ভালোবাসতে চাই প্রিয় তোমাকে পর্ব-০৬

0
326

#ভালোবাসতে_চাই_প্রিয়_তোমাকে
#পর্ব_ষষ্ঠ
#লেখিকা_দিয়া

রিয়া নামের মেয়েটার বলা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আনমনে হাঁটছিলাম। হঠাৎই আমি কিসে যেন পা পিছলে পরে যেতে নেই।আর তখনি শুভ্র সামনে থেকে দৌড়ে এগিয়ে এসে আমাকে ধরে ফেলে।তারপর আমি ঠিক ভাবে দাঁড়িয়ে শুভ্রের থেকে নিজেকে সরিয়ে নেই।শুভ্র বলে উঠে,

খেয়াল কোথায় থাকে তোমার ঝিলিক ? এখন পড়ে গেলে কি হতো তুমি ভাবতে পারছো ? – শুভ্র

আমি নিচে তাকিয়ে দেখলাম সেখানে তেল পরে আছে।আমি শুভ্রকে বলে উঠলাম,

এখানে তেল কিভাবে আসলো ? – আমি

শুভ্র নিচে তাকিয়ে নিজে ও অবাক হয়ে বলতে লাগলো,

তাই তো এখানে তেল কে ফেলে রেখেছে ? আম্মু ও আম্মু – শুভ্র

কি হয়েছে শুভ্র? – রুমে থেকে বেরোতে বেরোতে বললো আম্মা

এখানে তেল কিভাবে আসলো ? – শুভ্র

আম্মু নিজেও অবাক কন্ঠে বে উঠে,

এখানে তেল আসার তো কথাই নয়। রান্না ঘরে শুধু আমি আর ঝিলিকই ঢুকি।আমি আর ঝিলিক তো ফেলিনি তাহলে – আম্মু

শুভ্র কিছুসময় নিরব হয়ে কিছু একটা ভাবলো।তারপর আমি লক্ষ্য করলাম হঠাৎই শুভ্রের মুখভঙ্গি বদলে যেতে লাগলো।শুভ্র রাগী স্বরে ইশিতাকে ডাকতে লাগলো।কিছুসময় পর ইশিতা নিচে আসলো। তারপর বললো,

কি হয়েছে শুভ্র ? – ইশিতা

এখানে তেল৷ কিভাবে আসলো ? – শুভ্র

আমি কিভাবে বলবো এখানে কি ভাবে তেল আসলো ? – ইশিতা

ইশিতা আমাকে এতটা ও বোকা মনে করিসনা।তুই কি জানিস এই বাসার সব জায়গায় আমি ক্যামেরা সেট করে রেখেছি। সেখানে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমি এই কাজ তুই করেছিস। তাহলে তুই কোন মুখে অস্বীকার করছিস ? – শুভ্র

মানে কি এই বাসায় ক্যামেরা – তোতলানো স্বরে বলে উঠে ইশিতা

এখন তুই সব সত্যি বলবি নাকি আমি পুলিশকে কল করবো ? – শুভ্র

হ্যা হ্যা হ্যা আমিই ফেলেছি এই তেল।ফেলেছি তো বেশ করেছি। তাও তো তুমি বাঁচিয়ে নিলে এই অশান্তিকে। পড়ে গেলেই তো ভাল হতো ও না মরতো ওর বাচ্চা তো মরতো – ইশিতা

হঠাৎই আমার শাশুড়ী এগিয়ে এসে ইশিতার গালে পরপর দুটো থাপ্পড় মেরে দিলো। ইশিতা তাও থামলো না বরং চিৎকার করে বলতে লাগলো,

মারো মারো আরো মারো।আমি কোনো মতে মেনে নিতে পারছি না ওই ঝিলিককে শুভ্রের পাশে।আমার শরীর জ্বলছে ওদের একসাথে দেখে।ওদের আমি কখনো সুখি থাকতে দিবনা – ইশিতা

ইশিতার কথা শুনে আমার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো।আমি ওকে বলে উঠলাম,

সবার কপালে এমনেও সুখ থাকেনা।আমিও তাদের মধ্যেই একজন।তুমি আর কি সুখি থাকতে দেবেনা আমার আল্লাহই চায় না আমার সুখ।- ইশিতাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে আমি রুমে চলে আসলাম।

তারপর ড্রইংরুমে কি হয়েছে না হয়েছে আমার তা জানা নেই। আর জানতে ও চাই না।আমি রুমে এসে আম্মুকে কল করলাম।একটু পরে আম্মু রিসিভ করে কল,

হ্যালো আম্মু – আমি

হ্যা মা বল।কেমন আছিস তুই ? – আম্মু

আম্মু আমি ভাল নেই বিশ্বাস কর আমি একটু ও ভালো নেই।আম্মু আমাকে কেউ একটু ভালো থাকতে দিতে চায়না আম্মু।সবাই শুধু আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলে আম্মু।আমি আর পারছি না এভাবে বেঁচে থাকতে। – কান্না করতে করতে বললাম আমি।

