বেলির কথা পর্ব-১৫+১৬

0
313

#বেলির_কথা (১৫)

.
হাসনাত আর হাবিবা বাড়ি ফিরে আসে।হাসনাত বলে,
‘বোন তোকে ইচ্ছে করছে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরি।আমার স্বপ্নের মেয়ে খুঁজে পেয়ে গেছি।’

হাবিবা কপাল কুঁচকে বলে,
‘স্বপ্ন ও দেখে ফেলছো?’
‘হ্যা।এবার তোর কাজ হচ্ছে একেবারের জন্য ই বেলিফুল কে আমার কাছে নিয়ে আসা।’
‘আচ্ছা দেখি।’
‘দেখি না?খুব শিঘ্রই।’
‘এত তাড়াহুড়া কিসের?তোমার কপালে থাকলে সে তোমার ই হবে।’

হাসনাত হাসিমুখে চলে যায়।হাবিবা ভাবতে থাকে কিভাবে কি করবে।তাদের গার্ডজিয়ান বলতে তো কেউ নেই ও।হাবিবা ছোট মানুষ তার কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে?তারপর মনে হলো হাবিবার শশুড় শাশুড়িকে নিয়েই যাবে।

.
শাহেদ মন খারাপ নিয়ে বসে আছে।কিছুক্ষণ আগে হামিমের বাবা কল করেছিল।মিতু শাহেদ কে এমন মনমরা দেখে বলে,
‘বোনের বিয়ে হয়ে যাবে বলে মন খারাপ করছেন?’
‘নাহ।’
‘তাহলে?’
‘হামিমের বাবা কল দিয়েছিল।’
‘কি বলেছে?’
‘এ বিয়েটা হচ্ছেনা।’

মিতু ভুল শুনেছে মনে করে অবাক হয়ে তাকালো।এ আবার কেমন কথা?এতদূর কথা গড়িয়ে কি এমন হলো?

মিতু বলে,
‘কিন্তু কেন?’
‘হামিম নাকি বিয়ে করে ফেলেছে।তার আগেথেকেই গার্লফ্রেন্ড ছিল তার বাবা মা সেটা জানতো না।কথা পাকাপাকি হবার আগেই সে বিয়ে করেছে।তার বাবা আমার কাছে বারবার ক্ষমা চেয়েছে।’

মিতু চুপ হয়ে গেলো।বেলি কে কি বলবে?তার মনটা এবার একদম ই ভেঙ্গে যাবে।কিন্তু কিভাবে যে বলবে?
.
.
একদিন হাবিবা তার শশুড় শাশুড়িকে নিয়ে হঠাৎ করে বেলিদের বাড়িতে হাজির।বেলি সেদিন ভার্সিটি যায়নি।অচেনা মানুষ দেখে বেলির অবাক হয়।সালাম দেয়।হাবিবা বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে বলে,
‘আমাকে চিনছেন?’

বেলি বলে,
‘না।’
‘অই যে সেদিন গাড়িতে পরিচিত হলাম।দাওয়াত দিয়েছিলেন?না বলেই চলে আসলাম হি হি হি।’

বেলি মনে করার চেষ্টা করে বলে,
‘অ হ্যা আপনি আপু?হায় হায় বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?ভিতরে আসুন?’

বেলি তাদের ভিতরে নিয়ে এসে মিতুকে ডাক দেয়।মিতু এসে সালাম দেয়।সবার সাথে পরিচয় করায়।মিতু নাস্তা রেডি করতে রান্নাঘরে যায়।

হাবিবা বলে,
‘এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই।ভাবিকে এখানে আসিতে বলেন?’
বেলি বলে,
‘আমরা কি তুমি করে বলতে পারিনা?’
‘হ্যা অবশ্যই।আমি নিশ্চয় তোমার বড় হবো তুমি বলা যাবে।বড় হোক ছোট তুমি বলতে আমার ও বেশ ভাল লাগে।’

বেলিরা গল্প করতে করতে মিতু নাস্তা নিয়ে আসে।হাবিবার শশুড় শাশুড়ি মিতুকে দেখে খুব খুশি হয়।বেলি আপ্যায়ন এর ত্রুটি রাখেনা।

হাবিবার শশুড় মিতুকে বলে,
‘তুই আমার মেয়ের মতো।আমরা একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।রাখবি?’

