#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
২২.
‘আসবো ইয়াং ম্যান?’ পুলকিত হাসি দিয়ে বলল রুহুল হক।
মাথা উঠিয়ে সামনের পানে দৃষ্টি আবদ্ধ করে আদর ব্যস্ত কণ্ঠে বলল, ‘আসুন আসুন। শরীর স্বাস্থ্য ভালো তো?’
চেয়ার টেনে বসতে বসতে রুহুল হক জবাব দেন,
‘একদম দারুন! তা তোমাকে কাল রাতে ফোন করেছিলাম আমার ভাগ্নি…’
‘জি মনে আছে। তা পেসেন্ট কোথায়?’
‘পেসেন্ট ওইতো একটা ফোন এলো, বলল মামাজান আপনি যান আমি আসছি। আমার খুব আদরের বড় ভাগ্নি বুঝলে? খুব বুজুর্গ, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী, বিচক্ষণীয়। ভালো করে মাথার চিকিৎসাটা করে দিও তো ওর ইয়াং ম্যান।’
আদর হাসলো। চেম্বারের দরজায় খটখট শব্দ হলো। দু’একবার শব্দ হওয়ার পর দরজাটা টেনে খুলে ঢুকলো কেউ। চেম্বারের এক কোণায় থাকা জানালা মাড়িয়ে ঘরে ঢুকে পরলো ঠান্ডা হাওয়া। আগুন্তক নারীটির চুল উড়ে অবলীলায় গন্ধ মিশে গেলো হাওয়ায়। কালো টেবিলটার উপর থেকে কয়েকটা পাতা উড়ে চলে গেলো দূরে কোথাও। চারিপাশ স্তব্ধ অনুত্তর নিঃশব্দ। পেশিতে টান টান উত্তেজনা। দীর্ঘ একমাস পর চেনা মুখটির দর্শন। অনুভূতি স্থিত হয়ে রইল রক্তে। আদর নিজের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারটা থেকে উঠে দাড়িয়ে পরেছিলো অনেক আগে।
টিকলি এলোমেলো চোখে ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত, চমকানো হৃদয়ে তাকিয়ে দেখছিলো। আদর বিহীন অনুর্বর বুক-জমিনে বন্যার পানিতে পলি মাটি জমলো। উর্বর হলো ভূ-খণ্ড। এরপর শুধুই চলল নিস্তব্ধতা। চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকা। এতোদিন দেখা না হওয়ার অপরাধে দিনগুলোর প্রতি অভিমানের ছোঁয়া। চাপা নিঃসৃত নিঃশ্বাসের ভারে বুক উত্তাপ। রুহুল হকের কথায় ঘোর ভাঙলো দুজনার। আদর ছিটকে বসে পরলো। এরপর উদভ্রান্তের মতো তাকিয়ে রইল টিকলির ওই ফুলের পাপড়ির ন্যায় বদনখানার দিকে। টিকলি দুরুদুরু বুকে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে বসলো। রুহুল হক বললেন,
‘তোমার এই রোগী প্রচুর মাত্রায় বিজি বুঝলে? সারাক্ষণ সে ফোনের উপরই থাকে।’
টিকলি তার এতো দিনের… এতো বছরের ব্যক্তিত্ব ভুলে বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলো আদরের দিকে। টিকলিকে দেখে আদরের সন্তুষ্ট শীতল চোখ জোড়া আবার অসন্তুষ্ট হয়ে উঠলো। ভ্রু কুচকে তাকালো। প্রশ্ন করতে গিয়েও করলো না। যতই হোক পেসেন্টের সাথে তো কেউ আর গালগল্প করবে না। যথাযথ গাম্ভীর্যপূর্ণ গলায় বলল,
‘কি সমস্যা?’
কোনো উত্তর পাওয়া গেলো না। রুহুল হক এবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘টিকলি বলো তোমার কি কি সমস্যা?’ তবুও নো রেসপন্স। টিকলির অমনোযোগীতায় টিকলির দিকে চোখ তুলে আবারো তাকালো আদর। এখনো টিকলির দৃষ্টি তার উপর সীমাবদ্ধ। সেই হৃদয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, আচ্ছন্ন দৃষ্টির দিকে তাকাতেই আদর দিশেহারা হয়ে গেলো। মনেতে বাজতে থাকল একটাই প্রশ্ন,
‘এতো সুন্দর মেয়েটা কেনো সারাদিন ফোন কলে বিজি থাকে?’
মনের প্রশ্নে আদর হেসে জবাব দিলো, ‘আরে সুন্দর দেখেই তো ফোন কলে বিজি থাকে।’
আদর চোখ সরিয়ে নিয়ে নিজে নিজেই জিজ্ঞেস করলো, ‘কি? মাথা ব্যথা?’
