বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব-২৯+৩০

0
876

#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৯
প্রবল বেগে বাতাস বইছে।আকাশে এখন আর চাঁদের দেখা নেই।কালো মেঘে ডেকে গিয়েছে আকাশ।হালকা বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আকাশে।একটু পরেই বুঝি এই নামলো বারিধারা।আরাবী সেদিকে তাকিয়ে খানিক চিন্তিত হলো।ঘুমন্ত জায়ানকে উঠাতে ইচ্ছে করছে না আরাবীর।কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে লোকটা।তবুও এখন না জাগালে বাড়ি যেতে পারবে না।এই বৃষ্টির মাঝে ড্রাইভ করাটাও কষ্টসাধ্য হবে জায়ানের জন্যে।আরাবী আলতো স্বরে ডাকলো, ‘ শুনছেন?উঠবেন নাহ?বৃষ্টি নামবে তো!’

জবাব নেই জায়ানের।আরাবী তপ্ত শ্বাস ফেললো।হালকাভাবে জায়ানকে ধাক্কা দিয়ে বলে, ‘ উঠুন।উঠুন।বৃষ্টি নামবে।শুনছেন?’

এবার যেন একটু নড়েচড়ে উঠলো জায়ান।হালকাভাবে চোখ মেলে তাকায় জায়ান।জিজ্ঞেস করলো,’ কয়টা বাজে?’

আরাবী চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।লোকটার ঘুম ঘুম কন্ঠ এতোটা ভয়ানক যে আরাবীর শরীরের প্রতিটা লোমকূপ শুদ্ধ দাঁড়িয়ে গিয়েছে।জায়ান উঠে বসেছে।আরাবীর দিকে একপলক তাকিয়ে ফের একই প্রশ্ন করলে।এইবার আরাবী ধীরে বলে, ‘ দশটা বাজে।’

জায়ান উঠে দাড়ালো।আরাবীর হাত ধরে ওকেই দাড় করালো।কয়েকপলক এদিক ওদিক তাকিয়ে চারপাশ দেখে নিলো। গম্ভীর কন্ঠে বলে, ‘ ওড়নাটা ভালোভাবে মাথায় স্কার্ফের মতো পেচিয়ে নেও আরাবী!’

আরাবী পিটপিট চোখে তাকিয়ে জায়ানের দিক।জায়ান হালকা উচ্চস্বরে বলে, ‘দ্রুত করো।’

আরাবী তাড়াতাড়ি উড়নাটা সেইভাবেই পরে নিলো যেভাবে জায়ান বলেছে।এইভাবে ওড়নাটা নেওয়ায় বেশ ঠান্ডা লাগছে আরাবীর।কারন ওড়নাটা মাথা ঢেকে ওড়নার দুপ্রান্ত সরুভাবে কাধের দুপাশ দিয়ে রাখা।এতে হাতগুলোতে বেশ ঠান্ডা লাগছে।জায়ান আরাবীর দিকে কয়েকপলক তাকিয়ে গায়ের কোটটা খুলে যত্নশীলতার সাথে আরাবীর গায়ে মেলে দেয়।তারপর আরাবীর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।আরাবী ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে।লোকটা এতো কেন বুঝে ওকে?কিভাবে এতোটা সুন্দরভাবে ভালোবাসতে পারে?আরাবী ওর আর জায়ানের মুষ্টিবদ্ধকরা হাতজোড়ার দিকে তাকায়।তৃপ্তিকর চাহনী নিক্ষেপ করে ও নিজেও জায়ানের হাতটা শক্ত করে ধরলো।মনে মনে বললো, ‘ এইযে ধরলাম আপনার হাত আর কখনো ছাড়বোনা।ওয়াদা করলাম আমি।’

জায়ান আরাবীর দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো।তারপর আরাবীকে নিয়ে সেই নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে হাটতে শুরু করলো।এখন বাড়ি যাবে।অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।জায়ানের ফোন বাজছে।জায়ান সেটা রিসিভ করে কানে লাগালো।বলছে, ‘ হু! আসছি।এইতো কাছেই ছিলাম।ডোন্ট বি পেনিক আম্মু।আমি থাকতে তোমার বউমার কিছু হবে ভাবলে কিভাবে?আচ্ছা।ওকে।’

ফোন রাখতেই আরাবীর প্রশ্ন, ‘ আন্টি ছিলো?’

