ভালোবাসাময় প্রহর পর্ব-১৫

0
255

#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:১৫

রক্তিম অধরাকে কোলে নিয়ে নিজ রুমে চলে আসলো অধরাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলো।অধরার কেন জানি অনেক লজ্জা লাগছে সে বিছানার চাদর এক হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে রাখলো।রক্তিম ধীর পায়ে তার কাছে চলে আসলো এরপর অধরার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বললো,

~আমার স্বপ্নের রানী আমি তোমাকে আজ নিজের করে পেতে চাই এই নরম বাহুডরে নিজেকে আবদ্ধ করতে চাই। আমাকে কী অনুমতি দিবে?

রক্তিমের কথা শুনে অধরা চোখ বন্ধ করে ফেললো রক্তিম অধরার বন্ধ চোখ গুলোতে চুমু খেলো।অধরার নিশ্বাস বেড়ে চলছে মনে হচ্ছে এখনই তার প্রাণপাখিটি উড়ে যাবে।অধরা নিজেকে সামলাতে না পেরে রক্তিমকে জড়িয়ে ধরলো রক্তিম মুচকি হেসে অধরাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার দিকে ঝুকে দেখলো এখনো অধরা চোখ বন্ধ করে আছে।রক্তিম অধরার হাতে গভীর ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,

~চোখ খুলে তাকাও অধরা।

অধরা মিনমিন স্বরে বললো,

~আমার লজ্জা লাগছে রক্তিম অনেক লজ্জা।

রক্তিম অধরা ঘাড়ে মুখ গুজে ঠোঁট ছুইয়ে দিতে ব্যস্ত অধরা রক্তিমের শার্ট খা/ম/চে ধরলো।রক্তিমের এই অসীম ভালোবাসা সে সহ্য করতে পারছেনা হারিয়ে যাচ্ছে অন্য কোনো দুনিয়ায়।অধরা রক্তিমের সকল আদর সাদরে গ্রহন করছে রক্তিম অধরাকে নিজের করে নিতে ব্যস্ত এই রাতটা যে তাদের মিলনের সাক্ষী হয়ে রইলো হালকা হাওয়ায় ভেসে আসছে তাদের গভীর নিশ্বাসের শব্দ তাদের এই “ভালোবাসাময় প্রহর” এভাবেই তাদের জীবনে সবসময় বিচরণ করুক।

সকালবেলা তন্নি কলেজের জন্য রেডি হয়ে প্রভাকে স্কুলের জন্য রেডি করে বাসার বাহিরে চলে আসতেই দেখলো রাত দাড়িয়ে আছে।তন্নি রাতকে দেখে যতোটা না অবাক তার চেয়ে বেশি অবাক রাতের অবস্থা দেখে চুলগুলো এলোমেলো,চোখ গুলো লাল,শার্টের অবস্থা না/জে/হা/ল।তন্নির সামনে এসে রাত দাড়ালো এতে তন্নি নিজের ভাবনা থেকে বের হলো।প্রভা রাতের হাত ধরে বললো,

~তোমার কী হয়েছে আমাবস্যার রাত?

রাত মৃদু হেসে বললো,

~কঠিন রো/গ হয়েছে আমার।

তন্নি বললো,

~কী হয়েছে তোমার রাত ভাইয়া?

রাত বললো,

~সময় হলে সব জানতে পারবি এখন চল তোদের ড্রপ করে দিয়ে আসি।

তন্নি কিছু বলবে তার আগেই অধরার বাবা সেখানে উপস্থিত হয় তন্নি তাকে দেখে বললো,

~নাহ রাত ভাইয়া তার কোনো দরকার নেই বাবা এসে পরেছে আজ আমরা তার সাথে যাবো।

রাত অধরার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

~আজ আমি তাদের দিয়ে আসবো আঙ্কেল।

অধরার বাবা বললেন,

~নাহ রাত আজ আমি আমার দুই মেয়েকে দিয়ে আসবো রাস্তায় অনেক মজা।

প্রভা খুশিতে ইয়াহু বলে উঠতো তন্নি তাকে নিয়ে সামনে চলে গেলো অধরার বাবা রাতকে বললো,

~তোমার এ অবস্থা কেন বাবা?শরীর কী খা/রা/প?