কি হয়েছে আমাকে খুলে বল তুই ? – আম্মু

আমি সব ঘটনা আম্মুকে সংক্ষেপে খুলে বললাম।সব শুনে আম্মু আমাকে বললো,

মা আমি যা বলবো তুই তাই করবি এখন। আর দরকার নেই তোর এমন স্বামি আর শশুড় বাড়ির।কালকে সকাল সকাল তুই যা যা অনেক দরকার সেসব নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাবি বাকিটা পরে ভেবে বলবো আমি – আম্মু

আচ্ছা – আমি

হুম এখন একটু রেস্ট নে।কালকে শুভ্র হসপিটালের জন্য বেরিয়ে গেলেই তুই ও বেরিয়ে আসবি।আর ও যেন কিছু জানতে না পারে – আম্মু

আচ্ছা – আমি

~~~~~~~

পরদিন সকাল,

ঘুম থেকে উঠতেই দেখি শুভ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমাকে উঠতে দেখে ও বলে উঠলো,

শুনো বউজান – শুভ্র

হুম – আমি

আজকে তোমাকে আমি অনেক কিছু জানাবো। বিকেলে তৈরি থেকো আমরা একটু বেরোবো – শুভ্র

আচ্ছা – আমি

তারপর শুভ্র হসপিটালের উদ্দেশ্য চলে গেল।শুভ্র যাওয়ার পরই আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম। তারপর রুমে এসে যেসব জিনিস একবারে না নিলেই নয় সেই কয়টা জিনিস একটা ব্যাগে গুছিয়ে নিলাম।তারপর মাকে বলে বের হলাম যে রিনি মিনির কাছে যাব।বাসা থেকে বেরিয়েই আমি আম্মুকে কল করলাম।তারপর আম্মু আমাকে কিছু কাজ করতে বললো। আমি চললাম সেই কাজগুলো করতে।

বিকেল বেলা,

ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্য যাওয়া বাসে রয়েছি আমি রিনি মিনি আর আম্মু।চলে যাচ্ছি এসব কিছু ছেড়ে।যত পিছুটান আছে সব ঝেড়ে ফেলে চলে যাচ্ছি নতুন এক অজানার উদ্দেশ্য। জানিনা ভাগ্যে কি আছে আর কিই বা হবে ভবিষ্যতে। পেটের উপরে হাত বুলিয়ে মনে মনে বলতে লাগলাম,

নাহ আজকে থেকে আমি শক্ত হবো।আর কারোর জন্য না হলেও আমার বাচ্চার জন্য আমাকে টিকে থাকতে হবে। লড়াই করতে হবে কঠিন এই বাস্তবতার সঙ্গে। তবেই না আমার বাচ্চাটা ভালো থাকবে।আপনমনে এইসব ভাবনা ভাবতে ভাবতেই আম্মুর কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলাম।

~~~~

শুভ্র বিকেলে খুশি মনে বাসায় ফিরে আসে।কলিং বেল বাজাতেই তার আম্মু গিয়ে দরজা খুলে দেয়।আম্মুকে দরজা খুলতে দেখে শুভ্র একটু অবাক হয়।কারণ শুভ্র অফিস থেকে ফেরার পর দরজা সবসময় ঝিলিক খুলে।তাও নিজের ভিতরের অবাক ভাবকে দূরে ঠেলে দিয়ে শুভ্র বাসার ভিতরে চলে আসে।তারপর নিজের রুমে চলে যায়।রুমে গিয়ে ঝিলিককে অনেক খুঁজার পরেও শুভ্র খুঁজে পায়না তাই সে তার আম্মুর কাছে যায় ঝিলিকের খোঁজ জানতে।আম্মার কাছে গিয়ে শুভ্র বলে উঠে,

আম্মা ঝিলিক কোথায় ? – শুভ্র

ও রিনি মিনির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে। আসতে নাকি দেরি হবে – আম্মা

ও আচ্ছা তাহলে আমিও যাই সেখানে – শুভ্র

আচ্ছা যা – আম্মু

তারপর শুভ্র রিনি মিনিদের হোস্টেলের সামনে চলে আসে গাড়ি নিয়ে। কিন্তু ভিতরে গিয়ে শুভ্র জানতে পারে ওরা নাকি আজকেই এই হোস্টেল ছেড়ে দিয়েছে। বিষয়টা শুভ্রকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলে।তাই সে জলদি বাসায় ফিরে আসে।শুভ্রকে একা বাসায় আসতে দেখে ওর মা প্রশ্ন করে ,,

কিরে তুই একা কেন? বউমা কোথায় ? – আম্মা

সেটাই তো খুঁজছি আম্মা।আমার মনে হচ্ছে অনেক খারাপ কিছু একটা ঘটতে চলেছে – বলে শুভ্র তারাতাড়ি রুমে চলে আসে।

তারপর এক টানা ঝিলিককে কল করতে থাকে। কিন্তু লাভ হয়নি কল যাচ্ছে না।হঠাৎই শুভ্রের নজর আটকে যায় টেবিলে রাখা একটা চিরকুটের উপরে।এগিয়ে গিয়ে চিরকুটটা খুলে সে পড়তে শুরু করে,

প্রিয় শুভ্র

ভালো থেকো ভালোবাসা।আমি নাহয় সারাজীবন দূরে থেকেই ভালোবেসে যাব।তুমি সুখি হও তোমার নতুন ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে।

তোমার বউজান

চলবে🥰