বেলী ফুলের সুবাস পর্ব-০৫

0
329

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :৫
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

-আরে সুবাস ভাই বেলীর দিকে এমন করে তাকিও না মেয়েটা লজ্জা পাবে।বউ তো তোমার। ঘরে যেয়ে মন ভরে তোমার বউ কে দেখে নিও।

সামিয়ার কথায় হুশ ফিরলো সুবাসের।খানিক টা অপ্রস্তুত হলো।তবুও সামিয়ার কান টেনে দিয়ে বললো।
-বেশি পাকনা কথা বলতে হবে না তোকে।বেশি কথা বললে কিন্তু আর মেলায় নিয়ে যাব না।

তাদের কথার মাঝে এগিয়ে এলো বেলী।তারা বেরিয়ে গেলো মেলার উদ্দেশ্যে।আজ বেশ মজা হবে কতদিন পর তারা ঘুরতে বের হলো।

মেলাতে প্রবেশ করতেই সামিয়া বায়না ধরলো ফুচকা খাবে।বেলীর ও ফুচকা বেশ পছন্দ।সুবাস এগুলো খায় না যতো সব আনহেলদি ফুড।
-ভাইয়া চলো না ফুচকা খাবো।(সামিয়া)
-আমি এগুলো খাই না(সুবাস)
-ভাইয়া আপনি না খান। আমি আর বেলী খাবো।তুই খাবি না বেলী?(সামিয়া)
-এগুলো একদম ভালো খাবার না।কি না কি ভাবে তৈরি করে।(সুবাস)
-আপনের খেতে মন না চাইলে খাবেন না।আপনাকে তো আর খেতে বলে নি।সামিয়া চল তুই আর আমি খাবো।
বলেই ভেংচি কাটলো বেলী।কথাটা বলে সমিতার হাত ধরে ফুচকার দোকানে এগিয়ে গেলো বেলী।বেশ ঝাল করে ফুচকা খেলো।ঝাল না খেলে কি ফুচকার মজা পাওয়া যায়?এই যে এখন বেশ ঝাল খাওয়ার ফলে চোখের পানি নাকের পানি এক করে বসে আছে বেলী।পানি পানি করে চিল্লাচ্ছে।

-এই নাও পানি।বলেছিলাম ফুচকা খেও না।আমার কথা তো শুনলেই না উল্টো ঝাল দিয়ে খেলে।যদি ঝাল খেতেই না পারো তাহলে খেতে গিয়েছ কেনো ?
বেশ জোরেই ধমকের সুরে বললো সুবাস

-থাক না ভাইয়া বেচারীকে আর বিকা দিয়ো না।চলো আমরা হওয়াই মিঠাই খাই। হওয়াই মিঠাই খলে বেলীর ঝাল কমে যাবে।(সামিয়া)
-হুম। তদের তো সব সময় আনহেলদি খাবার খেতে মন চায় (সুবাস)
– প্লীজ ভাইয়া।খাই না।(সামিয়া)
– তোরা কি আর আমার কথা শুনবি। করবি তো শুধু নিজের মন মতো।।চল তদের কিনে দেই হওয়াই মিঠাই।
বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল সুবাস।

বেশ জোড়ে গাড়ি পার্ক করলো সুবাস।বেলীর হাত ধরে টানতে টানতে বাসার ভিতর ঢুকলো।সামিয়াও তাদের পিছন পিছন ঢুকলো। বসার ঘরে বসে কথা বলছেন বিলকিস বেগম ,রিতা বেগম এবং মিতা বেগম।সবাইকে উপেক্ষা করে বেলীকে টানতে টানতে রূমে নিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল। রুমে এসে বেশ জোরে বেলীর হাত ছাড়ার ফলে বেলী ছিটকে গিয়ে বেডে পড়ল।সুবাসের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।মনে হচ্ছে আগুন বের হবে।জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।বেলীর দিকে এক পলক তাকিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো।টা দেখে বেলী শুকনো ঢোক গিল।।সুবাস বেলী হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে নিজের আঙ্গুল গুঁজে দিয়ে বেডের সাথে চেপে ধরলো।সুবাসের গরম নিঃশ্বাস বেলীর ঘরে পড়ছে।বেলী দুচোখ বন্ধ করে এলো।বেলীর কানের কাছে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল

-ছেলেদের পেট দেখানোর জন্য শাড়ি পড়েছ ? এতো বড় গলার ব্লাউজ কেনো পড়েছ ? যখন শাড়ি ঠিক মত পড়তে পরো না তাহলে পড়েছো কেনো?আনসার মী ডেম ইট।

ভারি কণ্ঠে কেপে উঠলো বেলী।
-আ আ আসলে আমি
-তোতলাচ্ছ কেনো? শাড়ি ঠিক মতো পড়তে পারলে পড়বে নাহলে পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তোমার সৌন্দর্য দেখার অধিকার শুধু আমার আর কারো নয়। এই সৌন্দর্য শুধু মাত্র আমার জন্য বরাদ্দ।নেক্সট টাইম যেনো এমন না হয়।আম আই ক্লিয়ার।

দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল বেলীর। তার কি দোষ সে কি ইচ্ছা করে এমন করে শাড়ি পড়েছে নাকি? কখন শাড়ি কোমর থেকে সরে গিয়েছে সে নিজেই টের পায় নি। আর ব্লাউজ টা তো মার্কেট থেকে কিনে এনেছে বলেই এত বড় গলা সেখানে তার কি দোষ?

