বোনু শেষ পর্ব

0
4309

#বোনু
#Last_Part
#Writer_NOVA

১ মাস পর…..

মির্জা বাড়িটা অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। হবেই না কেন?মির্জাদের ছয় ভাই-বোনের বিয়ে বলে কথা।পুরো ডেকোরেশন সহ সকল কিছুর ব্যবস্থা মির্জারা করেছে।জিবরান জোর করে তিন ভাগের এক ভাগের টাকা দিয়েছে।মির্জারা তো নিবেই না।কিন্তু জিবরানের জোড়াজুড়িতে রাজী হয়েছে। গত কাল সন্ধ্যায় ঘটা করে হলুদের ফাংশন হয়েছে। আজ বিয়ে। বিয়ের সব কনে, বর এক সাথে আছে। ছেলেদের আলাদা ব্যবস্থা, মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থা।

উষা নিজের রুমে দাঁড়িয়ে গলায়, কানে জুয়েলারি লাগিয়ে দেখছিলো কেমন লাগছে?হঠাৎ ধপ করে দরজা লাগানোর শব্দে চমকে সেদিকে তাকালো।জিবরান চোরের মতো ওর কাছে এলো।

উষাঃ আ আ আপ ন নি।
জিবরানঃ তাহলে কে হবে?(কপাল কুঁচকে)
উষাঃ আপনি এখানে কেন এসেছেন?বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে কাউকে দেখতে পারবে না। এমনটা কিন্তু ভাইয়া শর্ত দিয়ে দিয়েছিলো।
জিবরান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বিছানায় দুই হাত মেলে আরাম করে শুয়ে পরলো।ওর কাজে উষা আরেক দফা অবাক হলো।উষার কথাটা যেনো জিবরানের কানে ঢুকে নি।
উষাঃ হ্যালো মি.জেব্রা। আমি কিছু বলছি।
কোমড়ে হাত দিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে কথাটা বললো।জিবরান ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
উষাঃ আমি কিছু বলছি মি.জেব্রা। (রেগে)
জিবরানঃ জ্বী বলুন মিসেস জেব্রা।
উষাঃ আমি মোটেও জেব্রা নয়।
জিবরানঃ তুমি আমার মিসেস।তাই আমি জেব্রা হলে তুমিও জেব্রা হবে।
উষাঃ আপনি এখানে চোরের মতো কেন এসেছেন সেটা বলুন?
জিবরানঃ আমার বউটাকে কবের থেকে দেখিনা তাই দেখতে চলে আসলাম।
উষাঃ এত বড় মিথ্যা কথা। আল্লাহ সহ্য করবে না হুহু।গতকালও তো আমাদের একসাথে হলুদের ফাংশনে ছিলাম।
জিবরানঃ গত কাল ছিলে।আজকে নয়।
উষাঃ প্লিজ আপনি এখান থেকে চলে যান।নয়তো ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।
জিবরানঃ কোন কিছু খারাপ হবে না।আমার বউয়ের কাছে আমি এসেছি কার কি?আমার বুঝি আমার বউটাকে দেখতে ইচ্ছে করে না।
বাচ্চাদের মতো করে ঠোঁট উল্টে কথাটা বললো জিবরান।তা দেখে উষা ফিক করে হেসে উঠলো। জিবরানের দুই গাল টেনে বললো।
উষাঃ ওলে আমার জামাই টালে।কত ভালবাসে আমায়?অনেক হয়েছে ভাগেন এখান থেকে। নয়তো আমি জোরে চোর বলে চেঁচিয়ে আপনাকে গণধোলাই খাওয়াবো।
জিবরানঃ যেতে পারি তবে এক শর্তে।
উষাঃ আবার কিসের শর্ত?🙄
জিবরানঃ আমার গালে একটা কিসি দিলে আমি চলে যাবো।একটুও বিরক্ত করবো না তোমাকে।নয়তো আমি আজ এখান থেকে উঠছি না।
উষাঃ এই মি.জেব্রা। আপনি কি দিন দুপুরে ড্রিংক করে এসেছেন।এমন উল্টো পাল্টা কি বকছেন?জলদী উঠুন বলছি।গিয়ে তৈরি হোন।আপনি যদি এখন এখান থেকে না ভাগেন তাহলে আমি বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবো।(ভাব নিয়ে)
জিবরানঃ এই না।খবরদার এমন করলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নিবো।
উষাঃ হু হু এসেছে আমার মাফিয়া কিং।আমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করবেন।আপনার এতো সাহস আছে নাকি।সামান্য একটা মাছি মারতে পারে না। সে আমায় তুলে নিবে।(ভেংচি কেটে)
জিবরান ওর মুখের সামনে এসে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো।
জিবরানঃ দেখতে চাও তুমি। (সিরিয়াস হয়ে)
উষা কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।জিবরানকে ভয় পাওয়ানোর জন্য কথাটা বলেছিলো। কিন্তু নিজেই ভয় পাচ্ছে। স্বভাবত জিবরান খুব বেশি রাগী ছেলে নয়।শান্ত, নম্র,ভদ্র ছেলে।এরকম ছেলেগুলো রেগে গেলে সর্বনাশ।যা বলবে তাই করবে।যদি জিবরান রেগে গিয়ে সত্যি ওকে তুলে নিয়ে যায়।তখন বেশি একটা ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না।তবে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না।
জিবরানঃ কি মিসেস খান? চুপ হয়ে গেলে যে।
উষাঃ আমি তো আজকে আপনাকেই বিয়ে করবো বলুন।তাহলে তুলে নেওয়ার কি দরকার?আপনি এখন রুম থেকে যান তো।এখনি পার্লারের মেয়েরা সাজাতে চলে আসবে।উষা জিবরানের পিঠে দুই হাত দিয়ে ঠেলে ঠেলে দরজার বাহিরে নিয়ে এলো।জিবরান উষার এক হাত শক্ত করে ধরলো।