মিতু বলে,
‘বলুন না আংকেল কি কথা?’
‘তোদের বেলিকে আমার হাবিবার ভাইয়ের জন্য নিয়ে যেতে চাই?’

বেলি চমকে উঠে,আর কিছু বলতে নিলে মিতু মুখ চেপে ধরে।
‘তা ছেলের সম্পর্কে বলুন?আর ছেলে রাজি কিনা সেসব ও বলুন।আমাদের মেয়ে কেমন সেসব জানে?’

হাবিবা হু হু করে হেসে উঠে।
হাসার কারণ ধরতে না পেরে সবাই বোকাবনে যায়।নিজে নিজে ত পাগলে হাসে।সবার ফেইস দেখে হাবিবা হাসি থামায়,তারপর সেদিন যে তারা এসেছিল সব শেয়ার করে।বেলি এসব শুনে খুব ই লজ্জা পায়।

মিতু বলে,
‘বেলির ভাই বাসায় নাই,উনি আসুক।কথা বলে আপনাদের জানাবো।’

হাবিবারা চলে গেলে বেলি বলে,
‘আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তাহলে?’
‘ওরা ক্যান্সেল করেছে।’
‘কেন?কি সমস্যা?’
‘ওদের ছেলের গার্লফ্রেন্ড আছে।’
‘আস্তাগফিরুল্লাহ।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’
‘হ্যা সেটাই।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। শিঘ্রই তিনি এতকিছু দিবেন যে তুই খুশি হয়ে যাবি।’

বেলি সস্থি পায়।আবারো মনে মনে একই দোয়া করে।
.
শাহেদ আসলে মিতু সব কথা শেয়ার করে।শাহেদ এ বিয়ের ব্যপার নিয়ে খুবই ক্লান্ত।এখন আর আগের মতো আগ্রহ পায়না।মনে হয় এরা ও কিছু একটা বলে চলে যাবে।

কিন্তু হাবিবা নিজ থেকে কল করে করে বেলির সাথে কথা বলে।

মিতু একদিন হাবিবা কে হাসনাতকে সহ নিয়ে আসতে বলে।শাহেদ এর সাথে পরিচিত হোক তার ই তো বোন।

অতঃপর হাসনাতকে সহ বেলিদের বাড়িতে নিয়ে আসে হাবিবা।শাহেদ প্রথমে হাসনাতকে দেখে ই ভেবেছিল এ বিয়ে আর হচ্ছেনা।কোথায় এমন ছেলে আর কোথায় বেলি?

কিন্তু হাসনাত মানে মুগ্ধতা।
শাহেদ হাসনাতের সাথে কথা বলেই মন ফ্রেশ হয়ে গেলো।হাসনাত মাথা নিচু করে বলে,
‘যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আপনাদের ফুল টা আমায় দিয়ে দিন ভাইয়া।প্লিজ?’

শাহেদ হাসনাতকে জড়িয়ে ধরে।অনেকদিন পর মনে হচ্ছে শাহেদ একটা ভাই পেয়েছে।

হাসনাত বেলি, মিতু আর শাহেদের জন্য গিফট নিয়ে আসে।

বেলির জন্য একটা বেলিফুল আর চিঠি নিয়ে আসে।তাদের আলাদা করে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়।

বেলি এর আগে ছেলেদের সামনে এভাবে একান্তে কথা বলেনি।হাত পা সব কাপাকাপি করছে।হাসনাত আগে বলা শুরু করে,
‘আমি বাঘ নাকি তেলাপোকা?এরকম ভয়ের কি আছে?’

