বেপরোয়া ভালবাসা পর্ব-১৭+১৮+১৯

0
407

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ১৭
#লেখনীঃ মনা হোসাইন

আদিবা বাসায় ঢুকতেই সবাই হুমরি খেয়ে পড়ল,আদির মা রাগে গজ গজ করতে করতে বললেন,

-“কী এমন যাদু করেছিস বলতো আদিবা যে, আদি তোকে ছাড়া দুচোখে অন্ধকার দেখে অন্য কিছু যেন চোখে পড়ে না তার।

আদির মায়ের কথায় অবাক হল আদিবা। আদি যে সবার সামনে থেকে আদিবাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো এটা কী তার চোখে পড়ে নি? তারপরেও কী করে আদিবাকেই দোষ দিচ্ছে? শুধু যে আদির মা তা নয় বাসার সবাই আদিবাকে কথা শুনাচ্ছে। এরা কী সত্যিই মানুষ নাকি অন্য কিছু বুঝবার চেষ্টা করল আদিবা।

একে তো আদি তাকে জোর নিয়ে গিয়েছিল তারপর আবার মেরেছেও সবচেয়ে বড় কথা রাস্তায় ফেলে চলে এসেছে এতকিছুর পর কারো যদি রাগ করার কথা থাকে সেটা একমাত্র আদিবার। কোথায় সে রাগ দেখাবে তা না সবাই তার উপর রাগ দেখাচ্ছে।বিয়ে ভেঙেছে বলে আদিবাকে দায়ি করছে। আদিবার জন্য নাকি পাত্রপক্ষের কাছে লজ্জিত হতে হয়েছে। সবার কথা শুনে আদিবার ভীষন রকমের রাগ হচ্ছে,ইচ্ছে করছে মুখের উপড় দু চারটা কথা শুনিয়ে দিতে কিন্তু পারল না।

আদির মা রাগী গলায় প্রশ্ন করলেন,

-“তা গিয়েছিলি তো দুজন ফিরার সময় একা কেন? আদি কোথায়?

-“কোথায় মানে? উনি বাসায় আসেন নি..?

-“ন্যাকামি করিস? তোকে যে একমিনিট চোখের আড়াল করে না সে তোকে রেখে একা ফিরে আসবে এটা বিশ্বাস করতে বলছিস? সত্যি করে বল কোথায় গিয়েছিলি তোরা? কী অঘটন ঘটিয়েছিস? খোদা জানে ছেলেটাকে একা পেয়ে কিভাবে মাথা চিবিয়েছিস।

আদিবা আর চুপ থাকতে পারল না,
-“কাকিমনি তুমি এমনভাবে বলছো যেন আমি ভাইয়াকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। উনি যে জোর করে আমায় নিয়ে গিয়েছিলেন সেটা যেন তোমরা কেউ দেখতেই পাওনি। উনি আমাকে যেভাবে নিয়ে গিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই রাস্তায় ফেলে রেখে চলে এসেছেন। তোমরা আমাকে যতটা নীচ ভাবছো আমি এতটা নিচে এখনো নামতে পারি নি তাছাড়া ভাইয়া আমাকে একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। সেটা যদি এখনো না বুঝে থাকো তাহলে বলব তোমরা ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করে থাকতে চাও।

কথাগুলো বলেই নিজের রুমে চলে আসল আদিবা কি ঘটেছিল বাসার কাউকে বলতে ইচ্ছে হল না ।

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গিয়েছে ঘড়ির কাঁটা ১১ টার ঘর ছুঁই ছুঁই করছে কিন্তু আদির ফেরার নাম নেই।বাসার সবাই তার চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছে করছে কারন সবাই তাকে ফোন দিয়ে দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে,ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। আদির এতক্ষন বাইরে থাকার কথা না। এবার আদিবার নিজেরো চিন্তা হচ্ছে।আদি তাকে রেখে অনেক আগেই চলে এসেছিল এতক্ষনে তার ফিরে আসার কথা তাহলে ফিরছে না কেন? আবার কোন ঝামেলা হয় নি তো? কি কি ঘটেছে বাসায় বললে তাকে সবাই দোষারোপ করবে সন্দেহ নেই বকাবকি এমনকি গায়েও হাত তুলতে পারে কিন্তু এখন সব না বললে বিপদ হতে পারে।

-“আচ্ছা ভাইয়ার সাথে খারাপ কিছু ঘটেনি তো..?
আমার এমন লাগছে কেন? আমার তো ভাইয়ার উপড় রাগ করার কথা কিন্তু ওর কথা মনে হলেই কান্না পাচ্ছে কেন?

আদিবার হাত পা কাঁপছে। যে মনে প্রাণে দোয়া করছে আদির যেন কিছু না হয়। অজান্তেই চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে।

হটাৎ বাসার লেন লাইনে কল আসল।
আদি ফোন করেছে ফোন পেয়েই আদির বাবা বেরিয়ে গেলেন। কাউকে কিছু বললেন না।
আদি ফোন করেছে শুনে আদিবার দেহে প্রাণ ফিরল। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হল। আদিবা এতক্ষন শুয়ে শুয়ে কাঁদছিল এবার উঠে বসল।

উঠে ঘাড় ঘুরাতেই বিছানার পাশের আয়নায় প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল,

নিজের চোখ পানি দেখে হটাৎ করেই আদিবা কেমন যেন কোথায় হারিয়ে গেল।

-“আচ্ছা আমি কাঁদছিলাম কেন? যে আমায় কথায় কথায় ভয় দেখায়, গায়ে হাত তুলতেও ভাবে না যার জন্য আমার জীবনের সব এলোমেলো হয়ে গেল পড়াশোনা ছাড়তে হল তার জন্য আমার খারাপ লাগবে কেন? ভাইয়া তো জানত জায়গাটা ভাল না তবু আমায় ফেলে চলে এসেছিল তার জন্য আমি কাঁদছি কেন?

