ভালোবাসার অধিকার পর্ব-৩২+৩৩

0
685

#ভালোবাসার_অধিকার❤❤
লেখা- পূজা
পর্ব- ৩২


রোদের গাড়ির পিছু পিছু সবাই যায়। রোদ একটা কাজি অফিসের সামনে গাড়ি থামায়। সবাই অবাক হয়ে গাড়ি থেকে নামে।
অনু:তুমি এখানে কেনো গাড়ি থাকালে।
রোদ:আবিরের রাগ আর আমার বোনের কষ্ট আমি আর সেকেন্ডবার দেখতে চাই না। তাই এই ডিসিশনটা নিয়েছি।
আবির:আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।
তিথি অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকায়। এতক্ষণ আবির তিথির সাথে একটা ও কথা বলেনি। গাড়িতে তিথি আবিরকে জরিয়ে ধরে ছিলো। বাট আবির কোনো রিয়েক্টই করে নি। এমনকি একবার তিথির দিকে তাকায় ও নি।
দ্বীপ:জাস্ট সাট আপ। এতক্ষণ যখন মুখটা বন্ধ ছিলো এখনো মুখটা বন্ধই রাখ। তর জন্য একটা মেয়ে এত কষ্ট পাচ্ছে সেটা তর চোখে পরছে না। তুই তর রাগটা নিয়ে বসে আছিস।
অভি:রোদ ইজ রাইট। ওদের বিয়ে হয়ে গেলে আর কোনো প্রবলেম ক্রিয়েট করতে পারবে না ঐ মেয়েটা।
ঈশান:আবির তুলির হাত থেকে বাচতে অন্তত এই বিয়েতে রাজি হয়ে যা।
আবির:ওকে।
সবাই খুশি হয়ে কাজি অফিসের ভেতর ডুকলো।
তিথি:ভাইয়া মা বাবা?
রোদ:ডোন্ট ওরি। আমার উপর সব ছেড়ে দে।
ওরা কাজি সাহেবকে বলে বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।
বিয়ে শেষে সবাই আবির আর তিথিকে নিয়ে আবিরের বাসায় যায়।
আবিরের মা বাবা সবাইকে এক সাথে দেখে অনেক অবাক হন।
আবিরের মা:আরে তোমরা সবাই। তা ও এতো রাতে।
দ্বীপ:আন্টি(তিথিকে সামনে এনে) ও আবিরের স্ত্রী।
আবিরের মা:মানে?
দ্বীপ:আজ আবির এই দেশ ছেড়ে চলে যেথে চেয়েছিলো শুধু মাত্র তুলিকে বিয়ে করতে চায় না সেজন্য তা তোমরা জানতে?
আবিরের মা:কিইই? আবির তো আমাদের এসব কিছু বললো না। আবির দ্বীপ যা বলছে তা কি ঠিক।
আবির কিছু বললো না। চুপচাপ দারিয়ে আছে।
দ্বীপ:আবির তিথিকে ভালোবাসে তাই আমরা সবাই তিথির সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। আর কোনো রিস্ক নিতে চাই না। তিথি খুব ভালো মেয়ে। আমি ওকে চিনি। আবিরের জন্য একদম পার্ফেক্ট।
আবিরের মা:কিন্তু বাবা তুলি তো আবিরকে খুব ভালোবাসে। মেয়েটা জানলে পাগলামি করবে।
দ্বীপ:তোমরা ওকে বুঝাবে। এক তরফা ভালোবাসা দিয়ে কি হবে। আর এখন আবির বিবাহিত। বেশি কিছুই করতে পারবে না।
আপু:ঠিক বলেছিস দ্বীপ। আমার ভাইয়ের খুশিই আমাদের খুশি। তুলিকে বুঝাবো আমরা।
দ্বীপ:আপু তিথিকে নিয়ে রুমে যাও। আর আমরা ও বাসায় চলে যাই।
শুভ:আর তিথির উপর রাগ করে থাকিস না।
অভি:আমাদের বিয়ে ভেবেছিলাম এক সাথে করবো। আমার আগেই করে ফেললি।
ঈশান:আবির আসি।
সবাই তিথির কাছ থেকে ও বিদায় নিয়ে চলে গেলো। রোদ গেলো তিথির বাসায় ওর মা বাবাকে জানাতে। আর বাকিরা নিজেদের বাসায়।