উষাঃ আপনি কি শুরু করলেন?
জিবরানঃ হুম।
উষাঃ আপনি কি আমাকে ছারবেন?
জিবরানঃ না।
উষা ঝাড়া মেরে নিজেকে জিবরানের থেকে ছারিয়ে নিলো।জিবরান এখনো ওর দিকে কেমন কেমন করে জানি তাকিয়ে আছে।
জিবরানঃ মিসেস খান বিয়ের পর কিন্তু আমি ছারবো না।(এক চোখ মেরে)
উষাঃ 😳😳
জিবরানঃ তোমায় ছারার জন্য তো ধরি নি।(উষার কানের কাছে গিয়ে) খুব বেশি, ভালবাসি।

জিবরান লো ভোয়েজে ঘোর লাগানো কন্ঠে উষার শরীরে হিম শীতল বাতাস বয়ে গেল।লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটির নিচে ঢুকে যেতে।গাল ব্লাসিং হচ্ছে।জিবরান টুপ করে এসে ঢুপ করে লাল গালে একটা কিস করে বসলো।উষা যেনো আবার শক।দুই হাত পকেটে গুঁজে উষার দিকে ঘুরে এক চোখ মেরে চলে গেল।উষা এখনো ঘোরের মাঝে আছে। সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। জিবরান হঠাৎ এমন কেন করলো তা ওর মাথার ওপর দিয়ে গেল।

🍁🍁🍁

অর্ণব, আদিল নিজেদের বিয়ে হওয়া সত্বেও সকল কাজের তদারকি করছে। সকল দিকে নিখুঁত নজর।কোথাও যাতে কোন কিছুর ঘাটতি না থাকে।ওদের ২ এতিমখানার বাচ্চাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করেছে।বাচ্চাগুলো বাগানে খেলছে।

আদিলঃ আমাদের বোনুটা আজ আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
অর্ণবঃ এখন আমাদের কিছু করার নেই। চাইলেও সারাজীবন ওকে আমরা ধরে রাখতে পারবো না।আমাদের ছোট্ট বোনুটা আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। আমাদেরকে ছেড়ে নিজের সংসারে যাবে।

