বেলির কথা পর্ব-২৮ এবং শেষ পর্ব

0
452

#বেলির_কথা (২৮)
#শেষপর্ব

.
কলেজের সবাই হাসনাতকে দেখার জন্য খুবই এক্সাইটেড।বেলির সাথে যখন হাসনাত কলেজ আসলো সবাই হাসনাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।সেই আগের মতো ই আছে হাসনাত।চেহারা,শরীর কিছুই পরিবর্তন হয়নি।রিহান স্যার ও বেলি ম্যাডামের হাসবেন্ড কে সে সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকে দেখার জন্য ছুটে আসেন।

পুরা টা দিন ই তাদের অনেক ভালই কাটে।

শাহেদরা এখনো গ্রামে যায়নি।শাহেদ এখন গ্রামের অনেক বেকার ছেলেদের নিয়ে কাজ করে।জমিতে ফসল ফলায়,মাছ চাষ করে।অনেক ছেলেদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে শাহেদ।পাশাপাশি বুঝিয়েছে পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই।কাজ করতে লজ্জা পেতে নেই।সৎ উপায়ের কাজ সব ই কাজ।

হাসনাত বেলি কলেজ থেকে ফিরে দুপুরের ভাত খেয়ে সবাই গোল হয়ে বসে।সাথে হাবিবারা ও আছে।

বেলি হেনার ব্যপারটা সবার সাথে শেয়ার করে।এ বয়সে সন্তানরা ভুল করেই।আমাদের উচিৎ তাদের ভুলঠিক বুঝানো,তাদের মানসিকভাবে শক্তি দেয়া।এ ব্যপারে ও তারা আলোচনা করে।তখন হাবিবার বর বলে,
‘আমার এক ফ্রেন্ড পুলিশের জবে আছে।তাকে ইনফ্রম করলে কেমন হয়?’

তখন সকলে সায় দেয়।এবং হেনার সাথে কলেজে কেউ না কেউ থাকবে বলে সীদ্ধান্ত নেয়।রাফি নিশ্চয় দেখা করতে আসবে।তারপর রাফির সম্পর্কে ও জানা যাবে।
.
.
হেনা আজ কলেজে গিয়েছে।হাসনাত ও হেনার সাথে যায়।গিয়ে হেনার কলেজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে।এদিকে হেনা বের হওয়ার সাথে সাথেই রাফির সাথে দেখা হয়।হাসনাত রাফির স্বভাব দেখেই বুঝে এই সে ছেলে,হাসনাত পুলিশদের ইনফ্রম করে বসে থাকে।রাফি হেনাকে একটা গাড়িতে তুলে।হাসনাত হাবিবার বরকে ও কল করে।সবাই একসাথে আড়াল হয়ে রাফিকে ফলো করে।
.
এদিকে হেনার জন্য বেলি অস্থির হয়ে আছে।মেয়েটা বিপদে পড়বে না তো?কিন্তু আরো কত বাবা মার মেয়ের যে খারাপ অবস্থা হবে, সে ভেবে বেলি চুপ করে থাকে।এ মুহুর্তে জায়মামাজ ই একমাত্র শান্তির স্থান।
.
হেনা গাড়িতে বসে খুবই ভয় পায়।তবুও সাহস করে বলে,
‘আমরা কোথায় যাচ্ছি সত্যি বলুন তো?’
‘গেলেই বুঝবে।’

তবুও হেনা বাড়াবাড়ি করায় রাফি একটা রুমাল বের করে হেনার মুখে চেপে ধরে।হেনা অজ্ঞান হয়ে যায়।
.
হুশ ফিরে দেখে রাফি একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে এসেছে তাকে।হেনা বলে,
‘এটা কোথায় এনেছেন?আপনি না বিয়ে করবেন?’
‘কিসের বিয়ে?হা হা হা।’
‘মানে?’
‘আহ বাচ্চা নাকি বুঝো না?’

রাফি হা হা করে হাসে।হেনা ভয় পেয়ে যায়।রাফি বলে,
‘ভয় পেয়ো না তোমার আরো অনেক সঙ্গী আছে।তাদের সাথে থাকবে, ঘুমাবে।’
‘মানে?’

রাফি হেনার হাত ধরে একটা রুমে যায়।সেখানে গিয়ে হেনা আরো অবাক হয় আরো দশজন মতো মেয়ে সবাই প্রায় তার বয়সী।সবার ভীত চাহনি হেনা ও ভয় পেয়ে যায়।

এদিকে পুলিশ বাড়িতে ডুকতে নিলে হাসনাত বলে,
‘এখন নয়।এখন রাফি বুঝতে পারলে পালিয়ে যাবে।আগে কি করে আমরা দেখি?’

