বৃষ্টিশেষে প্রেমছন্দ পর্ব-২০+২১

0
534

#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন

২০.
বিকেলের দিক দিয়ে আদর আজ বাড়িতে ছিলো। তিন তলার তাদের বাড়িটাতে দোতলা নিয়ে তারা থাকে। তিন তলায় ভাড়া দেওয়া চারটে ব্যাচেলরকে। এরমধ্যে দুজন বিবাহিত। চাকরির সূত্রে আজ ব্যাচেলর তারা। দোতলার এই ঘরটার বারান্দার সাথেই ঘেঁষে জেগে উঠেছে বাগানবিলাস। হাত বাড়ালেই ছিড়তে পারা যাচ্ছে পাতার ন্যায় বেগুনি রঙের ফুলগুলো। বাগানের একপাশে লাগানো হয়েছে সারি সারি শিমুল তুলোর গাছ। বাতাসে শিমুল তুলো উড়ে এসে আদরের ঘর যখন মাখামাখি আদর তখন দেখতে ব্যস্ত তাদের মারামারি। সারাঘর জুড়ে তারা ঘুরে বেড়ায়৷ দুষ্টুমি করে। এ জায়গা ও জায়গায় বসে। আবার হাওয়ায় উড়ে অন্যের জায়গা দখল করে। আদর মন ভরে সব দেখে।

আজও ঘর মাখমাখি। হাতে কফির মগ নিয়ে শেষ বিকালকে মোহিত চোখে দেখছিলো সে। ঢেলে দিয়েছিলো হৃদয়ের সকল না পাওয়া দুঃখ। হঠাৎ হাতের সেলফোনটা বেজে উঠলো। সামনে ধরতেই দেখলো, রেগুলার এক পেসেন্টের ফোন। লোকটার বয়স হবে পঞ্চাশের ঘরে। আদর পারসোনালি উনাকে বেশ পছন্দ করে। ভদ্র লোকটিও আদরকে নিজের ছেলের মতোন স্নেহ করেন। মাস দুয়েক হলো লোকটার সাথে আদরের পরিচয়। লোকটার ব্রেন স্ট্রোক করেছিলো। আদর ফোন ধরলো। বলল,

‘কেমন আছে মি. রুহুল হক? শরীরের অবস্থা কেমন এখন?’

‘আহ! শরীর জবরদস্ত চলছে। তোমার কি খবর ইয়াং ম্যান?’

‘আমার তো খবর নেই।’

‘তাহলে আমি খবর পাঠাই?’

আদর হেসে দিলো। কিছুক্ষণ হেসে খেলে কথা বলার পর ফোন রেখে দিলো। লোকটা ভীষণ ভালো সাথে ভীষণ মজার। ব্যবসায়ী লোকগুলো মিশুক হয় ভালো। মানুষকে টপাটপ পটিয়ে ফেলতে পারে।

ফোনটা পকেটে রাখতেই আদরের কিছু মনে পরলো। পকেট থেকে ফোনটা বের করে তন্ন তন্ন করে কিছু খুঁজেও পাওয়া গেলো না। তুলোময় বাতাসে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিলো আদর। কোথাও নেই সেই নাম্বার। কেনো যে আদর রাগের মাথায় ডিলিট করেছিল? ধ্যাত! আদর আনমনেই বলল,

‘ইশশ…নাম্বারটা নেওয়া হলো না। উনার কাছ থেকে নাম্বারটা চেয়ে রেখে দেওয়ার দরকার ছিলো।’

তখনি ভেতরের মনটা মীর জাফরের ন্যায় বিশ্বাসঘাতকের মতো করে বলল, ‘কেনো রে আদর? ওর নাম্বার দিয়ে কি করবি রে?’

‘চুপ ফাজিল। তোর কথা শুনেই নাম্বার ডিলিট করেছিলাম।’

‘ভালো করছস। ভালোবাসলে একটু করসৎ করতে হয় বুঝলি? এখন খুঁজ মেয়েটাকে।’

আদর কিছুক্ষণ থেমে স্বগোতক্তি করলো, ‘ভালোবাসা? ভালোবাসা কি?’