দুই ভাইয়ের চোখ টলটল করছে।আজ যদি ওদের বাবা-মা বেঁচে থাকতো তাহলে খুব খুশি হতো।নিকের অজান্তেই কয়েক ফোঁটা পানি চোখ থেকে গরিয়ে পরলো।বুকের বা পাশটা চিন চিন করছে।আদরের বোনটাকেও আজকের পর থেকে সবসময় দেখতে পারবে না।বাড়িটা বোধহয় শূন্য হয়ে যাবে।

অর্ণবঃ যেই বোনটাকে নিজের চোখের আড়াল করতে পারতাম না।তাকে সারাজীবনের জন্য দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।যাকে নজর থেকে সরলে মনে হতো জীবনটা বোধহয় চলে যাবে সেই বোনটা আজ পরের বাড়ি যাবে।ওকে না খাইয়ে আমরা কখনও মুখে খাবার তুলতাম না।আজকের পর থেকে ওকে ছারাই খেতে হবে।এসব ভেবে তো আমার বুক ফেটে চিৎকার আসছে আদি।কি করে থাকবো বোনুকে ছাড়া?

আদিলঃ এই কথাটা ভাবলেই তো আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে।আমি কিভাবে মেনে নিবো আজকের পর থেকে কেউ আমাদের সাথে অভিমান করবে না। বলবে না এতো দেরী করে কেন এসেছো?তোমার সাথে কোন কথা নেই। গাল ফুলিয়ে ঠোঁট উল্টে কেউ বলবে না তোমাদের সাথে কোন কথা নেই।
অরূপঃ আমরা কি করে থাকবো বোনুকে ছাড়া?

অরূপ পিছন থেকে কথাটা বলে উঠলো।সামনের দিকে ঘুরলো অর্ণব ও আদিল।অরূপের চোখেও পানি। ঠায় দাঁড়িয়ে আছি অরূপ।
আদিলঃ কখন এসেছিস এখানে?
অর্ণবঃ ডেকেরেশনের দিকটা ঠিক আছে তো।
অরূপঃ আমি থাকতে আপনাকে এতো চিন্তা করতে হবে না।আপনি শুধু ভাবেন বড় ভাবীকে কখন ঘরে তুলবেন।
অর্ণবঃ তুই ভিষণ ফাজিল হয়ে গেছিস।আমি তোর বড় ভাই। ভূলে যাস না।
অরূপঃ মেজু ভাইয়ার সাথে কিন্তু অথৈ ভাবীকে বেশ মানাবে।দুজনের জুটিটা অসাম।
আদিল অরূপের কান টেনে বললো
আদিলঃ পাকামো হচ্ছে এখানে।আমরা যে তোর বড় ভাই সেটা কি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছিস।
অরূপঃ ভাইয়া লাগছে ছারো।আমি আবার কি করলাম। আমি তো যাস্ট এমনি বললাম।
(বাচ্চা ফেস করে)
অর্ণব ও আদিল দুজন অরূপের কান্ড দেখে হেসে উঠলো। অরূপ ওদের মন ভালো করার জন্যই এমন করছিলো।অবশেষে সফল হতে পেরে মুখে বিশ্ব জয় করা হাসি দিলো।এই মানুষগুলোর মুখের হাসির জন্য অরূপ সব করতে পারে।তার উদাহরণতো নতুন করে কিছু দেয়ার নেই।