সুবাসের ইম্পর্টেন্ট কল আসাতে বেলী আর সামিয়া কে রেখে এক পাশে কথা বলতে আসে সুবাস।সামিয়া আর বেলী কিছু কেনাকাটা করছিলো। কথা শেষে বেলীর সামনে এগোতেই সুবাসের কানে ভেসে এলো

-দোস্ত দেখ পুরাই মা’ক্ষ’ণ।পে’ট তাই যদি এমন হয় না জানি ব’দ’ন টা কেমন হইবো?মন চাইতাছে একটু হাত দিয়া ধইরা দে’হি।

-দোস্ত মনডায় চাইতাসে মা’ক্ষ’ণ টারে একটু ছুয়া দেই।ইস যদি আজকে রাইতে পাইটাম তাইলে মন ডায় শান্তি পাইতো রে।

-আমার তো এহনই সব করতে মন চাইতাছে।আমার তো উপর থেইকা নিচে পর্যন্ত সব টে’স্ট করতে মন চাইটাসে।

বলেই হাসতে লাগবো ছেচড়া বদমাইশ গুলো।এদের কাজই হলো মেয়েদের কে হয়রানি করা। মেয়েদেরকে বাজে মন্তব্য করা।তাদের কথা শুনে সামনের দিকে তাদের চোখ অনুসরণ করে তাকাতেই রাগ তর তর করে বেড়ে গুলো সুবাসের।তারা বেলীর দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছিলো। বেলীর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো ,বেলীর শাড়ি ঠিক নেই কোমরের দিকে শাড়ি সরে গিয়ে পুরো ধবধবে ফর্সা পেট দেখা যাচ্ছে । চুল গুলো খোঁপা করার ফলে ঘাড় থেকে একটু নিচে পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। একপলক সেদিক চেয়ে প্রথম জনের নাক বরাবর ঘুষি দিলো সুবাস।বরাবর সব গুলোকে ইচ্ছা মত কেলানী দিলো।

রাত ১০ টা তখনকার ঘটনার পর বেলী অনেক কেঁদেছে। বেশি কান্নার ফলে চোখ সহ মাথা প্রচুর ব্যথা করছে।তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।তাইতো রাতের খাবার পর্যন্ত খায় নি।অন্ধকার রূমে প্রবেশ করে লাইট অন করলো সুবাস। হাতে তার খাবারের প্লেট ।বেলী কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।বেলীর দিকে এগিয়ে গিয়ে ধির কন্ঠে ডাকতে লাগলো
-বেলী ওঠো খাবার টা খেয়ে নাও
বেলী কোনো শব্দ করলো না

ফের সুবাস বললো
-বেলী খাবারটা জলদি শেষ করো নাহলে কিন্তু ভালো হবে না

শেষমেষ বেলী চোখ খুলে খানিকটা রাগের সুরে বললো
-আমি খাবো না।আমার ক্ষিদে নেই।আমাকে ঘুমোতে দিন।

এবার সুবাস বেলীর হাত টেনে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো।ভাত মাখিয়ে বেলীর মুখের সামনে ধরলো।
-ভালোই ভালোই বলছি খেয়ে নাও।আমাকে রাগীয় না।

বেলী কথা না বাড়িয়ে চুপ চাপ খাওয়া শুরু করলো।বেলী দু এক লোকমা খেয়ে আর খেতে চাইলো না
সুবাসও এর জোর করলো না।হাত ধুয়ে শুয়ে পড়লো।তবে বেলীর চোখে ঘুম নেই।লোকটা এমন কেনো একটু সরি বললে কি হতো?বেলীর বান্ধবীরা হাজার বলুক যে সুবাস তাকে ভালবাসে কিন্তু সে টা বিশ্বাস করে না।বিশ্বাস করবে না কেনো ? যে লোক একটা সরি বলতে পারে না সে আবার কিসের ভালোবাসে?এসব ভাবতে ভাবতে বেলীর দু চোখে ঘুম পরী এসে হানা দিলো।গভীর নিদ্রায় চলে গেলো বেলী।সুবাস বেলীর দিকে তাকিয়ে রইলো।বেলী ঘুমিয়ে যাওয়ার পর বেলীর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে নিজেও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলো।

চলবে………?