আবিরের আপু তিথিকে উনার একটা শাড়ি পরিয়ে ফ্রেস করিয়ে আবিরের বিছানায় বসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। রিচুয়ার মতে আজ ওদের বাসররাত। এত রাতে ফুল কোথায় পাবেন। তাই তিথিকেই শুধু একটু সাজিয়ে দিয়ে গেছেন নরমাল শাড়ি পরেই।
আবির ছাদে দারিয়ে আছে। এই দিনটারই অপেক্ষা করছিলো এত দিন। আসলো ও। বাট……
আবিরের তিথির উপর থেকে রাগ এখনো যাচ্ছে না। তাই এইভাবে তিথির সামনে যেথে চায় না। মাথা ঠান্ডা হলেই যাবে। আপু আবিরকে খুজতে খুজতে উপরে চলে আসেন।
আপু:আবির!
আবির:হু।
আপু:তুই এখানে কি করছিস। তিথি রুমে একা আছে। ওর কাছে যা।
আবির:একটু পর যাচ্ছি।
আপু:একদম না এখনি আমার সাথে যাবি।
আপু আবিরকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যান। টেলে ভেতরে পাটিয়ে দেন। আবির তিথিকে আজ ফাস্ট এই রকম নরমাল শাড়িতে দেখেছে। তিথিকে এইভাবে দেখেই ওর সব রাগ চলে যায়। ও আস্তে আস্তে তিথির দিকে এগিয়ে যায়। বিছানার কাছে আসতেই তিথি উঠে আবিরকে জরিয়ে ধরে কেদে দেয়।
তিথি:আই এম সরি আবির। প্লিজ আমার উপর আর রাগ করে থেকো না। তোমার ইগনোরেন্স আমাকে কতটা কষ্ট দেয় তুমি জানো না। প্লিজ আমার সাথে কথা বলো।
আবির তিথিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে চোখের জল মুচে দেয়। আবিরের থেকে একটু দুরে দার করায়। আর তিথির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে। আবিরের এমন চাহনিতে তিথি অনেক লজ্জা পাচ্ছে। বার বার শাড়ি ঠিক করছে। তিথির এমন কান্ডে আবির হেসে দিলো।
আবির:বাহ! তোমাকে তো এই শাড়িতে দারুন লাগছে।
তিথি:ধ্যাত তুমি ও না।
আবির:লজ্জা পেলে আরো দারুন লাগে।
তিথি:তুমি আর রেগে নেই তো আবির।
আবির:তোমাকে এই ভাবে দেখে কোনো ছেলেই রাগ করে থাকতে পারবে না।
তিথি:ছিঃ এসব কি বলছো তুমি।
আবির:ওহ সরি। শুধু আমি। অন্য কেউ কেনো দেখবে। আর আজ রাতটা রাগ করে স্পয়েল করতে চাই না। কত কিছু করার আছে😉
তিথি:😐(রাগেই তো ভালো ছিলো)


পরেরদিন,,
অনু ঘুম থেকে উঠে দেখে দ্বীপ নেই। ওয়াশরুমে চেক করলো সেখানে ও নেই। এবার অনু ফ্রেস হয়ে নিচে চলে গেলো। সবাই বসে আছে। বাট দ্বীপ নিচে ও নেই।
অনু:ঈশান দ্বীপকে দেখেছো।
ঈশান:ও তো অফিসে চলে গেছে।
অনু:কিইই? আমাকে না বলে তো কখনো যায় না।
দিয়া:হয়ত কোনো ইমপর্টেন্ট কাজ পরে গেছিলো। তাই চলে গেছে।
অনু কিছু না বলে উপরে চলে গেলো। গিয়ে দ্বীপকে ফোন দিলো কিন্তু দ্বীপ ফোন রিসিভ করলো না। অনুর এবার টেনশন হচ্ছে হঠাৎ কি হলো দ্বীপের। অনুকে ঘুম থেকে না তুলে অনুর কপালে ভালোবাসার পরশ না দিয়ে তো দ্বীপ অফিসে যায় না। তাহলে আজ এমন করলো কেনো। একবার ডাকতে তো পারতো।