জায়ান সরু চোখে তাকায় আরাবীর দিকে।হালকা রাগি গলায় বলে, ‘ আন্টি কি? আম্মু বলবে।’

আরাবী এমন প্রশ্নে কি বলবে ভেবে পেলো না।বিয়েটা এখনো হয়নি।এখনি ‘ আম্মু ‘ বলতে কেমন যেন লজ্জা লাগে।আরাবী কথা ঘুরানোর জন্যে বললো,’ আপনি এখানে আগে এসেছেন?’

জায়ান সামনের দিক দৃষ্টি রেখেই জবাব দেয়, ‘ হু! প্রায় আসি।আমি যখন অতিরিক্ত কষ্ট পাই অথবা খুশি হই। তখন এসে চলে আসি।’

আরাবী খুব আবেগ নিয়ে তাকালো জায়ানের দিকে।হালকা আওয়াজে বলে, ‘ তো আজ এসেছেন কি করনে?কষ্টে না সুখে?’

জায়ান থেমে গেলো।আরাবীর চোখে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো।কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে, ‘ তুমি বলো কেন এসেছি?’

আরাবী জায়ানের ওই চোখে দেখতে পেলো তৃপ্তির ছোঁয়া। চোখে মুখে সুখের আভাস।খুশির ঝিলিক।আরাবী চোখ নামিয়ে হাসলো।বললো, ‘ বুঝে নিয়েছি আমি।’

জায়ান আর কথা বাড়ালো না।বাতাসের বেগ বারছে।দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে আরাবীকে নিয়ে।তারপর গাড়ি ছুটালো গন্তব্যের দিকে।

______________
ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরুলো আরাবী।একটু আগেই ওরা বাড়ি এসে পৌছিয়েছে।বাহিরে হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। এসেই গোসল নিয়েছে আরাবী।বাহিরে এতো বাতাস ছিলো যে শরীর পুরো ধুলোবালিতে ভরে গিয়েছে।আরাবী তোয়ালে নিয়ে মাথাটা ভালোভাবে মুছে নিলো।তারপর বারান্দার দিকে আগালো।তোয়ালেটা ভালোভাবে নেড়ে দিয়ে।যেই ঘুরে আসতে নিবে ওমনেই জায়ানের বারান্দার দিকে তাকাতেই চোখ বড় হয়ে যায় আরাবীর।জায়ান শুধু মাত্র একটা শর্ট প্যান্ট পরে৷ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।দেখে বুঝাই যাচ্ছে জায়ান নিজেও গোসল নিয়েছে।জায়ানের হাতের দিকে তাকাতেই আরাবীর কপাল কুচঁকে আসলো।হাতে ওটা কিসের বোতল দেখা যাচ্ছে?আরাবী আরেকটু মনোযোগ দিয়ে দেখলো।জিনিসটা কি বুঝতে পেরে আরাবী বিষ্ময়ে কি করবে ভেবে পেলো না। প্রায় চেঁচানো সুরে বলে, ‘ আপকি কি ড্রিংস করছেন?’

হঠাৎ আরাবীর কন্ঠ শুনতে পেয়ে জায়ান বোধহয় একটু চমকালো।আরাবীর দিকে তাকাতেই কপাল কুচকে ফেলে জায়ান।ভ্রু-কুচকে বলে, ‘ তুমি এতো রাতে শাওয়ার নিয়েছো?’

আরাবী কেমন মুহূর্তেই পাথর দৃষ্টিতে তাকালো জায়ানের দিকে।শক্ত কন্ঠে বলে, ‘ আমি একটা কুয়েশ্চন করেছি।সেটা আন্সার দিন!’

জায়ান বেশ অবাক হলো আরাবীর শক্ত আচড়ণ দেখে।পরক্ষনে বাঁকা হেসে বলে, ‘ যদি বলি হ্যা?তবে?’

আরাবী রাগি গলায় বললো, ‘ ছেড়ে দিতে বলবো এক্ষুনি।ছেড়ে দিন!’

জায়ানের ত্যাড়া জবাব, ‘ যদি না ছাড়ি?’

