বোনু ২ পর্ব-১৬+১৭

0
1447

#বোনু
#সিজন_০২
#Part_16
#Writer_NOVA

কয়েক মাস পর…….

কলেজের মাঠের এক কোণে আরমচে বসে আড্ডা দিচ্ছে The tim of rainbow সব সদস্যরা। ক্লাশ চলছে তাদের। কিন্তু সেটার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তাদের এই অযথা আড্ডা। যার কোন মূল্য নেই। দুই দিন পর সেমিস্টার পরীক্ষা। মাত্র ৭ টা পরীক্ষা হবে।তাও এদের মধ্যে কোন চিন্তা নেই পরীক্ষার।

কিরনঃ দুই দিন পর পরীক্ষা ঐ খেয়াল আছে তোদের?

রুশানঃ নো টেনশন মাম্মা তুই আছিস না।

আফরাঃ একদম ঠিক। তুই পড়াশোনা করে আসবি।

মিহুঃ সূর্যের কিরন, ঠিকমতো পড়ালেখা করে আসিস।তুই পাস মানে আমরা সব পাস।

সায়েমঃ কোন রকম ৩৩ পাইলেই যথেষ্ট।

কিরনঃ পড়ালেখা করিস না কেন?

রিমঃ তুই থাকতে আমরা পরমু কে?

আভাঃ ভাই না ভালো। একটু ভালো মতো পইরা আসিস।তুই আমাদের একমাত্র ভরসা।

সায়েমঃ দোস্ত তুই আছোত বইল্লা বাঁইচা আছি।

রুশানঃ তা না হইলে কবে কচু গাছের লোগে টপকাইয়া যাইতাম।

কিরনঃ তোমরা সবাই ক্লাশ না কইরা টো টো কইরা ঘুরবা আর আমি সারারাত পইড়া তোমগো উদ্ধার করমু।পারমু না।(রেগে)

মিহুঃ ঐ ওরে ধরতো।কলেজের পেছনে যে পঁচা ডবা আছে ঐ জায়গা থিকা দুই ঢোক পানি খাওয়ায় নিয়া আসি।

রুশান,সায়েম মিলে কিরনের দুই হাত ধরে কলেজের পেছনে পঁচা ডোবার কাছে নিয়ে গেলো।

মিহুঃ এখনও সময় আছে জলদী কো পড়াশোনা কইরা আবি কিনা?যদি না আসিস তাইলে তোরে এই পোঁচা ডোবার থিকা চুব খাওয়াইয়া বাড়িতে পাঠামু।

রিমঃ বেশি ভাবিস না। জলদী বল।

কিরন চুপচাপ রাজী হয়ে যায়।এই মিহুকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। যা মুখে বলছে তাই করে ফেলবে।

সায়েমঃ তা মাম্মা সোজা কথায় রাজী হইলে কি হইতো?

আফরাঃকি আবার হইতো আঙ্গুল বাঁকা করতে
হইতো না।

মিহুঃ সেই খুশিতে একটা ট্রিট হইয়া যাক।

আভাঃ কে দিবো?
রুশানঃ কিরন।
কিরনঃ আমি কিনু😐?
মিহুঃ বেশি বাড়াবাড়ি করার কারণে ট্রিট-টা তুমি
দিবা মাম্মা।
রিমঃ চলো মাম্মা।
কিরনঃ টাকা নাই কা।

আফরাঃ চাপা কম ছাড়ো।জলদী কফি হাউসের দিকে পা বাড়াও।

মিহুঃ তোরে কি আবার সম্মান কইরা নিতে হইবো?(রেগে)

আভাঃ মনে হয়।
মিহুঃ রুশান,সায়েম।
রুশানঃ বুইঝা গেছি বস।আমরা রেডি আছি।

কিরন কিছু বলার আগেই রুশান ওর দুই হাত আর সায়েম ওর দুই পা ধরে চ্যাংদোলা করে নিয়ে চললো।কিরম মোচড়ামুচড়ি করছে নামার জন্য। কিন্তু রুশান,সায়েম মনের সুখে কিরনকে দোলাতে দোলাতে নিয়ে যাচ্ছে। পুরো কলেজের ছেলে মেয়ারা অবাক।সবাই তো কিরনকে দেখে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পরছে।এত বড় একটা ছেলেকে যদি কেউ এভাবে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যায় তাহলে যে কেউ দেখলে হাসবে।বিষয়টা নিবরাজের চোখও এড়ালো না। অনেকক্ষণ ধরে শুনছে কলেজে হাসির রোল পরে গেছে। বাইরে এসে নিজেও না হেসে পারলো না। মেয়েটা পারেও বটে।

