#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে
#পর্ব_একাদশ
#লেখিকা_দিয়া
শুভ আজকে বায়না ধরেছে সে তার গ্যান্ডমা আর গ্যান্ডপার সঙ্গে ঘুমাবে।তাই আমি ওর জিনিসপত্র নিয়ে ওকে আম্মু আব্বুর রুমে গুছিয়ে দিয়ে আসলাম।রুমে ঢুকতে যাব দেখি দরজা লক।নক করতেই ও পাশে থেকে দরজা খুলে যায়।কিন্তু একি পুরো রুম অন্ধকার। হঠাৎ করে পুরো রুমে মোমবাতি জ্বলে উঠে। আর পিছনে থেকে শুভ্র বলতে লাগে,
বউজান – শুভ্র
শুভ্রের কথা শুনে আমার শরীরে বয়ে গেল এক শীতল শিহরণ। আমি কোনো রকম নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠলাম,
হুম বলো – আমি
সরি। আর এমন কোনো ভুল কখনোই হবে না। এবারের মতো কি ক্ষমা করে দেওয়া যায় ? -পিছনে থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো শুভ্র
আমি কিছু না বলে শুভ্রের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। তারপর নিজেকে থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলাম
শুভ্র ও আমাকে জড়িয়ে নিলো নিজ বাহুদ্বয়ে।চুপটি করে আমি ওর বুকে মাথা দিয়ে দাড়িয়ে আছি।এতদিনে পর যে সবকিছু ঠিক হলো আমি ভাবতেই পারছি না।শুভ্র বলে উঠে,
বউজান – শুভ্র
হুম বলো কি বলবা – আমি
আমি তোমাকে ভালোবাসি – শুভ্র
আমিও ভালোবাসি – আমি
তারপর আর কি। আমাকে নিয়ে শুভ্র হারিয়ে গেলো ভালোবাসার জগতে
সকালে,
শুভর ডাকে আমার ঘুম ভেঙে যায়।বিছানায় শুয়েই বলতে লাগি,
কি হয়েছে শুভ? – আমি
আম্মু গ্যান্ডমা তোমাদের ডাকছে নাস্তা করার জন্য – শুভ
আচ্ছা বাবু তুমি গিয়ে গ্যান্ডমাকে বলো আম্মু আব্বু এখনি আসছে – আমি
ওকে মাম্মি – বলে শুভ দৌড়ে নিচে চলে গেলো
আমি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম তারপর শুভ্রকে ডেকে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।আমি বের হতেই শুভ্র চলে গেল ফ্রেশ হতে।
ফ্রেশ হয়ে দুইজনে নিচে চলে আসলাম। এতক্ষণ সবাই আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিল।আমরা আসতেই সবাই খাবার খাওয়া শুরু করে দিল।খাবার টেবিলে চলতে লাগলো নানারকম আলাপ আলোচনা।সবাই আলোচনার মূল বিষয় ছিল মিনি আর রিনির বিয়ে।কে কি করবে? কে কি পরবে? আর কত কি
শুভ বলে উঠে,
মাম্মি আমি কিন্তু ডাবল ডাবল শপিং করবো।ড্রেস জুতো সবকিছু ড্রাবল কিনবো। ঠিক আছে – শুভ
বিয়ে তো একবারই হবে তুমি ডাবল ডাবল জিনিস দিয়ে কি করবা? – আমি
আরে বিয়ে একটা তাতে কি ? কিন্তু আমার দুই মামনির বিয়ে। একবার আমি রিনি মামনির বিয়ের জন্য রেডি হব।আবার মিনি মামনির বিয়ের জন্য। বুঝলে- শুভ
শুভের কথা শুনে সকলের মাঝে আবারো বয়ে গেলো হাসির বন্যা।আমি হাসি থামিয়ে বললাম,
আচ্ছা ঠিক আছে – আমি
হুম – শুভ
~~~~~~~~
আজকে রিনি মিনির বিয়ে।সবাই বিভিন্ন কাজে লেগে রয়েছে। বিয়েটা যেহেতু বাড়িতেই হবে তাই তুলনামূলক ভাবেই কাজ একটু বেশি।ছেলের বাড়ির মানুষ অবশ্য চেয়েছিলেন বিয়েটা কমিউনিটি সেন্টারে দেওয়ার জন্যে।কিন্তু ঝিলিল রাজি হয়নি।ওর ইচ্ছে ও নিজের বাড়ি থেকে বোনদের বিয়ে দিবে।তাই ছেলে পক্ষ ও আর কোনো ঝামেলা না করে ঝিলিকের কথায়ই রাজি হয়ে যায়।বাড়ির সকলেই একের পরে এক কাজে লেগেই রয়েছে। তবুও কাজ যেন শেষ হওয়ার নয়।সকলের মাঝে শুভ ঘুরে ঘুরে পুরো বাড়ি দেখছে। আর সবাইকে একের পর এক হুকুম দিয়েই চলেছে।ওর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব যেন ওর উপরেই দেওয়া হয়েছে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,,