রাফি কাকে যেন কল করে।কিছুক্ষণ পর চারপাচজন লোক আসে।সবাই মুখোশধারী ভদ্রলোক।রাফি তাদের বস বস বলে সম্বোধন করতে বুঝে যায় যে এরা আসলব্যক্তি।তাদের আর কোনো লিডার নেই।

সেখান থেকে একজন বলে,
‘মেয়ে সবাইকে এখানে এনেছো?’
‘জ্বি বস।আসুন দেখবেন।সবাই একদম খাটি।’

তারা সবাই ভিতরে ডুকতেই পুলিশ চারদিকে ঘীরে ফেলে।হাসনাত হাবিবার বর হাসিব শহিদ এগিয়ে গিয়ে লোক যে চারপাচজন ছিল সবাইকে পিছন থেকে মাথায় আঘা*ত করে।মাথায় আঘা*ত পেয়ে সকলে বসে পড়ে।তারপর হাসনাতরা হাত পা বেধে ফেলে ওদের।পকেট থেকে যাবতীয় সব বের করে নেয় যাতে হা*মলা করতে না পারে।

একে একে সবাইকে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়।হাবিবার বরের বন্ধু হাসনাতকে বলে,
‘থ্যাংকিউ মি: হাসনাত।অনেক দিন ধরে আমরা এদের ধরার জন্য চাচ্ছিলাম।আপনাদের সহযোগিতা না হলে তা সম্ভব হতো না।আমি এদের যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করবো।যাতে জেল থেকে আর বের ই হতে না পারে।’

.
হাসনাত আর হাবিবার বর মিলে মেয়েগুলোকে তাদের বাসায় পৌছে দেয়।এবং তাদের বাবা মাকে সতর্ক করে দেয়,যেন নিজ নিজ বাচ্চাদের খেয়াল রাখে।
.
হেনাকে অক্ষত দেখে বেলি প্রাণ ফিরে পায়।বেলি তখন শহিদ,মিরা,হাসিব,হেনার উদ্দেশ্য বলে,
‘বাবা মায়েরা সন্তানদের কখনো খারাপ চায়না।হ্যা সবার নির্দিষ্ট পছন্দ থাকতে পারে,কিন্তু তার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন।হ্যা অনেকের বাবা মা সন্তানদের চাহিদা বুঝেনা বুঝতে চায় ও না,পারিবারিকভাবে টর্চার করে এটা ঠিক না।সন্তানরা ভুল পথে গেলে তাদের মানসিক নির্যাতন না করে আমাদের বুঝাতে হবে।আর বাবা মায়েরা না বুঝলে তাদের কে ও বুঝাতে হবে।আ*ত্ম*হ*ত্যার সিদ্ধান্ত কেউ ই নিবে না।আর সবসময় আল্লাহর বিচারের উপর ছেড়ে দিবে।’

হাসিব বলে,
‘আমরা উপদেশ গুলো মেনে চলার চেষ্টা করবো।’

হেনা বলে,
‘আমরা চারভাইবোন একতাবদ্ধ থাকার চেষ্টা করবো।’

বেলি হেসে ফেলে।বেলি তখন শাহেদ কে বলে,
‘ভাই আমি মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।উনাকে ও বলেছি,এবার তোমার মত দেবার পালা।’
‘কি সিদ্ধান্ত বল?’
‘আমাদের গ্রামে তেমন ভাল হসপিটাল নেই,ভাল চিকিৎসার জন্য শহরে আসতে হয়।তাই আমরা একটা হসপিটাল দিবো।আর হসপিটাল এর নাম হবে ‘মায়ের দোয়া’ কারণ আম্মার দোয়ার কারণে ই আজ আমাদের সফলতা।’

হাবিবার বর বলে,
‘এই তো অনেক সুন্দর প্রস্তাব।আমরা সবাই সহযোগীতা করবো।’

_______
গ্রামে হসপিটাল হবে এ কথা সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে।পাশাপাশি গ্রামের ধনীব্যক্তিরা ও এগিয়ে আসে।বেলির ইচ্ছে হেনা আর হাসিব কে ডাক্তারি পড়াবে।যাতে করে গ্রামের লোকদের চিকিৎসা করতে সুবিধা হয়।
শহিদ জানায় সে ফুফির মতো শিক্ষক হবে।

সবাই মিলে হসপিটাল এর কাজে সাহায্য করে।
_____________
অবশেষে গ্রামে হসপিটাল তৈরি হয়।বেলিরা সবাই গ্রামে আসে।আজ থেকে হসপিটাল চালু হবে।সে উপলক্ষে ছোটখাট অনুষ্ঠান হচ্ছে।