আইজানঃ ভাই, ওকে কিছু বলবি না?
নিবরাজঃ কি বলবো?
আইজানঃ তুইও হাসতেছিস?
নিবরাজঃ না হেসে কি পারা যায়। দেখতো কি কান্ড করতাছে?
আইজানঃ সত্যি ভাই, পুরো দুনিয়ায় একপিসই বানাইছে।

☘️☘️☘️

নিবরাজ ও আইজান ওদের রাস্তা আটকে সামনে এসে দাঁড়ালো। নিবরাজ মিহুর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

আফরাঃ দোস্ত NK, AK এখানে কি করে? (নিচুস্বরে)
আভাঃ ওগো জিগা।আমি কি জানি?(বিরক্তির সুরে)
নিবরাজঃ কি হচ্ছে এখানে?
মিহুঃ দেখতে পাচ্ছেন না?
আইজানঃ দেখতে পাচ্ছি বলে তো জিজ্ঞাসা করছি।
মিহুঃ ও আমাদের সাথে যেতে চাইছিলো না। তাই ওকে পালকিতে করে নিয়ে যাচ্ছি।
নিবরাজ,আইজানঃ কি এটা পালকি😳!!!

দুই ভাই জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো।চোখ তাদের কপালে।এমন পালকি তারা জীবনেও দেখিনি।

মিহুঃ এটা মিহুর পালকি।যেই সেই মানুষ উঠতে পারে না। শুধুমাত্র দামী মানুষরা উঠতে পারে।

তারপর কিরনের দিকে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে মিহু বললো।

মিহুঃ তাই না মাম্মা? আমি ঠিক বলছি না।

কিরনঃ বস,আমারে বাঁচান। নইলে আমারে খাইয়া ফালাইবো।

মিহুঃ তোরে খামু না।তোর টাকা খামু।

আইজানঃ ওকে এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?

মিহুঃ ওরে হাতে ধইরা নেই, নয়তো ঘাড়ে কইরা নেই কিংবা কোলে কইরা নেই। সেটা আমাগো ব্যাপার আমরা দেখমু।আমার ফ্রেন্ড আমি যেমনে খুশি তেমনে নিমু সেটা আপনেরে কমু কে?সইরা দাঁড়ান। আমগো দেরী হইয়া যাইতাছে।

নিবরাজঃ কথার উত্তর না দিলে যেতে পারবা না।

মিহুঃ কমু না।

নিবরাজঃ তাহলে এখান থেকে যেতেও পারবে না।

আফরাঃ হির বোনু,বেশি কথা বাড়াইস না।নইলে বেশি কিছু খাইতে পারমু না। বলে দে।

মিহুঃ আমি কমু না।

রিমঃ NK আসলে কিরন আমাদের আজকে ট্রিট দিবো।

সায়েমঃ সেই খুশিতে শালারে পালকিতে কইরা নিয়া যাইতাছি।

কিরনঃ না না।আমি যামু না। NK,AK আমারে বাচান।তা না হলে ওরা আজকে আমারে দিয়া রেস্টুরেন্টের থালা-বাসন মাজাইবো।

মিহুঃ শুনছেন তো।এবার পথ ছাড়েন।

নিবরাজঃ সত্যি আল্লাহ, পৃথিবীতে ১ পিসই বানাইছো।তাও আমার জন্য বানাতে হলো।(মনে মনে)

নিবরাজ, আইজান সরে দাঁড়ালো। The tim of rainbow কিরনকে নিয়ে চললো রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্য। সত্যি বেচারার তেরটা বাজাইছে।পকেটের টাকা তো গেছেই সাথে দামী ঘড়ি।

কিরনঃ তোগো আমি দেইখা নিমু।আমার ঘড়ি😭।

রিমঃ থাক মাম্মা কাইন্দো না।তোমারে আমরা একটা ঝাকানাকা বিলাই আলা ঘড়ি গিফট করমু।

কিরনঃ তোরা থাকলে আর শত্রুর প্রয়োজন নেই। খাদক একেকটা।

মিহুঃ আরে মাম্মা এতো কাঁদতাছো কেন?বেশি কাঁদলে তো শরীর খারাপ করবো।পড়বা কেমনে?না পড়লে পাস করবা কেমনে?তুমি পাস না করলে আমরা পাস করমু কেমনে?

