বোনু পর্ব-১+২

0
5117

#বোনু
#Part_01
#Writer_NOVA

হাসপাতালের গেইট দিয়ে পাগলা কুকুরের মতো দৌড়ে চারটা ছেলে ভেতরে ঢুকলো।চার ভাইয়ের কলিজার টুকরো, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস,বেঁচে থাকার অস্তিত্ব তাদের একমাত্র বোন আজ এক্সিডেন্ট করেছে।চোখে, মুখে আতংক চার ভাইয়ের।হাসপাতালে পাগলামী করে মাথায় তুলে ফেলেছে ৪ ভাই। হাসপাতালের মধ্যে বলা যায় ছোট-খাটো ঘূর্ণিঝড় এসেছে।

অর্ণবঃ ডক্টর আমার বোনু কোথায়?
আদিলঃ আমাদের বোনুকে কোথায় রেখেছেন?
ইশাতঃ কি ব্যপার এনসার দিচ্ছেন না কেন?
ঈশানঃ হোয়ার ইজ মাই সিস্টার?
ডক্টরঃ মি. মির্জা আপনারা শান্ত হোন।আপনাদের বোনের কন্ডিশন আগের তুলনায় কিছুটা ভালো বলা যায়।তিনি এখন আই সি ইউ তে আছে।

ইশাত রেগে গিয়ে ডাক্তারের কলার ধরে বললো— আমার বোন আই.সি.ইউ তা আছে আর আপনি বলছেন আগের তুলনায় ভালো।যদি আমার বোনের কিছু হয় তাহলে আপনাদের একজনকেও এই হসপিটালে রাখবো না।আপনাদের হসপিটালও আমি বন্ধ করে দিবো।
অর্ণবঃ ইশাত কি করছিস টা কি? ডক্টরের কলার ছার।আমাদের বোনের কিছু হবে না।

বাকি ৩ ভাই অনেকটা ধস্তাধস্তি করেই ইশাতকে ছারালো।ওর এখন রাগে কপালের রগ ফুলে উঠেছে।
ঈশানঃ আমাদের বোনু কোথায়?
নার্সঃ আসুন আমাদের সাথে।

আই.সি.ইউ এর সামনে নীরবে চোখের পানি ফেলছে ৪ ভাই। যে বোনের গায়ে একটা ফুলের টোকা পর্যন্ত পরতে দেইনি।সে বোন আজ জীবন-মরণের সাথে লড়াই করছে।হাত-পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ।মুখে অক্সিজেন মাস্ক।ছোট বোনটা তার কত কষ্ট পাচ্ছে। যার গায়ে একটা মশা বসলে চার ভাই পাগল হয়ে যায় কিভাবে কি করবে? সামান্য একটু ব্যাথা পেলে ভাইদের জান বেরিয়ে যায়।সে বোন আজ একাই মৃত্যুর সাথে বাজি ধরেছে।সে নিজেও জানে না জিতবে নাকি হেরে যাবে।

আদিলঃ ভাইয়া,আমদের বোনু কি আমাদেরকে আর ভাই বলে ডাকবে না? ও কথা বলছে না কেন? বোনু জানে না ওর সাথে কথা না বললে আমাদের ভালো লাগে না।
অর্ণবঃ শান্ত হো আদি।আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ।তিনি যদি এই এতিমদের ওপর দয়া করে।

অর্ণবের বুক ফেটে চিৎকার আসছে।কিন্তু ওকে তো কাঁদলে হবে না।ও সবার বড়, আজ যদি ও ভেংগে পরে তাহলে ওর বাকি তিন ভাইতো চোখে অন্ধকার দেখবে।তাই ঠোঁট চেপে অন্য দিকে মুখ করে রেখেছে। চেয়ারে বসে মুখ ঢেকে ডুকরে কাঁদছে ঈশান।ওর সাথেই উষার সারাক্ষণ লেগে থাকতো।ইশাত নিশ্চুপ হয়ে এক ধ্যানে আই সি ইউ এর বাইরে দাঁড়িয়ে বোনকে দেখছে।চোখর পাতা গরিয়ে দুই ফোঁটা নোনা জল গরিয়ে পরলো।তখনি আই.সি.ইউ থেকে ডাক্তার বের হয়ে তাদের সামনে এলো।