“ওই যে তোর কাছে যেটা প্রেমের ছন্দ তোর এই মনের কাছে সেটা ভালোবাসার গন্ধ।”

_______________________________

ব্যস্তসময় গুলো পার হচ্ছে নাস্তানাবুদ হয়ে। আদরকে স্যান্ডউইচের মাঝের কিমার মতো চেপে ফেলে। পিষে দিয়ে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। কোথাও এতোটুকু ফুরসৎ নেই। হাসপাতালের চেম্বারে বসা, রাউন্ড দেওয়া, মেডিকেলে ক্লাস নেওয়া, অপারেশন করা। সব মিলিয়ে আদরের এখন বাড়ি ফিরতেও বেজে যায় প্রায় বারোটা। আবার মাঝে মাঝে রাত বিড়েতে কল এলে ছুট লাগাতে হয় একটা দুটোর দিকেই। এরমাঝে পরেরদিন কোন বিষয়ের উপর লেকচার দিবে সেটাও দেখে নিতে হয়। পড়াশোনা করতে হয় প্রচুর। ডাক্তার হওয়ার এই এক জ্বালা! ফাঁক পেলেই বই নিয়ে বসে ঘাটাঘাটি করতে হয়। ক্লান্ত দেহখানি আর মানতে চায় না। দাদার স্বপ্ন ছিলো নাতী ডাক্তার হবে। সেই স্বপ্ন পূরোন করতে গিয়ে জীবন আজ খানখান।

দুপুরের খাবার খাওয়া হয়নি আদরের। দুপুরের খাবার খেতে বাড়ি এসেছিলো বিকাল সাড়ে চারটায়। পাঁচটার দিকে বাড়ি থেকে বের হতেই সিড়ির মুখে দেখা হলো রাহুলের সাথে। রাহুলের সাথে আদরের সম্পর্ক বেশ ভালো। তিনতলার ব্যাচেলরদের মধ্যে অবিবাহিত রাহুল এবং নয়নের সাথে আদর আর্দ্রর ঘনিষ্ঠতা বেশি। রাহুল সালাম দিলো। ব্যস্ত আদর তড়িঘড়ি করে নামতে গিয়ে থেমে গিয়ে সালামের জবাব নিয়ে বলল,

‘কি খবর রাহুল?’
রাহুল হাসিমুখে জবাব দিলো, ‘এই তো ভাই যাচ্ছে কোনোরকম।’
‘কি জব খোঁজা হচ্ছে? পড়াশোনা তো শেষ হলো।’
‘হ্যাঁ ভাই চেষ্টায় আছি।’
‘আমিতো শুনেছি তোমার বাবার ভালো ব্যবসা আছে। ব্যবসায় ঢুকে গেলেই তো পারো।’
‘না ভাই নিজে কিছু করতে চাই।’
‘তাহলে আমার এক বন্ধুর বাবার সাথে কথা বলি?’
‘নাহ ভাই। নিজের যোগ্যতায় অর্জন করতে চাই।’

আদর খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। ছেলেটার পারসোনালিটি অনেকটা তার মতো স্ট্রং আবার পরিচিত কারোর মতো স্ট্রিক্ট। সেই পরিচিতকে আদর খুঁজে পায় না। বলতে গেলে প্রায় মাসেকের মতো এই ছেলের মাঝে পরিচিত কারোর ছায়া দেখতে পাচ্ছে কিন্তু বুঝতে পারছে না। রাহুল বলল,

‘হসপিটালে যাচ্ছেন ভাইয়া?’
‘হুম ভাই প্রচুর চাপ। দম ফেলানোর সময় নেই৷ দুপুরের খাবারটা মায়ের ঘ্যানঘ্যানানিতে এসে খেয়ে গেলাম।’
রাহুল হেসে বলল, ‘ওহ। আন্টি তো আবার আপনি বলতে পাগল।’
আদর স্মিত হাসলো। বলল, ‘কোথাও যাচ্ছো?’
কিছু মনে পরার মতো রাহুল বলল, ‘ওহ হ্যাঁ ভাই। আমি কিছুদিনের জন্য ফুপির বাসায় যাচ্ছি।’
‘আচ্ছা সাবধানে যেও। নয়নও যাচ্ছে?’
‘না ভাই। বলেছিলাম কিন্তু ও যাবে না।’
‘আচ্ছা রাহুল তুমি যাও। আমারও দেরি হয়ে যাচ্ছে। হেভ আ সেভ জার্নি।’

_____________________________

টায়রা গেছে শপিং করতে নিভার সাথে। টিকলিকে অনেক জোর করার পরও কেউ নিয়ে যেতে পারেনি।

টিকলি বসে ছিলো খাটের মাঝ বরাবর বারান্দার দিকে মুখ করে। হঠাৎ শায়লা বেগমের আগমন ঘটলো। মেয়ের পাশে গিয়ে আস্তে করে বসলেন। বারান্দা গলিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন ছুড়লো টিকলি,

‘আচ্ছা মা? ওই আকাশে কি আছে? মানুষ এতো আকাশ দেখে কেনো?’

