#বোনু
#সিজন_০২
#Part_18
#Writer_NOVA
নিবরাজ, মিহুকে নিয়ে যাওয়ার পর সবাই অবাক চোখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে সবাই এক মুহুর্তে কথা বলতে ভুলে গেছে। কেউ টু শব্দও করেনি।
সুমনঃ কি ব্যাপার? তোমরা সবাই হা করে কি দেখছো?রুমের থেকে বের হচ্ছো না কেন?
সায়েমঃ কিন্তু স্যার মিহু—
সুমনঃ কোন কথা শুনবো না তোমাদের। নাউ লিভ মি।যদি বের না হও তাহলে আমি অন্য ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।(রেগে)
টিম রেইনবোর সবাই বের হয়ে গেলো।প্রিন্সিপাল সকল স্যার ও ম্যাডামদের উদ্দেশ্যে বললো।
সুমনঃ স্যার আপনারা আপনাদের ক্লাশে চলে যান।আইজান বাবা, তুমি গিয়ে দেখোতো নিবরাজ কোথায় গেলো?ওর যে রাগ ও জিদ।কে জানে কি করে মেয়েটার সাথে।
আইজানঃ জ্বি স্যার দেখছি।
আইজান রুম থেকে বের হয়ে গেলো।টিম রেইনবোর সকল সদস্য চিন্তিত মুখে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
আভাঃ কি হলো এটা?
রিমঃ কিছুই বুঝতে পারলাম না।
কিরনঃ NK মিহুকে নিয়ে কোথায় গেলো?
রুশানঃ জানি না।
সায়েমঃ কী হবে এবার?আঙ্কেল কে কল দিবো?
আইজান ওদের কথা শুনতে পেয়ে পেছন থেকে বলে উঠলো।
আইজানঃ কাউকে কল দিতে হবে না। ও ঠিকমতো ওর বাসায় পৌঁছে যাবে।
আফরাঃ কিন্তু AK—
আইজানঃ কোন কিন্তু না।বাসায় যাও।
সবাইঃওকে।
যে যার যার বাসায় চলে গেল। এতক্ষণ ধরে পুরো ঘটনাটা খুব নিখুঁতভাবে সি.সি. টিভি ফুটেজ দেখছিলো ধূসর চোখের ছেলেটি। মিহুর ওপর নজর রাখার জন্য সারা কলেজের বিভিন্ন রুমে ও জায়গায় অগণিত সি.সি. টিভি লাগিয়েছে সে জিহানকে দিয়ে। যা তারা ব্যতীত অন্য কোন মানুষ জানে না।
—– অনেক বড় ভুল করে ফেললি নিবরাজ খান।তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস।তোকে আমি দেখে নিবো।
কথাটা বলে সামনে থাকা বিশাল বড় দেয়াল টিভিটাকে সজোরে ঘুষি মেরে ভেঙে ফেললো।রাগে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।হাত কেটে টপটপ করে রক্ত পরছে। তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই তার।
নিবরাজ গাড়িতে উঠেই প্রথমে মিহুর বাবা ফাহিম মির্জাকে কল করলো।
নিবরাজঃ আসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।
ফাহিমঃ ওয়ালাইকুম আস সালাম। কে বলছেন?
নিবরাজঃ আঙ্কেল আমি নিবরাজ।
ফাহিমঃ কোন নিবরাজ?
ফাহিমঃ কেমন শ্বশুর মশাইয়ের বাবা?একমাত্র মেয়ের জামইকে চিনে না। (বিরবির করে)
ফাহিমঃ হ্যালো কথা বলছেন না কেন?
নিবরাজঃ আঙ্কেল আমি নিবরাজ খান। আপনার বন্ধু নিবীড় খানের ছেলে।
ফাহিমঃ ও এবার চিনতে পেরেছি। রাজ বাবা।কি হয়েছে? হঠাৎ আমায় কল করলে যে।তোমার বাবা ঠিক আছে তো?
নিবরাজঃ হ্যাঁ আঙ্কেল বাবা ঠিক আছে। আজকে মিহুর আসতে দেরী হবে।
ফাহিমঃ কেন?