আফরাঃ ভাইয়ু কাইন্দো না। চুপচাপ বাড়িতে গিয়া পড়তে বইসা পইরো।

সায়েমঃ মাম্মা মন খারাপ কইরো না।আমরাতো আছি।

কিরনঃ তোমরা যে কোন কামে আছো। তাতো আমি জানি।খালি পারো আমারে বাঁশ দিতে।

আভাঃ এইটাই কয়জন পারে বলতো।

কিরন রেগে বিরবির করতে করতে চলে গেল।বাকি সবাই হাসতে লাগলো।

☘️☘️☘️

দুই দিন পর…….

পরীক্ষার হলে এসে সবার মাথা নষ্ট। সিট এলোমেলো করে দিয়েছে। সাতজন রুমের সাত স্থানে পরেছে।সবার মাথায় হাত। কিরনের আশায় বাকি ৬ টার একটাও পড়ে আসেনি।এবার কি করবে?৭ টা পরীক্ষা দিবে কি করে?এই জন্য বলে অতি চালাকের গলায় দড়ি।তাছাড়া বাকি ৬ টায় জানেও না আজ কি পরীক্ষা? মিহু এসে সারা রুমে চোখ বুলচ্ছে।

মিহুঃ ঐ আজকে কি পরীক্ষারে?

সায়েমঃ জানি না।

আভাঃ হইবো সব বইয়ের মধ্যে একটা বইয়ের পরীক্ষা।

মিহুঃ সেটা তো আমিও জানি।

রিমঃ আজকে বোধহয় ঐ কুচুটে বুড়ি ম্যাডাম যে ক্লাশ নেয় তার পরীক্ষা।

রুশানঃ ঐ ম্যাডাম কি ক্লাশ নেয়?

আফরাঃ ঐটা জানলে তো পরীক্ষার নামও জানতাম।

সায়েমঃ হির,তোর কাছে না রুটিন আছে।

মিহুঃ এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ😭।

আফরাঃ কি হইছে কান্দস কে?

মিহুঃ ঐটারে আমি প্লেন বানাইয়া আকাশে উড়ায় দিছি।

সবাইঃ কি-ই-ই-ই!!!!

মিহুঃ আমারে কস কে?তোগোডা কই?

সবাইঃ কইতে পারি না।

মিহুঃ কিরইন্না কই রে?

রুশানঃ ও এখনো আসে নাই।

রিমঃ ঐ ম্যাডামের ক্লাশতো একটাও করি নাই।

আফরাঃ আমরা করছি নাকি?

মিহুঃ বুড়ি খালি শুধু শুধু বকাঝকা করতো।হের ক্লাশ করোন যায়।কিন্তু হেই কি ক্লাশ করাইতো?

সায়েমঃ কিচ্ছু কইতে পারি না।কালকের থিকা পইরা আইতে হইবো।নইলে স্যারে হাতে বাঁশ ধরায় দিবো।

কিছু সময় পর কিরন এলো।সে তো সিট প্লানিং দেখে খুব খুশি।

কিরনঃ একদম ঠিক হইছে।আমার সাথে বাটপারি করতে চাইছিলা না।এবার মজা বোঝো।আমি অনেক খুশি হইছি।তোগো লিগা আমি আমার প্রিয় ঘড়ি হারাইছি।

মিহুঃ ঐ ওরে ধরতো। আমার স্টীকটা দিয়া ওর মাথা ফাটাই।

সায়েম,রুশান ধরতে যাওয়ার আগেই ক্লাশে স্যার ঢুকে পরলো।যার কারণে কিরনকে ধরা হলো না।

রুশানঃ আজকে বাঁইচা গেলি।
আভাঃ পরীক্ষার পর তোর খবর আছে।

পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো।প্রশ্ন দেখে ৬ টার মাথা নষ্ট। কি লিখছে এগুলো?ছয়জন গালে হাত দিয়ে মনোযোগ সহকারে প্রশ্ন উল্টায় পাল্টায় দেখছে।সায়েম কলেমের খাপ কামড়াইতাছে।মিহু ওর সামনে থাকা মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো।

মিহুঃ আজকে কি পরীক্ষা গো?