ভেবেই আদিবার মাথায় জেদ চেপে গেল চোখ মুছে নিল।

রাত ১২ টার দিকে আদি বাসায় ফিরল সাথে তার বাবাও আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা ঘটেছে আদির অবস্থা বিশেষ ভাল মনে হচ্ছে না। বাসার সবাই ড্রয়িং রুমে গিয়ে জড়ো হল।

আদির বাবা এসেই সোফায় বসে পড়লেন আদির মা এগিয়ে প্রশ্ন করলেন
“”” এতক্ষন কোথায় ছিলি ..? সবার সামনে থেকে আদিবাকে এভাবে নিয়ে গিয়েছিলি কেন জবাব দে।

“” ওকে এখনো জ্যান্ত কবর দেই নি এই তো অনেক (বিড়বিড় করে)

আদি উত্তর দেয়ার আগে রেহানা বেগমকে আহমেদ সাহেব থামিয়ে দিয়ে বললেন
-“আজেবাজে প্রশ্ন করা করো রেহানা।

-“আজেবাজে প্রশ্ন হবে কেন। আমাদের সবার কতটা নিচু হতে হল ওর জন্য..জবাব দে আদি কেন এমন করলি?

-“এই প্রশ্নগুলো না করে প্রশ্ন করো ও এতক্ষন কোথায় ছিল।

-“কোথায় ছিল মানে?

আদুর মুখে কথা নেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

-” কি রে আদি জবাব দে…

-” কি জবাব দিবে? তোমার গুণধর ছেলে সারাদিন থানায় ছিল বুঝেছো..?

আহমেদ সাহেবের কথায় সবাই অবাক হল সবচেয়ে বেশি অবাক হল আদিবা আদির মা এগিয়ে গিয়ে বললেন,

-“থানায় ছিল মানে কী….???

-” কিছু নেশাখোর ছেলের সাথে ঝামেলা করেছিল পুলিশ খবর পেয়ে ধরে এনেছে।

-“দেশে ফিরেছিস দুদিন ও হয় নি নেশাখোর ছেলেদের সাথে তোর কিসের ঝামেলা আদি? কি রে উত্তর দে?

-“আমি ভাবতেও পারছি না এত বছরেও ওর আচারনের কোন পরিবর্তন হয় নি। আমরা ওকে মানুষ করতে পারি নি রেহানা।

আহমেদ সাহেবের কথাটা বলতে দেরি হলেও আদির উত্তর দিতে দেরি হল না।
“”” এবার বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে বাবা..

-“বাড়াবাড়ি তো হবেই তুমি নেশা করবে আর আমি বললে সেটা বাড়াবাড়ি।

-“তোমার মনে হচ্ছে আমি নেশাখোর?

-“তা নাহলে কাশবনে কি করছিলে শুনি?

-“আমি জবাব দিতে বাধ্য নই।তবে এ ঝামেলা আমার জন্য হয় নি যার জন্য হয়েছে তাকে আমি দেখে নিব।

-“কার জন্য হয়েছে শুনি?

-“কার জন্য হয়েছে তার উত্তর তখনী পাবে যখন তাকে হাসপাতেলে পাঠাতে পারব।

বলতে বলতে আদিবার দিকে তাকাল আদি।ভয়ে আদিবার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল তবুও ভাল সবার সামনে তার ব্যাপারে বলেনি।

“”” এখনো বড় মুখ করে বলতে পারছিস তুই ?

“”” যা করেছি তা বলতে আমি যেমন ভয় পাই না তেমনি যা করিনি সেটা মানতেও পারি না।

“”” মানে কি তুই আবার কাউকে মারবি.?

“” তো তোমার কি মনে হয় যার জন্য আমাকে জেলে যেতে হল তাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব..?

“” আদি তুই বাড়াবাড়ি করছিস।

“‘” কেউ যদি ভাল কথা ভালভাবে না বুঝে তাকে আমি আমার মত করেই বুঝাব। যাইহোক আমাকে ছাড়িয়ে এনেছ বলে ভেবো না আমার জীবনের দখলদারি পেয়ে গিয়েছো। আমি এখানে বেশিদিনের জন্য আসিনি তাই আমাকে শাসন করার চেষ্টাও করো না। যদি তোমাদের অসুবিধে হয় কালকেই চলে যাব তাছাড়া পুলিশ আমাকে আটকে রাখত না যদি আমার সাথে টাকা থাকত আশা করছি আমি কি বুঝাতে চাইছি তুমি বুঝেছো। তবুও যদি তোমার আমাকে অপরাধী মনে হয় বাবা হিসেবে শাস্তি দিতে পারো। তবে এখন না পায়ে ব্যাথা পেয়েছি দাঁড়িয়ে থাকতে সমস্যা হচ্ছে তাই রুমে যাচ্ছি তুমি মায়ের সাথে কথা বলে সিধান্ত টা আমাকে জানিয়ে দিও আমি কী চলে যাব? তোমরা যদি না চাও আমি এক মূহুর্তও এখানে থাকব না তোমাদের বিরক্ত করার ইচ্ছা আমার নেই।
আমি উপড়ে যাচ্ছি,আদিবা ফাস্ট বক্স টা নিয়ে আমার রুমে আয় তো বলেই হাঁটতে লাগল আদি।

