#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৭
ভালোভাবে ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো আরাবী। ওকে দেখে জায়ান এগিয়ে আসলো।আরাবীর কপালে কোমল স্পর্শ দিয়ে বললো, ‘ লাল খয়েরী শাড়ি পড়া,ভেজা চুল,মাত্র গোসল করায় সতেজ মুখশ্রী।ভীষন সুন্দর লাগছে।চোখ সরাতে পারছি না।’
আরাবী লাজুক হাসলো।ধীর আওয়াজে বললো,’ধন্যবাদ!’
জায়ান আরাবীর কথায় হালকা রাগি গলায় বললো, ‘ সকাল সকাল মুডটা খারাপ করে দিচ্ছো।কথায় কথায় শুধু সরি আর ধন্যবাদ।এইসব কেন বলো?আমার বউয়ের প্রসংশা আমি করবো দিনরাত চব্বিশঘন্টা। এখন তুমি কি সেই দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা ধন্যবাদ দিবে?’
আরাবী মুখটা কাচুমাচু করে ফেললো এমন কথা শুনে। মিনমিন করে বলে, ‘ তাহলে কি কিছুই বলবো না?’
‘ কেন বলবে না?’
‘ তাহলে কি বলবো আপনি বলে দিন!’
‘ আমি কেন বলবো?’
‘ আশ্চর্য! এমন করছেন কেন?’
‘ কি করলাম?’
‘ ধ্যাৎ ভালোলাগে না।’
আরাবী জায়ানের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিতেই জায়ান আরাবীর হাত ধরে টেনে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।আরাবীর কানের পাতায় অধর ছুঁয়ে দেয়।আরাবী কেঁপে উঠে পেটের উপর রাখা জায়ানের হাত খামছে ধরে।জায়ান ফিসফিস করে বললো, ‘ থ্যাংকিউ অথবা সরি না বলে তার বদলে আমাকে চুমুও তো খেতে পারো।এটা আবার বলে দিতে হয়?আমি তো তাই করতাম।শুধু তোমার জন্যেই পারিনা।লজ্জায় না আবার তুমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলো।’
আরাবী লাজুক হেসে বলে, ‘ হয়েছে আমি আপনার মতো ওতো লুচু না।’
জায়ান ভ্রু-কুচকে ফেললো সাথে সাথে বললো, ‘ স্বামি চুমু দিলে সে লুচু হয়ে যায়?’
‘ হ্যা হয়!’
‘ কে বলেছে এসব ফালতু কথা?’
‘ আপনার বউ!’
‘ তাহলে তো বউটার সাথে একটু লুচুগিরি করেই ফেলি।সে যেহেতু আমায় লুচু নামে আখ্যায়িত করে দিলো।’
জায়ানের এমন কথায় আরাবী দ্রুত জায়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।ঠোঁট চিপে হাসি আটকে রেখে বলে, ‘ একদম না।আমি মাত্র শাওয়ার নিলাম।’
জায়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,’ তো কি? আমি তো নেইনি!’
‘ না নিলে এখন নিবেন!’
‘ নাহ নিবো না।এখন আমি রোমান্স করবো।দ্যান তুমি আমি একসাথে রোমান্টিক বাথ করবো!’
কথাগুলো বলে জায়ান এগিয়ে আসতে নিলেই আরাবীর বারান্দার দিকে দৌড়ে গিয়ে বারান্দার দরজা আটকে দেয়।জায়ান সাথে সাথে রাগি গলায় বলে, ‘ এটা কিন্তু ঠিক হলো না আরাবী।’
আরাবী হাসতে হাসতে বলে,’ একদম ঠিক হয়েছে।’
‘ বেড়িয়ে আসো বলছি!’
‘ আসবো না।’
‘ আমি আসলে কিন্তু রেহাই নেই!’
‘ কিভাবে আসবেন।’
‘ দরজা ভেঙ্গে ফেলবো।’
‘ ইস পারবেন না!’
‘ চ্যালেঞ্জ করছো?’
‘ ধরুন তাই!’
হঠাৎ দরজায় ধুমধাম শব্দ হতেই আৎকে উঠে আরাবী।লোকটা সত্যি সত্যি ভেঙ্গে ফেলবে না কি দরজা। আরাবী দ্রুত দরজা খুলে বেড়িয়ে আসলো।জায়ানের হাত ধরে ওকে থামিয়ে দিলো।অবাক কন্ঠে বললো, ‘ আশ্চর্য! পাগল নাকি আপনি?কি করছেন এসব?’
