বেলী ফুলের সুবাস পর্ব-০২

0
359

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব:২
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
-ওহ! বন্ধু না অন্য কিছু তা ছবিতে ভালোই বুঝা যাচ্ছে।বন্ধুর সাথে এভাবে কেউ রাস্তায় হাটে না।
-আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমরা কিভাবে হেঁটেছি?
-এই যে হাত ধরে কেউ বন্ধুর সাথে হাটে?আমাকে বুঝাতে এসো না।
-হুম মানলাম বন্ধু না আমরা ।দুজন দুজনকে ভালোবাসি।
-ভালোবাসার মানে বুঝো?
-হুম আপনার থেকে ভালো বুঝি।জীবনে কেউ কে ভালোবেসেছেন কি না সন্দেহ।
-বেশি কথা বলছো বেলী।
-আমি বেশি কথা বলছি তাই না? আর আপনি খুব ভালো কাজ করেছেন বুঝি?আপনি এই কাজ টা একদম ভালো করেন কি সুবাস ভাই।
-তুমি তাহলে ভালো কাজ করেছো তাই না? অচেনা অজানা একটা ছেলের সাথে রাস্তায় হেসে হেসে কথা বলেছো ,ছেলেটা যদি তোমার কোনো ক্ষতি করতো তখন কি হতো? তুমি কি তার পরিবার সম্পর্কে জানো ,তাকে পার্সোনালি চিনো? যদি আজ তোমার সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করতো তখন কি হতো ভেবে দেখেছো একবার ?
খানিকটা রেগে বলল সুবাস।
-সে যাই হোক আপনাকে কেউ বলে নি আমাকে নিয়ে এত ভাবতে।।আমি নিজের খেয়াল রাখতে জানি।

পূর্ণিমার রাত ,চারপাশে সব কিছু জল জল করছে ,নিস্তব্ধ রাতে সব কিছু স্তব্ধ,সকলেই গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন,শুধু ঘুম নেই এক কিশোরী কন্যার চোখে।বেশ কিছুক্ষণ ধরে এপিঠ ওপিঠ করছে বেলী,চোখে ঘুম নেই মন ছট ফট করছে ,শুধু মনে হচ্ছে এই এতটুকু ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি , ডিরেক্ট বিয়ে।বিয়ের কথা ভেবেই কান্না পাচ্ছে বেলীর।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে দু চোখ নিদ্রায় মগ্ন হয়ে গেলো টেরই পেলো না ।

( আলী হোসেন এবং বিলকিস বেগমের তিন ছেলে এক মেয়ে ।বড় ছেলে আমজাদ হোসেন, স্ত্রী মনিরা বেগম,তাদের দুই ছেলে মেয়ে ,বড় মেয়ে রিদিতা হোসেন , ছেলে সাফাত হোসেন সুবাস। মেঝো ছেলে আমিন হোসেন , স্ত্রী রিতা বেগম , মেয়ে তাযনা হোসেন বেলী ।তার পর মেয়ে মিতা হোসেন যিনি শশুড় বাড়িতে আছেন ।ছোট ছেলে মোর্শেদ হোসেন ,স্ত্রী রাজিয়া বেগম ,দুই ছেলে মেয়ে ,মিহির হোসেন এবং সামিয়া হোসেন ।)

সকাল সকাল পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো বেলীর ।নামাজ শেষ করে ,কিছু পড়া বাকি ছিল তা কমপ্লিট করে নিলো,অন্যান্য সাবজেক্টে ভালো পারলেও আইসিটি আর ইংলিশ তার মাথায় ঢুকে না ।তাই তো এই দুই সাবজেক্টে ফেইল করলো ।

সকলে মিলে নাস্তা করছে ,নাস্তা করতে করতে বিলকিস বেগম বললেন
-কি আমিন মাইয়া রে কি বিয়া দিবি না?
-জি আম্মা ভালো ছেলে পেলে দিবো ।
বলে উঠলেন আমিন হোসেন
-না মেয়েকে এখন বিয়ে দিবো না ,আমি তাকে বুঝাবো এমন ভুল সে আর করবে না ।বাচ্চা মানুষ তাকে একবার সুযোগ দেন।
বলে উঠলেন রিতা হোসেন।
-বউ মা মানলাম বাচ্চা মানুষ ভুল করেছে , আর যে ভুল করবো না তার গ্যারান্টি কি তুমি দিবা ? সময় থাকতে মাইয়া রে বিয়া দিয়া দাও নাইলে পরে হায় হায় করন লাগবো । ঘটক রে কি আইতে কমু ?
বললেন বিলকিস বেগম ।
-জি আম্মা আপনি যা ভালো মনে করেন ।
বললেন আমিন হোসেন

আমার দু চোখ দিয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে,কি এমন ভুল করলাম যে আমাকে এখনই বিয়ে দিতে হবে । ভাবনার মাঝে বড় চাচী বলে উঠলেন
-আম্মা আমি একটা কথা বলতে চাই।

সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো মনিরা বেগম দিকে,আমজাদ হোসেন বউয়ের কথায় এক পলক তাকিয়ে খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।
-আম্মা আমি বলছিলাম কি ,বেলী তো আমাদেরই মেয়ে , সুবাস ও আমাদের ছেলে, সুবাসের ও বিয়ের বয়স হয়েছে।আজ না কাল সুবাসকেও বিয়ে দিতে হবে । আর বেলীকে বাইরের করো কাছে বিয়ে দিলে পরিবার কেমন না কেমন হয় ।তাই আর কি…
-কথা না ঘুরায়া তাড়াতাড়ি কও বউ মা।
বলে উঠলেন বিলকিস বেগম ।
-আসলে আম্মা আমি আর সুবাসের বাবা চাচ্ছিলাম যে সুবাসের সাথে বেলীর বিয়ে দিতে ।এতে বেলীর জন্য ভালো হবে ।ঘরের মেয়ে ঘরে থাকবে।

এক নাগাড়ে কথা বলে থামলেন মনিরা বেগম।পরিস্থিতি থমথমে,সকলের মুখের দিক চেয়ে অবস্থা অনুমান করতে চাইলেন ।

বেলী যেনো আকাশ থেকে পড়লো , এ কি বললো বড় চাচী , সে আর সুবাস ভাইয়া।কিভাবে সম্ভব?
এবার নিজের আম্মু আব্বুর দিকে তাকালো বেলী ,এক পলক তাকালো সুবাসের দিকে , নাহ এই লোকের মুখের কোনো ভাবান্তর নেই, দিব্বি খেয়ে চলছে ,মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না খুশি হয়েছে না রাগ করেছে ।

-হো বউ মা,তুমি তো ভালো কথা কইসো। আমি রাজি । তা, তমগো মতামত কি ?
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বিলকিস বেগম তাকেলেন আমিন ও রিতা বেগমের দিকে ।রিতা বেগমকে কিছু বলতে না দিয়ে আমিন হোসেন বলেন
-আমি রাজি আম্মা ।
– বেশ তাইলে আর দেরি না কইরা বিয়ার আয়োজন করো ,আজ হইলেও বিয়া দিতে হইবো ,কাল হইলেও দিতে হইবো ।শুভ কাজে দেরি কইরা লাভ নাই।

-তুমি আমার সাথে রাগ করে আছো ,রিতা ?
রিতা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন মনিরা বেগম।
……..
-দেখো বোন রাগ করো না ,তোমার মেয়ে মানে আমার মেয়ে ,তুমি তো জানো আমি আর তোমার ভাইজান বেলীকে কতো ভালোবাসি।আমি আর তোমার ভাইজান চাই নি মেয়েটা অন্য জনের ঘরে চলে যাক ।নিজের ঘরে মেয়েকে ধরে রাখার সুযোগ থাকলে কেনো অন্য জনের ঘরে মেয়েকে পাঠাবো ?আমি চাই মেয়েটা আমাদের কাছে থাকুক।তার জন্য ও ভালো হবে ।পরিবার ছেড়ে তাকে দূরে যেতে হবে না ,তোমার মেয়েও তোমার কাছে থাকবে ।

-না ভাবি রাগ করি নি ,মেয়েটা আমার ছোট এখনও সংসারে কিছু বুঝে না ।তাকে কি একটা সুযোগ দেয়া যেত না ?তবে আমি এখন নিশ্চিন্ত যে মেয়েটা আমাদের সাথে থাকবে ,মায়ের মতো শাশুড়ি পাবে ।
বলেই এক গাল হাসলেন রিতা বেগম ।তার বিশ্বাস তার অগোচরে বেলীকে আগলে রাখবেন মনিরা বেগম ।

বিকেল গড়িয়ে গোধূলির শুরু ,আকাশে লাল রঙের আভা দেখা যাচ্ছে ।প্রকৃতির আলো শেষ হয়ে অন্ধকারের শুরু ।সেই সাথে সাজানো হচ্ছে এক কিশোরী কন্যাকে ।পড়ানো হয়েছে লাল রঙের কাতান শাড়ি ,কোমর পর্যন্ত চুল গুলো খোঁপা করা হয়েছে ।মায়াবী চোখ দুটোয় দেয়া হয়েছে মোটা করে কাজল , ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক।যেহুতু বিয়ে টা শুধু ঘরোয়া ভাবে হবে সে জন্য বেশি সাজানো হলো না বেলীকে।ছোট থেকেই সাজগোজ করতে পছন্দ করে বেলী,নিজের বিয়েতে লাল টুক টুকে বউ হওয়ার কত শখ ছিল কিন্তু আজ পরিস্থিতির কারণে সব ইচ্ছা যেনো শেষ হয়ে গেলো। বউ সাজা আর হলো না। নিজের ইচ্ছাকে মাটি দিতে হল।
(ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দিবেন।ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।)
চলবে……?