টিকলি সম্ভিত ফিরলো। ঘোরমাতাল রাজ্য থেকে বেরিয়ে এসে মাথা নিচু করে মৃদু নাড়ালো। আদর কাগজে কিছু লিখতে লিখতে বলল,
‘কোথায় কোথায় ব্যথা?’
‘হৃদয়ে, মনে, বুকে।’
আদর থতমত খেয়ে তাকালো। রুহুল হক অবাক চোখে বললেন,
‘কি বলছো এসব?’
দাঁত দিয়ে জিব কামড়ে ধরে চোখ খিচিয়ে বন্ধ করলো টিকলি। কেশে উঠলো কয়েকবার। মিথ্যা কথা সাজিয়েও বলতে পারলো না। তবুও অনেক কষ্টে কাঁপাকাঁপি করে বলল,
‘মুভির ডায়লগ। সকালে মুভি দেখেছিলাম তো। সেটাই মাথায় ঘুরছে।’
‘এমন মুভি আছে?’ নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো রুহুল হক। তৎক্ষণাৎ আদর বলল,
‘মাথার কোন সাইডে ব্যথা হয়? কখন হয়? সারাক্ষণ?’
বেশ চিন্তিত শোনা গেলো আদরের গলা। টিকলি বলল,
‘নাহ সারাক্ষণ না। যখন ঠান্ডা লাগে তখন বেশি ব্যথা হয়। কপালের দিকটা। নাকের আশেপাশের জায়গাগুলো আর চিপের জায়গাগুলোতে জ্বালাপোড়া।’
আদর লিখতে লিখতেই জবাব দিলো, ‘কয়েকটা টেস্ট করিয়ে আনুন। ব্লাড টেস্ট, ইউরিন টেস্ট, সিটি স্ক্যান আর এক্স-রে। সিটি স্ক্যান এবং এক্স-রে এর মধ্যে একটা করালেও চলবে।’
রুহুল হক দাড়াতে দাড়াতে বললেন, ‘নাহ, দুটোই করাই।’
‘আচ্ছা।’
ঘড়ি দেখে নিয়ে রুহুল হক বললেন, ‘এখন তো লাঞ্চ টাইম হয়েগেছে। অলমোস্ট দুটো বাজে। লাঞ্চ করবে না?’
‘জি করবো।’
‘তাহলে চলো আজ লাঞ্চটা একসাথেই করি। টেস্ট গুলো করিয়ে পাশের রেসটুরেন্টে বসছি। আমি তোমাকে ফোন দিবো।’
আদর হালকা হেসে বলল,
‘আচ্ছা।’
,
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাকজমকপূর্ণ রেসটুরেন্টের বড় সোফাটায় বসে ছিলো টিকলি এবং রুহুল হক। অপরপাশে বসেছে আদর। ওয়েটারকে অর্ডার দেওয়া শেষ হতেই রুহুল হক কপালে কিছু ভাঁজ ফেলে বললেন,
‘রিপোর্ট পেতে তো অনেক সময় লাগবে তাই না? একটু আগে করা যায়না। মানে টাকা-পয়সা যাই লাগুক রিপোর্টগুলো আর্জেন্ট পেলে ভালো হতো।’
আদর সৌজন্যে হেসে বলল, ‘আমি আসার সময় কল করে এসেছি। ওরা তাড়াতাড়ি করে দিবে। এক ঘণ্টার সময় চেয়েছে।’
‘ওহ অনেক ধন্যবাদ ইয়াং ম্যান।’
আদর মাথা ঝাঁকিয়ে মৃদু হাসলো। রুহুল হক আবারো কিছু বলতে চাইলেন। পকেটে ফোন বাজার বাজখাঁই শব্দে ভ্রু কুচকে থেমে গেলেন। এক্সকিউজ মি বলে সে উঠে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করলেন।
এদিকে জড়তা-সংকোচে কাটা হয়ে বসে রইল টিকলি। এদিক ওদিক তাকিয়ে আড়চোখে একবার টিকলির দিকে তাকিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসলো আদর। চোখ ঘুরতে লাগলো অপরূপ মহারানীর সারামুখ জুড়ে।
আদরের চোখের নিশানা যে তার উপর টিকলি তা ঠিক বুঝতে পেরেছে। অস্বস্থিতে জড়োসড়ো হয়ে বসতেই তার মনে হলো কথা বলা দরকার। যেই আদরের সাথে কথা বলার জন্য মুখ খুলল ওমনি খেয়াল করলো তার গলা দিয়ে আওয়াজ আসছে না। চোখ মেলে তাকানো যাচ্ছে না সামনের মানুষটার দিকে। দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষার পর অপ্রত্যাশিত ভাবে মানুষটাকে পাওয়ার পর গলার স্বর বন্ধ হয়ে গেছে। টিকলির ভারী অসহায় লাগলো নিজেকে। অনেক কথা বলার বাকি। অনেক কিছু বুঝানো বাকি। কত কিছুই না ভেবে রেখেছিলো! যেদিন আদরের সাথে দেখা হবে সেদিন এই করবে সেই করবে। অথচ আজ গলার স্বরটাই তার সাথে বেঈমানী করছে।