শায়লা আক্তার একটু চমকে তাকালেন। ভেবেছিলেন, মেয়ে বোধ হয় তাকে খেয়াল করেনি। কিন্তু বিচক্ষণ এই মেয়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া ভীষণ মুসকিল। তিনি ভ্রু কুচকে বললেন,

‘কোন মানুষ দেখে?’
‘একজন দেখে।’
‘কে?’
‘উফফ..সেটা শুনে কি হবে?’
‘হুম। আচ্ছা টিকলি?’
‘হুম মা বলো। আমি শুনছি।’

গলাটাকে যথাসম্ভব নরম করে শায়লা আক্তার বললেন, ‘তোর কি হয়েছে রে মা?’

টিকলি ঘাড় ঘুরিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। মাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘জানিনা মা। শুধু এটুকু জানি যখন বৃষ্টির ছন্দে মুখরিত হয় চারপাশ আমার বুক তখন উত্থাল ধারায় ঢেউ বইয়ে দেয়। হৃদয় ব্যথা করে।’

কথা বলতে বলতেই টিকলির গলা কেঁপে উঠলো। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে শায়লা আক্তার তৎক্ষণাৎ গলা ভিজিয়ে বললেন, ‘তোর কি হয়েছে মা? এতো বেশি শান্ত হয়ে গেছিস কেনো? কোথায় কষ্ট তোর মাকে বল?’

মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে টিকলি জবাব দেয়, ‘কোথাও না মা। চিন্তা করো না।’

‘তুই কি কাউকে পছন্দ করিস টিকলি?’

মায়ের কথায় ভড়কে গেলো টিকলি। মায়ের বুক ছেড়ে উঠে বসলো। এদিক ওদিক তাকালো। শায়লা আক্তার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ছিলেন। টিকলি মিথ্যা বলতে পারেনা। কথা কাটিয়ে দিতে খুব পারে। কথা কাটিয়ে দেওয়ার দারুন একটা টেকনিক মনে পরলো। বাপের বাড়ির প্রতি দূর্বল মাকে টিকলি জিজ্ঞেস করলো,

‘তোমার ভাতিজার না আজকে আসার কথা?’

সেই মুহুর্তেই শায়লা আক্তার যেনো সব ভুলে গেলেন। কপালে হাত রেখে উত্তেজিত গলায় বললেন,

‘হায়হায়! আসলেই তো। ছেলেটা কোথায় গেলো? সেই কখন বলেছে বের হয়েছে। একটা ফোনও করেনি। রাস্তা ঘাটে কোনো বিপদ আপদ হলো নাকি?’

বলতে বলতেই শায়লা আক্তার দৌড়ে গেলেন ফোনের উদ্দেশ্যে। টিকলি হালকা হেসে বসে রইল আবারো আকাশটার দিকে তাকিয়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মনে পরলো শুকতারার কথা। সাথে মনে প্রশ্ন জাগলো, ‘সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটি কি আগে থেকেই ঠিক করা আছে? নাকি কাঙ্ক্ষিত মানুষটির অপেক্ষায় আছেন উনি?’

প্রায় মিনিট পাঁচেক পরেই একগাদা শপিং শেষে বাড়ি ফিরলো টায়রা আর নিভা। ভাবনায় মশগুল টিকলির খেয়াল নেই সেদিকে। হাতের শপিং ব্যাগ গুলো রেখে টায়রা টিকলির কাছে এসে বসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘আমি এসেছি তুই খেয়াল করছস?’

টিকলি তাকালো টায়রার দিকে। খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল, ‘না, কখন আসলি?’

বিরক্তিতে চু শব্দ করে টায়রা বলে, ‘এই তোর হইছে কি বলতো? আসার সময় নিচ থেকে মাও বললো তোর কি হইছে না হইছে জিজ্ঞাসা করতে। এতো চুপচাপ থাকোস কেন তুই?’

‘আমি তো আগে থেকেই চুপচাপ।’

‘এখন একটু বেশি।’

‘কি শপিং করলি?’

কথা কাটানোর গুণ টিকলির বেশ ভালোই রপ্ত করা আছে। টায়রা ব্যাঙ্গাত্মক হেসে বলল,

‘এড়িয়ে গেলি কি? আমাদের মধ্যে তো লুকানো কিছু থাকে না টিকলি।’

টিকলি অসহায় চোখে তাকালো। নিভা তাকিয়ে দেখছিলো দুই বোনকে। সে খুব ভদ্র একটা মেয়ে। বিনয়ী স্বল্পভাষী হেল্পফুল। নিভা নরম কণ্ঠে বলল,

‘সেই যে নিঝুম দ্বীপ থেকে এলি এরপর থেকেই তুই এমন।’

নিভার কথা শুনে ভ্রু কুচকে টায়রা বলল, ‘কাউকে ভালোবাসিস?’