আদিলঃ ডক্টর আমার বোনের কন্ডিশন কেমন?
ডক্টরঃ সি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার।কিন্তু তারপরও পুরোপুরি বিপদ কাটে নি।মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত পেয়েছে। যদি ৭২ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরে তাহলে সৃতি শক্তি হারিয়ে যেতে পারে।আর যদি জ্ঞান না ফিরে তিনি কোমায় চলে যেতে পারে।আমরা আমাদের সর্বশ্ব চেষ্টা করছি।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিনটা কারো হাতে নেই। আল্লাহ যদি চায় উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে।সেটা তার ইচ্ছা। হায়াতের মালিক আল্লাহ। আপনারা তাকেই ডাকুন।

ডক্টর আদিলের কাঁধে হালকা করে চাপর মেরে বড় করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে গেল।আদিল,ইশাত,ঈশান ধপ করে মাটিতে বসে পরলো।অর্ণব নিশ্পলক চাহনীতে তাকিয়ে আছে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ঠিক যেমনটা নিঃশ্ব লেগেছিলো আজ ঠিক তেমন লাগছে।

ইশাতঃ আমাদের বোনু কি ভালো হবে না ঈশান?
ঈশানঃ আল্লাহ কে ডাক ভাই।তিনি সব ঠিক করে দিবে।আমাদের কিছু চাই না। আল্লাহ যেনো শুধু আমাদের বোনটাকে ভিক্ষা দিয়ে দেয়।এই এতিমগুলোর ওপর রহম করে।আমাদের এতো ধন-দৌলতের কোন প্রয়োজন নেই। তার বিনিময়ে আমার বোনের জীবনটা ফেরত দেয়।
আদিলঃ সবসময় কি আল্লাহ আমাদের প্রিয় জিনিসটাই নিয়ে যায়।বাবা-মা কে হারিয়ে অনেক কষ্টে বেঁচে আছি। এখন বোনটাকে ছেরে কি করে থাকবো।হে আল্লাহ, একটু রহম করো এই অধমদের ওপর।আমরাতো ৫ ওয়াক্ত তোমার ইবাদত করি।আমাদের কথা শুনবে না।আমাদের বোনের জীবনটাকে ভিক্ষাই দিয়ে যাও।
ইশাতঃ আমাদের ওকে একা ছারা উচিত হয়নি।আগে যদি জানতাম ওকে কখনি একা ছারাতো দূরে থাক চোখের নজরেও হারাতাম না।

আসরের নামাজের আজান হচ্ছে। ৪ ভাই পাথরের মতো বসে আছে আই.সি.ইউ এর বাইরে।
অর্ণবঃ চল আসরের নামাজ পড়ে আসি।
ইশাতঃ ভাইয়া আমাদের বোনু।
অর্ণবঃ বোনকে আল্লাহ দেখবে।নামাজ পরে আল্লাহর কাছে ওর জীবনটা ভিক্ষা চাইতে হবে তো।না চাইলে তিনি দিবে কিভাবে? উনি হয়তো আমাদের দোয়ার অপেক্ষা করছে।আমাদের দোয়ার উসিলায় এবং আল্লাহর রহমতে যদি আমাদের বোনটা ঠিক হয়ে যায়।
ঈশানঃ আমি যাবো না ওকে ছেরে কোথাও।আমি এখানেই নামাজ আদায় করে নিবো।আমরা সবাই চলে গেলে বোনু যদি আমাদের সাথে অভিমান করে না ফেরার দেশে চলে যায়।তখন আমরা ওকে কোথায় পাবো।
আদিলঃ এসব কথা বলবি না শান।খুব ভয় করে।
অর্ণবঃ কিছু হবে না আমাদের বোনুর।আমরা কিছু হতেই দিবো না।চল নামাজ পরতে।

ঈশানকে জোর করেই নামাজ পরতে গেল ৪ ভাই। নামাজ নিয়ে তো কোন অজুহাত চলে না।আই.সি.ইউ এর বাইরে বডিগার্ড দিয়ে কড়া পাহারায় রেখে তারা চারজন হসপিটালের মসজিদে নামাজ আদায় করতে চলে গেল।

