত একটা পর্যন্ত হোটেলে বসেই গল্প করল। আধঘন্টা সময় হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো তারা। যথাসময়ে বন্ধুদের বাসে তুলে দিয়ে অপেক্ষা করল তাদের বাস ছাড়ার। বাস ছাড়তেই তাসিন আবার ফিরে আসলো হোটেলে। আসতে আসতে উপভোগ করলো আঁধার ঘেরা রাত, সমুদ্রের জোলো হাওয়া আর অনুভব করলো দেহজুড়ে ভারী ক্লান্তি, মন খারাপ ভাবটা কেটে গেছে ততক্ষণে । হোটেলে ফিরে গাড়ির চাবিটা রিসেপশনে জমা দিয়ে সে রুমে ঢুকে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো৷ পেটে খিদে থাকলেও নড়েচড়ে উঠার মতও শক্তি পেল না নিজের মধ্যে। কাল সারারাত এক মুহূর্তের জন্য বিছানায় গা লাগায়নি৷ আজ দিনটাও তার তেমনই কাটলো তাই বুঝি এখন আর দেহটা টানতে পারছে না। নিমেষেই তলিয়ে গেল তাসিন গভীর ঘুমে।

রাত বাজে তিনটা অথচ সুপ্রভার চোখের ঘুম ভয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে। বড়দা ভাইকে ফোন করতেই সে খুব ভালো অভিনয় করছিল তাসিনের কথামত। কিন্তু মেজদা ভাই সাথেই ছিল তাই ফোনটা কেড়ে নিয়ে খুব করে ঝাড়ি মেরেছে। তারা সত্যিটা আগেই টের পেয়েছে কিন্তু কথা হলো সে কেন টিয়ার সাথে বের হয়েছিল। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে গেছে শিকদার বাড়ির মেয়ে ভেগেছে। মান সম্মান ধূলিসাৎ করার জন্য এরচেয়ে বেশি কিছু তো লাগে না। আর তাই মেজদা ভাই নিজেই ঠিক করেছে এক মাসের মধ্যে সুপ্রভার বিয়ে দিবে। এ ব্যাপারে বাড়ির কারো কোন কথা শুনবে না সে। ভয়টা তখনো হয়নি সুপ্রভার কিন্তু বড়দা ভাই যখন পাশ থেকে বলল একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে কিছুদিন আগে তার জন্য । বোন পড়াশোনা করছে বলে ফিরিয়ে দিয়েছিল এখন সেটাই দেখবে আবার৷ ভয়টা ঠিক এখানেই বড়দা ভাই বলে দিয়েছে মানে এটা হবেই। মেহরিন ঘুমাচ্ছিল কিন্তু সুপ্রভা বাতি জ্বালিয়ে রেখেছে বলে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়েছে মেহরিন।

“কি সমস্যা প্রভা তুমি বাতি জ্বালিয়ে রেখেছো কেন?”

“মেহরিন জানো আমার বড়দা ভাই না আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে বলেছে।”

“এটা তো ভালো কথা বাতি বন্ধ করো আমি ঘুমাবো।”

বিরক্তিতে বলল মেহরিন কিন্তু সুপ্রভা তাতে পাত্তা দিল না।সে আবার বলল, “আমি যে এখন বিয়ে করবো না কি করি বলোতো?”

“আপাতত বাতি বন্ধ করো তাতেই হবে ” বলেই মেহরিন মাথার নিচ থেকে বালিশ উঠিয়ে উপরে রাখল। বাতির আলোয় তার মাথা ধরছে খুব। সুপ্রভার তাতেও হেলদোল নেই সে অন্যমনস্ক হয়ে কথা বলতেই থাকল, “এখন যদি বিয়ে হয়ে যায় আমার প্রেম করা হবে না।”

মেহরিন জবাব দিচ্ছে না তার এখন ঘুম প্রয়োজন সকালে কাল সাতটায় ক্লাস আছে। সুপ্রভাকেও সে ঘুমানোর আগে জানিয়েছে কিন্তু মেয়েটার তাতে কিছু যায় আসে না। সুপ্রভা আরো কিছু কথা বলতেই থাকল আর এতে রাগ হলো খুব মেহরিনের। সে শোয়া থেকে উঠে প্রচণ্ড ক্রোধের সঙ্গে বলল, “আর একটা কথা যদি বলো না প্রভা তাহলে আমি সৌহার্দ্যকে তোমার নতুন ফোন নম্বর দিয়ে দিব।”