টায়রার কথায় হালকা হেসে উঠে পরলো টিকলি। বারান্দার দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল, ‘হয়তো।’

টায়রা গিটার বাজায় মাঝে মাঝেই। সে খুব ভালো গিটার বাজাতে পারে। আর টিকলি খুব ভালো গান গাইতে পারে। টায়রার গিটারটা আজ হাতে উঠিয়ে নিলো টিকলি। বারান্দার গ্রাস কার্পেটের উপরে রাখা বাদামি রঙের বেতের চেয়ারটাতে বসতেই একটা ময়না পাখি বলল, ‘টিকলি টিকলি।’ আরেকটা ময়না পাখি বলল, ‘টায়রা টায়রা।’

টায়রা কোনোদিকে কর্ণপাত না করে টিকলির দিকে এগিয়ে গেলো। টিকলির পাশের চেয়ারটাতে বসে গোয়েন্দা গলায় এবং হালকা আওয়াজে বলল,

‘আদর ভাইয়াকে ভালোবাসিস?’

টিকলি যেনো মুহুর্তের জন্য থেমে গেলো। হাতের গিটারের দিকে তাকিয়ে রইল। টায়রার দিকে ফিরেও তাকালো না। সেকেন্ড গড়ালো মিনিট গড়ালো। নিস্তব্ধতা ভেঙে টিকলি কথার উত্তর না দিয়ে টুং টাং শব্দ তুলল। টায়রা অবাক গলায় বলল,

‘তুই তো গিটার বাজাতে পারিস না। দে আমি বাজাই। তুই গা।’

‘দেখি পারি কিনা? চেষ্টা করতে দোষের কি?’ মিষ্টি গলায় বলল টিকলি।

টায়রা কথা বাড়ালো না। টিকলি সুর তুলছিলো আস্তে আস্তে। হালকা আওয়াজে। ধীরে ধীরে শব্দ গাঢ় হলো। দরজার সামনে এসে দাড়ালো শায়লা আক্তার জামিলুর রেজা নিভাসহ কাজের লোক সবাই। টিকলির গান মানে দূর্লভ কোনো বস্তু। শেষবার মা-বাবাকে গান শুনিয়েছিলো প্রায় চার-পাঁচ মাস আগে। অথচ অপরিচিত আদর একবার বলাতেই গেয়ে ফেলেছিলো। কি আশ্চর্য!

জামিলুর রেজা ফিসফিস করে স্ত্রীকে বললেন, ‘আমার মেয়ের কি হয়েছে?’
‘জানি না সবসময় বিষন্ন মুখে বসে থাকে শুধু।’

নিঝুম দ্বীপ থেকে ফিরেছে আজ প্রায় আটাশদিন। গত আটাশদিন যাবৎ সে বিচ্ছিন্ন আদর থেকে। কি জানি এভাবে কত আটাশ দিন যাবে। কিন্তু টিকলি যে ব্যকুল। এক নজর দেখার জন্য ধৈর্য্যহারা সে।

আকাশে তখন অনেক মেঘ। সাদা মেঘকাটা আকাশের এক কোণায় জ্বলজ্বল করছিলো বিকালের সূর্য। মৃদু বাতাস টিকলির মেঘের মতো কোমল চুলগুলোকেও আলতো ভাবে নাড়িয়ে দিয়ে গেলো। সুর তুলতে তুলতেই মেঘের কাছে আকুল আবেদনের গলায় টিকলি গেয়ে উঠলো চোখ বন্ধ করে,

‘ও মেঘ ও মেঘ রে তুই যা না উড়ে
আমার বন্ধু থাকে যে শহরে
ও মেঘ ও মেঘ রে তুই বলিস বন্ধুরে
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে

মেঘের সাথে মেঘের খেলা বন্ধু করলো অবহেলা
মেঘের সাথে মেঘের খেলা বন্ধু করলো অবহেলা
বন্ধু আমার রইলো কোন দূরে
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে

মেঘ শুধু দুঃখ পেলে কাদে
রংধনু হয়ে আবার হাসে
আমার দুঃখ গলুক আমায় নিয়ে
সেই মেঘের ভেলায় চড়ে ভাসে

বৃষ্টিঝড়ে অবেলা বন্ধু করলো অবহেলা
বন্ধু আমার রইলো কোন দূরে
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে

