বেস্টু পর্ব-০২

0
2160

#বেস্টু
#পর্ব_০২
#Ariyana_Nur

সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছি ১ঘন্টা ধরে।তার পরেও মাথা ঠান্ডা হচ্ছে না।বাড়িতে এসে ছোটখাট তান্ডব করে ফেলেছি।
কিন্তু অবাক করা বিষয় কেউ আমাকে কিচ্ছু বলেনি।আমার মাদার বাংলাদেশ যে নাকি একটা গ্লাস ভাংলেই এতো এতো কথা শুনায় সেও আজ চুপ।বুঝতেছিনা সবাই কি মিউট হয়ে গেল নাকি???

দীর্ঘ ২ঘন্টা সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখি আমার ভাইয়া আমার খাটে বসে আছে।ভাইয়াকে দেখে আমি ভুত দেখার মত তাকিয়ে রইলাম।কেননা আজকে ভাইয়ার একটা ইম্পট‍েন্ট ডিল সাইন করার জন‍্য সিটির বাইরে যাওয়ার কথা।

ধুর.. আমিতো আপনাদের কে বলতেই ভুলে গেছি আমরা ২ভাই বোন।ভাইয়া বাবার সাথে বিজনেস দেখাশুনা করে।দেখতে পুরো চকলেট বয়। আপনারা কিন্তু আবার আমার ভাইয়ার উপর ক্রাস খাইয়েন না।থাক খেলেও সমস‍্যা নাই আমার ভাইয়া ব‍‍্যাচালার।আমি ভাইয়াকে কিছু না বলে খাটের ওপর পাশে শুয়ে রইলাম।

—বুড়ি তুই এতোক্ষন কেন সাওয়ার নিলি।তোর না বেশি সময় ভিজলে মাথায় পেইন হয়।

আমি ভাইয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললাম…
—তুমি আমার মাথার পেইনের কথা চিন্তা করছো??কিন্তু আমি মনে যে ব‍্যথা পেয়েছি সেটা দেখলে না??

ভাইয়া একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল….
—দেখ বুড়ি….আমরা যা করেছি তা অনেক ভেবে চিন্তে করেছি।

আমি কাদতে কাদতে বললাম….
— আমি তো বেশি হয়ে গেছি তোমাদের কাছে।আমি অনেক জ্বালাই।তাই আমাকে এতো তারাতারি পর করে দিচ্ছ।আমি মরে গেলেই ভালো হবে।

ভাইয়া রাগি গলায় বলল…
—কানের নিচে দিব একটা।ফালতু কথা বন্ধ কর।তুই কেন বেশি হবি।দেখ বোন আরহাম অনেক ভালো ছেলে।তোর কি মনে হয় আমি আমার বুড়িকে যার তার হাতে তুলে দিব???

আমি কিছু না বলে শুধু কান্না করছি।ভাইয়া আবার বলতে লাগলো…..
— আমার কথা ভালো করে শোন। এখনতো শুধু আংটি পরিয়ে দিয়ে গেছে।আর ২বছরের আগেতো আমরা কিছু করবো না।তোর হাতে এখনো ২বছর সময় আছে।এই ২বছরে যদি তোর ওকে পছন্দ না হয় তাহলে আমি তোর পছন্দের জায়গায় তোকে বিয়ে দিব।

আমি কান্না থামিয়ে বললাম…. সত্যি…..

—হুম..এটা এই মাহাব খানের ওয়াদা।কিন্তু আমার বিশ্বাস তার আর দরকার হবে না।

আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।

—অনেক রাত হয়ে গেছে শুয়ে পর।এই বলে ভাইয়া আমায় মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে চলে গেল।

কি ভাবছেন???যা ভাবছেন তাই ঠিক আমাকে আজকে ঐ টারহাম না আরহাম আংটি পরিয়ে দিয়ে গেছে।তারা সবাই আগের থেকেই সব প্লান করে রেখেছিল।শুধু আমি জানতাম না।😭
ভাবতেও অবাক লাগছে কিছু সময়ের ব‍্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেল।আমি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে শুয়ে রইলাম।

___________________

.

কলেজের মাঠের এক কোনে বসে আছে আহাদ।একটু পরে একজন এসে ওর পিঠে ধুমধাম তাল ফালালো।আহাদ তার হাতের মার থেকে বাচতে বাচতে বলল…..

—-কিরে তোর সমস্যা কি??এভাবে কেলাইতাছোস কেন??