আদর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো টিকলিকে। অক্ষিপট ঘুরছিলো টিকলির টিকলো নাকে, চশমায় ঘেরা চোখে, ছোট ছোট গর্তের অধিকারী গালের খাঁজে, গোলাপের পাপড়ির ন্যায় মসৃণ ঠোঁটের ভাঁজে। স্কাপে ঢেকে যাওয়া টিকলির অর্ধাংশ ঘন কালো রেশমি কেশগুলো দেখতে আদরের অযথাই ভালো লাগে। আদরের দেখার মাঝেই হঠাৎ টিকলি অপ্রকাশিত চোখে তাকালো। আদর সেখানেই স্থবির হয়ে রইল। কথা বলার ভাষা খুঁজে পেলো না। এতোক্ষণ মনে মনে কথা সাজালেও এই মুহুর্তে এসে সব এলোমেলো হয়ে গেলো। ইশশ…কি অসহায় দুটি চোখ! স্বপ্নমুখী সমুদ্রবিলাশী চোখ গুলো খালি দেখার আদরের ভারী ইচ্ছা। চশমার আড়ালে চোখ দুটো পড়তে পারেনা আদর। কবে এই মেয়েটার খালি চোখ দেখবে? কবে পড়তে পারবে?
আদরের ভাবনার ঘোর কাটলো রুহুল হকের কথায়, ‘সরি ইয়াং ম্যান।’
আদর হকচকিয়ে গিয়েও সামলে নিলো নিজেকে। ভদ্রতার সহিত বলল,
‘ইটস ওকে মি.রুহুল হক।’
‘আচ্ছা এবার তো আমাকে আংকেল চাচা মামা কিছু ডাকতে পারো নাকি? আমাদের মধ্যে তো শুধু ডাক্তার পেসেন্ট সম্পর্ক না। ডাক্তার পেসেন্টের ফর্মালিটিপূর্ণ সম্পর্ক হলে কি আর এই রেসটুরেন্টে বসে একসাথে লাঞ্চ করতাম?’
লোকটা বড্ড ঠোঁটকাটা। আদর বড্ড লজ্জিত এবং অপমানিত বোধ করলো। সত্যি দোষটা তার। এতো বড় মানুষটার নাম ধরে ডাকা একদম উচিত হয়নি। আস্তে করে আদর বলল,
‘সরি মামা।’
আদরের কথায় টিকলি অবাক হয়ে তাকালো। আদরও থতমত খেয়ে গেলো। চোরাচোখে তাকালো রুহুল হকের দিকে। খাবার এসে গেছে। প্লেট এগিয়ে দিতে দিতে হাসি হাসি মুখ করে রুহুল হক বললেন,
‘মামাই ডেকো। মামা ডাকটা আমার ভীষণ পছন্দ। আমি ভাবতাম একমাত্র আমার ভাগ্নিদের মুখেই মামা ডাকটা অতুলনীয় লাগে। কি সুন্দর করে ওরা ডাকে মামাজান! কিন্তু তোমার মুখে ডাকটা শুনে ভুল ভাঙলো। বেশ ভালো লাগলো।’
_____________________________
রিপোর্টগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো আদর। কিছুক্ষণ দেখার পর ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো,
‘আপনার ঠান্ডার সমস্যা আছে? এলার্জি?’
মাথা নিচু করেই টিকলি জবাব দেয়, ‘জি।’
‘অনেক সমস্যা? হঠাৎ সর্দি লাগে নাকি মাঝে মাঝেই?’
‘জি। প্রায় প্রতিদিনই আমার ঠান্ডা লাগে। ঠান্ডা জাতীয় কিছু খেলে কিংবা অসময়ে গোসল করলে ধুলোবালিতে, এলার্জি জাতীয় কিছু খেলে। ঠান্ডার সাথে অসহ্য মাথা ব্যথা। আগে খুব কম হতো। ইদানীং মাথা ব্যথা বেড়েছে।’
‘কিন্তু নিঝুম….. ‘ আদর থেমে গেলো। টিকলি সন্তুষ্ট চোখে তাকালো আদরের দিকে। যাক, মানুষটা তবে তাকে ভুলেনি। মনে আছে সব।
রুহুল হক বললেন, ‘সিরিয়াস কিছু?’
চেয়ারে শরীর ঠেসে দিয়ে হাতের দু’আঙ্গুলে কলম ঘোরাতে ঘোরাতে আদর জবাব দিলো,
‘নাহ বেশি সমস্যা হয়নি। আসলে উনার সাইনোসাইটিস এর প্রবলেম ধরা পরেছে।’
রুহুল হক একটু ভীত গলায় বললেন, ‘ঠান্ডা থেকেই?’