মির্জা বংশের চার ছেলে।বড় অর্ণব মির্জা,মেজো আদিল মির্জা,সেজো ইশাত মির্জা,ছোট ঈশান মির্জা এবং তাদের অর্ধেক প্রাণ একমাত্র বোন উষা মির্জা।৫ জনের নাম বাংলা ৫ স্বরবর্ণ অ,আ,ই,ঈ,উ দিয়ে রেখেছে তাদের মা।মুসলিম পরিবারের এই ৫ ভাই-বোনের মা- বাবা মারা গেছে সেই ছোট বেলায়।
৪ ভাই আজ অনেক কষ্টে নিজেদের পরিচয় গরেছে।দেশের অন্যতম বিজন্যাস ম্যান অর্ণব।বয়স ৩০ এর কোঠায়।ভাই-বোনের জন্য আজও বিয়ে করেনি।নিজের কষ্ট দূরে রেখে ভাই-বোনের খুশিটা সবার আগে।তার ২ বছরের ছোট আদিল।আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সক্রিয় সদস্য। তবে কেউ জানে না।ইশাত ও ঈশান জমজ। ইশাত বাস্কেটবল খেলতে বেশ পারদর্শী। সে এখন নিজেকে জাতীয় দলের জন্য তৈরি করছে।ঈশান রাজনীতিতে যুক্ত আছে।সারাক্ষণ নানা ভেজালে জরিয়ে থাকে।তবে দুজন জমজ হলেও চেহারা ততটা মিল নেই। দুজনের বয়স ২৫ বছর।৪ ভাই দেখতে, শুনতে সব দিক দিয়ে পারফেক্ট। কারো মনে আঘাত পাবে বা কোন কষ্ট পাবে এমন কাজ কখনি করে না।বড়দের সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ করতে পারে।৪ জন দেখতে হ্যান্ডসাম।স্টাইল,বডি,লুক সব দিকে এক কথায় পারফেক্ট।

ওদের একমাত্র বোন উষা।বয়স ২০। এবার অনার্সে ভর্তি হয়েছে। ভীষণ মিষ্টি, লাজুক ও মিশুক স্বভাবের মেয়ে।মনের মধ্যে হিংসা নামক বস্তুটা নেই। সবার সাথে সদালাপী। হাসি-খুশি এই মেয়েটাকে সবাই পছন্দ করে।গায়ের রং গোলাপি ফর্সা।চেহারার গঠন,উঁচা, লম্বায় মাশাল্লাহ দেখতে।ভাইদের আদরের রাজকন্যা। কোন ভাই বোনকে নাম ধরে ডাকে না।সবসময় বলে বোনু।

প্রত্যকের চুল উসকো-খুসকো, চেহারার মলিনতা,একরাশ বিষন্নতা নিয়ে বসে আছে।
সারা সময়ে এক ফোঁটা পানিও পান করেনি ৪ ভাই। তাদের বোনেকে রেখে কখনও কিছু মুখে দেয়নি। সে বোনকে রেখে আজ কি করে মুখে খাবার তুলবে।প্রত্যেক ভাই নিজে খাওয়ার আগে সেই খাবারটা বোনের মুখে তুলে দিবে।যদি বোন সেটা খায় তারপরে সেই খাবার মুখে তুলবে।হঠাৎ ওদের বডিগার্ডের মধ্যে একজন দৌড়ে ওদের কাছে এলো, যার নাম অরূপ।অরূপ এসে ওদের ৪ ভাইকে যা বললো তা শুনে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পরার সাথে সাথে রাগ উঠে গেল।যে এই কাজটা করেছে তাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে।কিছুতেই ছারবে না।