জায়ান আরাবীর থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সাথে সাথে আরাবীর গাল চেপে ধরলো।দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ ফারদার ডোন্ট ড়ু দিস এগেইন। নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’
আরাবী চোখ নামিয়ে নিলো।ধীরে বললো, ‘ আচ্ছা স..!’
সরি বলতে গিয়েও বললোনা আরাবী নিচু কন্ঠেই বললো,’আর কখনো করবো না।’
জায়ান ছেড়ে দিলো আরাবীকে।গম্ভীর কন্ঠে বললো, ‘ আমার জামা কাপড় বের করো।অফিসে যাবো।’
এই বলে জায়ান তাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।আরাবীর মন খারাপ হয়ে গেলো।লোকট কি রাগ করলো ওর সাথে?নাহলে বিয়ের পরেরদিন কি কেউ অফিসে যায়?আরাবী মন খারাপ নিয়ে মাথার চুল ভালোভাবে মুছে দিলো।তারপর রুমের চারদিকে চোখ বুলালো।এলোমেলো হয়ে আছে রুমটা।আরাবী রুম গোছাতে শুরু করলো।বিছানার চাঁদর উঠাতে গিয়ে প্রচুর লজ্জা পেলো আরাবী।পুরনো চাঁদর উঠিয়ে আরেকটা নতুন চাঁদর বিছিয়ে দিলো।ফুলগুলো ভালোভাবে ঝাড়ু দিয়ে একত্রে করে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।রুমে এয়ারফ্রেসনার স্প্রে করে দিয়ে শ্বাস ফেললো আরাবী।যাক রুমট এখনো গোছালো লাগছে।এইবার আরাবী গিয়ে জায়ানের জামা কাপড় বের করে দিলো।অফিসে যাবে লোকটা।ঘড়ি, ওয়ালেট,রুমাল এসবও তো লাগবে। ওগুলো খুজতে নেমে পরলো আরাবী।অনেক খোজাখুজির পর অবশেষে বিছানার সাথে লাগানো টেবিলটার ড্রয়ারে পেলো।সুন্দর মতো জায়ানের সব জিনিস বিছানার উপর রেখে।আরাবী গেলে ড্রেসিংটেবিলের সামনে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কাকের বাসা হয়ে আছে।সেগুলো আঁচড়ানোতে মনোযোগ দিলো।তার একটু বাদেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো।আরাবী আয়নায় দেখলো জায়ান বেড়িয়েছে।শুধু শরীরে একটা তোয়ালে পেচানো।লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো আরাবী।মনে মনে আরাবী জায়ানকে চরম নির্লজ্জের উপাধি দিয়ে দিলো। জায়ান শার্ট আর প্যান্ট পরে নিলো।আঁড়চোখে আরাবী যে চুল নিয়ে যুদ্ধ করছে সেটাও দেখে নিলো।ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো আরাবীর কাছে জায়ান।গিয়ে আরাবীর হাত থেকে চিরুনিটা নিয়ে নিলো।আরাবী আচমকা এমন করায় একটু চমকে গেলেও।পরে জায়ানকে দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,’ কি হলো চিরুনি নিলেন কেন?’
জায়ান গম্ভীর গলায় বলে, ‘ যেভাবে চুলের সাথে যুদ্ধ করছো।এমন করলে অকালে নেড়া হয়ে যাবে।তখন সবাই আমাকে বলবে জায়ানের বউ টাকলু।আর আমি সেটা চাই না।’
জায়ানের এমন কথায় কি বলবে আরাবী বুঝলো না।তবে পরক্ষনে ফিক করে হেসে দিলো।জায়ান ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে আরাবীর চুল আঁচড়ে দিতে লাগলো।বেশ সুন্দরভাবে আরাবীর চুলগুলো আঁচড়িয়ে দিলো জায়ান।চিরুনিটা আবারও আরাবীকে দিয়ে বললো, ‘ আমি চুল টুল বাধঁতে পারিনা।বাকিটা তুমি করে নেও!’
