ভালোবাসতে চাই পর্ব-০২

0
784

#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ২
#ফারজানা_আক্তার

কালকেই বিয়ে করলাম আজকেই বউ গায়েব, কি করে হলো, বিয়েটা স্বপ্ন ছিলোনা তো
শিশির দুই হাত মাথার নিচে রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে ভাবছে এসব। হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজার আওয়াজে ঘোর কাটে শিশিরের।

শিশির তাকাতেই দেখে নীল পাড়ের লাল টুকটুকে শাড়ি পরে কুচি ঠিক করতে করতে রিক্তা বের হয়েছে ওয়াশরুম থেকে। শিশির শোয়া থেকে উঠে বসে, মাতাল করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিক্তার দিকে।

রিক্তা বেশ বিরক্ত হচ্ছে। সে শাড়ি ঠিক করতে ব্যাস্ত। শিশির ধীরে ধীরে রিক্তার দিকে এগুতে থাকে।
রিক্তা ঢুক গিলে

দেখুন সামনে এগুবেননা একদম,
থেমে বলে রিক্তা।

রিক্তার কথার আওয়াজটা শিশিরের কান অবদি পৌঁছায়নি। রিক্তা এক পা দু পা করে পেঁছনে যেতে যেতে দেওয়ালের সাথে লেগে যায়। শিশির আনমনা হয়ে এক হাতে রিক্তার কোমর জড়িয়ে অন্য হাত দিয়ে কপালে গালে লেপ্টে থাকা ভেজা চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে খুব যত্ন করে। শিশির মাতাল হয়ে ধীরে ধীরে রিক্তার ওষ্ঠদয়ের কাছে নিজের ওষ্ঠ নিয়ে যাচ্ছে।

শিশিরের স্পর্শে রিক্তা জমে বরফ। মুখ দিয়ে যেন কোনো কথায় বের হচ্ছে না ওর। শিশির আরেকটু কাছে টেনে নিতেই রিক্তা কেঁপে উঠে। হার্ট লাফাচ্ছে, ঠোঁট কাঁপছে, নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছে।

রিক্তা হুট করে শিশিরকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে যায়। শিশির রাগে লাল হয়ে যায়। চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হবে। রাগ কন্ট্রোল করে রিক্তাকে কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দেয়, রিক্তা ভয়ে ছিটকে উঠে।



রিক্তা নিচে গিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। রান্না ঘরে শাশুড়ীকে নাস্তা বানাতে দেখে দ্রুত এগিয়ে গেলো।

~আসসালামু আলাইকুম।
~ওয়ালাইকুম আসসালাম, মা নতুন জায়গায় ঘুম কেমন হয়েছে?
-জি আন্টি ভালো হয়েছে। আঙ্কেল কোথায়?
~ওই মেয়ে আন্টি আঙ্কেল কি হ্যাঁ, আগে যা ডাকার ডেকেছো কিন্তু এখন থেকে মা বাবা ডাকবে, বুঝেছো?
শক্ত গলায় বলল আফিয়া বেগম।

রিক্তা হঠাৎ ভরকে যায়।
~স সরি সরি আন্টি, মানে আম্মু

হু হু করে হেসে উঠলো আফিয়া বেগম।
রিক্তা একটু লজ্জা পেলো।

~আমাকেও একটা কাজ দিন মা

আফিয়া বেগম মুচকি হেসে রিক্তার হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বলে যাও শিশির কে কফি টা দিয়ে আসো। সকালে কফি না পেলে চেঁচামেচি শুরু করে দিবে আবার, ছেলেটার অভ্যাস বড্ড খারাপ হয়েছে।

রিক্তা মুচকি হাসে।
কফি নিয়ে দরজার সামনে যেতেই রিক্তা থেমে যায় হঠাৎ। একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায় রিক্তার মাথায়।
শুনেছি এঁটো খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে কিন্তু আমাদের মধ্যে তো এখনো ভালোবাসার ফুল ফোটেনি, থাক এক চুমুক খেয়ে দেখি, ভালোবাসা না বাড়লেও জন্ম তো নিতে পারে হি হি হি।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একটা জোরে শ্বাস নিয়ে রুমে ঢুকে, রুমে পা রাখতেই চিৎকার দিয়ে চোখে হাত দিয়ে পেঁছনে ঘুরে যায় রিক্তা।

শিশির অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ বড় বড় করে তাকায় রিক্তার দিকে।

~ইডিয়ট কথায় কথায় এভাবে চিল্লাও কেন?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে শিশির।

রিক্তা এখনো চোখে হাত দিয়ে পেঁছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে, মিনমিনিয়ে বলে আপনি খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন, ছি ছি

~ওই একদম চুপ। আমার রুমে আমি যেভাবে ইচ্ছা থাকবো তাতে তোমার কি হ্যাঁ? এতোই যখন লজ্জা তবে দরজায় নক করে আসোনি কেন? আজব
কথাগুলো বলতে বলতে শিশির কালো রংয়ের পাতলা একটা টিশার্ট পরে নেই।

~এই রুম এখন আমারো, আপনার একার নয়, হুঁ!