#চলবে

#বোনু
#Part_02
#Writer_NOVA

অর্ণব, আদিল,ইশাত,ঈশান চারজন থম মেরে বসে আছে।অরূপ যা বলেছে তাতে কারো মাথা ঠিক নেই। কিন্তু এখন এতো হাইপার হলে চলবে না।যেরকম ঠান্ডা মাথায় কেউ ওদের সাথে খেলছে ঠিক সেরকমভাবে গুটি চেলে হারাতে হবে।আপাতত নিজের বোনের দিকে খেয়াল দিতে হবে।পরে তাদের ব্যবস্থা করবে।ওদের শত্রুদের বুঝিয়ে দিতে হবে মির্জা বংশের ছেলেরা ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।

আপন বলতে ওদের কেউ নেই। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আত্মীয় -স্বজন তাদের একপ্রকার দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। আপন চাচাও সেদিন সব সম্পত্তি জোর করে দখল নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। খেয়ে না খেয়ে ৪ ভাই জীবন চালিয়েছে তারপরও বোনকে এক বেলা অনাহারে রাখেনি।বাবা ক্যান্সারে মারা গেল তার ৩ মাস পর মায়ের মৃত্যু। গৃহহারা ৫ টা মানুষ কি করে বড় হয়েছে সেটা একমাত্র ওরাই জানে।তাইতো সবার ১মে ২ টা এতিমখানা খুলেছে। যাতে করে অন্য কোনো বাচ্চাকে ওদের প্রবলেম ফেস না করতে হয়।বাবা-মা যখন মারা গেল তখন অর্ণবের বয়স ১৮ বছর।ভালো মন্দ সবকিছু বোঝার ক্ষমতা হয়েছে।কিন্তু ওর ১০ বছরের ছোট বোনটাতো কিছুই বোঝে না।গল্পটা অনেকটা সিনেমার মতে তাই না।কিন্তু মনে রাখবেন বাস্তবতা সিনেমাকেও হার মানায়।বাস্তবের মতো করে সিনেমা তৈরি করা যায়। কিন্তু সিনেমার মতো করে বাস্তব তৈরি করা যায় না।বাস্তবটা খুব অদ্ভুত।

৪ ভাইয়ের কাছে তাদের বোনের এক্সিডেন্টটা ধোয়াসা লাগছে।মনে হচ্ছে সবকিছু একটা দুঃস্বপ্ন। ঘুম ভেংগে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।তাদের বোন আবার হেসে খেলে বাড়ি মাতিয়ে রাখবে। প্রত্যকের মুখ, চোখ ফোলা ফোলা।চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে আছে। ছেলেদের নাকি কাঁদতে মানা।তাদের অনেক কঠিন মনের অধিকারী হতে হয়।অনেকেই এই কথাটা বলে।কিন্তু কথাটা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।কেন ছেলেরা কি মানুষ নয়?
ওদেরও তো ভালবাসা, অনূভুতি, আবেগ,সহ্য ক্ষমতা নামক বস্তু আছে।ওরাও তো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আমরা কি ভাবি তাদের? টাকা উপর্জনের মেশিন। না, এটা ভাবা উচিত নয়।তারা হয়তো আমাদের মেয়েদের মতো এত সহজে কাঁদতে পারে না।তবে তারাও কাঁদে যখন আর সহ্য করতে পারে না।পুরো পৃথিবীতে তার নিজেকে একা মনে হয় ঠিক তখন।

অর্ণব সামনে এগিয়ে এসে আদিলের মাথায় হাত রাখলো।

অর্ণবঃ তোরা কি কিছু মুখে দিবি না।সেই বিকেল থেকে এখানে বসে আছিস।এখন প্রায় মাঝরাত।কিছু
একটা খেয়ে নে।নয়তো শরীর খারাপ করবে।

আদিলঃ তুমি এটা কি বলো ভাইয়া? আমাদের বোনু না খেয়ে জীবন -মরণের সাথে যুদ্ধ করছে আর আমরা ওকে ছেরে খেয়ে নিবো।তা কিছু তেই নয়।বোনু সুস্থ থাকতেই একটা আপেলের টুকরো ওকে ছারা মুখে দেইনি আজ ও অসুস্থ হয়ে আছে সেখানে আমরা খাবার খাবো।খাবার যে গলা দিয়ে নামবে না ভাইয়া।

অর্ণবঃ তোরা সবাই আমার আদরের। তোদের কথা তো আমাকে ভাবতে হবে।এখন যদি বোনুর মতো তোরাও অসুস্থ হয়ে যাস তাহলে আমি বাঁচবো কি করে?