“আহ্ ভয় দেখানোর জন্য আর কিছু পাও না? আমার চিন্তা সত্যিই যদি আমার বিয়ে দিয়ে দেয় আমি পালিয়ে বিয়ে করতে পারবো না।”

“অনেক হলো প্রভা আর ভালো লাগছে না ঘুমাতে দাও প্লিজ। সকালে ক্লাস এটেন্ড করতে হবে আমার।”

মেহরিন টেনে কথাটা বলতেই সুপ্রভা তাকে অবাক করে দিয়ে বাতি বন্ধ করে দিল।

“হায় আল্লাহ! সকালে ক্লাস আছে আগে বলবে না! তোমার জন্য আমার ঘুমের দেরি হয়ে গেল ইশ।” ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো সুপ্রভা। আর অন্ধকারের ভেতরই হা করে বসে রইলো মেহরিন৷ বিড়বিড় করে বলল, “এটা কি হলো!”

সকালের রোদ বুঝি সমুদ্রের এলাকায় একটু আগেই উপস্থিতি জানান দেয়। সবে মাত্র ছয়টা বাজে অথচ এসময়েই ঘর ঝলমলে আলোর জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে শুধু মাত্র জানালার পর্দাটা একটুখানি সরেছে বলে। প্রচণ্ডরকম ভারী ঘুমটা আচমকাই চলে গেল চোখ থেকে তাসিনের। খালি পেটে শরীরে শক্তির ছিটেফোঁটাও নেই তবুও টেনে হিঁচড়ে শরীরটাকে তুলতে হলো। এখনই বেরিয়ে না পড়লে বাড়ি ফিরে আবার অফিসে যাওয়া মুশকিল হবে। বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে ঢুকতেই মনে পড়লো সে কাপড় এনেছিল যেই ব্যাগে সেটা কাল রিমনের হাতে ছিল। সে কি ব্যাগ নিয়ে গেছে! দ্রুত আবার বাথরুম থেকে বেরিয়ে হতাশ হলো। যা ভেবেছে তাই শালা বুদ্ধুরাম তার ব্যাগটাই নিয়ে গেছে। পরনের শার্ট প্যান্ট পরেই বের হতে হবে ভেবে শুধু মুখটা ধুয়ে এলো। দু হাত মাথায় চিরুনির মত চালিয়ে ঠিক করে নিল এলোমেলো চুলগুলো । পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে টাকা গুনলো। তিন হাজারই আছে আর। মুরাদের আর তার টাকাতেই সব খরচ কাটিয়ে নিয়েছে। সুমন অবশ্য টাকা দিতে চেয়েছে মুরাদ নেয়নি সে এও জানে মুরাদ সব টাকার হিসেব রেখেছে। টাকা হাতে এলেই সে তাসিনকেও ফেরত দিতে চাইবে। তার এই খাদক বন্ধুটা এদিক দিয়ে খুবই সতর্ক। কখনো কারো থেকে ততক্ষণ কোন সহযোগিতা নিবে না যতক্ষণ তার পক্ষে সম্ভব হয়। এ ব্যাপারে রিমন খুবই কঞ্জুস। হাসি পেল তাসিনের ভাবতেই তারা চারটা বন্ধু চার রকম স্বভাবের তবুও তারা একাত্ম। একজনের বিপদে অন্যজন হামলে পড়ে বিপদ নিজ ঘাড়ে নেয়। নিজেদের কথা ভাবতে ভাবতেই তাসিন দূর্বল পায়ে রিসেপশনে গিয়ে দাঁড়ায়। শুধু মাত্র আজকের রুমের বিলটাই বাকি ছিল সেটা পে করে সে রিশাদের কথা জিজ্ঞেস করলো। শায়খ জানালো রিশাদ খুব ভোরেই উঠে দৌড়াতে বেরিয়েছে। তখনই গেইট দিয়ে বাইরে চোখ গেল। লনের সামনে মেহউইশ হাটছে তার আঙ্গুল ছুঁয়ে হাঁটছে নির্জন। তাসিন সেদিকে এগোতে এগোতে খেয়াল করলো মেহউইশকে। পরনে তার হলুদ একটা সেলোয়ার-কামিজ, ওড়নাটা দিয়ে মাথায় ঘোমটা দেওয়া। সকালের মিঠা রোদ্দুর মেহউইশের গাল ছুঁয়ে দিচ্ছে অহংকারের সাথে। মিষ্টি লাগছে মেয়েটাকে দেখতে একদম যেন মোমের তৈরি কোন পুতুল৷ গোলগাল শরীরের অবস্থার জন্য তার উচ্চতাটা বেশ লাগছে। নির্জনের সাথে বুঝি কিছু বলে হাসছেও মেয়েটা তা দেখে অজান্তেই তাসিনের চোখে ভেসে উঠলো সুপ্রভার মুখ। হ্যাংলা- পাতলা ছিপছিপে দেহের গড়ন, চঞ্চল স্বভাব আর.. আর তার সাথে কোমর বেঁধে ঝগড়া করাটা। উফ, সকাল সকাল কেন সেই আজব মেয়েকে মনে করছে সে! লনের সামনে মেহউইশের মুখোমুখি হতেই রিশাদও এসে হাজির হলো।