অরূপঃ আপনারা মন খারাপ করে থাকলে আমার একটুও ভালো লাগে না।আপনারাই তো আমার সব।আমি সত্যি অনেক ভাগ্যবান।তাই আপনাদের মতো ভাই পেয়েছি।
অর্ণব ও আদিল মুচকি হাসলো।
অরূপঃ জিনিয়া ভাবী কিন্তু —
অর্ণবঃ তুই এবার কিছু বললে আমি কিন্তু ভুলে যাবো তুই আমার ছোট ভাই। কি থেকে কি বলবো রাহীকে নিয়ে সেটা আমি নিজেও জানি না।
(শয়তানি হাসি দিয়ে)
অরূপঃ এই রে সেরেছে। আমি এখন পালাই।নয়তো কি থেকে কি বলে কে জানে?(মনে মনে)
আদিলঃ কি রে কি ভাবছিস?
অরূপঃ আমার ঐ দিকে একটু কাজ আছে।আমি বরং সেদিকটা সামলাই।
অর্ণবঃ এখন পালাচ্ছিস কোথায়?
অরূপঃ আমি আসছি ভাইয়া।আবার বর সাজতে হবে তো।

অরূপ একপ্রকার পালিয়ে সেখান থেকে এলো।বেচারাও তো লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। অর্ণব, আদিল শব্দ করেই হেসে উঠলো। অরূপ মাথা চুলকাতে চুলকাতে রুমের দিকে যেতে লাগলো।

🍁🍁🍁

ইশাত ও ঈশান দুজনে ঝগড়া শুরু করেছে। একটু পর ফাইটিং ও শুরু হতে পারে।ফাইটিং টা কেন করছে জানেন?বিয়ের শেরওয়ানি নিয়ে।বলেন তো এসব কি সহ্য করা যায়।কেউ বলে এর জন্য ফাইটিং করে?ঈশান বলছে ইশাতের শেরওয়ানি বেশি সুন্দর। ইশাত বলছে ঈশানেরটা সুন্দর। তাহলে দুজন দুজনেরটা অদলবদল করে নিলেই তো হয়।তা করবে না।

ঈশানঃ তোর শেরওয়ানিটা সুন্দর।
ইশাতঃ না তোরটা।
ঈশানঃ তাহলে আমরটা নিয়ে তোরটা দিয়ে দে।
ইশাতঃ আমরটা দিবো না।তোরটা আমাকে দিয়ে দে।
ঈশানঃ যা ভাগ।এই কালারটা আমার বউয়ের লেহেঙ্গার সাথে মিল আছে। আমি এটা কেন দিবো?
ইশাতঃ তাহলে নিজেরটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকিস না কেন?
ঈশানঃ আমার দুইটাই পছন্দ হয়েছে।
ইশাতঃ তুই কি দুইটা পরে বিয়ে করতে যাবি?
ঈশানঃ গেলে যাবো তোর কি?

ওদের কথা শুনে দরজায় পেট ধরে হাসতে হাসতে বসে পরলো উষা।দুই ভাইকে দেখতে এসেছিলো।কিন্তু ওদের ঝগড়া দেখে ওর হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। এটা কি কোন ঝগড়ার রিজন হলো?ওর দুই ভাই তো কখনও এমন করে না।তাহলে আজ এমন করছে কেন?দরজার দিক থেকে খিলখিল করে হাসির আওয়াজ পেয়ে দুই ভাই সেদিকে তাকালো।বোনকে হাসতে দেখে দুই ভাই খুশি হলো।

ভাবছেন কেন?অর্ণব ও আদিলের কথা পেছন থেকে সব শুনে নিয়েছিলো উষা।কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে এসেছে। ইশাত ও ঈশান বোনেকে কান্না করতে দেখে ফেলেছিলো।তাই ওর মন ভালো করতে এরকম ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া করছিলো।উষা এখনো হাসছে।দুই ভাই মুগ্ধ হয়ে বোনকে দেখছে।

ঈশানঃ কি রে কালুর মা?এখানে কি করছিস?
উষাঃ ঐ তুই আবার আমাকে কালুর মা বললি।এখনি কিন্তু নুহাকে তোর নামে বিষিয়ে দিয়ে আসবো।আমার কথা নুহা অবশ্যই বিশ্বাস করবে।তোর আজকে অবস্থা হালুয়া টাইট হয়ে যাবে।
ঈশানঃ এই রে তুই আবার আমার সাথে লাগতে এসেছিস।
উষাঃ আমি নই তুই লাগতে এসেছিস।
ইশাতঃ শান, আমরা বোধহয় জেনে শুনে জিবরানের মতো নিষ্পাপ ছেলেকে ওর মতো দজ্জালের কাছে তুলে দিচ্ছি। বেচারার বেঁচে থাকার আশা হারিয়ে ফেলবে।
উষাঃ তুমিও আমার সাথে লাগছো।হুম লাগো লাগো।বেশি করে লাগো।আমি না থাকলে তো তোমারা খুশি হবে।আমিও আজ চলে যাচ্ছি। দেখবো কার সাথে লাগো?আর আসবো না তোমাদের বাড়ি।আমি চলে গেলেই তো খুশি হবে।

উষা ঠোঁটে কামড় দিয়ে কান্না আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো।ইশাত ও ঈশানের বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো।অবশ্য কালকে থেকে পাঁচ ভাইয়ের বুকে পাথর আটকে আছে।বোন ওদের ছেড়ে চলে যাবে। এটা মনে হলেই বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠে।দুই ভাই বোনকে জরিয়ে ধরলো। উষা এবার খুব জোরে কান্না করে উঠলো। সাথে ইশাত,ঈশানও কান্না করছে।

🍁🍁🍁

চেয়ারে বসে আছে মির্জাদের পাঁচ ভাইয়ের বউ।মাঝখানে উষা বসে আছে। বিশাল বড় আয়োজন। জিনিয়ার গায়ে খয়েরী রঙের ভারী স্টনের লেহেঙ্গা। অথৈয়ের গোল্ডেন কালার,তারিনেরটা হালকা ফিরজা কালার,নুহার লেহেঙ্গা জাম কালারের,রাহীর লেহেঙ্গা মিষ্টি কালার।সবার লেহেঙ্গায় এক ডিজাইন শুধু কালারটা ভিন্ন। সাথে ম্যাচিং করা জুয়েলারি।পাঁচ জনের থেকে আলাদা উষার লেহেঙ্গাটা ভিন্ন।গাঢ় লাল কালারের মধ্যে গোল্ডেন পাথরের কম্বিনেশন। সাথে গোল্ডেন কালারের ম্যাচিং করা ভারী জুয়েলারী।এক কথায় পরী লাগছে।সবার লেহেঙ্গার সাথে কালার মিলেয়ে ছেলেরা শেরওয়ানি পরেছে।

তারিনের মনটা আজ ভীষণ খুশি। তার ইশাত আজ তার হবে।তার যেনো আর তর সইছে না। কখন ওদের বিয়ে হবে?

তারিনঃ উষানি বেবি কখন বিয়ে হবে আমাদের? এভাবে সং সেজে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।মুখে একটা বিশাল বড় হাসি।
উষাঃ চুপ কর।বেশি কথা বলিস না।
তারিনঃ তুই যাবি মির্জা বাড়ি থেকে। আর আমি ঢুকবে এই বাড়িতে।
উষাঃ হয়েছে এতো খুশি হতে হবে না।
তারিনঃ আমার তো এখন পাগলু ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে। আমার ইশাত।আই লাব উ ইশাত বেপি।
উষাঃ ব্যাঙের মতো ফালাস না ছেমরি।
তারিনঃ আমি যে কতটা খুশি তোকে বুঝাতে পারবো না।আজ আমার বিয়ে,লা লা লা আজ আমার বিয়ে।
উষাঃ খুশিতে তোর মাথা গেছে তারু।