বেলি ভয় পায়না,এটা প্রমাণ করার জন্য বলে,
‘শুনুন আমি তেলাপোকা একদম ই ভয় পাইনা।’
‘আচ্ছা একটা ধরে আনি তাহলে?’

বেলি চুপ করে থাকে।
‘এখন দেখে আপনাকে কত শান্ত লাগছে।’
‘হ্যা আমি ত শান্ত ই।’
‘কি জানি।তবে প্রচুর বোকা আর বাচ্চাস্বভাবের।’
‘একদম উল্টাপাল্টা বলবেন না।’
‘ঝগড়া করবেন নাকি?’

বেলি আবারো চুপ।হাসনাত কি বলবে ভেবে পায়না।এরকম চুপ থাকলে কি কথা মুখ দিয়ে আসে।
‘বলছি আমাকে আপনার কেমন লেগেছে?’

বেলি হাসনাতের দিকে একবার থাকায়।আর বলে,
‘আপনি অনেক সুন্দর।আমার বিপরীত জন।’
‘এই একদম এমন কথা নয়।আমার বেলিফুল ফুলের মতো ই সুন্দর।’

বেলির যে লজ্জা লাগলো কথাটা শুনে।হাসনাত ফুলটা এগিয়ে দেয়।আর বলে,
‘বেলির হাতে, বেলিফুল ই মানায়।’

বেলি ফুলটা হাতে নেয়।
‘আমাকে কি কিছুই বলার নেই?’

বেলি মাথা নাড়ায়,
‘না।’

হাসনাত নিজের লিখে আনা কাগজ টা এগিয়ে দেয়।

আর হাসনাত বলে,
‘বিধাতা আমাকে করেছে সুন্দর, শুধু তোমার জন্য,তুমি কি আসবে, ভালবাসবে আমাকে কখনো?
অগোছালো এ জীবনে গুছিয়ে রাখবে কি আমাকে?
আমি যে ভালবাসি,খুব ভালবাসি তোমাকে।’

বেলি হা করে হাসনাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর কাগজের দিকে তাকায়।অনেক সুন্দর হাতের লিখা,
*ভালবাসি*
(লাভ)হাসনাতের বেলি’

বেলির জীবনে এমন কেউ আসবে সে ভাবতে পারেনা।এমন মুহুর্তে কি বা বলবে মাথায় আসছেনা।বেলি ফুলটা আবারো হাসনাতের দিকে এগিয়ে দেয়।হাসনাত ফুলটা হাতে নিতেই
তারপর মুহুর্তেই দৌড় দিয়ে কেটে পড়ে।হাসনাত হু হু করে হাসে।


আজ বেলির আকদ হয়ে যায়।কয়েকদিন পর ঘরোয়া করে অনুষ্ঠান করে একেবারের জন্য বেলিকে নিয়ে যাবে বলেই ঠিক হয়।হাসনাতরা সন্ধ্যার দিকে চলে যায়।তবে বেলির সাথে আজ তেমন কথা বলার সুযোগ পায়নি সে।মসজিদ থেকে এসে বেলিকে একটু করে দেখতে এসেই চলে যায়।তাছাড়া আশেপাশে অনেক মুরুব্বি মানুষ ছিলেন বলে হাসনাত আর আলাদাভাবে কথা বলতে চায়নি।

বেলির এত আনন্দের মাঝে মনটা ভার।মিতু পাশে এসে বসে বলে,
‘আম্মার কথা ভাবিস?’
‘হুম।’
‘আম্মা আজ তোকে এভাবে দেখলে কতই না খুশি হতো।এই নাহ একদম কাঁদবি না।শোন বাস্তবতার পথে হাটতে হাটতে তোর অনেক অভিজ্ঞতা হবে।অনেক ঝড় তুফান আসবে জীবনে তবে বলে রাখি,স্বামীর ভালবাসার কখনো অমর্যাদা করিস না।এমনভাবে ভালবাসবি তাকে, যাতে করে তুই কাফন পড়েই শেষবারের মতো সে ঘর থেকে বের হোস।তার আগে নয়।’

