ভালোবাসতে চাই পর্ব-০১

0
1482

#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ১
#ফারজানা_আক্তার

বাসর ঘরে ঢুকতেই দেখি বউ আমার পুরাই বেঁকে গেছে, চুড়ি গয়না শাড়ি সব খুলে বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে, বিয়ের ভারি ভারি শাড়ি গয়না চেঞ্জ করে একটা নরমাল সুতির জামা পরেছে, দরজা খোলার শব্দ পেয়ে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি ভয়ে ঢুক গিললাম, ভয়ংকর লাগছে বেশ, বিয়ের আগে তো এই রুপ দেখিনি রিক্তার, তবে বিয়ের আগে দেখা বা কথা বলার সুযোগও হয়নি, মা বাবার পছন্দে বিয়েটা করেছি। বিয়ের আগে শুধু একবার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো।
হ্যাঁ রিক্তা আমার সদ্য বিয়ে করা বউ। কিন্তু বুঝতে পারছিনা রিক্তা এমন কেন করছে।

~এই যে মিস্টার শিশির আহমেদ হাম্বার মতো হা হয়ে দেখছন কি? এর আগে কি আর কেনো মেয়ে দেখেননি?
চোখ বড় বড় করে বলে রিক্তা।

~মেয়ে দেখেছি কিন্তু পরি দেখিনি
আনমনা হয়ে কথাটি বলে শিশির।
কারণ রিক্তাকে অনিন্দ্য সুন্দর লাগছে আকাশি রংয়ের ড্রেসটাতে।

রিক্তা বেশ বিরক্তি হয়,,
~ যত্তসব ঢং হুঁ,, কান খুলে শুনে রাখুন আমি এই বিয়ে মানিনা মানিনা মানিনা!!!
একপ্রকার চিল্লিয়ে কথাগুলো বলল রিক্তা।

শিশির এতক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো অবাক হয়ে। হঠাৎ রিক্তার এমন কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা শিশির। শিশির দৌড়ে গিয়ে এক হাত দিয়ে রিক্তার মুখ চেপে ধরে আর অন্য হাত শিশিরের অজান্তেই রিক্তার কোমরে চলে যায়।

রিক্তা উম্ উম্ উম্ করতেছে আর শরীরের সব শক্তি দিয়ে শিশির কে ধাক্কাচ্ছে আর সাথে কিল-ঘুষি তো আছেই।
কিন্তু শিশিরকে বিন্দুমাত্রও নাড়াতে পারেনি রিক্তার কিল-ঘুষি বা ধাক্কানি।

~এই মেয়ে এই একদম চেঁচামেচি করবেনা, ইডিয়ট একটা।।
এটা বলেই শিশির রিক্তার মুখ ছেড়ে দিয়ে দুই পা পেঁছনে সরে দাঁড়ালো

রিক্তা ছারা পেয়ে চোখ বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। যেন দম বন্ধ হয়ে গেছিলো এমন মনে হচ্ছে রিক্তার। চোখ খুলেই আগুনের দৃষ্টিতে তাকালো শিশিরের দিকে।

~এই মেয়ে তোমার কি কোনো কমনসেন্স নেই? এভাবে কেউ চিল্লাই? কেউ শুনলে তো অন্যকিছু ভাববে।।
শক্ত গলায় বলে শিশির।

~দেখুন পরিবারের চাপে পরে বিয়েটা করেছি আমি, আমি মানিনা এই বিয়ে। আপনি প্লিজ দূরে থাকবেন আমার থেকে।
মুখের উপর টাস করে বলে দেয় রিক্তা।

~দূরে থাকার জন্য তো বিয়েটা করিনি আমি সোনাবউ।
দুষ্টু হেসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে শিশির।

রিক্তা একটু ভয় পেয়ে যায়। কারণ রিক্তা চাইনা আজ রাতেই মারাত্মক কিছু হোক। তাই এই আচরণ। এভাবে হুট করে বিয়েটা হয়ে গেলো যে রিক্তা কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা রিক্তা এই বিয়ের জন্য। হঠাৎ করে এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়েটা হয়ে গেছে তার আব্বুর খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর একমাত্র ছেলের সাথে। শিশির এতবছর লন্ডন থাকার কারণে ওরা কেউ কাউকে চিনেনা। কিন্তু রিক্তা এর আগেও অনেকবার এসেছে এই বাসায়।

~বললেই হলো,, আপনি কিছু করতে চাইলেই আমি চিৎকার করবো, তখন আপনার মানসম্মান হাবুডুবু খাবে।
কথাটি বলেই বাঁকা হাসে রিক্তা।

শিশির কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে বিছানা থেকে সব শাড়ি গয়না ফ্লোরে ফেলে দিয়ে একপাশ হয়ে শুয়ে পরে। এই বাসর রাত নিয়ে কতশত স্বপ্ন সাজিয়েছিলো, সব মাটি করে দিলো এই মেয়ে। শিশির চোখ বন্ধ করতেই রিক্তা মলিন মুখে বলে “আমি কোথায় ঘুমাবো?