ছয়জন এসে তাদের বউকে দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো।ছয়টি ভিন্ন কালারের শেরওয়ানি, সাথে ম্যাচ করে পাগরী,নাগরা জুতো।ছয়জন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ঈশানঃ ইশাত নিজেদের বউ চেক করে নিস।কে জানে অন্য মেয়েকে মেকআপ করে পরী সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছে নাকি?
ইশাতঃ প্রত্যেকটাকে মেকআপ দিয়ে ভূতনী সাজিয়ে রেখেছে।কোনটা যে বোন,কোনটা যে বউ আর কোনটা যে ভাবী কিছুই বুঝছি না।
জিবরানঃ কম করে হলেও দশ পল্লা তো মেরেছেই।মেকআপ তুমি মহান,পেত্নীকে দিয়েছো পরীর হওয়ার সমাধান।আমার বউ কোনটারে?আমি তো চিনতে পারছি না।
ঈশানঃ সবার মাঝখানে যে মেয়েটা রাণীর সাজে বসে আছে সেটাই তোর বউ।
ইশাতঃ জিবরান আমরা তোকে যেমন রাণী দিয়েছি তেমনি তুই আমাদের বোনকে রাণী করে রাখিস।
আদিলঃ জিবরান আমরা আমাদের বোনুকে নয় আমাদের কলিজা ছিঁড়ে তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি। তুমি আমার বোনটাকে দেখে রেখো।
অরূপঃ আমাদের বোনু কতটা প্রিয় আমাদের কাছে তা নিশ্চয়ই তোমাকে আর জানানোর প্রয়োজন নেই। তুমি শুধু আমাদের কলিজার টুকরো টাকে সুখে রেখো।আর কিছু চাইনা আমাদের।
অর্ণবঃ আমি জানি জিবরান তুমি আমাদের বোনু কে অনেক সুখে রাখবে।কারণ তুমি ওকে ভালবাসো।তারপরও যদি কোন কারণে তুমি আমার বোনুর সাথে কোন অন্যায় করো তাহলে আমাদের পাঁচ ভাইয়ের থেকে খারাপ যে কেউ হবে না।কথাটা মনে রেখো।
জিবরানঃ আপনারা আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন।আপনাদের বোনকে আমি আমার রাজ্যের রাণী করে রাখবো।কারণ আমি যে ওকে ভীষণ ভালবাসি। উষাকে ছারা আমি অসম্পূর্ণ। আমি কখনও ওকে কষ্ট পেতে দিবো না।Because she is my only one love Queen. I love him so much.

সব ভাই তাদের আদরের বোনকে জরিয়ে ধরলো। তাদের মনে হচ্ছে তারা নিজেদের বোনুর জন্য পারফেক্ট মানুষ কে চয়েজ করেছে।যে তাদের বোনুকে অনেক ভালবেসে ভালো রাখবে।

🍁🍁🍁

এক এক করে কাজী সাহেব ছয়টা বিয়ে সম্পন্ন করলেন।আরান এসে সব ভাইকে জরিয়ে কংগ্রেস জানালো।আরানের সাথে অণু এসেছে।কিছুদিন পরে আরানের সাথে অনুর বিয়ে।অনুকে চিনেছেন।যেই মেয়েটাকে আরান দেখতেই পারতো না।মেকআপ সুন্দরী।এখন প্রশ্ন আরান কেন ওকে মেনে নিলো।অনু আরানকে অনেক ভালবাসতো।যেখানে সামান্য খাদ ছিলো না।তাই আরান খুশি মনে ওকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যায়।

মাসফি এখন বউ নিয়ে নিউ ওয়ার্ক থাকে।বাবা-মায়ের জোরাজোরিতে এক প্রকার নিজের অমতেই মাসফির বিয়ে হয়।ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা সম্পন্ন হলেও মির্জারা ছিলো সে বিয়েতে।মাসফির বিয়ের পর বুঝলো ওর স্ত্রী খুব সহজ সরল।যেটা মাসফির ভীষণ ভালো লেগেছিল। কিছু দিনের মধ্যে ওদের সম্পর্কটাও ঠিক হয়ে যায়।মির্জাদের বিয়েতে থাকতে পারে নি বলে মনটা খারাপ মাসফির।তাই আরান ভিডিও কলে সব কিছু দেখাচ্ছে মাসফিকে।