“সুপ্রভাত।” মিষ্টি হেসে মেহউইশ বলল।

“আপনাদেরকেও, আমি চলে যাচ্ছি। আপনাদের ধন্যবাদ দেওয়ার ছিল। এতোটা সহযোগিতা, আন্তরিকতা আপনারা দিয়েছেন যা হয়ত ধন্যবাদ দিলেও কম হবে।”

“উহুম, আমরা আমাদের হোটেলের প্রতিটি গেস্টকেই এমনভাবে ট্রিট করি। তবে আপনার জন্য বিশেষ একটা কথা।”

তাসিন আগ্রহী দৃষ্টি দিল রিশাদের দিকে। রিশাদ আবার বলল, “ছেলে মেয়ে দুটো পালিয়ে এসেছে এ নিয়ে আপনার এলাকায় ঝামেলা হচ্ছে। আপনার মামা আমাকে বারবার করে বলে দিয়েছে আপনাকে বলার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ না করতে। কিন্তু আমি বলব বন্ধুদের বিপদে এগিয়ে আসাই প্রকৃত বন্ধুত্ব। তবে অবশ্যই বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে তাদের বিপদ কাটিয়ে নিজেকেও বিপদমুক্ত রাখতে হবে।”

“বুঝতে পেরেছি ভাইয়া। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”

রিশাদ, মেহউইশের কাছে বিদায় নিয়ে তাসিন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। বাড়ি বলতে মামার বাড়ি যেখানে সে থাকে। বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই বড় মামার কাছে ঝাড়ি খেল। তা অবশ্য গায়ে মাখলো না অন্তত এক সপ্তাহ এই ঝাড়ি চলবেই এবার তা সে জানে। বড় মামীর সামনে গিয়ে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল, “রাত থেকে কিছু খাইনি মামী।”

ব্যস মামীও গলে মোম হয়ে দ্রুত পরোটা বানিয়ে খাইয়ে দিল। তাসিনের মা আর বড় মামা দুজনই এ নিয়ে প্রচণ্ড রাগ দেখায় তার মামীর ওপর। তিনি প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েকে প্রয়োজনের অধিক আদর আহ্লাদ করেন। তাসিনের বোন মাইশাও এজন্য প্রায়ই বলে সে মেট্রিক পরীক্ষার পর বড় মামীর কাছে চলে আসবে। নাশতা, গোসল সব শেষ করতেই প্রায় নয়টা বেজে গেল। আজও অফিসে লেট হবে তা আর বুঝতে বাকি নেই। মামার কাছে গাড়ির চাবি চাইলেও পাওয়া যাবে না তা নিশ্চিত ভেবে আজও দুলাভাইয়ের কাছে গেল। ভাগ্য এ পর্যায়েও তাসিনের সুপ্রসন্ন দুলাভাই এখনই বের হচ্ছেন। বলার আগেই দুলাভাই তাকে গাড়িতে নিমন্ত্রণ জানালো। অফিসে পৌঁছুতে পাক্কা পনেরো মিনিট লেট কিন্তু বস তো আজ অফিসেই আসেনি। আরাম করে নিজের ডেস্কে বসে ফাইলপত্র বের করল তাসিন। দেড়ঘন্টা একটানা কাজ করে কফির জন্য ক্যান্টিনে গিয়ে বসল। তখনো এগারোটা বাজেনি তাই অফিসের ক্যান্টিন একেবারেই ফাঁকা বলা যায়। এককাপ কফির অর্ডার দিয়ে ফেসবুক স্ক্রল করছিল সে। ফোনটা বেজে উঠল তার হঠাৎ । স্ক্রীণে ভেসে উঠলো, “তুফান” নামটা।