নিবরাজঃ কলেজে কিছু কাজ আছে।কাজ শেষ হলে আমি নিজে গিয়ে ওকে বাসায় দিয়ে আসবো।
ফাহিমঃ আচ্ছা বাবা কোন সমস্যা নেই। একটু দেখে রেখো।
নিবরাজঃ হ্যাঁ আঙ্কেল দেখেতো রাখবোই।একদম চোখে চোখে। যাতে আমার নজর থেকে পালাতে না পারে।(মিহুর দিকে তাকিয়ে)
রাজ কল কেটে দিলো।এতক্ষণ ধরে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কথা বলছিলো।এক হাতে মোবাইল আরেক হাতে শক্ত করে মিহুর হাত ধরে রেখেছে। মোবাইল পকেটে রেখে মিহুর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো।
মিহুঃ এমন ভাব করছেন যেনো আমাকে তুলে নিয়ে এসে সারা বিশ্ব জয় করে ফেলছেন।
নিবরাজঃ তার থেকেও বেশি।
মিহুঃ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?
রাজ কোন কথা না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।গাড়ি এসে থামলো খান ভীলায়।অন্য দিকে সায়েম বাসায় গিয়ে মিহুর বাবাকে কল করলো।মিহুর বাবা ওকে চিন্তা করতে না করলো।ও যেহেতু রাজের সাথে আছে ঠিক বাসায় পৌঁছে যাবে।
সায়েমঃ যেমন মেয়ে তেমন বাপ।কখন কি মতলব থাকে কিছুই বুঝি না।
☘️☘️☘️
খান ভীলা…….
কোলিং বেল বাজতেই আইরিন আহমেদ দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে রাজকে দেখে সে তো অবাক।নিবরাজ কখনো এত তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে না।আজ দুপুর ১টায় বাড়িতে।ঘটনা কি?মিহু রাজের মা ও জানের মাকে অনেকবার দেখেছে।কিন্তু তারপরেও দুজনকে গুলিয়ে ফেলে।ওর কাছে দুজনের চেহারায় একরকম লাগে।দরজা খুলতেই মিহু আইরিন আহমেদ কে রাজের মা ভেবে জড়িয়ে ধরে মিথ্যা কান্নার ভান শুরু করলো।
মিহুঃ আন্টি ই ই-ই ই-ই। (কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
আইরিনঃ আরে মিহু,তুমি এখানে?
মিহুঃ আন্টি আপনার ছেলে আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে আসছে।এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ 😭।
আইরিনঃ রাজ সত্যি? (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
মিহুঃ হ্যাঁ আন্টি।আমি সত্যি কথা বলছি।আমি গুড গার্ল।আর গুড গার্ল তো মিথ্যে কথা বলে না। আপনি তো ওর মা।ওকে কিছু বলতে পারেন না।
আইরিনঃ আমি ওর ছোট মা।
কান্নার শব্দ শুনে রোজনি বেগম কিচেন থেকে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
রোজনিঃ কি হয়েছে আইরিন?কে কাঁদছে? মিহু মা-মণি কখন এলে তুমি?
মিহু এবার আইরিন আহমেদকে ছেড়ে রোজনি বেগমকে জরিয়ে ধরে মরা কান্না শুরু করলো।
মিহুঃ আন্টি ই ই-ই 😭।আপনার ছেলে—
রোজনিঃ কি হয়েছে?রাজ তোমায় কি করছে?রাজ কি হয়েছে?
নিবরাজঃ কিছু না মম।আসলে কলেজের কিছু কাজ ছিলো।কাজগুলো করতে মিহুকে দরকার। তাই আমি ওকে নিয়ে এলাম।
মিহুঃ মিথ্যে কথা।আমাকে তুলে নিয়ে এসেছে।
—- তোকে তুলে আনার সাধ্য কারো আছে?তুই নিজে ওর সাথে এসেছিস।আর এখন আমার ভাই কে ফাঁসাচ্ছিস।
সবাই পেছন দিকে ঘুরলো।আরুহি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কথাটা বললো।
নিবরাজঃ আরে আরুহি?কেমন আছিস?কখন এলি?
আরুহিঃ সকালে ভাইয়া।কেমন আছো তুমি?
নিবরাজঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। খালামণি, খালু কেমন আছে?
আরুহিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।
মিহুঃ আন্টি আমি বাসায় যাবো।
নিবরাজ মিহুর হাত ধরে টেনে সিঁড়ি দিয়ে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো।
নিবরাজঃ অনেক অভিনয় করেছো।এবার চল।দেখো আমি তোমার কি হাল করি?