‘ভাবিই’

বেলি মিতুকে জড়িয়ে ধরে কাদে।শাহেদ দূর থেকে বেলিকে দেখে।ঘরটা খালি করে অবশেষে চলে যাবে বোনটা।শাহেদ চোখের জল মুছে বলে,
‘আম্মার কবরের কাছে যাবি?’

বেলি মাথা নাড়িয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে।
.
শাহেদ কবরের কাছে গিয়ে জিয়ারত করে।তারপর বলে,
‘আম্মা তোমার কলিজার বিয়ে হয়ে গেছে তো।কত বড় হয়ে গেছে আম্মা।তুমি এত তাড়াতাড়ি কেন চলে গেলে আম্মা?’

বেলি ধপ করে নিচে বসে।হু হু করে কাদে।একজন মেয়েই জানে ‘মা ‘ শব্দটির গভীরতা।
‘কতদিন হয়ে গেলো আম্মা আমারে দেখেনা।এখানে একা শুয়ে আছে।এই বেলির কথা কি আর মনে পড়েনা?’

মিতু বলে,
‘চল উঠ বেলি।রাত হয়ে যাচ্ছে।’

বেলি কেঁদে কেঁদে বলে,
‘মিষ্টি আমার মায়ের হাসি,চাঁদ এর চেয়ে সুন্দর যে,
মাকে মনে পড়ে আমার, মাকে মনে পড়ে….

চলবে…..

#তাহরীমা

#বেলির_কথা (১৬)

.
মিতুর হঠাৎ করেই অসুস্থ লাগছে তেমন কিছু খেতে ভাল লাগছেনা।শাহেদ বেলি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ে।শাহেদের মায়ের কথা মনে পড়ে।মা ও এমন খেতে পারতো না।না সে চিন্তায় চিন্তায় শেষ।শাহেদ মিতুর মা কে কল করে এ বিষয় জানায়।অথচ তিনি একটু চিন্তিত হলেন না উলটা শাহেদকে বললেন,মিতুকে যেন সাবধানে রাখেন।আর পারলে যেন ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায়।

শাহেদ মিতুকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায়।সেখানে এমন সংবাদ শাহেদ শুনবে কল্পণা করেনি।
তাদের সংসার পরিপূর্ণ হতে আসছে।

শাহেদ এত খুশি যে পথে পথে মিতুর সাথে বকবক করছে।
‘আমাকে আল্লাহ আরেকটা মা এনে দিলেই আমি খুশি।’

মিতু চুপ করে থাকে।শাহেদ নিজেই সব বলে,
‘আম্মা চলে যাওয়ার পর অনেক কষ্ট পেয়েছি।তুমি কিন্তু সাবধানে থাকবা।আমার মায়ের যেন কোনো কষ্ট না হয়।ঠিক আছে?’

মিতু হেসে বলে,
‘আপনি অনেক খুশি হয়েছেন তাইনা?’
‘প্রত্যেক বাবা এমন খবর শুনে খুশি না হয়ে পারে?তবে আমি মা আসলেই বেশি বেশি খুশি হবো।’

মিতু বুঝতে পারছে শাহেদের আম্মার কথা মনে পড়ছে।শাহেদ বলে,
‘বেলি তো কিছুদিন পর চলে যাবে।আমি তোমার জন্য কাজের মহিলা রাখবো।তোমাকে ভারী কাজ করতেই দিবো না।’
‘আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে।’

মিতু হাসে।শাহেদকে আজ অন্যেরকম লাগছে।মুহুর্তেই মানুষটা পালটে গেলো।এ মানুষটা এত রাগি কেউ দেখলে বলবেই না।
.
.