আরাবীর ভীতরটা দুমড়ে মুচড়ে আসছে।এই মদের নেশা কতোটা ভয়ানক হয় আরাবী তা খুব ভালোভাবে জানে।এই মদের নেশার কারনেই তো ওই জানোয়ার লোকটা ওকে যার তার কাছে বিক্রি করে দিতে নিয়েছিলো।এই মদের নেশাই ওর আর ওর মা’কে প্রতিনিয়ত মার খেতে হতো।আরাবীর চোখে পানি টলমল করছে।এই বুঝি এক্ষুনি গড়িয়ে পরবে।আরাবী ধরা গলায় বলে, ‘ মদ না ছাড়তে পারলে আমায় ছেড়ে দিন।’

কথাটা বলে আর একমুহূর্ত দাড়ালো না আরাবী।দ্রুত পায়ে রুমে গিয়ে বারান্দার দরজা আটকে দিলো।এদিকে আরাবী যে এমন একটা কথা বলবে ভাবেনি জায়ান।চোখ বুঝে জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেললো জায়ান।চোখগুলো লাল হয়ে গিয়েছে।হাতের বোতলটা সজোড়ে আছাড় মেরে ভেঙ্গে তৎক্ষনাৎ ও নিজেও রুমে প্রবেশ কর ঠাস করে বারান্দার দরজা আটকে দিলো।সেই আওয়াজের এতোটাই তীব্র আওয়াজ ছিলো যে আরাবীর শরীর সেই শব্দে ভয়ানকভাবে কেঁপে উঠলো।চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো দুফোটা জল।আরাবী দুহাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে উঠলো। জায়ানকে ওইভাবে কথাগুলো বলে ওর নিজের মনটাই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে সহস্রবার।তবে কি বা করবে আরাবী? লোকটাকে মদের বোতল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর নিজের হিতাহিত জ্ঞান শক্তিই হারিয়ে ফেলেছিলো।ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে জায়ান নেশা করে।এটা কখনই মানতে পারবে না আরাবী।কখনই না।উপুর হয়ে বিছানায় সুয়ে সেইভাবেই কাঁদতে লাগলো আরাবী।একসময় ঘুমিয়ে পরলো।
কি হয়ে গেলো। এইতো কয়েকমুহূর্ত আগেই ও আর জায়ান কতোটা কাছাকাছি ছিলো,পাশা পাশি ছিলো।দুজনের হাত পরস্পরের হাতের মাঝে ছিলো।আর এখন একজনের মনে তীব্র অভিমান।তো আরেকজনের মনে তীব্র রাগ পোষন করা।
তবে মনে রাখবেন।মেয়েরা অভিমান করে আরো বেশী ভালবাসার জন্য, আর ছেলেরা অভিমান করে ভালোবাসা ভালোভাবে বোঝানোর জন্য। মানুষ তার সাথেই রাগ অভিমান বেশি করে, যাকে সে ভালোবাসে।
তবে মনে রাখবেন অভিমানের মাত্রাটা যেন ওতোটা বেশি না হয়।যতোটা বেশি হলে সেই অভিমান গুলো জমতে জমতে একসময় পাথরের রূপ ধারন করে। অভিমান গাঢ় হওয়ার আগেই প্রিয় মানুষটির অভিমান ভেঙ্গে দিবেন জলদি।
———-
আরাবী ঘুমিয়ে পরেছে।বাহির হতে আরাবীর মায়ের গলা শোনা যাচ্ছে।তিনি বেশ কয়েকবার ডাকলেন আরাবীকে।তবে আরাবীর কোন সারাশব্দ পাওয়া গেলো না। আরাবীর মা চুপচাপ চলে গেলেন।তার মনটাও ভার হয়ে আছে।মেয়েটা সেদিন কি কান্নাকাটিই না করলো।তারপর থেকে ঠিকভাবে কথা বলছে না।মেয়ে তার একরোখা জিদ নিয়ে আছে।তাকে বারবার বলছে আরাবীর কথায় রাজি হয়ে যেতে।কিন্তু মেয়েকে তিনি কিভাবে বুঝাবেন।সবকিছু তো আর সব জায়গায় জোড় খাটালে হয় না তাইনাহ?ভীষন ভয় হয় আরাবীর মায়ের।নিজের স্বামিকে হারিয়ে এখন তার একমাত্র বেচে থাকার উৎস তার মেয়ে।তার আরাবী।আর ওর কিছু হলে তিনি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবেন না।আরাবীর মা চোখের জলটুকু মুছে নিলেন।তারপর চলে গেলেন নিজ রুমে।

