ভালোবাসাটা যেনো বেরঙ্গিন পর্ব-০৩

0
216

#ভালোবাসাটা_যেনো_বেরঙ্গিন
#পর্বঃ০৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

নবনী দেখতে পায় অর্ণব তার পাশ থেকে উঠে সোফার উপর গিয়ে বসে আছে। নবনী অর্ণবের দিকে একটু ভালো করে দৃষ্টিপাত করতেই দেখতে পায় অর্ণব ড্রিংক করছে। অর্ণবের এমন কাজ দেখে নবনী ভিশন অবাক হয়ে যায়। কারন অর্ণব হঠাৎ করে এসব কি কারনে করছে? “সে তো নিজের ইচ্ছায় আমায় ডিভোর্স দিচ্ছে! তবে কেনো এসব করছে? তার মনে কি আমি ছাড়া অন্য কেউ আছে? অন্য কারোর কষ্টে সে ড্রিংক করছে না তো”! নবনী আপন মনে কথা গুলো বলল। আসলে নবনী ভালো করেই বুঝতে পারছে অর্ণব তাকে হারানোর কষ্টে ড্রিংক করবে না। কারন নবনীকে হারানোর কষ্টে যদি অর্ণব ড্রিংক করতো তবে কখনোই নিজের মা বাবার কথায় তাকে ছেড়ে দিতো না। নবনী কিছু একটা ভেবে বিছানা থেকে উঠে পড়লো। অর্ণবের দিকে এগিয়ে গিয়ে সোফার এক কোনে বসলো সে। নবনী অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ণবের যেনো সেই দিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। নবনী অর্ণবের উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

— হঠাৎ করে এই নেশা করা কবে থেকে শুরু করে দিয়েছো? আগে তো কখনও এই সব পান করোনি তুমি!

নবনীর কথা শুনে হয়তো অর্ণবের ঘোর কাটলো। অর্ণব নবনীর কথা শুনে আচমকা নবনীর দিকে চোখ তুলে তাকায়। নবনী অর্ণবের চোখের দিকে তাকাতেই চমকে উঠল ভিশন। এই চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারন করে আছে। অর্ণব এমন পাগলামি করছে কেনো? নবনী অর্ণবের চোখ দেখে খানেকটা ভয় পেয়ে যায়। অর্ণব নবনীকে উদ্দেশ্য করে রাগে গজগজ করতে করতে বলল

— এখানে কি চাই তোর? সব কিছুতে মাথা ঘামাতেই হবে তোর? তা হলে বুঝি শান্তি পাস না তুই!

— অর্ণব কি হয়েছে? এমন ভাবে কথা বলছো কেনো?

— শার্ট আপ একদম চুপ। আমার নাম ধরে ডাকার কোনো যোগ্যতা তোর নেই। আমার নাম ধরে ডাকার অধিকার তুই অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছিস।

— হুম জানি আমি। কিন্তু কি করেছি আমি সেটা তো বলবে? কেনো এই সব পান করে নিজের জীবনটা নষ্ট করে ফেলছো? কি শান্তি আছে এসবে?

— শান্তি! আমার শান্তি নিয়ে তোকে কষ্ট করে ভাবতে হবে না। আমার জীবনটা শেষ করে দিয়ে এখন বলছিস শান্তিতে থাকার কথা? তোরা নারী জাতিটাই অদ্ভুত।

নবনী অর্ণবের কথা শুনে বেশ বুঝতে পারছে অর্ণবের নেশা উঠে গেছে। এখন অর্ণব যা কিছু বলছে তা নিজের মধ্যে থেকে বলছে না। নবনী অর্ণবের সাথে তর্ক করলো না। নিশ্চুপ হয়ে খানেক সময় অর্ণবের পাশে বসে থেকে অর্ণবের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকলো সে। অতঃপর অর্ণবের পাশ থেকে উঠে পড়তেই অর্ণব নবনীকে অবাক করে দিলো। নবনী অর্ণবের পাশ থেকে উঠে পড়তেই অর্ণব দুম করে নবনীর হাত ধরে ফেলল। নবনী পেছন ফিরে অর্ণবের দিকে তাকাতেই অর্ণব হেঁচকা টান দিয়ে নবনীকে নিজের বুকে টেনে নিলো। নবনী অর্ণবের হেঁচকা টানে তাল সামলাতে না পেরে হচকিয়ে অর্ণবের বুকে চলে আসলো। অর্ণব নবনীর মুখের উপর উড়ে চলে আসা চুল গুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে নবনীর কপালে নিজের ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে দিলো। নবনী কিছুই বুঝতে পারছে না এসব কি হচ্ছে? অর্ণব একটা ছোট্ট বাচ্চাকে যেমন মলিন ভাবে স্পর্শ করা হয় ঠিক তেমন ভাবেই নবনীকে স্পর্শ করছে। নবনী এই কোমল স্পর্শ পেয়ে নিজের মনের মধ্যে এক অদ্ভুত ভালো লাগা অনুভব করতে লাগলো। অর্ণব নবনীকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে নবনীকে উদ্দেশ্য করে মলিন কন্ঠে বলতে লাগলো

— নবনী আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। নিজের জীবনের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায়। আমায় ছেড়ে যেও না প্লিজ। ঐ রাজকে আমার সহ্য হয় না। ওকে আমি খুন করবো। তুমি দেখে নিও।