মেয়েটিঃ সেটাতো আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম।

মিহুঃ এমা,সব দেখি আমার মতো।তাহলে বুড়ির ক্লাশ করতো কে?তুমি ক্লাশ করতা না?

মেয়েটিঃ নাহ্, এই ম্যাডাম শুধু বকে।তুমি?

মিহুঃ একটা ক্লাস করছিলাম।বাপরে শুধু শুধু খালি বকাঝকা করে। তাই তার ক্লাশ আসলে আমি পেছনের দরজা দিয়ে পলাতাম।

☘️☘️☘️

হঠাৎ একটা স্যার মিহুকে কথা বলতে দেখে ধমকে উঠলো। এই স্যারটাকে মিহু একদমি দেখতে পারে না।তার মাথায় টাক থাকার কারণে সে সব ছাত্র ছাত্রীদের কাছে টাকলু স্যার নামে পরিচিত।

স্যারঃ এই মেয়ে কি কথা বলছো?

মিহুঃ কিছু না স্যার।আমার কলমটা নিচে পরে গিয়েছিলো।

স্যারঃ কলম পরে কিভাবে?হাতে কি শক্তি নেই।(রেগে)

স্যার কথা বলতে বলতে মিহুর বেঞ্চের সামনে দাঁড়ালো। স্যার তার হাতটা মিহু বেঞ্চের ওপর রাখলো।মিহু তার হাতের ওপর ইচ্ছে করে জোরে কলমটা ফেলে দিলো।

মিহুঃ স্যার এমনে পরে গিয়েছিলো।
স্যারঃ বেয়াদব মেয়ে।
মিহুঃ সরি স্যার।আমি আসলে দেখতে পাইনি।
স্যারঃ চুপচাপ লিখো।

টাকলু স্যার এর মধ্যেই ভালো করে জেনে গেছে এর সাথে বেশি কথা বললে এমন অবস্থা করবে যে সবার সামনে তাকে অপমানিত হতে হবে।

মিহুঃ ব্যাটা টাকলু,তোর টাক যদি আমি স্টিক দিয়া,না ফাটাইছি তা হইলে আমার নামও মেহরুন মির্জা নয়।তোর চান্দীটারে আমার হির দিয়া ফাটামুই ফাটামু।তোর টাকের জায়গায় বিশাল বড় আলু ফুলে উঠবো।(বিরবির করে)

স্যারঃ কি বিরবির করছো?

মিহুঃ কোথায় স্যার?আমিতো প্রশ্ন পড়তেছিলাম।

স্যারঃ আস্তে পড়ো।

মিহুঃ টাকলুরে তোর খবর আছে।(মনে মনে)

২০ মিনিট পর কিরন দেখলো বাকি ৬ জন খুব মনোযোগ দিয়ে খাতায় লিখতেছে।কিরনের চোখ তো কপালে।ঘটনা কি!!এগুলি তো বই ছুঁয়েও দেখে নি।কি পরীক্ষা সেটাও জানে না। তাহলে খাতায় লিখতাছে কিভাবে?এটা কি করে সম্ভব?

পরীক্ষা শেষে……..

কোনরকম খাতা জমা দিয়ে ৬ জন বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কিরনের জন্য। আজকে ওর খবর আছে।

কিরনঃ কি মাম্মা পরীক্ষা কেমন দিলা?

