ভালোবাসতে চাই পর্ব-০৯

0
603

#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ৯
#ফারজানা_আক্তার

তুই????
তুই জানিস কত মিস করেছি তোকে আমি, আমার বিয়েতেও আসলিনা, যাহ রাগ করছি তোর সাথে আমি। কাট্টি

এটা বলেই মুখটা ফুলিয়ে রিক্তা বান্ধবী স্নেহার হাত ছাড়িয়ে দেয় নিজের হাত থেকে। স্নেহা খুব শক্ত করে রিক্তার গলা জড়িয়ে ধরে বলে “সরি রে, গতকাল আসতে পারিনি তাই তো আজ চলে আসছি, আসলে আমার ফ্লাইট মিস হয়ে যাওয়ার কারণে আর তোর দুলাভাইয়ের অসুস্থতার কারণে তোর বিয়েতে আসা হলোনা রে। এবার আর রাগ করে থাকিসনা জানু আমার। আবার সন্ধ্যার ফ্লাইট ধরতে হবে আমাকে।

ফিক করে হেসে দেয় রিক্তা। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দুজন দুজনকে। এই একজন স্নেহা ছাড়া আর কোনো বান্ধবী নেই রিক্তার। তবে মাঝখানে দুইবছর স্নেহার সাথে রিক্তার কোনো যোগাযোগ ছিলোনা।
~চল নিচে যাই
এটা বলেই রিক্তা স্নেহার হাত ধরে ডাইনিং টেবিলের দিকে পা বাড়ালো। রিক্তা তো জানেনা তার জন্য কত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।



খাওয়া শেষে তারেক ইসলাম বলে শিশির বাবা তোমার আব্বু কল দিয়েছিলো আমায়, আর বলল তোমরা নাকি হানিমুনে যাচ্ছো?
~জানিনা তো, আব্বু তো এই বিষয়ে কিছু বলেনি আমায়।
রিক্তা নিচে আসতেই হানিমুনের কথা শুনে ডাইনিং এর দিকে দৌড় দিলো। স্নেহাও পেঁছন পেঁছন গেলো।

রিক্তা এসে ওর আব্বুর গলা জড়িয়ে ধরে বলে সত্যি আমরা দেশের বাহিরে যাবো?
~ হ্যাঁ মা সত্যি
হাসতে হাসতে বলেন তারেক ইসলাম।
~কোন দেশে যাবো আমরা।
বাবাকে ছেড়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে রিক্তা
শিশির হাত ধুয়ে গামছাতে হাত মুছতে মুছতে বলে জানিনা তো আমি।
রিক্তা মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকে, তারেক ইসলাম মুচকি হেসে বলে কানাডা যাবি?

খুশিতে লাফ দিয়ে উঠে রিক্তা। শিশিরকে জিজ্ঞেস না করে কিছু না ভেবেই রিক্তা হ্যাঁ বলে দেয় বাবাকে, কারণ সেই ক্লাস Five থেকে রিক্তার স্বপ্ন কানাডার নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখার। হয়তো সবারই মনে আছে কমবেশি ক্লাস Five এর বাংলা বইতে নায়াগ্রা জলপ্রপাত নিয়ে একটা লেখা ছিলো, ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে সেই খুশিতে রিক্তা সবার সামনেই জিংকু ডান্স মেরে দেয়। সবাই হো হো করে হেসে উঠতেই রিক্তা হঠাৎ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে পেলে। আঁড়চোখে শিশিরের দিকে তাকাতেই দেখে শিশির রাগে নাক কান লাল করে ফেলেছে।

শিশিরের রাগ কে পাত্তা না দিয়ে এতো বড় খুশির সংবাদটা বান্ধবী স্নেহাকে দিবে বলে খুব হাসিমুখেই পেঁছনে ফিরে তাকায় রিক্তা, কিন্তু স্নেহা কোথাও নেই, রিক্তা দৌড়ে গিয়ে পুরো ঘরে খুঁজে আসলো কিন্তু কোথাও নেই স্নেহা। চিন্তায় পরে গেলো রিক্তা আর সবাই অবাক চোখে দেখছে রিক্তার কান্ডগুলো।



স্নেহা এসি গাড়িতে বসেও ঘামছে, তিন বছর পর এ কি দেখলাম আমি, নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিনা আমি।
পুরো শরীর কাঁপছে স্নেহার, মাথাটাও ঝিম ধরে আসছে।
স্নেহা কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইল নিয়ে তার স্বামি নয়ন কে কল দেয়।



রিক্তা দাঁড়িয়ে আছে তার রুমের বেলকনিতে, স্নেহার এভাবে না বলে চলে যাওয়াটা বড্ড ভাবাচ্ছে রিক্তাকে, হঠাৎ পেঁছন থেকে শিশির এসে হুংকার দিয়ে উঠে “আমাকে জিজ্ঞেস না করে কোন সাহসে কানাডা যাওয়ার জন্য লাফিয়ে উঠেছো এভাবে?কমনসেন্স বলতে কি কিছু নেই তোমার?
হঠাৎ ভরকে যায় রিক্তা, কি বলবে বুঝতে পারছেনা সে, শিশির হঠাৎ সামান্য বিষয় নিয়ে কেন রেগে গেলো বুঝতে পারছেনা রিক্তা।

~আ আপনি এ এমন করতেছেন ক কেন হঠাৎ?
কিছুটা থেমে থেমে ভয়ে ভয়ে বলে রিক্তা।
~তো কি তোমায় মাথায় নিয়ে নাচতাম কানাডা যাওয়ার খুশিতে।
রাগে চোখ মুখ লাল করে চিল্লিয়ে বলে শিশির।
~আপনি এভাবে চিৎকার করে কথা বলতেছেন কেন? কেউ শুনে ফেলবে তো।
~তো আমার কি কেউ শুনলে? শুধু কি তুমিই পারো চিল্লাতে আর কেউ পারেনা?

