ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব-০৫

0
661

গল্পের নামঃ- #ভালোবাসার_নতুন_প্রনয়ণ

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:05

হলরুমের দেওয়ালের সাথে লেগে আছে হূর। আর তাকে দুইদিকে দুই হাত দিয়ে আবদ্ধ করে দাড়িয়ে আছে সেই অজানা ব্যক্তি। ব্রাউন টিশার্ট মুখটা সাদা রুমালে ঢাকা, নীল রঙের চোখ জোড়া যেন অনেক কিছুই বলছে। হূরের কানে কানে ব্যক্তিটা বলে

” হূরপরি তুমি আমার একান্তই আমার। এই শ্যামলতার চোখের কোনের সেই কালো কাজল, চোখের এক একটা জল, ঠোঁটের কোনে সেই মিষ্টি হাসির মালিকটাও একান্তই আমি। জানো তো তোমার এই বাদমি রঙের চুলগুলো হাওয়াতে এলোমেলো হয়ে তোমাকে স্পর্শ করে খুব হিংসে হয় আমার। তোমার এক একটা চোখের সেই ঘনঘন পাপড়ি গুলো আমাকে প্রতিনিয়ত জ্বালিয়ে মারে। তুমি মানুষটা একান্তই আমার। আর সেখানে নীলআদ্র তোমাকে হূরপরি কেন বলবে??

হূর জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে

” যার যেটা ইচ্ছে হবে সে সেটা ডাকবে, আর আমি কোনো বস্তু না। আপনি যে ভাবে বলছেন মনে হচ্ছে আমি একটা বস্তু। আর কে আপনি?? ব্যক্তিটা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে

” তুমি কোনো বস্তু না তুমি এমন একটা মানুষ যে, যে কোনো মানুষের মন এলোমেলো করে দিতে পারে। বলেই রুমালের উপরেই হূরের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায় আর বলে

” আমার হূর পরির সাথে একদিন শুরু হবে আমাদের

#ভালোবাসার_নতুন_প্রনয়ণ। বলেই চলে যেতে চাইলে হূর ছেলেটার হাত আকড়ে ধরে। ছেলেটা পিছনে তাকিয়ে বলে

” সেদিনের মতো আজও আক্রমণ করবে? কি দরকার বলো? সময় হোক আমি নিজে দারাবো তোমার সামনে। আজ আসি।

বলেই হূরের হাত ছাড়িয়ে চলে যায়।

হূরের হুশ আসে ফোনের রিংটোনে দেখে অহি কল দিয়েছে। ক্লাস শুরু হতে আর ৫ মিনিট বাকি। হূর এইসব বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি করে উপরের দিকে যায়।

ক্লাস শেষ করে অহি,তিথি আর হূর ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে, হূর ভাবছে কিছুদিন যাবৎ তার সাথে এইসব কি হচ্ছে!! কিন্তু হঠাৎ করেই ক্যান্টিন থেকে কর্লার ধরে আবিদ কে টানতে টানতে নিয়ে আসছি এরিশ। অন্য দিকে আবির আর আকাশের হাতে হকি ইস্টিক সাথে ওদের গেং এর অনেকে।

মাঠে ফেলে আর কোনো থামাথামি নেই এরিশ এলোপাথাড়ি মারতে লাগে আকশের হাত থেকে হকি ইস্টিক নিয়ে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হূর তাড়াতাড়ি করে গিয়ে এরিশকে ধরে বলে

” কি হচ্ছে এভাবে মারছেন কেন উনাকে? কি করেছেন উনি?? এরিশ রাগে ফুসছে হূরকে ধাক্কা দিয়ে একদিকে সরিয়ে বলে।

” তোর কি? কি লাগে তোর?!! হূর বলে

“কিছু না লাগুক, কিন্তু একজনের গায়ে হাত তুলার অধিকার আপনার নেই। এরিশ হকি টা জোড়ে নিচে ফেলে হূরের দিকে আগাতে লাগে হূর তা দেখে দুই পা পিছিয়ে যায়। এরিশ বলে