মায়রা এসেছে অনু আর দিয়াকে নিতে। ঈশান আর দিয়া ইউএস ফিরে যাওয়ার আগেই অভি আর মায়রার বিয়েটা দিয়ে দিতে চায় সবাই।
দিয়া:সিমি তিথি ওরা?
মায়রা:তদের সাথে নিয়েই ওদের বাসায় যাবো এখন।
অনু:ওকে একটু ওয়েট কর রেডি হয়ে আসছি।
দিয়া আর অনু রেডি হয়ে আসে। তারা প্রথমে যায় আবিরের বাসায় গিয়ে দেখে তুলি বাসায় এসেছে।
তুলি:আমি এই বিয়ে মানি না। আমার আবিরকে চাই।(চিৎকার করে)
আপু:যা হওয়ার হয়ে গেছে তুলি। বিয়ে না হলে হয়ত কিছু করা যেত। এখন আর কিছুই করার নেই।
তুলি এগিয়ে যায় তিথির দিকে। এমনভাবে তিথিকে দেখছে মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই খেয়ে ফেলবে।
তুলি:তোমার জন্য আমি আবিরকে হারিয়েছি।(হাত তুলে যেই চর মারতে যাবে পেছন থেকে কেউ ওর হাতটা ধরে ফেলে। তাকিয়ে দেখে অনু।)
অনু:এই ভুল সেকেন্ডবার আর করবে না।(হাত ঝাড়া মেরে ফেলে।) এই হাত ভেঙ্গে গুরিয়ে দেবো। তোমার সাহস তো কম না। কার গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছিলে।
তুলি:তোমার সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার😡
অনু:আমার সাহস সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনাই নেই। আমি কি করতে পারি তা জানো না। আমার ফ্রেন্ড এর গায়ে আবার টাচ্ করতে গেলে তোমার কি অবস্থা করতে পারি শুধু দেখবে।
তুলি:(আঙ্গুল তুলে) তোমাকে তো …….
অনু:দেখে নেবে। রাইট। কেনো এখন দেখতে পারছো না। তুমি কি অন্ধ।
তুলি:😠
তুলি রাগে ফুসতে ফুসতে চলে যায় এখান থেকে। সবাই এক সাথে হেসে দেয়।
মায়রা:এবার তুই রেডি হয়ে নে। আমরা এখন শপিং করতে বের হবো।
তিথি:তর বিয়ের রাইট।
দিয়া:হুম। বিয়ে আরো ৫দিন পর।
অনু:রেডি হয়ে নে।
তিথি ওর রুমে চলে যায়। রেডি হয়ে বাইরে বের হয়। এবার ওরা তিথিকে নিয়ে সিমির বাসায় যায়। সিমি সবাইকে দেখে খুব খুশি হয়। বাট দিয়াকে দেখেই রাগ উঠে যায়। কিন্তু মুখে কিছু বললো না।
অনু:জলদি রেডি হয়ে নে। এখন শপিং করতে বের হবো। কোনো বিয়েতেই মজা করতে পারি নি। মায়রার বিয়েতে মন ভরে মজা করবো।
সিমি:হুম কারো সুখের জন্য কিছু মানুষের সুখ বিসর্জন দিয়েছি। মজা করবো কিভাবে?
সিমি যে এই কথাটা দিয়াকে বললো তা সবাই বুঝতে পারছে। দিয়ার চোখে জল এসে গেলো। আসলেই ও একজনেই আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। এই মানুষটা কি আর অন্যকাউকে আপন করতে পারবে কখনো ভাবছে দিয়া। হয়ত পারবে না।
তিথি:প্লিজ সিমি এসব কথা থাক। তুই রেডি হয়ে নে না।
সিমি:ওকে। তরা এখানে বস। আমি রেডি হয়ে আসছি।
সিমি চলে যেথেই শান্ত আসলো। সবাই শান্তর সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলো। সিমি রেডি হয়ে আসতেই সিমিকে নিয়ে বেরিয়ে পরলো।
আজ খুব ভালো করে শপিং করলো সবাই। দ্বীপ আবির অভি ঈশান শুভ মৃনাল নদী ওদের জন্যও শপিং করেছে। বাসার জন্য ও করেছে। মায়রার গায়ে-হলুদের জন্য শাড়ি বিয়ের জন্য বেনারসি রিসেপশনের জন্য লেহেঙ্গা সব কিনলো। কিনে বাসায় চলে গেলো।
রিসোর্ট বুক করা হয়েছে ওদের বিয়ের জন্য।