আরুহি,রাজের মা,জানের মা সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। তাদের মাথার ওপর সবকিছু গেল।
আরুহিঃ তোকে আমি ছাড়বো না মিহু।তুই আমার রাজের দিকে হাত বাড়িয়েছিস।(রেগে)
কথাটা বলে আরুহি উপরে উঠে গেল। ও রাজের রুমে ঢোকার আগেই নিবরাজ ওর মুখের ওপর দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিলো।
আরুহিঃ কি হলো এটা?
☘️☘️☘️
রুমের দরজা লাগাতেই মিহুর বুকটা কেঁপে উঠলো। ছেলেটা করবে কি?কেন এনেছে এখানে?উল্টো পাল্টা কিছু করবে না তো?নিবরাজ একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ওর দিকে এগুতে লাগলো।এবার মিহু ভয় পেয়ে গেল। এক পা দু পা করে পেছাতে শুরু করলো।
নিবরাজঃ কি ব্যাপার মেহরুন মির্জা?তুমি নাকি কাউকে ভয় পাও না। তাহলে পেছনে যাচ্ছো কেন?
মিহুঃ দে দে দে দেখুন ভালো হবে না কিন্তু। আমি আমার তিন ভাইয়ুকে দিয়ে আপনাকে আচ্ছা করে গণপিটুনি খাওয়াবো।একদম, আপনি আমার দিকে এগুবেন না।
হঠাৎ নিবরাজ ওর শার্টের বোতামগুলো খুলতে শুরু করলো। যা দেখে মিহুর চোখ জোরা কপালে উঠে গেলো।ছেলেটার মাথা ঠিক আছে তো?
মিহুঃ এই এই আপনি শার্টের বোতাম খুলছেন কেন?
নিবরাজঃ রোমান্স করবো তাই।
মিহুর কানের সামনে এসে লো ভয়েজে কথাটা বললো নিবরাজ। মিহুর সারা শরীর হিম শীতল বাতাস বয়ে গেল। হাত-পায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো।সারা শরীর কাঁপছে। তা দেখে নিবরাজ মিটমিট করে হাসছে।
মিহুঃ আপনি একদম শার্ট খুলবেন না।আপনি শার্ট কেন খুলছেন বলুন তো?
নিবরাজঃ আমার ইচ্ছে তাই। আমার রুম আমি যা খুশি তা করবো।
মিহুঃ যা খুশি তা করবো মানে।মামাবাড়ির আবদার নাকি।
নিবরাজ, মিহুর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। মিহুর অস্বস্তি লাগছে। ভয়ে ঘামতে লাগলো। মিহুর কানের কাছে গিয়ে নিবরাজ বললো।
নিবরাজঃ এই রুমে যা আছে সব আমার।এমনকি তুমিও।
মিহুঃ আম আম আমি আআআপনার না।
নিবরাজঃ তুমি আমার মানে শুধু আমার।আর কারো না।আমি তোমাকে অন্য কারো হতে দিবো না। (রেগে)
হঠাৎ মিহুর মাথার পেছন ধরে নিবরাজ ওকে নিজের মুখের সামনে নিয়ে এলো।মিহুর মুখে রাজের গরম নিশ্বাস পরছে।মিহু চোখ মুখ খিঁচে জামা হাতে মুঠ করে দাঁড়িয়ে আছে।মিহু নিবরাজের মুখের দিকে তাকাতে পারছে না।কারণ সারা মুখ রাগে কঠিন হয়ে আছে।
নিবরাজঃ ইউ আর মাই ফার্স্ট এন্ড লাস্ট লাভ।কথাটা খুব ভালো করে নিজের মাথায় ঢুকিয়ে নেও।
রাজ মিহুকে ছেড়ে দিলো।তারপর কাবার্ড থেকে অনেকগুলো ফাইল বের করে মিহুর সামনে রাখলো।
নিবরাজঃ এক ঘন্টার মধ্যে ফাইলগুলো কমপ্লিট করবে।তা না হলে আজকে তোমার বাড়ি যাওয়া হবে না। সারাদিনতো আমার সাথেই থাকবে সঙ্গে রাতেও।ইউর টাইম ইজ স্টার্ট নাও।
কথাটা বলে মিহুকে একটা চোখ মারলো।তারপর শার্ট খুলে কাবার্ড থেকে টাউজার,টি-শার্ট নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেল।
