ভালোবাসার নতুন প্রনয়ণ পর্ব-০৬

0
616

গল্পের নামঃ- #ভালোবাসার_নতুন_প্রনয়ণ

লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)

part:06

অন্ধকার হয়ে এসেছে৷ রাস্তার পাশের লেম্পের আলোয় হাটছে হূর। আর ভাবছে সে এখন কোথায় যাবে? আর যা হোক ঐ বাড়িতে আর ফিরবে না। চোখের কেনো জমেছে একরাশ অভিমান আর জল।

সামনে যেতেই দেখা মিলে একটা ছোট চা বিস্কিটের দোকান৷ সেখান একটা ৫/৬ বছরের বাচ্চাকে তার মা বকছে, এতো সন্ধ্যা করে বাসায় ফিরেছে তাই।৷

হূর সেদিকে একপলক তাকিয়ে নিজের মতো হাটতে লাগে। বেশি দূর হয়নি বাসা থেকে যে চলে এসেছে হয়তো মিনিটে ৪/৫।

পৃথিবীর নিয়ম গুলে কেমন অদ্ভুত ,সে নিয়ম গুলোও আরেক নিয়মের সাথে বাঁধা। যেই জিনিসটা তুমি খুব করে চাইবে সেটা তুমি কখনোই পাবে না। হূরের ক্ষেত্রেও তাই, হূর তো এতো কিছুর বিনময় একটা সুন্দর পরিবার চেয়েছিল।

কিছু দূর যেতেই দৌড়ে এসে হূরকে ধরে কেউ। অন্ধকারে আচমকা এমন হওয়াতে হূর অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে সেই ব্যক্তির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় তাকে। লাইটের আলোতে হূর তাকিয়ে দেখে এরিশ। এরিশকে দেখে হূর দৌড় দেয়। কারণ সে আর ঐ বাড়িতে যাবে না। এরিশও হূরের পিছু পিছু দৌড়
। এরিশ বলছে

” এই হূর দাঁড়া। হূর থামতে বলছি। হূর নিজের চোখ মুছে বলে

” না আমি যাবো না আপনার সাথে। থাকুন আপনারা সুখে৷ আমার মতো অশান্তিকে আর দেখতে হবে না চলে যান। এরিশ হূরের অনেকটা কাছে চলে এসেছে হূূরকে উদ্দেশ্য করে এরিশ বলে

” ভালে মতো বলছি থামতে, আমি ধরলে খবর আছে। হূর থেমে যায় আর এরিশের দিকে তাকিয়ে বলে

” কি করবেন? কি করবেন আপনি?? ভয় পাই আপনাকে আমি?? জাস্ট সম্মান করি নয়তো আপনার প্রতিটা কথার জবাব আমার কাছে আছে।

এরিশ বলে

” বিড়াল থেকে বাঘিনী। হূর বলে

” যা ইচ্ছা তাই আমি। যান আমার পিছু কেন এসেছেন। এরিশ হূরের হাত ধরে বলে

” বাসায় চল তারপর কথা হবে। হূর এরিশকে তার হাত ছাড়ার জন্য বলছে

” ছাড়ুন আমাকে আমি থাকবো না আপনাদের সাথে। এরিশ হূরকে এক টানে নিজের কাছে এনে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে ফেলে। হূর তখনো নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হঠাৎ করে এরিশের দিকে তাকিয়ে হূর চুপ করে যায়। খুব শান্ত কন্ঠে হূর বলে

” ছাড়ুন আমাকে। এরিশ হূরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে

” না। হূর এবার মাথা নিচু করে কেঁদে দেয় হূর বলে

” ছাড়ুন আমি চলে যাবো।

এরিশ খুব ধীর কন্ঠে বলে

” সরি। হূর তখনো কাঁদছে।এরিশ হূরের মাথার সাথে নিজের মাথা লাগিয়ে বলে

” সরি বলেছি তো। আর কাঁদে না বাসায় চল। হূর বলে

” আমি যাবো না। এরিশ কিছু বলতে যাবে তখনই, এরিশের বাবা, আর হূরের বাবা গাড়ি নিয়ে চলে আসে। এরিশ হূরের বাবাকে দেখে বলে

” চাচ্চু তোমার মেয়ে বাসায় যাবে না। আমাকে দেখে দৌড় দিয়েছে তাই ধরে রেখেছি।

হূরের বাবা গাড়ি থেকে নামে আর এরিশও হূরকে ছেড়ে দেয়। হূরের বাবা গাড়ি থেকে নামে হূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে আসে।

হূরকে দেখে এরিশের মা ছুটে আসে। আর হূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

” পাজি মেয়ে জানিস কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এতো রাগ কিসের? হূরের মা দূরে এক কোনে হূরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হূরের দিদুন বলে

” এতো রাগ কেন? মেয়েদের এতো রাগ থাকতে নাই। এত বড় মেয়ে কান্ড দেখ। বুদ্ধি নাই?