পরেরদিন ফ্রাইডে তাই আবির বাসায়। বিছানায় বসে ল্যাপটপ টিপাচ্ছিলো তখনি তিথি এসে ল্যাপটপ রেখে আবিরের কোলে বসে পরে।
আবির:কি ব্যাপার? আজ নিজে থেকে কাছে আসছো।
তিথি:😐কেনো কখনো আসি নি? জরিয়ে ধরি নি?
আবির:তা করেছো তবে……..
তিথি:কি তবে,, শুধু কিস করতে বারণ করতাম। কজ আই ডোন্ট লাইক দিস। ঠোটে।
আবির:😐আমি দেই ও নি।
তিথি:হুম।
আবির:আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিলাম।
তিথি:কি?
আবির:তুলি এসেছিলো?
তিথি ভাবছে কালকের কথা আবিরকে বলবে কিনা। যদি আবির জানতে পারে তাহলে খুব রেগে যাবে। এর থেকে না বলাই ভালো।
আবির:কি হলো কি ভাবছো। বলো।
তিথি:না না। আসে নি।
আবির:সিউর।
তিথি:হুম।
আবির:আজ নিয়ে কতবার মিথ্যে কথা বলেছো?
তিথি:মানে?
আবির:মানে টা খুব ভালোই বুঝতে পারছো। কাল এসেছিলো তুলি। অনু ফোন দিয়ে বলেছে।
তিথি:সরি😞
আবির:বলেছিলাম কখনো আমাকে মিথ্যে কথা বলবে না? এনিওয়ে, আর আসবে না তুলি এখানে।
(আবির অনুর কাছ থেকে সব শুনে তুলির বাসায় চলে যায়।ওর ফ্যামিলিদের সব বুঝিয়ে বলে। আবিরের বিয়ে হয়ে গেছে।আর তো কিছু করার ও নেই।তাই উনারা আবিরকে আস্বস্ত করেন। আর তুলি গিয়ে কোনো ঝামেলা করবে না।উনারা ওকে সামলে রাখবেন)


অনু দ্বীপের সামনে বসে আছে মাথা নিচু করে। দ্বীপ অনুকে দেখছে।
দ্বীপ:কি হয়েছে বলো।
অনু:তুমি আর আমাকে ভালোবাসো না দ্বীপ।
অনুর এই কথা শুনে দ্বীপ অবাক হয়ে অনুর দিকে তাকালো।
দ্বীপ:এটা মনে হওয়ার কারন।
অনু:কাল ঘুম থেকে ডেকে তুলো নি। আমার কপালে কিস ও করে অফিসে যাও নি।
এবার দ্বীপের খুব হাসি পাচ্ছে। সামান্য একটা বিষয়ের জন্য এত কিছু ভেবে বসে আছে। আসলেই পাগল। তবে শুধু দ্বীপের। বাট এই পাগলিটা তো জানে না দ্বীপ কিস করেই গেছে শুধু ডেকে তুলে নি। দ্বীপ উঠে গিয়ে অনুর পাশে বসলো। অনুকে নিজের বুকে জরিয়ে নিয়ে বললো,”তোমার মত মেয়েকে কি ভালো না বেসে থাকা যায়। পুরো আগুন। না চাইলে ও একদম হার্টে গিয়ে লাগে।”
অনু:ইশশ ঐ ধরনের কথা একদম বলবে না। বাজে ছেলেরা এসব কথা বলে।
দ্বীপ:না। ওদের মধ্যে আর আমার মধ্যে অনেক ডিফারেন্স।
অনু:কিভাবে?
দ্বীপ:ওরা বাজে মাইন্ড এ বলে। আর নিজের স্ত্রীকে নয়। অন্যের বোন স্ত্রীকে বলে। আমি আমার বউকে যা ইচ্ছা তা বলতেই পারি।
অনু:আমাকে সবসময় এরকম ভালোবাসবে তো।
দ্বীপ:একদম না।
অনুর মন খারাপ হয়ে গেলো। মাথা নিচু করে ফেললো।
দ্বীপ:আস্তে আস্তে আরো ভালোবাসা বারবে।
অনু মাথা তুলে দ্বীপের দিকে তাকালো। দ্বীপ হাসছে। অনু দ্বীপকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। আসলেই ও অনেক লাকি।