মিহুঃ লুচু কোথাকার? বাপ রে!!!🥶কি যা তা বলে?আমারতো দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।জানটাই বোধহয় চলে যেতো।এখন আমি এতগুলো ফাইল এক ঘন্টার মধ্যে কিভাবে শেষ করবো?ব্যাটা বজ্জাত,হাতির নাতি,তেলাপোকার দুলাভাই, চামচিকার শালা,নেংটি ইন্দুরের ভাই,টিকটিকির ছাও।তোরে আমি ছারমু না।সবগুলির শোধ একটা একটা কইরা নিমু।
নিবরাজ ওর সব কথাই শুনতে পেয়েছে।ওয়াস রুম থেকে চিৎকার করে বললো।
নিবরাজঃ আমাকে বকার জন্য পরেও সময় পাবে।তোমার সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে। ১ ঘন্টার মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারলে, আজ আর বাড়ি যাওয়া হবে না।কথাটা মাথায় রেখো।
কথাটা বলে শাওয়ার নিতে দাঁড়িয়ে গেল নিবরাজ।আজ মিহুকে বড্ড ভয় দেখিয়েছে।ওর মুখটা দেখার মতো ছিলো।ওর মুখটা দেখার মতো ছিলো।মিহুর মুখের ছবি চোখে ভেসে উঠতেই রাজ নিজের মনে হাসতে লাগলো।নিজের মনে বিরবির করে শুধু বললো,”পাগলী একটা।”
#চলবে
#বোনু
#সিজন_০২
#Part_19
#Writer_NOVA
অনেকক্ষণ ধরে দরজার বাইরে আরুহি দাঁড়িয়ে আছে। কোন কথা সে শুনতে পায়নি।পাবেও না, সাউন্ড প্রুফ করা রুম।কিছু সময় পর আস্তে করে দরজাটা খুললো।লক করা না থাকায় আরুহির দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। ও তো ভেবেই নিয়েছিলো রাজ, মিহুর সাথে কিছু একটা করেছে। দরজা খুলতেই আরুহি রাজকে কোথাও দেখতে পেলো না।মিহু সোফায় গাল হাত দিয়ে বসে আছে। ওর সামনে অনেকগুলি ফাইল।ধীর পায়ে মিহু সামনে এগিয়ে গেলো।
মিহুঃ ধূর ভাল্লাগে না।কি করবো এখন।সবকিছু ইংরেজিতে লেখা। বুঝতেই আমার ১ ঘন্টা লাগবে।কমপ্লিট কখন করবো?আরে আরুহি আপু তুমি?
আরুহিকে দেখে মিহুর মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেছে। এখন সুযোগ বুঝে তা ব্যবহার করতে পারলেই হলো।
আরুহিঃ ভাইয়া,তোর সাথে কি করেছে? (রেগে)
মিহুঃ অনেক কিছু 🙈।(শয়তানি হাসি দিয়ে)
আরুহিঃ যেমন- (কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
মিহুঃ আমাদের মধ্যের সিক্রেট তোমাকে বলবো কেন?
আরুহিঃ বল না প্লিজ।
মিহুঃ বলবো না।তবে এতটুকু বলতে পারি, এই যে ফাইলগুলো দেখছো। এগুলো যদি আমি কমপ্লিট করতে পারি। তাহলে রাজ ভাইয়া আমাকে একটা স্পেশাল গিফট দেবে।
আরুহিঃ সত্যি 😳!!!(চিৎকার করে)
মিহুঃ হুম। তুমি তো জানোই গিফট-টিফট আমি পছন্দ করি না।(ভাব নিয়ে)তুমি এগুলো কমপ্লিট করে দেও আর ভাইয়ার থেকে গিফট নিয়ে নিও।
আরুহিঃ কিন্তু ভাইয়া যদি বকে?
মিহুঃ একদম বকবে না।
আরুহিঃ আচ্ছা, ঠিক আছে। দে আমি করে দিচ্ছি।
আরুহি ফাইলগুলো কমপ্লিট করতে লাগলো।আর মিহু দরজা দিয়ে পড়িমরি করে ছুট।তাকে পায় কে!!!
কোনরকম সিঁড়ি দিয়ে নেমে গাড়ির কাছে চলে এলো।মিহু রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে রাজ ওয়াসরুম থেকে বের হলো।মিহুর স্থলে আরুহিকে বসে থাকতে দেখলো।
নিবরাজঃ তুই এখানে কি করছিস?মিহু কোথায়?(রেগে)
আরুহিঃ মিহু(চারপাশে তাকিয়ে) আরে মিহুতো এখানেই ছিলো। কোথায় গেলো?