নবনী অর্ণবের কথাটা শুনে ভিশন চমকে গেলো। রাজের কথা হঠাৎ করে অর্ণবের মাথায় আসলো কেনো? রাজের সাথে তো নবনীর কোনো সম্পর্ক ছিলো না। রাজ নবনীকে বিরক্ত করতো শুধু। কিন্তু অর্ণব রাজের সাথে নবনীকে দেখে একবার ভুল বুঝেছিলাম। কিন্তু সেটা তো অনেক পুরোনো কথা। এখন সেই কথা আসছে কেনো? নবনী অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে বলল

— অর্ণব হঠাৎ করে রাজের কথা বললে কি কারনে? ওর সাথে তো আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক ছিলো না।

— হুম ছিলো না। তবে আমার ভয় হয়। তুমি ওর জন্য আমায় ছেড়ে দিন না প্লিজ! আমি তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারবো না।

অর্ণবের নেশায় আসক্ত হয়ে বলা কথা গুলো শুনে নবনীর বুকের মধ্যে কষ্টটা যেনো আরো তীব্র আকার ধারণ করলো। অর্ণব নিজেই তো নবনীকে ছেড়ে দিচ্ছে। এখন নিজেই বলছে তাকে ছেড়ে না যেতে। নবনী নিজের বুকের মধ্যে তীব্র ব্যাথা নিয়ে নিজেকে অর্ণবের বুকের থেকে ছাড়াতে নিতে চেষ্টা করলো। তবে অর্ণব নবনীকে ছাড়া তো দূর। আরো শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে আছে। নবনী বার বার চেষ্টা করছে অর্ণবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে। অর্ণব হঠাৎ করেই নবনীকে নিজের বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে নবনীর বাহুর উপর নিজের হাত জোড়া রেখে মলিন কন্ঠে নবনীকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এমন করছো কেনো? আমি তো তোমার স্বামী। তোমায় নিজের বুকে রাখার রাইট আমার আছে। এমন করছো কেনো তুমি?

— অর্ণব তুমি এখন নেশায় আছো। আর আমাদের খুব শিঘ্রই ডিভো….!

নবনী সম্পূর্ণ কথাটা বলার পূর্বেই অর্ণব দুম করে নবনীর ঠোঁট জোড়ার সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া এক করে দিয়ে চেপে ধরলো। এতোটা শক্ত করে নিজের ঠোঁট জোড়া দিয়ে নবনীর ঠোঁট চেপে ধরেছে যে নবনী আর কোনো কথা বলতে পারলো না। অর্ণবের ঠোঁটের পরশে নবনীর চোখ জোড়া ছানা বড়া হয়ে যায়। নবনী প্রস্তুত ছিলো না এসবের জন্য। অর্ণব নবনীর ঠোঁট জোড়ার স্বাদ আপন মনে গ্রহন করতে লাগলো। নবনীর ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে অর্ণব পাগলের মতো করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিচ্ছে। নবনী অর্ণবকে বাধা দিতে গিয়েও পারছে না। নবনী চাইছে না আর তাদের মধ্যে কোনো ধরনের শারীরিক সম্পর্ক হোক। কারন দিন শেষে নবনী একাকিত্ব দিন কাটাবে। তখন অর্ণবের সাথে কাটানো এই মধুর অতিত গুলো মনে পড়ে তাকে আরো বেশি কষ্ট দিবে। অর্ণব নবনীর ঠোঁট বেশ কিছু সময় নিজের দখলে রেখে আলতো করে নবীর ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিলো। নবনীর ঠোঁট জোড়া একদম লাল হয়ে আছে। অর্ণব সোফা থেকে উঠে পড়ে দুম করে নবনীকে নিজের কোলে তুলে নিলো। নবনী অর্ণবের কোলে উঠে ভিশন শক্ত করে অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরে আছে। নবনীর মনে হচ্ছে আজ সেই প্রথম দিনের কথা। বিয়ের প্রথম দিন ও অর্ণব তাকে ঠিক এমন করেই বাড়ির নিচে থেকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে এসেছিলো। নবনী অতীতের পাতায় চোখ বোলাতে থাকে। একটা মানুষ হুট করেই বদলে যায়! এতোটা বদলে যায় যে তাকে দেখে আর চেনার উপায় থাকে না। নবনী অতীতের কথা ভেবে শেষ করার আগেই। নিজের কোমরে কিছু একটা স্পর্শ অনুভব করলো সে। এই স্পর্শে নবনী ভিশন কেঁপে উঠল। নবনীর ঘোর কাটতেই নবনী দেখতে পেলো অর্ণব তার কোমরে চুমু খাচ্ছে। নবনী অর্ণবের ঠোঁটের চুমু নিজের কোমরে পেতেই ভিশন কেঁপে উঠলো। সেই পুরোনো মধুময় অনুভূতি যেনো তার মনকে আবার ও রাঙিয়ে দিচ্ছে। নবনী যেনো আর নিজের মধ্যে থাকতে পারছে না। বার বার ইচ্ছা করছে তার সব কিছু ভুলে গিয়ে নিজের প্রিয় ভালোবাসার মানুষটির মাঝে বুফে যেতে। পূর্ণতার নেশায় মেতে উঠতে ইচ্ছে করছে তার। এই বেরঙ্গিন ভালোবাসাটাতে আবার ও মনের রং তুলি দিয়ে রাঙিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে নবনীর। নবনী অর্ণবের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই অর্ণব দুম করে নবনীর কোমর থেকে সরে গিয়ে নবনীকে অবাক করে দিয়ে দুম করে নবনীর চুলের পেছনে নিজের হাত নিয়ে গিয়ে শক্ত করে নবনীর চুল গুলো চেপে ধরলো। আচমকা অর্ণবের এমন কাজে বেশ অবাক হয়ে যায় নবনী। নবনী অর্ণবকে………………..

#চলবে………………….