চলবে?🙄

#ভালোবাসার_অধিকার❤❤
লেখা- পূজা
পর্ব- ৩৩


আজ অভি আর মায়রার গায়ে হলুদ। কোনো কিছুর কমতি রাখে নি তারা। সারা রিসোর্ট ফুল লাইট দিয়ে সাজিয়েছে। গান বাজনা এগুলো তো আছেই।
সবাই একটা রুমে রেডি হচ্ছে। পার্লার থেকে লোক আনিয়েছে সাজানোর জন্য। ওদের মধ্যে সবাই অকর্মার ডেকি। কিছুই পারে না। মায়রাকে রেডি করিয়ে বাকিদের ও রেডি করিয়ে দেন তিনি। ছেলেরা সব রেডি হয়ে স্টেজ দেখছে। সব এরেইন্জমেন্ট করে দ্বীপ অনুকে ফোন দেয়।
অনু:বলো।
দ্বীপ:তোমরা রেডি।
অনু:হ্যা।
দ্বীপ:তাহলে চলে আসো।
অনু:ওকে।
মায়রাকে মাঝখানে রেখে ওরা ৬বেষ্টফ্রেন্ড একসাথে আসে। ওদের দেখে আবির অভি শুভ ঈশান দ্বীপ মৃনাল আর প্রহর ওদের চোখের পলক পরছে না। প্রহর তো নতুন করে আবার দিয়ার প্রেমে পরে যায়। কিছুক্ষণ পর ওর মাথায় আসে দিয়া এখন অন্যের স্ত্রী। প্রহর ওর চোখ নামিয়ে নেয়।
আবির সবার ভিডিও করছে। মায়রা আর অভিকে পাশাপাশি বসানো হয়। অভি মায়রার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”আজ নতুন করে আবার তোমার প্রেমে পরলাম। কেমন লাগছে তা মুখে বলে বোঝাতে পারবো না।”
মায়রা অভির কথায় অনেক লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হয়ে যাচ্ছে।
আবির:বাহ বাহ কোনো সুযোগ হাত ছাড়া করিস না। সব জায়গায় প্রেম শুরু করে দে। সোজা হয়ে বস। আমি ভিডিও করছি।
অভি:😐
কেক কাটা হলো হলুদ লাগানো হলো গান বাজনা ডান্স সব মিলিয়ে সারা রাত সবাই অনেক মজা করলো। রাতে আর ওদের ঘুম হলো না। বিয়ে রাতে তাই। সকালে সবাই ঘুমাতে চলে গেলো।
বিকেল ৩টা,,
দ্বীপের মা অভির মা ওদের ডাকে সবার ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম থেকে উঠে সবাই ফ্রেস হয়ে নেয়। লাঞ্চ করে একটু রেস্ট নেয়। সন্ধ্যা থেকে আবার সাজতে শুরু করতে হবে।
অনু:মায়রা!
মায়রা:কি?
অনু:আমার আবার বিয়ে করতে ইচ্ছে করতেছে রে😭
দিয়া:😯কেনো?