বিদায় বেলায় উষা চিৎকার করে কাঁদছে। সে কিছুতেই যাবে না।পাঁচ ভাইয়ের চোখে পানি।যে তারিন এতখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলো।সেও কাঁদছে। শত হোক সারাজীবনের জন্য বাবা-মা কে ছেড়ে সবকিছু ছেরে চলে আসতে হবে।

উষাঃ ভাইয়ুরা আমি তোমাদের ছেরে কোথাও যাবো না।এই জেব্রাকে চলে যেতে বলো।আমি যে তোমাদের ছারা থাকতে পারি না সেটা কি ও জানে না।আমি তোমাদের কাছেই থাকবো।তোমাদের হাতে খাবার না খেলে যে আমার গলা দিয়ে খাবার নামে না।ও বড় ভাইয়ু আমায় তারিয়ে দিচ্ছো কেন তোমরা?আমার যে তোমাদের ছারা ভালো লাগে না।(কাঁদতে কাঁদতে)
অর্ণবঃ এমন করে না বোনু।সব মেয়ে কে বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি যেতে হয়।

অর্ণবের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কথাগুলো জরিয়ে যাচ্ছে। উষা অর্ণবকে ছেরে আদিলকে জরিয়ে ধরলো।
উষাঃ আমি কোথাও যাবো না মেজু ভাইয়ু। ওদের চলে যেতে বলো।আমি তোমাদের কাছেই থাকবো।
আদিলঃ এমন করে না বোনু।আমরা তোকে কাল গিয়ে আবার নিয়ে আসবো।তোর পছন্দের সব খাবার রান্না করে রাখবো।তুই আজকে যা কাল সকালে গিয়েই তোকে নিয়ে আসবো।

এক এক করে ইশাত,অরূপ ও ঈশানকে জরিয়ে ধরে কান্না করলো।ভাইদের চোখের পানিও বাঁধ মানছে না।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।

উষাঃ সেজু ভাইয়ু তোদের আর কেউ জ্বালাবে না রে।কেউ তোদের বকা খাওয়াবে না।অনেক মিস করবো তোদের।আমায় ভূলে যাস না প্লিজ। প্রতি সপ্তাহে গিয়ে দেখা করে আসিস।খুব মিস করবো তোদের সাথে করা ঝগড়া খুনসুটি গুলো।আমার জন্য বড় ভাইয়ুদের হাতে কত বকা খেয়েছিস।তারপরও তোরা আমার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করিস নি।
ইশাতঃ চুপ কর। একদম চুপ কর। আরেকটা কথা বলবি না।একদম কান্না করবি না। তুই জানিস না তোর চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারি না।
ঈশানঃ কান্না করিস না।কাঁদলে কিন্তু তোর মুখের মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে।আর তোকে একদম শেওড়া গাছের পেত্নীর মতো লাগবে।এমনিতেই মুখে যা লাগিয়েছিস।মনে হয় না উঠবে।তোর জামাই তো মেকআপ ছারা তোকে দেখলে অজ্ঞান হয়ে যাবে।

এত কান্নার মাঝেও উষা ফিক করে হেসে উঠলো।
ঈশানঃ এই তো আমার লক্ষ্মী বোনুটা। তুই সবসময় হাসি-খুশি থাকবি।তোর যা লাগবে একবার শুধু ফোন করে বলবি পুরো দোকান তোর পায়ের কাছে তুলে আনবো।যখন মন চাইবে চলে আসবি।কারণ এই বাড়িটা তোর।
উষাঃ ছোট ভাইয়ু তোকে আমি কত মেরেছি।তারপরও তুই কখনও আমার গায়ে হাত তুলিসনি।আমার গায়ে তোরা ফুলের টোকা লাগতে দিস নি।তোদের ছারা কি করে থাকবো বল।