” আমার বোন সহ আরো কত গুলোর মেয়ের জীবন ও নষ্ট করেছে তার কোনো হিসাব আছে?? আর শুনলাম তোকেও নাকি প্রপোজ করেছে একসেপ্ট করেছিস নাকি? এতো ভালোবাসা কেন।

অপর দিকে আবির আর আকাশ ইচ্ছে মতো মারছে আদিবকে। ক্যাম্পাসে শুধু এরিশের আর মারের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। সবাই চুপ কারো মুখে কথা নাই।

অহি কিছু বলতে চাইলে তিথি বারণ করে। হূর বলে

” ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই, আপনার যা ইচ্ছা করুন। এরিশ এক পলক হূরের দিকে তাকিয়ে পিছিয়ে যায়। আর এই এক নজরের মানে আর কেউ না বুজলেও হূর ঠিকিই বুঝতে পেরেছে এটার মানে খুব সোজা

” তোকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি।

অহি হূরের হাত ধরে বলে

” চল এখান থেকে। তিথি আর অহি বকবক করেই যাচ্ছে তাদের কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে এরিশ, আকাশ আর আবির। উপর দিকে ভয়ে শেষ হূর।

___________

সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে এরিশের জন্য হূর বাইকটা অব্দি দেখা যাচ্ছে না চলে গিয়েছে নাকি। একটু আগাতেই দেখা মিলে এরিশের মাথায় বেন্ডেজ ঠোঁটের কোনে রক্ত যমে আছে। বাইক নিয়ে এসে হূরকে উদ্দেশ্য করে বলে

” জলদি উঠ, তোকে বাসায় দিয়ে আবার আসতে হবে। হূর বলে

” ব্যাথা পেলেন কিভাবে?? এরিশ বলে তোকে যা বলেছি কর। হূর বলে

” আপনার সমস্যা হলে থাক জান আপনি। এরিশ রাগে সত্যি সত্যি চলে যায়।

আদিবকে তখন মারার পর আদিব আবার আসে তার দলবল নিয়ে পিছন থেকে এরিশকে আঘাত করে কিন্তু এরিশ, চকাশ আবির আরো অনেকে ঋিল তাদের সাথে পেরে উঠেনি। আর সেই রাগই ঝাড়ছে এরিশ হূরের উপর।

_____________

বাসায় ফিরে নিজের রুমে ফ্রেশ হয়ে বসেছে হূর সাথে মেসেজ আসে অনিকের আজকে ভার্সিটিও আসেনি। অনিকের মেসেজ দেখে হূর কল দেয়। অনিক কল রিসিভ করে একরকম কেঁদে দেয় আর বলে

” দোস্ত একটু হেল্প করবি? হূর অবাক হয়ে বলে

” কেন?? কি হয়েছে এমন লাগছে কেন তোর কন্ঠ আর ভার্সিটিও এলি না। অনিক বলে

” সকালে বাবা বাজার থেকে আসার সময় এক্সিডেন্টে হয়। এখন ডক্টর বলছে ওপরেশন করতে হবে নয়তো বাবাকে বাঁচানো যাবে না। মাও ভেঙে পরেছে। শুধু ৫০ হাজার টাকা হলেই হয়ে যায়। একটু হেল্প কর না।

হূর বলে

” আচ্ছা আচ্ছা তুই শান্তহ আমি দেখছি। হূর ধীর পায়ে নিজের বাবার রুমের দিকে যাবে তখনই দেখে সবাই একসাথে বসে বসে নিচে গল্প করছে সাথে এরিশও আছে। হূর গিয়ে তার বাবাইকে বলে

” বাবাই আমার ৫০ হাজার টাকা লাগবে আর্জেন্ট। হূরের দাদি বলে

” কেনরে মুখপুরি কি করবি আবার এত গুলো টাকা দিয়ে। সবইতো পাচ্ছিস। হূরের বাবা হালকা জোড় গলায় বলে