এতক্ষন ধরে আদিবা সবার কথা শুনছিল কিছু বলি নি। কিন্তু আদির কথা বলার ধরন দেখে তার কেন যেন মনে হচ্ছিল আদি ঠিক নেই। হয়ত শরীর খারাপ তাছাড়া মারামারির সময় ব্যাথাও পেয়েছিল।

আদি পা টানতে টানতে যেতে যেতে আবার পিছন ঘুরল,

“”” আদিবা কিছু বলেছি তোকে কথা কানে যায় নি…??

“”” আ আ আসছি ভ ভ ভাইয়া..!!!

আদি ঘরে যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই আদিবা ফাস্ট এড বক্স নিয়ে ঘরে গেল।

“”” আসব…??

আদি ঘুরে একবার আদিবাকে দেখল কিন্তু উত্তর দিল না।

-“আজব রাগ আমার কথা তা না নিজে রাগ দেখাচ্ছে(ফিসফিস করে)

“”” ফিসফিস করা বাদ দিয়ে ভিতরে আয় আর দরজা টা বন্ধ করে দে…

“”” দেখুন আমি যা করেছি তার জন্য যথেষ্ট শাস্তি দিয়েছেন আর না।

“”” দরজা টা বন্ধ করতে বলেছি মা*রব বলি নি তো।

আদিবা এখন তার কথা না শুনলেও মারবে শুনলেও মারবে তাই বাধ্য হয়ে দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে এগিয়ে গেল আদিবা। আদি হাতের ইশারায় আদিবাকে নিজের কাছে ডাকল। কেন জানি আদিবা ভয় পেল,

-“ভ ভ ভাইয়া…

-“বাসায় কী করে ফিরলি?

প্রশ্নটা শুনেই আদিবার গলা শুকিয়ে গেল। তবে কী আদি জেনে গিয়েছে সে নিয়ের সাথে ফিরেছে?আজ আর রক্ষা নেই।

-‘কিরে জবাব দিচ্ছিস না কেন? ও বুঝেছি আমার উপড় রাগ করেছিস তাই না? ওভাবে রাস্তায় নামিয়ে দিলাম তাই…আসলে আমি জানতাম এই ঝামেলা এত সহজে মিটবে না পুলিশ আমাকে তাড়া করবে। তোকে পুলিশি ঝামেলায় ফেলতে চাইনি তাই নিরাপদ দুরুত্বে এসে তোকে নামিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। রাগ করিস না প্লিজ।

-“ভাইয়া তুমি..?

-“বাহ কতবছর পর তোর মুখে তুমি ডাক শুনলাম। আমি তোকে রাস্তায় ছেড়ে দিব এটা তুই ভাবলি কি করে?সে যাইহোক আমি তো ফয়সালকে বলেছিলাম তোকে পিক করতে কিন্তু ও বলল তোকে নাকি পায় নি।জানিস এক মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলাম না জানি কি হয়েছে তোর সাথে? পরে ভাবলাম হয়ত বাসায় ফিরে এসেছিস।

-“ভাইয়া আমায় পুলিশ কেসে জড়াতে চায় নি জন্যে আমাকে নামিয়ে দিয়েছিল আর আমি ওকে কত কিছু ভেবেছি।সত্যিই ভাইয়া আমার কথা এত ভাবে?তবে কি সবার কথায় ঠিক ও সত্যিই আমায় ভালবাসে?হয়ত সত্যিই বাসে কিন্তু ভাইয়া যদি জানতে পারে আমি আজ নিলয়ের ভাইয়ার সাথে বাসায় ফিরেছি তাহলে কী হবে? ও কি মেনে নিতে পারবে ব্যাপার টা?কেন মনে হচ্ছে আমার জীবনে ঝড় আসতে চলেছে?



চলবে…!!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ১৮
#লিখনীঃ Mona Hossain

আদি নিচে বলে এসেছে আদিবাকে হাসপাতালে পাঠাবে কিন্তু এখন তা না করে আদিবার সাথে এত ভাল করে কথা বলার কারন টা আদিবার মাথায় ঢুকল না। আদিবা উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।তাকে চুপ থাকতে দেখে আদি আবার প্রশ্ন করল

-“কিরে উত্তর দিছিস না কেন? কি করে বাসায় ফিরলি বল…

আদি কথা বলছে আর প্যান্টের নিচের দিকে ভাঁজ করতে করতে উপড়ে তুলছে। আদিবা এবারেও উত্তর দিল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু আদি প্যান্টের ভাঁজ একটু উপড়ে তুলতেই আদিবা আঁতকে উঠল। আদির পা থেকে রক্ত পড়ছে। আদিবা তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে আদির পায়ের কাছে বসে আমতা আমতা করে প্রশ্ন করল,

-“ভ ভ ভাইয়া …?