বলেই নিজের মতো পান চিবুতে লাগে। হূর কাউকে কিছু না বলে তার মার দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। আর এরিশের মা এরিশকে উদ্দেশ্য করে বলে

” তোকে যদি আর কোনো দিন হূরের সাথে লাগতে দেখেছি তো দেখিস৷ হূরের বাবা বলে

” আজকে তোমাদের জন্য আমার মেয়ে এমন কাজ করেছে। যদি আমার আর আমার মেয়ের থেকে কারো সমস্যা হলে সে বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে পারো। সেটা এবার যেই হোক না কেন । এরিশের বাবা বলে

“আর আজকের পর যাকে দেখব হূরের সাথে,খারাপ ব্যবহার করতে তার খবর আছে। হূরও আমাদের পরিবারের একজন৷ আমাদের পরিবারেরই মেয়ে। আর এরিশ তোকেও বলছি। মৃধার আম্মু দুই কাপ চা করে দাও মাথা ধরেছে

বলেই এরিশের বাবা আর হূরের বাবা চলে যায়।

_____________

অপর দিকে নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা ছাঁদে চলে আসে হূর। দিন শেষে এখানেই ফিরতে হলো। সে যে বাধ্য। কারণ একটাই তার যাওয়ার জায়গা নেই। ঠান্ডা ঠান্ডা একটা আমেজে। হূর চুপচাপ নিজের মতো দোলনায় গিয়ে বসে পরে। চোখ দুটোও আজ খুব ক্লান্ত। চোখ গুলো বুজে ফেলে হূর। ইচ্ছে করছে না আর এই আলোটা একটু অন্ধকার হলে ভালো হয়। তাই আবার উঠে ছাদের লাইট ওফ করতে যাবে তখনই হূর দেখে এরিশ। ছাঁদে এক সাইডে দাড়িয়ে সিগারেট টানছে। এর জন্যই হয়তো ছাদের লাইট ওন। এরিশ পিছনে তাকিয়ে দেখে হূর। হূরকে দেখে এরিশ সিগারেট ফেলে দেয় আর বলে

” তুই এখন এখানে? হূর এরিশের কোনো কথার জবাব না দিয়ে নিচে চলে আসে। আসলে সত্যি কথা বলতে বর্তমানে এরিশের সাথে কোনো ভেজাল করতে চাচ্ছে না হূর।

রুমে এসে গায়ে চাদর টেনে নিয়ে শুয়ে পরে লাইটা ওফ করে। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। হঠাৎ করেই হূরের রুমে আসে কেউ। হূরের মা এসেছে। এসে দেখে হূর ঘুমিয়ে গিয়েছে। লাইটের আলোর কারণে, এতে হূরের একটু সমস্যা হয় আর অন্য পাশে ঘুরিয়ে ঘুমিয়ে পরে। হূরের মা হূরের পাশে বসে গায়ের চাদরটা ভালো মতো টেনে দেয়। আর কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। হূরের বাবা তখন তার রুমের দিকে যাচ্ছিল হূরের মাকে দেখে থমকে যায়। মা মেয়েকে দেখে এক গাল হেসে সে চলে যায়। কিছু সময় পর হূরের মাও রুমের লাইট ওফ করে চলে যায়।

________________

সকাল সকাল আজ আর নাশতার টেবিলে আসেনি হূর। হূর তার বাবা আর কাকাইকে বিদায় দিয়ে সোজা ভার্সিটির জন্য বেড়িয়ে যায়। এরিশের মা কিছু মুখে দিতে বললে হূর বলে, সে ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিবে। কেউ কিছু বলে না।

ভার্সিতে পৌঁছে সোজা লাইব্রেরীতে চলে আসে
। খাওয়ার আর ইচ্ছে নেই । আর নিজের মতো একটা বই খুজে পড়তে লাগে হূর। তখনই অহি এসে চেয়ার টেনে বসে পরে হূরের পাশে। হূর একপলক তাকিয়ে আবার মন দেয় নিজের পড়ায়। হূরকে দেখে অহি বলে

” আর কিছু দিন পর চশমা নিতে হবে। ভাই তোর ফোন আছে না ফোন চালা। এত বই কেন? অনিক ঠিকিই বলে তুই এ্যাবনরমাল হয়ে যাচ্ছিস। আচ্ছা ২ দিন যাবৎ অনিক আসছে না কেন?? হূর বলে

” ওর বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে, তিথি কোথায়? অহি বলে

” কি বলিস কবে? কিভাবে?? হূর বলে

” কালকে বলেছে। দেখতে যাবি আঙ্কেল কে?? অহি বলে।

” আচ্ছা আগে তিথি আসুক।কি ভাবে কি হলো এটা বল। তারপর হূর অহিকে সব বলে

তিথি আসলে তিনজনই বেরিয়ে পরে হসপিটালের উদ্দেশ্য। অহি কিছু ফল কিনে নেয়। হূর আজ প্রতিদিনের তোলনায় খুবই কম কথা বলছে। হসপিটালে গিয়ে অনিক কে ফোন দিতেই অনিক নিচে

আসে আর হূরকে দেখে খুশিতে হাত ধরে বলে

” দোস্ত তোর জন্য বাবা ঠিক হয়েছে ধন্যবাদ। হূর নিজের হাত অনিকের থেকে ছাড়িয়ে বলে

” আগে আঙ্কেলর সাথে দেখা করব চল।

__________

অনিকের বাবাকে দেখে এসে ভার্সিটি শেষ করে দাড়িয়ে আছে হূর। একটু পর নাকি ড্রাইভার চাচ্চু আসবে। তখনই পিছন থেকে কেউ হূরের চোখ বাঁধে

চলবে..