#চলবে__________

#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩০

আজ জায়ান আর আরাবীর বাগদান।সকাল থেকে বেশ তোড়জোড় সব কাজের জন্যে।কিন্তু যাদের জন্যে এতো এতো আয়োজন। তারাই যেন মনমরা হয়ে আছে। কাল সারাদিনে আরাবী আর জায়ান একে-অপরের সাথে কথা বলেনি।না দেখা করেছে। বাড়ি থেকে একপাও বাহিরে দেয়নি দুজনে। বিছানায় স্বয়নরত আরাবী কেমন ছটফট করছে।অস্থির হচ্ছে।ভালো লাগছে না কিছু। প্রচন্ড কান্নায় দম আটকে আসছে। কান্না না করতে পারায় কন্ঠচালিতে চাপ প্রয়োগ হচ্ছে।যার ফলে ব্যাথা হচ্ছে সেখানটায়। আরাবীর চোখের কার্ণিশ হতে গড়িয়ে পরে তপ্ত অশ্রুকোনা। দ্রুত চোখ মুছে ফেললো আরাবী।বিছানায় পরে আছে ওর বাগদানের অনুষ্ঠানের জন্যে জামা,গহনা,সাজগোজের সামগ্রী।তবে আরাবী তা এখনো খুলেও দেখিনি। আয়নার সামনে বসলো আরাবী।আয়ানায় নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হলো আরাবী।মাত্র একদিনের ব্যাবধানে কি অবস্থা হলো ওর।চোখের নিচে কালি পরেছে দুটো নির্ঘুম রাতের কারনে। দুহাতে মুখটাকে ঘষে নিলো আরাবী। এর মধ্যে রুমে আসে নূর।এসে আরাবীকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে নূরের রাগ লাগলো।এভাবে বসে থাকার মানে কি? বাগদানের অনুষ্ঠান শুরু হতে আর মাত্র কিছুক্ষন।আরাবী এখনো রেডি হয়নি।আরাবী পার্লারের মেয়েদের হাতে সাজবে না।তাই তাদের আনা হয়নি।নূর ক্ষেপানো গলায় বলে, ‘ তুমি এখনো তৈরি হচ্ছো না কেন? আর মাত্র কিছুক্ষন বাকি ভাবি।জলদি রেডি হও।’

আরাবী পিছন ফিরে নূরকে দেখে উঠে দাড়ালো।নূরের কাছাকাছি এসে বলে,’ তুমি নিজেও তো তৈরি হওনি।তুমি যাও তৈরি হও।আমিও তৈরি হচ্ছি।’

নূরের আরাবীর মুখ থেকে কেমন যেন ভালো লাগলো না।জায়ানের চেহারাও কাল থেকে থমথমে হয়ে আছে।ঠিকঠাক কথা বলছে না কারো সাথে।অহেতুক রাগিরাগি করছে। নূর চিন্তিত কন্ঠে বললো, ‘ ভাবি? সব ঠিক আছে তো তোমার আর ভাইয়ার মাঝে?’

আরাবী জোড়পূর্বক হাসলো।বললো, ‘ হু! সব ঠিক আছে।আমাদের মাঝে আবার কি হবে?’

‘ না মানে।ভাইয়া কাল থেকে কেমন যেন আগের মতো সেই রুক্ষ বিহেইব করছে।অহেতুক রাগারাগি করছে সবার সাথে।’

নূরের কথায় বেশ চিন্তিত দেখালো আরাবীকে।পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে আরাবী বললো, ‘ হয়তো কাজের চাপ বেশি।এমনিতেও তো দেখছো কয়েকদিন যাবত বিয়ের আয়োজনের কারনে উনি ঠিকঠাক অফিসে যেতে পারছেন না।তুমি চিন্তা করো না।ঠিক হয়ে যাবে।যাও তৈরি হয়ে নেও।কেমন?’