আদি হয়ত বুঝতে পেরেছে আদিবা রক্ত দেখে ভয় পেয়েছে কিন্তু সে আদিবার অবস্থাকে গুরুত্ব না দিয়ে সহসা জবাব দিল,
“” বেন্ডেজ টা করে দে তো আদিবা, করার মত এনার্জি পাচ্ছি না।

আদি কথাটা এত স্বাভাবিকভাবে বলল যেন কিছুই হয় নি। অথচ হাঁটুর নিচে দগদগে ক্ষত। এখনো রক্ত ঝড়ছে মনে হচ্ছে। এই অবস্থাতেও এত শান্ত থাকা যায়.?আদি কথাটা বলেই বিছানায় গা এলিয়ে দিল। পা ২টি বাইরের দিকে ঝুলিছে ।এবার হাঁটুর নিচে দগদগে ক্ষত টা আরও স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠছে। পুরো জায়গা টা রক্তে লাল হয়ে আছে দেখে চোখ কপালে উঠে গেল আদিবার । এত টা ব্যাথা পেলে সে হয়ত এতক্ষনে হাসপাতালে থাকত আদি কি করে সহ্য করছে তার মাথায় ঢুকছে না। কেন যেন আদিবার খুব কান্না পাচ্ছে। যদিও কান্নাটা করার কথা আদির কিন্তু সে শান্ত হয়ে শুয়ে আছে উল্টে আদিবা কান্না জুড়েছে। আদিবা কান্না চাপার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না সে নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না হাওমাও করে কাঁদছে।

আদিবার কান্নার শব্দ শুনে আদি পুরো বোকা বনে গেল কারন সে আদিবার কান্নার কারন বুঝতে পারছে না তাই তাড়াতাড়ি উঠে বসল। তীক্ষ্ণ চোখে আদিবার দিকে তাকিয়ে বলল,

“” সমস্যা কি? কান্না জুরেছিস কেন? আমি ত তোকে মারি নি এমনকি বকাও দেই নি…তাহলে কাঁদছিস কেন?

আদিবা উত্তর দিল না সে একমনে কেঁদে চলেছে।

-“আরে যন্ত্রনা বলবি তো কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?

-“ভ ভ ভাইয়া

-“আগে কান্না থামা তারপর বল কি হয়েছে..

-“এ্যা এ্যা…

-“কান্না থামাতে বললাম না?

“” ভাইয়া এতটা কি করে কাটল?

চোখ মুছতে মুছতে প্রশ্ন করল আদিবা।

“” ঢং করিস আমার সাথে? জানিস না কিভাবে কেটেছে?

-“আমার জন্যই এত কিছু হয়েছে তাই না…?

-“এনেছিলাম বেন্ডেজ টা করে দিতে তা না করে ঢং শুরু করেছিস? চোখের সামনে থেকে দূর হ ইডিয়েট লাগবে না তোর বেন্ডেজ করা।

“” এটা বাসায় বেন্ডেজ করার মত ব্যাথা? এখনি হাসপাতালে চলো।

“”” আমাকে ত পাগলা কুকুরে কামড়েছে হাসপাতালে যাব. বক্স টা দে বলে আদি নিজেই বেন্ডেজ করতে শুরু করল আদিবা বসে বসে দেখছে আর কাঁদছে।

“” আজব তো ইডিয়েটের মত আর কত কাঁদবি? এবার তো পানি শুন্যতা দেখা দিবে চুপ কর।

-“আপনি কি পাথায় দিয়ে তৈরি? আপনার ব্যাথা লাগছে না?

-“না লাগছে না, আমার কিসে ব্যাথা লাগে সেটা যদি তুই বুঝতি তাহলে তো কাজেই হত।যাই হোক জীবনে ত কোন কাজ করতে পারলি না এখন যা বাইরে গিয়ে খাবারের ব্যবস্থা কর। শরীর ভাল লাগছে না ঘুমাব

আদিবা আর কিছু বলল না চুপচাপ বাইরে এসেই খাবারের জোগার করতে লাগল। আদির মা দেখছেন কিন্তু কিছু বলতে পারছেন না কারন আদি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সে এখানে থাকবে না এখন কিছু বললে হয়ত এখনী চলে যাবে।

আদিবা খাবার নিয়ে ঘরে গিয়ে দেখল ঘর ফাঁকা আদি সেখানে নেই…

-“ভাইয়া ভাইয়া….

আদিবা দুবার ডাকতে আদি ওয়াশ রুম থেকে জবাব দিল।

-“শাওয়ার নিচ্ছি, একটু অপেক্ষা কর,আসছি।

আদিবা টেবিলে খাবার রেখে বিছানায় বসল। কিছুক্ষনের মধ্যেই আদি আসল। খালি গা পরনে হালকা ব্রাউন কালারের থ্রী কোয়ার্টার গলায় ঝুলছে সাদা টাওয়াল। কপালের উপড় ছড়িয়ে থাকা এলোমেলো চুল থেকে টুপটাপ পানি ঝরছে।

আদিবা নিজের অজান্তেই হা হয়ে তাকিয়ে আছে আদির দিকে।আদি ব্যাপারটা বুঝেও আদিবাকে বিব্রত করার জন্য বলল,

-“হা করে কি দেখছিস
? বড় ভাইকে দেখতে লজ্জা করে না?

