#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৭
‘কাঠগোলাপের যে কাঁদা বারণ আছে।সে কাঁদলে যে অন্যজনের বুকে পীড়া হয় তা কি সে জানে?’
এমন বাক্যগুলো আরাবীর কানে এসে পৌছাতেই আরাবী মাথা নিচু করে রাখে।সে জানে লোকটা কে।তবে তার দিকে তাকাতে কেমন যেন ইতস্ততবোধ করছে আরাবী।আরাবীর কান্না করা বিধ্বস্ত মুশ্রীটা ও জায়ানকে দেখাতে চাচ্ছে না।তাই মাথা নিচু করে রাখলো।জায়ান তপ্ত শ্বাস ফেলে আরাবীর চিবুক ধরে ওকে নিজের দিক ফিরালো।এর কারনে আরাবী করুন দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকায়।না চাইতেও চোখের জলগুলো আবারও গাল গড়িয়ে পরছে।জায়ান আলতো হাতে সেই চোখের জলগুলো মুছে দিলো।তারপর মুখশ্রীটা এগিয়ে নিয়ে আরাবীর কপালে আদুরে স্পর্শ দিলো।আরাবী চোখ বন্ধ করে জায়ানের হাত খামছে ধরলো।জায়ান সরে আসতেই আরাবী পিটপিট চোখে জায়ানের দিকে তাকালো।খানিক তাকিয়েই রইলো।তারপর হুট করে একেবারে জায়ানের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে।দুহাতে জায়ানের পিঠ খামছে ধরে মুখ লুকায় জায়ানের বুকে।জায়ান খানিকটা পিছনে দিক এলিয়ে গেলেও।নিজেকে সামলে নেয়।তারপর আরাবী ভালোভাবে আকড়ে নেয় নিজের সাথে।আরাবী মুখ লুকিয়ে ফোপানো আওয়াজে কাঁদছে।কান্নার ফলে কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর পিঠ।জায়ান আরাবীর পিটে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
-‘ কাঁদলে কোন কিছু ঠিক হবে না আরাবী।কান্না না করে এটা ভাবো কিভাবে তোমার সব সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়।নিজেকে শক্ত করো আরাবী।এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে নাহ!’
আরাবী জায়ানের কথায় চুপটি করেই রইলো।প্রায় অনেকক্ষন বাদে আরাবী মুখ খুললো,
-‘ মায়ের কারনে আজ আমার এই হাল।তিনি যদি সেদিন নিজের অধিকারটুকু বুঝে নিতেন।আমার বাবার প্রতিটা জিনিসে উনার হক আছে আমার হক আছে।সেখানে উনি সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে চলে এলেন।তার এই ছোট্ট দোষের কারনে আজ আমার এই হাল।সেদিনের পর থেকে আমি রাস্তার কুকুরদের মতো মানুষের জঘন্য ব্যবহার সহ্য করে বড় হয়েছি।যেগুলো আমি ভোগ করবো আজ তা দিয়ে অন্যেরা বিলাসিতা করছে।আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আমি লোভি।কিন্তু এমনটা না।আপনি বলুন আমি আমার বাবার একমাত্র সন্তান।তার সবকিছুতে আমার অধিকার।আর আমি কেন আমার অধিকার ছেড়ে দিবো?আমার মা ছেড়ে দিয়ে এসেছে বলে কি আমি ছেড়ে দিবো? কখনই নাহ।একবার যখন শহরে এসেছি।আমার জন্মভূমিতে এসেছি।তখন সব সুধে আসলে আদায় করবো।কিন্তু আমাত মা নিজেই আমাকে আগাতে দিচ্ছে না।তিনি ঠিক সেই আগের মতোই সবটা করে যাচ্ছে।তিনি কেন বুঝেন না।দুনিয়াতে তার মতো সরল মানুষদের জন্যে বড্ড কঠিন।আমি হানিফ আহমেদকে নিয়েও প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম।সেখানেও তিনি আমায় বাধা দিলেন।গ্রামের মানুষদের ভয় দেখালেন।আমি প্রতিবাদ করলে নাকি হানিফ আহমেদ গ্রামের মানুষদের সাহায্যে আমাদের মেরে ফেলবেন।বিশ্বাস করুন সেদিন আমি নিজেকে নিয়ে একটুও ভয় পায়নি।ভয় পেয়েছি শুধু আমার মায়ের জন্যে।তার কিছু হলে আমি কিভাবে বাঁচবো?পুরো পৃথিবীতে তো সেই আমার একমাত্র মানুষ।আমার একমাত্র ভরসা স্থল ছিলো।মায়ের কারনেই ঠিক প্রতিবার আমি নিজেকে দমিয়ে ফেলি।কিন্তু আর কতো?বলতে পারবেন আর কতো?’