নূরের কেমন যেন আরাবীর কথাটা বিশ্বাস হলো না।তাও আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো নূর।এদিকে নূর যেতেই আরাবী দরজা আটকে দিলো।দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে সামলালো আরাবী। লোকটা এতো নির্দয় কেন? একটাবার আরাবীর কাছে আসলো না। শুধু ছোট্ট আওয়াজে যদি একবার আরাবীকে ডাক দিতো।আরাবী ছুটে চলে যেতো।কিন্তু লোকটা এলো না।এ কেমন পাষাণ লোককে ভালোবেসে ফেললো আরাবী। আরাবী লম্বা শ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে ফ্রেস হতে চলে গেলো।এখনই তৈরি হতে হবে।নয়তো দেরি হয়ে যাবে।
____________
পুরো বাড়িতে মানুষ গিজগিজ করছে।সে এক বিশাল আয়োজন। ইফতি আরাবীকে ধরে নিয়ে আসছে।আরাবী গাউনটা বেশ লম্বা।তাই হাটতে একটু সমস্যা হচ্ছে।ইফতি তো আরাবীকে বার বার বলছে, ‘ তোকে অনেক সুন্দর লাগছে আরাবী।জায়ান ভাই তো আজ তোকে দেখলে নিশ্চিত অজ্ঞান টজ্ঞান হয়ে যাবে।’

আরাবী এতে বেশ বিরক্ত।এই কথাটা প্রথম শুনে বেশ লজ্জা লাগছিলো আরাবীর।কিন্তু ইফতি একই কথা বার বার রিপিট করছে।যাতে প্রচুর বিরক্ত আরাবী।নিহাদ সাহেব আরাবীকে দেখেই দূর হতেই দ্রুত পায়ে ছুটে আসলো।সাথে আসলেন সাথি।নিহাদ বলেন, ‘ মাশা-আল্লাহ! আম্মুকে বেশ সুন্দর লাগছে।’

সাথিও প্রসংশা করলেন।সাথে মিহান আর মিলি তো আছেনই।আর আরাবীর মা তো এই নিয়ে শ’খানেক চুমু খেয়ে নিয়েছে মেয়ের কপালে।নূর আরাবীর কাছে এসে চিৎকার করে উঠলো, ‘ ওয়াও ভাবি।তোমাকে যা লাগছে না।ভাইয়ার চয়েজ আছে বলতে হবে।কি সুন্দর।’

আরাবী রয়াল ব্লু কালারের গাউন পরেছে যার মাঝে সাদা স্টোন বসানো। গলায়,কানে,হাতে ম্যাচিং করে সাদা আর রয়েল ব্লু এর কম্বিনেশনে স্টোন ওয়ার্ক করা জুয়েলারি,চুলগুলো নিচের দিক রিয়ে কার্লি করা,কিছু চুল সামনে এনে রাখা।চুলেও সুন্দরভাবে স্টোন ক্লিপ লাগানো।আর সাথে সাদা মাটা হালকা মেক-আপ।এতেই যেন অপ্সরা লাগছে আরাবীকে।সবাই সাখাওয়াত বাড়ির বড় পুত্রবধুকে দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।কিন্তু যার মুখ থেকে নিজের জন্যে একটু প্রশংসা শুনতে চায় আরাবী।তাকেই দেখতে পাচ্ছে না সে। দৃষ্টি এদিক ওদিক ঘুরালো আরাবী।পরক্ষনেই দূর হতে কাঙ্খিত মানুষটাকে দেখতে পেলো আরাবী।জায়ান সুইমিংপুলের ওইপাশটায় দু একজন মানুষদের সাথে কথা বলছে।কি সুন্দরই না লাগছে লোকটাকে।আরাবীর হার্ট দ্রুত গতিতে ছুটতে লাগলো জায়ানকে দেখে।জায়ানও আরাবীর সাথে ম্যাচিং করে রয়াল ব্লু ব্লেজার পরেছে।ব্লেজারের ভীতরের শার্টটা সাদা।রয়াল ব্লু কালারের ডেনিম প্যান্ট।হাতে দামি ঘড়ি। চকচকে কালো জুতো।চুলগুলো জেল দিয়ে সেটা করা।আরাবী যেন নিজের চোখজোড়া সরাতে পারছে না কিছুতেই জায়ানের উপর থেকে।মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে জায়ানের দিক।ইফতি হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।তাই আরাবীর হাত ধরে ওকে টেনে জায়ানের দিক নিয়ে যেতে লাগলো।আরাবী বুঝতে পেরে সাথে সাথে নারাজ জানালো, ‘ ইফতি ভাইয়া। আমি যাবো না।তিনি এখন কথা বলছেন।ব্যস্ত আছেন।থামো ভাইয়া।’

ইফতি আরাবীর কথা শুনে বললো, ‘ আজাইরা কথা বাদ দে।তুই ছাড়া এখন ভাইয়ার কাছে আর কি বেশি ইম্পোর্ট্যান্ট হবে?’