আজ বেলির বিয়ে।লাল শাড়ি পড়ে মাথায় বেলিফুলের তাজ,হাতে গলায় বেলিফুলের মালা দিয়ে বউ সেজে বসে আছে।এসব কিছু হাসনাতের পছন্দের কেনা।অদ্ভুত হলেও সত্যি! বেলিকে আজকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।সুন্দর দেখার চোখ থাকলে কালোতে ও সৌন্দর্য্য দেখা যায়,সে হিসেবে আজ বেলিকে সবার থেকেই সুন্দর লাগতেছে।

বেলি যাদের এতদিন টিউশনি করেছে তাদের সবার মন খারাপ।বেলি চলে যাবে তাদের এখন এত স্নেহ দিয়ে কে পড়াবে।বেলির স্টুডেন্ট সবাই বেলিকে দেখতে এসেছে।মিতু সবাইকে মিষ্টি খেতে দেয়।

বেলি সীমা রিয়া প্রিয়াকে ও ইনভাইট করে।তবে রিয়া আর সীমা আসলেও প্রিয়া আসতে পারেনি।

সীমা আর রিয়া দূর থেকে হাসনাতকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।বেলির হাসবেন্ড এত সুন্দর হবে কখনো ই কল্পণা করেনি তারা।কিন্তু ভাগ্যে থাকলে কেউ তার ভাগ নিতে পারেনা এমন।

সীমা বেলিকে এসে বলে,
‘ভাইয়া তো অনেক সুন্দর।কেমনে কি হলো?’
বেলি হেসে বলে,
‘সব আল্লাহ ঠিক করেছেন।’

রিয়া আর সীমাকে বেলি সব কথা শেয়ার করে।মিতু এসে তাড়া দিয়ে বলে,
‘শুধু গল্প করলে চলবে কিছু খেতে হবেনা?’

রিয়া আর সীমা ভাত খেতে চলে যায়।মিতু এক প্লেট ভাত বেলির জন্য নিয়ে আসে।
‘নে কবে আবার আসবি।আজ আমি খাইয়ে দিই?’
‘ভাবি?’

মিতু বেলির দিকে তাকায় না।তার কেমন যেন কান্না পাচ্ছে।
‘বল?’
‘আমার দিকে তাকাও?’

মিতু বেলির দিকে তাকায়।চোখ ছলছল করে উঠে।বেলি বলে,
‘আমার তোমাকে খুব মনে পড়বে।মায়ের পর তুমি একজন যে আমাকে এত আগলে রেখেছো।আজ থেকে তোমার থেকে ও দূরে যাবো গা।নিজের খেয়াল রেখো ভাবি।আমার আম্মা আসতে চলেছে তার খেয়াল রেখো।’

‘তুই ও তোর ভাইয়ের মতো আম্মা আম্মা করছিস?যদি আব্বা হয়?’

বেলি হেসে বলে,
‘আব্বা হলেও খুশি আমি।তবে তুমি সাবধানে থাকবা।’
‘আচ্ছা থাকবো।নতুন ঘরে যাচ্ছিস সব মানিয়ে চলিস?’
‘আচ্ছা।’

হাবিবা হুড়মোড় করে ডুকে,
‘এইতো আমার ভাবি।মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগতেছে তোমাকে।’

মিতু বলে,
‘ভাত খেয়েছো?’
‘হ্যা ভাবি।ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা একদম কবজি ডুবিয়ে খেয়েছি।’

মিতু হেসে উঠে।
‘আমার বোনটাকে তোমাদের দিয়ে দিচ্ছি কিন্তু, ভাল রেখো হ্যা?’
‘শুধু তোমার বোন নাকি?সে আমার ভাবি নয়, আমার বোন ও।’