” মা এখানে বাবা মেয়ের কথা হচ্ছে তুমি কথা না বললেই খুশি হবো। হূরের মা বলে

” এত গুলো টাকা দিয়ে কি করবে তুমি? হূর মাথা নিচু করে বলে

” আমার লাগবে একটা ফোন কিনব তাই। হূরের বাবা বলে

” এই ব্যাপার। হূরের কাকাই আর বাবাই মিলে হূরকে টাকা দিয়ে দেয়। হূর ধন্যবাদ বলে ফোন দিয়ে অনিক কে তাদের বাসার সামনের পার্কে আসতে বলে, সবাই হূরের কথা বিশ্বাস করলেও এরিশের হয়নি।

____________

হূর তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে যায়। এরিশ সেটা দেখে হূরের পিছু পিছু যায় দেখে হূর অনিকে টাকা দিচ্ছে সেটা দেখে হাত তালি দিয়ে এরিশ বলে।

” বাহ বাহ! ফোন কিনার নাম করে বয়ফ্রেন্ড কে টাকা দিচ্ছিস। অনিক বলে

” ভাইয়া আপনি যা ভাবছেন তেমনটা না। হূর বলে

” অনিক তুই যা নয়তো লেট হয়ে যাবে। অনিক কিছু বলতে চাইলে হূর বলে

” যা। অনিক টাকা গুলো নিয়ে চলে গেলে হূর কিছু বলতে যাবে তার আগেই চড় বসিয়ে দেয় এরিশ হূরের গালে। আর বলে

” বাবাই আর কাকাই মিথ্যা কথা বললে হলেও আমাকে বললে পার পাবি না। বলেছিলাম না তোকে ওর থেকে দূরে থাকতে বাসায় চল আগে। বলেই হূরের হাত ধরে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে আসে।

হূরকে এভাবে নিয়ে আসতে দেখে হূরের কাকাই বলে

” কি হয়েছে এভাবে ওকে কোথায় থেকে নিয়ে আসছিস মাত্রই না বেরহলো। আর হূর কান্না করছে কেন? এরিশ রাগে চিৎকার দিয়ে বলে

” সব তোমাদের আদরের নমুনা। বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করে টাকা দিতে গিয়েছিল। সবাই অবাক মৃধা বলে

” সকালে তো আমাকে বললে এখন?? হূরের দিদুন বলে

” দেখিছ তো আমার পরিবারের মানইজ্জত ডুবাতে এসেছে এই মুখপরি। এই টাকা গুলি কি তোর বাপের ?? হূরের বাবাই বলে

” সবাই চুপ। হূর মামুনি কি হয়েছে সত্যি করে বলো। হূরের মা এসে হূরের হাত ধরে এক পাশে টেনে নিয়ে বলে

” কি শুরু করেছ তুমি? এই সবের মানে কি?? এরিশের মা এসে হূরের মা কে ধমক দিয়ে বলে

” কি করছিস? ভাইয়া কথা বলছে না। হূর এবার না পেরে কেঁদেই বলে

” অনেক হয়েছে। আমাকে তো একটু বলতে দিবে! হ্যা৷ আমি অনিকের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম টাকাও দিয়েছি কিন্তু সেটা ওর প্রয়োজন ছিল। ওর বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে টাকার প্রয়োজন ছিল তাই দিয়েছি। আর ও আমাকে দিয়ে দিত টাকাটা আমি জানি৷ তাই বলেছি আমার লাগবে। হ্যা জানি সত্যি বললে হয়তো সমস্যা হতো না। তার জন্য সরি। আর এই বাড়িতে কেন পরে আছি জানতে চাও? শুধু একটা পরিবারের জন্য। নিজের মায়ের একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। টাকা পয়সার কথা আসলে আমার বাবা আমার জন্য যা রেখে গিয়েছে অনেক। আমাকে নিয়ে এতো সমস্যা তাহলে আমিই চলে যাচ্ছি।

বলেই বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় হূর। এরিশ তো ইস্তব্দ হয়ে আছে। এরিশের মা এরিশকে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে বলে

” তোরা ভাই বোন আমাকে শান্তি দিবি না। তোদের জন্য মেয়েটা এইভাবে বেড়িয়ে গেলো। এরিশ কাউকে কিছু না বলেই দৌড়ে বাইরে চলে যায় হূরকে খুঁজতে…. সাথে সাথে বের হয় হূরের বাবা, চাচাও

চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে আজ রিচেক হয়নি