আফরাঃ ওসাম।

মিহুঃ পুরা ফাটাই ফালাইছি।

সায়েমঃ আজকে সেই লেভেলে কোপাইছি মাম্মা। পাস তো করমুই।

কিরনঃ ভাব কম লও।খাতায় কি লিখছো তা কও।

রিমঃ সবসময় নিজেরে কি বিদ্যাসাগর ভাবিস?তুই একলাই পারিস।আমরা কিছু পারি না।

কিরনঃ পারস তো ডিম।

মিহুঃ নিজে একটু পড়াশোনা ভালো দেইখা ভাব নেও? এবার আমরাও দেখায় দিমু পড়ালেখা কি চিজ?হু হু

আভাঃ আমাদের থেকে পড়ালেখা ভালো পারো দেইখা বেশি ফালাও না? তোমার ফাল এবার আমরা কমামু।

রুশানঃ হেব্বি পরীক্ষা দিছি।এমন পরীক্ষা জীবনেও দেই নাই। পাস তো করমুই।

মিহুঃ মীর জাফররে ধরতো।ওর দাঁত কেলাইন্না আমি ছুটাইতাছি।সীট প্লানিং দেইখা দাঁত বাইর কইরা Close Up পেস্টের এড দিতাছিলো। ওর খবর আছে। কীরে তোরা ওরে ধরস না কে?আমি ব্যাগের,থিকা হিররে (হকি স্টিক) বাইর কইরা লই।ওরে ধর।

তার আগেই কিরন পেছন দিকে ভৌ দৌড়। ওকে আর পায় কে!!!

সায়েমঃ শালা,ঘরের শত্রু বিভীষণ।
আফরাঃ শয়তান জানি কোথাকার?
আভাঃ বান্দর একটা।

সবাই বিরবির করে বকতে বকতে নিজেদের গন্তব্যে চলে গেল।বাকি ৬ টা পরীক্ষা তারা আর ভুল করে নাই। প্রতিদিন পড়ে এসেছে। যার কারণে কোন সমস্যা হয়নি।দেখতে দেখতে পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেলো।

#চলবে

#বোনু
#সিজন_০২
#Part_17
#Writer_NOVA

৮ দিন পর…..

পরীক্ষা শেষ হয়েছে আজ ৮ দিন হলো।সামনে রেজাল্টও দিয়ে দিবে।মাঠের এক পাশে বসে বাদাম খাচ্ছে ও আড্ডা দিচ্ছে রেইনবো টিম।তখনই ওদের সামনে কলেজের পিয়ন এলো।

পিয়নঃ তোমাদের মধ্যে মেহরুন,সায়েম, আভা,রুশান, আফরা,রিম কে?
সবাইঃ আমরা কেন?
পিয়নঃ প্রিন্সিপাল স্যার তোমাদের ডাকছে।
মিহুঃ জানি না। এখুনি যেতে বলেছে।
সায়েমঃ আপনি যান, আমরা আসছি।
রুশানঃ কি ব্যাপার হির?তুই কি কিছু করছোত?
মিহুঃ আমি যদি কিছু করতাম তাহলে স্যারে আমারেই একলা ডাকতো।তোগো সহো ডাকবো কেন?
আফরাঃ আমরা আবার কি করলাম?
মিহুঃ সেটা গেলেই বুঝতে পারবি।
কিরনঃ তোদের ছয়জনকে ডাকছে।আমারে ডাকে নাই কেন?
রিমঃ জানি না।
আভাঃ চল সবাই।
মিহুঃ কিরন তুই এই জায়গায় থাক।আমাদের সাথে একদম যাবি না।

প্রিন্সিপালের রুমে…….

স্যারের রুমে গিয়ে দেখলো প্রিন্সিপাল সুমন রহমান সহ আরো অনেক স্যার বসে আছে। সাথে ওদের সেই টাকলু স্যার ও কুচুটে বুড়ি ম্যাডাম।নিবরাজ,আইজান পাশের চেয়ারে বসা।

মিহুঃ মে আই কাম ইন স্যার?
সুমনঃ ইয়েস কাম ইন।

ওরা ছয়জন রুমে ঢুকলো। কিরন জানালা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরে বোঝার চেষ্টা করছে কেস টা কি?