‘নাহ দীর্ঘমেয়াদি হাঁচি কাশি কিংবা নাক বন্ধ থাকলেই যে সাইনোসাইটিস হয় এমন কোনো কারণ নেই। তবে ঠান্ডার কারণে মাথা ব্যথা করবেই এবং নাকের আশেপাশে ব্যথা করবে। মুখের হাড়ের ভেতরে চারজোড়া যে ফাঁপা বায়ুপূর্ণ জায়গা থাকে সেগুলোকে সাইনাস বলে। আর এই সাইনাসের মধ্যে জ্বালা পোড়া শুরু হলে তাকে সাইনোসাইটিস বলে। সাইনাস প্রদাহ হলেই মাথা ব্যথা এবং ঘন ঘন সর্দি লাগে।’
‘ভালো হবার উপায়?’
‘বলতে গেলে মাইগ্রেন এর ম্যথা সাইনোসাইটিস এর ব্যথা যাদের আছে তাদের নিজ থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। নিয়মিত ওষুধ খেলে আস্তে আস্তে কমে যাবে। তবে অনেকের একবারে উপশম নাও হতে পারে তবে কমে যায়।’
আদর প্রেসক্রিপশন লিখতে বসলো। রুহুল হকের আবার ফোন এলো। রুহুল হক বললেন,
‘সরি ইয়াং ম্যান। আসলে আমার মেয়ে রুমকি পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে তাই বারবার ওর মা ফোন করছে। এক্সকিউজ মি। প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে এসো টিকলি।’
টিকলি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ মামাজানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। রুমকি পরে গেছে। ব্যথা পেয়েছে। অথচ মামার কোনো হেলদোল নেই। কিন্তু এখানে রাহুল ভাইয়া থাকলে মামা নিশ্চয়ই পুরো হসপিটাল মাথায় তুলে ফেলতেন।
প্রেসক্রিপশন লিখে আদর টিকলির দিকে এগিয়ে দিলো। টিকলি চমকে ফিরে তাকিয়ে প্রেসক্রিপশন টা হাতে তুলে নিলো। আদর কথা বলতে চাইলো৷ কিন্তু বারংবার কথারা দলা পাকিয়ে গলায় আটকে গেলো। হঠাৎ আদরের কিছু মনে পরলো। প্রেসক্রিপশন টা ছিনিয়ে নিয়ে সে একটা আনস্মার্ট কাজ করে বসলো। টিকলি অবাকের উপর অবাক হলো। আদর প্রেসক্রিপশন টা ভাঁজ করে আবার ফেরত দিলো। টিকলি নিদারুণ বিস্ময়তায় দুনিয়াদারী ভুলে গেলো। মিনিট দুয়েক থম মেরে বসে থেকে ঘোরের মাঝেই উঠে দাড়ালো। টলমল পায়ে দরজা পর্যন্ত যেতেই আদর দাঁড়িয়ে ছোট করে বলল,
‘প্রেসক্রিপশন কারোর হাতে দিবেন না।’
বিস্ময়তা আকাশ ছুঁলো। চারিপাশ নিস্তব্ধ পাতালপুরীতে পূর্ণ হল। শূন্যে ভেসে উঠলো আশেপাশের সব। কেবল অস্তিত্ব বিরাজমান আদর টিকলি দুটি প্রাণহৃদয়ের। হাতের প্রেসক্রিপশনের দিকে একবার তাকিয়ে ঢোক গিলল টিকলি। সে কথা বলতে পারছে না। আদরের সাথে একান্ত সময়টুকুতেই তার গলার স্বর আসছে না। বেঈমানী করছে। আহ! কষ্ট! প্রচুর কষ্ট! টিকলির কান্না পেয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ আদরকে অবাক করে দিয়েই এক দৌড়ে সে বেরিয়ে গেলো।
আদর স্বাভাবিক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর টেবিলে জোরে বাড়ি মারলো। শূন্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাঁড়ানো থেকে চেয়ারে বসে পরলো। হেলান দিলো। চোখ বন্ধ করলো। এরপর মৃদুমন্দ কাঁপন কণ্ঠস্বরে হতাশ নিঃশ্বাসে বলে উঠলো,
“আজও সরি বলা হয়ে উঠলো না। দেখা হয়েও যেনো দেখা হলো না। কথা হয়েও যেনো কথা হলো না। দুজন দুজনার দিকে তাকিয়েও যেনো তৃষ্ণা মিটলো না। চোখের আঁশ মিটলো না। হৃদয় পূর্ণ হলো না। বুকে ঢেউ বইলো না। আজ যেনো চোখে চোখ রেখেও রাখা হলো না।”
চলবে❤️
#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
২৩.