আদিবা এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করল কারন সে লজ্জা পেয়েছে ভিষন রকমের লজ্জা।মুখটা ইতিমধ্যে লাল হয়ে গেছে আদিবার অবস্থা দেখে আদির খুব হাসি পেল সে উচ্চস্বরেই হেসে ফেলল।আদিবা এবার এদিক ওদিক না থাকিয়ে এক দৌড়ে সোজা নিজের ঘরে চলে গেল।



রাত বাড়ছে কিন্তু আজ ঘুমকে কিছুতেই বসে আনতে পারছে না আদিবা। বার বার আদির জন্য দুচিন্তা হচ্ছে।

-“ভাইয়া কী ঘুমিয়েছে? ওর পায়ে ব্যাথা করছে না তো..?একবার কী গিয়ে দেখে আসব?

যেই ভাবনা সেই কাজ আদিবা উঠে বসল কিন্তু চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখল রুম পুরো অন্ধকার!
বিদ্যুৎ নেই তাই কোথাও কোন আলোর রেখা নেই কিন্তু তাতে কী আদিবার এখন আদির কাছে যেতে ইচ্ছে করছে. অন্ধকারে হাতরে হাতরে গিয়ে দাঁড়াল আদির ঘরের সামনে আর দরজাটা শব্দহীনভাবেই খুলার চেষ্টা করলো। পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকল।

আদি মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। গভীর ঘুমে আছন্ন সত্যিই কি উনি ঘুমাচ্ছে নাকি শরীর বেশি খারাপ লাগছে? জ্বর আসে নি তো ? আদিবার ইচ্ছে হলো একবার ছুঁয়ে পরখ করতে। আদিকে এমন নিতর হয়ে পড়ে থাকতে দেখে আদিবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সুস্থ্য অবস্থায় তো সারাদিন আদিবাকে শাস্তি দিয়েই কুল পায়না তবুও আদিবার খারাপ লাগছে।

-“আচ্ছা আপনার শাস্তির ঝুড়ি কি কোনোদিন শেষ হবেনা? এ কেমন ভালবাসা?

আদিবা দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে উল্টো ঘুরে হাটা ধরতেই আদি খপ করে আদিবার হাত ধরল অন্ধকারে হটাৎ এমন কান্ডে ভয়ে চমকে উঠল আদিবা চিৎকার দিতে চেয়েছিল কিন্তু সে সুযোগ পায় নি তার আগেই আদি তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে।
এটা আদি বুঝতে পেরে দেহে প্রাণ পেল। আদির বুকে মুখ গুঁজে নিজেকে সামলাতে চাইল সাথে সাথে আদি বলে উঠল,

-“দুদিনেই অভ্যস্থ হয়ে গেলি?

আদিবা প্রেশ্নের মানেটা বুঝল না তাই মুখ তুলে প্রশ্ন করল,

-“মানে…?

এবার আদিও উঠে বসল,
-“মানে দুদিন আমার সাথে ঘুমিয়েই অভ্যস্থ হয়ে গেছিস তাই নিজেই ছুটেই এসেছিস। এতটাই অভ্যস্থ হয়েছিস যে একটা ছেলে গায়ে হাত দিলেও অস্বস্তি হয় না কি সুন্দর বুকের উপড় শুয়ে থাকতে পারিস।

-“আপনি এসব কি বলছেন?

-“যা সত্যি তাই তো বলছি।

আদিবার এখন কী উত্তর দেয়া উচিত সে জানেনা। আদি কী তাকে অপমান করছে কিনা সেটাও বুঝতে পারছে না শুধু জানে এই পরিস্থিতিটা তার খারাপ লাগছে। আমতা আমতা করে জবাব দিল

-“আপনি ভুল বুঝছেন আপনার শরীর খারাপ তাই দেখতে এসেছিলাম।

-“আদিবা তুই কী জানিস তুই আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছিস?

“আ আ আপনি এসব কী বলছেন?

আদি আবারও শান্ত গলায় জবাব দিল,

-” এই ভুল টা করিস না…নিজেকে সামলা।এভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিস না। আমি ছেলে মানুষ মেয়েদের সাথে ফুর্তি করতে আমার ইচ্ছে হতেই পারে কিন্তু তোকে সেটা মানায় না..



চলবে…!!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#লিখনীঃ মনা হোসাইন
#পর্বঃ২০

সকাল গড়িয়ে বিকাল নেমেছে,আদি বাসায় নেই বন্ধুদের সাথে বেড়িয়েছে। এই ফাঁকে আদিবা নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিচ্ছে।যদিও তার মা কয়েকবার বাঁধা দিয়েছেন, বলেছিলেন আদি যেহেতু বিয়ের ব্যাপারে অমত করেনি তাই এখন আদিবাকে যেতে হবে না কিন্তু আদিবা এক কথার মানুষ । মাঝে মাঝে অদ্ভুত রকমের জেদ চেপে বসে তার মাথায়। নিজে যেটা ঠিক করে সেটাই করে।

আদি বিদেশে চলে যাওয়ার পর তাকে দোষারোপ করে একবার বলা হয়েছিল পড়াশোনা করানো হবে না। সেই যে আদিবা বেঁকে বসেছিল মাধ্যমিক পেরিয়ে আর কলেজের চৌকাঠ মারায় নি।এমন কি বাসার বাইরে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিল। আদিবা এতটাই ঘরকোণে হয়ে যায় যে অনেক আত্নীয়রা তাকে চিনে না পর্যন্ত। আদিবা প্রচন্ড রকমের ইন্ট্রোভার্ট। রাগ,মন খারাপ কিংবা আনন্দ কারো সাথে শেয়ার করেনা।সবার কাছ থেকে নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নিয়েছে। আজ যখন তাকে বলা হয়েছে গ্রামে যেতে হবে মানে সে যাবেই কেউ আটকাতে পারবে না।