জায়ান চলে যেতে নিতেই আরাবীর ওর জায়ানের শক্তপোক্ত হাতটা আঁকড়ে ধরলো।দৃষ্টি নত করে অপরাধী স্বরে বললো, ‘ আপনি কি আমার সাথে রাগ করেছেন?’
ওপাশ হতেই জায়ানের জবাব শোনা গেলো না।তবে জায়ান আরাবীর অপার হাতটা ধরে ওকে নিজের মুখোমুখি দাড় করালো।আরাবী তাকালে জায়ান আরাবীর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।পরক্ষনে বললো, ‘ একবার রাগ করে যে ভুল করেছি তা দ্বিতীয়বার আর করবো না।’
আরাবী মন খারাপ করে বলে, ‘ তবে ওরকম কাঠখোট্টাভাবে কথা বলছিলেন কেন?’
জায়ান নিশব্দে হাসলো আরাবীর কথায়।বললো, ‘ আরে তখন হালকা একটু বিরক্ত হয়েছিলাম।তুমি এইভাবে বারান্দার দরজা আটকে দেওয়াতে।এর থেকে বেশি কিছু না।তুমি মন খারাপ করো না।’
জায়ানের কথাগুলো শুনে সাথে সাথে আরাবীর ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।জায়ান আরাবীর সেই হাসিমাখা মুখশ্রী দেখে তৃপ্তি পেলো।জায়ান হাত ধরে বিছানার সামনে নিয়ে এলো।এরপর বলে, ‘ গায়ে ব্লেজার জড়িয়ে দেও,সাথে টাই বেধে দিবো,এন্ড ঘড়িও পড়িয়ে দিবে! ‘
আরাবী হাসলো।বিনাবাক্যে জায়ানের কথামতো সব করে দিলো।জায়ান এরপর বলে, ‘ চলো ব্রেকফাস্ট করবো।’
আরাবী বেড়িয়ে আসলো রুম থেকে।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে আরাবী হালকা গলায় বলে, ‘ অফিসে যাবেন কেন আজ? বিয়ের পরেরদিনই অফিসে যায় কেউ?’
জায়ান হালকা হেসে বললো,’ যেতাম নাহ।কিন্তু ফোনে টেক্সট এসেছে একটা জরুরি মিটিং আছে।১১ টার দিকে।বেশি জরুরি না হলে আমি আজ বউকে নিয়ে রুম থেকেই বের হতাম নাহ।’
আরাবী আর কথা বাড়ালো না। লাজুক হেসে জায়ানের সাথে নিচে নেমে আসলো। নিচে আসতে দেখে সাথি নিহার সাহেবের প্লেটে খাবার বেরে দিচ্ছেন।নিহার সাহেব আরাবীকে দেখেই বললো, ‘ আসো আসো জলদি আসো।খুব খিদে পিয়েছিলো তাই তোমাদের ছাড়াই বসে পরেছি।যাক তোমরা এসে পরলে!’
আরাবী মুচঁকি হেসে বলে,’ সমস্যা নেই বাবা আপনি খাওয়া শুরু করুন!’
সাথিকে খাবার বেরে দিতে দেখলে।আরাবী এগিয়ে বললো, ‘ মা আপনি বসুন।আমি খাবার দিচ্ছি।’
সাথি আরাবীকে থামিয়ে দিলো।বললো, ‘ তুমি গিয়ে বসো। আমি দিচ্ছি।এতো তাড়াতাড়ি কাজের প্রেসার স্টার্ট করো না।আমি যবে থেকে অসুস্থ হবো। বিছানায় পরে যাবো তখন নাহয় তুমি সব কাজের দায়িত্ব নিও।এখন যাও বসে পরো।’
নূর নিজেই ব্রেড নিতে বলে, ‘ ভাবি বসে পরো।’
আরাবী আর কথা না বাড়িয়ে বসার জন্যে এগিয় গেলে জায়ান একটা চেয়ার টেনে দিলো আরাবীকে বসার জন্যে।আরাবী সেখানে বসে পরলে জায়ান আরাবীর পাশে বসে পরলো। সাথি সবাইকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে নিজেও বসে পরলেন।অবশেষে সবাই মিলেমিশে সকালের নাস্তা শেষ করলো।নূর যাবে না ভার্সিটিতে কারন আরাবীও আজ যাবে না তাই।আরাবী জায়ানকে এগিয়ে দিতে গেলো।জায়ান গাড়িতে উঠার আগে আরাবীর কপালে চুমু দিয়ে বললো,’ নিজের খেয়াল রেখো।আমি জলদি এসে যাবো!’