অনু:আমার বিয়ে এত ভালোভাবে হয় নি।
সিমি:আপনি তো সেন্স হারিয়ে তারপর দরজা বন্ধ করে বসে ছিলেন। এভাবে হতো কি করে। কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম।
অনু:আর কত দিন এটা নিয়ে খুচাবি।
সিমি:যতদিন এই দেহে প্রান থাকবে।(একটু ভাব নিয়ে)
সিমির কথায় সবাই হেসে দেয়।
অনু:হাসো হাসো তোমাদেরই এখন হাসির সময়। লিসেন মায়রা। আজ রাতে কি হয় বলিস কিন্তু।
মায়রা:কেনো কেনো তুই কি বলেছিলি।
অনু:দ্বীপ আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেছিলো। কিছুই করেনি কি বলবো।
মায়রা:😐
তিথি:মায়রা বলিস কিন্তু।
মায়রা:তুই বল আবির কি করেছিলো।
মায়রার কথায় তিথি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
মায়রা:বাহ তোমাদের বলতে লজ্জা করছে। আমার তো খুব ভালো লাগবে তাই না।
সিমি:😒টাইম হয়ে আসছে। যা ফ্রেস হয়ে নে। রেডি করাতে হবে তকে।
মায়রা:😏
মায়রা চলে যায় ফ্রেস হতে। বাকিরা ও ফ্রেস হয়ে নেয়।
বেনারসিতে মায়রাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে এটা স্পেশালি মায়রার জন্য বানানো হয়েছে। মায়রাকে রেডি করিয়ে বসাতেই মায়রার ভাই মাহি এলো। মায়রা ওর ভাইকে দেখেই কেদে দিলো।
অনু:পাগল নাকি। মায়রা এভাবে কাদছিস কেনো। সাজ নষ্ট হয়ে যাবে কাদিস না।
মাহি ও কাদছে। মায়রা দৌড়িয়ে এসে মাহিকে জরিয়ে ধরলো।
মায়রা:খুব ভালোবাসি তোমাকে ভাইয়া।
মাহি:আমি ও তকে খুব ভালোবাসি রে। তকে ছাড়া থাকবো কি করে।
মায়রা:আমি পারবো না থাকতে ভাইয়া।
মাহি:পাগলি মেয়ে কাদে না। যখনি আমার কথা মনে পরবে। চলে আসবি বুঝেছিস। তর জন্য তর ভাইয়ার দরজা সবসময় খুলা থাকবে।
মায়রা:আমি জানি ভাইয়া।
মাহি কিছুক্ষণ মায়রাকে জরিয়ে ধরে চোখের পানি মুচে চলে গেলো। অনু একটা টিসু এসে মায়রার চোখ মুচে দিলো।
অনু:কাদিস না। সব মেয়েদেরকেই একদিন চলে যেথে হয় নিজের বাড়ি ছেড়ে।