জায়ান আরাবীকে টেনে বুক থেকে উঠালো।আরাবীর গালে ধীরে স্পর্শ করলো।আরাবী চোখ বুজে নিতেই জায়ান আরাবীর সিক্ত চোখজোড়ায় নিজের অধর স্পর্শ করালো।দীর্ঘক্ষণ সেভাবেই থেকে সরে আসলো জায়ান।আরাবীর দুগালে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বলে,
-‘ তুমি যথেষ্ট স্ট্রোং একটা মেয়ে আরাবী।এইভাবে আর কাঁদবে না।শুধু একটু ধৈর্য ধরো।আমি আছি তো। তোমার পাশে সর্বদা আমি আছি আরাবী।সব ঠিক হয়ে যাবে।সব ঠিক করে দিবো আমি।যা তোমার তা সব তোমার কাছেই ফিরি আসবে। আমি তোমাকে প্রমিস করলাম।’
জায়ানের প্রতিটা কথায় আরাবীর মনটা প্রশান্তিতে ভর উঠলো।এই মানুষটার প্রতিটা কথায় আরাবী ভরসা খুঁজে পায়।নতুন করে সবটা শুরু করার মতো শক্তি খুজে পায়। আরাবী সিক্ত চোখেই হালকা হাসলো।জায়ানের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই আরাবীর শ্বাস আটকে আসার উপক্রম।ও লোকটার এতোটা কাছে তা তো টেরই পায়নি আরাবী।লজ্জায় মাথা নত করে ফেললো।একটু আগে জায়ান কি কি করেছে ভাবতেই শরীর কেমন শিরশিরিয়ে উঠছে আরাবী।নিজেকে জায়ানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে উঠে দাড়ালো।কোনরকমে বললো,
-‘ আ..আমি নিচে যাচ্ছি।আপনিও আসুন।দ্রুত!’
আরাবী চলে যেতে নিতেই হঠাৎ ওড়নায় টান খেলো।চমকে উঠে আরাবী।গলার কাছের ওড়নাটা শক্ত হাতে ধরে ফেললো।শরীর কাপছে আরাবীর।জায়ান এইভাবে ওর ওড়না টেনে ধরবে ভাবতেও পারিনি ও।আরাবী কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,
-‘ কি করছেন?এই..এইভাবে ওড়না টেনে ধরেছেন কেন?ছা..ছাড়ুন না।কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে?ছাড়ুন না প্লিজ!’