মিহুঃ স্যার আমাদের ডেকেছেন?
সুমনঃ হ্যাঁ।
মিহুঃ কেন স্যার? আমরা কিছু করেছি।আমরাতো কারো সাথে মারামারি করিনি।
সুমনঃ তার জন্য নয়।রাফিজা ম্যাডাম।
রাফিজাঃ জি স্যার।
সায়েমঃ এই হির কুচুটে বুড়ি ম্যাডামরে ডাকে কেন?(আস্তে করে)
মিহুঃ আমি জানি না।(নিচুস্বরে)
সুমনঃ খাতাগুলো বের করুন।
আইজানঃ ভাই, কিসের খাতা?(ফিসফিস করে)
নিবরাজঃ পরীক্ষার খাতা মনে হয়।
আইজানঃ কেন কি হয়েছে?
নিবরাজঃ জানি না। চুপচাপ দেখতে থাক।

হঠাৎ করে মিহুর মোবাইল বেজে ওঠে। ডোমেটা কুসিটা আ আ আ ডেমেটা কুসিটা আ আ আ।ওর মোবাইলের রিংটোন শুনে সবাই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মিহু মোবাইল নিয়ে বের হয়ে গেলো।

আইজানঃ ভাই, এটা কি ছিলো?
সায়েমঃ ওর মোবাইলের রিংটোন 🙃।

মিহু ফিরে এলো।রাফিজা ম্যাডাম ওরফে মিহুদের কুচুটে বুড়ি ম্যাডাম পরীক্ষার খাতা বের করলেন।ওদের প্রত্যেকের গলা শুকিয়ে গেছে। এবার ওরা বুঝে গেছে কেন ওদের ডেকেছে? সুমন রহমান খাতাগুলো হাতে নিয়ে প্রত্যেককে একবার দেখলেন।ছয়জন মাথা হালকা করে নিচু করে রেখেছে।

সুমনঃ সায়েম কে?
সায়েমঃ জ্বি স্যার আমি।
সুমনঃ কি লিখেছো খাতায়?
সায়েমঃ (নিশ্চুপ)
সুমনঃ উত্তর দিচ্ছো না কেন?
রাফিজাঃ কিভাবে দিবে স্যার?উত্তর দেওয়ার মতো কিছু লিখেছে নাকি।
টাকলু স্যারঃ কি লিখেছে স্যার?

☘️☘️☘️

সুমন রহমান সবাইকে খাতাটা দেখিয়ে বললো।

সুমনঃ ১ম পৃষ্ঠায় বড় করে ম্যাডামের ছবি এঁকেছে। আর নিচে লিখেছে “” ম্যাডাম দীর্ঘ ২ টা ঘন্টা ব্যয় করে মনের মাধুরি মিশিয়ে আপনাকে এঁকেছি। আশা করি আমার তিন ঘন্টা আপনি বৃথা করবেন না।পাস নাম্বার দিয়ে দিয়েন।কেউ জানবে না।শুধু আপনি আর আমি।”” কলেজে এসব করতে আসো তোমরা?রাফিজা ম্যাডাম ২য় খাতাটা দিন।

রাফিজাঃ এই যে স্যার নিন।
সুমনঃ রুশান কে?
রুশানঃ জ্বি স্যার।(ভয়ে ভয়ে)
সুমনঃ তুমি কি লিখছো?তা একটু সবাইকে পড়ে শোনায়।কি বলো?
রুশানঃ (নিশ্চুপ)

সুমনঃ প্রথম পৃষ্ঠায় —Title : অপরাধী গান

” ও ম্যাডাম ও ম্যাডামরে আপনি অপরাধীরে,
আমার পাস করনের নাম্বার দিয়ে দিয়েন রে।”

২য় পৃষ্ঠা —- Title : কুচুটে বুড়ি

” একে তো কুচুটে বুড়ি, তার ওপর ঢোলের বারি,
আপনার এসব ছলচাতুরী থামবে কবে বলেন?
আপনার ক্লাশেও আমি নাই,
আমার মনেও আপনি নাই
আপনাকে পারমানেন্টলি ডিলেট করতে চাই। ”
৪র্থ, ৫ম পৃষ্ঠা ভর্তি হিন্দি ও বাংলা গান।শেষে কি লিখছে তা শুনবেন না।শেষে লিখছে,
” ম্যাডাম সময়ের অভাবে এখানে বেশি লিখতে পারলাম না।একদিন সময় করে আমাদের বাসায় এসেন। আপনাকে গিটার বাজিয়ে শুনাবো।”