চলবে

#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(১১)

কোট কাচারির যুগেও গ্রামে সালিশ বসেছে। দয়াগঞ্জ এর মুরুব্বিরা সব নয়া গঞ্জে এসে উপস্থিত হয়েছে। এখন আর দোররা মারার যুগ নেই তবুও কেউ কেউ ওৎ পেতে আছে মারপিটের একটা পর্ব তৈরি করতে। এমন অবশ্য আসামী, বাদী নয় আশপাশের মানুষরাই সুযোগ খুঁজছে। টিয়ার পরিবার হিংস্র রাগ নিয়ে আসলেও তারা মেয়েপক্ষ জেনে বুঝে মেয়ে ফেরত নিয়ে ঝামেলা নিজেদের জন্য বাড়াবে না। আর মুরাদের পরিবারেও পুরুষ মুরুব্বি বলতে কেউ নেই। আত্মীয় স্বজনরা আছে কিন্তু তারা কেউ ঝামেলায় এগিয়ে আসতে চায়নি। মুরাদের মা বিধবা মানুষ একা কার কার সাথে তর্কে যাবেন তাই মাথা নিচু করে পুরুষদের চেয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। আসামীর মত শুধু মুরাদ নয় রিমন আর সুমনও দাঁড়িয়ে আছে সবার সামনে। টিয়াকে রাখা হয়েছে তার পরিবারের মানুষদের সাথে। মুরাদ একটুও ঘাবড়ায়নি কিন্তু তার ভয় মাকে নিয়ে। কোন প্রকার ঝক্কি সামলাতে গিয়ে যদি মা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে! এলাকায় সালিস শুধু মুরুব্বিরা চালাবে তা যেন কিছুটা বিপদের সংকেত দিচ্ছিলো সুমনকে। সে আলগোছে ফোন তুলে কল দিল তাসিনকে। মাত্রই লাঞ্চ করে একটু রেস্ট নিচ্ছিলো সে। সুমনের ফোনকল তাকে আন্দাজেই যেন রেড সিগন্যাল দিচ্ছিলো। সে তটস্থ হয়ে ফোন তুলতেই শুনতে পেল অনেকের গলার স্বর একসাথে। সুমনের কানে ওয়ারলেস ব্লুটুথ থাকায় সে সহজেই কল দিতে পেরেছে কিন্তু মুশকিল হলো তাসিনের কথা শুনতে পারলেও তার কথা বলাটা বিপদজনক। কারো চোখে না পড়ে যায় তাহলে আবার হয়ত তাসিনও ফেসে যাবে। ফোনের এক প্রান্ত থেকে তাসিন বলে চলছে, “কোন ঝামেলা হয়েছে? এত হৈ চৈ কেন শোনা যাচ্ছে?”

সুমন যথেষ্ট বুদ্ধিমান সে হাই তোলার ভাণ করে দু হাতে মুখ ঢেকে অতি ধীর স্বরে বলল, “সালিশ বসেছে এলাকায়। আর এখানে টিয়ার চেয়ে প্রভা মেয়েটার বাড়ির লোকই বেশি চড়াও হয়ে আছে।”

সুমনের ফিসফিসে আওয়াজ আর তার চারপাশের হৈ চৈ মিলিয়ে কথা ঠিকঠাক বুঝতে না পেরে তাসিন কল কেটে দিল। তড়িঘড়ি পটলের নাম্বার ডায়াল করতেই পটল ফোন তুলে বলল, “বস আপনার বন্ধু গো আজকা হেব্বি সাইজ করবো।”

“কি হয়েছে বল তো!”