নিবরাজঃ তুই এখানে কেন?(চোখ লাল করে)
আরুহি ভয় পেয়ে নিবরাজকে পুরো ঘটনা খুলে বললো। ঐ দিকে মিহু পড়েছে ঝামেলায়।গাড়ির ভেতর ঢুকে কতবার গাড়ি স্টার্ট দিলো।কিন্তু গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না।
—– গাড়ি স্টার্ট হবে না। কারণ পেছনের চাকা পামচার করে দিয়েছি।
মিহু ভয়ে ভয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো নিবরাজ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে টাউজার, খালি গায়ে, গলায় টাওয়াল ঝুলানো।গাড়ি থেকে বেরিয়ে যেই মিহু পালাতে যাবে,রাজ ওর হাতটা ধরে ফেললো।তারপর কোন কথা না বলে কোলে তুলে নিলো। মিহু একটুও ছোটাছুটি করলো না।ও ভালো করেই জানে ও রাজের সাথে পারবে না। তাই চুপ করে রাজের বুকে হেলান দিয়ে রাখলো।রাজ ওকে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটতে লাগলো। কেন জানি মিহুর রাজের বুকে মাথা রাখতে খুব ভালো লাগছে। ওর ইচ্ছে করছে শক্ত করে ধরতে।রাজ রুমে এসে মিহুকে খাটে বসিয়ে দিলো। তারপর দরজা লক করে ওর সামনে এসে বসলো।
নিবরাজঃ আমি ভালো করে জানতাম তুমি কোন না কোন ফন্দি এঁটে নিশ্চয়ই পালাবে।তাই গাড়ির চাকা পামচার করে দিয়েছি।
☘️☘️☘️
মিহুর কানে কোন কথা ঢুকলো না।সে এক দৃষ্টিতে নিবরাজের উন্মুক্ত বুকের লোমের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে রাজের বুকের লোমে থাকা ছোট ছোট পানির বিন্দুগুলো খুব মনোযোগ সহকারে গুনছে।যাতে তার অন্য দিকে হুশ নেই। নিবরাজ তুড়ি বাজাতেই মিহুর ধ্যান ভাঙ্গে।
নিবরাজঃ কি ম্যাডাম?এমন করে আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন কোনো? আমি যে খুব হ্যান্ডসাম তা আমি জানি। (ভাব নিয়ে)
মিহুঃ আমারতো খেয়ে-পরে কাজ নেই। আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবো।আমি আপনার পেছনের কাবার্ডের নকশা দেখতে ছিলাম।
নিবরাজঃ এত মনোযোগ দিয়ে🤨?
মিহুঃ হুম।
নিবরাজঃ ওহ আচ্ছা। তা কাজ শুরু করো।
মিহু দুই গালে হাত দিয়ে সামনের ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।নিবরাজ কাবার্ড থেকে টি-শার্ট বের করে পরে নিলো।তারপর মিহুর দিকে তাকিয়ে বললো।
নিবরাজঃ আমি এখন ঘুমাবো। তাই কোন ডিস্টার্ব করবে না। চুপচাপ নিজের কাজ করবে।
কথাটা বলেই রাজ বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।১০ মিনিট ধরে মিহু বসে আছে। রাজকে ঘুমাতে নিজের চোখে ঘুম ভর করলো।এভাবেই মিহুর বেশি কাজ আর বকবকানিতে ঘুমে ধরে।মিহু সামনে গিয়ে নিবরাজকে ধাক্কাতে শুরু করলো।
মিহুঃ এই যে শুনুন।এই যে—-
নিবরাজঃ হুম বলো।(ঘুম চোখে)
মিহুঃ দরজার লকটা খুলে দিন না।আমি বাসায় যাবো।বাসা থেকে সব ফাইল কমপ্লিট করে আনবো।প্লিজ দরজাটা খুলে দিন।
নিবরাজঃ বলছি না আমাকে ডিস্টার্ব করতে না।চুপচাপ নিজের কাজ করো।
মিহুঃ প্লিজ দরজার চাবিটা তো দিন।আমি আপনার সব কথা শুনবো।
নিবরাজ হঠাৎ করে ঘুমের ঘোরে মিহুকে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো।
মিহুঃ আরে করছেনটা কি?ছাড়ুন বলছি।
নিবরাজঃ একটা কথা বলবে না।আমাকে ঘুমাতে দেও। (ঘুমের ঘোরে)
অনেক চেষ্টা করে মিহু মিহু নিজেকে ছাড়াতে পারলো না।কি আর করবে?ক্লান্ত হয়ে নিজেও ঘুমের দেশে পারি জমালো।২ ঘন্টা পর রাজের ঘুম ভাঙ্গলো।ওদের কেউ ডাক দেয়নি।দিলেও কাজ হতো না। রাজের রুম তো সাউন্ড প্রুফ করা।সারাদিন চিৎকার করে ডাকলেও ভেতরের কেউ শুনবে না।রাজ ঘুম থেকে উঠে আশেপাশে সব জায়গায় মিহুকে খুঁজলো। কিন্তু কোথাও মিহু নেই।
নিবরাজঃ কি ব্যাপার? মিহু কোথায়? আমিতো রুম লক করে রেখেছিলাম।তাহলে বের হলো কিভাবে?