অভিকে রেডি করিয়ে সবাই স্টেজে নিয়ে এসে বসায়। অনু আর তিথি ওদের কাছে আসে। মায়রার কাছে সিমি দিয়া আর নদী রয়েছে।
অনু:ইটস নট ফেয়ার।
আবির:মানে?
তিথি:গেইট ধরতে চেয়েছিলাম।
শুভ:হিহিহি। ধরো ধরো। কাচ কলা পাবে।
অনু:সব তুলে নেবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।
ঈশান:কি করবে?
তিথি:তা সময় আসলেই দেখো।
প্রহর:অনু মায়রাকে নিয়ে এসো। সব ডান। কাজি সাহেব ও চলে এসেছে।
অনু:ওকে।
অনু তিথি গিয়ে মায়রাকে নিয়ে আসে। বিয়ে পড়ানো শুরু হয়।
বিয়ে শেষে খুব কান্নাকাটি করে মায়রা। ভাই ছিলো ওর কাছে মা বাবা। আজ ওকে ছেড়েই চলে যেথে হবে। অভি সামলে মায়রাকে নিয়ে গাড়িতে বসায়।

অনু দিয়া তিথি সিমি নদী ওরা ও অভির বাসায় আসে। মায়রাকে অভির এতো বড় বিছানার মাঝখানে বসিয়ে এক হাত ঘুমটা দিয়ে রেখে দেয় ওরা। মায়রার মনে হচ্ছে এখনি শ্বাস আটকে মারা যাবে। কিন্তু অনুর কড়া আদেশ। ঘুমটা সরানো যাবে না। তাই কিছুই করতে পারছে না।
মায়রাকে রেখে সবাই দরজার কাছে গিয়ে দারায়। অভিকে নিয়ে শুভ আর আবির এসেছে। ওদের দরজার কাছে দারিয়ে থাকতে দেখে আবির আর শুভ ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকায়।
সিমি:এভাবে তাকাচ্ছো কেনো? টাকা বের করো।
শুভ:কিসের?
অনু:বিয়ের আর এখন বাসর ঘড়ে ডুকার।
আবির:অভি ও ওর রুমে ডুকবে তার জন্য আবার টাকা দিতে হবে নাকি?
তিথি:ইয়েস। জলদি একটা চেক বের করে দাও।
শুভ:😳চেক?
দিয়া:হুম। তাও এক লক্ষ টাকার।
অভি:বোন সিস্টার বেহেন তরা এত টাকা দিয়ে কি করবি।
নদী:তা তোমার জানতে হবে না। যা বলছি তাই করো। নয়ত বউয়ের মুখ ও দেখতে পারবে না।
অভি উকি দিয়ে রুমে দেখে মায়রা ইহা বড় ঘুমটা দিয়ে বসে আছে। অভি অসহায়ের মতো শুভ আর আবিরের দিকে তাকালো।
অনু:টাকা না দিলে ডুকতে দেবো না। যাই করো।
অভি:এটা ঠিক না।
অনু:এটাই ঠিক।
আবির:পুরো ডায়নি।
তিথি:যা ইচ্ছা বলতে পারো আজ মাইন্ড করবো না।
শুভ:পরে দিলে হয় না।
নদী:একদম না।
অভি:দিতেই হবে রে।
আবির ওর পেন্ট এর পকেট থেকে একটা চেক বুক বের করে এমাউন্ট লিখে সাইন করে দেয় অনুর হাতে। অনু কাগজটা নিয়ে একটু বাতাস করে বললো,” যাও তোমার বউ এর হয়ত ধম বন্ধ হয়ে আসছে। জলদি গিয়ে বাচাও।”
অনু সাথে সাথে বাকিরা ও এখান থেকে চলে গেলো। অভি গেলো রুমে। মায়রার মাথা থেকে ঘুমটা সরালো।
মায়রা:উপ বাচালে আমার তো গরমে ধম বন্ধ হয়ে আসছিলো।
অভি হা হয়ে মায়রার দিকে তাকিয়ে আছে। কত সুন্দর লাগছে আজ মায়রাকে।
মায়রা:ফ্রেস হয়ে আসি।
অভি:ওহ হ্যা যাও।
মায়রা ফ্রেস হতে চলে গেলো অভি রুমেই শেওরানিটা খুলে একটা ট্রি-শার্ট পরে নিলো। মায়রা শাওয়ার নিয়ে বের হয়। এত সাজ স্নান না করলে যাবে না। মায়রা ওয়াশরুম থেকে বেরতেই অভি মায়রার দিকে এগোতে থাকে। সাজ ছাড়া মায়রাকে আরো বেশি কিউট লাগছে।
মায়রা:কি হয়েছে?
অভি:শশশশ(ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে) দেখতে দাও আমাকে।
মায়রা:এতদিন দেখ নি।
অভি:হুম দেখেছি। বাট জিএফ মনে করে। আজ আমার বউকে দেখবো।
এটা বলেই অভি মায়রাকে কোলে তুলে নেয়। চুল থেকে টপটপ করে নিচে পানি পরছে।