জায়ানের কোন সারাশব্দ পাওয়া গেলো না।আরাবী ওড়না টেনে নিজের কাছে আনার জন্যে আবারও চেষ্টা করলো আবারও ব্যর্থ হলো আরাবী।অসহায় কন্ঠে বলে,
-‘ কি কর..করছেন?ছেড়ে দিন প্লিজ।’
জায়ান এইবারও চুপ।আরাবী সহ্য করতে না পেরে এইবার পিছনে ঘুরে জায়ানের দিকে তাকালো।তাকাতেই বিশাল বড় একটা ঝাটকা খেলো।বিষ্ময়ে আরাবীর মুখটা হা হয়ে গেলো। এমনটা যে হবে কাশ্মিনকালেও ভাবেনি আরাবী।ওর ওড়নাটা জায়ান টেনে ধরে নি।বরংচ ওর ওড়নাটা ছাদের রেলিংয়ের রডের সাথে আটকে গিয়েছে।জায়ান পকেটে দু হাত গুজে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তাকিয়ে আরাবীর দিক।এখনো ওর বিষ্ময় কাটছে না।জায়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-‘ আশেপাশে একবার ভালোভাবে তাকিয়ে থেকে তারপর কিছু বলবে ঠিক আছে?নাহলে মানুষ তোমাকে পাগল ভাববে।’
আরাবীর মুখটা এখনো হা হয়ে আছে।অবাকতার রেশ এখনো কাটাতে পারেনি একবার ও নিজের ওড়নার দিকে তাকাচ্ছে তো একবার জায়ানের দিকে তাকাচ্ছে।জায়ান আবারও বললো,
-‘ মুখটা বন্ধ করো নয়তো মশা ঢুকবে।’
আরাবী থতমত খেয়ে দ্রুত মুখের হা টা বন্ধ করে নিলো।ও আরো ভেবেছিলো আরাবী চলে যাচ্ছিলো এই জন্যে বুঝি জায়ান ওর ওড়না টেনে ধরেছে।যেমনটা আরাবী ফিল্মে দেখে হিরোরা করে হিরোইনদের সাথে।কিন্তু ওর কপালে যে এমনটা হবে না এটা ভাবেনি আরাবী।মনে মনে নিজেকে একশো একটা গালি দিলো আরাবী।পরক্ষনে আবার জায়ানকেও দোষারোপ করলো।অসভ্য লোকটা এতোক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওর কথা শুনে গেছে।একবার বলেও নি।আরাবী মুখ ফুলিউএ নিলো।কথা বলবে না বজ্জাত লোকটার সাথে।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছিলো খারুশ লোকটা।জায়ান হালকা হাসলো আরাবীর মুখ ফুলানো দেখে।মেয়েটার দুয়েক সময় এমন বাচ্চামো করে জায়ান না চাইতেও হেসে ফেলে আরাবীর কর্মকান্ড দেখে। জায়ান এইবার এগিয়ে গিয়ে যত্নশীল প্রেমিকের মতো আরাবীর ওড়নাটা ছাড়িয়ে নিলো।তারপর সেটা নিয়ে আরাবীর মাথায় ঘোমটা দিয়ে দিলো।আরাবী মাথা নিচু করে হাত কচলাতে লাগলো।লজ্জা লাগছে ওর একটু আগের কর্মকান্ডের জন্যে।জায়ান আরাবীর কানের কাছে মুখ নিয়ে মাদকতা ভরপুর কন্ঠে বললো,
-‘ আজ ওড়না আমি টেনে ধরেনি।তবে ধরবো না এমনটাও গ্যারান্টি দিবো না।শুধু বিয়েটা হতে দেও।তোমার সাথে এমন সব কান্ড ঘটবে তুমি নিজেকে স্বাভাবিক করে ঠিকবাবে শ্বাস নেওয়ারও সময় পাবেনা।আমার কথাটা মিলিয়ে নিও।’
কথাগুলো বলা শেষ হতেই জায়ান পকেটে দু হাত গুজে নির্বিকাত ভঙ্গিতে চলে গেলো ছাদ থেকে।কিন্তু এদিকে যে লোকটা জানলোই না ও আরাবীর মনে ঠিক কতো ডিগ্রি পরিমান ঝড় উঠিয়ে দিয়েছে।অনুভূতির প্রবল ঝড়ে আরাবীর শ্বাস প্রায় আটকে।শরীরের কাঁপা কাঁপি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে।আরাবী তো বুঝতেই পারছে না যে ও আরাবী নিজে কাঁপছে না জমিন কাঁপছে।
#চলবে______________
#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৮
ধুমসে শপিং করা হচ্ছে।পরশুদিন আরাবী আর জায়ানের বাগদানের অনুষ্ঠান হবে।তার ঠিক তিনদিন পর থেকেই বিয়ের সকল অনুষ্ঠান শুরু হবে।তাই ওরা প্লান করেছে দুদিনের মাঝেই বিয়ের সকল প্রকার কেনা কাটা সেরে ফেলবে।পুরো পরিবার হাজির শপিং করার জন্যে।প্রায় সবারই শপিং শেষ এখন শুধু আরাবীর শপিংগুলোই বাকি। এতো এতো শাড়ি, গাউন, লেহেংগা বের করে রাখা হয়েছে।কিন্তু একটাও পছন্দ হচ্ছে না কারো।নূর কতোক্ষন বলছে এটা ট্রায় করো আবার সাথি বলছে এটা ট্রায় করে আসো। এগুলো করতে করতেই আরাবীর দম ফুরিয়ে আসার উপক্রম।অসহায় দৃষ্টিতে সাথি আর নূরের কার্যকালাপ দেখছে ও। আরাবী ক্লান্ত চোখে আশেপাশে নজর ঘুরালো।কিন্তু কাঙ্খিত মানুষটাকে না দেখতে পেয়ে খানিক চিন্তিত হলো ও।লোকটা গেলো কোথায়?কতোক্ষন যাবত দেখছে না।হঠাৎ এইভাবে সবার মাঝ থেকে উধাও হয়ে যাবার মানে কি? আরাবী নূরের কানে কানে ধীর আওয়াজে বললো,
-‘ নূর! তোমার ভাই কোথায় গিয়েছে বলতে পারো?অনেকক্ষন হলো দেখছি না।’
আরাবীর কথায় নূর দুষ্টু হাসি দিলো।ভ্রু নাচিঁয়ে বলে,
-‘ কি ব্যাপার আমার ভাইকে এতো খোজাখুজি কেন হ্যা?’