স্কুটি নিয়ে বের হয়েছিলো টায়রা। টিয়া রঙের স্কুটিটা অনবরত ঘুরে চলেছিলো ঢাকা শহরের এ গলি ও গলি। একটা এদোঁ সরু গলির মুখে যেতেই অনাকাঙ্ক্ষিত বশত অন্য কোনো এক মোটরসাইকেলের সাথে বেজে গেলো টায়রার স্বাদের স্কুটি। নাও এবার কেল্লাফতে! উলটে পরলো স্কুটিসহ দু পাশের দুজনেই। টায়রা সামনের দিকে না তাকিয়েই তার বাজখাঁই গলায় চিতকার করে উঠলো,
‘এই কোন শালা? চোখে দেখিস না?’
বলতে বলতেই সামনে তাকালো। বাইক নিয়ে পরে যাওয়া ছেলেটাকে দেখে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল। আকস্মিক বোবায় ধরলো তাকে। নিদারুণ কিছু অবাকতা, নিস্তব্ধতা, চমকানি দু’জোড়া প্রগাঢ় আঁখি নিয়ে তাকিয়ে থাকলো দুজন দুজনার দিকে।
আর্দ্র এই এতো বড় দামড়া বাইকের নিচে পরে গিয়েও ব্যথা ভুলে গেলো। সম্মুখের এই বিরক্তিকর নারীটির দিকে তাকিয়ে থাকলো নিমিত্তে। ফেলল না একবারো চোখের পাতা। শুধু তাকিয়েই রইল। এর মাঝে বিরবির করে বলল,
‘আমি কি স্বপ্ন দেখছি?’
আর্দ্র বিরবির করা সম্পন্ন করতে পারলো না। তার আগেই অসম্পন্ন গলায় চেঁচিয়ে উঠলো টায়রা,
‘আপনি? তাই তো বলি দিন-দুপুরে অন্ধ মানুষকে রাস্তা-ঘাটে কে বাইক চালাতে দেয়? কতটুকু ব্যথা দিলেন আপনি আমায়।’
চিল্লিয়ে যেনো গলা ছিড়ে ফেলবে টায়রা। আর্দ্র ব্যথায় অনেক কষ্টে বলল,
‘আমি নাহয় অন্ধ কিন্তু আপনার চোখ তো ভালো। স্কুটি চালাতে পারেন না আবার চালাতে এসেছেন কেনো? আমি তো হর্ণ দিচ্ছিলাম। আপনি যে বধির সেটা তো আগে বলেননি।’
‘এই আপনি আবার আমাকে অপমান করছেন?’
আর্দ্র চোখ মুখ খিচে বলল, ‘মিস. ফুটা টায়ার আপনি যদি আমাকে এখান থেকে রক্ষা করেন তবে আমি আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। এই অধমকে সাহায্য করুন দয়া করে।’
টায়রা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, ‘অ্যাহ আসছে! আমাকে ফুটা টায়ার বলছেন আবার হেল্প চান কোন মুখে?’
‘প্লিজ টায়রা আমি ব্যথা পাচ্ছি। তুলুন আমাকে।’
আর্দ্র গলা বেশ সিরিয়াস শোনা গেলো। টায়রার মায়া হলো। এগিয়ে এলো আর্দ্রর দিকে। তখন শেষ বিকালের মাথায় আকাশে দুটো লাল দাগ রঙিন হয়ে উঠেছিলো। প্রকৃতি ছেয়ে গেছিলো বৃষ্টি হওয়ার আগ মুহুর্তের এক অনাবিল সুখে। চারিপাশে বাতাস সাথে ছিলো প্রকৃতির বৃষ্টি রং। হালকা নীলচে কালো মেঘের রঙে পরিবেশ হয়ে উঠেছিলো সুনীল। দূর আকাশে মেঘের ভেলায় দেখা গেলো রংধনুর সাত রং। খেলে গেলো এক তরুণের অসহায়ত্ব সুর আরেক তরুণীর মায়া মাখানো হৃদয়।