রিক্তা বুঝে গেছে এই মুহুর্তে শিশিরের সাথে কথা বলাই বেকার তাই সে চুপচাপ সেখান থেকে চলে যেতে নিলে শিশির শক্ত করে ধরে ফেলে রিক্তার হাত। আর একটানে নিজের খুব কাছেই নিয়ে আসে,
~ভলো করে শুনে রাখো আমরা কানাডা যাচ্ছিনা। পৃথিবীর আর যে দেশেই বলো নিয়ে যাবো তোমায় কিন্তু কানাডা নয়?
দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলে শিশির।

রিক্তা ভয়ে একদম চুপ হয়ে আছে, শিশির রিক্তার হাত পেঁছনের দিকে মোচড়ে ধরার কারণে বেশ ব্যাথা পাচ্ছে সে। যদিও ভয়ে কিছু বলছেনা রিক্তা তবুও মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ভীষণ ব্যাথা হচ্ছে ওর, চোখ এড়ালো না শিশিরের। হুট করে ছেড়ে দেয় শিশির রিক্তাকে, রিক্তা চুপ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হাতদুটো বুকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

~যাও শুঁটকি ভাজি করো বেশি করে পেঁয়াজ দিয়ে আমার জন্য, রাতে শুঁটকি ভাজা দিয়েই ভাত খাবো।

শিশিরের এমন কথায় মাথা তুলে তাকাই রিক্তা। আর মনেমনে চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে শিশিরের “ইঁদুর কচ্ছপ ভেজে খেতে পারিসনা?শুধু শুঁটকি শুঁটকি করিস কেন হ্যাঁ? দুপুরেও দেখলাম শুঁটকি ভর্তা আর রাতেও এই ছাই খাওয়ার আবদার,, যাহ না যাহ তোর ওই একগাদা গফদের কাছে যাহ, আমি কেন মরবো শুঁটকির গন্ধে?
মনে মনে এসব বকতে বকতে হাফিয়ে গেছে রিক্তা।

হঠাৎ শিশির বলে উঠে মনে মনে আর কত গালি দিবে আমায়?
রিক্তা অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে, এই বাচ্চা তো দেখি আমার মনের কথাও শুনে পেলে।
~এতো জোরে জোরে বললে তো শুনবোই।
দুই হাত টাউজারের পকেটে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে শিশির।
হাইব্বাস এইটাও শুনে ফেলল। ধুর মনে মনে কথা বলেও শান্তি নেই।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে রিক্তা।

শিশির চুপ হয়ে রিক্তার কান্ড দেখছে।
~ শুঁটকি না হলে কিন্তু আমি ভাত খাবো না। তখন আম্মু তোমায় বকবে।
~যাচ্ছি,,, উফফ শুঁটকিময় জীবন আমার,
চিল্লিয়ে কথাটি বলে চলে যায় রিক্তা।

শিশির আকাশের দিকে তাকায় আর ভাবে কি হচ্ছে এসব?কেন মনে হচ্ছে বারবার অতীত সামনে আসতে চলেছে আমার? নাহ কখনোই নাহ, ২য় বার আর কোনো ভুল করতে চাইনা আমি। রিক্তাকে নিয়ে অন্যরকম সুখের পৃথিবী বানাতে চাই আমি।



রিক্তা মন খারাপ করে পা টিপে টিপে রান্নাঘরে যায়, রান্নাঘরে গিয়ে মাকে পেঁছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে আম্মু আজ রাতের জন্য শুঁটকি ভাজি করিও বেশি করে পেঁয়াজ দিয়ে। রেহেনা ইসলাম নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছেনা, শুঁটকি যার দুচোখের বিষ সে কিনা আধুরে সুরে বলছে শুঁটকি ভাজি করতে। কিভাবে সম্ভব?

~তুই বলতেছোস শুঁটকি রান্না করার কথা, দেখি জ্বর টর হলো কিনা।
রিক্তার দিকে ঘুরে রিক্তার কপালে গালে হাত দিতে দিতে বলেন রেহেনা।

~উফ আম্মু তুমিও নাহ, পারোও বটে। আমি নয়, তোমার আধুরে জামাইয়ের আবদার শুঁটকি ভাজা দিয়ে ভাত খাবে।
বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বলে রিক্তা
~আগে বলবিনা?
রিক্তার এমন অবস্থা দেখে হাসতে থাকেন রেহেনা।



~নিলি খুব চিন্তাই আছি রে।
একহাতে মোবাইল কানে ধরে মন খারাপ করে বলে শিশির।
~কেন রে? কি হয়েছে আবার?
~পিছুটান
~মানে? কি হয়েছে তোর? বউ প্যারা দেয়?
~ ও হানিমুনে কানাডা যেতে চাই।
চোখমুখ খিঁচে বলে শিশির।
~কীহহহহহ,
অবাক কন্ঠে চিৎকার করে বলে নিলি।
~ হ্যাঁ রে, অতীত টানছে আমায়।

~কিসের অতীত?
বেলকনির দরজায় দাঁড়িয়ে বলে কেউ একজন।

চমকে যায় শিশির হঠাৎ এই কন্ঠস্বর শুনে, দ্রুত কান থেকে ফোন নামিয়ে চোখমুখ ভালো করে হাত দিয়ে মুছে নেই শিশির। চোখমুখ মুছে পেঁছনে তাকাতেই দেখে_____

#চলবে