রাফিজাঃ দেখছেন স্যার কতবড় বেয়াদব? ওরা আমার একটা ক্লাশও করিনি।
সুমনঃ আভা কে তুমি? (রিমের দিকে তাকিয়ে)
রিমঃ না স্যার ও।(আভাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে)
সুমনঃ এই আভার কথা কি বলবো?ইনিতো সুন্দর করে খাতার পৃষ্ঠা ভরে ভালোবাসার গল্প লিখেছেন।
সায়েমঃ কি লিখছে স্যার?যদি আমাদেরটার মতো একটু কষ্ট করে পড়ে শুনাতেন।
সুমনঃ সেটা তোমার ফ্রেন্ডের থেকে শুনে নিও।(দাঁতে দাঁত চেপে) রিম কে?
রিমঃ আমি।
সুমনঃ কি ম্যডামকে রক ডান্সের প্রশিক্ষণ দিবা?
রিমঃ হ্যাঁ মানে না না স্যার।
সুমনঃ যা লিখছে রিম খাতায়।আমি পড়ে শুনাচ্ছি।
” রক ডান্স শিখতে ম্যাডাম আপনাকে বেশি কষ্ট করতে হবে না। শুধু ফাল পারলেই হইবো।এজন্য আপনাকে শুধু নিউ মার্কেট থেকে একজোড়া শক্ত দেখে কেডস জুতা কিনতে হবে। অন্য জায়গায় থেকে কিনতে পারবেন।তবে ততটা টেকসই নাও হতে পারে।
এটা পরে রোজ জোরে গান ছেড়ে ১ ঘন্টা ফাল পারবেন।তাহলেই আপনি রক ডান্স শিখতে পারবেন।”

নিবরাজ ও আইজান মুখ চেপে হাসছে।সত্যি মিহু যেমন ওর ফ্রেন্ডরা তেমন।

সুমনঃ ৫ম খাতা।আফরা বিনতে মাসুদ।
আফরাঃ ইয়েস স্যার।

সুমনঃ আফরা বিনতে মাসুদের খাতাটাও আমি পড়ে শুনাচ্ছি,” ম্যাডাম আমি একজন বিউটিশিয়ান।আমি পার্লারের সব কাজ পারি।আপনার মুখে নাকি অনেক ওয়েল।ঐটার সমাধান আমি জানি।আপনি প্রতিদিন নরমাল আটা কিংবা চালের গুঁড়া দিয়ে মুখ ধুবেন।তাহলে মুখে আর ওয়েল থাকবে না। আপনার বাম গালে যে পিম্পাল হয়েছে সেটার সমাধানও আমার জানা আছে।তবে বলবো না। আপনি যদি আমাকে পাস করিয়ে দেন তাহলে আপনার পুরো মুখ আমি ফ্রেশ করে দিবো,কথা দিলাম।”

রাফিজাঃ স্যার ৭ নাম্বার খাতা।ওদের নাটের গুরু।
সুমনঃ মেহরুন মির্জা।
মিহুঃ খাইছে রে, আমি গেছি।কেন লিখতে গেলাম এসব?খালি খাতা জমা দিলেই তো ভালো হইতো।
সুমনঃ মেহরুন মির্জা।(চিৎকার করে)
মিহুঃ জ্বি জ্বি জ্বি স্যার।(তুতলিয়ে)
সুমনঃ কি লিখেছো খাতায়?
মিহুঃ বেশি কিছু না স্যার।শুধু কিভাবে ক্লাসিকাল ডান্স করতে হয় তাই লিখছি😐।

☘️☘️☘️

প্রিন্সিপাল স্যার খাতা পড়তে শুরু করলে নিবরাজ তাকে থামিয়ে দেয়।

নিবরাজঃ আপনি না স্যার।যার খাতা সে পড়ে শোনাবে।
মিহুঃ আআআআমমমি!!!
মিহুঃ স্যার পড়ুক না।আমি নিজের প্রশংসা নিজে করতে চাই না।আমার সরম করে🙈।
সবাইঃ 😲😲
নিবরাজঃ তোমাকে পড়তে বলছি।তুমি পড়বে।
(ধমক দিয়ে)
মিহুঃ পড়ছি,এতো ধমকাচ্ছেন কেন?
নিবরাজঃ তুমি যে ভালো তাই। তাড়াতাড়ি —