রাত বললো,

~সব ঠিক আছে আঙ্কেল।

অধরার বাবা রাতের কাঁধে হাত রেখে তন্নি আর প্রভার কাছে চলে গেলো।দূর থেকে রাত তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে সে মনে মনে বললো,

~নিজেকে প্রস্তুত করেই তোর সামনে দাড়াবো।

রোদের আলো রক্তিমের চোখে পরতেই সে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো হাত দিয়ে বিছানার অপরপাশে অধরাকে খুজতে লাগলো। কিন্তু অধরার ছোয়া পেলো না তাই সে উঠে বসলো সারা রুমে চোখ বুলালো কোথাও অধরা নেই। রক্তিম বিছানা ছেড়ে উঠে কার্বাড থেকে নিজ কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে
গেলো ফ্রেশ হতে। অধরা রান্নাঘরে শাশুড়ির সাথে নাস্তা তৈরি করছে আর কথা বলছে অধরা পরোটা বেলছে আর রক্তিমের মা চা তৈরি করছে। রক্তিমের মা বললেন,

~রাত টা দুদিন ধরে কিছুই খেতে চাইছেনা কী জানি ছেলেটার কী হয়েছে?

অধরা বললো,

~আমার মনে হয় ওর শরীরটা অসুস্থ ও তো এমন চু/প/চা/প থাকেনা।

রক্তিমের মা বললেন,

~তুমি ঠিকি বলেছো অধরা ছেলেটাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তখনই বাহির থেকে রাতের আওয়াজ ভেসে আসলো সে জোরে জোরে বলছে,

~মা মা নাস্তা দেও।

রক্তিমের মা পরোটা ভাজি নিয়ে দ্রুত ডাইনিং রুমে চলে আসতেই রাতকে দেখে অবাক হয়ে গেলো রাত একদম ফরমাল গেটাপে বসে আছে চেয়ারে। রাত মাকে দেখে বললো,

~এভাবে দাড়িয়ে কেন আছো?

রক্তিমের মা ছেলের সামনে খাবার রেখে দিলো অধরাও রান্নাঘর থেকে এ বের হয়ে এসে রাতের অবস্থা থেকে হা হয়ে গেলো।রক্তিমের মা রাতের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,

~জ্বর তো নেই তাহলে এমন করছিস কেন?

রাত বিরক্তি নিয়ে বললো,

~আজ থেকে ভাইয়ার সাথে আমিও অফিস যাবো।

রক্তিমের মা অবাক হয়ে চেয়ারে বসে পরলেন অধরা খুশি হয়ে বললো,

~এতো অনেক ভালো কথা।

রাত অধরার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো রক্তিমের মা বললেন,

~যে ছেলেকে ব/কে কোনোদিন অফিস পাঠানো যায় না সে আজ নিজ ইচ্ছায় যাচ্ছে ব্যাপারটা খুবই আশ্চর্যজনক।

রাত বললো,

~এতে ভাবার কিছু নেই লাইফে এখন এগিয়ে যেতে হবে।

অধরা রাতের কথায় মুচকি হেসে রান্নাঘরে চলে গেলো রক্তিমের মা ছোট ছোট চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে বললেন,

~মেয়েটা কে রাত?

রাতের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো সে পরোটার টুকরো প্লেটে রেখে আমতা আমতা করে বললো,

~কোন মেয়ে মা কার কথা বলছো?

রক্তিমের মা বললেন,

~রাত,আমি তোর মা তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি মুখ খোল তুই এখন।

রাত বললো,

~মা এমন কিছুই না তুমি ভুল ভাবছো আমি

পুরোটা শেষ না করেই রাত ধু/ম করে দৌড় দিলো রক্তিমের রুমের দিকে। রক্তিমের মা বললেন,

~এই ছেলে কী ঘটাবে আল্লাহ জানে।

রাত হাফ ছেড়ে বাঁচলো রক্তিমের রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে চলে গেলো রক্তিম আয়নার সামনে দাড়িয়ে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে।রক্তিম রাতকে দেখে ভ্রুকুচকে বললো,

~তোর এ অবস্থা কেন?

রাত বললো,

~আমিও আজ থেকে অফিস যাবো।

রক্তিম বললো,

~তোর হাবভাব ভালো লাগছেনা আমার।

রাত বললো,

~তুমি শুধু শুধু সন্দেহ করো আমায়।

রক্তিম চুল ঠিক করে বললো,

~অধরাকে দেখেছিস?

রাত বললো,

~রান্নাঘরে।

রক্তিম দরজার সামনে গিয়ে বললো,

~তুই কী এখানে অফিস করবি?