যখনি বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে তখন ওর চোখ পরলো বিছানার দিকে।মিহু চার হাত-পা চারদিকে ছুঁড়ে ঘুমোচ্ছে।
নিবরাজঃ দেখেছো কান্ড!!! মহারাণী আমার সাথে ঘুমোচ্ছে আর আমি সারা রুম খুঁজে হয়রান হচ্ছি।ঘুমের মধ্যে ওকে কত সুন্দর লাগছে।দেখে মনেই হয় না এত দুষ্টু।আমি আবার ওর ওপর ক্রাশ খেলাম।
নিবরাজ মিহুর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।
নিবরাজঃ বড্ড বেশি ভালোবাসি তোকে।আমি তোর জন্য সব করতে রাজী আছি। তুই যা বলবি তাই। আমি অন্য কাউকে কখনো আমার অধিকার
দিবো না।
☘️☘️☘️
কিছুখণ পর মিহু ঘুম থেকে উঠলো।মিহু দেখলো নিবরাজ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দুনিয়া দারিতে কোন হুশ নেই।
মিহুঃ ওমন করে কি দেখছেন?
নিবরাজঃ তোমাকে। (আনমনে)
মিহুঃ কি-ই-ই-ই!!! (চিৎকার করে)
মিহুর চিৎকারে ওর হুশ এলো।
নিবরাজঃ কাজ ছেড়ে তুমি এখানে ঘুমাচ্ছো কেন?বলেছিলাম না একঘন্টার মধ্যে সব ফাইল কমপ্লিট করতে। এখন সব কমপ্লিট করে তারপর বাসায় যাবে।
মিহুঃ আমি পারবো না। (মুখ ঘুরিয়ে)
নিবরাজঃ তাহলে আমি কিন্তু তোমাকে শাস্তি দিবো।এই রুমে তুমি ও আমি ছারা কেউ নেই।
নিবরাজ শয়তানি হাসি দিয়ে এক চোখ মারলো।মিহু মনে মনে ভয় পেয়ে গেল।কি জানি কি করে বসে?এই ছেলের মতি গতি ঠিক লাগছে না। মিহু চুপচাপ বিছানা থেকে নেমে কাজে লেগে পরে।
প্রায় দেড় ঘন্টা পর ফাইল কমপ্লিট হয়।অবশ্য রাজ ওকে কমপ্লিট করতে সাহায্য করেছে। মিহুর প্রচন্ড হাত ব্যাথা করছে। ও লাস্ট কবে এতো লিখেছে সেটা ওর মনে নেই। পরীক্ষার খাতায় এত সময় লিখলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। দেড় ঘন্টা লেখার মধ্যে ছিল।
নিবরাজঃ দরজা খুলে দিচ্ছি। নিচে গিয়ে বসো।আমি তৈরি হয়ে তোমাকে বাসায় দিয়ে আসবো।নিচে গিয়ে খাবার খেয়ে নিও।
মিহুঃ আচ্ছা।
মিহু ভালো মেয়ের মতো নিচে নেমে গেলো।রোজনি বেগম নিচেই ছিলেন।
রোজনিঃ মিহু মা-মণি এসেছিস।বস এখানে।খাবার না খেয়ে যেতে পারবি না।
মিহুঃ না,আন্টি আমি বাসায় গিয়ে খেয়ে নিবো।
রোজনিঃ কোন কথা শুনবো না। তুই বস,আমি খাবার নিয়ে আসছি।কোথাও চলে যাস না আবার।
রোজনি বেগম খাবার নিয়ে এলেন।মিহু কিছুতেই খেতে চাইছিলো না। রোজনি বেগম জোর করে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলেন।
রোজনিঃ জানিস মিহু,আমার খুব শখ ছিলো আমার একটা মেয়ে হবে।সবসময় আমার কথা শুনবে।নিজ হাতে ওকে খাইয়ে দিবো।
মিহুঃ থাকলে কখোনি করতেন না।তখন ছেলেকে বেশি আদর করতেন। যেমন আমার মাম্মি।
রোজনিঃ মোটেও না। বাদ দে, এখন মন খারাপ করে লাভ নেই। তোকে যখন রাজের বউ করবো নিয়ে আসবো তখন এই শখ পূরণ করবো।
মিহুঃ আমি মরে গেলেও আপনার ছেলের বউ হবো না।সবসময় আমায় ধমক দেয়,ভয় দেখায়,সন্দেহ করে,আবার কেমন কেমন জানি করে।আমি একে বিয়ে করছি না। (মনে মনে)
রোজনিঃ কি রে কি ভাবছিস? মুখের খাবার গিলছিস না কেন?