-‘ তো আমাকে খুঁজবে না তো কাকে খুজবে? ডাফার একটা!’
হঠাৎ এমন গম্ভীর কন্ঠে চমকে উঠে নূর আর আরাবী।পিছনে ফিরে দেখে জায়ান পকেটে দুহাত গুজে নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।তার শীতল দৃষ্টি সর্বদার মতো আরাবীর উপর। আরাবী ওই দৃষ্টির তেজ সহ্য করতে না পেরে চোখ নামিয়ে নিলো।জায়ান সাথিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ মা বাড়ি যাবে নাহ?অনেক রাত তো হলো।চলো বাড়িতে যাই।’
নূর চেচিঁয়ে উঠলো তৎক্ষনাৎ,
-‘ কি বলছো ভাইয়া?বাড়ি যাবো মানে?কিসের বাড়ি যাবো?ভাবির জন্যে এখনো বাকি আছে শপিং করা।’
জায়ান শান্ত কন্ঠে বলে,
-‘ জাস্ট কিপ কুয়াইট।ওর জন্যে তোদের শপিং করা লাগবে নাহ।’
নূর সাথে সাথে রেগেমেগে সাথিকে বলে,
-‘ আম্মু তোমার ছেলেকে বলবে? ও সবসময় এমন করে কেন?’
জায়ান নূরের এমন চিল্লাপাল্লা শুনে বিরক্ত চোখে সাথির দিক তাকালো।চোখের ইশারায় কিছু একটা বুঝাতেই সাথি সাথে সাথে হাসেন।নূরকে বলে উঠেন,
-‘ আরাবীর শপিংয়ের জন্যে তোর চিন্তা করা লাগবে না।তুই চুপ থাক।’
নূর কাঁদো কাঁদো মুখ করে রাখলো সাথির কথা শুনে।পরক্ষনে কিছু একটা মনে পরতেই হাসি ফুটে উঠলো ওর ঠোঁটের কোণে। জায়ানের দিকে হাসি মুখে তাকাতেই জায়ান নিজেও হালকা হাসলো।তারপর সবাই যার যার শপিং নিয়ে পেমেন্ট করে গাড়িতে উঠে বসলো।আরাবীও গাড়িতে উঠতে নিতেই জায়ান ওর হাত ধরে থামিয়ে দেয়।আরাবী এতে প্রশ্ন করলো,
-‘ কি হলো?হাত ধরে আছেন কেন?গাড়িতে উঠবো না?’
জায়ানের তৎক্ষনাৎ জবাব,
-‘ নাহ! ওরা যাবে।তুমি আমার সাথে যাবে।’
আরাবী বুঝতে না পেরে বলে,
-‘ হ্যা যাবো আপনার সাথে।কিন্তু আপনি গাড়িতে উঠছেন না আর আমাকেও কেন উঠতে দিচ্ছেন নাহ?’