টায়রা তেমন ব্যথা পায়নি। স্কুটির সামনের ফাঁকা অংশ দিয়ে পরে গিয়েছিলো। সে কোনোরকমে উঠে দাঁড়িয়ে স্কুটিটাকে টেনে তুলল। আর্দ্রর দিকে যেতেই দেখলো আর্দ্রর এক পা বাইকের নিচে পরেছে। মনটা ছলাৎ করে ভয়ে ছেয়ে গেলো। আর্দ্রর দিকে ঝুকলো। সাথে সাথে যেনো ব্যথা ট্যথা সব ভুলে হাওয়ায় উড়ানো টায়রার কোমড় অবধি চুলের গন্ধে মুখ ভাসালো আর্দ্র। নিজের এই কান্ডে চমকায়িত হলেও মনকে দমন করতে পারলো না কোনোমতেই। টায়রার এতোদিকে খেয়াল নেই। সে আর্দ্রর উপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে বাইকের হ্যান্ডেল ধরে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে উঠানোর চেষ্টা করলো। একটু উঠাতেই ভেতর থেকে পা বের করলো আর্দ্র। উঠে দাড়াতেই খেয়াল করলো ডান পা অবশ হয়ে গেছে। পা নাড়ানো যাচ্ছে না। এদিকে টায়রা এতো ভারী বাইকটাকে সামলাতেও পারছে না। দাঁতে দাঁত খিচে আর্দ্র উঠে দাঁড়িয়ে বাইক সোজা করে রাখলো।
টায়রা হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেনো। ভয় কেটে গেলো। তবুও খোটা দিতে ছাড়লো না।
‘দেখেছেন? আমি কত দয়ালু নারী? আপনি আমাকে কত কটু কথা শোনান কত অপমান করেন তবুও বিপদের সময় এই টায়ার থুক্কু টায়রাকেই কাজে লাগলো। এখন আপনার উচিত আমাকে একটা বড় করে থ্যাংকস দেওয়া। রীতিমতো ধন্যবাদের বন্যা বইয়ে দেওয়া। কত্তো বড় হেল্প করলাম আপনার….।’
টায়রা ভীষণরকম এক্সপ্রেশন দিলো। আর্দ্রর দিক থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে সে ভ্রু কুচকে তাকালো। আর্দ্র মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখতেই চোখ থেমে গেলো। মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। বাতাস ভারী লাগলো৷ চারিপাশ স্তব্ধ হলো। হাওয়ার সাথে মিলে গেলো সব৷ টায়রার চোখ দুটো জলে উপচে পরলো৷ ঘোলা দেখা গেলো চারপাশ৷ অস্ফুটস্বরে শুধু বলল,
‘আল্লাহ! রক্ত!’
টায়রার কথা শুনে আর্দ্র নিজেও নিজের পায়ের দিকে তাকালো। তাকাতেই অবাক হলো। এর জন্যই তবে পা নাড়াতে এতো কষ্ট হচ্ছিলো। পায়ের হাটুর বেশ খানিকটা নিচের জায়গাটুকু থেকে লাল মাংস উঠে সাদা অংশ দেখা যাচ্ছে। টায়রা আরেকবার দেখার আগেই চোখ খিচে বন্ধ করলো। আর্দ্র বলল,
‘লে হালুয়া! কাটলো, ছিড়লো আমার, আপনি এরম করেন ক্যা?’
থরথর করে কাঁপা ঠোঁট নিয়ে টায়রা জবাব দিলো, ‘হেমোফোবিয়া। ‘
‘আপনার ব্লাড ফোবি আছে?’ আর্দ্র আতংকিত গলায় বলল। টায়রা মাথা ঝাকালো।
এই মুহুর্তে অসহায় কণ্ঠে অদ্ভুত এক কথা বলল আর্দ্র,
‘তবে কি এখন আপনি অজ্ঞান হয়ে যাবেন?’
টায়রা কথা উত্তর না দিয়ে দাঁতে দাঁত পিষলো। ঝুলানো ব্যাগটা থেকে পানির বোতল বের করে পানি খেয়ে স্কুটিতে উঠে বসলো। আর্দ্র এগিয়ে এসে বলল,
‘আমাকে একটু…’
আর্দ্রের কথা সম্পন্ন হওয়ার আগেই টায়রা জিজ্ঞেস করলো, ‘এখানে থেকে আপনার বাড়ি কাছে নাকি হসপিটাল? ‘
না বুঝেই উত্তর দিলো আর্দ্র, ‘বাড়ি।’
‘তবে কাউকে ফোন করে বলুন আপনার বাইক টা এসে নিয়ে যেতে আর আমার স্কুটিতে উঠে বসুন। এবং ডান পা টা একটু আমার চোখের আড়ালে রাখবেন। বলা যায় না আবার রক্ত দেখলে আপনাকে নিয়ে এক্সিডেন্ট করে মরে টরে যেতে পারি। আর রাস্তা চিনিয়ে দিবেন।’
নাক ছিটকিয়ে আর্দ্র বলল, ‘মেয়েদের পেছনে বসে যাবো?’