ভাবনার আদরে তোকে খুঁজে ফিরে
বড্ড ভিষণ করে আমার এ মন
আকাশের নিলীমায় অনুভবে খুঁজে যাই
যখন খুঁজে না পাই হারিয়ে

বৃষ্টিশেষে রোদ এলো
আমি আজও এলোমেলো
তুমি আছো বলো কি করে
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে
আমি আজও ভালোবাসি যে তারে………’

দীর্ঘগানটির সমাপ্ত টেনেই চোখ খুলল টিকলি। সবার বুকে কেমন দুঃখ ভাব বয়ে গেলো। টায়রা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। টিকলি যে মাত্রাতিরিক্ত ভালো গায় এটা সবাই জানে কিন্তু এতো ভালো গিটার বাজাতে পারে তা কারোর জানা ছিলো না। টিকলির চোখ জোড়া ছলছল করছিলো। বিরবির করে মন আবারো সুর টেনে বলল, “আমি আজও ভালোবাসি যে তারে।”

ছলচ্ছল সেই চোখ জোড়াকেই হঠাৎ আচমকা দৈবাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে দুই হাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে নিলো কেউ। ঢেকে গেলো চোখ। বন্ধ হলো চোখের পাতা। এরপর সামনে শুধুই অন্ধকার। টিকলি আতংকিত গলায় বলে উঠলো ,

‘কে?’

চলবে❤️

#বৃষ্টিশেষে_প্রেমছন্দ
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন

২১.
কারোর হাতের আবদ্ধে বন্ধ হওয়া চোখদুটোর সামনে তখন গভীর অন্ধকার। আগুন্তকঃ মানুষটার হাতের উপর হাত রাখলো টিকলি। বুঝার চেষ্টা চালালো, কে? এরপর খানিক নিচু স্বরে বলল,

‘ভাইয়া?’

ওপাশ থেকে মিটিমিটি চাপা হাসির শব্দ পাওয়া গেলো। টিকলি রাগার অভিনয় করে বলল, ‘ছাড়ো রাহুল ভাইয়া। আমি বোকা না যে চিনতে পারবো না।’

রাহুল ছেড়ে দাড়ালো এবং তার প্রথম কথাই ছিলো,

‘তুই এতো রোমান্টিক কবে হলি রে ভেবলি?’

টিকলি নাক ফুলিয়ে তাকালো। আবার এই জঘন্যতম ডাক! রাহুল বলল,

‘বাব্বাহ! কি সুন্দর গানও শিখেছিস আবার।’

টায়রা ভেটকিয়ে বলল, ‘আমার বোন গান আগে থেকেই পারে নতুন করে শিখতে হয় না।’

‘আরে…ময়নার মা যে। ইশশ..কত্তদিন পর তোর এই চাঁদ বদনখানি দেখলুম। বলি ময়নার বাপ ভালো আছে তো?’

টায়রা চিল্লিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা বাবার কাছে নালিশ ঠুকলো, ‘বাবা….কি বলছে দেখো?’

শায়লা আক্তার এগিয়ে এলেন। রাহুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘আহারে…আমার বাচ্চাটা। কতদূর থেকে এলো আর তোরা কি শুরু করলি হ্যাঁ? ‘

টায়রা বিরবির করে বলল, ‘এখন আমরা শুরু করলাম? মানে ভাতিজার কোনো দোষ কোনোকালেই তার চোখে পরবে না।’

ফুফুকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে রাহুল বলল, ‘ঠিক বলেছো ফুফু। দেখো তো কেমন শুরু করেছে। তোমার মেয়ে তার ফাটাবাঁশের গলায় চিল্লিয়ে তোমার এই ভোলা ভালা বাচ্চাটার কান স্তব্ধ করে দিচ্ছে।’

টায়রা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, ‘আমি?’

টিকলি বিরক্ত নিয়ে উঠে পরলো বেতের চেয়ারটা থেকে। নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,

‘আমার ঘর থেকে ভিড় কমাও।’

টিকলি ঘরে গিয়ে গিটার রেখে আবার বারান্দায় আসলো। সবাই চলে গেছে। শুধু রয়েছে টায়রা, নিভা আর রাহুল রয়ে গেছে। নিভা এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিলো। টায়রা হাসছিলো রাহুলের কোনো মজামাখানো কথায়। টিকলি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকলো।

এই মেয়ের কারোর সাথে উচ্চ গলায় ঝগড়া করতেও সময় লাগে না আবার হেসে খেলে কথা বলতেও সময় লাগে না। টিকলি নিভার কাধ ধরে বলল,

‘রাহুল ভাইয়া এদিকে তাকাও তো।’

রাহুল হাসতে হাসতেই তাকালো। বলল, ‘কি তাকাবো তোর দিকে? তোর দিকে ওতো তাকানোর কি আছে?’