মুখে হাত দিয়ে অর্ণব নিরবে কাঁদতে লাগলো।

ঈশানঃ ইশাত,তোর কালকে কম্পিটিশন আছে।তুই কি সেখানে পার্টিসিপেট করবি?

ইশাতঃ আর ইউ মেড শান? তোর মাথা ঠিক আছে। আমার বোনু সবার আগে তারপর আমার ক্যারিয়ার।
(রেগে)
অর্ণবঃ আগামীকালের কম্পিটিশনটা তো অনেক জরুরি। কাল পার্টিসিপেট না করলে জাতীয় দলে চান্স পেতে সমস্যা হয়ে যাবে।

ইশাতঃ তোমরা কি পাগল হয়ে গেছো।আমার কলিজার টুকরো বোনুটার এই অবস্থা, কত কষ্ট পাচ্ছে আর তোমরা আমার খেলা নিয়ে পরলে।যদি আমার ক্যারিয়ার চলে যায় অন্যভাবে ক্যারিয়ার গড়ে নিবো।কিন্তু যদি আমার প্রাণর প্রিয় বোনুটার কিছু হয় তখন ওকে কোথায় পাবো।আমি ওকে ছেরে এক সেকেন্ডের জন্য ও বাইরে যাবো না।যদি ফিরে এসে দেখি ও…..

বাকি কথা বলার আগেই মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো। সবকিছু এক মুহূর্তে এলোমেলো হয়ে গেলো।
সব নিউজে হেডলাইনে এখন একটাই খবর, বিশিষ্ট শিল্পপতি অর্ণব মির্জা ও নর্থ ইস্ট ক্লাবের বাস্কেটবলের চ্যাম্পিয়ন ইশাত মির্জার একমাত্র বোন কার এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয়ে হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিডিয়ার মানুষ এসে হাসপাতালে ভিড় করেছে। কিন্তু চার ভাইয়ের এক ভাইও মিডিয়ার সামনে যায়নি।আসবে কি করে? তারাতো সেরকম পরিস্থিতিতে ছিলো না। এদিকে মিডিয়াতে তিল কে তাল বানিয়ে নানা কথা প্রচার করছে। তাতে মি. মির্জাদের কোন সমস্যা নেই।

উষা যদি ওর ভাইদের এই অবস্থা দেখতো তাহলে কি রকম রিয়েক্ট করতো তা আমার জানা নেই।হয়তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেত।নয়তোবা নাক টেনে দিয়ে প্রত্যককে কান ধরে উঠবস করাতো।এটা হতো সব ভাইয়ের পাগলামীর সাজা।আর ও খিলখিল করে হাসতো।আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি উষা বানান ভুল করেছি।উষা বানান করতে ঊ হয়।কিন্তু অর্ণবের মা ওদের ৫ জনের নাম বাংলা স্বরবর্ণের সাথে মিল রাখার জন্য ঊ এর বদলে উ ব্যবহার করেছে।

৪ জনের পাশাপাশি আরেকজন পাগল হয়ে গেছে উষার জন্য।সে পারলে এখনি চলে আসে আমেরিকা থেকে ।কিন্তু রাতের ফ্লাইটের টিকিট পাইনি বলে আসতে পারেনি।তাই মিনিটে মিনিটে চার ভাইয়ের মোবাইলে কল দিয়ে পাগল করে ফেলছে।
আবার কল করলো অর্ণবের কাছে।

—ভাইয়া,উষার শরীরের অবস্থা কেমন? ও কি ভালো হবে না।আমার সাথে কথা বলবে না।আমি ওর সব কথা শুনবো। প্লিজ ওকে আমাদের জন্য ফিরে আসতে বলুন।ওকে ছারা বাঁচতে পারবো না।
(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে অধীর উৎকন্ঠার সাথে)

অর্ণবঃ শান্ত হও। আল্লাহ চাইলে আমাদের বোনুর কিছু হবে না।তুমি নামাজ পরে বোনুর জন্য দোয়া করো।