আরাবী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেই জায়ান গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।আরাবীও চলে গেলো বাড়ির ভীতর।শাশুড়, শাশুড়ি আর ননদের সাথে গল্পগুজুবে মেতে উঠলো।
#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
#বৃষ্টি_ভেজা_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৮
জেলের ভীতর থেকে বিভৎস চিৎকার ভেসে আসছে।জায়ান এলোপাথারি মারছে আদি’কে।এইবার না থামালে বোধহয় আদি মরেই যাবে।ইফতি তাই দ্রুত জায়ানকে টেনে ওখান থেকে বাহিরে নিয়ে আসলো।জায়ান এখনো রাগে ফুসছে আর বারবার তেড়ে যাচ্ছে আদি’র দিকে।ইফতি জোড়পূর্বক পুলিশস্টেশন থেকে নিয়ে আসলো জায়ানকে।জায়ান ইফতির এমন কাজে।রাগে চিৎকার করে বললো,’ থামালি কেন আমায়?’
ইফতি যথাসম্ভব শান্ত গলায় বলে, ‘ ভাই! আর কতো মারবে?মরে যাবে তো!’
জায়ানের শক্ত জবাব, ‘ যাক মরে। ও মরলেই আমার কলিজা ঠান্ডা হবে।ওকে বুঝিয়ে দিলাম আমার আরাবীর দিকে হাত বাড়ালে কি হয়।’
‘ হু! হয়েছে তো। ওর বাকি শিক্ষা পুলিশ দেবে।চলো বাড়ি চলো।’
জায়ান চুলে হাতের দ্বারা ব্রাশ করতে করতে বলে, ‘ উহু! বাড়ি যাবো না।কাজ আছে?’
ইফতির প্রশ্ন, ‘ কোথায় যাবে? এখন কয়টা বাজে খেয়াল আছে? বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে হতে চললো।আরাবী এই নিয়ে আমায় পাঁচবার ফোন করেছে।তুমি আসছো না কেন এটা জানার জন্যে।’
জায়ান ভ্রুক্ষেপহীনভাবে বললো, ‘ করুক ফোন।আজ আমি এই কাজটা সেরে তারপরেই বাড়ি যাবো।’
ইফতি বুঝলো জায়ান যা বলেছে তা করেই ছাড়বে।তাই জোড়াজুড়ি বাদ দিয়ে সে বলে, ‘ তাহলে আমিও আসি?’
‘ ইয়্যুর উইস!’ এটা বলেই জায়ান গাড়িতে উঠে বসলো।সাথে সাথে ইফতিও পাশে সিটে বসে পরলো। মাঝপথে জায়ান একবার গাড়ি থামিয়ে একজন উকিলকে নিয়ে নিলো।তারপর আবারও গাড়ি চলতো লাগলো।প্রায় ঘন্টাখানিক পর গাড়ি থামলো একটা দুতলা বাড়ির সামনে।জায়ান নেমে দাড়ালে ইফতিও ঝটপট নামলো।ইফতি গাড়ি থেকে নামতেই হা হয়ে গেলো।বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকালে।জায়ান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বলে, ‘ হোয়াট?এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?’
ইফতি একইরকমভাবে তাকিয়ে থেকে বলে,’ এটা তো আরাবীর বাবার বাড়ি।’
জায়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে, ‘ জানিসই যখন তখন প্রশ্ন করছিস কেন?’
ইফতি বললো, ‘ কিন্তু এখানে কেন এসেছি আমরা?’