টিকলি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকলো মিনিটখানিক। এরপর বলল,

‘এখানে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তুমি একটু কুশল বিনিময় করবে না? মেয়েটা একা একা বোর হচ্ছিলো আর তোমরা দুজন হে হে করে একা একা হেসে যাচ্ছো?’

এক পলক অবহেলায় নিভার দিকে তাকিয়েই চোখ সরালো রাহুল। বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?’

নিভা ইতস্তত বোধ করে জবাব দিলো, ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো আছি। আপনি?’

‘ভালো।’ রাহুল একবার টিকলির দিকে তাকিয়ে আবার টায়রার দিকে তাকালো। টায়রা নিভার কাছে এগিয়ে এসে বলল,

‘কিরে মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেনো? আর ভাইয়া এগুলো কুশল বিনিময় হলো। আমি ইন্ট্রডিউস করিয়ে দিচ্ছি। ও হলো নিভা। আমাদের খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড। আর নিভা উনি হলেন আমাদের মামাতো ভাই।’

নিভা এক পলক চাইলো। চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। হঠাৎ রাহুলও তাকালো। নিভা চোখ সরিয়ে নিলো নিভৃতে।

_____________________________

প্রচুর পড়াশোনা করছে আর্দ্র। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে সে পড়াশোনায় মজে রয়েছে দিন-রাত। সামনে BJS পরীক্ষা। অথচ আর্দ্রর মনে হচ্ছে তার কিছুই পড়া হয়নি। রীতিমতো শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার জোগাড়। আদর ঘরে ঢুকলো। রাত দশটা বাজে। আর্দ্র অবাক হওয়া গলায় বলল,

‘এতো তাড়াতাড়ি? সূর্য কোনদিকে উঠলো?’

‘আগে দেখে আয় চাঁদ কোনদিকে উঠেছে। আর তোর আমার ঘরে কিরে? খাস ও আমার ঘরে পড়িস ও আমার ঘরে ফোনও টিপিস আমার ঘরে শুধু গোসল টা নিজের ওয়াশরুম আর ঘুমানোর সময় নিজের বেডে ঘুমাস। আশ্চর্য!’

ভাইয়ের এই ঘরটা আর্দ্রর ভীষণ প্রিয় এবং ভাইকে নিরব ভাবে ভীষণ মিস করে বলে আর্দ্র প্রায় সবসময় ভাইয়ের ঘরে থাকে। এই ঘরে আদর আদর সুবাদ। আর্দ্রর ভালো লাগে। তার ইচ্ছে করে সবসময় ভাইয়ের কাছাকাছি থাকতে। ভাই সাথে থাকলে দুনিয়ায় কোনোকিছু তার কঠিন মনে হয়না বিরক্ত লাগে না নিষ্প্রয়োজন কিংবা নিষ্প্রভ মনে হয়না। ভাইয়ের কাছে সব সমস্যার সমাধান থাকে। ভাইয়ের এই ঘরটাতে পড়তেও ভালো লাগে৷ যদি ভাইয়ের মতো ব্রিলিয়ান্ট হওয়া যায় আর কি! বইয়ে চোখ বুলাতে বুলাতে আর্দ্র গলা খাকারি দিয়ে বলল,

‘এই ঘরটা বাবা আমায় দিতে চেয়েছিলো। তুমি জোর করে নিছো। তাই সেই শোধ তুলতে আমি সবসময় এখানে থাকি।’

‘থাপ্পড় দিয়ে দাঁত কপাটি সব ফেলে দিবো। মিথ্যাবাদী একটা। এতো চাপা কই থেকে শিখছস? চাপাবাজ।’

আদরের কথা কানে যেতেই পড়া বন্ধ হলো আর্দ্রর। মিনিট দুয়েক গলায় বেজে রইল চাপাবাজ শব্দটি। চোখের পলক পড়তেই সামনে ভেসে উঠলো টায়রার ঝগড়াটে মুখখানা আবার কখনো গাল ফুলিয়ে থাকার মুখ তো আবার উচ্চ হাসিতে মাতোয়ারা প্রাণবন্ত সেই নারীর মুখচ্ছবি। আর্দ্র টপাস করে চোখ খুলল। জোর গলায় বলল,

‘একদম চাপাবাজ বলবে না। আমি চাপাবাজ না। আমি অতি শান্ত শিষ্ট ভদ্র নিরীহ একটা বাচ্চা।’

আদর আড়চোখে তাকিয়ে বিরবির করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকলো, ‘নিজের ঢোল নিজেই পিটায়।’

ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো আর্দ্র ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। চোখ পাকিয়ে আদর বলল, ‘আমার ফোনে তোর কি? আর লক জানোস?’