পটল সবিস্তারে সবটা বলতেই মাথায় হাত দিল তাসিন। কি করবে কি করা যায় অনেক ভেবেও যখন কূল কিনারা পেল না তখনই পাশের ডেস্কের হাবিব চাচা তাসিনকে ডাকলেন, “কি বেটা মুখ গোমড়া কেন এখনও তো লাঞ্চ আওয়ার শেষ হয়নি।”

লোকটা বরাবরই তাসিনকে কামচোর বলে রসিকতা করে। তাই এমন করে বলল যেন লাঞ্চ আওয়ার শেষ হতেই কাজ শুরু হবে বলে তাসিন মুখ গোমড়া করে আছে। হাবিব চাচা অফিসের খুব পুরাতন লোক তবুও তাসিনের সম পদেই আছেন। মাঝেমধ্যে তাসিনের সাথে নিজের অনেক সমস্যার কথাও খোলাখুলি আলোচনা করেন৷ সেই ভরসাতেই হয়ত তাসিনও নিজের কথা বলল৷ বলে দিল এলাকায় কি হচ্ছে বা কি হয়েছিল গত তিনদিনে। সব শুনে হাবিব চাচা বললেন, “এটা কোন সমস্যাই না যদি তোমরা থানা এলাকায় হয়ে থাকো।”

ভর দুপুরে রোদে বসে সালিশ কারো মনঃপুত হওয়ার নয়। মন মেজাজ এমনিতেই তিরিক্ষি হয়ে থাকবে। সালিশ বসেছিল মুরাদদের বাড়ির উঠোনে। কিন্তু সেখানে গরমে প্রায় অতিষ্ঠ সবাই । সালিশ স্থগিত করতে চাইল অনেকে কিন্তু হঠাৎ করেই তাসিনদের এলাকার মেম্বার বলল, এক কাম করলে হয় আফছারের বাড়ির বাগানে বসি আমরা। গাছের তলায় রোদ নেই আবার বাতাস খুব। এই বাড়ির পরের বাড়িই আফছারের কি বলো মীর সাহেব!”

আফছারও সালিশে উপস্থিত ছিল সবার সাথে। মুখের ওপর না বলাটা ভালো দেখায় না তাই হাসি হাসি মুখ করে বলল, “কি বলবো আমি, সেখানে বসলে মন্দ হয় না।” বিপদে পড়ে হ্যাঁ বললেও মনে মনে ভয় পাচ্ছে স্ত্রীকে নিয়ে। মেয়ে বড় হচ্ছে বলে মাছুমা বাড়িতে বাইরের কোন পুরুষ আসতে দেয়না। আফছারের বিভিন্ন কাজেও লোকজন আসলে সে সবাইকে নিয়ে তার কাজের জায়গায় বসে। আর এখন কিনা দুই এলাকার কতশত মানুষ গিয়ে উঠবে তার বাড়ি! যদিও সমস্যা নেই ঘরের পেছন দিকে বিশাল বাগান। তবুও বউয়ের যেই নাকের ডগায় রাগ! ভয়ে ভয়েই সে বাড়ি গিয়ে মাছুমাকে বলল কথাটা। আশ্চর্যের বিষয় সে বলার আগেই বাড়িতে খবর চলে এসেছে বিস্তারিত। বুঝতে বাকি নেই কাজটা পটলের কিন্তু মাছুমা ঠান্ডা মাথায় আছে তা খুব ভাবাচ্ছে তাকে। তারওপর বাইরের ঘরে থাকা কয়েকটা চেয়ার আর কাঠের টুল, বেঞ্চি সব বের করতে বলছে পটলকে। মেয়ে এখনো স্কুল থেকে ফেরেনি বাড়িতে। নুড়ি আর পটল মিলে দেখা গেল বেঞ্চ, টুল সব বাগানে পেতে এসেছে। কিছু সময়ের মধ্যে মানুষজনও এসে গেল। মাছুমা কি মনে করে আবার বড় এক পাতিলে চায়ের জন্য পানি বসিয়েছে চুলায়। মতিগতি এত শান্ত যা ভাবাচ্ছে আফছারকে। একটু পরই সবাই এসে উপস্থিত হলো তাসিনদের আম বাগানে। জৈষ্ঠের রোদ্দুরে ভেজা বাতাস ঘামে ভেজা শরীরে সবারই আরাম লাগছে। সালিশের জায়গা পরিবর্তনের সময়টুকুতে সুমন আর রিমন কথা বলেছে তাসিনের সাথে। সে বলল, “আর চিন্তা করতে হবে না আমি পুলিশে ফোন করে দিয়েছি হয়ত এতক্ষণে এলাকায় পৌঁছেও গেছে। শিকদার ফিকদার কোন বাড়ির মানুষই কিচ্ছু করতে পারবে না। মুরাদ আর টিয়া দুজনই প্রাপ্ত বয়স্ক কারো রাইট নেই তাদের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়ার। এখন শুধু কথা হলো মেয়ে পরিবারের কারণে মত না পাল্টে ফেলে। যদিও বিয়ে হয়ে গেছে এখন চিন্তার প্রয়োজন নেই বলেই জানি।”