জায়ান এইবার প্রচুর বিরক্ত হলো।প্রায় একপ্রকার ধমকে বলে,
-‘ এতো কথা বলো কেন?চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো আমার সাথে।’
আরাবী হালকা কেঁপে উঠলো জায়ানের কথায়।এইভাবে বলার কি হলো?ভালোভাবে বললেই হতো? তাই নাহ? খারুশদের মতো ব্যবহার করে।আর কথাই বলবে না আরাবী।জায়ান হয়তো বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা।তাই এইবার শান্ত ভাবে বলে,
-‘ আমি আর তুমি পরে যাবো।তোমার সাথে আলাদা একটু টাইম স্পেন্ড করবো বুঝেছো?’
জায়ানের শান্ত কন্ঠের এই কথাগুলো শুনে আরাবীর মন ভালো হয়ে গেলো সাথে সাথে।এইযে লোকটার উপর অভিমান করেছিলো আরাবী।কিন্তু কোথায় গেলো সেই অভিমান?লোকটার একটুখানি ভালো কথা শুনলেই আরাবীর মন বরফের মতো গলে যায়।একটুও অভিমান ধরে রাখতে পারেনাহ।কেন পারে নাহ?এই মনকে নিয়ে কি করবে আরাবী?
___________
সবাই চলে যেতেই জায়ান আরাবীকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি স্টার্ট দিতেই আরাবী বাহিরে দৃষ্টি ফেলে রাতের পরিবেশ উপভোগ করতে লাগলো।কিন্তু এইভাবে ভালো লাগছে না ওর।আরাবী ছোট্ট আওয়াজে বলে,
-‘ কাঁচটা নামিয়ে দিন না!’
জায়ান কোন কথা বললো না।তবে ধীরে একটুখানি কাঁচ নামিয়ে দিলো।নিমিষেই শো শো আওয়াজে বাতাস প্রবেশ করলো গাড়ির ভীতর।আরাবী আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।হঠাৎ জায়ানের ধীর আওয়াজ শোনা গেলো,
-‘ হিজাবটা খুলে ফেলো আরাবী।’
আরাবী জিজ্ঞাসাসূচক চাহনী তাকালো জায়ানের দিকে।তবে কোন প্রশব করলো না।বিনা বাক্যে আস্তে ধীরে হিজাবটা খুলে ফেললো।হিজাবটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে রেখে আবারও বাহিরের দিকে নজর দিলো আরাবী।আচমকা চুলে টান লাগায় ভড়কে যায় আরাবী।প্রবল বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যায় ওর।আরাবী চুলে হাত দিয়ে জায়ানের দিকে তাকালো।দেখে জায়ানের হাতে ওর চুলের ক্লিপ।যেটা জায়ান খুলে নিয়েছে মাত্র ওর চুল থেকে।আরাবী বিরক্ত হলো। এইভাবে চুলগুলো খুলে দেওয়ার মানে কি? আরাবী জায়ানের হাত থেকে ক্লিপটা নিয়ে নিলো।যেইনা আবার চুল বাধতে যাবে।সাথে সাথে জায়ান ধমকে উঠে,
-‘ ডোন্ট ডু দিছ। চুলগুলো খোলা রাখো।’
আরাবী চোখ মুখ কুচকে ফেললো।প্রশ্ন করলো,
-‘ আরে এইভাবে খোলা চুলে কিভাবে কি?বাতাসে দেখেন না চুলগুলো উড়াউড়ি করছে।আপনিই একটু পর বিরক্ত হবেন।’
জায়ানের সরল কন্ঠ,
-‘ হবো না।শুধু যেটা বলেছি আমি তাই করো।’
আরাবী আর অহেতুক কথা বাড়ালো না।চুপচাপ বাহিরে তাকিয়ে থাকলো। কিছুক্ষন বাদে গাড়ি থেমে যেতেই জায়ান গাড়ি থেকে বের হয়ে।ঘুরে এসে আরাবীকেও নামালো। আরাবী বললো,
-‘ কোথায় আমরা?’