আর্দ্র হে হে করে হেসে বলল, ‘সেদিন খুলার সময় দেখছিলাম।’

‘কি খুঁজোস ফোনে?’

খুঁজায় ব্যস্ত হয়ে আর্দ্র জবাব দিলো,

‘ওই যে টিকলির নাম্বার। কোথায়? ডিলিট করে দিয়েছো নাকি?’

‘হুম। রেখে কি লাভ?’

আর্দ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল, ‘কেনো ডিলিট করেছো?’

আর্দ্রর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টে আদর প্রশ্ন করলো,

‘তুই কি কাউকে কখনো ভালোবেসেছিলি আর্দ্র?’

ঠোঁট উল্টিয়ে আর্দ্র জবাব দেয়, ‘ভালোবাসা আবার কি ভাইয়া? এসব আমার আসে না। আমি অতি ভদ্র একটা পোলা। তুমি আমাকে পাকায় ফেলতাছো। এসব ভালোবাসা টালোবাসা আবার কি হ্যাঁ? আমি ছোট মানুষ না?’

আদর বিরক্তিতে বলল, ‘দূর ড্রামাবাজ, তুই বাইর হ তো আমার রুম থেকে।’

‘নাহ যাবো না। আমি এখন পড়বো।’

‘যা। তাড়াতাড়ি যা। আর গিয়ে মাকে বল খাবার দিতে।’

______________________________

আদরকে না দেখার আজ ত্রিশ দিন। ক্যালেন্ডারের পাতায় মার্ক করে রাখলো টিকলি। লাল সাইনপেন দিয়ে মার্ক করা বৃত্ত টা জ্বলজ্বল করে টিকলির দুঃখ জানান দিচ্ছিলো। টিকলির ফোনের দিকে তাকালো। ফোনের লক স্ক্রিন খোলার পর ই হোম ওয়ালপেপারে আদর আর তার ছবি ভেসে উঠলো। ছবিটা অপ্রত্যাশিত ভাবে তুলে ফেলা হয়েছিলো চোয়াখালী বনে হরিণ দেখতে গিয়ে। একপাশে আদরের মুখ আরেকপাশে টিকলি মাঝখান দিয়ে দেখা যাচ্ছে হরিণরা ঘাটে জল খাচ্ছে।

টিকলি ফোনের উপর ছবিটায় হাত বুলালো। একবার দুইবার বারংবার। কিছু স্মৃতি তাজা করে রাখছে আদরকে। হঠাৎ টিকলির মাথায় টোকা পরলো। টিকলি তৎক্ষণাৎ ফোন অফ করে দিলো। পেছনে তাকাতেই দেখলো রাহুল দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। টিকলি ভয় পেয়ে তাকালো। রাহুল ভাইয়া কি কিছু দেখে ফেলল?

‘কিরে ভেবলি? ফোনে কি দেখিস? বয়ফ্রেন্ডের ছবি?’

টিকলি ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। বুকে হাত দিয়ে দম নিয়ে রাগান্বিত ভাবে বলল,

‘ভেবলি ডাকবা না আমাকে।’

‘ভেবলি ভেবলি ভেবলি। তুই তো ভেবলি ই।’

রাহুল চোখ উল্টে বলল। এ বাড়িতে রাহুল আছে দুইদিন ধরে। টিকলি থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে থাকলো। মাথা ব্যথা করে উঠলো হঠাৎ। রাহুল জিজ্ঞাসা করলো,

‘তোর না মাথা ব্যথা? কমেছে?’

