বেটারহাফ পর্ব-০২

0
2968

#বেটারহাফ
পার্ট_২
writer: #Nishat_Tasnim_Nishi

সাগর ওদের বিলাপ শুনে পিছনে ঘুরে তাকালো!সাথে সাথে ও নিজেও চমকে উঠলো, কারন, বৃষ্টির মাথা থেকে রক্ত বেয়ে পড়ে পুরো ঘর ভেসে যাচ্ছে! সাগর যখন ওকে ধাক্কা দিয়েছিলো তখন তার মাথা ঘরের কোণের আলমারিতে ধাক্কা লাগে যার ফলে ওর পিছন ফেটে যায়। সে নিজেও চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকাচ্ছে। সবাই মিলে বলতে লাগলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সোহেল দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে বৃষ্টিকে তুলতে নিলো! বড় ভাসুর বলেই বোধ হয় তার এ দ্বিধা। সাগরও এগিয়ে আসলো বৃষ্টিকে ধরার জন্য।সাগরকে দেখেই সোহেল এসে ওর গালে চড় বসিয়ে দিলো। রাগে তার শরীর কাপছে! সে ভাবতেও পারছে না তার ভাই এত জঘন্য কাজ করেছে!

গালে হাত দিয়ে সাগর বলে উঠলো, –“ভাইয়া,আমি…!!”

পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে সোহেল হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিলো। সে তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বৃষ্টির এক হাত ধরলো তুলার জন্য।
সাগর আবার বৃষ্টিকে তুলার জন্য যেতেই,সোহেল আবারো চড় দিলো এবং অকথ্য ভাষায় কথা বলে উঠলো।

শাহিনুর বেগম এগিয়ে এসে সাগরকে থামালো আর বললো–“এসব পরেও করতে পারবে। আগে ওকে হাসপাতালে নিয়ে চলো নাহলে ও মারা যাবে। ”

মরার কথা শুনে সাগরের চোখ বড় হয়ে আসলো, কপালে বিন্দু ঘাম জমে উঠলো।ও দ্রুত গিয়ে বৃষ্টিকে কোলে নিয়ে ঘরের বাহিরে পা বাড়ালো। সোহেল কিছু বলতে নিচ্ছিলো,পিছন থেকে তার বউ হাতের বাহু ধরে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই ও থেমে যায়।

৩.
হাসপাতালের করিডরে পায়চারি করছে সাগর। বাকিরা বাহিরে দাড়িয়ে আছে। সাগর খেয়াল করলো এখানে রাত্রি নেই। ও বড় ভাবীকে জিজ্ঞাস করতেই উনি বললেন —“আম্মা,ওকে আসতে দেয় নি!”

–” মা,কই?”

—“আম্মাও আসে নাই। উনি আমাদের যেতে বলে রয়ে গিয়েছেন। ”

সাগরের গলা শুকিয়ে আসলো। ও সোহেলের কাছে গিয়ে করুণ গলায় বললো,—” ভাই,আমি বাড়ী যাচ্ছি। রাত্রি আর মা দুজনেই বাড়ীতে। তুমি প্লিজ এদিকের খেয়াল রেখো!”

কথাটা শেষ করে সোহেলের জবাবের অপেক্ষা না করে ও দৌড় দিলো বাহিরের দিকে। গাড়ীতে উঠেই ফোন দিলো বৃষ্টির বাবাকে।কথা শেশেষ করে ফোন কেটেই বিরবির করে বলে উঠলো,–“আল্লাহ রাত্রির হেফাজত কইরো। মা যেনো ওকে কিছু না করে!”

৩. বৃষ্টির জ্ঞান ফিরেছে মাত্রই। চোখ খুলেই সে তার পাশে বাবামা, চার বোনদেরকে দেখলো। মাথা টা কেমন ঝিম ধরে আছে তার! ঠিকমতো তাকাতেও পারছে না।হাত টা কপালে দিতেই দেখলো কপাল ব্যান্ডেজ করা। মনে পড়ে গেলো সাগরের আঘাতের কথা, চোখের পাতা দুটো এক করতেই দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
মুহূর্তেই মনের মধ্যে একরাশ গৃণা এসে ভীড় করলো সাগরের প্রতি।
লতা বেগম ওর গায়ে হাত রাখতেই,সে মা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।

—“এখন কেমন লাগছে?”

কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গিয়েছে বৃষ্টির। কেঁদে কেঁদে মা’কে বললো,–” মা,আমাকে মেরে ফেলবে এরা। আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে।আমি থাকবো না এখানে।”

বৃষ্টির মা কথাটা শুনে চুপ করে গেলেন। তিনি
ইশারায় সবাইকে চলে যেতে বললো। সবাই এক নজর ক্রন্দনরত বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে চলে যেতে লাগলো। এর মধ্যে সবাই একবার একবার জিজ্ঞেস ও করে ফেলেছে যে এখন কেমন লাগছে বৃষ্টির?

সবাই চলে যেতে লতা বেগম তার মেয়েকে বললেন,–“কী হয়েছে? ”

বৃষ্টি কাঁদতে কাঁদতে ওর মা কে সব বললো। কীভাবে সাগর ওকে মেরেছে সব বলেছে। এতদিন ওর সাথে কেমন ব্যবহার করেছে সেটাও বলেছে আর কেনোই বা এমন করেছে সেসব ও বলেছে। সব শুনে লতা বেগম কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন,–” কী দরকার ছিলো জামাইর সাথে তর্ক করার? ”

বৃষ্টি কান্না অটোমেটিক অফ হয়ে গেলো। ও হতবাক হয়ে ওর মায়ের মুখের দিকে তাকালো।
ওর মা কী বললো?তার মানে মায়ের কাছে সে দোষী?

—“মা তুমি এসব কী বলছো? উনি আমার সামনে অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়া করবেন আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো?”

—“ওটা পরকীয়া নয়। রাত্রি সাগরের বউ। ওরা স্বামী-স্ত্রী। ”

লতা বেগমের কথা শুনে বৃষ্টি বড়সড় ধাক্কা খেলো। সে মনে মনে বলে উঠলো, রাত্রি সাগরের বউ মানে? আর লতা বেগম কীভাবে জানেন আর জানলে ওকে কেনো বলেনি। ও তো জানে ওরা কাজিন। শাহিনুর বেগম তো নিজেই প্রথমদিন ওকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন রাত্রিকে সাগরের বোন হিসেবে। রাত্রির মুখ তখন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিলো, তাহলে এজনই রাত্রির মুখ সেদিন ওমন ছিলো।

বৃষ্টি মায়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
–“আমাকে তাহলে কেনো বিয়ে করেছে?”

লতা বেগম নিরলস ভাবে বললেন,
—“তোকে বিয়ে করেছে বাচ্চা পয়দা করার জন্য,বুঝেছিস?”

চোখ বড় বড় করে বৃষ্টি বললো,
–“মানে?”

লতা বেগম ঠান্ডা মাথায় বৃষ্টিকে বলতে লাগলেন, “রাত্রি সাগরের প্রথম স্ত্রী। ওদের বিয়ের দু বছর চলছে। মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী রাত্রি কখনো মা হতে পারবে না।
সাগরের মা রাত্রিকে শুরু থেকে পছন্দ করতেন না। আর সেজন্য সাগরের মা তার দ্বিতীয় বিয়ে করায় । ”

বৃষ্টি ছলছল চোখে মা কে বললো,–“মা,তুমি এসব জানতে?”

উনি মাথা নাড়িয়ে বললেন হ্যা উনি জানতেন।

–“তুমি জানতে তবুও কেনো আমাকে বিয়ে দিয়েছো?”

