বেটারহাফ পর্ব-০৮

0
2229

#বেটারহাফ
#Nishat_Tasnim_Nishi
#পর্ব_০৮

রাত্রি নির্বাক! সে হতভম্ভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাশুড়ির দিকে। তার কানে বাররবার কথাটি বেজে উঠছে। শাহিনুর বেগম বিছানার সাথে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলেন। নাকমুখ দিয়ে এক উত্তপ্ত নিঃশ্বাস উপছে পড়ছে। মষ্তিষ্কে পুরানো স্মৃতি নাড়া দিয়ে উঠলো। মনের ভেতর জমে থাকা ক্ষতগুলো তাজা হয়ে উঠলো।

জীবনের প্রথম প্রেম ছিলো রায়হান। বড় বোনের বিয়ে বাড়ীতেই তাদের পরিচয় হয়। সেদিন শাহিনুরের রায়হানকে ভালো লোগে যায়। সেই ভালোলাগা ভালোবাসা অবধি গড়ায়। তখন কেউ কারো মনের কথা ব্যক্ত করে নি। বছরখানেক পর আবারো তাদের দেখা হয়। শাহিনুর তখন মনের অব্যক্ত কথা গুলো তার কাছে ব্যক্ত করে। সে দেখতে শুনতে ভালো হলেও তার একটা খুত রয়েছে। সেটা হলো তার বাম চোখ ট্যারা। সোজা তাকালে মনে হবে ডানদিকে তাকিয়ে আছে। রায়হানের অবশ্য এ নিয়ে কোনো সমস্যা ছিলে না তখন। দুজনেই আসক্ত হয়ে যায় প্রেমে। প্রেমের বছর খানেক ঘুরে আসতেই শাহিনুর বেগম কন্সিভ করেন। তিনি এ খবর যখন রায়হান কে জানাবেন তখন ই শুনে যে রায়হান তাকে ধোকা দিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। সে অনেক বড় ধাক্কা খায়। তবুও সে প্রেমের দাবী নিয়ে উপস্থিত হয় রায়হানের সামনে। রায়হান সেদিন শাহিনুরকে বাজেভাবে অপমান করে বিশেষত তার ট্যারা চোখের জন্য। অপমানে মুখ লাল হয়ে যায় শাহিনুরের। মুখে ওড়না গুঁজে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে সে ওই স্থান ত্যাগ করে।

আজ আবার তার সেসব কথা মনে পড়ে গেলো। নিজের জীবনের অভিশপ্ত এই কালো অতীত এতকাল তিনি বুকে চেপে রেখেছিলেন। ওড়না দিয়ে চোখের কোনে জমে থাকা জল মুছে ফেলে রাত্রিকে সব বললেন।

রাত্রি অবাক হয়ে সব শুনতে লাগলো। তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার বাবা এমন। বিচ্ছেদের জন্য এতকাল মা কে দোষারোপ করে এসেছিলো সে। আজ সে বুঝতে পারলো বাবামায়ের এত ঝগড়ার কারণ হলো তার বাবার অবৈধ সম্পর্ক।

শাহিনুর বেগম কাঁদছেন। রাত্রি নিশ্চুপ হয়ে সব শুনছে।মানুষের দুঃখ কষ্টের কিছু শুনলেই তার কষ্ট হয়। ভীষণ কষ্ট হয়। আচ্ছা তার কষ্ট শুনলেও কী মানুষের কষ্ট হয়? রাত্রির মষ্তিষ্ক তাকে জানান দিলো,
“সবার কাছে সবার কষ্ট গুলো বড়,অন্যের কষ্ট সামান্য! ”

রাত্রির মনে প্রশ্ন জেগে উঠলো,বাচ্চার কী হয়েছে? কিন্তু মুখ ফুটে আর বললো না। না বুঝেই শাশুড়ির মনে এমনিতেই সে আঘাত করে ফেলেছে। এখন এ প্রশ্ন হয়তো শাশুড়িকে খুব বেশি দূর্বল করে ফেলবে। সে মনে মনে এমনটা ভাবলেও বিষয়টা মোটেও এমন নয়। সে ভয় পাচ্ছে শাশুড়িকে। এ প্রশ্ন আবার তার জন্য কাল না হয়ে দাড়ায়। তাই সে চুপ করে আছে। মানুষ বড়ই বিচিত্র। মুখে এক কথা মনে অন্য কথা।

১৪.
আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমে এলো।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তুমুল গতিতে শিলা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।

সাগর জানালার পাশে বসে একমনে সিগারেট খাচ্ছে। ফুফির সাথে কিছুক্ষণ আগেই সব কথা বলেছে সে। রাত্রির কথা উঠতেই তার বুক টা জ্বালা করে উঠে। কতদিন প্রেয়সীর মুখ দেখে নি সে। চোখ দুটো প্রিয় মুখ দর্শনের আশায় চাতক পাখির মতো হয়ে আছে। বুক টা হাহাকার করছে। এ কষ্ট কীভাবে কমাবে সে?
জীবন কেনো স্বপ্নের মতো হয় না? যেখানে ইচ্ছামতো চলা যাবে।কোনো ধরাবাঁধা থাকবে না। এমন কেনো হয় না?