টিকলি চোখ পাকিয়ে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরালো। চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলল,
‘আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার আমার কি ঠেকা? নেহাৎ হাত পায়ের গোস্ত-মাংস ছুলে বসে আছেন তাই মানবতার খাতিরে নিয়ে যেতে চাইছি। তারউপর আবার এতো বড় বড় কথা বলেন? আমার মাথা ঘুরাচ্ছে। উঠে বসুন বলছি তাড়াতাড়ি।’
টায়রার ধমকে আর্দ্র উঠে বসতে চেয়েও বলল, ‘হায়! আল্লাহ! আপনার মাথা ঘুরাচ্ছে? আপনার সাথে যাওয়া তো রিস্ক। এখন তো পা ছুলে বসে আছি। একটু পর উপরে যাওয়ার টিকিট কনফার্ম হয়ে যাবে।’
‘কিচ্ছু হবেনা। উঠে বসুন। নাহলে আমি চলে গেলাম।’
‘এই না। পরে আমি যাবো কিভাবে? ব্যথা সহ্য করা যাচ্ছে না। কি যন্ত্রনার জীবন!’
আর্দ্র উঠে বসলো টায়রার পেছনে। পকেট থেকে ফোন বের করে বাড়ির ড্রাইভারকে বলল বাইকটা এসে নিয়ে যেতে। আদর এখন নিশ্চয়ই বিজি। তবুও আর্দ্র আদরকে ফোন লাগালো। কিন্তু অপরপাশে ফোন ধরা হলো না। অবচেতন মনেই অন্য হাত টায়রার কোমড়ে রেখে আর্দ্র আবারো ফোন দিলো আদরের পারসোনাল নাম্বারে।
শরীর কেঁপে উঠল বৈদ্যুতিক তারের সাথে শক লাগার মতোন। ঠকঠক করে কেঁপে গেলো কিছুক্ষন অবলীলায়। মেদহীন টায়রার কোমড়টাতে আর্দ্রর হৃদপুষ্ট হাতের পাঁচ আঙ্গুল ঘুরে বেড়ালো নির্বিশেষে। টায়রা কথা হারিয়ে ফেলল। শুধু লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখলো কাউকে ফোন দেওয়ায় ব্যস্ত আর্দ্রকে। হঠাৎ মনে হলো, বেহালা বাজছে। টায়রার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। বেহালার সুরে মনের করিডোরে দুটো পাখি কিচিরমিচির করে তাদের অস্তিত্ব জানান দিলো। আর্দ্রের হাত কি জানান দিলো কে জানে? শুধু দেখা গেলো, কিছু মুহুর্ত পর আর্দ্র যখন ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ভাইয়া তো ফোন ধরলো না।’
টায়রা তখন হুশে ফিরলো। ঝটকানা দিয়ে আর্দ্রের হাত সরিয়ে দিলো। আর্দ্র বুঝে উঠার সাথে সাথে বিস্মিত চমকপ্রদ নিজের এই কাণ্ডে হতবাক হয়ে গেলো। মস্তিষ্ক ফাঁপা নালির মতোন শূন্য হয়ে পরে রইল। নিউরন গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিলো। রক্ত চলাচল থেমে এলো। কি হয়েছে তার? একটু আগে চুলের গন্ধ এখন আবার কোমড়ে হাত? মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি?
আর্দ্র আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে তাকালো টায়রার ওই মেদহীন কোমড়ের বাঁকে। কিছুক্ষণ তাকিয়েই রইল। গলা খাকারি দিয়ে টায়রা বলল,
‘নজর হেফাজতে রাখুন। গুলি করে চোখের খুলি উড়ায় দেওয়ার আগেই ভালো পথে ফিরে আসুন।’
আর্দ্র তৎক্ষণাৎ চোখ সরালো। অপমানে লজ্জায় কানকাটা হয়ে বলল,
‘কি হইছে?’
বিস্ময় নিয়ে মুখ ঘুরালো টায়রা। এরপর আবার সামনে ঘুরে থমথমে মুখে বলল, ‘একদম এডভান্টেজ নিবেন না আর ইনোসেন্ট সাজার চেষ্টা করবেন না। আমার গায়ে যাতে আপনার টাচ না লাগে। সরে বসুন।’
,
বাড়ির মাথায় আসতেই দেখা গেলো তিনতলার বাড়ির সামনে খয়েরী রঙের গেট৷ একপাশে নেইম-প্লেটে লিখা ‘খান ভিলা’। গেট ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে বিল্ডিং এর গা বেয়ে জেগে উঠেছে বাগানবিলাস। এক পাশে আট কি দশটার মতোন শিমূল তুলোর গাছ। গেটে দারোয়ান দাঁড়ানো। দারোয়ান এগিয়ে এসে ব্যস্ত গলায় বললেন,
‘ছোট সাহেব কি হইছে? প্যান্ট ছিড়লো কেমনে? আল্লাহ! আবার দেহি পাও ছিলছে।’
আর্দ্র রহমত চাচার কাধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
‘আমাকে ধরে একটু ভেতরে নিয়ে যাও চাচা।’
ভেতরে পা বাড়াতেই আবার উল্টো ঘুরলো আর্দ্র। খুড়িয়ে খুড়িয়ে টায়রার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
‘ভেতরে আসুন।’
মুখ বাকিয়ে টায়রার জবাব, ‘নো থ্যাংকস।’
চোখের পলকেই স্কুটি নিয়ে উড়াল দিলো উড়নচণ্ডী টায়রা। আর্দ্র তাকিয়ে রইল রাস্তার আকেঁবাঁকে ততক্ষণ, যতক্ষণ দেখা যায় এই বিরক্ত মেয়েটাকে।
_________________________________
দুইদিন হয়েগেছে টিকলি এখনো প্রেসক্রিপশন টা খুলে দেখেনি। এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে প্রচুর আবার ভয়ও হচ্ছে। মামাজান সেদিন বিকালেই চলে গিয়েছেন। বাবা আর রাহুল ভাই প্রেসক্রিপশনটা অনেকবার দেখতে চাইলে টিকলি কথা কাটিয়েছে এমনভাবে,
‘তেমন কোনো প্রেসক্রিপশন না।’
রাহুলের উত্তর তখন, ‘প্রেসক্রিপশন আবার কেমন হয়?’