তাসিনের কথায় আশ্বস্ত হলো বন্ধুরা কিছুটা। আবার সালিশি কার্যক্রম শুরু হতেই দেখা গেল মুরুব্বিরা খুব বেশি না ঘাটিয়ে সহজ প্রশ্ন করলো টিয়াকে সে কি স্বইচ্ছায় মুরাদের সাথে বেরিয়ে এসেছিল! টিয়া সত্যিটা বলল সে ভালোবাসে মুরাদকে৷ আর পরিবার তাকে তার মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দিতে চেয়েছে। ভরা মজলিশে মেয়ের মুখে এমন কথা নিঃসন্দেহে একটা পরিবারের জন্য অসম্মানজনক। এতে মেয়েটা হয়ত তার পছন্দের মানুষটাকে পেয়ে যাবে, নিজের ইচ্ছেটার ওপর সে স্বত্বাধিকারী হয়ে গেলেও সে হারিয়ে ফেলবে তার আজন্মকালের আপন, রক্তের সম্পর্কগুলোকে। টিয়ার সাথেও তাই হলো। টিয়ার মুখনিঃসৃত কথা শুনতেই সকলের সামনে টিয়ার বাবা তাকে কষে এক চড় মারলো এবং উপস্থিত সকলের দিকে দু হাত জোড় করে বললেন, “আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। আমার আর কোন কিছু বলার বা করার নেই।”

গমগমে একটা সালিশে ঝুপ করেই যেন নিস্তব্ধতা নেমে এলো কিছু সময়ের জন্য। দুই এলাকারই গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছিল তারাও যেন ব্যথিত হলো কিছুটা। মেম্বার সাহেব যখন শেষ বারের মত মুরাদকে কিছু বলতে যাবেন ঠিক তখনই মীর বাড়ির গেইটে পুলিশ এসে হাজির হলো। এতে সবাই আশ্চর্য হলো বেশ। কারণ কেউই পুলিশ ডাকবে বলে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি তবুও পুলিশ এলো কি করে! পুলিশের এস আই নিজেই এসেছেন সাথে একজন কন্সটেবল৷ মেম্বার নিজেই এগিয়ে গিয়ে কথা বলে নিয়ে আসলেন বিচারের জায়গায়। সুপ্রভার বড়দা ভাই সেখানেই ছিল। সে খেয়াল করলো তার আপন মামাতো ভাই এসেছে। সে জানতো তাদের থানায় নতুন এস আই এসেছে কিন্তু সেটা যে তারই আত্মীয় সেটা জানত না। সোহরাবকে দেখেই এস আই নিজেই সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরলো ভাইকে। এস আই এহসান এই এলাকায় এখনো কেউ চেনে না খুব একটা। সে সবে মাত্র প্রমোশন পেয়ে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে সপ্তাহখানেক আগে। মূলত ফোন পেয়ে সে ইচ্ছে করেই এসেছে এই এলাকায়। তার ফুপুর বাড়ি পাশের এলাকায় তাই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে এই ফাঁকে একবার ফুপুকে দেখতে যাবে ভেবেছিল। কিন্তু এখানে এসে সব ঘটনা শুনে অবাক। এই সালিশে তার ফুপাতো ভাইরাও এসেছে এ এলাকার ছেলেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। এবং শেষ পর্যন্ত জানা গেল পালিয়ে যাওয়া কাপলের সাথে তার পাগল ছোট বোনটাও ছিল। এহসান বুঝলো সমস্যা এখানে অলরেডি মিটে গেছে এবং তার ভাইদের কথা শুনে বুঝলো এখন ঝামেলা তৈরি করবে তারাই৷ তাই খুব ঠান্ডা মাথায় সোহরাবকে একটু আলাদা নিয়ে বলল, “ভাইয়া এখানে এখন প্রভাকে নিয়ে কথা তোলা মানে নিজেরাই নিজেদের মেয়েকে অসম্মান করা৷ সবাই কিন্তু জানে পালিয়ে গেছে ওই দুটো ছেলে মেয়ে। প্রভা কারো সাথে কোথাও যায়নি এটা সবাই এমনিতেই বুঝে নেবে। কিন্তু ঘাটাঘাটি করলে ব্যপারটা ঘোলা হতে পারে।”