—-আমি কাল সকালের ফ্লাইটে দেশে আসছি।আমি ওর কিছু হতে দিবো না। আমি নফল নামাজ পড়ে উষাকে ফেরত চাইবো।ওর যদি কিছু হয় আমি বাঁচবো না ভাইয়া।আল্লাহ এমন কেন করলো?
(কাঁদতে কাঁদতে)

অর্ণবঃ ধৈর্য ধরো,আল্লাহ হয়তো আমাদের পরীক্ষা করছে।তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে নিশ্চয়ই আমাদের বোনু ভালো হয়ে যাবে।

—-সত্যি উষা ভালো হয়ে যাবে।ভাইয়ারা কি করছে?
অর্ণবঃ হ্যাঁ,সত্যি। আদি,ইশাত,ঈশান নফল নামাজ পরছে।তুমিও ওযু করে নামাজ পড়ে ওর সুস্থতা কামনা করো।আমিও নামাজ পরবো।তাই মোবাইল বন্ধ থাকবে।তুমি আর কল করো না।

—আচ্ছা ভাইয়া।রাখছি,আল্লাহ হাফেজ। তবে উষার শরীরের ২৪ ঘন্টার আপডেট আমায় দিবেন।আমি সকালে আসছি।

মোবাইল বন্ধ করে অর্ণবও নামাজে দাঁড়িয়ে গেল।আই.সি.ইউ এর রুমের পাশের রুমে তারা নামাজ পড়ছে।রুমের পাশে বডিগার্ডের কড়া নজরদারী।তখন অরূপের কথা শুনে নজরদারী আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।একপাশে উষা বেডে শুয়ে আছে।আরেকপাশে নিঃশব্দে নামাজ আদায় করছে ৪ ভাই। চোখের পানিতে পাঞ্জাবী ভিজিয়ে ফেলছে।পুরো রুমে পিনপিনে নীরবতা।বোনের জীবনের জন্য আজ তার পরওয়ারদিগারের কাছে আর্জি জানাবে।যাতে তাদের বোনুটা ভালো হয়ে যায়।নামাজের মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে ঈশান।ওদের সাথে এমন হলেও এতো কষ্ট পেতো না।কিন্তু বোনের জন্য জান চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।

সত্যি, থাকার মতো থাকলে একটা ভাই যথেষ্ট। চারজনের প্রয়োজন হয় না। সেখানে উষা চারটা ভাইয়ের প্রাণের সাথে জরিয়ে আছে। অনেক রেসপেক্ট ও স্যালুট পৃথিবীর সকল ভাইদেরকে।যারা তার বোনকে রক্ষার জন্য ঢালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আর এতো পাগলামি করে।

মোনাজাতে কাঁদতে কাঁদতে চার ভাই চোখের অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। জানি না আল্লাহ তাদের কান্না শুনতে পাচ্ছে কি না।সবার মনে একটা বাসনা তাদের বোনু ঠিক হয়ে যায়।হঠাৎ করে আদিল মোনাজাত শেষ করে বোনের রুমের দিকে তাকালো। তাকিয়ে চোখ কপালে তুলে ফেললো।যা দেখলো তাতে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো।বাকি ৩ জন মাত্র সালাম ফিরিয়ে মোনাজাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।আদিলের চিৎকারে বোনের দিকে তাকালো।

আদিলঃ ভা—ই—-য়া

সবাই তাকিয়ে যা দেখলো তাতে সবার হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেল।আল্লাহ কি ওদের কথা শুনলো না।শেষ পর্যন্ত কি বাবা-মায়ের মতো ওদের বোনুও — না আর ভাবতে পারছে না।শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে।ওদের মনে হচ্ছে সব শক্তি কেউ নিয়ে নিয়েছে। মাথাটা ঘুরছে এমনভাবে যে পরে যাবে।

ইশাতঃ ভাইয়া, আমাদের বোনু কি রকম যেনো করছে? ডক্টর ডাকো।ও এরকম করে বড় বড় করে নিঃশ্বাস ছারছে কেন?ওর কি হয়েছে? শান,জলদী ডক্টরকে নিয়ে আয়।বো—-নু……….

#চলবে