সন্ধ্যায় ট্রেন কিন্তু ততক্ষনে আদি হয়ত বাসায় চলে আসবে আর তখন তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হবে না কারন এই একটা মানুষের সাথে আদিবা জেদ দেখাতে পারে না। দেখাবেই বা কি করে আদি যে আদিবার চেয়েও বড় জেদি। আদিবা রাগ দেখিয়ে গ্রামে যেতে চাচ্ছে শুনলে সে তাকে গ্রামের বদলে একেবারে পরপারে পাঠিয়ে দিতে দুবার ভাব্বে না।তাই আদি ফিরার আগেই বেরিয়ে যেতে হবে যেমন ভাবনা তেমন কাজ, আদিবা বিকেলেই বাসা থেকে বেরিয়ে আসল।নিজের মায়ের প্রতি একরাশ বিরক্তি নিয়ে স্টেশনে পোঁছাল কিন্তু স্টেশনে এসে
বিপত্তি ঘটল বহুবছর ধরে আদিবা বাইরের পরিবেশে সাথে বিছিন্ন । তাই স্টেশনে এত লোকজন দেখে কিছুটা ভরকে গেল তাছাড়া কোথায় টিকিট কাটতে হবে এই ব্যাপারেও তার কোন ধারনা নেই। আদিবা চারদিকে তাকিয়ে একজনের কাছে জিজ্ঞাস করল। লোকটি কাউন্টার দেখিয়ে দিল কিন্তু কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন আদিবা বাধ্য হয়ে গিয়ে লাইনে দাঁড়াল তবে এত লোকজন দেখে তার অস্বস্তি হচ্ছে। তার পিছনে একজন এসে লাইনে দাঁড়াতেই গাঁ ছমছম করে উঠল আদিবার তারউপড় হটাৎ ধাক্কায় লাইনে থাকা একজনের সাথে গাঁ লাগতে শিওরে উঠল সে, গাঁয়ে কাঁটা দিল। না আর যাই হোক এখানে দাঁড়িয়ে থাকা তারপক্ষে সম্ভব নক। আদিবা কোন কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি লাইন থেকে বেরিয়ে এসে নিচে বসে পড়ল। আজ নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে তার সামান্য টিকিটও সে কাটতে পারে না?আদিবা চোখ ফেটে কান্না পাচ্ছে। নিচে বসে নিজের অসহায়ত্বকে বরণ করছিল ঠিক তখনী কেউ একজন বলে উঠল,

-“আমি হেল্প করে দিব?

আদিবা চমকে তাকাল সাথে সাথে ভিমরি খাওয়ার যোগার হল,

-“আ আদি ভাইয়া আপনি এখানে…?

-“অরিন ফোন করে বলল, আমি বাসায় ফিরে আসায় তোর নাকি অসুবিধে হচ্ছে সেকারনে গ্রামে চলে যাচ্ছিস তাই ভাবলাম ভাই হিসেবে তোকে বিদায় জানানো উচিত।তাই আসলাম আরকি…

আদিবা প্রচন্ড রকমের অবাক হয়ে বলল,
-“আ আ আপু এসব বলেছে?

-“মিথ্যে বলেছে নাকি?

-“আপনি আসায় আমার অসুবিধে হবে কেন?

-“সে আমি কী করে বলব? অসুবিধা যে হচ্ছে সেটা তো তোর চলে যাওয়ায় প্রমান করছে। যাইহোক যুক্তি তর্ক করতে ইচ্ছে করছে না। যা গিয়ে বেঞ্চে বস আমি তোর জন্য টিকিট কেটে আনছি।

আদির আচারনে আদিবা অবাক হল। এতবড় কথা শুনেও সে আদিবাকে শাস্তি না দিয়ে সাহায্য করছে? কিন্তু কেন এর পিছনে উদ্দেশ্যটা কী? আদি যে এত শান্ত থাকার ছেলে না সেটা আদিবার চেয়ে ভাল কে জানে? যদিও আদি তাকে খারাপ কিছু বলে নি কিন্তু ভয়ে আদিবার বুক ধুঁকপুক করছে।

আদিবা তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখল আদি লাইনে না দাঁড়িয়ে সোজা কান্টারের ভিতরে ঢুকে গিয়েছে আর চোখের পলকেই বেরিয়েও আসল। আদিবা ততক্ষনে উঠে বেঞ্চে বসেছে আদিও এসে আদিবার পাশে বসে পড়ল।

-“কিরে মুখটা এমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে কেন?

-“ভ ভ ভাইয়া…

-“ভয় পাচ্ছিস মনে হচ্ছে?

-“আসলে…

-” কোন কাজ করার আগে ভাবতে হয় কী করছি এর ফলাফল কি হতে পারে। কাজটা করে ফেলার পর আর ভেবে লাভ কী..?

-“আমি আপনার ব্যাপারে কিছু বলিনি বিশ্বাস করুন..

-“বললেই বা কী? মনের কথা বলার অধিকার সবার আছে তোর ও আছে ভয় পাচ্ছিস কেন?