এই পিচ্চি বাবু।তুমি সবাইকে এবারে আঙুলের ইশারায় নাচিয়ে কাজ করাচ্ছো কেন ? আমি
শুভ কোমরে দুই হাত গুঁজে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
উফ মাম্মা তুমি ও কেমন কথা যে বলো না। আমার দুই মামনির বিয়ে সবকিছু তো আমাকেই দেখতে হবে।সবাই যে কি পরিমাণ ফাঁকিবাজ হয়েছে না কি যে বলবো একটা কাজ ও ঠিক মতো করছে না – বুড়ো মানুষদের মতো কপাল কুঁচকে বললো শুভ
ওর কথা শুনে আর কথা বলার ভঙ্গি দেখে আমি হাসিতে ফেটে পরলাম।তারপর নিজেকে সামলিয়ে ওকে বললাম,
যান স্যার আপনার পাপার কাছে।উনার কাছে গিয়েছিল জলদি তৈরি হয়ে পরেন।আর কিছুক্ষণ পরেই বরযাত্রী এসে পরবেেে।তখন কিন্তু তৈরি হওয়ার সময় পাবেনা।আমি তোমার মামনিদের রুমে যাচ্ছি। দেখে আসি তাদের কতদূর হলো – আমি
কিন্তু পাপা কোথায় মাম্মা ? – শুভ
পাপা মনে হয় তোমার ঘরে আছে। যাও জলদি – বলে আমি যে রুমে রিনি মিনিকে মেকআপ করানো হচ্ছে সেখানে এসে পরলাম।
ইশশ কি সুন্দর লাগছে আমার দুই বোনকে।আজ যদি মা বাবা বেঁচে থাকতো কি খুশিই না তো দুজন।আজকে থেকে আমার বোন দুটো অন্যের বাড়ির বউ হয়ে যাবে।কথাটা ভাবতেই বুকটা কেপে উঠলো। কত কাজ কত দায়িত্ব ওরা পারবে তো নিজেদের সামলিয়ে নিতে।না রনি আর শিহাব এমন ছেলে নয়।ছেলে দুটোকে আমি যোগ্য পাত্র হয়েছে বলেই আমার বোনদের জন্য বাচাই করেছি । দরজার পাশে দাড়িয়ে আপনমনে এসবই ভাবছিলাম। তখন রিনি মিনি এসে দুজন দুইদিকে থেকে আমায় জড়িয়ে ধরলো।আমিও দুই হাত দিয়ে আগলে নিলাম ওদের দুজনকে।
দেখতে দেখতে বিয়ের পর্ব ও শেষ হয়ে গেল।তারপর এলো সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। প্রত্যেক মেয়ের জীবনে সবচেয়ে দুঃখের সময়টি হচ্ছে তাদের বিদায়ের সময়।ছোটবেলা থেকে যেখানে বড় হয়েছে সেই সব কিছুর মায়া ছেড়ে চলে যায় নতুন বাড়ির উদ্দেশ্য। সেখানের জায়গা মানুষ পরিবেশ সবই থাকে তখন একটি মেয়ের কাছে অপরিচিত। তবুও তারা মানিয়ে নেয়।কারণ এটাই যে জীবন।
~~~~~~~~~~
১ বছর পর,
অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অধির আগ্রহে বসে আছে সকলে।ভিতরে ঝিলিকের অপারেশন চলছে। নিজে ডাক্তার হলে কি হবে বউয়ের অপারেশন করার মতো সাহস জুগিয়ে উঠাতে পারেনি শুভ্র। ছোট শুভ ও চুপচাপ।তার মনের মাঝে বিরাজ করছে মাকে হারানোর ভয়।
হঠাৎই অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে থেকে শোনা গেলো নবজাতকের কান্নার শব্দ। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেই ডাক্তার ভিতরে থেকে বেরিয়ে এলো।শুভ্রের কোলে তুলে দিলো তাদের মেয়েকে।
অভিনন্দন ডাক্তার শুভ্র আপনি কন্যা সন্তানের পিতা হয়েছেন – ডাক্তার
খুশিতে শুভ্রের চোখে জল চলে আসলো।
ডাক্তার আমার স্ত্রী – শুভ্র
উনি ভিতরে আপনি গিয়ে দেখা করে আসেন – বলে তিনি চলে গেলেন
শুভ তো বোনকে পেয়ে খুশিতে পাগল হয়ে গিয়েছে। শুভ্র ভিতরে ঢুকে পরলো
ঝিলিক তাকে দেখে বললো,
আমাদের বাচ্চা – আমি
হ্যা বউজান। তুমি আমাকে দুনিয়ার সমস্ত সুখ আজ এনে দিয়েছো।ভালোবাসি বউজান- শুভ্র
ভালোবাসি -আমি
~~~~~~~~
সমাপ্ত🥰