—ও..মা…তুমি জানো না!!!কালকে আমার লগে কেমনে কথা কইছিলি মনে পরছে???

—তার জন‍্য এইভাবে মারবি???

—এটাতো কম ছিল বেবিরে আসতে দে মনু তোর খবর আছে।হুহ…(ভাব নিয়ে)

আহাদ কিছু বলবে তার আগে একজন মেয়ে ওদের সামনে এসে বলল….
—তাহিয়া….মানহা আসে নি??

—না ওতো আসে নি।কেন কিছু বলবে??

—না ও আসুক তারপরে ওকেই বলল।বাই

আমি কলেজে পৌছে আহাদ আর তাহিয়াকে খুজতে লাগলাম। ওরা হচ্ছে আমার জানের জিগার কলিজার আদঘান দোস্ত। কিছুক্ষন খোজার পরেই দেখতে পেলাম তারা মাঠের এক কোনায় বসে আছে।আরে শুধু কি বসে আছে সাথে যুদ্ধও করছে।আমি ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখে ওরা দাঁড়িয়ে গেল।আহাদ কাপাকাপা গলায় বলল….
—বেবি তোর হাতে ওটা কি???

আমি একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বললাম….
— ও..এম..জি…তুমি দেখি মনু চোখে কম দেখ!! আমার হাতের স্কেল টা দেখতে পারছো না??

—তুই ঐটা বের কইরা রাখছস কেন??

— ও তাই তো কেন এটা বের করছি???ওহ…মনে পরেছে…
এই বলে আমি স্কেল দিয়ে ওরে উরকিধুরকি মারতে লাগলাম।তাহিয়া চিৎকার করে বলছে….
—মার বেবি মার আমার তরফ থেকে আরো কয়টা মার।

আমি ওকে মেরে হাপিয়ে এক কোনায় ধপ করে বসে পড়লাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল….
—দেখ আমি কত স্টং। আমার কিছুই হয়নি।আর তুই আমারে কেলাইয়াই চিৎ হইয়া গেলি।

আমি ওর দিকে কটমট করে তাকালাম।তা দেখে ও একটা শুকনো ঢোক গিললো।তাহিয়া আমাকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল….
—এটা ধর আর বল কি হয়েছে???কি করছে এই বদমাশে??

আহাদও আমার দিকে ঘুরে বলল….
—আরে বলবি তো কি করছি???নাকি অন‍্য কারোর ঝাল আমার উপর উঠালি??

আমি ওর পিঠে আরেকটা তাল ফালিয়ে বললাম….
—-শয়তান,বান্দর,কুত্তা তোরে তো আমার কাটা চামচ দিয়া কেইচ্ছা লবন মরিচ লাগাইয়া রোদে শুকাইতে মন চাইতাছে।

—আরে কবিতো কি করছি??থাক বাদদে.. কাল কই মরতে গেছিলি সেটা বল???

—তুই আবার কথা কস??তোর লিগা আজ আমার এই দশা।

তাহিয়া এবার ধমক দিয়ে বলল…
—ঐ ছেরি তোর ঢং শেষ হইলে এখন বল কি হইছে??

আমি ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে রইলাম।কিছু বলবো তখন ও আমার হাত ধরে বলল….
— ওহ বেবি তোর আংটিটাতো অনেক সুন্দর।কে দিল হুম….

আমি দাতে দাত চেপে বললাম…..
—তোর নানায় পরাইয়া দিয়া গেছে।তোর নানিরে নাকি তার পছন্দ না তাই আমারে পরাইয়া দিয়া গেছে।এই বলে আমি উঠে চলে যেতে নিলেই আহাদ আমার হাত ধরে বসিয়ে দিল।তারপর সিরিয়াস হয়ে বলল….
—তোর চেহারা এমন দেখা যাচ্ছে কেন??কি হয়েছে বল আমাদের??তুই যদি চুপ করে থাকিস তাহলে বুঝবো কিভাবে??

আমি এবার কালকের ঘটনা সব ওদের বললাম।সব শুনে ওরা মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর তাহিয়া বলল…
—-সবিতো বুঝলাম। কিন্তু তুই ঐ বেটারে চিনোস কেমনে???এটাইতো আমার মাথায় ঢুকতাছে না।

আমি কাদো কাদো হয়ে বললাম…
—জানু…..তুইতো কয়দিন ধরে তোর ডাইরিয়ার জন‍্য ও আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাতেই বললাম থুক্কু তোর জ্বরের কারনে এতোদিন আসতে পারিস নি।
সেদিন…….

চলবে,