জায়ান গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো, ‘ আমার বউ আমার কাছে কিছু চেয়েছে।আর সেটা আমি তাকে না দিয়ে পারি?বউয়ের কথা না রাখলে পাপ হয় পাপ।’
ইফতি আর কথা বাড়ালো না।যা বুঝার এখন ও স্পষ্ট বুঝে ফেলেছে।তাই চুপচাপ জায়ানের সাথে চললো।দারোয়ান বাধা দিয়েছিলো কিন্তু জায়ান টাকাও সাধলো কিন্তু নিতে চায়নি।জায়ান কারন জিজ্ঞেস করলে বলে তাকে চাকরি থেক বের করে দিবে।এসব জানতে পারলে।জায়ান আশ্বাস দিলো তার চাকরির কিছুই হবে না।ও সামলে নিবে সব।অতঃপর দারোয়ান গেট খুলে দিলো।জায়ান কলিংবেল বাজাতেই একটু পরেই কেউ একজন দরজা খুলে দিলো। একজন মহিলা তিনি ওদের দেখেই বলেন,’ কাকে চাই?’
জায়ান শান্ত কন্ঠেই উত্তর দিলো, ‘ মিসেস শায়লাকে! ‘
মহিলাটি গেট ছেড়ে দিয়ে জায়ানদের নিয়ে সোফায় বসতে দিলো।সাথে উকিল দেখে কেমন যেন একটু ট্যারা চোখে তাকাচ্ছিলো কিন্তু কিছু বলেনি সোজা উপরে চলে গেলেন।জায়ান বেশ আয়েশ করে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।
একটু পরেই দেখা গেলো একজন বৃদ্ধা হাতে লাঠি তার সিড়ি দিয়ে নামছেন আরেকজন মহিলা বয়সটা আরাবীর মায়ের মতোই হবে।জায়ান তাদের দেখে বাঁকা হাসলো। তারা জায়ানের কাছাকাছি আসতেই জায়ান নিজেই আগে বললো, ‘ আসসালামু আলাইকুম দাদি শাশুড়ি আর ফুপি শাশুড়ি!’
মহিলা দুটো তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো জায়ানের দিকে। মধ্য বয়স্ক বেশ কর্কশ গলাতেই বলেন,’ এই ছেলে! কে তুমি?আর এসব কি বলছো হ্যা?’
জায়ানের ঠোঁটে হাসি বজায় আছে।এদিকে ইফতি তার ভাইকে এমন অহেতুক হাসতে দেখে ভড়কে গিয়েছে।তার ভাইতো কখনো এতো হাসে না।ব্যাপারটা কি? যাক, যা হচ্ছে তাই দেখতে থাক।পরে নাহয় বুঝা যাবে।ইফতি এইবার মনোযোগ দিলো জায়ানের দিকে।জায়ান বলছে, ‘ ও এম জি। কি বলেন বউয়ের ফুপি তো আমার ফুপি শাশুড়িই হয় তাই নাহ?’
জায়ানের এমন হোয়ালিপনা দেখে বৃদ্ধমহিলাটি যেন রেগে গেলেন।বলেন,’ কিসের শাশুড়ি শাশুড়ি শুরু করেছি তুমি ছেলে? আর কার ফুপি কিসের ফুপি হ্যা?’
জায়ান মুহুর্তেই তার রূপ বদলে ফেললো।চোয়াল শক্ত করে বলে, ‘ জিহাদ আহমেদ আর লিপি খানমের একমাত্র মেয়ে আরাবী আহমেদ।যে এই বাসার মালকিন আর বর্তমানে যে আমার স্ত্রী।’
জায়ানের এমন কথা শোনা মাত্রই যেন তাদের দুজনের চেহারার রং পালটে গেলো।চোখে মুখে একরাশ দুশ্চিন্তা হানা দিলো তাদের।জায়ান বেশ মজা পাচ্ছে তাদের চেহারা দেখে। বৃদ্ধা মহিলাটি হলেন আরাবীর দাদি শায়লা ভূইয়া আর পাশের জন উনার মেয়ে মানে আরাবীর ফুপি শিলা আহমেদ। শিলা আহমেদ রেগে জায়ানকে বলেন, ‘ কিসব যা তা বলছো তুমি? এই বাড়ির মালিক আমরা।এখানে আরাবী কোথা থেকে আসলো?’