এহসান যা বলল তা যে সোহরাব ভাবেনি তা নয়। বরং সোহরাবও চাচ্ছিল প্রভাকে নিয়ে কথা না তুলতে। কিন্তু সেজো ভাই মেহরাবটা বড্ড গরম মাথার। তার এক কথা এই এলাকার ছেলেগুলো ফুসলেই প্রভাকে বাড়ি থেকে বের করিয়েছে। তাই আর যাইহোক সে এমন কিছু করবে যেন ছেলেগুলোকে বেধড়ক মারের একটা সুযোগ পায়। এহসানের কথার পর সত্যিই আর কোন কথা তোলেনি সোহরাব৷ মজলিশ ভেঙে যেতেই একে একে সবাই বেরিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু কি মনে করে আফছার পুলিশ দুজনকেই চায়ের জন্য আমন্ত্রণ জানালো। এহসান বসতে চাইলো না সে সোহরাবকে দেখিয়ে বলল, “আঙ্কেল আমি ভাইয়ার সাথে যাবো। আপনাদের এলাকায় এখন আসা যাওয়া হবেই তাই সময় সুযোগ করে আসবো একদিন।”
চলে গেল এহসান তার ফুপাতো ভাইদের সাথেই৷ বাড়ি খালি হতেই আফছার ভীরু পায়ে স্ত্রীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। স্মিত হেসে বললেন, “তুমি কি রাগ কইরা আছো?”

“রাগ করবো কেন?” একদম স্বাভাবিক স্বরে বলল মাছুমা৷ এতে আরো আশ্চর্য হয়ে গেল আফছার।

“এই যে বাড়িতে মজলিশ বসতে দিছি তাতে রাগ করো নাই?”

“রাগ করার কি আছে? তাসিন বলেছে তাই রাগ করার প্রশ্নই আসে না। আর আমার ছেলে জড়িত এ ঝামেলায় তাই আমি নিজেই খুশি হয়েছি এখানে বসবে শুনে৷ অন্তত নিজ কানে শুনতে পাবো আমার ছেলের নাম উঠে কিনা। শোকর ওপরওয়ালার ছেলেপেলে গুলোর কারোরই নাম আসেনি।”

“ওহ এইজন্যই কই এহনও কোন কথা শোনাও নাই ক্যা! পোলারই সব দাম তোমার কাছে পোলার বাপ তো বাণের জলে ভাইসা আসছে।”

অভিমানী হয়ে উঠেছে আফছারের কণ্ঠস্বর। সে এমনই খুব সাদাসিধা। মাছুমা শিক্ষিতা আবার অভিজাত পরিবারের হওয়ায় কিনা কে জানে আফছারের নজরে সারাজীবন সে এক চাঁদের ন্যায়। এমন চাঁদ যার কাছে যাওয়া যায় তবুও সে অধরা। তার মন সংকীর্ণ এ ব্যাপারে মাছুমা তাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে, ভালো মেয়ে বলে সংসারও করছে অশিক্ষিত আফছারের সাথে কিন্তু মন থেকে হয়ত কখনো সুখী হয়নি৷ আফছারের এমন আরো বহু ভাবনা আছে মাছুমাকে নিয়ে৷ কিন্তু তবুও দিন শেষে আফছার খুব সুখী এই ভেবে এই বিধুকন্যা তার সন্তানদের মা, তার অর্ধাঙ্গিনী।