~ঝগড়াটে বান্দর

~কি বললেন????
শিশিরের দিকে ঘুরে এক হাত কোমরে রেখে বলে, অন্য হাতে কফির মগ।

~যা শুনেছো তাই বলেছি। কফি দাও,
হাত এগিয়ে দিয়ে বলে।
রিক্তা হাত এগিয়ে কফির মগ শিশিরের হাতে দিয়ে প্রশ্ন করে আপনি এমন কেন?

~কেমন?
ভ্রু কুঁচকে বলে শিশির।
~কেমন যেন,
ডান হাত গালে রেখে ভাবনার জগতে গিয়ে বলে রিক্তা।

~তোমার মাথা। যাও আম্মুকে সাহায্য করো নাস্তা বানাতে।
খাটে বসতে বসতে বলল শিশির। এক হাতে বই আর অন্য হাতে কফির মগ নিয়ে বসে আছে শিশির। রিক্তা চলে যাচ্ছিলো আবার কি যেন মনে করে পেঁছনে তাকালো, মুগ্ধ নয়নে শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে, চোখের পলক পরছেনা, কালো টিশার্টে অন্যরকম ভালো লাগছে শিশির কে। বাবরিকাটা চুল, ফর্সা গায়ের রং, মায়বী চেহেরা, খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে শিশিরকে। চোখ ফেরাতে পারছেনা রিক্তা।

এতক্ষণে শিশিরের চোখ পড়লো রিক্তার দিকে, শিশির চমকে উঠলো রিক্তার চাহনি দেখে।
বই বালিশের উপড় রেখে আর কফির মগটা পাশে থাকা চেয়ারের উপড় রেখে আগাতে লাগলো রিক্তার দিকে।

সামনে গিয়েই রিক্তার ডান গালে একটা চুমু দিয়ে দিলো, রিক্তা হঠাৎ ছিটকে পরলো, শিশির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে আর হাসছে।

~আ আপনি একটা লুচুর বস্তা,
চোখ বড় বড় করে বলে রিক্তা।

~লুচু যদি আমি হয় তবে তুমি কেন এতক্ষণ লুচ্চির মতো চাহনি নিয়ে দেখছিলে আমায়?
চাপা হেসে বলে শিশির।
বলেই শিশির খাটে গিয়ে পায়ের উপর পা দিয়ে বসে।

রিক্তা রেগে যায়, হনহনিয়ে এগিয়ে যায় শিশিরের দিকে, শিশিরকে কিছু বলবে এমন সময় দরজার বাইরে থেকে এক সার্ভেন্ট ছোট সাহেব বলে ডাক দিল নাস্তা করার জন্য নিচে যেতে। শিশির এবার জোরে জোরে হাসতে হাসতে নিচে চলে গেলো আর রিক্তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাগে লালনীল হচ্ছে। ইতর তুই লুচ্চা তোর বউ লুচ্চা, ধ্যাৎ বউ তো আমি, তোর, তোর গফ লুচ্চা
আইয়োওওওওও এই লুচ্চাটার গফও আছে। থাকবেই বা না কেন, লন্ডন কি ঢংগি মেয়ের অভাব আছে নাকি? আজকেই আম্মু আব্বুকে বলবো, নাহ নাহ আম্মু আব্বুকে বলার ভয় দেখাবো হিহিহি।

নিজে নিজে কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব বিড়বিড় করতেছিলো। আবার সার্ভেন্ট এসে ডাক দিলে নিচে যায় নাস্তা করতে।



নাস্তার টেবিলে বসে চুপচাপ নাস্তা করা শুরু করে সবাই, শিশিরের বাবা(নুরুল ইসলাম) রুটি মুখে দিতে দিতে বলে মা রিক্তা নতুন জায়গায় কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো তোমার?

~নাহ আব্বু, আলহামদুলিল্লাহ যেমন পরিবার চেয়েছি ঠিক তেমন একটা মিষ্টি পরিবার পেয়েছি, একটা মেয়ে এর চেয়ে বেশি আর কি বা চাই।

রিক্তার কথাগুলো শুনে নুরুল ইসলাম এর মন ভরে গেছে। তিনি মুচকি হাসলেন। বউ মা পেয়েছি তবে মনের মতো।

ডাইল পেয়েছে, নিজের স্বামীকেও এখনো আপন করে নিতে পারেনি, এখন ঢং করা হচ্ছে আব্বু আম্মুর সামনে, নাটকবাজ।



শিশির তৈরি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য। রিক্তা এসে উঁকি মারে। শিশির আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে টাই পরতেছিলো। রিক্তা এসে পা ঝুলিয়ে খাটে বসে আস্তে করে। শিশির কিছু বলছেনা দেখে নিজেই বলে “লন্ডন আপনার কয়টা গফ আছে বলে দিবো আব্বু আম্মু কে আমি।
শিশির চোখ বড় বড় করে তাকায় রিক্তার দিকে। রিক্তা বসা থেকে উঠে দৌড় লাগাতেই _____

#চলবে