৫বছর পর,,
মায়রা কানে বালিস দিয়ে ঘুমাচ্ছে অভি অফিসে অফিস থেকে সোজা দ্বীপের বাসায় যাবে। আর অভির মা পরির পিছনে দৌড়াচ্ছেন খাওয়ানোর জন্য। পরি অভি আর মায়রার মেয়ে। শুধু নামেই পরি নয়।দেখতে ও পরির মতো শুধু একটু দুষ্টু। পরির আর একটা নাম মেহের।
অভির মা:মায়রা আমার দারা আর হবে না। তকেই খাওয়াতে হবে।
মায়রা কাদো কাদো গলায় বললো,”সত্যি করে বলো তো অভি কি এরকম দুষ্টু ছিলো? আমার মেয়েটা এত দুষ্টু হলো কিভাবে। আমি তো খুব ভালো মেয়ে ছিলাম।”
অভির মা হাসতে হাসতে বললেন,”ওর দাদুর মতো হয়েছে ও। অভির বাবা ও নাকি এসব করতেন আমার শাশুড়িমা বলেছেন।”
মায়রা:মা তুমি তো এখনো বাবার কথা বললে লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাও😜।
অভির মা:ধুর তুই ও না।
মায়রা:😁
পরি:মাম্মা আমি কিছু খাবো না।
মায়রা:হ্যা মামনি খাবে না তুমি আর বকা খেতে হবে আমাকে।
পরি:নাআ😭
মায়রা পরিকে জোর করে খাইয়ে দেয়। পরি একমাত্র মায়রাকেই ভয় পায়।


অন্যদিকে,,
দিয়া দিপ্রর পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে ড্রেস নিয়ে।
দিয়া:দিপ্র বাবা প্লিজ দারাও।
দিপ্র:নাআ।
দিয়া দৌড়াতে দৌড়াতে প্রহরের সাথে গিয়ে ধাক্কা খায়। প্রহর দিয়াকে ধরে ফেলে নয়ত পরে যেত।
প্রহর:পাগল হলে নাকি। এভাবে কেউ দৌড়য়। এখনি পরে যেথে।
দিয়া:আপনার ছেলের জন্যই তো দৌড়চ্ছি। আদি আর দিঘির বার্থডেতে যেথে হবে অনু ফোন করেছিলো। ড্রেসই ওকে পড়াতে পারছি না।
প্রহর:ওহ এই ব্যাপার দারাও আমি ডেকে আনছি।
কারো জন্য চকলেট এনেছিলাম। কিন্তু আশেপাশে তো কাউকেই দেখতে পারছি না। চকলেটটা কি বাইরে ফেলে দেবো।
দিপ্র দৌড়িয়ে এসে প্রহরকে জরিয়ে ধরে বলে,”না না। আমাকে দাও।”
প্রহর:দেবো তার আগে রেডি হতে হবে। দ্বীপ মামার বাসায় যাবে না। আদি দিঘি ওদের বার্থডে না আজকে।
দিপ্র:যাবো না। দিঘি আমায় দাভাই বলে ডাকে না কেনো?
প্রহর:এবার থেকে ডাকবে।
দিপ্র:আমাদের বাসায় ও ছোট্ট একটা দিঘি চাই।
প্রহর:তাই।(বলেই দিয়ার দিকে তাকালো) তুমি কি বলো দিয়া। এনে দেবো।
দিয়া:উপ! আপনি ও না। একটা নিয়েই পারি না। আর আপনি আর একটা আনতে চান।
দিপ্র:মাম্মা আমি আর তোমায় জ্বালাবো না। সত্যি। বোনু আসলে তুমি শুধু বোনুকে নিয়ে থাকবে। আমার পিছনে দৌড়াবে না আমি ও ভালো ভাবে খেলতে পারবো।
প্রহর:এজন্য তোমার বোন চাই।
দিপ্র:আর একটা কারন আছে। আমার খেলার সাথি ও হবে। খেলার জন্য আর আদির বাসায় যেথে হবে না।
প্রহর:তাহলে তো আমার দিপ্রর জন্য একটা বোন এনে দিতেই হয়।
প্রহর দিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দেয়।
প্রহর:চলো কাজ শুরু করে দেই।
দিয়া:আপনি একটু চুপ করবেন।
প্রহর:চুপ থাকলে তো হবে না কতো কাজ।
দিয়া:আপনি প্লিজ ওকে রেডি করান। অনু বার বার ফোন দিচ্ছে।
প্রহর:ওকে পাপা চলো তোমাকে আমি রেডি করিয়ে দিচ্ছি। রাতে এসে কাজ শুরু করবো ওকে।
দিপ্র:ওকে পাপা।
প্রহর দিপ্রকে কোলে নিয়ে রুমে চলে যায়। আর দিয়া গেলো প্রহরের মায়ের রুমে।


চলবে?🙄