মিহুঃ ” অপ্রিয় ম্যাডাম, আপনাকে আমি একটুও সহ্য করতে পারি না।তারপরেও আমি আপনাকে শিখাবো কি করে ক্লাসিক্যাল ডান্স করতে হয়।তবে এখন নয়।আমাকে পাস করিয়ে দিলে।আমি এই ডান্সে খুব ভালো। হাইস্কুলে থাকতে উপেজালা ও জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়ে ছিলাম।বিভাগে গিয়েও ভালো করেছিলাম।তবে ফাইনালে ভালো করিনি।কারণ পা কেটে গিয়েছিল।আপনি যদি আমাকে পাস করে দেন তাহলে আপনাকে আমাদের বাড়িতে দাওয়াত করে নিয়ে খাওয়াবো।সাথে ডান্স তো ফ্রি-তে শিখাবো।আপাতত এই পর্যন্ত থাক।আমার হাত ব্যাথা করতাছে।আপনি যদি আমাকে পাস করিয়ে দেন তাহলে তাহলে আমি আমার প্রশিক্ষণ শুরু করবো।তা না হলে করবো না হু হু হু।নিজ দায়িত্বে যেখান থেকে খুশি সেখান থেকে শিখে নেনগা।আমার কি😏?যদি এই কথা কোনভাবে প্রিন্সিপাল স্যারের কানে যায়। তাহলে আপনাকে আমি আমর হির(হকি স্টিক) দিয়ে মাথা ফাটিয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি করে রাখবো।টাকার কথা চিন্তা করেন না।ঐ টা আমার বাপি দিয়ে দিবে।”

রাফিজাঃ তোমাদের কি লজ্জা শরম বলতে কিছু আছে?
মিহুঃ না থাকলে ড্রেস পরছি কে🙄?
রাফিজাঃ আবার মুখে মুখে কথা বলছো?(রেগে)
মিহুঃ আপনিই তো বললেন আমাদের লজ্জা শরম বলতে কিছু আছে কিনা।লজ্জা শরম না থাকলে তো আর ড্রেস পরতাম না।
রাফিজাঃ স্যার দেখছেন কি বেয়াদব? (রেগে)
মিহুঃ সেটা আপনি আজকে জানলেন😎।

মিহু কখনো কারো সাথে এরকম বেয়াদবি করে না।কিন্তু সবার সামনে এভাবে ওদের অপমান করায় মিহু বেশ চটে আছে।তাছাড়া কুচুটে বুড়ি ম্যাডামকে তো ও একদমি সহ্য করতে পারে না।আর যাকে মিহু পছন্দ বা সহ্য করতে না পারে।তার সাথে ত্যাড়ামি করবেই।

নিবরাজঃ এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি?
মিহুঃ কোন সমস্যা নেই।
সুমনঃ তুমি কি কাউকে ভয় পাও না।
মিহুঃ মোটেও না।
রাফিজাঃ তোমার সব ফ্রেন্ড মাথা নিচু করে রেখেছে। আর তুমি টাস টাস কথা বলেই যাচ্ছো।
নিবরাজঃ ম্যাম আপনি শান্ত হোন।ওকে আমার ওপর ছেড়ে দিন।ওর ব্যবস্থা আমি করছি।ও ভয় পাবে না ওর ঘাড়ে পাবে।(রেগে দাঁতে দাঁত চেপে)

কথাগুলো বলে নিবরাজ মিহুকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।মিহু কিছুতেই যেতে চাইছিলো না। তাই সোজা ওকে কাঁধে উঠিয়ে হাঁটতে লাগলো গাড়ির দিকে।মিহুতো রাজের পিঠে ইচ্ছেমতো কিল-ঘুষি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাতে নিবরাজের কোন রিয়েকশন নেই। সে নিজের মতো হেঁটে চলছে।

#চলবে