জায়ান এমন কথায় পাশে দাঁড়ানো উকিলকে ইশারা করলো।উকিল দ্রুত কিছু কাগজপত্র শিলার হাতে দিলো।ভ্রু-কুচকে কাগজগুলো হাতে নিলো শিলা।জায়ান ক্রুর হাসি দিয়ে বললো, ‘ রিড ইট ফুপি শাশুড়ি।’
শিলা জায়ানের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে জায়ান আবারও ইশারা করলো কাগজগুলো পড়ার।শিলা এইবার কাগজগুলো পরড়ে শিলা বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকালো।জায়ান তা দেখে বাঁকা হাসলো। শায়লা ভূইয়া মেয়েকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে, ‘ কিরে কি লিখা আছে এটায়?আমি তো চোখে তেমন একটা দেখতে পাই না। তুই বল।’
শিলা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে, ‘ এখানে লিখা জিহাদ ভাইয়ের সকল সম্পত্তি তার একমাত্র মেয়ে আরাবী আঠারো বছর হলে আরাবীর নামে হয়ে যাবে।আর যদি তিনি এর আগে মারা গেলে তার সকল সম্পত্তি তার স্ত্রী আর সন্তানের নামে হয়ে যাবে। এতে কোনপ্রকার বাধা কেউ সৃষ্টি করলে তাদের বিপক্ষে আইনিপদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
শায়লা ভূইয়া সব শুনে।চোখ বড়বড় করে জায়ানের দিকে তাকালো।জায়ান হেসে বলে, ‘ কি বুঝলেন তো? এখন এই বাড়িরসহ জিহাদ বাবার যা সম্পত্তি আছে সব আরাবীর।তো বলুন আমার চুপচাপ সব মেনে নিবেন নাকি আইনিপদক্ষেপ নিবো আমি?’
তারা কি বলবে ভেবে পেলেন না। এমনসময় প্রবেশ ঘটলো শিলার হাজবেন্ড ইখতিয়ার হোসেনের।তিনি এসে বাড়ির এমন অবস্থা দেখে অবাক হলেন।বিষ্ময় নিয়ে তিনি প্রশ্ন করলে তাকেও কাগজপত্রগুলো দেখানো হলো।সব দেখে তাকে বেশ খুশিই দেখা গেলো। ইখতিয়ার হোসেন নিজেই চান ঘরের মালিক ঘরে ফিরে আসুক।সেদিন যখন আরাবী আর ওর মা’কে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো।তিনি শত চেষ্টা করেও থামাতে পারেননি তাদের। আসলে কিইবা বলবেন তিনি তখন নিজে তখন ব্যাবসায় লস খেয়ে বাড়ি গাড়ি সব হারিয়ে শশুড় বাড়ি পরেছিলেন।সেখানে সেইবা কি বলতো।তবে আজ বেশ খুশি তিনি। জায়ান আরো কিছুক্ষন কথাবার্তা বললো ইখতিয়ার সাহেবের সাথে।জায়ান নিজের পরিচয় দিতেই তারা যেন আরো চমকে যান।শায়লা ভূইয়া আর শিলা আহমেদ তো জায়ানের পরিচয় জেনে ভয়ে আর কথাই বলেনি।চুপচাপ ছিলো পুরো।জায়ান ইখতিয়ার সাহেব থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।যাওয়ার আগে এটাও বলে গেলো।কয়েকদিনের মধ্যেই আরাবী আর ওর মা’কে নিয়ে আসবে এখানে।
————–
গাড়িতে উঠে ইফতি তো সেই খুশি। জায়ানকে একপ্রকার জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ ভাই তুমি বেস্ট।ধন্যবাদ ভাই আমার বোনটার জীবনের হারিয়া যাওয়া সবকিছু ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে।’
জায়ান শান্ত কন্ঠে বললো, ‘ ধন্যবাদ আমাকে না দিয়ে চাচ্চুকে দিস।তিনি আমায় হেল্প না করলে আমি এতোটা সহজে সব করতে পারতাম না।’
‘ সে নাহয় বুঝলাম।কিন্তু আরাবীকে এই খুশির খবরটা কবে দিবে?’
জায়ান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে, ‘ আর দশদিন পর জিহাদ বাবার মৃত্যুবার্ষিকি সেইদিনই নিয়ে আসবো এখানে।ততোদিন নাহয় এটা সিক্রেট থাকুক। তুই কিন্তু কিছু বলিস নাহ।’
ইফতি হাসিমুখেই বলে, ‘ আচ্ছা ভাই বলবো নাহ।’
জায়ান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিলো।গন্তব্য এখন বাড়ি যাওয়া।তার কাঠগোলাপ যে তার জন্যে অপেক্ষা করছে।
#চলবে__________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।