মাথায় এক হাত রেখে টিকলি জবাব দিলো, ‘নাহ ভাইয়া।’

‘একটা ডাক্তার দেখানো দরকার।’

প্রায় পাঁচ সাতদিন থেকে টিকলির জোরালো মাথা ব্যথা। ব্যথা আগেও হতো তবে অল্প। কিন্তু ইদানীং প্রচুর মাথা ব্যথা করছে। থাকতে না পেরে দুদিন আগে মাকে বলেছে। শায়লা আক্তার বলেছেন,

‘আর দুটো দিন দেখ। যদি মাথা ব্যথা না কমে তাহলে ডাক্তার দেখাবো।’

টিকলি রাহুলের কথার উত্তরে বলল, ‘দেখি। আর আমার ঠান্ডার সমস্যা প্লাস চোখের সমস্যা না? এর জন্য হয়তো মাথা ব্যথা করে।’

‘হুম। তবুও ডাক্তার দেখা। মাথার ব্যপার হেলাফেলা করতে নেই।’

রাহুল চলে যেতে ধরলো। টিকলি নিচু গলায় বলল,

‘রাহুল ভাইয়া, আজকে মনে হয় মামা আসবে।’

রাহুল পেছন ঘুরে ভ্রু কুচকে তাকালো। গম্ভীর গলায় বলল, ‘আমি যখনি আসি তখনি তার আসতে হয়?’

টিকলি মাথা নিচু করে রাখলো। গমগমে মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো রাহুল। টিকলি জানে মামা যতদিন এই বাড়িতে থাকবে রাহুল একবারের জন্যেও ঘর থেকে বের হবে না। বেচারা মামা টা কত কষ্ট করে আসে শুধু একমাত্র ছেলেকে দেখার জন্য। আর ছেলে তার……। টিকলি আর ভাবলো না। জোরালো দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো ক্যালেন্ডারে দৃষ্টি স্থাপন করলো।

,

রুহুল হক চা খাচ্ছিলেন। কাপে চুমুক দেওয়ার আগেই এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজলেন কিন্তু পেলেন না। টিকলি টায়রা সামনে বসে মামাকে দেখছিলো। মায়ের এই একটা মাত্র বড় ভাই টিকলি টায়রাকে ভীষণ আদর করে। মজা করে। তবে বেশ গুরুগম্ভীর। মায়ের আর ভাই বোন না থাকায় এই একমাত্র ভাইয়ের প্রতি তার দরদের শেষ নেই। আদরের কোনো কমতি নেই। চায়ের কাপ টা শব্দ তুলে টেবিলের উপর রেখে রুহুল হক বললেন,

‘টিকলি নাকি অসুস্থ? ‘

টিকলি ইতস্তত করে বলল, ‘কই মামাজান নাতো।’

রুহুল হক কপালে ভাজ ফেলে বলেন, ‘তোমার মা বলল যে, মাথা ব্যথা নাকি?’

‘হ্যা মামাজান তা করে।’

‘চলো তবে ডাক্তার দেখিয়ে আনি৷ আমি এজন্যই আরো এসেছি।’ এদিক ওদিক আড়চোখে তাকাতে তাকাতেই রুহুল হক জবাব দিলেন।

টায়রা শয়তানি করে ভাবুক গলায় বলল, ‘তাই মামাজান? কিন্তু বাবাও তো টিকলিকে ডাক্তার দেখাতে পারতো।’

রুহুল হক হকচকিয়ে বললেন, ‘আরে তোমার বাবা পারবে না। আমার কাছে একটা ভালো নিউরোলজিস্ট আছে। ইয়াং ডাক্তার। বেশ ভালো সম্পর্ক আমার তার সাথে। কাল নিয়ে যাবো। আজ বলে রাখছি।’

টিকলি মাথা নাড়ালো। কিছু বলল না। মাথা ব্যথা এতোটাই তীব্র যে একটু পর পর ই ঝিলিক মেরে উঠে। চুল টুল সব টেনে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। চিপের দু’পাশে অসহনীয় জ্বালা পোড়া। রুহুল হক দু’তলার বাম কোণার ঘরের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘বাড়িতে আর কেউ নেই?’

টায়রার আবারো ফাইজলামি জবাব, ‘আমাদের ছাড়া আর কাকে লাগবে আপনার মামাজান?’

রুহুল হক মনে মনে বিরক্ত হলেন। টিকলি টায়রাকে ইশারায় চুপ করতে বলে মামার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘রাহুল ভাইয়া আছে মামাজান। আপনি যেই ঘরটায় তাকিয়ে আছেন সেই ঘরটাতেই আছে।’

রুহুল হক টিকলির দিকে একবার তাকিয়ে উঠে চলে যেতে লাগলেন নিজের ঘরের দিকে। আর যাওয়ার আগে বলে গেলেন,

‘রাগ মানুষের ধ্বংসের কারণ। রাগ মানুষের দূরত্বের কারণ। রাগ মানুষের সম্পর্ক ভাঙার কারণ। রাগ ভুল বুঝাবুঝির কারণ। আর ভুল বুঝাবুঝি ভীষণ মারাত্মক, ধারালো এবং হিংস্র।’

চলবে❤️