-“আ আ আমি আসলে…

-“এক শব্দ বলতে তিনবার আটকে যাচ্ছিস পুরো বাক্য শেষ করতে গিয়ে হয়ত হার্ট অ্যাটাক করে বসবি তারচেয়ে চুপচাপ বসে থাক। ট্রেন এখনী চলে আসবে।দুটো টিকিট কেটে দিয়েছি যাতে অন্য কারো সাথে বসতে নাহয়।

-“আ আমি প প পানি খাব ভাইয়া…

আদিবার দিকে তাকিয়ে আদি বাঁকা হাসল হাসিতে রহস্য লুকিয়ে আছে সন্দেহ নেই কিন্তু মুখে কিছু বলছে না তাই আদিবা কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।

-“বস নিয়ে আসছি বলে আদি চলে গেল। আদিবা ভয় পাচ্ছে কিন্তু কেন পাচ্ছে সেটা সে নিজেও জানে না।

আদি এসে পানি দিতেই আদিবা ঢকঢক করে বোতল খালি করল।আদির চোখে মুখে রহস্যের ছাপ। দেখতে দেখতে ট্রেন এসে স্টেশনে থামল আদিবা একবার আদির মুখের দিকে দেখছে আবার ট্রেনের দিকে দেখছে। আদিবার অবস্থা দেখে আদি মুচকি হেসে বলল,

-“ট্রেন তোর জন্য দাঁড়িয়ে থকবে না যা উঠে পড় গিয়ে। চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে ট্রেনে কাঁটা পড়লে ব্যাপারটা খারাপ হবে..তুই যে একটা মাথামোটা সেটা এখানে প্রমাণ করার কিছু নেই।

আদিবা এবারেও কিছু বলল না সে যাচ্ছে না দেখে আদি নিজেই আদিবার হাত ধরে ট্রেনে তুলে দিল তারপর ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে বলল,

-“সাবধানে যাস…

বলতে বলতে ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠল আদি নেমে গেল। ট্রেন চলতে শুরু করল। আদি আদিবাকে বিদায় দিল, সহজ বিদায়। তার মাঝে আদিবাকে আটকানোর কোন প্রচেষ্টা নেই , নেই প্রিয়জন হারানোর ব্যাকুলতাও। আদিবা জানলার বাইরে মুখ বের করে তাকাল তার খুব বলতে ইচ্ছে করছে আমি যেতে চাইনি ভাইয়া …কিন্তু বলতে আর পারল কই ট্রেন চলতে চলতে আদির দৃষ্টি সীমা পেরিয়ে আসল আদিবা এখনো বাইরে তাকিয়ে আছে। ভিষন মন খারাপ করছে তার। সবসময় তার সাথেই কেন এমন হয়? আদির সাথে তার ভুল বুঝাবুঝি কি নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে থাকবে সারাজীবন?সে গ্রামে যাওয়ার পর হয়ত সত্যি সত্যি আদির বিয়ে হয়ে যাবে তবে কী কোনদিন আদিকে বলা হয়ে উঠবে না আদিবা তাকে ভালবাসত। ভাবতে ভাবতে চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল। মন খারাপের সন্ধ্যা নেমে আসল আদিবার কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।চোখটা একটু লেগেছে হটাৎ ট্রেনের ঝকঝক শব্দ থেমে গেল আদিবা চোখ মেলে তাকাল বুঝতে পারল ট্রেন ইঞ্জিন পরিবর্তন করছে ছাড়তে দেরি হবে যাত্রীরা স্টেশনে নেমে যে যার মত সময় কাটাচ্ছে কেউ জিনিসপত্র কিনছে কেউ খাবার খাচ্ছে। আদিবার নামা উচিত নাকি উচিত না বুঝে উঠতে পারল না তাই নামল না।

প্রায় আধঘন্টা পর ট্রেনে হুইসেল বাজল যাত্রীরা সবাই উঠতে শুরু করেছে তখন কেউ একজন আদিবার হাত ধরে টানতে শুরু করল ভীড়ের মধ্যে আদিবাকে তার মুখ দেখতে পেল না কিন্তু মুহূর্তেই নিজেকে ট্রেনের বাইরে আবিষ্কার করল ট্রেন তাকে রেখেই চলে যাচ্ছে দেখে আদিবা ভয়ে চুপসে গেল। সে ট্রেনের দিকে দেখতে দেখতে বলল

-“কে আপনি?আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন,হাতটা ছাড়ুন বলছি

ছেলেটা অতিদ্রুত বেগে হাঁটছে আদিবার কথাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।আদিবা তার সাথে তাল সামলাতে পারছে না। আদিবা আবার বল

-“ছাড়ুন আমাকে, আমি কিন্তু চেঁচাব..

ছেলেটা সোজাসাপটা জবাব দিল,
-“স্টেশনে যারা আছে সবাই ইতিমধ্যে দেখতে পাচ্ছে আমি একজন কে জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছি তাই চেঁচালেও যা না চেঁচালেও তাই। কারো এগিয়ে আসার হলে এমনি আসবে..

-“এসবের মানে কী…?

ছেলেটা থমকে দাঁড়াল আদিবার দিকে ঘুরে বলল

-“আমার পারমিশন ছাড়া তুই গ্রামে যাওয়ার সিধান্ত নিস কোন সাহসে?