৪.
লতা বেগম চুপ করে গেলেন। কীভাবে কী বলবেন মেয়েকে?মেয়ে যে তার বড্ড অভিমানী। নিম্নবিত্ত হলেও ছোট থেকেই মেয়ের সব আবদার পূরণ করেছে।কোনো কিছু চাইলে না দিলে মেয়ে অভিমান করে কথা বলতো না। পরিবারের আয়ের উৎস তিনিই,স্বামীর শারীরিক সমস্যার কারণে তিনি কাজকর্ম করতে পারে না। কাঠ মিস্ত্রি ছিলেন তিনি, খুব ভালোভাবে না চললেও খারাপভাবেও চলতো না।এখন বৃষ্টির মা নিজেই ছোটখাটো চাকরি করে সংসার চালায়। টানাপোড়নের মাঝেই সংসার চলে।দিন আনে দিন খায় টাইপ।

আর এ অসময়েই তার জন্য সুখের সংবাদ হয়ে আসে বৃষ্টির বিয়ের সংবাদটি।বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেদিন শাহিনুর বেগম আসেন তখনই তিনি তার ছেলের বিয়ের ব্যাপারে সব খুলে বলেছেন। কারণ সাগর নাকি বলেছে বিয়ের আগে যেনো উনাদের সব জানিয়ে দেয়। উনি প্রথমে রাজি হতে চান নি পরে চার মেয়ের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে রাজি হয়ে যান। সাগরের মা উনাকে কথা দিয়েছে যে যদি উনি রাজি হয়ে যান তাহলে তিনি তার বাকি মেয়েদেরও বিয়ের খরচ বইবেন এবং নগদ কয়েক লক্ষ টাকা দিবেন তার স্বামীর চিকিৎসার জন্য। সাগরের পরিবারের অনেক টাকা,উনারা অনেক প্রভাবশালী। আর এমন দুএকশ বিয়ের খরচ শাহিনুর বেগম একাই ব্যবস্থা করতে পারবেন।

সেজন্যই লতা বেগম এক কথায় রাজি হয়ে যান। আর তিনি নিজেই সাগরের মাকে বলেছেন যে তার মেয়েকে যেনো এ বিষয়ে না জানানো হয় নাহলে উনার মেয়ে রাজি হবেন না। আর বিয়ের পর বাচ্চা হয়ে গেলে ও নাকি এমনিতেই সব মেনে নিবে। তাই কেউই বৃষ্টিকে এ ব্যাপারে জানায় নি।

বৃষ্টি আবার প্রশ্ন করতেই ওর মা সব বলে দিলেন। আরো বললেন যে ও যেনো মানিয়ে নেয় নাহলে ওর বোনের বিয়ে দিতে পারবে না। শেষের কথাগুলো তিনি কঠোর গলায় বলেছেন।

সবশুনে বৃষ্টি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। ও কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ওর বিয়ের পিছনে যে এত বড় রহস্য ছিলো তা সে জানতোও না। হঠাৎ ভাবলো,ওর ও যদি বাচ্চা না হয় তাহলে কী সাগরকে আবার বিয়ে দিবে?

—“মা আমারও যদি বাচ্চা না হয় তখন? যে ছেলে একবার বাচ্চা না হওয়ায় দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছে সে তো তৃতীয়বারও বিয়ে করতে পারে। তখন আমার কী হবে?”

লতা বেগম চমকে উঠলেন। নিজের মনের ভাবনাকে সরিয়ে বৃষ্টিকে আশ্বাস দিয়ে বললেন যে, “ইনশাল্লাহ, এমন কিছুই হবে না। ”

বৃষ্টি বললো, –“আর যদি হয়?”

লতা বেগম এবার চুপ করে গেলেন।

কিছুক্ষণ পর বললেন যে “তাহলে যেনো সে মানিয়ে নেয়। নাহলে তার বোনগুলোর জীবন শেষ হয়ে যাবে।”

বৃষ্টি হাসলো,তাচ্ছিল্যের হাসি। সে অনুভব করলো সাগরের এত মারার পরেও সে এত কষ্ট পায় নি যতটা মায়ের বলা কথাগুলোতে পেয়েছে। সাগর তো রক্তাক্ত করেছে তার শরীর আর তার মা তো রক্তাক্ত করেছে তার মনকে। ডাক্তারের দেওয়া ঔষধে তো শরীরের দাগ গুলো চলে যাবে কিন্তু মনের ক্ষতগুলো?সেগুলো কীভাবে যাবে?

.

চলবে?

[দুঃখিত,অনেকগুলো নামের কারণে প্রথম পর্বে ভুল হয়েছিলো নামগুলোতে! আর লেখা গুছাতে পারছি না,কেমন আগোছালো হয়ে যাচ্ছে!ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। ]