.
বেলিকে বিদায় দিয়ে শাহেদ চোখের জল মুছে নেয়।মিতুকে বলে,
‘ঘরটা কেমন খালি ই হয়ে গেলো।কত বকেছি মেরেছি।কিন্তু আজ অনেক কষ্ট লাগছে ওর জন্য।’

শাহেদ মিতুকে জড়িয়ে ধরে।
.
বেলি গাড়িতে কেঁদে ই চলেছে তো কেঁদে ই চলেছে।হাসনাতরা দুইটা এনেছে গাড়ি।একটাতে শুধু বেলি হাসনাত।আরেকটা তে হাবিবা তার শশুড় শাশুড়ি হাসবেন্ড আর বাকিরা।

হাসনাত কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল কিন্তু বেলির কান্না থামার নাম ই নিচ্ছে না।হাসনাত বলে,
‘আমি কি তোমাকে জেলখানায় নিয়ে যাচ্ছি,যে বাঘে খাবে বলে ভয় পাচ্ছো?’

হাসনাতের এমন অদ্ভুত কথায় বেলি বিরক্ত।হাসনাত আবারো ছোট করে বলে,
‘আমাকে কি ভয় লাগছে?আমি তো আর বাঘ না।’

কথায় কথায় খালি বাঘ আর তেলাপোকার কথা বলে।তবুও বেলি দূর্বলতা দেখাবেনা।সে এসব ভয় পায়না।

হাসনাত আবারো বলে তোমার মাথায় কতবড় তেলাপোকা একটা।বেলি কান্না থামিয়ে চিল্লিয়ে উঠে,
‘কই?প্লিজ ফেলে দিন?প্লিজ?’
‘না আগে কান্না থামাও।তারপর।’

বেলি চুপচাপ বসে।হাসনাত হেসে ফেলে,
‘এত বোকা হয়ে কি জীবন চলে?স্ট্রং হতে হবে তোমার মাথায় কোনো তেলাপোকা ছিল না।দেখছিলাম তুমি জড়িয়ে টড়িয়ে ধরো কিনা?’

বেলি হঠাৎ একটা কান্ড করে বসে।কান্না করতে করতে নাকের সব আবর্জনা আসছিল।সেসবটুকু হাসনাতের পাঞ্জাবি তে মুছে দেয়।আর বলে,
‘আমাকে মিথ্যা বলার শাস্তি।আর হ্যা আমাকে এত আহামরি বোকা ভাবার ও প্রয়োজন নেই।’

হাসনাত বলে,
‘কি করলে এটা? অহ নো।’

ড্রাইভার আংকেল এদের কান্ড দেখে মুচকি হাসে।
.
হাবিবারা আগে গিয়েই সব রেডি করে রাখে।বেলি যেমন মিতুকে ঘরে এনেছিল হাবিবা ও বেলিকে ধরে ঘরে আনে।

বেলি এই প্রথম দেখে এত বড় প্রাসাদের মতো ঘর।সামনে মাঠের মতো সবুজ ঘাস তার আশেপাশে ফুলের গাছ।হাবিবা বেলিকে সব রুম এক এক করে দেখায়।

তারপর হাসনাতের রুমে নিয়ে আসে।
‘এটাই তোমার রুম।’

বেলি আশেপাশে থাকায়।গুছানো রুম।হাবিবা বলে,
‘ভাইয়া অনেক গোছালো মানুষ।অগোছালো সে একদম ই পছন্দ করেনা।’