ইফতি আর একটা কথা আরাবীকে বলতে না দিয়ে ওকে জায়ানের সামনে নিয়ে গেলো। আকস্মিক এভাবে আসায় জায়ান বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকাতেই দৃষ্টি শীতল হয়ে আসে জায়ানের।একরাশ মুগ্ধতা এসে ভর করে ওর চোখে।সেই মুগ্ধ চোখের দৃষ্টি দেখে শুকনো ঢোক গিললো আরাবী।দৃষ্টি নত হলো ওর। এদিকে ইফতি হেসে দিয়ে বলে,’ ভাই মুখের হা বন্ধ করো।’

জায়ান দ্রুত নিজেকে সামলে নেয়।ইফতির দিকে দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দাঁতেদাঁত চিপে বলে, ‘ এখানে হুট করে আসার কারন কি? দেখছিস না কথা বলছি?’

জায়ানের এমন রুক্ষ ব্যবহারে বেশ কষ্ট পেলো আরাবী।উজ্জ্বল মুখটা অন্ধকারে ছেয়ে গেলো।এতোটা পরিবর্তন? যে এখন আরাবী কাছে আসলেও লোকটা বিরক্ত হয়?আরাবী ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে সামলে নিলো।চোখ বুঝে বড় এক শ্বাস ফেলে বললো, ‘ ইফতি ভাইয়া।আমি ওদিকে যাচ্ছি।নূর ডাকছে।’

আরাবী চলে আসতে নিলো।তবে একবার ঘুরে তাকালো।এই বুঝি লোকটা ওকে ডাকবে।এখানে থাকতে বলবে।কিন্তু না এমন কিছুই হলো না।আরাবী চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেলো।পুরো অনুষ্ঠানে না আরাবী জায়ানের কাছে গেলো।আর না জায়ান আরাবীর কাছে গেলো। নিহাদ সাহেব সকলের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলেন।এখনই বাগদানটা সেরে ফেলা হবে। ইফতিকে স্টেজে উঠে মাইক হাতে নিয়ে জায়ান আর আরাবীকে নিয়ে স্টেজে আসতে বললো।নূর আরাবীকে নিয়ে আসলো।আর জায়ান একা একা আসলো।পুরো ফ্যামিলি চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলো আরাবী আর জায়ানকে। সাথি জায়ানের হাতে আংটির বক্সটা দিলেন।ইশারা করলেন আরাবীকে পরিয়ে দিতে। জায়ান বক্সটা হাতে নিয়ে খুলে সেটা হতে আংটিটা বের করে নিলো। তারপর অন্যহাত বাড়িয়ে দিলো আরাবীর দিকে।আরাবী তাকালো জায়ানের দিকে।লোকটা এখনো তাকাচ্ছে না ওর দিকে।এভাবে জায়ানকে দেখে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে আরাবীর।তাও চুপচাপ জায়ানের হাতে নিজের হাতটা তুলে দিলো।জায়ান আরাবীর হাতটি আলতো করে ধরে ওর আঙ্গুলে আংটিটা পরিয়ে দিলো।সাথে সাথে আরাবী কেঁপে উঠলো। হৃদয়টা জানান দিচ্ছে বার বার আজ থেকে তুই কারো বাগদত্তা।ভালোবাসার মানুষটিকে পুরোপুরি নিজের করার জন্যে অর্ধেক ধাপ এগিয়ে গেলো।টুপ করে একফোটা জল গড়িয়ে পরলো।সেটা একেবারে জায়ানের হাতের উপর পরলো।জায়ান সেটা লক্ষ্য করে চোখ বুঝে ফেললো।দ্রুত সরে আসলো।এইবার আরাবীর মা আরাবীকে আংটিটা দিতেই জায়ান নিজেই হাত বাড়িয়ে দেয়।আরাবী এখনো চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে জায়ানের দিকে।এই বুঝি লোকটা তাকালো ওর দিকে।কিন্তু নাহ তাকালো না জায়ান একবারো।আরাবী জায়ানের আঙ্গুলেও আংটিটা পড়িয়ে দেয়।ওদের বাগদান সম্পূর্ণ হয়।সবাই করতালি দিয়ে উঠে।হইহুল্লোড় শুরু হয়ে যায় চারদিক থেকে।

#চলবে__________
ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।