জায়ান কোন জবাব দিলো না। তবে খুব দায়িত্বশীল ব্যাক্তির মতো আরাবী নরম ছোট্ট হাতটি নিজের শক্তপোক্ত হাতটি দিয়ে আঁকড়ে ধরলো।তা দেখে মুচঁকি হাসলো আরাবী।জায়ান আরাবীকে নিয়ে হাটতে লাগলো।নির্জন নিরিবিলি রাস্তা।রাস্তার দুধারে অসংখ্য ঘাস হয়ে আছে।আকাশে মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে।মৃদ্যু মন্দ বাতাস।নানান পোকাদের আওয়াজ ভেসে আসছে কানে।এমন মধুময় আবহাওয়া।আর সাথে যদি প্রিয় মানুষটি থাকে তাহলে আর কি লাগে?আরাবী আর কোন টু শব্দ করলো না।চুপচাপ জায়ানের হাতে হাত রেখে হাটতে লাগলো নির্বিকারে।সে জানে তার পাশের মানুষটিই একমাত্র পুরুষ মানুষ। যাকে আরাবী চোখ বুজে বিশ্বাস করতে পারবে। হাটতে হাটতে একটা ঘাসে ভরা মাঠ দেখতে পেলো আরাবী।সেখানে বড় একটা গাছ যার চারধারে ইট সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে দেওয়া।জায়ান আরাবীকে নিয়ে সেখানে বসালো।তারপর জায়ান হুট করে আরাবীর কোলে মাথা দিয়ে টানটান হয়ে সুয়ে পরলো।কেঁপে উঠলো আরাবী।সর্বাঙ্গ শিরশিরিয়ে উঠলো। জায়ান চোখ বুজে আছে।হঠাৎ সেইভাবেই বললো,
-‘ কিছুই তো করলাম না।তাও এমন কাঁপাকাঁপি করছো কেন?’
আরাবী থেমে থেমে বলে,
-‘ আ..আপনি এই..ভাবে…..!’
-‘ হ্যা আমি এইভাবে তারপর?’
আরাবী কি বলবে ভেবে পেলো না।ওর গলা আটকে আসছে।জায়ান আরাবীর হাতটা নিয়ে ওর মাথায় রাখলো। ধীর আওয়াজে বলে,
-‘ মাথায় হাত বুলিয়ে দেও আরাবী।মাথাটা ব্যাথা করছে।’
আরাবী জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।আলতো হাতে জায়ানের চুলগুলো টেনে দিতে লাগলো।চুলগুলো কি সফ্ট জায়ানের।ধরলেই আরাবীর হাত ফসকে বেড়িয়ে আসছে।আরাবী হেসে দিলো।পরক্ষনে আবারও জায়ানের চুল টেনে দিতে লাগলো।কপালে স্লাইডও করে দিচ্ছে।জায়ান ততোক্ষনে ঘুম। আরাবী জায়ানের গালে হাত বুলিয়ে দিলো।চোখের পাতায় ছুঁয়ে দিতেই জায়ান ঘুমের ঘোরেই হালকা কেঁপে উঠলো।আরাবী হেসে দিলো।আবারও গালে,নাকে, সর্বশেষে ঠোঁটে হাত দিতে গিয়েও থেমে গেলো।ইস, কি করতে যাচ্ছিলো ও।জায়ান যদি টের পেয়ে যেতো।কিন্তু কিভাবে বুঝবে জায়ান তো ঘুমাচ্ছে।আচ্ছা আরাবী যদি একটা চুমু খায় জায়ানের কপালে তবে কি জায়ান উঠে যাবে? লোকটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে টের পাবে না।আরাবী ধীরে ওর মুখটা নামিয়ে অতি সাবধানে নিজের নরম ওষ্ঠজোড়া পরম ভালোবাসা নিয়ে স্পর্শ করলো জায়ানের কপালে।সেকেন্ড গড়াতেই দ্রুত সরে আসলো।কারন জায়ান হাললা নড়ে উঠেছে।লজ্জায় আরাবী লাল নীল হয়ে গেলো।মনে মনে নিজেকে একশো একবার বাহবা দিচ্ছে।কি একটা ভয়ানক কাজই না করে ফেললো ও।অবশ্য জায়ান জেগে থাকলে এমনটা কাশ্মিনকালেও করতে পারতো না আরাবী।দেখা যেতো এমন চিন্তাভাবনা মাথায় আনতে গেলেও লজ্জা ও জ্ঞান হারিয়ে পরে যেতো।লোকটা ঘুমানোর কারনেই আজ এটা করতে সক্ষম হয়েছে আরাবী।লাজুক হেসে আরাবী আবারও জায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
#চলবে__________