হাসনাত সবাই কে সহযোগীতা করার জন্য ধন্যবাদ দেয় পাশাপাশি তাদের জন্য দোয়া করতে বলে।গ্রামের যেসব মানুষ বেলিকে এটা সেটা বলে আঘাত করেছিল আজ তারা ও বেলির সুনাম করতে ভুলছে না।সময় আর ধর্য্য মানুষ এর জীবনে পরিবর্তন আনে বেলি তার একমাত্র প্রমাণ।

হাসনাত বেলিকে ডেকে বলে বক্তব্য রাখতে।
বেলি তখন গ্রামের মানুষ এর উদ্দেশ্য সালাম দিয়ে বলে,
‘আমি সেই বেলি, যে একটা সময় প্রচুর ভীতু আর বোকা ছিলাম।আম্মা ছাড়া একা থাকতে পারতাম না।আমি ভাবিনি কখনো আম্মা ছাড়া পথ চলবো অথবা চলতে হবে।অথচ আমার কি ভাগ্য বেশিরভাগ লাইফ ই আম্মাহীন।কিন্তু আম্মার শিক্ষা আদর্শ আমার সাথে ছিল বলে অবহেলিত হওয়ার পর ও আমি আজ এই জায়গায়।এখনো আম্মা নেই এটা ভেবে আমি সহ্য করতে পারিনা।গ্রামের মানুষদের একটা অনুরোধ যারা আমাকে ভালবাসেন,অথবা ঘৃণা করেন তারা ও আমার আম্মার জন্য দোয়া করবেন।পাশাপাশি আমাদের সবার আব্বা আম্মার জন্য দোয়ায় রাখবেন।যাতে তারা সবাই আল্লাহর কাছে ভাল থাকে।এ দিন টা দেখলে আমার আম্মা কতই না খুশি হতেন।কিন্তু……

বেলি ফুফিয়ে কেঁদে উঠে।হাসনাত কাঁধে হাত রাখে।আর বলে,
‘আমাদের সবার দোয়ায় আমাদের সবার আব্বা আম্মা ভালই থাকবেন।’

গ্রাম থেকে বেলিরা চলে আসে।রাতের খাবার খেয়ে হেনা মায়ের কোলে মাথা দিয়ে বলে,
‘মাম্মাম তুমি আমার চুলে বিলি কাটো।আমি ঘুমাই।’

বেলি মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে হেনাকে ঘুম পাড়িয়ে,হেনার মাথা বালিশে রেখে চলে আসে নিজের রুমে।হাসনাত বিছানায় বসে ছিল বেলিকে দেখে বলে,
‘চলো ছাদে।আজকের চাঁদ টা খুবই সুন্দর।দুইটা চাঁদ একসাথে দেখে গল্প করবো।

বেলি হাসে।
‘ফুলের মালাটা? ‘

‘আচ্ছা যে কয়েকবছর দিই নাই,এখন থেকে প্রতিদিন মালা এনে দিবো খুশি?’
‘হ্যা।’

হাসনাত বেলির হাত ধরে ছাদে যায় পাশাপাশি বসে।বেলি হাসনাতের কাঁধে মাথা রাখে।তারপর চুপ করে থাকে।
‘কিছু বলবে না?’
‘এভাবেই শান্তি লাগছে।’
‘আচ্ছা ঘুমাও তাহলে?’

হাসনাত বলে,
‘সবচেয়ে বেশি শুকরিয়া জানাতে হবে আল্লাহ কে তাইনা?শুনো আবারো যদি আমাদের জীবনে কখনো দুঃখ জড়িয়ে যায় আমরা ধর্য্য ধরবো, সে জান্নাত পাওয়ার লোভে হলেও রবের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবো।এখানের সুখ অস্থায়ী হয়েও পরকালের সুখ চিরস্থায়ী হোক আমাদের,এটাই চাওয়া।’

বেলি তখন হেসে বলে,
‘জানেন আমার রবকে ডেকে কেউ নিরাশ হয়না।আমি যে আমার রবকে ডেকে কখনো নিরাশ হইনি।শুকরিয়া।’

(সমাপ্ত)

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)

#তাহরীমা

(আসসালামু আলাইকুম।#বেলির_কথা এটা মূলত একটা উপন্যাস ছিল।কাচা হাতের লিখা বলে ভুল থাকতেই পারে।তার জন্য আমি আন্তরিক দুঃখিত।।গল্প নিয়ে সবাই মতামত দিবেন।
সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন।সুস্থ থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ)