ভালোবাসতে চাই পর্ব-১০

0
568

#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ১০
#ফারজানা_আক্তার

~থেমে গেলেন কেন?বলেন, কল কাটলেন কেন? কে ছিলো শুনি ফোনের ওপাশে?
কোমরে হাত দিয়ে কটমট করে বলে রিক্তা।

শিশির জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বলে কেন বলবো? তুমি তো এই বিয়ে মানই না, তবে কোন অধিকারে জিজ্ঞেস করছো এসব? আর হ্যাঁ তোমার বয়ফ্রেন্ড আসবেনা বুঝি দেখতে তোমায়।
কথা ঘুরানোর জন্য অন্য টপিক তুলে দিলো শিশির, সে জানে এমন কথায় রিক্তা বেশ রেগে যাবে।
রিক্তা রাগলেও কোনো উত্তর দিলোনা সে, ইচ্ছে করছে এই শুঁটকির বাঁচ্চাকে টুস করে একটা চিমটি কেটে দৌড় দিতে, কিন্তু দৌড় দিলে তো শিশির ধরে ফেলে তাই এই রিস্ক নিচ্ছেনা রিক্তা,, বেলকিনিতে একবার এদিক একবার সেদিক হাঁটছে রিক্তা, শিশির চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। আবার হাসিও পাচ্ছে রিক্তার পায়চারি দেখে।

ধুর বাবা
বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে রিক্তা।
~কি হয়েছে আধুরে বউটার?
দুষ্টু কন্ঠে বলে শিশির।
থেমে যায় রিক্তা, শিশিরের দিকে তাকায়,
~সব, সব আপনার জন্য হয়েছে, আপনি সবসময় বাঁকা কথা বলেন। আর আমার রাগ তুলে দেন, বুঝলেন
~ বাঁকা কথা কই, সত্যি কথাই তো বললাম।
~ ধ্যাৎতেরিকি,,, ত্যারার গুষ্টি
এটা বলেই হনহন করে হেটে চলে যায় রিক্তা। শিশির হা হয়ে তাকিয়ে আছে রিক্তার যাওয়ার দিকে।
ত্যারা কথা কি বললাম আবার? অদ্ভুত এক মেয়ে। এটা বলেই শিশির ফোনটা হাতে নেই। নিলিকে একটা মেসেজ করে বলে দেয় পরে কথা বলবে।



রাত সাড়ে ১০টা, খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে মোটামুটি, রিক্তা খাবার মুখে দিবে তখনই ফিসফিস করে শিশির বলে আমার শুঁটকি ভাজা কই?
শুঁটকির নামটা ডিলিট হয়না কেন রে তোর মাথা থেকে, মনে মনে বলে রিক্তা।
শিশির মুখ টিপে হাসে, ইতিমধ্যেই সে বুঝে গেছে যে শুঁটকি রিক্তার মোটেও পছন্দ নয়, নিশ্চয়ই এখন মনে মনে হাজার বকা দিচ্ছে তাকে।

রিক্তা এক লোকমা ভাত মুখে পুরে দিয়ে বলে আম্মু শুঁটকি ভাজি করতে বলেছিলাম তোমায়, করেছো?
~ও হ্যাঁ করেছি, একটু বসো বাবা আনতেছি আমি।
শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে রেহেনা। কিচেনের দিকে পা বাড়ায় রেহেনা শুঁটকি ভাজা আনার জন্য।

শিশির মুচকি হাসে, রিক্তা আঁড়চোখে তাকাই।
শিশির তৃপ্তির সাথে শুঁটকি দিয়ে ভাত খাচ্ছে, রিক্তা মাঝে মাঝে ভেংচি কাটছে।।



শিশির বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে শিশির, রিক্তা রুমে এসে দরজা আটকাতে যাবে তখনই রুপা শান্তা রিনা সীমা শাহীন সবাই এসে ফট করে রুমে ঢুকে বিছানায় গিয়ে শিশিরের পাশে বসে যায়, শিশির চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে শালি শালারা হাজির,, উঠে বসে শিশির,, আর দরজায় নাক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিক্তা।

ওই কি হচ্ছে এসব? দেখ খুব ক্লান্ত আমি, যা সবাই নিজ নিজ রুমে যাহ।
ঝাঁঝালো গলায় বলে রিক্তা।

ভরকে যায় সবাই। অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় শিশিরের দিকে।

এমন করছো কেন? থাকুক না ওরা, কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে যাবে।
রিক্তার দিকে তাকিয়ে বলে শিশির।

নাক ফুলাচ্ছে রিক্তা। ঠাস করে কাবাড খুলে একটা ডাইরি আর পাশে থাকা টেবিলের উপর থেকে একটা কলম নিয়ে চলে যায় রিক্তা বেলকনিতে। হা হয়ে থাকিয়ে আছে শিশির। এই ভালো তো এই রাগ, বুঝতে পারছেনা শিশির রিক্তাকে, এই বিয়ে মানেনা আবার ওর থেকে দূরে যেতেও চাইনা, অদ্ভুত এক মায়ায় জড়াচ্ছে শিশিরকে সে।