‘সাইনোসাইটিস এর সমস্যা। ওতো আহামরি কোনো ওষুধ দেয়নি।’
‘আমার তো এবার সন্দেহ হচ্ছে। দেখি প্রেসক্রিপশন টা কোথায় রেখেছিস? আহামরি ওষুধ দিয়েছে কিনা দেয়নি দেখি।’
টিকলির ব্যাগ টেনে নিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেও প্রেসক্রিপশন পেলো না রাহুল। টিকলি তুতলিয়ে বলল, ‘বোধ হয় হারিয়ে ফেলেছি।’
রাহুল হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেলো। যাওয়ার আগে বলে গেলো, ‘তুই তো এমন ছিলি না টিকলি।’
রাহুলের কথাটা কেনো যেনো মিনিট খানিকের মতো টিকলির মাথায় বসে রাজত্ব করতে লাগলো। আসলেই তো, টিকলি তোএমন ছিলো না। রাহুল সারা ব্যাগ তন্নতন্ন করে খুঁজেছে প্রেসক্রিপশনটা অথচ কাগজটা ছিলো টিকলির হাতের মুঠোয় দুমড়ে মুচড়ে ভাঁজ করা।
নিজের গোপন ডয়ার থেকে প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে বারান্দায় এলো টিকলি। টায়রা বসার ঘরে টিভি দেখছিলো। ঘরে শুধু একা টিকলি। কাগজটা চোখের সামনে মেলে ধরতেই দেখা গেলো ওষুধের নাম লিখা, দিনে কতবার খাবে তা লিখা। একদম উপরে আদরের অফিসিয়াল নাম এবং নাম্বার। সারা পৃষ্ঠা জুড়ে আর অন্যকিছু পাওয়া গেলোনা। কাগজটা উল্টাতেই অপরপাশের নিচে গুটিগুটি অক্ষর গুলো চোখে ধরা দিলো। টিকলি মুগ্ধ মন বলল,
‘বাহ! ডাক্তারদের লেখা এতো সুন্দর! ইম্প্রেসিভ।’
চোখে চশমাটা ঠিকমতো এঁটে দিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়তে শুরু করলো টিকলি,
“শূন্য জীবনে ভাসে এক আকাশের সাত রং। ছয় ঋতুতে আসছে বারো মাস আর এক ফাল্গুন। হঠাৎ জীবন পথ খুঁজে তিন গলির মুখে, পাঁচ রাস্তার মোড়ে। সারা মাসে অক্লান্ত পরিশ্রমে ফুরোয় দিন শুধুমাত্র তোমার কফি মগে।”
লেখাগুলো পড়ে ভ্রু কুচকালো টিকলি। মানে কি এই লেখাগুলোর? এই লেখা দিয়ে কি করবে সে? লেখার মাঝে কি আদরের কোনো অনুভূতি ব্যক্ত করলো নাকি? টিকলি আরো দু তিনবার পড়লো। তবুও বুঝে আসলো না। বিরক্তিতে মুখ তেতো হয়ে রইলো। ধ্যাত, ভেবেছিলাম হয়তো নাম্বার টাম্বার দিয়েছে, যে তাড়াতাড়ি লিখলো। বিরক্ত মনে দাঁড়িয়ে থাকার কিছুক্ষণ পর টিকলি আরো একবার চোখ বুলালো। চিঠিটা মেলে ধরে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ চিল্লিয়ে উঠলো, ‘ইয়েস ইয়েস। পেয়েছি পেয়েছি।’ বলেই ঘরে ছুট লাগালো নতুন কাগজের উদ্দেশ্যে। কলমের নিপ কিছুক্ষন বিরামহীন চলল সাদা কাগজের জমিনজুড়ে।
চলবে❤️