“অসংখ্য ধন্যবাদ হাবিব চাচা। আপনি বুদ্ধি না দিলে পুলিশের ব্যপারটা আমার মাথায় আসতো না।”

“ধুর মিয়া, ধন্যবাদ রাখো। এইসব মামলা একসময় আমরাও পার করে আসছি৷ তোমার চাচীরে আমি এমনেই পালাইয়া নিয়ে বিয়ে করছি। তোমরা তো অল্পে বেঁচে গেলা। আমার কপাল মন্দ ছিল নিজেও মাইর খাইছি তোমার চাচীর ভাইদের হাতে সাথে আমার দুই দোস্ত আর আমার চাচাও মাইর খাইছে৷”

“কি কন চাচা! আপনি এত ডেয়ারিং ছিলেন?” অবিশ্বাস্য সুরে বলল তাসিন।

“এত অবাক হওয়ার কিছু নাই বেটা৷ মরণ প্রেম যারে ধরে সে এসব কিছুরই তোয়াক্কা করে না।”

তাসিন অবাক হয়ে শুনছিল হাবিব চাচার কথা। কিন্তু ডেস্কের ওপর ফোনটা বেজে ওঠায় তার ধ্যান হটলো। একটু ঝুঁকে তাকাতেই আবারও দেখলো “তুফান” নামটা জ্বলজ্বল করছে। সকালেও টি টাইমে একবার কল এসেছিল। তখন সে ধরতে ধরতে কেটে গেল। পুনরায় কল করার পর আর ধরেনি৷ কিন্তু এখন আবার কল করছে তারমানে কি জরুরি কোন ব্যাপার! তাসিন ফোনটা রিসিভ করে উঠলো বসা থেকে।

“চাচা জরুরি কল। শুনে আসি।”

ফোন কানে হ্যালো বলতে বলতেই ডেস্ক ছাড়লো তাসিন। ওপাশ থেকে উদগ্রীব কণ্ঠে সুপ্রভা জানতে চাইলো, “কি হলো?”

তাসিন বুঝলো না কথার অর্থ সেও প্রশ্ন করলো, “কি হবে?”

“সেটাই তো জানতে চাচ্ছি?”

“আমি কি করে বলবো?” তাসিন সত্যিই বুঝলো না সুপ্রভার কথা। বিরক্ত হয়ে সুপ্রভা বলল, “টিয়ারা বাড়ি ফিরে যায়নি?”

“হ্যাঁ, সকালেই পৌঁছে গেছে।”

“তারপর কি হলো? ”

“সালিশ বসেছে। তুমি ফোন করোনি তোমার বান্ধবীকে?”

“তাকে করতে পারলে কি আপনাকে জিজ্ঞেস করতাম!”

“ওহ, সালিশ বসেছে। দু পরিবারে তেমন ঝামেলা না হলেও টিয়ার পরিবার তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷ তবে হ্যাঁ ঝামেলা বাঁধানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল তোমার ভিলেন ভাইয়েরা।”

“কিহ!” কিছুটা চেঁচিয়ে বলেও আবার থেমে গেল সুপ্রভা। সে একটু আগেই ক্লাস করে হোস্টেলে ঢুকেছে। সিঁড়িতে তার পাশেই মেহরিন। সে আবারও ক্ষীণ স্বরে বলল, “আমার ভাইদের নিয়ে বাজে কথা বলবেন না।”

“কি বলেছে প্রভা! আমার মতোই তিনিও গুন্ডা বলেছে নিশ্চয়ই! ভুল কিছু না কিন্তু। তোমার ভাইয়েরা দেখতে গুন্ডা টাইপই।” কথাটা বলে মেহরিন দ্রুত পায়ে সুপ্রভার পাশ কেটে চলে গেল৷ ওপাশ থেকে মেহরিনের কথাটা আবার স্পষ্টই শুনেছে তাসিন। সে হা হা করে হেসে উঠেছে আর রাগে তৎক্ষনাৎ ফোন কেটে দিয়েছে সুপ্রভা। বজ্জাত, বদ আর ফালতু লোক এক নাম্বারের। মনে মনে এগুলোই আওড়াচ্ছে সুপ্রভা আর মেহরিনকে তো সে রাতে ঘুমানোর সময়ই দেখে নেবে৷

চলবে