জিজু বাসর রাতের গল্প শোনাও, আমরাও কিছু শিখতে চাই।
চোখ টিপ মেরে বলে শান্তা, শান্তা সবার থেকে বেশি দুষ্টু শালা শালিদের দলের মধ্যে।
শিশির ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়, এ আবার কেমন আবদার, কি বলবো এখন? বাসর রাতের গল্প যে আমি নিজেও জানিনা।

~জিজু বলো না।
রুপা বলে।
~ওল্লে জিজু তো লজ্জায় কুটিকুটি, শান্তা বলে।
রিনা আর সীমা শাহীন মুখ চেপে হাসছে।

এবার সত্যিই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে শিশির।
~আসলে হয়েছে কি, বাসর রাতের গল্প…….
~ হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন, শিশিরকে থামিয়ে বলে শাহিন।
ঠাসসসস, হুট করে শাহিনের মাথায় তবলা বাজিয়ে দেয় শান্তা আর বলে টিকটিকির বাচ্চা দেখসনা জিজু বলতেছে, আবার মাঝখানে নাক গলাতে যাস কেন?

শাহিন একটু লজ্জিত হয়ে চুপ হয়ে যায়, এইভাবে নতুন জিজুর সামনে তার সম্মানের আলুরভর্তা বানাবে শান্তা সে ভাবতেই পারেনি।
কেন জানি ওদের এসব ড্রামা দেখে হাসি পাচ্ছে শিশিরের।



বেলকনিতে ইজি চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পরেছে রিক্তা, ডাইরি আর কলম হাতেই আছে। সবাইকে বিদায় দিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয় শিশির। বেলকনিতে উঁকি দিয়ে দেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রিক্তা,পা টিপে টিপে রিক্তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে,
ঘুমন্ত রিক্তাকে এত্তো কিউট লাগে যে তখনই মারাত্মক কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করে, কিন্তু এখন তো পাগলিটাকে রুমে নিয়ে যেতে হবে, রিক্তার হাত থেকে ডাইরি আর কলম নিতে চাইলে কলম আসলেও শিশিরের হাতে ডাইরি আসেনা, অনেক মজবুত করে বুকে জড়িয়ে রেখেছে। শিশির আর কোনো উপায় না পেয়ে ওভাবেই কোলে তুলে নেই রিক্তাকে। রিক্তা একটু নড়াচড়া করলেও জাগলো না।

শিশির রিক্তার পাশে শুয়ে এক হাত রিক্তার পেটের উপর দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে, আর ভাবছে কি আছে এই ডাইরিতে? কেন এতো আগলে রেখেছে এই ডাইরিটাকে, ওর কোনো অতীত লুকিয়ে নেই তো এই ডাইরিতে? নাহ নাহ কি ভাবছি এসব আমি? ওর অতীত থাকুক বা না থাকুক, রিক্তা শুধুই শিশিরের।

এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছে শিশির।



সকালে আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙে গেলে রিক্তা নিজেকে বিছানায় আবিস্কার করে। আমি তো বেলকনিতে ছিলাম, এখানে আসলাম কিভাবে? তবে কি___ বলেই শিশিরের দিকে তাকায় রিক্তা, আমার ডাইরি পড়ে ফেলল না তো, চিন্তায় পরে যায় রিক্তা। দ্রুত কাবাড খুলে একটা ড্রয়ারে ডাইরিটা লুকিয়ে রেখে তালা লাগিয়ে দেয় রিক্তা।
ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই ছোটখাটো একটা ক্রাশ খাই রিক্তা, অদ্ভুত, ঘুমালেও কি কাউকে এত্তো কিউট লাগে? জানা ছিলোনা তো।

রিক্তা নিজের অজান্তেই শিশিরের কপালে ঠোঁটজোড়া ছুঁয়ে দেয়, শিউরে উঠে শিশির।



রিক্তা নামায পড়ার জন্য ওযু করে এসে শিশিরকে ডেকে দেয়, শিশির উঠতে না চাইলে জোর করে টেনেটুনে তুলে ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়।
শিশির ওযু করে এসে রিক্তার পাশে বসে নামায আদায় করে নেয়।



সকাল ১০টাই সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো দুজন, রিক্তার প্রচুর মন খারাপ, শিশির ড্রাইভ করছে আর তার পাশে চুপচাপ বসে আছে রিক্তা।

হঠাৎ শিশির ড্রাইভ করতে করতে সামনের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো কানাডা না গিয়ে অন্য দেশে গেলে হতো না?
~গেলে কানাডা-ই যাবো, নয়তো কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।
মন খারাপ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলে রিক্তা।

শিশিরের রাগ উঠে যায়, কি আছে কানাডা-ই, ওখানেই কেন যেতে হবে হানিমুন করতে?
ভাবছে শিশির।

গাড়ি থামান,
হঠাৎ বলে উঠলো রিক্তা।

শিশির কিছু না ভেবেই গাড়ি থামিয়ে আগুনের দৃষ্টিতে তাকায় রিক্তার দিকে, ভরকে যায় রিক্তা।
শিশিরকে কিছু বলতে না দিয়ে টুস করে গাড়ি থেকে নেমে দৌড় লাগাই রিক্তা_____

#চলবে