রাত বললো,

~নাহ তুমি রোমান্স করে আসো আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি।

রক্তিম আর কিছু না বলে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হলো সেখানে গিয়ে দেখলো অধরা কাজ করছে। রক্তিম আশেপাশে দেখে অধরাকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।অধরা এহেন কান্ডে একটু কে/পে উঠলে কিন্তু নিজেকে সামলে বললো,

~ভুলে যাচ্ছেন আমরা কিন্তু রান্নাঘরে।

রক্তিম বললো,

~বিদায় নিতে আসলাম অফিসে যাচ্ছি।

অধরা বললো,

~নাস্তা করবেন না?

রক্তিম বললো,

~আজ লেট হয়ে গেছে তাই বাহিরে খেয়ে নিবো।

অধরা নিজেকে ছাড়িয়ে নাস্তা টিফিন বক্সে ভরে রক্তিমের হাতে দিয়ে বললো,

~গাড়িতে খেয়ে নিবেন।

রক্তিম হেসে অধরার কপালে চুমু খেয়ে বললো,

~রাতে দেখা হবে আর ধন্যবাদ কালকের সারপ্রাইজটা অনেক সুন্দর ছিলো।

অধরা লজ্জা পেয়ে গেলো রক্তিম মুচকি হেসে মায়ের রুমে গিয়ে তার থেকে বিদায় নিলো রক্তিমের মা বললো,

~ছোট টাকে দেখে রাখিস হাবভাব ভালো ঠেকছেনা।

রক্তিম বললো,

~অবশ্যই মা দেখে রাখবো বাবা তো আগেই চলে গেছে অফিস আমি যাই এখন।

বলেই সে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো রাত গাড়িতে অপেক্ষা করছে অতঃপর রাত আর রক্তিম রওনা হলো অফিসের উদ্দেশ্যে।

তন্নি কলেজ থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে আজ বিকেল হয়ে গেছে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সে যেইনা বাসায় প্রবেশ করতে নিবে তখনই কেউ একজন তার সামনে এসে দাড়ালো।তন্নি মাথা উঁচু করে দেখলো একটা ছেলে হাতে ফুল আর চকলেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে।তন্নি বললো,

~এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন?

সেই ছেলেটি চোখের সানগ্লাস খুলে বললো,

~হাই,আমার নাম রাজ আপনি কী এ বাসায় থাকেন?

তন্নি বললো,

~হ্যাঁ এ বাসায় থাকি।

রাজ হেসে তন্নিকে একবার ভালো মতো দেখে ফুল আর চকলেট এগিয়ে দিয়ে বললো,

~এসব আপনার জন্য।

তন্নি বললো,

~আমি অচেনা মানুষদের থেকে কিছু নেইনা।

রাজ বললো,

~আমি অচেনা নই ভাবতে পারেন আমি আপনার বন্ধু।

তন্নি রাজের কথা শুনে বললো,

~আপনি না হলেও বয়সে আমার ৪/৫ বছরের বড় হবেন আপনি আমার বন্ধু কীভাবে হন?

রাজ বললো,

~এগুলো আমার মায়ের তরফ থেকে আপনাকে দেওয়া হয়েছে।

তন্নি বললো,

~আপনার মা আমাকে চেনে কীভাবে?

রাজ বললো,

~কয়েকদিন আগে আপনি একজনকে রাস্তায় সাহায্য করেছিলেন যে রাস্তায় পরে গিয়েছিলো সেই মহিলাটি আমার মা।

তন্নির মনে পরলো সেই ঘটনাটা সে কিছুদিন আগেই এই কাজটা করেছিলো তন্নি মুচকি হেসে চকলেট আর ফুল গ্রহন করলো।রাজ বললো,

~আগামী কাল আমার মা আপনাদের বাসায় আসতে চায়।

তন্নি বললো,

~অবশ্যই আন্টিকে নিয়ে আসবেন।

রাজ সানগ্লাসটা চোখে পরে নিলো তারপর বিদায় নিয়ে চলে গেলো তন্নিও বাসায় চলে গেলো।দূর থেকে দাড়িয়ে রাত এসব দেখছিলো তার বুকে কেন যেন চিনচিন ব্যাথা করছে সে তন্নিকে অন্যজনের সাথে সহ্য করতে পারছেনা।রাত কিছু না ভেবেই তন্নির বাসায় চলে গেলো তারপর সোজা আসলো তন্নির রুমে

চলবে