ইশশ! জীবন কলমের মতো জটিল না হয়ে যদি পেন্সিলের মতো সহজ হতো। তাহলে ককেমন হতো? কলমের ভুল মিটানো যায় না কিন্তু পেন্সিলের ভুল রবার দিয়ে মিটানো যায়।

সাগর চায় তার জীবন পেন্সিলের মতো হোক। তাহলে সে তার জীবনের ভুলগুলো মিটিয়ে ফেলতে পারবে। সে অনুভব করলো তার কষ্টগুলো কমানো খুব দরকার। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে তার । সিগারেটের নেশাও তার ধরছে না। হাতে অর্ধ খাওয়া সিগারেট বাহিরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো সে।

বৃষ্টির পানি দিয়ে চোখমুখ ধুয়ে সে রুমে প্রবেশ করলো। রুমে এসেই সে বড় ধাক্কা খায়। পুরো রুম জুড়ে মোমবাতি আর মোমবাতি। নিচে মোমবাতির ছোট ছোট প্রদীপ বিছানো। সতর্কতার সহিত পা ফেলে সে বিছানার কাছে গেলো। পুরো বিছানা জুড়ে গোলাপের পাপড়ি আর পাপড়ি। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গোলাপের সুভাষ! সাগর অবাক চোখে চোখ বুলাচ্ছে সবদিকে। ডেকোরেশন দেখে সে ধারনা করলো এ কাজ এখকার নয়, ঘন্টাখানেক আগে থেকেই সাজানো। সবকিছু একদম পরিপাটি। কোনো কিছুই আগোছালো নয়।

সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে সব দেখছিলো, হঠাৎ তার চোখ আটকে যায় বৃষ্টির দিকে। মাত্রই সে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে। সাগর দু সেকেন্ড তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে গেলো। বৃষ্টি হাটুর উপর অবধি স্লিভলেস টপস পরেছে।

অন্যদিকে ফিরে সে বলে,–“এটা কী পরেছো তুমি?”

সাগরের আওয়াজ পেয়ে বৃষ্টি চমকে সামনে তাকায়। হকচকিয়ে গিয়ে সে সেখান থেকে সরে পর্দার ভাঁজে মুড়িয়ে ফেললো নিজেকে। শরমে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,–” একদম পেছনে তাকাবেন না। প্লিজ প্লিজ!!”

সাগর মাথা দুলিয়ে সায় দেয়।

–“কখন এসেছেন আপনি?”

সাগর মৃদু হেসে বললো,–“মাত্রই।”

বৃষ্টি মিনমিন করে বলে,–” আপনি কিছু মনে করবেন তার আগেই বলি আমি এসব কিছুই করি নি। আপনার ফুফাতো বোন মাহি এসব করেছে। সে আমাকে জোর করে এ ছোট জামা পরিয়েছে। আমার সব জামা ওর রুমে নিয়ে গেছে। এটা পরা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না আমার। ”

সাগর উল্টো দিকে তাকিয়ে হাসলো। বৃষ্টি যে ভয় পাচ্ছে সেটা সে না তাকিয়ে বুঝতে পারছে। এসবের পেছনে কে রয়েছে সে ভালো করেই জানে। তার মা হয়তো মাহিকে এসব বলেছে। এত ডেকোরেশনের কথা না বললেও হয়তো ওকে ইশারায় কিছু বুঝিয়েছেন না হলে ওই পুচকে মেয়ের এত সাহস নেই। আসার পরে তো একবারও তার সামনে আসে নি।
মডার্ন মেয়ে তাই হয়তো তার চিন্তা এতদূর গড়িয়েছে। মা হাত ধুয়ে তার পেছনে পড়েছে। সে বুঝলো এর থেকে তার নিস্তার নেই।

এক মিনিট দাড়িয়ে সে নিজের মনে ছক কষলো। কোনো মিল মাথায় ধরলো না। চোখের সামনে বৃষ্টির কিছুক্ষণ আগের দৃশ্য ভেসে উঠছে।

সাগর বৃষ্টির দিকে ঘুরলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলো বৃষ্টির দিকে। বৃষ্টি পর্দার আড়ালে ভয়ে ঠোঁট চেপে জড়োসড়ে হয়ে দাড়িয়ে রইলো।

হাটতে হাটতে সাগর একদম ওর কাছে চলে গেলো। এক এক করে শার্টের সবগুলো বোতাম খুলে ফেললো । শার্টের ভেতর রয়েছে সাদা পাতলা কাপড়ের সেন্টো গেঞ্জি।বৃষ্টি লজ্জায় মাথা নুয়ে নিলো। শার্ট টা খুলে সে বৃষ্টির সামনে ধরলো।

বৃষ্টি প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকাতেই সাগর বললো,–“নাও।”

বৃষ্টি এবার আরো অবাক হলো।সে বলে,–“এটা দিয়ে কী করবো?”

—” পরে নাও। তাহলে অস্বস্তি হবে না।”

বৃষ্টি হাত বাড়াতেই, সাগর ঠোঁট কামড়ে জামার দিকে তাকিয়ে বলে, এটা হবে তো?

পরক্ষণেই নিজেই বলে উঠে, “তোমার যে সাইজ এটা তোমার হাটু ছাড়িয়ে যাবে। ”

সাগরের কথা শুনে বৃষ্টি লজ্জা পেলো। সে কী ভাবলো আর কী হলো? হাত বাড়িয়ে ছোঁ মেরে শার্ট নিয়ে নিলো। সাগর উল্টো দিকে ঘুরতেই সে ফটাফট জামা টা পরে নিলো।

চলবে!