মিহুঃ কিছু না আন্টি।
তখন সিঁড়ি দিয়ে আইজান নিচে নামছিলো।পরনে শুধু একটা হাফ প্যান্ট।গায়ে কিছু নেই। মিহু ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা পরেছে কি???
আইজানঃ বড় মা, এক মগ কফি দেও তো।
নিচে মিহুকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ধেক সিঁড়ি থেকে আবার উল্টো দিকে নিজের রুমে দৌড় দিলো। মিহু ওর কান্ডে অবাক হয়ে গেলো।
মিহুঃ কি হলো এটা?
রোজনিঃ ছেলেটা খুব লাজুক।খালি গায়ে কারো সামনে আসে না। তোকে দেখে এমন করলো।
মিহুঃ এমন করে দৌড় দিলো মনে হলো আন্ডারওয়্যার পরে বাহির হয়ে গেছে 😂।
খাওয়া শেষ হতেই নিবরাজ মিহুকে বাসায় পৌঁছে দিলো।রাজের মনটা অনেক খুশি।কারণ অনেক দিন পর মিহুর সাথে সময় কাটালো সে।
☘️☘️☘️
পরেরদিন……..
গেইটের কাছে বাইক রেখে কলেজের ভেতরে ঢুকলো আইজান।আজ নিবরাজ আসেনি।কিছুদিন পর ভালোবাসা দিবস।এই উপলক্ষে রাজ কলেজে একটা বড় পার্টি রেখেছে। আসলে মিহুর জন্য রাখা পার্টিটা।তার প্ল্যানিং-এর জন্য ব্যস্ত আছে।আইজান ভেতরে ঢুকতেই রিমন, সাদাফ,সিয়াম,আরিফ,সোহেল,
নিশাতের সাথে দেখা।
সাদাফঃ কী দোস্ত, তুই নাকি বাড়িতে খালি গায়ে আন্ডারওয়্যার পরে ঘুরিস।
সাদাফের কথায় আইজান অনেক রেগে গেল।সে তার প্রেস্টিজ নিয়ে অনেক সচেতন।
আইজানঃ কে বলছে?(রেগে)
রিমনঃ মিহুই তো সারা কলেজ বলে বেড়াচ্ছে, তুই নাকি মেয়েদের ইমপ্রেস করার জন্য খালি গায়ে বাড়িতে ঘুরোস।(মুখ টিপে হেসে)
আইজানঃ এনাকোন্ডা তোর খবর আছে। (রেগে)
আইজান রেগে মিহুকে খুঁজতে লাগলো। ওকে পেলে কাঁচা গিলে ফেলবে।কিছু সময় পর মিহুকে পেয়ে গেল। মিহুর সামনে গিয়ে চোখ লাল করে দাড়ালো।
মিহুঃ আরে নেংটি ইঁদুর, আমার রাস্তা আটকাইছো কেন?
আইজানঃ সারা কলেজে আমার নামে কি বলছো?
মিহুঃ আমিতো কিছু বলিনি।
(অবাক হওয়ার ভান করে)
আইজানঃ আমি মেয়েদের ইমপ্রেস করার জন্য খালি গায়ে আন্ডারওয়্যার পরে ঘুরি।
মিহুঃ আমি কখন বললাম এসব কথা🙄?
আইজানঃ আবার অভিনয় করছো?