শিশির বন্ধ চোখেই দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে ” আমার মাথায়, এতো বড় খাট চোখে দেখোনা? নাকি কানা?

~তাহলে আপনি বিছানা ছেড়ে দিন, আমার কারো সাথে বেড শেয়ার করার অভ্যাস নেই।

~কী????? কি বললে তুমি? আমার বিছানা থেকে আমাকেই তারাচ্ছো? বেয়াদব মেয়ে
রিক্তার দিকে ঘুরে চোখ বড় বড় করে বলে শিশির।

রিক্তা ফ্লোর থেকে সব জামাকাপড় তুলে নেই। তারপর শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে “সহজভাবে বলছি বিছানা ছেড়ে দিন, নয়তো চিৎকার করবো কিন্তু আমি।

উফ এ তো মহা বিপদে পরেছি, কি করবো এখন? আমি তো বেড ছাড়া ঘুমাতে পারিনা।

~ নাহ, আমি বেড ছাড়া ঘুমাতে পারিনা। মাঝখানে কোলবালিশ দিচ্ছি, ঘুমিয়ে পরো, রাত হয়েছে অনেক। বিশ্বাস রাখতে পারো আমার উপর।
শোয়া থেকে উঠে খাটের ঠিক মাঝ বরাবর কোল বালিশটা দিতে দিতে বলে শিশির।
কথাগুলেো বলে শিশির আবার অপরপাশ হয়ে শোয়ে পরে।

রিক্তা শাড়ি গয়নাগুলো বুকে জড়িয়ে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাসর রাত নিয়ে তারও হাজারো স্বপ্ন ছিলো কিন্তু সে চাই অচেনা ছেলেটাকে আগে ভালো করে চিনতে জানতে, সে চাই শিশির ধীরে ধীরে তার প্রেমে পরুক, তার মায়াজালে বন্দি হোক, তাকে প্রপোজ করুক কোনো এক চাঁদনি রাতে একগুচ্ছ গোলাপ হাতে। সে চাই কেউ একজন কানের কাছে এসে বলুক “ভালোবাসতে চাই”।
স্বামীর কাছে এসব আবদার করবে বলেই এতো ছেলের প্রপোজাল পেয়েও সে প্রেম করেনি কভু।

রিক্তা শাড়ি গয়নাগুলো কাবাডে রেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে নিলেই শিশির লাইট অফ করে দেয়।

রিক্তা চিৎকার দিয়ে এক লাফে বিছানায় উঠে অন্ধকারে শিশিরকে জড়িয়ে ধরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে জোরে জোরে। শিশির চমকে উঠে হঠাৎ। দ্রুত বাত্বি জ্বালায় সে।
আলো আসতেই রিক্তা এক প্রকার ছিটকে দূরে সরে যায়। লজ্জায় মাথা নিচু করে নেই রিক্তা।

শিশির শান্তভাবে জিজ্ঞেস করে “রিক্তা কি হয়েছে তোমার?
~আ আসলে অন্ধকার খু খুব ভয় লাগে আমার।
থেমে থেমে বলে রিক্তা।

~তো কি সারা রাত এভাবে বাত্বি জ্বালিয়ে রাখবো নাকি?
বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে শিশির।

~হু

~পাগলামি করো না তো, লাইট জ্বালিয়ে ঘুম আসেনা আমার।

রিক্তা কিছু না বলে মাঝখানে কোলবালিশ টা ঠিক করে অপরপাশ হয়ে শুয়ে যায়। সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ বুজতেই ঘুমের রাজা ভর করে চোখের পাতায়।

শিশির পরেছে মহা জ্বালায়, কোথায় স্বপ্ন দেখেছিলাম একটা মিষ্টি বউ এর কিন্তু ভাগ্যে জুটলো এই রাক্ষসী। ধুর ভাল্লাগেনা।

এসব ভাবছে আর মনেমনে মা বাবাকে প্রচুর বকা দিচ্ছে। কেন এই ইডিয়ট কে আমার গলায় জুলায় দিলেন উনারা, কেনওওওও।

রাত তখন ৩টা ১৫। শিশিরের ঘুম আসছেনা কিছুতেই, এপাশ ওপাশ করেই যাচ্ছে শুধু। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করে রিক্তা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সুযোগ বুঝে আসতে করে লাইট অফ করে দেয় শিশির। তারপর আরাম করে ঘুমিয়ে পরে।



সকালে শিশিরের ঘুম ভাঙ্গতেই পাশে তাকিয়ে দেখে রিক্তা নেই। রিক্তা যেখানে ঘুমিয়েছিল সেই জায়গাটা একদম পরিপাটি, মনেই হচ্ছে না যে রাতে এখানে কেউ ঘুমিয়েছিলো। এটা কিভাবে সম্ভব? তাহলে কি________

চলবে।