আদিকে দেখে আদিবার দেহে যেন প্রাণ ফিরে পেল শান্ত হয়ে বলল

-“ভাইয়া আপনি…??উফ আর একটু হলে ভয়ে আত্মাটা বেরিয়ে যেত..কত ভয় পেয়েছিলাম জানেন?

বলে আদিবা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগল।
আদি রাগী চোখে তাকিয়ে আছে দেখে আদিবা ভয় পাওয়ার কথা কিন্তু সে ভয় পাচ্ছে না কারন তার আনন্দ হচ্ছে। আদি তাকে নিতে এসেছে ভেবেই ভাল লাগছে।আদিবার চোখে মুখে খুশির রেখা ফুটে উঠেছে।

-“কিরে এখানে হাসির মত কোন ঘটনা ঘটেছে?ইডিয়েটের মত হাসছিস কেন?

-“আমাকে যেতে দিবেন না এটা স্টেশনে বললেই তো হত এতদূরে আসার কি দরকার ছিল? তখন নিষেধ করলেই তো আসতাম না।

-“সেটা যদি তুই বুঝতি তাহলে তো কাজেই হত।

-“মানে..?

-“সামনে দেখ তাহলেই বুঝতে পারবি।

আদিবা তাকিয়ে দেখল স্টেশন পেরিয়ে তারা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। আদিবা এদিক ওদিক দেখে বোকা মুখ করে বলল,

-“কি দেখব ভাইয়া?

-“মাইল স্কেল দেখতে বলেছি যাইহোক তোর মত মাথামোটা সেটা বুঝবে না তাই বুঝিয়ে বলছি এখান থেকে গ্রামের বাড়ি ১৮০ কিলোমিটার আর বাসা ৬০ কিমি এখন তুই চিন্তা করে সিধান্ত নে তুই কোথায় যাবি।

-“আপনি না বললেন বাসায় যেতে..

-“হুম তবে তবে যেখানেই যাস না কেন হেঁটে হেঁটে যেতে হবে।

আদির কথায় আদিবা অবাক হল
-“এটা কেমন মজা?

-“মজা? আমি কি জোকার নাকি যে মজা করব?

-“তাহলে এসব কী বলছেন?

-“বাংলা বুঝিস না? তুই যা ইচ্ছে তাই করবি আর আমি বসে বসে দেখব এমনটাই ভেবেছিলি…?নিজেকে কী ভাবিস তুই? আজ যদি তোর জেদ ভাঙতে না পারি আমার নাম আদি না। বাসায় কী যেন বলেছিস আমার জন্য তোর থাকতে অসুবিধে হচ্ছে তাই না? একবার বাসায় চল অসুবিধা কত প্রকার আর কী কী সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাবি।

-“আমি বাসায় যাব না। কি করবেন আপনি জোর করে নিয়ে যাবেন?

-“একদমি না রাস্তা দুদিকেই খোলা তোর যেদিকে খুশি যেতে পারিস তবে রাতের বেলায় একা একা যাওয়াটা কী ঠিক হবে?দেখ,ভাই হিসেবে আমার ত একটা দায়িত্ব আছে তাই না?আমি যেহেতু বাসায় ফিরব তাই এইটুকু উপকার করতেই পারি মানে তুই যদি এদিকে যাস আমি সারা রাস্তা তোকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাব আর ওদিকে গেলে শেওড়া গাছের জ্বিন তোকে পাহারা দিতে দিতে নিয়ে যাবে তার উপড়ে রাস্তার ছেলেরা তো আছেই এবার তোর ইচ্ছা।

-“ভাইয়া…

-“ফ্লার্ট করে কোন লাভ নেই।

বলতে বলতে আদি গিয়ে বাইকে উঠে বসল আদিবা দৌড়ে গিয়ে বলল,

-“ভ ভ ভাইয়া আমার ভুল হয়েছে। আপনাকে না বলে আসা আমার উচিত হয় নি। আমাকে একা রেখে যাবেন না প্লিজ আমাকে নিয়ে যান।
আমি আপনার সাথে যাব…

-“এই তো সাবাস মেয়ে চল হাঁটা শুরু কর তাহলে…

-“হেঁটে যাব..?

-“অবশ্যই।

-“কিন্তু কেন আপনার সাথে তো বাইক আছে।

-“তাতে কী এটা তোর শাস্তি। আমার কথা নড়চড় হয় না। হেঁটে যাবি বলেছি মানে হেঁটেই যাবি।

-“এত দূরে হেঁটে হেঁটে কি করে যাব?এটা কি সম্ভব.

-“মানুষ সাঁতরে মাইলের পর মেইল পাড়ি দিয়ে দেয় আর তুই হেঁটে যেতে পারবি না?

-“ভাইয়া…

-“কথায় আছে ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বুক কাঁপল না? আমি জানতে পারলে তোর পা দুটি যে ভেঙে গুড়িয়ে দিব জানতি নাকি ছোটবেলার ইতিহায়া ভুলে গেছিস? আ… দি…বা বহুত উড়াউড়ি করেছো তুমি এবার পাঁখা দুটো ছাঁটার সময় হয়েছে।

বলে আদি বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।

-“ভাইয়া আমায় রেখে যেও না প্লিজ..আমার অন্ধকার ভয় লাগে দাঁড়াও প্লিজ…আর কখনো তোমার অবাধ্য হব না। এবারের মত ক্ষমা করে দাও দয়া করো প্লিজ ভাইয়া।

কে শুনে কার কথা আদিবার কথায় আদি থামল না



চলবে…!!