বেলি মন খারাপ করে রইলো।আর বলে,
‘এটাও বিপরীত।আমি তো অগোছালো।’
‘ভালো ই ত হলো তুমি অগোছালো করবে ভাইয়া গুছাবে।ব্যপারটা বেশ সুন্দর হবে।আচ্ছা এখানে একটা ত্রিপিস রেখেছি চেঞ্জ করে আসো আমি খাবার সাজাতে যাই।’
.
হাসনাত গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে থাকে। ড্রাইভার আংকেলের সাথে জরুরি কথা বলাতে বাড়িতে ডুকেনি।হাসনাত বলে,
‘আংকেল তোমার যত টাকা লাগে নিয়ো।তোমার ছেলের জীবন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
‘তুই তোর বাবার মতো ই হয়েছিস।’
‘হ্যা আমি চাই বাবার আদর্শ ধরে রাখতে।’
.
হাসনাতদের পারিবারিক ড্রাইভার তিনি।একসময় হাসনাতের বাবাকে কাজে অনেক সাহায্য করতো আর বিশ্বস্ত মানুষ ছিলেন,আছে।কিছুদিন আগে আংকেলের ছেলের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।তাই চিকিৎসার যাবতীয় খরচ হাসনাত ই দিচ্ছে।

.
বেলি ত্রিপিস পড়েই রুম থেকে বের হয়।হাবিবা বলে,
‘বসো টেবিলে।নাও তোমার যা খেতে মন চায় খাও?’

খাবার টেবিলে ভাত,রোস্ট,ডিম,সবজি,মিষ্টি,সন্দেশ সব রাখা আছে।বেলির প্রিয় সব খাবার।বেলি বলে,
‘আপু তুমি ও বসো?’
‘হ্যা বসবো।’

খাবার টেবিলে হাবিবার বর ও এসে বেলির সাথে পরিচিত হয়।এতদিন বেলির কথা শুনলে ও তাদের দেখা হয়নি সামনাসামনি ।হাবিবার মতো ই তার বর। মিশুক প্রকৃতির মানুষ।

হাসনাত বাড়ি ডুকে সোজা রুমে যায়।তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে।এসেই হাবিবার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমাকে না ডেকেই খাওয়া হচ্ছে তোদের?’

হাবিবা বলে,
‘তুমি কি মেহমান? এত দরদ দিয়ে ডাকবো?’
‘ভাবি পেয়ে বদলে গেলি?’

বেলি চুপ করে আছে।হাবিবা বলে,
‘খাও তো ভাবি?’

বেলি অল্প কিছু খেয়ে উঠে পড়ে।বাকি সবাই খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়।

বেলি হাবিবাকে কাজে সাহায্য করে।তারপর তারা ও যে যার রুমে চলে যায়।

হাসনাত আগেই বেলির অপেক্ষাতে ছিল।বিছানায় চুপচাপ বসে রয়েছে।বেলিকে আসতে দেখে হাসনাত বলে,
‘আসছে এতক্ষণ এ।’
‘আপুকে একটু সাহায্য করছিলাম।’
‘বসো এখানে।’

বেলি হাসনাতের পাশে গিয়ে বসে।হাসনাত বলে,
‘আজকের রাত টা অনেক সুন্দর তাইনা?’
‘হ্যা মনে হয়।’
‘সত্যিই সুন্দর।আকাশে যেমন চাঁদ আছে,আজ আমার আকাশে ও চাঁদ উঠেছে।’

বেলি বলে,
‘আপনি যেমন সুন্দর আপনার কথাগুলো ও খুব সুন্দর।’
‘আচ্ছা তাই?চলো আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য নামাজ পড়ি।পড়বে?’

বেলি আগাগোড়া মাথা নাড়ায়।তারপর দুজনে ওযু করে দুজনে নামাজ আদায় করে।
মোনাজাত করে দুজনে জায়নামাজে বসে।

হাসনাত বলে,
‘তোমার কি বলার আছে বলে ফেলো?’

বেলি কিছুক্ষণ চুপ থাকে।হাসনাত বলে,
‘সব কথা কি আমি ই জমিয়ে রেখেছি?তুমি রাখো নি?’

বেলি হেসে বলে,
‘আপনি আমায় শুধুই ভালবাসবেন,আমি আপনার নির্দিষ্ট মানুষটি হয়ে আজিবন থেকে যাবো।ইন শা আল্লাহ..

চলবে……

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)

#তাহরীমা