ঈশান চুপ করে আছে।ওরা নিজেরাও তো ওকে ছারা কি করে থাকবে তা ভাবছে।ঈশানের থেকে নিজেকে ছারিয়ে উষা অরূপের গলা জড়িয়ে কান্না করতে লাগলো।
উষাঃ ভাইয়ু তোমাকে আর আমার কারণে কোন ছেলেকে মারতে হবে না। আমি তোমাদের সকল কিছু থেকে ছুটি দিয়ে নতুন জায়গায় যাচ্ছি। কোন ভূল করে থাকলে মাফ করে দিও।
অরূপঃ বোনু তুই প্লিজ আর কাঁদিস না। তোকে এভাবে আমি নিতে পারছি না। তুই যদি এভাবে কাঁদিস তাহলে আমাদের কি হবে বল তো?

তারপরও উষা কেঁদেই যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে ফেলছে।অন্য দিকে তারিন,রাহী,অথৈ,জিনিয়া সবাই কাঁদছে। কিন্তু উষার থেকে বেশি নয়।উষা ইতিমধ্যে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে গলা ভেঙে ফেলছে।পাঁচ ভাইয়ের চোখেও পানি।ওদের কান্নায় পরিবেশটা ভারী হয়ে গেছে। ইশাত উষাকে কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।এক এক করে সবাই বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।

🍁🍁🍁

ইন দ্যা বাসরঘর…….

আপনারা বাসরঘরে কি হয়েছে সেটাও পরবেন?🙄ওরা বাসর ঘরে কি করছে আমি কি করে বলবো? আমি তো ছিলাম না সেখানে।অন্যর বাসর ঘরে উঁকি ঝুঁকি মারা আমার কোন অভ্যাস নেই 🥴।তারপরও একটু জিবরানের রুমের দিকে গিয়েছিলাম। কিন্তু ও কি করছে জানেন?🥺আমার মুখের ওপর দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিছে।বলেন তো এই অপমান কি সহ্য করা যায়😭।ভেবেছিলাম ওদের বাসর ঘরে ঘাপটি মেরে বসে থাকবো।আমি মানুষ একজন। তাই একজনের বাসর ঘরে যেতে পারবো।বাকি ৫ জন কি করছে আমি কি করে বলবো?সেজন্য আমিও কারো বাসর ঘর হামলা করতে যাইনি।আমারও তো মান-সম্মান আছে।আমি ঐ খানে গেলে তো ওদের বাসর ভেস্তে দিবো।দরকার নেই কিছু জানার😜।

(বিঃদ্রঃ আমি মজা করে বলেছি।প্লিজ কেউ সিরিয়াসলি নিয়েন না।)

পরেরদিন…….

বৌভাতের ফাংশনও সবার একসাথে হবে।সবাই চলে এসেছে।শুধু উষা ও জিবরান ছারা।পাঁচ ভাইয়ের টেনশনে জান যাওয়ার উপক্রম। কিছু সময় পর ওরা চলে এলো।উষা গাড়ি থেকে নামতেই পাঁচ ভাই বোনকে জরিয়ে ধরলো। এতখনে ওদের জীবন ফিরে এসেছে।বোনকে ধরে পাঁচ ভাই ও বোন কান্না করে দিলো।তবে সেটা দুঃখের নয়, আনন্দের। জিনিয়া এসে জিবরানকে জরিয়ে ধরলো।বাকি সবার মুখে প্রশান্তির হাসি।

ভালো থাকুক পৃথিবীর সব ভাই-বোন। সারা জীবন যাতে এভাবেই থাকে ওদের বন্ডিংটা।যুগ যুগ ধরে এভাবেই বেঁচে থাকুক ভাই-বোনের ভালবাসা।পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পর্ক হলো ভাই-বোনের সম্পর্ক।যেটা আল্লাহ নিজে তৈরি করে দেন।

__________________(সমাপ্ত)___________________

ভূল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিবেন।এখন রি চেক দিতে গেলে আরো বেশি খারাপ লাগবে।তাই রিচেক দেই নি।ভালো থাকবেন। হ্যাপি রিডিং❤️।
❣️আল্লাহ হাফেজ।❣️

#