ওদের সামনে গিয়ে দুটো মেয়ে যাচ্ছিলো।তাদের সামনে গিয়ে মিহু বললো।
মিহুঃ আচ্ছা আপু, আপনারা বলেন তো আমি কি আপনাদের বলেছি আইজান মানে AK। মেয়েদের ইমপ্রেস করার জন্য বাড়িতে খালি গায়ে আন্ডারওয়্যার পরে ঘুরে।
মেয়ে দুটো অবাক হয়ে বলল— কোথায় না তো?
মিহুঃ আচ্ছা আপুরা, আপনারা এখন আসতে পারেন।
আইজানঃ তোমাকে তো আমি🤬?
মিহুঃ দেখছেন আমি কাউকে কিছু বলিনি।যদি সারা কলেজ ছড়াতাম তাহলে এই দুই আপুও জানতো।আচ্ছা, আপনি বিশ্বাস করছেন না তো।ঐ যে একদল মেয়ে আসছে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখি।
আইজানঃ একদম না। চুপ করো তুমি। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না। (রেগে)
মিহু ঐ দলের মেয়েদের কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আইজান ওর মুখ চেপে ধরলো।মেয়েগুলো চলে যেতেই মিহুর মুখ ছেড়ে দিয়ে আইজান বাইক নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়ে গেলো। এখানে আজকে থাকলে মিহু ওর মান-ইজ্জত সব প্লাস্টিক করে দিবে। মিহু মিটমিট করে হাসছে।
মিহুঃ একদম ঠিক আছে। বোঝো মজা।নেংটি ইঁদুর কোথাকার?ইস,নেংটি ইঁদুরের আবার শরম।বাড়িতে গিয়ে ডিব্বা ভরে এতো শরম রেখে দিও।ধূর,চলে গেলো।না হলে আরেকটু রাগানো যেতো।ওর সাথে লাগতে যে আমার কি ভালো লাগে, তা আমি বোঝাতে পারবো না।
☘️☘️☘️
খান ভীলা……..
আইজান বাড়ি গিয়ে সোজা নিবরাজের রুমে ঢুকলো। নিবরাজ ল্যাপটপে কাজ করছিলো।আইজানকে এতো তাড়াতাড়ি ফিরতে দেখে খুব অবাক হলো।
নিবরাজঃ কি রে এত তাড়াতাড়ি ফিরলি যে?
আইজানঃ আর কিছু সময় থাকলে আমার ইজ্জত ফালুদা হয়ে যেতো।শার্ট খুলে মুখ ঢেকে বাসায় আসতে হতো।
নিবরাজঃ কেন, কি হয়েছে?
আইজান,নিবরাজকে পুরো ঘটনা খুলে বললো।রাজ মিটমিট করে হাসছে।
আইজানঃ তোর বউ কি বাঁশ দেওয়ার জন্য অন্য কোন মানুষ খুঁজে পায় না।সবসময় বাঁশ আমার হাতে ধরিয়ে দেয়।কতগুলো বাঁশ খাওয়ালো আমায়।
নিবরাজঃ এক কাজ কর,বাঁশগুলো দিয়ে একটা গোয়াল ঘর তুলে ফেল।কয়েকটা গরু পালিস।বাড়তি আয় হবে তোর হাত খরচও চলে যাবে।
আইজানঃ ভাই, তুইও মজা করছিস আমায় নিয়ে। দেখিস তুই আবার ছ্যাকা খাবি ওর কাছে।হাসছিস না আমার কথা শুনে। তোর কপালে আবার দুঃখ আছে। আইজান খানের কখনও ভুল বলে না। গতবার তো লাখ লাখ টাকার জিনিস ভাঙছিস। এবার যদি একটা কাচের মগেও হাত দিয়েছিস, তাহলে তোর খবর আছে। টাকা গাছে ধরে নাকি?টাকা কামাই করতে কষ্ট আছে।
নিবরাজঃ ও সেইবার বোধহয় তোর রুম ছেড়ে দিয়ে ছিলাম। কোন কিছু ভাঙ্গিনি।তাই এত বড় বড় ডায়লগ মারছিস এবার সবার আগে তোর রুম তছনছ করবো তারপর বাকিটা।
আইজানঃ একদম না বলে দিলাম।আমার রুমের একটা জিনিসও হাত দিবি না। তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
রাগে বিরবির করতে করতে আইজান রুম থেকে বের হয়ে গেল।নিবরাজ মিটমিট করে হেসে বললো– পাগলী মেয়েটা।আজকেও জানকে রাগিয়ে দিয়েছে।
#চলবে